বুখারি হাদিস নং ৪৫০১-৪৬০০

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০১ | 4501 | ٤۵۰۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০১। আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, চন্দ্র বিদীর্ণ হল, এ সময় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এবং তা দু’টুকরা হয়ে গেল। তখন তিনি আমাদের বললেন, “তোমরা সাক্ষী থাক, তোমরা সাক্ষী থাক”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০২ | 4502 | ٤۵۰۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৩ | 4503 | ٤۵۰۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- মক্কাবাসীরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একটি নিদর্শন দেখানোর দাবি জানালো। তখন তিনি তাদের চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার নিদর্শন দেখালেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৪ | 4504 | ٤۵۰٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
৪৫০৪। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৫ | 4505 | ٤۵۰۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ-ই পুরস্কার তাঁর জন্য, যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। আমি একে রেখে দিয়েছি এক নিদর্শনরূপে; অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?” (৫৪ঃ ১৫-১৫) কাতাদা (রহঃ) বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা নুহ (আঃ) এর নৌকাটি রেখে দিয়েছেন। ফলে এ উম্মতের প্রথম যুগের লোকেরাও তা পেয়েছে।
৪৫০৫। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৬ | 4506 | ٤۵۰٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “আমি কুরআন সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহনের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি? মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يسرنا আমি এর পঠন পদ্ধতি সহজ করে দিয়েছি।
৪৫০৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন। (মূল পাঠে ছিল مذكر কিন্তু আরবী ব্যাকরণের বিধান অনুযায়ী কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে مُدَّكِرٍ)

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৭ | 4507 | ٤۵۰۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “উন্মুলিত খেজুর কান্ডের ন্যায়, কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী” (৫৪ঃ ২০-২১)
৪৫০৭। আবূ নু’আঈম (রহঃ) … আবূ ইসহাক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এক ব্যাক্তি আল-আসওয়াদ (রহঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করেছেন যে, আয়াতের মধ্যে فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ নাকি مُذَّكِرٍ? তিনি বললেন, “আমি আবদুল্লাহকে আয়াতখানা فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ‏ পড়তে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আয়াতখানা ‘দাল’ দিয়ে পড়তে শুনেছি”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৮ | 4508 | ٤۵۰۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “ফলে তারা হয়ে গেল খোঁয়াড় প্রস্তুতকারী দ্বিখন্ডিত শুস্ক, শাখা-প্রশাখার ন্যায়। আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহনের জন্য সহজ করে দিয়েছি; অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি? (৫৪ঃ ৩১-৩২)
৪৫০৮। আবদান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০৯ | 4509 | ٤۵۰۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ প্রত্যুষে বিরামহীন শাস্তি তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি ও সতর্কবাণীর পরিনাম।
৪৫০৯। মুহাম্মদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১০ | 4510 | ٤۵۱۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ولقد أهلكنا أشياعكم فهل من مدكر “আমি ধ্বংস করেছি তোমাদের মত দলগুলোকে, অতএব, তা থেকে উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?” (৫৪ঃ ৫১)
৪৫১০। ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে فَهَلْ مِنْ مُذَّكِرٍ পড়ার পর তিনি বললেনঃ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১১ | 4511 | ٤۵۱۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ سيهزم الجمع ويولون الدبر “এ দল তো শীঘ্র পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (৫৪ঃ ৫৫)
৪৫১১। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইইয়া (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের দিন একটি ছোট্ট তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু’আ করেছিলেন- “হে আল্লাহ! আমি তোমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আবেদন করছি! হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও, আজকের পর তোমার ইবাদত আর না করা হোক” … ঠিক এ সময়ই আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! “যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার রবের নিকট অনুনয়-বিনয়ের সাথে বহু দু’আ করেছেন”। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁবু থেকে বেরিয়ে গেলেন দুটি আয়াত পড়তে পড়তে, “এ দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। অধিকন্তু কিয়ামত তাদের আযাবের নির্ধারিতকাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪: ৪৫-৪৬)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১২ | 4512 | ٤۵۱۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ “অধিকন্তু কিয়ামতে তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪ঃ ৪৬) مرارة শব্দ থেকে أَمَرُّ শব্দটির উৎপত্তি- যার মানে তিক্ততা।
৪৫১২। ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ‏ আয়াতটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তখন কিশোরী ছিলাম, খেলাধুলা করতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৩ | 4513 | ٤۵۱۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ “অধিকন্তু কিয়ামতে তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪ঃ ৪৬) مرارة শব্দ থেকে أَمَرُّ শব্দটির উৎপত্তি- যার মানে তিক্ততা।
৪৫১৩। ইসহাক (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট্ট একটি তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু’আ করেছিলেন- “হে আল্লাহ! আমি তোমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন কামনা করছি! হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও, আজকের পর তোমার ইবাদত আর না করা হোক” … ঠিক এ সময় আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! “যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার রবের নিকট অনুনয়-বিনয়ের সাথে বহু দু’আ করেছেন”। এ সময় তিনি লৌহবর্ম পরিহিত ছিলেন। এরপর তিনি এ আয়াত পড়তে পড়তে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেনঃ “এ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। অধিকন্তু কিয়ামতে তাদের শাস্তির নির্ধারিতকাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (৫৪: ৪৫-৪৬)।

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ومن دونهما جنتان “এবং এ উদ্যানদ্বয় ব্যতীত আরো দু’টি উদ্যান রয়েছে” (৫৫ঃ ৬২)
সুরা রাহমান

وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَ এর মাঝে বর্ণিত الْوَزْنَ হচ্ছে পাল্লার ডান্ডি। وَالْعَصْفُ ঘাস, ফসল পাকার পূর্বে যে চারাগুলোকে কেটে ফেলা হয় তাদেরকেই اَلْعَصْفُ বলা হয়। الرَّيْحَانُ শস্যের পাতা এবং যমীন থেকে উৎপাদিত দানা যা ভক্ষণ করা হয় আরবী ভাষায় রিযকের অর্থে ব্যবহৃত হয়। কারো মতে, الْعَصْفُ খাওয়ার উপযোগী দানা এবং الرَّيْحَانُ খাওয়ার অনুপযোগী পাকা দানা। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, اَلْعَصْفُ গমের পাতা। দাহ্হাক (রহ.) বলেন, اَلْعَصْفُ মানে ভূষি। আবূ মালিক (রহঃ) বলেন, সর্বপ্রথম যা উৎপন্ন হয় তাকে اَلْعَصْفُ বলা হয়। হাবশী ভাষায় তাকে هَبُوْرًا হাবুর বলা হয়। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, اَلْعَصْفُ গমের পাতা। الرَّيْحَانُ খাদ্য। الْمَارِجُ হলুদ এবং সবুজ বর্ণের অগ্নিশিখা যা আগুনের উপরে দেখা যায় যখন তা জ্বালানো হয়। মুজাহিদ (রহঃ) থেকে কোন কোন মুফাসসির বলেন, رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ সূর্যের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন উদয়স্থান। তেমনি رَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ শীত ও গ্রীস্মকালে সূর্যের দুই অস্তস্থল। لَا يَبْغِيَانِ তারা মিলিত হয় না। الْمُنْشَاٰتُ নদীতে পাল তোলা নৌকা। আর যে নৌকার পাল তোলা হয়নি তাকে الْمُنْشَاٰتُ বলা হয় না। মুজাহিদ বলেন, نُحَاسٌ পিতল, যা তাদের মাথার উপর ঢালা হবে এবং এর দ্বারা তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। خَافَ مَقَامَ رَبِّهٰ সে গুনাহ্ করার ইচ্ছে করে; কিন্তু তার আল্লাহর কথা মনে পড়ে যায়। অবশেষে সে গুনাহ্ করার ইচ্ছা ত্যাগ করে। الشُّوَاظُ অগ্নি শিখা। مُدْهَآمَّتَانِ দেখতে কালো হবে সজীবতার কারণে। صَلْصَالٍ মাটি বালির সঙ্গে মিশে পোড়া মাটির মত ঝনঝন করে। বলা হয় صَلْصَالٍ দুর্গন্ধময়। শব্দটির মূল ছিল صَلَّ صَلْصَالٍ বলা হয় যেমন صَرَّالْبَابُ বলা হয় এবং صَرَّصَرَّ الْبَابُ ও বলা হয়। (অর্থাৎ مضاعف رباعى থেকে مضاعفثلاثى এর উৎপত্তি)। যেমন كَبْكَبْتُه ব্যবহার করা হয়। যার মূল فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ ফলমূল, খেজুর ও আনার। কারো মতে খেজুর ও আনার ফল নয়; কিন্তু আরবীয় লোকেরা এগুলোকেও ফল বলে গণ্য করে। খেজুর ও আনার ফলমূলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও উপরোক্ত আয়াতে ফলমূলের কথা উল্লেখ করে এরপর খেজুর ও আনারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ এর মাঝে সকল সালাতের প্রতি যত্নবান হবার নির্দেশ প্রদান করতঃ পরে আবার বিশেষভাবে আসরের সালাতের প্রতি বিশেষ যত্নবান হবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেমনভাবে أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَه مَنْ فِي السَّمَوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ্কে সাজদাহ করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে….। (সূরাহ হাজ্জ ২২/২৮)-এর মধ্যে সকল মানুষ অন্তর্ভুক্ত থাকা সত্ত্বেও وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ وَكَثِيْرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ আয়াতাংশটি পরে উল্লেখ করা হয়েছে (সুতরাং খেজুর ও আনারকে ফলমূল বহির্ভূত বলা ঠিক নয়)। মুজাহিদ (রহঃ) ছাড়া অন্যান্য মুফাসসির বলেন, أَفْنَانٍ ডালাসমূহ। وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ দুই উদ্যানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী- (সূরাহ আর্ রহমান ৫৫/৫৪)। উভয় উদ্যানের ফল যা পাড়া হবে তা খুবই নিকটবর্তী হবে। হাসান (রহঃ) বলেন, فَبِأَيِّاٰلَآءِ আল্লাহর কোন অনুগ্রহকে? ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, মানব এবং দানব জাতিকে বোঝাবার জন্য رَبِّكُمَا দ্বি-বচনের صيغه ব্যবহার করা হয়েছে। আবুদ্ দারদা (রাঃ) বলেন, كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَأْنٍ (তিনি প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কার্যে রত)-এর ভাবার্থ হচ্ছে, প্রত্যহ তিনি মানুষের গুনাহ ক্ষমা করেন, বিপদ বিদূরিত করেন, এক সম্প্রদায়কে সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং অপর সম্প্রদায়ের অবনতি ঘটান। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, بَرْزَخٌ অন্তরাল। الْأَنَامُ সৃষ্ট জীব। نَضَّاخَتَانِ খায়ের ও বারাকাতে উচ্ছলিত। ذُو الْجَلَالِ মহিমাময়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, مَارِجُ নির্ধূম অগ্নিশিখা। রাজা প্রজাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দেয়ার পর তারা যখন পরস্পর পরস্পরের প্রতি অবাধে অত্যাচার করতে আরম্ভ করে তখন বলা হয়, اَلَامِيْرُمَرَجَالَامِيْرُرِعَيَّتَهمَرَجَاَمْرُالنَّاسِ মানুষের বিষয়টি গোলমেলে হয়ে পড়েছে। مَرِيْجٍ দোদুল্যমান। مَرَجَ الْبَحْرَيْنٍ দুই সমুদ্র পরস্পর মিলিত হয়ে গিয়েছে। مَرَجْتَ دَابَّتَكَ এর উৎপত্তি অর্থাৎ তুমি ছেড়ে দিয়েছ। سَنَفْرُغُ لَكُمْ অচিরেই আমি তোমাদের হিসাব গ্রহণ করব কারণ কোন অবস্থা আল্লাহ্ তা‘আলাকে অন্য অবস্থা হতে গাফিল করতে পারে না। এ ধরনের ব্যবহার-বিধি আরবী ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ। যেমন বলা হয়, لَا تَفَرَّ غَنَّ لَكَ অথচ তার কোন ব্যস্ততা নেই (বরং এ ধরনের কথা ধমক-স্বরূপ বলা হয়ে থাকে)। এ বাক্যের মাধ্যমে বক্তা শ্রোতাকে এ কথাই বোঝাতে চায় যে, অবশ্যই আমি তোমাকে তোমার এ গাফলতের মজা আস্বাদন করাব।

৪৫১৪। আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) … কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল বলেছেন, (জান্নাতে) দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু রূপার তৈরি হবে। এবং (জান্নাতে) আরও দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু সোনার তৈরি হবে। জান্নাতে-আদনের মধ্যে জান্নাতবাসীরা তাদের রবকে দেখবে। জান্নাতবাসী এবং তাদের রবের এই দর্শনের মাঝে আল্লাহর সত্তার উপর জড়ানো তাঁর বড়ত্বের পর্দা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৫ | 4515 | ٤۵۱۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ حور مقصورات في الخيام “তারা তাবুতে সুরক্ষতি হুর” (৫৫ঃ ৭২) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, حور অর্থ কালো মনি যুক্ত চক্ষু। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مقصورات অর্থ مقصورات মানে তাদের দৃষ্টি এবং তাদের স্বত্বা তাদের স্বামীদের জন্য সুরক্ষিত থাকবে। قاصرات তারা তাদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। তারা তাদের ব্যতীত অন্য কাউকে স্বামী হিসাবে গ্রহন করার আকাঙ্ক্ষাও করবে না।
৪৫১৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মোতির একটি তাঁবু থাকবে যা হবে ষাট মাইল প্রশস্ত। এর প্রতিটি কোণে থাকবে হুর-বালা, যাদের এক কোণার জন অপর কোণার জনকে দেখবে না। ঈমানদার লোকেরা তাদের কাছে যাবে। এতে দুটি উদ্যান থাকবে, যার সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু রূপার তৈরি হবে। এবং আরও দুটি উদ্যান থাকবে, যার সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু সোনার তৈরি হবে। জান্নাতে-আদনের মধ্যে জান্নাতবাসী এবং তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভের মাঝখানে আল্লাহর বড়ত্বের প্রভাময় আভা ভিন্ন আর কিছু থাকবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৬ | 4516 | ٤۵۱٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وظل ممدود “সম্প্রসারিত ছায়া” (৫৫ঃ ৩০)
সুরা ওয়াকি’আ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, رُجَّتْ প্রকম্পিত হবে। بُسَّتْ চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়া, ছাতু যেমন চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয় তেমিনভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে। الْمَخْضُوْدُ বোঝার কারণে চরম ভারাক্রান্ত। কণ্টকহীন বৃক্ষকেও مَخْضُوْدُ বলা হয়। مَنْضُوْدٍ কলা। الْعُرُبُ স্বামীর কাছে প্রিয়তমা স্ত্রীগণ। ثُلَّةٌ উম্মত। يَحْمُوْمٍ কালো ধোঁয়া। يُصِرُّوْنَ তারা অবিরাম করতে থাকবে। الْهِيْمُ পিপাসিত উট। لَمُغْرَمُوْنَ যাদের উপর ঋণ পরিশোধ করা অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে। رَوْحُ উদ্যান ও কোমলতা। اَلرَيْحَانُ জীবনোপকরণ। نَنْشَأَكُمْ যে কোন আকৃতিতে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেন, تَفَكَّهُوْنَ তোমরা বিস্মিত হয়ে যাবে। عُرُبًا বহুবচন। একবচনে عَرُوْبٌ যেমন, صُبُرٌ বহুবচন। একবচনে صَبُوْرٍ মক্কাবাসী লোকেরা তাকে الْعَرِبَةَ মদিনা্বাসী লোকেরা الْغَنِجَةَ এবং ইরাকী লোকেরা তাকে الشَّكِلَةَ বলে। خَافِضَةٌ তা একদল লোককে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। رَافِعَةٌ তা একদল লোককে জান্নাতে নিয়ে যাবে। مَوْضُوْنَةٍ مَّنْسُوْجَةٍ গ্রথিত। এর থেকেই وَضَيْنُ النَّاقِةٍ শব্দটির উৎপত্তি (অর্থ উটের পালানের রশি) الكُوْبُ নল ও হাতলবিহীন পানপাত্র। الْأَبَارِيْقُ নল ও হাতল সম্পন্ন লোটা। مَسْكُوْبٍ প্রবহমান। وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ একটির উপর আরেকটি বিছানো শয্যাসমূহ। مُتْرَفِيْنَ ভোগ বিলাসী লোকজন। مَا تُمْنُوْنَ মহিলাদের গর্ভাশয়ে নিক্ষিপ্ত বীর্য। لِلْمُقْوِيْنَ মুসাফিরদের জন্য। الْقِيُّ ঘাস, পানি এবং জন-মানবহীন ভূমি। بِمَوَاقِعِ النُّجُوْمِ কুরআনের মুহ্কাম আয়াতসমূহ। بِمَسْقِطِ النُّجُوْمِ নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের স্থান। مَوَاقِعٌএবং مَوْقِعٌ শব্দ দু’টো একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। مُدْهِنُوْنَ তুচ্ছকারী লোকজন। যেমন অন্যত্র আছে, لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ যদি তুমি তুচ্ছ কর, তবে তারাও তুচ্ছ করবে। فَسَلَامٌ لَكَ তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। কেননা, তুমি দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত। এখানে إِنَّশব্দটি উহ্য আছে। যেমন, اِنِّىْ مُسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ এর উত্তরে কথিত أَنْتَ مُصَدَّقٌ مُّسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ বাক্যের মাঝে إِنَّ শব্দটি উহ্য আছে। মূলে ছিল إِنَّكَ مُسَافِرٌ শ্রোতার প্রতি দু‘আ হিসেবেও سَلَامَ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন فَسَقْيًا مِّنْ الرِّجَالِ (পরিতৃপ্ত লোকজন) বাক্যটিও দু‘আ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। سَلَامٌ শব্দটিকে مَرْفُوْعٌ পড়া হলে তা দু‘আ হিসেবেই গণ্য হবে। تُوْرُوْنَ তোমরা বের কর, প্রজ্জ্বলিত কর। পক্ষান্তরে أَوْرَيْتُ بِمَعْزٍ اَوْ فَدْتُ থেকে تُوْرُوْنَ শব্দটির উৎপত্তি। لَغْوًا অসার। تَأْثِيْمًا মিথ্যা বাক্য।

