বুখারি হাদিস নং ৪৪০১-৪৫০০

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০১ | 4401 | ٤٤۰۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ কে ডাকেনা। আল্লাহই যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’। الثام মানে শাস্তি।
৪৪০১। ইব্রাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … কাসিম ইবনু আবূ বাযযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, যদি কেউ কোন মু’মিন ব্যাক্তিকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে; তবে কি তার জন্য তওবা আছে? আমি তাঁকে এ আয়াত পাঠ করে শোনালাম ‏وَلاَ يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ “আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না।” সাঈদ (রাঃ) বললেন, তুমি যে আয়াত আমার সামনে পাঠ করলে, আমিও এমনিভাবে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সামনে এ আয়াত পাঠ করেছিলাম। তখন তিনি বললেন, এ আয়াতটি মক্কী। সূরা নিসার মধ্যের মাদানী আয়াতটি একে রহিত করে দিয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০২ | 4402 | ٤٤۰۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ কে ডাকেনা। আল্লাহই যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’। الثام মানে শাস্তি।
৪৪০২। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাশশার মু’মিনের হত্যার ব্যাপারে কূফাবাসী মতভেদ করতে লাগল। আমি (এ ব্যাপারে) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গেলাম (এবং তাঁকে এ সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলাম)। তখন তিনি বললেন, (মু’মিনের হত্যা সম্পর্কিত) এ আয়াত সর্বশেষে নাযিল হয়েছে। একে অন্য কিছু রহিত করেনি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৩ | 4403 | ٤٤۰۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহ কে ডাকেনা। আল্লাহই যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে’। الثام মানে শাস্তি।
৪৪০৩। আদম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ‏فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ (তাদের পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম) সম্পর্কে জিজ্ঞস করলাম। তিনি বললেন, তার জন্য তওবা নেই। এরপরে আমি আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এ আয়াত মুশরিকদের ব্যাপারে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৪ | 4404 | ٤٤۰٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।”
৪৪০৪। সা‘দ ইবনু হাফস (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আবযা (রাঃ) বলেন, ইবনু আব্বাসকে জিজ্ঞস করা হল, আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু‘মিনকে হত্যা করলে তাকে তার শাস্তি জাহান্নাম” এবং আল্লাহর এ বাণীঃ “এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া, তারা তাকে হত্যা