৪৫১৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে এমন বড় একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন সওয়ারী একশ বছর চলতে পারবে, তবুও সে এ ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। তোমার ইচ্ছা হলে (সম্প্রসারিত ছায়া) পাঠ করতে পার”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৭ | 4517 | ٤۵۱۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা হাদীদ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ আমি তোমাদেরকে তাতে আবাদকারী বানিয়েছি। مِنْ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّوْرِ ভ্রান্তি থেকে হিদায়াতের দিকে। وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ ঢাল ও অস্ত্রশস্ত্র। مَوْلَاكُمْ তিনিই তোমাদের জন্য যোগ্য। لِئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ যাতে কিতাবী লোকেরা জানতে পারে। বলা হয়, বস্তুর বাহ্যিক বিষয়ের উপরও عِلْمٍ ব্যবহৃত হয়। এমনিভাবে বস্তুর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উপরও عِلْم ব্যবহৃত হয়। أَنْظِرُوْنَا তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর।

সুরা মুজাদালা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يُحَادُّوْنَ তারা (আল্লাহর) বিরোধিতা করছে। كُبِتُوْا তাদেরকে অপদস্থ করা হবে। الْخِزْيِ ধাতু হতে উক্ত শব্দটির উৎপত্তি। اسْتَحْوَذَ সে প্রাধান্য বিস্তার করেছে।

সুরা হাশর

الْجَلَاءَ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্বাসিত করা।

৪৫১৭। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে সূরা তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি তো লাঞ্ছনাকারী সূরা। وَمِنْهُمْ وَمِنْهُمْ অর্থাৎ “তাদের একদল এই করছে, আরেক দল ঐ করছে”, এই বলে একাধারে এ সূরা নাযিল হতে থাকলে লোকজন ধারণা করতে লাগলো যে, তাদের মধ্যে এমন কেউ আর বাকী থাকবেনা, যাকে এই সূরায় উল্লেখ করা হবে না। বর্ণনাকারী বলেন- আমি তাঁকে সূরা আনফাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এই সূরাটি বদর যুদ্ধের সময় নাযিল হয়েছে। আমি তাঁকে সূরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এই সূরাটি বনী নাযীর সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৮ | 4518 | ٤۵۱۸

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫১৮। হাসান ইবনু মুদরিক (রহঃ) … সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে ‘সূরা হাশর’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটিকে ‘সূরা বনী নাযীর’ বল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৯ | 4519 | ٤۵۱۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ما قطعتم من لينة أو تركتموها قائمة على أصولها فبإذن الله وليخزي الفاسقين “তোমরা যে খেজুর বৃক্ষগুলো কর্তন করেছ বা যেগুলোর কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে; এ তো এ জন্য যে, আল্লাহ্‌ পাপাচারিদের লাঞ্ছিত করবেন” (৫৯ঃ৫) لينة এবং برنية ব্যতীত সকল খেজুরকেই لينة বলা হয়।
৪৫১৯। কুতায়বা (রহঃ) … ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী নাযীর গোত্রের খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কেটে ফেলেছিলেন, যা ‘বুওয়াইরা’ নমক স্থানে (মদিনার নিকটে) ছিল। এরপর আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ “তোমরা যে খেজুর গাছ কেটেছ বা যেগুলোকে কাণ্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিতে, যাতে আল্লাহ পাপীদের লাঞ্ছিত করবেন” (সূরা ৫৯, আয়াত ০৫)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২০ | 4520 | ٤۵۲۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ما أفاء الله على رسوله “আল্লাহ্‌ এই জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রাসুল (সাঃ) কে যা কিছু দিয়েছে” (৫৯ঃ ৭)
৪৫২০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- বনী নাযীরের বিষয়-সম্পত্তি ঐ সকল বস্তুর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ‘ফাই’ হিসেবে দিয়েছেন, এ জন্য যে মুসলিমরা ঘোড়ায় বা উটে চড়ে যুদ্ধ করেনি। সুতরাং এটি খাস ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য। এর মধ্য থেকে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খরচ দান করতেন। এরপর বাকিটা তিনি অস্ত্রশস্ত্র এবং ঘোড়া সংগ্রহের কাজে ব্যয় করতেন আল্লাহর পথে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২১ | 4521 | ٤۵۲۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ما آتاكم الرسول فخذوه “রাসুল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহন কর (এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক)” (৫৯ঃ ৭)
৪৫২১। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ লা’নত করেছেন ঐ সকল নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রূ উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এরা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটিয়েছে। এরপর বনী আসাদ গোত্রের উম্মে ইয়াকুব নামে এক মহিলার কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে সে এসে বলল, আমি জানতে পারলাম, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লানত করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার প্রতি লা’নত করেছেন, আল্লাহর কিতাবে যার প্রতি লানত করা হয়েছে, আমি তার প্রতি লা’নত করব না কেন? তখন মহিলা বলল, আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুরআন) পড়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছেন, তা তো এতে পাইনি।

আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, যদি তুমি কুর’আন পড়তে অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি? “রাসূল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক”। (সূরা ৫৯, আয়াত ০৭) মহিলা বলল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই পড়েছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজে নিষেধ করেছেন। তখন মহিলা বলল, আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে। তিনি বললেন, তুমি যাও এবং ভালোভাবে দেখে এসো। এরপর মহিলা গেল এবং ভালোভাবে দেখে এলো। কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কিছুই দেখতে পেলো না। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমার স্ত্রী যদি এমন করত, তবে সে আমার সাথে একত্রে থাকতে পারত না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২২ | 4522 | ٤۵۲۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ما آتاكم الرسول فخذوه “রাসুল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহন কর (এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক)” (৫৯ঃ ৭)
৪৫২২। আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে নারী কৃত্রিম চুল লাগায়, তার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন। রাবী বলেন, আমি উম্মে ইয়াকুব নামক মহিলার কাছ থেকে হাদিসটি শুনেছি, তিনি আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, মানসুরের হাদীসের অনুরূপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৩ | 4523 | ٤۵۲۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والذين تبوءوا الدار والإيمان “মুহাজীরদের যারা এ নগরীতে বসবাস করে আসছে ও ঈমান এনেছে, (তারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তাঁর জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না)” (৫৯ঃ ৯)
৪৫২৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … আমর ইবনু মাইমুন (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার পরবর্তী খলীফাকে অসীয়ত করেছি, প্রথম যুগের মুহাজিরদের হক আদায় করার জন্য এবং আমার পরবর্তী খলীফাকে আনসারদের ব্যাপারে অসীয়ত করেছি, যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করতেন এবং ঈমান এনেছিলেন যেন সে তাদের পুণ্যবানদের সৎকর্মকে গ্রহণ করে এবং দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৪ | 4524 | ٤۵۲٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ويؤثرون على أنفسهم “এবং তারা তাদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় (নিজেদের অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও) … শেষ পর্যন্ত (৫৯ঃ ৯) الخصاصة অর্থ ক্ষুধা। المفلحون অর্থ যারা (জান্নাতে) চিরকাল থাকার সফলতা অর্জন করেছেন। الفلاح অর্থ স্থায়িত্ব। حي على الفلاح অর্থ সফলতা ও চিরস্থায়ী জীবনের দিকে তাড়াতাড়ি আস। হাসান (রহঃ) বলেন, حاجة অর্থ হিংসা।
৪৫২৪। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম ইবনু কাসীর (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে পাঠালেন, কিন্তু তিনি তাদের কাছে কিছুই পেলেন না। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন কেউ আছে কি, যে আজ রাতে এ লোকটিকে মেহমানদারী করতে পারে? আল্লাহ তার প্রতি রহমত করবেন। তখন আনসারদের একজন দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আছি। এরপর তিনি তাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং নিজ স্ত্রীকে বললেন, ইনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহমান, কোন জিনিস জমা রাখবে না। মহিলা বলল, আল্লাহর কসম! আমার কাছে ছেলে-মেয়েদের খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বললেন, ছেলে-মেয়েরা রাতের খাবার চাইলে তুমি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দিও এবং বাতি নিভিয়ে দিও। আজ রাতে আমরা অভুক্ত থাকব। সুতরাং মহিলা তা-ই করল। পরদিন সকালে আনসার সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলে তিনি বললেন, অমুক ব্যাক্তি ও তার স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন, “এবং তারা তাদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও” (সূরা ৫৯, আয়াত ০৯)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৫ | 4525 | ٤۵۲۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا تتخذوا عدوي “(হে মু’মিনগণ) আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না” (৬০ঃ১)
সুরা মুম্‌তাহিনা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, لَا تَجْعَلْنَا আমাদেরকে কাফিরদের হাতে শাস্তি দিও না। তাহলে তারা বলবে, যদি মুসলিমরা হাকের ওপর থাকত, তাহলে তাদের ওপর এ মুসীবত আসত না। بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহাবীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাঁরা যেন তাদের ঐ স্ত্রীদের বর্জন করে, যারা মক্কাতে কাফির অবস্থায় বিদ্যমান আছে।

৪৫২৫। হুমায়দী (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর (রাঃ), মিকদাদ (রাঃ) ও আমাকে পাঠালেন এবং বললেন, তোমরা ‘রওদা খাখ’ নামক স্থানে যাও। সেখানে এক উট-আরোহিণী মহিলা পাবে। তার কাছে একটি পত্র রয়েছে, তোমরা তার কাছ থেকে সেই চিঠিটি নিয়ে নিবে। এরপর আমরা রওনা হলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ছুটে চলল। যেতে যেতে আমরা রওদায় গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছেই আমরা উট-আরোহিণীকে পেয়ে গেলাম। আমরা বললাম, পত্রখানা বের কর। সে বলল, আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, অবশ্যই তুমি পত্রখানা বের করবে, তা না হলে তোমাকে বিবস্ত্র করে ফেলা হবে। এরপর সে তার চুলের বেণী থেকে পত্রখানা বের করল। আমরা পত্রখানা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম।

দেখা গেল, পত্রখানা হাতিব ইবনু আবূ বালতাআহ (রাঃ) এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে লিখা। এ চিঠিতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিষয় তাদের কাছে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হাতিব কী ব্যাপার? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ব্যাপারে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি কুরাইশ বংশীয় লোকদের সাথে বসবাসকারী এক ব্যাক্তি, কিন্ত বংশগতভাবে তাদের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। আপনার সাথে যত মুহাজির আছেন, তাদের সবারই সেখানে আত্নীয়-স্বজন রয়েছে। এসব আত্নীয়-স্বজনের মক্কায় তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম, যেহেতু তাদের সাথে আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই, তাই এবার যদি আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি, তাহলে হয়তো তারাও আমার আত্মীয়স্বজনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। কুফর ও নিজ ধর্ম ত্যাগ করার মনোভাব নিয়ে আমি এ কাজ করিনি।

তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। তখন উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন এখনই আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তুমি কি জানো না, আল্লাহ অবশ্যই বদরে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ “তোমরা যা চাও কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি”। আমর বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছেঃ “হে ঈমানদারগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না” (সূরা ৬০, আয়াত ০১)। সুফইয়ান বলেন, আয়াতটি হাদিসের অংশ নাকি আমর (রাঃ) এর কথা, তা আমি জানি না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৬ | 4526 | ٤۵۲٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا تتخذوا عدوي “(হে মু’মিনগণ) আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না” (৬০ঃ১)
৪৫২৬। আলী (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, সুফইয়ান ইবনু উয়াইনা (রহঃ) কে “হে মুমিনগণ! আমার শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না” আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মানুষ বর্ণনার মাঝে তো এমনই পাওয়া যায়। আমি এ হাদিসটি আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে মুখস্ত করেছি। এর মধ্য থেকে একটি অক্ষরও আমি বাদ দেইনি। আমার ধারণা, আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে আমি ব্যতীত আর কেউ এ হাদিস মুখস্ত করেনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৭ | 4527 | ٤۵۲۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءكم المؤمنات مهاجرات “(হে মু’মিনগণ!) যখন তোমাদের কাছে মু’মিন নারীরা দেশত্যাগী হয়ে আসেঃ (৬০ঃ ১০)
৪৫২৭। ইসহাক (রহঃ) … উরওয়া (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, কোন মুমিন মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হিজরত করে এলে, তিনি তাকে আল্লাহর এই আয়াতের ভিত্তিতে যাচাই করতেন- “হে নাবী! মুমিন নারীরা যখন আপনার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজ সন্তানকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়’আত গ্রহণ করবেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (৬০ঃ ১২)।

উরওয়া (রহঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, যে মুমিন নারী এসব শর্ত মেনে নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলতেন, আমি কথার মাধ্যমে তোমাকে বায়’আত করে নিলাম। আল্লাহর কসম! বায়’আত গ্রহণকালে কোন নারীর হাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতকে স্পর্শ করেনি। নারীদেরকে তিনি শুধু এ কথার দ্বারাই বায়’আত করতেন- قَدْ بَايَعْتُكِ عَلَى ذَلِكَ “আমি তোমাকে এ কথার উপর বায়’আত করলাম”।

ইউনুস, মা’মার ও আবদুর রহমান ইবন ইসহাক (রহঃ) যুহরীর মাধ্যমে উক্ত বর্ণনার মুতাবআত (সমর্থন) করেছেন। ইসহাক ইবন রাশীদ যুহরী থেকে এবং যুহরী উরওয়া ও আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৮ | 4528 | ٤۵۲۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫২৮। আবূ ম’মার (রহঃ) … উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়’আত গ্রহণ করেছি। এরপর তিনি আমাদের সামনে পাঠ করলেন, “তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না”। এরপর তিনি আমাদেরকে মৃত ব্যাক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করলেন। এ সময় এক মহিলা তার হাত টেনে নিয়ে বলল, অমুক মহিলা আমাকে বিলাপে সাহায্য করেছে, আমি তাকে এর বিনিময় দিতে চেয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছুই বলেন নি। এরপর মহিলাটি উঠে চলে গেল এবং পুনরায় ফিরে আসলো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বায়’আত করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫২৯ | 4529 | ٤۵۲۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫২৯। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বানী وَلاَ يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ “এবং তারা সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না” এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, এটি একটি শর্ত, যা আল্লাহ নারীদের প্রতি আরোপ করেছেন (যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়’আত করতে আসতেন)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩০ | 4530 | ٤۵۳۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫৩০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি এসব শর্তে আমার কাছে বায়’আত করবে যে, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না, যিনা করবে না এবং চুরি করবে না। এরপর তিনি নারীদের শর্ত সম্পর্কিত আয়াত পাঠ করলেন। বর্ণনাকারী সুফইয়ান প্রায়ই বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি পাঠ করেছেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের যে ব্যাক্তি এসব শর্ত পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন। আর যে ব্যাক্তি এসবের কোন একটি করে ফেলবে এবং তাকে (দুনিয়াতে) শাস্তিও দেয়া হবে, তবে এ শাস্তি তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যাক্তি এসবের কোন একটি করে ফেলল এবং আল্লাহ তা গোপন রাখলেন, তাহলে এ বিষয়টি আল্লাহর কাছে রইল। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন অথবা তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। আবদুর রহমান (রহঃ) মা’মার (রহঃ) এর সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩১ | 4531 | ٤۵۳۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)
৪৫৩১। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি ঈদুল-ফিতরের দিন ঈদের সালাত (নামায/নামাজ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলাম এবং আবূ বকর (রাঃ), উমার (রাঃ) এবং উসমান (রাঃ)ও সাথে ছিলেন। তাঁরা সকলেই খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর তিনি খুতবা দিয়েছেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নামলেন। তখন তিনি যে লোকজনকে হাতের ইশারায় বসাচ্ছিলেন, এ দৃশ্য আমি এখন ও যেন দেখতে পাচ্ছি। এরপর তিনি তাদের দুভাগ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং মহিলাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ)ও ছিলেন। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে নাবী! মুমিন নারীরা যখন আপনার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজ সন্তানকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না”। তিনি পূর্ণ আয়াত তিলাওয়াত করে শেষ করলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা কি এই শর্ত পূরণে রাজি আছো? একজন মহিলা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! এ ছাড়া আর কোন মহিলা কোন উত্তর দেয়নি। এ মহিলাটি কে ছিলেন, হাসান (রাঃ) তা জানতেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দান করো। তখন বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় বিছিয়ে দিলেন এবং মহিলারা তাদের রিং ও আংটি বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে লাগলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩২ | 4532 | ٤۵۳۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ من بعدي اسمه أحمد “যিনি আমার পরে আসবেন এবং যার নাম হবে আহমাদ” (৬১ঃ ৬)
সুরা সাফ্‌ফ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مَنْ أَنْصَارِيْٓ إِلَى اللهِ অর্থ, আল্লাহর পথে কে আমার অনুসরণ করবে? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مَرْصُوْصٌ ঐ বস্তু যার এক অংশ অপর অংশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ব্যতীত অপরাপর তাফসীরকারের মধ্যে رَّصَاصِ (মানে শিলা) ধাতু থেকে مَرْصُوْصًا শব্দটির উৎপত্তি।

৪৫৩২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … জুবাইর ইবনু মুত’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “আমার অনেকগুলো নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ এবং আমি মাহী, যার দ্বারা আল্লাহ সকল কুফরী বিলুপ্ত করবেন। এবং আমি হাশির, আমার পিছনে সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং আমি আকিব, সর্বশেষ আগমনকারী”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৩ | 4533 | ٤۵۳۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وآخرين منهم لما يلحقوا بهم “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি” (৬২ঃ৩) উমর (রাঃ) فاسعوا إلى ذكر الله এর স্থলে امضوا إلى ذكر الله (ধাবিত হও আল্লাহ্‌র দিকে) পড়তেন।
৪৫৩৩। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসেছিলাম। এই অবস্থায় তাঁর উপর নাযিল হল সূরা জুমু’আ, যার একটি আয়াত হল- “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি”। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রাঃ)ও উপস্থিত ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান (রাঃ) এর উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের কাছে থাকলেও আমাদের কিছু লোক অথবা তাদের এক ব্যাক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৪ | 4534 | ٤۵۳٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وآخرين منهم لما يلحقوا بهم “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি” (৬২ঃ৩) উমর (রাঃ) فاسعوا إلى ذكر الله এর স্থলে امضوا إلى ذكر الله (ধাবিত হও আল্লাহ্‌র দিকে) পড়তেন।
৪৫৩৪। আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের লোক অথবা তাদের কিছু লোক অবশ্যই তা পেয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৫ | 4535 | ٤۵۳۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذا رأوا تجارة “এবং যখন তারা ব্যবসা (পণ্য দ্রব্য) দেখল (৬২ঃ ১১)
৪৫৩৫। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার জুমু’আর দিন একটি বাণিজ্য দল আসল, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। বারজন লোক ছাড়া সকলেই সেদিকে ছুটে গেল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করলেন- “এবং যখন তারা দেখল ব্যবসা ও খেল-তামাশা, তখন তারা (আপনাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে) সেদিকে ছুটে গেল” (৬২ঃ ১১)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৬ | 4536 | ٤۵۳٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المنافقون قالوا نشهد إنك لرسول الله إلى لكاذبون “যখন মুনাফিকগণ তাদের কাছে আসে, তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহ্‌র রাসুল। আল্লাহ্‌ জানেন যে, তুমি নিশ্চয়ই তাঁর রাসুল এবং আল্লাহ্‌ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী” (৬৩ঃ ১)
৪৫৩৬। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে বলতে শুনলাম, আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে এবং সে এও বলল, আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই। এ কথা আমি আমার চাচা কিংবা উমার (রাঃ) এর কাছে বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। ফলে তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁকে বিস্তারিত সব বললাম। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তাঁর সাথীদের কাছে খবর পাঠালেন, তারা সকলেই কসম করে বলল, এই কথা তারা বলেনি। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথাকে মিথ্যা ও তার কথাকে সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন মনকষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। আমি (মনের দুঃখে) ঘরে বসে ছিলাম এবং আমার চাচা আমাকে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছেন এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে তুমি কীভাবে ভাবলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে” (৬৩ঃ ০১)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে লোক পাঠালেন এবং এ সূরা পাঠ করলেন। এরপর বললেন, হে যাইদ! আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৭ | 4537 | ٤۵۳۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ اتخذوا أيمانهم جنة يجتنون بها “তারা তাদের শপথগুলোকে ঢালরূপে ব্যবহার করে” (৬৩ঃ ২)
৪৫৩৭। আদম ইবনু ইয়াস (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সাথে ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূলকে বলতে শুনলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে এবং সে এও বলল, আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই। এ কথা আমি আমার চাচার কাছে বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তার সাথীদেরকে ডেকে পাঠালেন। তারা সকলেই কসম করে বলল, এই কথা তারা বলেনি। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথাকে মিথ্যা ও তাদের কথাকে সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন মনকষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। এমনকি আমি (মনের দুঃখে) ঘরে বসে ছিলাম। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে” (৬৩ঃ ০১); “তারা বলে আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা সরে পড়ে” (৬৩ঃ ০৭); “তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই” (৬৩ঃ ০৭-০৮)। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং আমার সামনে এ সূরা পাঠ করলেন। এরপর বললেন, আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৮ | 4538 | ٤۵۳۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এটা এই জন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, ফলে তাদের হৃদয় মোহর করে দেয়া হয়েছে, পরিনামে তারা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে” (৬৩ঃ ৩)
৪৫৩৮। আদম (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাই যখন বলল, “আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না” এবং এও বলল, “যদি আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করি …। তখন এ খবর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। এ কারণে আনসারগণ আমার নিন্দা করলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কসম করে বলল, এই কথা সে বলেনি। এরপর আমি বাড়ি ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার সত্যতা ঘোষণা করেছেন এবং নাযিল করেছেন- “তারা বলে তোমরা ব্যয় করবে না … শেষ পর্যন্ত। ইবন আবু যায়িদ (রহঃ) উক্ত হাদিস যায়াদ ইবন আরকামের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৩৯ | 4539 | ٤۵۳۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذا رأيتهم تعجبك أجسامهم الخ “এবং তুমি যখন তাদের দিকে তাকাও তখন তাদের দেহাকৃতি তোমাদের কাছে প্রীতিকর মনে হয় এবং তারা যখন কথা বলে, তুমি সাগ্রহে তাদের কথা শ্রবন কর, যেন তারা দেয়ালে ঠেকানো স্তম্ভ সদৃশ। তারা যে কোন শোরগোলকে মনে করে তাদেরই বিরুদ্ধে। তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ্‌ তাদেরকে ধ্বংস করুন। বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলেছে” (৬৩ঃ ৪)
৪৫৩৯। আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম। সফরে এক কঠিন অবস্থা লোকদের গ্রাস করে নিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার সাথীদের বললেন, “আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে যারা তার পাশে আছে” এবং সে এও বলল, “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই”। (এ কথা শুনে) আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে খবর দিলাম। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে ডেকে পাঠালেন। সে জোরালো কসম করে বলল, এই কথা সে বলেনি। তখন লোকেরা বলল, যাইদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিথ্যা বলেছে। তাদের এ কথায় আমি খুব মনকষ্ট পেলাম। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমার সত্যতা সম্পর্কে এই আয়াত নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে”)। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ডাকলেন, যাতে তারা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, কিন্তু তারা তাদের মাথা ফিরিয়ে নিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪০ | 4540 | ٤۵٤۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذا قيل لهم تعالوا يستغفر لكم رسول الله لووا رءوسهم ورأيتهم يصدون وهم مستكبرون “যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা এস, আল্লাহ্‌র রাসুল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। তখন তারা মাথা ফিরিয়ে নেয় এবং তুমি তাদেরকে দেখতে পাচ্ছ, তারা দম্ভ ভরে ফিরে যায়” (৬৩ঃ ৫)
আল্লাহ্‌র বাণীঃ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ “দেয়ালে ঠেকানো কাষ্ঠ স্তম্ভ” রাবী বলেন, তারা অত্যান্ত সুন্দর দেহের অধিকারী পুরুষ ছিল।

لَوَّوْا তারা মাথা নেড়ে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঠাট্টা করত। কেউ কেউ لَوَّوْا শব্দটিকে لَوَيْتُ (تَخْفِيْفِ সহকারে) পড়ে থাকেন।

৪৫৪০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) … যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সাথে ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূলকে বলতে শুনলাম, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না, যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে” এবং “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই”। এ কথা আমি আমার চাচার কাছে বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁকে বিস্তারিত সব বললাম। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তার সাথীদেরকে ডেকে পাঠালেন। তারা সকলেই কসম করে বলল, এই কথা তারা বলেনি। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথাকে মিথ্যা ও তাদের কথাকে সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন কষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। এরপর আমি ঘরে বসে ছিলাম। তখন আমার চাচা আমাকে বললেন, এমন কাজের চিন্তা কেন করলে, যাতে নবী তোমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছেন এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন? তখন আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে তখন তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল”। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে লোক পাঠালেন এবং আমার সামনে এ সূরা পাঠ করলেন ও বললেন, আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪১ | 4541 | ٤۵٤۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃهم الذين يقولون لا تنفقوا على من عند رسول الله حتى ينفضوا ينفضوا يتفرقوا ولله خزائن السموات والأرض ولكن المنافقين لا يفقهون “তারাই বলে, আল্লাহ্‌র রাসুলের সহচরদের জন্য ব্যয় করবে না, যতক্ষন না তারা সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই! কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না” (৬৩ঃ ৭)
৪৫৪১। আলী (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। বর্ণনাকারী সুফইয়ান (রহঃ) একবার غَزَاةٍ এর স্থলে جَيْشٍ বর্ণনা করেছেন। এ সময় জনৈক মুহাজির এক আনসারের পাছায় লাথি মারেন। তখন আনসারী হে আনসারী ভাইয়েরা! বলে সাহায্য চাইলেন এবং মুহাজির সাহাবী হে মুহাজির ভাইয়েরা! বলে সাহায্য চাইলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেন, কি হল, আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের মত ডাকাডাকি করছ কেন? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এক মুহাজির এক আনসারীর পাছায় লাথি মেরেছে। তিনি বললেন, বাদ দাও, এটি খুবই বাজে কথা। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর কানে পৌঁছল। সে বলল, আচ্ছা মুহাজির কি এ কাজ করেছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বলদের বহিষ্কার করবেই। এ কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছল। তখন উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এখনই এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিচ্ছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতে যেন কেউ এ কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদের হত্যা করেন। মুহাজিররা পরবর্তীতে যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন, তখন মুহাজিরদের তুলনায় আনসাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। অবশ্য পরে মুহাজিররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যান।

সুফইয়ান (রহঃ) … বলেন, এ হাদিসটি আমি আমর (রহঃ) থেকে মুখস্ত করেছি। আমর (রহঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪২ | 4542 | ٤۵٤۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃهم الذين يقولون لا تنفقوا على من عند رسول الله حتى ينفضوا ينفضوا يتفرقوا ولله خزائن السموات والأرض ولكن المنافقين لا يفقهون “তারাই বলে, আল্লাহ্‌র রাসুলের সহচরদের জন্য ব্যয় করবে না, যতক্ষন না তারা সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই! কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না” (৬৩ঃ ৭)
৪৫৪২। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাররায় যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল তাদের খবর শুনে শোকাহত হয়েছিলাম। আমার এ শোকের খবর যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) এর কাছে পৌঁছলে তিনি আমার কাছে চিঠি লিখেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, হে আল্লাহ! আনসার ও আনসারদের সন্তানদের তুমি ক্ষমা করে দাও। এ দু’আর মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের তাদের সন্তানদের ও তাদের সন্তানদের জন্য দু’আ করেছেন কিনা এ ব্যাপারে ইবনু ফাযল (রাঃ) সন্দেহ করেছেন। এ ব্যাপারে আনাস (রাঃ) তার কাছে উপস্থিত ব্যাক্তিদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) ঐ ব্যাক্তি যার শ্রবণ করাকে আল্লাহ সত্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৩ | 4543 | ٤۵٤۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يقولون لئن رجعنا إلى المدينة ليخرجن الأعز منها الأذل ولله العزة ولرسوله وللمؤمنين ولكن المنافقين لا يعلمون “তারা বলে, আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিস্কৃত করবেই। কিন্তু শক্তি তো আল্লাহরই, আর তার রাসুল ও মু’মিনদের, তবে মুনাফকরা তা জানে না” (৬৩ঃ ৮)
৪৫৪৩। হুমায়দী (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। জনৈক মুহাজির এক আনসারের নিতম্বে আঘাত করলেন। তখন আনসারী সাহাবী, হে আনসারী ভাইগণ! এবং মুহাজির সাহাবী- হে মুহাজির ভাইগণ! বলে ডাক দিলেন। আল্লাহ তার রাসূলের কানে এ কথা পৌছিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, এ কি ধরণের ডাকাডাকি? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করেছে। আনসারী হে আনসারী ভাইগণ! এবং মুহাজির সাহাবী হে মুহাজির ভাইগণ! বলে নিজ নিজ গোত্রকে ডাক দিলেন। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাদ দাও, এটি খুবই বাজে কথা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন তখন আনসাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। অবশ্য পরে মুহাজিররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যান। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর কানে পৌঁছল। সে বলল, সত্যই তারা কি এ কাজ করেছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বলদের বহিষ্কার করবেই। তখন উমার ইবনু খত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এখনই এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উমার! তাকে ছেড়ে দাও, যেন কেউ এ কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদের হত্যা করছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৪ | 4544 | ٤۵٤٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা তাগাবুন

‘আলক্বামাহ (রহ.) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর বাণীঃ وَمَنْ يُّؤْمِنْمبِاللهِ يَهْدِ قَلْبَه ‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন।’’ (৬৪ঃ ১১)-এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, এর দ্বারা এমন লোককে বোঝানো হয়েছে, যখন বিপদগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং এ কথা বুঝতে পারে যে, এ বিপদ আল্লাহর পক্ষ হতেই এসেছে।

সুরা তালাক

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِنْ ارْتَبْتُمْ যদি তোমরা অবগত না থাক যে তারা ঋতুমতী হবে কি না, যারা ঋতু হতে অবসর গ্রহণ করেছে আর যাদের এখনও তা শুরু হয়নি। فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ তাদের কৃতকর্মের শাস্তি।

৪৫৪৪। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর উমার (রাঃ) তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালেন। এতে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। এরপর তিনি বললেন, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়। এরপর পবিত্রাবস্থা না আসা পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রেখে দিক। এরপর ঋতু এসে পুনরায় পবিত্র হলে তখন যদি তালাকের প্রয়োজন মনে করে তাহলে পবিত্রাবস্থায় স্পর্শ করার পূর্বে সে যেন তাকে তালাক দেয়। আল্লাহ যে ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, এটি সেই ইদ্দত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৫ | 4545 | ٤۵٤۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এবং গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আল্লাহকে যে ভয় করে, আল্লাহ্‌ তার সমস্যা সহজে সমাধান করে দিবেন” (৬৫ঃ ৪) وأولات الأحمال এর একবচন ذات حمل
৪৫৪৫। সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) … আবূ সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে আসল, যখন আবূ হুরাইরা (রাঃ) তাঁর সাথে বসে ছিলেন। লোকটি বলল, এক মহিলা তার স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর বাচ্চা প্রসব করেছে। সে এখন কীভাবে ইদ্দত পালন করবে, এ বিষয়ে আপনার রায় দিন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইদ্দত সম্পর্কিত হুকুম দুটির যেটি দীর্ঘ, তাকে সেটি পালন করতে হবে। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর হুকুম তো হল- গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের [আবূ সালামা (রাঃ)] এর সাথে একমত। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর ক্রীতদাস কুরাইবকে বিষয়টি জিজ্ঞেসের জন্য উম্মে সালামা (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন। তিনি বললেন, সুবাই’আ আসলামিয়া (রাঃ) গর্ভবতী থাকাকালীন সময়ে তার স্বামী নিহত হন, এবং মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর তিনি একটি সন্তান প্রসব করলেন। এরপর তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হল, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিয়ে দিয়ে দিলেন। যারা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আবূ সানাবিল।

(অন্য এক সনদে) সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ও আবূন নু’মান, হাম্মাদ ইবনু যায়দ ও আইয়ুবের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, তিনি বলেছেন, আমি ঐ মজলিশে ছিলাম, যেখানে আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গীরা তাকে খুব সম্মান করতেন। তিনি ইদ্দত সম্পর্কিত হুকুম দু’টি থেকে দীর্ঘ সময় সাপেক্ষে হুকুমটির কথা উল্লেখ করলে আমি আবদুল্লাহ ইবনু উতবার বরাত দিয়ে সুবায়আ বিনত হারিস আসলামিয়া (রহঃ) সম্পর্কিত হাদিসটি বর্ণনা করলাম।

মুহাম্মদ ইবনু সিরিন (রহঃ) বলেন, এতে তার কতিপয় সঙ্গী সাথী আমাকে থামিয়ে দিল। তিনি বলেন, আমি বুঝালাম তারা আমার হাদিসটি অস্বীকার করছে। তাই আমি বললাম, আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) কুফাতে এখনও জীবিত আছেন, এমতাবস্থায় যদি আমি তার নাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলি, তাহলে এতে আমার চরম দুঃসাহসিকতা দেখান হবে। এ কথা শুনে আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা লজ্জিত হলেন এবং বললেন, কিন্তু তারা চাচা তো এ হাদিস বর্ণনা করেন নি। তখন আমি আবূ আতিয়া মালিক ইবনু আমিরের সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি সুবায়আ (রাঃ) এর হাদিসটি বর্ণনা করে আমাকে শোনাতে লাগলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, (এ বিষয়ে) আপনি আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে কোন কথা শুনেছেন কি? তিনি বললেন আমরা আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি সহজ পন্থা অবলম্বন না করে কঠোরতা অবলম্বন করতে চাচ্ছ? সুরা নিসা আলকুসরা এরপর নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৬ | 4546 | ٤۵٤٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يا أيها النبي لم تحرم ما أحل الله لك تبتغي مرضاة أزواجك والله غفور رحيم “হে নবী! আল্লাহ্‌ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ কেন? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ; আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (৬৬ঃ ১)
৪৫৪৬। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে, “তুমি আমার জন্য অবৈধ” তাহলে তাকে অবশ্যই এর কাফফারা দিতে হবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আরও বললেন, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৭ | 4547 | ٤۵٤۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يا أيها النبي لم تحرم ما أحل الله لك تبتغي مرضاة أزواجك والله غفور رحيم “হে নবী! আল্লাহ্‌ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ কেন? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ; আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (৬৬ঃ ১)
৪৫৪৭। ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর কাছে মধু পান করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ থাকতেন। তাই আমি ও হাফসা একমত হলাম যে, আমাদের যার ঘরেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসবেন, সে তাঁকে বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। (আমরা তাই করলাম) এবং তিনি বললেন, না, বরং আমি যয়নাব বিনতে জাহশ এর ঘরে মধু পান করেছি। তবে আমি কসম করলাম, আর কখনো মধু পান করব না। তুমি এ বিষয়টি আর কাউকে জানাবে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৮ | 4548 | ٤۵٤۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ قد فرض الله لكم تحلة أيمانكم والله مولاكم وهو العليم الحكيم “আল্লাহ্‌ তোমাদের শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন, আল্লাহ্‌ তোমাদের সহায়, তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়” (৬৬ঃ ২)
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ تَبْتَغِيْ مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ “তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ (৬৬ঃ ১)

৪৫৪৮। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খত্তাব (রাঃ) কে একটি আয়াতের (সূরা তাহরীমের) ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেসের জন্য আমি এক বছর ধরে চেয়েছিলেম, কিন্তু তাঁর ব্যাক্তিত্বের প্রভাবের ভয়ে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। অবশেষে একবার হাজ্জ (হজ্জ) করার উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সাথে যাত্রা করলাম। ফিরে আসার সময় আমরা যখন কোন একটি পথ অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে একটি পিলু গাছের আড়ালে গেলেন। তিনি প্রয়োজন সেরে না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর সাথে পথ চলতে চলতে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই দুজন স্ত্রী কারা, যারা তাঁর বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করেছিল? তিনি বললেন, তারা হল আয়িশা এবং হাফসা। তারপর আমি তাঁকে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে এই ব্যাপারে এক বছর আগেই জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনাকে আমি সম্মান করি বলে তা করতে পারিনি। উমার (রাঃ) বললেন, আমাকে জিজ্ঞেস করতে পিছপা হবে না। যদি তুমি মনে কর যে আমি জানি তাহলে জিজ্ঞেস করবে, এবং আমি যদি জানি তাহলে আমি তোমাকে বলব।

এরপর উমার (রাঃ) আরও বললেন, আল্লাহর কসম! জাহেলী যুগে নারীদের কোন আধিকার আছে বলে আমরা মনে করতাম না। অবশেষে আল্লাহ তাদের সম্পর্কে যে বিধান নাযিল করার ছিল তা নাযিল করলেন এবং তাদের হক হিসেবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন। তিনি বলেন, একদিন আমি কোন এক বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছিলাম, এই এবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে বলল, কাজটি যদি আপনি এভাবে করেন (তাহলে ভালো হবে)। আমি বললাম, তোমার কি দরকার? এবং আমার কাজে তুমি মাথা ঘামাচ্ছ কেন? সে আমাকে বলল, হে খত্তাবের পুত্র! কি আশ্চর্য, আপনি চান না যে, আমি আপনার কথার উত্তর দেই, অথচ আপনার মেয়ে হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তর্ক করেছে, এমনকি এতে তিনি পুরো একদিন রাগান্বিত ছিলেন। এ কথা শুনে উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চাঁদরটি নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, হে আমার কন্যা! তুমি নাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তর্ক কর, ফলে তিনি দিনভর রাগান্বিত থাকেন?

হাফসা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তো অবশ্যই তাঁর কথার জবাব দিয়ে থাকি। উমার (রাঃ) বললেন, জেনে রাখো! আমি তোমাকে আল্লাহর শাস্তি ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসন্তুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করছি। রূপ-সৌন্দর্যের কারণে আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসা যাকে গর্বিতা করে রেখেছে [আয়িশা (রাঃ)], সে যেন তোমাকে প্রতারিত করতে না পারে। উমার (রাঃ) বললেন, এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে উম্মে সালামা (রাঃ) এর ঘরে ঢুকলাম ও এই বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বললাম। কারণ তাঁর সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন, হে খত্তাবের পুত্র! কি আশ্চর্য, তুমি প্রত্যেক বিষয়েই হস্তক্ষেপ করছ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর স্ত্রীদের বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছ। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে এমন কঠোরভাবে ধরলেন যে, আমার রাগ কিছুটা কমে গেল।

এরপর আমি তাঁর কাছ থেকে চলে এলাম। সেসময় আমার এক আনসার বন্ধু ছিল। সে আমার অনুপস্থিতিতে এবং আমি তার অনুপস্থিতিতে খবর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে) সংগ্রহ করতাম। সেসময় আমরা গাসসানী বাদশাহের (আক্রমণের) ভয়ে ছিলাম। আমরা শুনেছিলাম যে সে আমদেরকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। তাই আমাদের অন্তর ভয়ে আতঙ্কিত ছিল। একদিন আমার আনসার বন্ধু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমার দরজায় করাঘাত করল এবং বলল, খুলুন খুলুন! আমি বললাম, গাসসানী বাদশাহ কি এসেছে? সে বলল, না, কিন্তু আরও বেশি অঘটন ঘটেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের কাছ থেকে আলাদা হলেন। আমি বললাম, হাফসা ও আয়িশার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। এরপর আমি কাপড় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। গিয়ে দেখলাম, আল্লাহর রাসূল একটি উঁচু টোঙে আবস্থান করছেন। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে উঠতে হয়। সিঁড়ির মুখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক কালো গোলাম বসা ছিল।

আমি বললাম, বলুন, উমার ইবনু খত্তাব এসেছেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিলেন, আমি তাঁকে এসব ঘটনা বললাম, এক পর্যায়ে আমি যখন উম্মে সালামার কথোপকথন পর্যন্ত পৌঁছলাম তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। এসময় তিনি একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। চাটাই ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ ও পায়ের কাছে ছিল সলম গাছের পাতার একটি স্তূপ ও মাথার উপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক পাশে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললে তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে আছে, অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল! তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি পছন্দ করো না যে, তারা দুনিয়া লাভ করুক, আর আমরা আখিরাত লাভ করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৪৯ | 4549 | ٤۵٤۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وإذ أسر النبي إلى بعض أزواجه حديثا فلما نبأت به وأظهره الله عليه عرف بعضه وأعرض عن بعض فلما نبأها به قالت من أنبأك هذا قال نبأني العليم الخبير “স্মরণ কর, নবী তার সহধর্মিণীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। যখন সে তা অন্যকে বলে দিল এবং আল্লাহ্‌ নবী (সাঃ) কে তা জানিয়ে দিলেন। তখন নবী (সাঃ) এ বিষয়ে কিছু ব্যক্ত করলেন এবং কিছু অব্যক্ত রাখলেন। যখন নবী (সাঃ) তা তার সে স্ত্রীকে জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে এ বিষয়ে অবহিত করল? নবী (সাঃ) বললেন, আমাকে অবহিত করেছেন তিনি যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত” (৬৬ঃ ৩) এ বিষয়ে আয়শা (রাঃ)-ও এক হাদীস নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৪৫৪৯। মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু ইবরাহিম ইবনু মুগীরা আল জুফী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করলাম, আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের কোন দু’জন তার ব্যাপারে একমত হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? আমি আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি বললেন, তারা হল আয়িশা এবং হাফসা (রাঃ)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫০ | 4550 | ٤۵۵۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيْرٌ কিন্তু যদি তোমরা নাবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে পোষকতা কর তবে জেনে রাখ, আল্লাহ্ই তাঁর বন্ধু এবং জিবরীল ও সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনগণও, উপরন্তু অন্যান্য ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী (৬৬ঃ ৪) ظَهِيْرٌ অর্থ সাহায্যকারী تَظَاهَرُوْنَ পরস্পর তোমরা একে অপরকে সাহায্য করছ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,قُوْآ أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَأَدِّبُوْهُمْ ‘‘তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে তাকওয়া অবলম্বন করার জন্য ওসীয়াত কর এবং তাদেরকে আদব শিক্ষা দাও।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ إن تتوبا إلى الله فقد صغت قلوبكما “যদি তোমরা উভয়েই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেহেতু তোমাদের হৃদয় ঝুঁকে পড়েছে। আল্লাহ্‌ তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। (৬৬ঃ ৪) صَغَوْتُ এবং َأَصْغَيْتُ (ثلاثى مجرد وموزيد فيه) উভয়ের অর্থ আমি ঝুঁকে পড়েছি। لِتَصْغَى অর্থ- لِتَمِيْلَ মানে যেন সে অনুরাগী হয়, ঝুঁকে পড়ে।

৪৫৫০। হুমায়দী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে একমত হয়ে যে দুজন নারী পরস্পরকে সাহায্য করেছিল তাদের সম্পর্কে উমার (রাঃ) কে আমি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিজ্ঞেসের সুযোগ না পেয়ে আমি এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। অবশেষে একবার হাজ্জ (হজ্জ) করার উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সাথে যাত্রা করলাম। আমরা ‘যাহরান’ নামক স্থানে পৌঁছলে উমার (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে গেলেন। এরপর আমাকে বললেন, আমার জন্য ওযুর পানির ব্যবস্থা কর। আমি পাত্র ভরে পানি নিয়ে আসলাম এবং ঢালতে লাগলাম। প্রশ্ন করার সুযোগ মনে করে আমি তাঁকে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ দুজন মহিলা কারা, যারা পরস্পরকে সাহায্য করেছিল? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি বললেন, তারা হল আয়িশা এবং হাফসা (রাঃ)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫১ | 4551 | ٤۵۵۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ عسى ربه إن طلقكن أن يبدله أزواجا خيرا منكن مسلمات مؤمنات قانتات تائبات عابدات سائحات ثيبات وأبكارا “যদি নাবী তোমাদের সবাইকে পরিত্যাগ করেন, তবে তাঁর প্রতিপালক সম্ভবত তাকে দেবেন তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্ত্রী তাঁকে দিবেন, যারা হবে আত্মসমার্পনকারী, বিশ্বাসী, অনুগত, তাওবাহ্কারিণী, ইবাদাতকারিণী, সওম পালনকারীণী, অকুমারী ও কুমারী।“ (৬৬ঃ ৫)
৪৫৫১। আমর ইবনু আউন (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সচেতন করার জন্য তার সহধর্মীগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই আমি তাঁদেরকে বললাম, যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে তার প্রতিপালক সম্ভবত তাকে দেবেন তোমাদের অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী। তখন এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫২ | 4552 | ٤۵۵۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ عتل بعد ذلك زنيم “রুঢ় স্বভাব এবং তদপুরি কুখ্যাত” (৬৮ঃ ১৩)
সুরা মুলক

التَّفَاوُتُ বিভিন্নতা। التَّفَاوُتُএবং التَّفَوُّتُ শব্দ দু’টো একই অর্থবোধক। تَمَيَّزُ টুকরো হয়ে যাবে বা ফেটে পড়বে। مَنَاكِبِهَا তার দিগদিগন্ত। تَدَّعُوْنَ এবং تَدْعُوْنَবাক্যদ্বয় تَذَّكَّرُوْنَ ও تَذْكُرُوْنَ এর মতই। يَقْبِضْنَ তারা তাদের পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, صَافَّاتٍ তারা তাদের পাখা বিস্তার করে। نُفُوْرٌ কুফর ও সত্যবিমুখতা।

সুরা কলম

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, حَرْدٍ অর্থ جِدٍّ فِيْٓ أَنْفُسِهِمْ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, اِنَّالَضَآلُّوْنَ অর্থ আমরা আমাদের জান্নাতের স্থানের কথা ভুলে গিয়েছি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ব্যতীত অন্যান্য ভাষ্যকার বলেছেন, كَالصَّرِيْمِ অর্থ রাত থেকে বিচ্ছিন্ন প্রভাতের মত বা দিন থেকে বিচ্ছিন্ন রাতের মত। صَّرِيْمُ ঐ বালুকণাকেও বলা হয় যা বালুস্তূপ হতে বিচ্ছিন্ন। مَصْرُوْمُ- صَرِيْمُ শব্দ قَتِيْلٍ এবং مَقْتُوْلٍ এর মত।

৪৫৫২। মাহমুদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ زَنِيمٍ‏ “রুঢ় এবং তদুপরি কুখ্যাত” আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এই ব্যাক্তিটি হল কুরাইশ গোত্রের এমন এক ব্যাক্তি, যার ঘাড়ে বকরীর চিহ্নের মত একটি বিশেষ চিহ্ন ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৩ | 4553 | ٤۵۵۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ عتل بعد ذلك زنيم “রুঢ় স্বভাব এবং তদপুরি কুখ্যাত” (৬৮ঃ ১৩)
৪৫৫৩। আবূ নুআঈম (রহঃ) … হারিস ইবনু ওয়াহব খুযাই (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমাদের জান্নাতী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়, কিন্তু তারা যদি কোন বিষয়ে শপথ করে ফেলেন, তাহলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। এবং আমি কি তোমাদের জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? যারা রুঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামী।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৪ | 4554 | ٤۵۵٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يوم يكشف عن ساق “স্মরণ কর, সে চরম সংকট দিনের কথা” (৬৮ঃ ৪২)
৪৫৫৪। আদম (রহঃ) … আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমাদের প্রতিপালক যখন তাঁর পায়ের গোড়ালির জ্যোতি বিকীর্ণ করবেন, তখন ঈমানদার নারী ও পুরুষ সবাই তাঁকে সিজদা করবে। কিন্তু যারা দুনিয়াতে লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য সিজদা করত, তারা কেবল অবশিষ্ট থাকবে। তারা সিজদা করতে চাইলে তাদের পিঠ একখণ্ড কাঠফলকের মত শক্ত হয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৫ | 4555 | ٤۵۵۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ودا ولا سواعا ولا يغوث ويعوق “তোমরা পরিত্যাগ করবে না ওয়াদ, সুওয়’আ, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে (৭১ঃ ২৩)
সুরা হাক্‌কা

عِيْشَةٍ رَّاضِيَةٍ সন্তোষজনক জীবন। الْقَاضِيَةَ প্রথম মৃত্যুটাই যদি এমন হত যে, তারপর আর জীবিত না করা হত। مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِيْنَ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে। احِدِ শব্দটি একবচন ও বহুবচন উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْوَتِيْنَ হৃদপিন্ডের সঙ্গে যুক্ত রগ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, طَغٰى অতিরিক্ত হয়েছে বা বেশি হয়েছে। বলা হয় بِالطَّاغِيَةِ তাদের বিদ্রোহ এবং কুফরীর কারণে طَغَتْ عَلَى الْخَزَّانِ বায়ু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং সামূদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছে যেমন পানি নূহ্ সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।

সুরা মা’আরিজ

الْفَصِيْلَةُ তাদের পূর্ব-পুরষদের থেকে সর্বাধিক নিকটাত্মীয়, যাদের থেকে তারা পৃথক হয়েছে এবং যাদের দিকে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়। لِلشَّوٰى দু’হাত, দু’পা, শরীরের বিভিন্ন প্রান্ত ভাগ এবং মাথার চামড়া সবগুলোকে شَوَاةٌ বলা হয়। الْعِزُوْنَ দলসমূহ। এর একবচন عِزَةٌ।

সুরা নুহ

طْوَارًا পর্যায়ক্রমে, বলা হয়। عَدَا طَوْرَهُ সে তার মর্যাদাকে অতিক্রম করে গেছে। بِالتَّخْفِيْفِ الكُبَّارُ এর তুলনায় بالتشديد الكُبَّارُ এর অর্থের মাঝে কিছু আধিক্য ও কঠোরতা বিদ্যমান আছে। এমনিভাবে جُمَّالٌ এর মাঝে جَمِيْلٌ -এর তুলনায় অধিকতর সৌন্দর্যের অর্থ বিদ্যমান আছে। كُبَّارٌ الْكَبِيْرُ ও بِالتَّخْفِيْفِ الكُبَّارُ এর অবস্থা অনুরূপই। আরবীয় লোকের তাশ্দীদের সঙ্গে رَجُلٌ حُسَّانٌ وَجُمَّالٌ ও বলেন, এমনিভাবে তাখ্ফীফের সঙ্গে رَجُلٌ حُسَّانٌ وَجُمَّالٌ ও বলে থাকেন। دَيَّارًا শব্দটির উৎপত্তি دَوْرٍ ধাতু থেকে। তবে যদি তাকে فَيْعَالٌ এর ওযনে ধরা হয় তাহলে এর উৎপত্তি হবে الدَّوَرَانِ শব্দমূল থেকে। যেমন, ‘উমার (রাঃ) الْحَيُّ الْقَيَّامُ পড়েছেন। قُمْتُ থেকে الْقَيَّامُ শব্দটির উৎপত্তি। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, دَيَّارًا কাউকে। تَبَارًا ধ্বংস। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مِدْرَارًا একটি অপরটির পেছনে। وَقَارًا শ্রেষ্ঠত্ব।

৪৫৫৫। ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে প্রতিমার পূজা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর জাতির মাঝে প্রচলিত ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ ‘দুমাতুল জান্দাল’ নামক স্থানে অবস্থিত কালব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, সূওয়া’আ হল হুযাইল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুস ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটে ‘জাওফ’ নামক স্থানে। ইয়াউক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, নাসর ছিল যুলকালা গোত্রের হিমযায় শাখারদের মূর্তি। নূহ (আলাইহিস সালাম) এর জাতির কতিপয় নেক লোকের নাম নাসর ছিল। তারা মারা গেলে, শয়তান তাদের জাতির লোকদের হৃদয়ে এই কথা ঢুকিয়ে দিল যে, তারা যেখানে বসে মজলিস করত, সেখানে তোমরা কিছু মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সকল নেক লোকের নামানুসারেই এগুলোর নামকরণ কর। সুতরাং তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা করতে শুরু করে দেয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৬ | 4556 | ٤۵۵٦

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৫৬। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীকে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। এ সময়ই জ্বীনদের আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে বাঁধা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা হয়েছে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জ্বীন শয়তানরা ফিরে আসলে অন্য জ্বীনরা তাদের বলল, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে আমাদের উপর বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা হয়েছে লেলিহান অগ্নিশিখা। তখন শয়তান বলল, আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে তোমাদের উপর যে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে, অবশ্যই তা কোন নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই হয়েছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সফর কর এবং দেখ ব্যাপারটা কি ঘটেছে? তাই আসমানি খবরাদি সংগ্রহের ব্যাপারে যে বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে, এর কারণ খুঁজতে তারা সকলেই পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে অনুসন্ধান সফরে বেরিয়ে পড়ল।

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল তারা ‘নাখলা’ নামক স্থানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে উপস্থিত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখান থেকে উকায বাজারের দিকে যাওয়ার জন্য ঠিক করেছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। জ্বীনদের ঐ দলটি কুর’আন শুনতে পেয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে তা শুনতে লাগল এবং বলল, আসমানি খবরাদি এবং তোমাদের মাঝে এটই মূলত বাঁধা সৃষ্টি করেছে। তারপর তারা তাদের জাতির কাছে ফিরে এসে বলল, হে আমাদের জাতি! আমরা এক বিস্ময়কর কুর’আন (তিলাওয়াত) শুনেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এতে আমরা ঈমান এনেছি। আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপর আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি নাযিল করলেনঃ “বলুন, আমার প্রতি ওহী প্রেরিত হয়েছে যা জ্বীনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে”। জ্বীনদের উপরোক্ত কথা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৭ | 4557 | ٤۵۵۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা মুয্‌যাম্মিল

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, وَتَبَتَّلْ একনিষ্ঠভাবে মগ্ন হওয়া। হাসান (রহঃ) বলেন, أَنْكَالًا শৃঙ্খল। مُثْقَلَةٌ بِهٰ ভারে অবনত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَثِيْبًامَّهِيْلًا বহমান বালুকারাশি। وَبِيْلًا কঠিন।

সুরা মুদ্‌দাছছির

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, عَسِيْرٌ কঠিন। قَسْوَرَةٌ মানুষের কোলাহল, আওয়াজ। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, قَسْوَرَةٌ বাঘ। প্রত্যেক কঠিন বস্তুকে الْقَسْوَرَةُ বলা হয়। مُسْتَنْفِرَةٌ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়নপর।

৪৫৫৭। ইয়াহইয়া (রহঃ) … ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) কে কুর’আনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াত (সূরা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিলি বললেন, ‏يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (সূরা মুদ্দাসসির)। আমি বললাম, লোকজন তো বলে- اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (সূরা আলাক)। এতে আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং তুমি যা বললে আমিও তাকে তাই বলেছিলাম। এতে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা বলেছেন তা বাদে আমি তোমাকে কিছুই বলব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ রত অবস্থায় ছিলাম। আমার ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নেমে এলাম। তখন আমি আমাকে ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর আমি ডানে তাকালাম, কিন্তু কিছু দেখলাম না। বামে তাকালাম, কিন্তু এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর সামনে তাকালাম, এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর পিছনে তাকালাম, কিন্তু এদিকেও আমি কিছু দেখলাম না। অবশেষে আমি উপরে তাকালাম এবং কিছু একটা দেখলাম। এরপর আমি খাদিজা (রাঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢাল। তাই তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করে এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢালে। এরপর নাযিল হলঃ “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৮ | 4558 | ٤۵۵۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ قم فأنذر “উঠ, সতর্কবাণী প্রচার কর” (৭৪ঃ ২)
৪৫৫৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ করেছিলাম। উসমান ইবনু উমার, আলী ইবনু মুবারক (রহঃ) থেকে যে হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনিও অনুরূপ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৫৯ | 4559 | ٤۵۵۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وربك فكبر “এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর (৭৪ঃ ৩)
৪৫৫৯। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) … ইয়াহইয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন আয়াতটি প্রথম নাযিল হয়েছিল। তিলি বললেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (সূরা মুদ্দাসসির)। আমি বললাম, আমাকে তো বলা হয়েছে, اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (সূরা আলাক)। এ কথা শুনে আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, এ সম্পর্কে আমি জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বলেছেন, ‏يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ প্রথম নাযিল হয়েছে। তখন আমি বললাম, আমাকে তো বলা হয়েছে- ‏اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ প্রথমে নাযিল হয়েছিল। তখন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আমি তোমাকে তাই বলছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ রত অবস্থায় ছিলাম। ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নেমে উপত্যকার মাঝে পৌঁছলে আমি আমাকে ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি সামনে, পিছনে, ডানে ও বামে তাকালাম। দেখলাম সে (ফেরেশতা জিবরীল) আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। এরপর আমি খাদিজার (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢাল। তখন আমার প্রতি নাযিল হলঃ “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন” (সূরা মুদ্দাসসির)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬০ | 4560 | ٤۵٦۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وثيابك فطهر “তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ” (৭৪ঃ ৪)
৪৫৬০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে বলেন, একদা আমি চলছিলাম, এমতাবস্থায় আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উপরে তুলেই আমি দেখলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। আমি তাঁর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন … অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন” এই আয়াতগুলো সালাত (নামায/নামাজ) ফরয হওয়ার আগে নাযিল হয়েছিল। الرِّجْزَ অর্থ হল মূর্তিসমূহ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬১ | 4561 | ٤۵٦۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والرجز فاهجر “এবং অপবিত্রতা হতে দূরে থাক। (৭৪ঃ ৫) কেউ কেউ বলেন, الرجز এবং والرجس অর্থ আযাব
৪৫৬১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে বলেন, একদা আমি পথ চলছিলাম, এমতাবস্থায় আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি দেখলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। আমি তাঁর ভয়ে এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম যে মাটিতে পড়ে গেলাম। এরপর আমি আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! …… অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন”। আবূ সালামা (রহঃ) বলেছেন, الرِّجْزَ অর্থ হল মূর্তিসমূহ। এরপর অধিক পরিমাণে ওহী নাযিল হতে লাগল এবং ধারাবাহিকভাবে ওহী আসতে থাকল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬২ | 4562 | ٤۵٦۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا تحرك به لسانك لتعجل به “তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা সঞ্চালন করবে না। (৭৫ঃ ১৬) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, سدى অর্থ নিরর্থক ও উদ্দেশ্যহীন, ليفجر أمامه অর্থ শীঘ্রই তওবা করব, শীঘ্রই তওবা করব। لا وزر অর্থ কোন আশ্রয়স্থল নেই।
৪৫৬২। হুমায়দী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন ওহী নাযিল হত তখন তিনি দ্রুত তাঁর জিহ্বা নাড়তেন (পড়তেন)। রাবী সুফইয়ান বলেন, এভাবে করার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ওহী মুখস্ত করা। এতে আল্লাহ নাযিল করলেনঃ “তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না”

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৩ | 4563 | ٤۵٦۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إن علينا جمعه وقرآنه “এ কুরআন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমারই” (৭৫ঃ ১৭)
৪৫৬৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) … মূসা ইবনু আবূ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বানীঃ ‏لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা নাড়াবেন না” সম্পর্কে সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন ওহী নাযিল করা হত, তখন তিনি তাঁর ঠোঁট দুটো দ্রুত নাড়তেন। তখন তাঁকে বলা হল, দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী ভুলে যাবার আশংকায় এমন করতেন। নিশ্চয়ই এ কুর’আন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। অর্থাৎ আমি নিজেই তাকে তোমার স্মৃতিপটে সংরক্ষিত রাখব। তাই আমি যখন তা পাঠ করব অর্থাৎ যখন তোমার প্রতি ওহী নাযিল হতে থাকবে, তখন তুমি তার অনুসরণ করবে। এরপর তা বর্ণনা করার দায়িত্ব আমারই অর্থাৎ এ কুরআনকে তোমার মুখ দিয়ে বর্ণনা করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৪ | 4564 | ٤۵٦٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فإذا قرأناه فاتبع قرآنه قال ابن عباس قرأناه “সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি তুমি সে পাথের অনুসরণ কর” (৭৫ঃ ১৮) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, قرأناه অর্থ আমি যখন তা বর্ণনা করি فاتبع অর্থ এ অনুযায়ী আমল কর।
৪৫৬৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বানীঃ لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ – এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন ওহী নিয়ে আসতেন তখন রাসুল তাঁর জিহ্বা ও ঠোঁট দুটো দ্রুত নাড়তেন। এটা তাঁর জন্য কষ্টকর হত এবং তাঁর চেহারা দেখেই বোঝা যেত। তাই আল্লাহ তা’আলা ‏لاَ تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ * إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। এ কুর’আন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই” নাযিল করলেন। এতে আল্লাহ বলেছেনঃ এ কুরআনকে আপনার বক্ষে সংরক্ষণ করা ও পড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি, আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন, অর্থাৎ আমি যখন ওহী নাযিল করি তখন আপনি মনোযোগ সহকারে শুনুন। তারপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই অর্থাৎ আপনার মুখে তা বর্ণনা করার দায়িত্ব আমারই। রাবী বলেন, এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চলে গেলে, আল্লাহর ওয়াদা ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ মুতাবিক তা পাঠ করতেন। ‏أَوْلَى لَكَ فَأَوْلَى অর্থ দুর্ভোগ তোমার জন্য, দুর্ভোগ! تَوَعُّدٌ‏ এ আয়াতে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৫ | 4565 | ٤۵٦۵

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা দাহর

هَلْ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ অর্থাৎ কালের প্রবাহে মানুষের উপর এক সময় এসেছিল। هَلْ শব্দটি কখনো নেতিবাচক, আবার কখনো ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে এখানে অবহিতকরণ তথা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন, এক সময় মানুষের অস্তিত্ব ছিল কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন বস্তু ছিল না। আর ঐ সময়টা হল মাটি থেকে সৃষ্টি করা হতে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা পর্যন্ত। أَمْشَاجٍ সংমিশ্রণ। অর্থাৎ মাতৃগর্ভে পুরুষ ও মহিলার বীর্যের সংমিশ্রণে রক্ত এবং পরে জমাট বাঁধা রক্ত সৃষ্টি হওয়াকে أَمْشَاجٍ বলা হয়েছে। এক বস্তুর অপর বস্তুর সঙ্গে মিশ্রিত হলে তাকে مَشِيْجٌ বলে। তাকে خَلِيْطٌ ও বলা হয়। আর مَمْشُوْجٌ ও مَخْلُوْطٍ এর অর্থ একই। কেউ কেউ سَلَاسِلًا وَأَغْلَالًا পড়ে থাকেন। কিন্তু কেউ কেউ এভাবে পড়াকে জায়িয মনে করেন না। مُسْتَطِيْرًا দীর্ঘস্থায়ী বিপদ। الْقَمْطَرِيْرُ ভয়ংকর ও কঠিন। সুতরাং يَوْمٌ قَمْطَرِيْرٌ এবং يَوْمٌ قُمَاطِرٌ উভয়ই ব্যবহৃত হয়। الْعَبُوْسُ، الْقَمْطَرِيْرُ، الْقُمَاطِرُ، এবং الْعَصِيْبُ বিপদের সবচেয়ে কঠিনতম দিনকে বলা হয়। হাসান (রহ.) বলেন, النُّضْرَةُ চেহারায় সজীবতা ও হৃদয়ে আনন্দ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْأَرَآئِكِ খাট-পালঙ্ক। আর বারা (রাঃ) বলেন, وَذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا তাদের ইচ্ছেমাফিক ফল পাড়বে। মা‘মার (রহঃ) বলেন, أَسْرَهُمْ সুদৃঢ় গঠন। উটের গদির সঙ্গে শক্ত করে যে জিনিস বাঁধা থাকে তাকে مَأْسُوْرٌ বলা হয়।

সুরা মুরসালাত

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, جِمَالَاتٌ উটের সারি। ارْكَعُوْا সালাত আদায় কর। لَا يَرْكَعُوْنَ তারা সালাত আদায় করে না। لَايَنْطِقُوْنَ (তার কথা বলতে সক্ষম হবে না), وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ (আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো মুশরিক ছিলাম না) এবং الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٓٓى أَفْوَاهِهِمْ (আমি আজ মোহর লাগিয়ে দেব) এ আয়াত সম্বন্ধে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, ক্বিয়ামাতের দিন বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের বিভিন্ন অবস্থা ঘটবে। কখনো সে কথা বলতে পারবে এবং নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, আবার কখনো তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে। তখন সে আর কোন কথা বলতে সক্ষম হবে না।

৪৫৬৫। মাহমুদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি সূরা মুরসালাত নাযিল হল। আমরা তাঁর মুখে শুনে সেটি শিখছিলাম। তখন একটি সাপ বেরিয়ে এল। আমরা ওদিকে দৌড়ে গেলাম, কিন্তু সাপটি আমাদের থেকে দ্রুত পালিয়েগিয়ে গর্তে ঢুকে পড়ল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে, তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৬ | 4566 | ٤۵٦٦

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৬৬। আবদা ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইসরাইল সুত্রে আসওয়াদ ইবনু আমির পূর্বের হাদিসটির অনুসরন করেছেন। (অন্য সনদে) হাফস, আবূ মুআবিয়া এবং সুলায়মান ইবনু কারম (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (অপর এক সনদে) ইবনু ইসহাক (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে ঠিক এমনি বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৭ | 4567 | ٤۵٦۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৬৭। কুতায়বা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক গুহার মধ্যে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি সূরা মুরসালাত নাযিল হল। আমরা যত জলদি সম্ভব তাঁর মুখ থেকে শুনে সেটি শিখছিলাম। হঠাৎ একটি সাপ বেরিয়ে এলো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওটাকে মেরে ফেল। আমরা সেদিকে ছুটে গেলাম, কিন্তু সাপটি আমাদের আগে চলে গেল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে, তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৮ | 4568 | ٤۵٦۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنها ترمي بشرر كالقصر “তা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ অট্রালিকা তুল্য।” (৭৭ঃ ৩২)
৪৫৬৮। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি ঐ আয়াতের (“নিশ্চয়ই তা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ অট্টালিকার মত”-সূরা মুরসালাত আয়াত ৩২) ব্যাখ্যায় ইবনু আমির (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে ছোট কাঠের কাণ্ড সংগ্রহ করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রেখে দিতাম। আর আমরা একেই قصر বলতাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৬৯ | 4569 | ٤۵٦۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ كأنه جمالات صفر “তা পীতবর্ণ উষ্ট্রশ্রেনী সদৃশ” (৭৭ঃ ৩৩)
৪৫৬৯। আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন আমি আয়াতের (সূরা মুরসালাত, আয়াত ৩২) ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে লম্বা কাঠ সংগ্রহ করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রেখে দিতাম। আর আমরা একেই قصر বলতাম। جِمَالاَتٌ صُفْرٌ অর্থ জাহাজের রশি, যা জমা করে রাখা হত। এমনকি তা মধ্যম দেহী মানুষের সমান উঁচু হয়ে যেত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭০ | 4570 | ٤۵۷۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এ সেই দিন যেদিন তারা কিছুই বলবে না” (৭৭ঃ ৩৫)
৪৫৭০। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক গুহায় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি ‘সূরা ওয়াল মুরসালাত নাযিল হল। তিনি তা তিলাওয়াত করছিলেন, আর আমি তাঁর মুখ থেকে শুনে সেটি শিখছিলাম। তিলাওয়াতে তখনো তাঁর মুখ সিক্ত ছিল। হঠাৎ আমাদের সামনে একটি সাপ বেরিয়ে এলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওটাকে মেরে ফেল। আমরা সেদিকে ছুটে গেলাম, কিন্তু সাপটি চলে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে, তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল। উমার ইবনু হাফস বলেন, এই হাদিসটি আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনে মুখস্ত করেছি। গুহাটি মিনায় অবস্থিত বলে উল্লেখ আছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭১ | 4571 | ٤۵۷۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يوم ينفخ في الصور فتأتون أفواجا “সেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তোমরা দলে দলে সমাগত হবে” (৭৮ঃ ১৮)
সুরা নাবা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, لَا يَرْجُوْنَ حِسَابًا তারা কখনও হিসাবের ভয় করত না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, ثَجاجًا অবিরাম বর্ষণ। ألْفافًا ঘন সন্নিবিষ্ট। لَا يَمْلِكُوْنَ مِنْهُ خِطَابًا যাদেরকে আল্লাহ্ অনুমতি দিবেন, তাদের ছাড়া তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদনের ক্ষমতা কারো থাকবে না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, وَهَّاجًا উজ্জ্বল, ইবনু ‘আব্বাস ব্যতীত অন্যরা বলেন, غَسَّاقًا যেমন আরবরা বলে, চোখে পিষ্টি হয়েছে এবং ক্ষত হতে পূঁজ চুয়ে চুয়ে পড়ছে। الْغَسَاقَ এবং الْغَسِيْقَ একই অর্থ বহন করে। عَطَاءً حِسَابًا যথোচিত দান। যেমন বলা হয়, أَعْطَانِيْ مَا أَحْسَبَنِيْ অর্থাৎ সে আমাকে যথেষ্ট দান করেছে।

৪৫৭১। মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার মাঝে চল্লিশের ব্যবধান হবে। জনৈক ব্যাক্তি আবূ হুরাইরা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, এর মানে চল্লিশ দিন? কিন্তু তিনি অস্বীকার করলেন। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ মাস? এবারও তিনি অস্বীকার করলেন। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ বছর? পুনরায় তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন, এরপর আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। এতে মৃতরা জীবিত হয়ে উঠবে, যেমনি বৃষ্টির পানিতে উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন হয়। তখন মেরুদণ্ডের হাড় ছাড়া মানুষের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। কিয়ামতের দিন ঐ হাড়-খণ্ড থেকেই পুনরায় মানুষকে সৃষ্টি করা হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭২ | 4572 | ٤۵۷۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা নাযিয়াত

زَجْرَةٌ আওয়াজ বা শব্দ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ দ্বারা ভূমিকম্প বোঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, الْاٰيَةَ الْكُبْرَى তার [মূসা (আঃ)] লাঠি এবং তার হাত। سَمكَها আকাশকে স্তম্ভ ব্যতীত নির্মাণ করেছেন। طَغَى লাঠি। النَّاخِرَةُ ও النَّخِرَةُ সমার্থবোধক শব্দ। যেমন الطَّامِعِ ও الطَّمِعِ এবং الْبَاخِلِ ও الْبَخِيْلِএক অর্থবোধক শব্দ। কোন কোন মুফাস্সির বলেছেন, النَّخِرَةُ গলিত (হাড্ডি) এবং النَّاخِرَةُ খোল হাড্ডি, যার মধ্যে বাতাস ঢোকার পর আওয়াজ সৃষ্টি হয়। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْحَافِرَةِ পূর্ব জীবন। ইবনু ‘আববাস ছাড়া অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন,أَيَّانَ مُرْسٰهَا ক্বিয়ামাতের শেষ কোথায়? যেমন (আরবী ভাষায়) জাহাজ নোঙ্গর করার স্থানকে مُرْسَى السَّفِيْنَةِ বলে।

৪৫৭২। আহমদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুল দুটি এভাবে একত্রিত করে বলেছেন, কিয়ামত ও আমাকে এরূপে পাঠানো হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৩ | 4573 | ٤۵۷۳

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা ‘আবাসা

عَبَسَ সে ভ্রূকুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। مُطَهَّرَة অর্থ যারা পূত-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। এখানে পূত-পবিত্র বলে মালাইকাকে বোঝানো হয়েছে। উল্লিখিত আয়াতটি আল্লাহর বাণীঃ فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا এর অনুরূপ। পূর্বের আয়াতে মালাক এবং সহীফা উভয়কেই مُطَهَّرَةً বলা হয়েছে। অথচ التَّطْهِيْرُ এর সম্পর্ক মূলতঃ সহীফার সঙ্গে, মালায়িকার সঙ্গে নয়। তবে মালাক যেহেতু উক্ত সহীফার হামিল ও বাহক, এই হিসাবে মালাককেও مُطَهَّرَةً বলা হয়েছে। سَفَرَةٍ অর্থ মালাক (ফেরেশতা)। এর এক বচন হচ্ছে سَافِرٌ।سَفَرْتُ أَصْلَحْتُ بَيْنَهُمْ আমি তাদের বিবাদ মিটিয়ে দিয়েছি। ওয়াহী অবতীর্ণ করত তা নাবীদের (নবীদের) পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্ব অর্পণ করে আল্লাহ্ রাববুল আলামীন মালাকগণকে السَّفِيْرِ (দূত) সদৃশ ঘোষণা করেছেন যিনি কওমের পরস্পর বিবাদ মীমাংশা করেন। অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন, تَصَدَّى সে এর থেকে অমনোযোগিতা প্রকাশ করেছে। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لمَاَّ يَقْضِيْ তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে এখনও তা পুরাপুরি করেনি। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, تَرْهَقُهَا মানে সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে এক মহাবিপদ। مُسْفِرَةٌ উজ্জ্বল। بِأَيْدِيْ سَفَرَةٍ লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতা। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) আরো বলেন, أَسْفَارًا কিতাবসমূহ। تَلَهَّى তুমি ব্যস্ত হলে। বলা হয়أَسْفَارِ এর একবচন سِفْرٌ।

৪৫৭৩। আদম (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, কুর’আনের হাফেজ পাঠক লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মত। অতি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি বারবার কুর’আন তিলাওয়াত করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৪ | 4574 | ٤۵۷٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা তাকবীর

انْكَدَرَتْ অর্থ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। হাসান (রহ.) বলেন, سُجِّرَتْ অর্থ পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে, এক বিন্দু পানিও বাকী থাকবে না। মুহাজিদ (রহ.) বলেন, الْمَسْجُوْرُ অর্থ কানায় কানায় ভর্তি। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, سُجِرَتْ অর্থ একটি সমুদ্র আরেকটির সঙ্গে মিলিত হয়ে এক সমুদ্রে পরিণত হবে। وَالْخُنَّسُ অর্থ নিজের গতিপথে পশ্চাদপসরণকারী।تَكْنِسُ মানে সূর্যের আলোতে অদৃশ্য হয়ে যায়, যেমন হরিণ গা ঢাকা দেয়। تَنَفَّسَ অর্থ যখন দিনের আলো উদ্ভাসিত হয়। الظَّنِيْنُ অপবাদ দানকারী। الضَّنِيْنُ অর্থ বখিল, কৃপণ। ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, وَإِذَا النُّفُوْسُ زُوِّجَتْ অর্থ প্রত্যেককে তার মত চরিত্রের লোকের সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামে জুড়ে দেয়া হবে। পরে এ কথার সমর্থনে তিনি احْشُرُواالَّذِيْنَ ظَلَمُوْا وَأَزْوَاجَهُمْ عَسْعَسَ (একত্র করে যালিম ও তাদের সহচরগণকে) আয়াতংশটি পাঠ করলেন। عَسْعَسَ অর্থ অবসান হয়েছে, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে।

সুরা ইনফিতার

রাবী ইবনু খুশাইম (রহঃ) বলেন, فُجِّرَتْ অর্থ-প্রবাহিত হবে, আ‘মাশ এবং ওয়াসিম (রহঃ) فَعَدَلَكَ তাখফীফ-এর সঙ্গে পড়তেন এবং হিজাযের অধিবাসী فَعَدَّلَكَ তাশদীদ-এর সঙ্গে পড়তেন। অর্থ তিনি তোমাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ সৃষ্টি করেছেন। যারা فَعَدَلَكَ তাখফীফ-এর সঙ্গে পড়তেন, তারা বলেন, এর অর্থ হল, তিনি তোমাকে সুন্দর বা কুৎসিৎ; লম্বা খাটো যে আকারে ইচ্ছে, সৃষ্টি করেছেন।

সুরা মুতাফ্‌ফিফীন

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, بَلْرَانَ অর্থ গুনাহের জন্য। ثُوِّبَ অর্থ প্রতিদান দেয়া হল। মুজাহিদ ছাড়া অপরাপর মুসাসসির বলেছেন, الْمُطَفِّفُ ঐ লোক যে অন্যকে মাপে পুরো দেয় না।

৪৫৭৪। ইবরাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‏يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ “যেদিন সকল মানুষ বিশ্বজগতের রবের সামনে দাঁড়াবে” (৮৩ঃ ৬) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সেদিন প্রত্যেকের কানের লতি পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৫ | 4575 | ٤۵۷۵

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা ইন্‌শিকাক

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, كِتَابَهُ بِشِمَالِهٰ অর্থাৎ সে পেছন দিক হতে নিজের ‘আমালনামা গ্রহণ করবে। وَسَقَ অর্থ সে যেসব জীবজন্তুর সমাবেশ ঘটায়। ظَنَّ أَنْ لَّنْ يَّحُوْرَ অর্থ সে মনে করত যে, সে কখনই আমার কাছে ফিরে আসবে না।

৪৫৭৫। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) ও মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন যে ব্যাক্তিরই হিসাব নেয়া হবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আল্লাহ কি বলেননিঃ “যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব নিকাশ সহজ হবে” (৮৪ঃ ৭-৮)। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখানে তো কেবল আমলনামা কিভাবে দেয়া হবে তার উল্লেখ করা হয়েছে, অন্যথায় যার চুলচেরা হিসাব নেয়া হবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৬ | 4576 | ٤۵۷٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لتركبن طبقا عن طبق “নিশ্চয়ই তোমরা ধাপে ধাপে আরোহণ করবে” (৮৪ঃ ১৯)
৪৫৭৬। সাঈদ ইবনু নাযর (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‏لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ এর মর্মার্থ হচ্ছে, এক অবস্থার পর আরেক অবস্থা হওয়া। তোমাদের নাবী-ই এ অর্থ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৭ | 4577 | ٤۵۷۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা বুরুজ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْأُخْدُوْدِ মাটিতে ফাটল। فَتَنُوْا তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

সুরা তারিক

মুজাহিদ বলেন, ذَاتِ الرَّجْعِ অর্থ ঐ মেঘ যা বৃষ্টি নিয়ে আসে। ذَاتِ الصَّدْعِ অর্থ ঐ যমীন যা উদ্ভিদ বের হওয়ার সময় বিদীর্ণ হয়ে যায়।

৪৫৭৭। আবদান (রহঃ) … বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে প্রথম যারা হিজরত করে আমাদের কাছে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন মুসআব ইবনু উমাইর (রাঃ) ও ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তাঁরা দুজন এসেই আমাদেরকে কুর’আন পড়াতে শুরু করেন। এরপর এলেন আম্মার, বিলাল ও সা’দ (রাঃ)। এরপর এলেন বিশজন সাহাবীসহ উমার ইবনু খত্তাব (রাঃ)। এরপর এলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনে মদিনাবাসীকে এত বেশি আনন্দিত হতে দেখেছি যে, অন্য কোন বিষয়ে তাদেরকে ততটা আনন্দিত হতে আর কখনো দেখিনি। এমনকি আমি দেখেছি, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত বলছিল যে, ইনই তো আল্লাহর সেই রাসূল, যিনি আমাদের মাঝে এসেছেন। বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসার আগেই আমি سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى (সূরা আ’লা) অনুরূপ আরও কিছু সূরা শিখে নিয়েছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৮ | 4578 | ٤۵۷۸

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা গাশিয়া

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ (ক্লিষ্ট-ক্লান্ত) বলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, عَيْنٍاٰنِيَةٍ টগবগে গরম পানিতে কানায় কানায় ভর্তি ঝরণাধারা। حَمِيْمٍاٰنٍ চরম ফুটন্ত পানি। لَا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً সেখানে তারা গালি-গালাজ শুনবে না। الشِّبْرِقُএক প্রকার কাঁটাওয়ালা গুল্ম। (তা যখন সবুজ থাকে তখন) তাকে الضَّرِيْعَ বলা হয়, আর যখন শুকিয়ে যায়, তখন হিজাযবাসীরা একেই الضَّرِيْعُ বলে। এ এক প্রকার বিষাক্ত আগাছা। بِمُسَيْطِرٍ কর্মবিধায়ক। শব্দটি س ও ص উভয় বর্ণ দিয়েই পড়া হয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, إِيَابَهُمْ তাদের প্রত্যাবর্তনের স্থান।

সুরা ফাজ্‌র

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْوَتْرُ মানে বেজোড়। এর দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে বোঝানো হয়েছে। إِرَمَذَاتِ الْعِمَادِ দ্বারা প্রাচীন এক জাতিকে বোঝানো হয়েছে। وَالْعِمَادُ খুঁটি ও স্তম্ভের মালিক, যারা স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে না; তারা তাঁবু পেতে জীবন যাপন করে (যাযাবর)। سَوْطَعَذَابٍ যাদেরকে তা দিয়ে শাস্তি প্রদান করা হবে।أَكْلًا لَّمًّاসম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করা। جَمًّا অতিশয়। মুহাজিদ (রহ.) বলেন, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই হল জোড়ায় জোড়ায়। সুতরাং আসমানও জোড়া বাঁধা; وَالْوَتْرُ তবে একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই হলেন বেজোড়। মুজাহিদ (রহ.) ব্যতীত অন্য সকলেই বলেছেন, আরবরা যাবতীয় শাস্তির ব্যাপারে سَوْطَعَذَابٍ শব্দটি ব্যবাহর করে থাকে। যে কোন শাস্তি سَوْطَ عَذَابٍ এর অন্তর্ভুক্ত। لَبِالْمِرْصَادِ তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। تَحَاضُّوْنَ তোমরা হেফাজত করে থাক। تَحَآضُّوْنَ তোমরা খাদ্য দান করতে আদেশ করে থাক। الْمُطْمَئِنَّةُ সওয়াবকে সত্য বলে বিশ্বাসকারী। হাসান (রাঃ) বলেন, يٓٓأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ দ্বারা এমন আত্মাকে বোঝানো হয়েছে, যে আত্মাকে আল্লাহ্ মৃত্যুদানের ইচ্ছে করলে সে আল্লাহর প্রতি এবং আল্লাহ্ও তার প্রতি পুরোপুরি প্রশান্ত থাকেন। এরপর আল্লাহ্ তার রূহ কবয করার নির্দেশ দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে তাকে তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। হাসান (রহ.) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন جَابُوْا তারা ছিদ্র করেছে; যে শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে جِيْبَالْقَمِيْص থেকে। যার অর্থ হচ্ছে, জামার পকেট কাটা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়ে থাকে يَجُوْبُالْفَلَاةَ সে মাঠ অতিক্রম করছে। لَمَّالَمَمْتُهُأَجْمَعَ বলা হলে এর অর্থ হবে- আমি এর শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি।

সুরা বালাদ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, بِهٰذَا الْبَلَدِ দ্বারা মক্কা্কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ একানে যুদ্ধ কররে অন্য মানুষের উপর যে গুনাহ হবে, তোমার তা হবে না। وَوَالِدٍ আদম (আঃ)। وَمَا وَلَدَ যাসে জন্ম দেয়, لِبَدًا প্রচুর। وَ النَّجْدَيْنِ ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ। مَسْغَبَةٍ ক্ষুধা। مَتْرَبَةٍ ধূলি লুন্ঠিত। বলা হয় فَلَااقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ সে দুনিয়ায় দুর্গম গিরিপথে চলাচল করেনি। এরপর আল্লাহর তা‘আলা এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন, তুমি কি জান দুর্গম গিরিপথ কী? তা হচ্ছে দাস মুক্ত করা, অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার্য দান।

সুরা শামস

মুহাজিদ (রহঃ) বলেন, بِطَغْوَاهَا অবাধ্যতা বা নাফরমানীর কারণে। وَلَايَخَافُ عُقْبَاهَا কারো পরিণামের জন্য আল্লাহ্ আশংকা করবার কিছু নেই।

৪৫৭৮। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু যাম‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দিতে শুনেছেন, যেখানে তিনি সামূদ গোত্রের কাছে প্রেরিত উটনী ও তার পা কাটার কথা বললেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا এর ব্যাখ্যায় বললেন, ঐ উটনীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগা শক্তিশালী ব্যাক্তি তৎপর হয়ে উঠলো যে সে সমাজের মধ্যে আবূ যাম’আতের মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এই খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারে, কিন্তু ঐ দিন শেষেই সে আবার তার সাথে একই বিছানায় মিলিত হয়। এরপর তিনি বায়ু নিঃসরণের পর হাসি দেয়া সম্পর্কে বললেন, তোমাদের কেউ কেউ হাসে সে কাজটির উপর যে কাজটি সেও করে।

(অন্য সনদে) আবু মুয়াবিয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবন আবু যাম’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুবায়র ইবন আওআমের চাচা আবূ যাম’আর মত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৯ | 4579 | ٤۵۷۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والنهار إذا تجلى “কসম শপথ দিবসের, যখন তা আবির্ভূত হয়” (৯২ঃ ২)
সুরা লায়ল

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, وَكَذَّبَ بِالْحُسْنٰى অর্থ প্রতিদানে অস্বীকার করল। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, تَرَدّٰى যখন যে মরে যাবে। تَلَظّٰى মানে লেলিহান অগ্নি্। ‘উবায়দ ইবনু উমায়র (রাঃ) শব্দটিকে تَتَلَظّٰى পড়তেন।

৪৫৭৯। কাবীসা ইবনু উকবা (রহঃ) … আলকামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর একদল সাথীর সাথে সিরিয়া গেলাম। আবূ দারদা আমাদের কাছে এসে বললেন, কুর’আন পাঠ করতে পারেন এমন কেউ আছেন কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ আছে। এরপর তিনি বললেন, তাহলে আপনাদের মাঝে উত্তম তিলাওয়াতকারী কে? লোকেরা ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে দিলে তিনি আমাকে বললেন, পড়ুন। আমি পড়লাম, وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى * وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى * وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى‏ তিলাওয়াত শুনে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এই সূরা আপনার ওস্তাদ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের মুখে শুনেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি এই সূরাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে শুনেছি। কিন্তু তারা (সিরিয়াবাসী) তা অস্বীকার করছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮০ | 4580 | ٤۵۸۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وما خلق الذكر والأنثى “এবং শপথ তার যিনি নর নারী সৃষ্টি করেছেন” (৯৩ঃ ২)
৪৫৮০. উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … ইবরাহিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কিছু সাথী আবূ দারদা (রাঃ) এর কাছে আসলেন। তিনিও তাদের খোঁজ করে পেয়ে গেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কিরাআত অনুযায়ী কে কুর’আন তিলাওয়াত করতে পারে? তারা বললেন, আমরা সবাই। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হাফিয কে? সকলেই আলকামার দিকে ইঙ্গিত করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদকে وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى কিভাবে পড়তে শুনেছেন? আলকামা (রাঃ) বললেন, আমি তাকে ‏‏وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى পড়তে শুনেছি। এ কথা শুনে আবূ দারদা বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুরূপ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। কিন্তু এসব (সিরিয়াবাসীরা) চায় আমি যেন তিলাওয়াত করি এভাবে- ‏وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالأُنْثَى। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তাদের কথা মানব না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮১ | 4581 | ٤۵۸۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فأما من أعطى واتقى “সুতরাং কেউ দান করলে এবং মুত্তাকী হলে” (৯২ঃ ৫)
৪৫৮১। আবূ নু’আইম (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাজায় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। সেসময় তিনি বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমল সহজ করা হয়েছে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮২ | 4582 | ٤۵۸۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وصدق بلحسنى “এবং যা উত্তম তা গ্রহন করলে” (৯২ঃ ৬)
৪৫৮২। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম। তারপর তিনি উপরোক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৩ | 4583 | ٤۵۸۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فسنيسره لليسرى “আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ” (৯২ঃ ৭)
৪৫৮৩। বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কোন একটি জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। এরপর তিনি একটি কাঠি হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”

শুবা (রহঃ) বলেন, উপরোক্ত হাদিস আমার কাছে মানসুর বর্ণনা করেছেন। তাকে আমি সুলায়মানের হাদিসের ব্যতিক্রম মনে করিনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৪ | 4584 | ٤۵۸٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وأما من بخل واستغنى “এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করলে” (৯২ঃ ৮)
৪৫৮৪। ইয়াহইয়া (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম। এসময় তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে আমরা সবাই বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা তাকদিরের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? তিনি বললেন, না, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৫ | 4585 | ٤۵۸۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وكذب بالحسنى “এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে” (৯২ঃ ৯)
৪৫৮৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাজায় আমরা অংশ নিয়েছিলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরাও তাঁর চারপাশে গিয়ে বসলাম। এসময় তাঁর হাতে একটি কাঠি ছিল। তিনি তাঁর মাথা নিচু করে সেটি দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করলেন। এরপর বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি, কিংবা তাকে ভাগ্যবান বা হতভাগ্য লিখা হয়নি। একথা শুনে জনৈক সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? আমাদের মধ্যে যে সৌভাগ্যবান সে তো সৌভাগ্যবান লোকদের মাঝেই শামিল হয়ে যাবে, আর আমাদের মধ্যে যে হতভাগা, সে তো হতভাগা লোকদের আমলের দিকেই এগিয়ে যাবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এবং দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য দুর্ভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৬ | 4586 | ٤۵۸٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فسنيسره لليسرى “আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ” (৯২ঃ ৭)
৪৫৮৬। আদম (রহঃ) … আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক জানাজায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অংশ নিয়েছিলেন। এসময় তিনি কিছু একটা কাঠি হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে আমাদের লিখিত তাকদিরের উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এবং দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য দুর্ভাগ্য লাভ করার আমল সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৭ | 4587 | ٤۵۸۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى “তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি (৯৩ঃ ৩৩) مَا وَدَّعَكَ শব্দটি তাশদীদ ও তাখফীফ অর্থাৎ وَدَّعَكَ وَدَعَكَ উভয় ভাবেই পড়া যায়। উভয় অবস্থাতে অর্থ একই। তোমাকে রব পরিত্যাগ করেননি। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, তোমাকে তোমার রব পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হয় নি।
সুরা দুহা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِذَا سَجٰى ‘‘যখন তা সমান সমান হয়’’, মুজাহিদ (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা বলেন, إِذَا سَجٰى মানে যখন তা নিঝুম ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। عَآئِلًا নিঃস্ব।

৪৫৮৭। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … জুনদুব ইবনু সুফইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই বা তিন রাত তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারেন নি। এসময় এক মহিলা এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমার মনে হয়, তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে। দুই বা তিন দিন ধরে আমি তাকে তোমার কাছে আসতে দেখছি না। তখন আল্লাহ নাযিল করলেনঃ “শপথ পূর্বাহ্ণের, শপথ রজনীর যখন তা গভীর হয়, আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হন নি” (৯৩ঃ ৩)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৮ | 4588 | ٤۵۸۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلٰى “তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি (৯৩ঃ ৩৩) مَا وَدَّعَكَ শব্দটি তাশদীদ ও তাখফীফ অর্থাৎ وَدَّعَكَ وَدَعَكَ উভয় ভাবেই পড়া যায়। উভয় অবস্থাতে অর্থ একই। তোমাকে রব পরিত্যাগ করেননি। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, তোমাকে তোমার রব পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হয় নি।
৪৫৮৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জুনদাব বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি দেখছি, আপনার সাথী আপনার কাছে ওহী নিয়ে আসতে বিলম্ব করে ফেলছে। তখনই নাযিল হলঃ “আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হন নি”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৮৯ | 4589 | ٤۵۸۹

পরিচ্ছদঃ পরিছেদ নাই
সুরা ইনশিরাহ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, وِزْرَكَ জাহিলী যুগের বোঝা। أَنْقَضَ মানে অতিশয় কষ্টদায়ক। مَعَالْعُسْرِيُسْرًا এর ব্যাখ্যায় ইবনু উয়াইয়াহ (রহঃ) বলেন, এ কঠিন অবস্থার পরই আরেকটি সহজঅবস্থা আছে। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, هَلْ تَرَبَّصُوْنَ بِنَآ إِلَّآ إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ তোমরা আমাদের দু’টি কল্যাণের একটির অপেক্ষা করছ। একটি কঠিন অবস্থা দু’টি সহজ অবস্থাকে কখনো পরাভূত করতে পারবে না। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, فَانْصَبْ অর্থ-প্রয়োজন পূরণের জন্য তুমি তোমার রবের কাছে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা কর। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্ষকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছেন।

সুরা তীন

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আয়াতের মধ্যে التِّيْنُ وَالزَّيْتُوْنُ বলে ঐ তীন ও যায়তূনকে বোঝানো হয়েছে, যা মানুষ খেয়ে থাকে। فَمَا يُكَذِّبُكَ মানুষকে তাদের ‘আমালের প্রতিদান দেয়া হবে এ ব্যাপারে কোন জিনিস তোমাকে অবিশ্বাসী করে। অর্থাৎ শাস্তি কিংবা পুরস্কার দানের ব্যাপারে তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার ক্ষমতা রাখে কে?

৪৫৮৯। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাকালীন সময় ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর দুই রাকআতের কোন এক রাকআতে ‘সূরা তীন’ তিলাওয়াত করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯০ | 4590 | ٤۵۹۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আলাক্‌

কুতাইবাহ (রহঃ) …..হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কুরআন মাজীদের শুরুতে ‘বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ লিখ এবং দু’ সূরার মধ্যে একটি রেখা টেনে দাও।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, نَادِيَهُ গোত্র। الزَّبَانِيَةَ ফেরেশতা। মা‘মার (রা বলেন, الرُّجْعٰى ফিরে আসার জায়গা। لَنَسْفَعَنْ আমি অবশ্যই পাকড়াও করব। لَنَسْفَعَنْ শব্দটি نون خفيفة এর সঙ্গে। سَفَعْتُبِيَدِهِ আমি তাকে হাত দ্বারা ধরলাম।

৪৫৯০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র ও সাঈদ ইবনু মারওয়ান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহী শুরু হয়েছিল। ঐ সময় তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, তা প্রভাতের আলোর মতই সুস্পষ্ট হত। এরপর নির্জনতা তাঁর কাছে প্রিয় হয়ে উঠলো। তিনি হেরা গুহায় চলে যেতেন এবং পরিবার-পরিজনের কাছে আসার পূর্বে সেখানে একটানা কয়েকদিন পর্যন্ত তাহান্নুস করতেন। তাহান্নুস মানে বিশেষ নিয়মের ইবাদত। এজন্য তিনি কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। এরপর তিনি বিবি খাদিজার কাছে ফিরে এসে পুনরায় অনুরূপ কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। অবশেষে হেরা গুহায় থাকা অবস্থায় আকস্মিক তাঁর কাছে সত্যবানী এসে পৌঁছল। ফেরেশতা তাঁর কাছে এসে বললেন, পড়ুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি পড়তে পারিনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর তিনি আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এতে আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারিনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর তিনি দ্বিতীয়বারের মত আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এবারও আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি পড়তে পারিনা। এরপর তিনি তৃতীয়বারের মত আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এবারও আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক (জমাটবাঁধা রক্তপিণ্ড) হতে। পাঠ করুন এবং আপনার রব মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না”।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এসময় তাঁর কাঁধের পেশী ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। খাদিজার কাছে পৌঁছেই তিনি বললেন, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তখন সকলেই তাঁকে বস্ত্রাবৃত করল। অবশেষে তাঁর ভীতি কেটে গেলে তিনি খাদিজাকে বললেন, খাদিজা আমার কি হল? আমি আমার নিজের সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। এরপর তিনি তাঁকে সব খুলে বললেন। একথা শুনে খাদিজা (রাঃ) বললেন, কখনো নয়। আপনার জন্য সুসংবাদ। আল্লাহর কসম! আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়দের খোঁজ-খবর নেন, সত্য কথা বলেন, অসহায় লোকদের কষ্ট লাঘব করে দেন, নিঃস্ব লোকদের উপার্জন করে দেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং সত্যের পথে আগত বিপদাপদে লোকদের সাহায্য করে থাকেন। তারপর খাদিজা তাঁকে নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফালের কাছে গেলেন। তিনি জাহেলী যুগে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবীতে বই লিখতেন। আর তিনি আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী আরবীতে ইনজীল কিতাব অনুবাদ করে লিখতেন। তিনি খুব বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

খাদিজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজা কি বলতে চায় তা শুনুন। ওয়ারাকা বললেন, হে আমার ভাতিজা! তুমি কি দেখেছ? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু দেখেছেন তা খুলে বললেন। ওয়ারাকা বললেন, এটা তো সেই ফেরেশতা যাকে পাঠানো হয়েছিল মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে। আহ! আমি যদি যুবক হতাম। আহ! সেসময় আমি যদি জীবিত থাকতাম। এরপর তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই তারা কি আমাকে তাড়িয়ে দিবে? ওয়ারাকা বললেন, হ্যাঁ, তারা তোমাকে তাড়িয়ে দিবে। তুমি যে দাওয়াত নিয়ে এসেছ, এ দাওয়াত যেই নিয়ে এসেছে তাকেই কষ্ট দেয়া হয়েছে। তোমার নবুয়তকালে আমি জীবিত থাকলে অবশ্যই আমি বলিষ্ঠভাবে তোমাকে সাহায্য করতাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করলেন এবং ওহী নাযিলও বেশ কিছিদিন ধরে বন্ধ ছিল যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনার মাঝে বলেন, একবার আমি পথে হাঁটছিলাম, তখন আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উপরে তুলেই আমি দেখলাম, যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন তিনি আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছেন। আমি এতে ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। সুতরাং সকলেই আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন” (সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত ০১-০৫)। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আরবরা জাহেলী যুগে সেসব মূর্তির পূজা করত তাদের الرجز বলে ঐসব মূর্তিকে বুঝানো হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে ওহীর সিলসিলা অব্যাহত থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯১ | 4591 | ٤۵۹۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ خلق الإنسان من علق “তিনি মানুষকে আলাক হতে সৃষ্টি করেছেন” (৯৬ঃ ২)
৪৫৯১। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রথমত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহীর সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। এরপর তাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বললেন, “পড়ুন, আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ করুন, এবং আপনার রব মহা মহিমান্বিত” (৯৬ঃ ১-৫)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯২ | 4592 | ٤۵۹۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহা মহিমান্বিত”
৪৫৯২। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওহীর সূচনা হয়। এরপর তাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বললেন, “পড়ুন, আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ করুন, এবং আপনার রব মহা মহিমান্বিত” (৯৬ঃ ১-৫)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৩ | 4593 | ٤۵۹۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ الذي علم بالقلم যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন (৯৬ঃ ৪)
৪৫৯৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা (রাঃ) এর কাছে ফিরে এসে বললেন, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। এরপর রাবী সম্পূর্ণ হাদিসটি বর্ণনা করলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৪ | 4594 | ٤۵۹٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ كلا لئن لم ينته لنسفعن بالناصية ناصية كاذبة خاطئة “সাবধান, সে যদি বিরত না হয় তবে আমি তাকে অবশ্যই হেচড়িয়ে নিয়ে যাব, মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশগুচ্ছ ধরে, মিথ্যাচারী, পাপিষ্ঠের কেশগুচ্চছ। (৯৬ঃ ১৫-১৬)
৪৫৯৪। ইয়াহইয়া (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ জাহল বলেছিল, আমি যদি মুহাম্মাদকে কাবার পাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখি তাহলে অবশ্যই আমি তার ঘাড় পদদলিত করব। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছার পর তিনি বলেছেন, সে যদি তা করে তাহলে অবশ্যই ফেরেশতা তাকে পাকড়াও করবে। উবায়দুল্লাহর মাধ্যমে আবদুল থেকে আমর ইবনু খালিদ এ হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৫ | 4595 | ٤۵۹۵

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা কাদ্‌র

الْمَطْلَعُ বলা হয় উদয় হওয়াকে, পক্ষান্তরে, الْمَطْلِعُ মানে উদয়স্থল। أَنْزَلْنَاهُ এর ه দ্বারা আল-কুরআনের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। এখানে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও একবচনের গ্রহণ করা হয়েছে। কেননা, কুরআন অবতীর্ণকারী হলেন আল্লাহ্ তা‘আলা। বস্তুত কোন বস্তুর গুরুত্ব প্রকাশ বা জোরালো ভাব প্রকামের জন্য আরবরা একবচনের স্থলে বহুবচনে ব্যবহার করে থাকে।

সুরা বায়্যিনা

مُنْفَكِّيْنَ বিচলিত ও পদস্খলিত। قَيِّمَةٌ সঠিক। دِيْنُ الْقَيِّمَةِ এর মাঝে دِيْنُ শব্দটিকে স্ত্রী লিঙ্গের দিকে اضافت করা হয়েছে।

৪৫৯৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন, তোমাকে لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا‏ পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ কি আমার নাম নিয়ে বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। একথা শুনে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৬ | 4596 | ٤۵۹٦

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৯৬। হাসসান ইবনু হাসসান (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন, তোমাকে কুর’আন পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ কি আপনার কাছে আমার নাম উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তোমার নাম উল্লেখ করেছেন। একথা শুনে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ‏لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ পাঠ করে শুনিয়েছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৭ | 4597 | ٤۵۹۷

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৫৯৭। আহমদ ইবনু আবূ দাউদ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন, তোমাকে কুর’আন পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, আল্লাহ কি আপনার কাছে আমার নাম উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) আশ্চর্যান্বিত হয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালকের কাছে কি আমার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। একথা শুনে তাঁর উভয় চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৮ | 4598 | ٤۵۹۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فمن يعمل مثقال ذرة خيرا يره “কেউ অনু পরিমাণ সৎকর্ম করলে, সে তা দেখবে” (৯৯ঃ ৭)
সুরা যিলযাল

বলা হয়, وَوَحَى لَهَا ও وَوَحَى إِلَيْهَا শব্দ দু’টির অর্থ একই।

৪৫৯৮। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের ঘোড়া থাকে। এক শ্রেণীর জন্য তা সওয়াব ও পুরস্কারের কারণ হয়, এক শ্রেণীর মানুষের জন্য হয় তা (গুনাহ হতে) আবরণরূপে এবং এক শ্রেণীর মানুষের প্রতি তা হয় গুনাহের কারণ। যার জন্য তা সওয়াবের কারণ হয়, তারা সেসব ব্যাক্তি, যারা আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তা প্রস্তুত করে রাখে এবং কোন চারণ ক্ষেত্রে বা বাগানে লম্বা রশি দিয়ে তাকে বেঁধে রাখে। রশির আওতায় চারণ ক্ষেত্রে বা বাগানে সে যা কিছু খায় তা ঐ ব্যাক্তির জন্য নেকী হিসেবে গণ্য হয়। যদি ঘোড়াটি রশি ছিঁড়ে ফেলে এবং নিজ স্থান অতিক্রম করে দু’ এক উঁচু স্থানে চলে যায়, তাহলে তার পদচিহ্ন ও গোবরের বিনিময়েও ঐ ব্যাক্তি সওয়াব লাভ করবে। আর ঘোড়াটি যদি কোন জলাধারের কিনারায় গিয়ে নিজে নিজেই পানি পান করে, তবে মালিকের সেখান থেকে পানি পান করানোর ইচ্ছা না থাকলেও সে ব্যাক্তি এর বিনিময়ে সওয়াব লাভ করবে। এই ঘোড়া এই ব্যাক্তির জন্য তো হল সওয়াবের কারণ। আরেক শ্রেণীর মানুষের জন্য হয় তা (গুনাহ হতে) আবরণরূপে, তারা ঐ ব্যাক্তি যারা মানুষের থেকে মুখাপেক্ষী না থাকার জন্য ও মানুষের কাছে হাত পাতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য তা পালন করে। কিন্তু তাতে আল্লাহর যে হক আছে তা দিতে ভুলে যায় না। এই শ্রেণীর মানুষের জন্য এ ঘোড়া হল পর্দা। আরেক শ্রেণীর ঘোড়ার মালিক যারা গর্ব করার মনোভাব ও দুশমনীর জন্য ঘোড়া রাখে। এ ঘোড়া হল তাদের জন্য গুনাহের কারণ। এরপর আল্লাহর রাসূল কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, একক ও ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক এ একটি মাত্র আয়াত ছাড়া এ বিষয়ে আল্লাহ আমার প্রতি আর কোন আয়াত নাযিল করেননি। আয়াতটি এইঃ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলেও সে তা দেখবে” (৯৯ঃ ৭-৮)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯৯ | 4599 | ٤۵۹۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ومن يعمل مثقال ذرة شرا يره “কেউ অনু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখবে” (৯৯ঃ ৭-৮)
৪৫৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, একক ও ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক এ একটি মাত্র আয়াত ব্যতীত এ বিষয়ে আল্লাহ আমার প্রতি আর কোন আয়াত নাযিল করেন নি। আয়াতটি হচ্ছে এইঃ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলেও সে তা দেখবে” (৯৯ঃ ৭-৮)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৬০০ | 4600 | ٤٦۰۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আদিয়াত

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْكَنُوْدُ অকৃতজ্ঞ। فَأَثَرْنَ بِهٰ نَقْعًا সে সময় ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে। لِحُبِّ الْخَيْرِ ধন-সম্পদের প্রতি ভালবাসার কারণে। لَشَدِيْدٌ মানে অবশ্যই কৃপণ। কৃপণকে আরবী ভাষায় شَدِيْدٌ বলা হয়। حُصِّلَ পৃথক করা হবে।

সুরা কারি’আ

كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوْثِ মানে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। পতঙ্গ যেমন একটি আরেকটির ওপর পড়ে, ঠিক তেমনিভাবে একজন মানুষ আরেকজনের ওপর পড়বে। كَالْعِهْنِ নানা রঙের তুলার ন্যায়। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) كَالصُّوْفِ পড়েছেন।

সুরা তাকাছুর

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, التَّكَاثُرُ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির আধিক্য।

সুরা আসর

বলা হয় الْعَصْرُ কাল বা সময়। আল্লাহ্ তা‘আলা এখানে কালের শপথ করেছেন।

সুরা হুমাযা

الْحُطَمَةُ ‘লাযা’ ও ‘সাকার’ যেমন জাহান্নামের নাম, তেমনি ‘হুতামা’ও একটি জাহান্নামের নাম।

সুরা ফীল

أَبَابِيْلَ ঝাঁকে ঝাঁকে ও একত্রিত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مِنْ سِجِّيْلٍ শব্দটি سَنْكِ ও كِلْ থেকে আরবীকৃত আরবী শব্দ (এর অর্থ হল পাথর ও মাটির ঢিল)।

সুরা কুরায়শ

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لِإِيْلَافِ মানে তারা এ বিষয়ে অভ্যস্ত ছিল। ফলে, শীত ও গ্রীষ্মে তা তাদের জন্য কষ্টকর হয় না। وَاٰمَنَهُمْ আল্লাহ্ তা‘আলা হারামের মাধ্যমে তাদের যাবতীয় শত্রু থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। ইবনু উআয়না (রহ.) বলেন, لِإِيْلَافِ কুরাইশদের প্রতি আমার নি‘মাতের কারণে।

সুরা মাউন

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, يَدُعٌ সে তাকে হাক না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বলা হয় এ শব্দটি শব্দ থেকে উদ্ভূত। يُدَعُّوْنَ তাদেরকে বাধা দেয়া হয়। ساهُوْنَ উদাসীন। الماعُوْن সর্বপ্রকার কল্যাণকর কাজ। কোন কোন আরবী ভাষা বিশেষজ্ঞ বলেন, الماعُوْنُ পানি। ‘ইকরামাহ (রাঃ) বলেন, মাউনের অন্তর্ভুক্ত সর্বোচ্চ স্তরের বিষয় হচ্ছে যাকাত প্রদান করা এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ের বিষয় হচ্ছে গৃহস্তালির প্রয়োজনীয় ছোট খাট জিনিস ধার দেয়া।

সুরা কাউসার

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, شانِئَكَ তোমার শত্রু।

৪৬০০। আদম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকাশের দিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি’রাজ হলে তিনি বলেন, আমি একটি জলাধারের (নদী) ধারে পৌঁছলাম, যার উভয় তীরে ফাঁপা মুক্তার তৈরি গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এটি কি? তিনি বললেন, এটই (হাউযে) কাওসার।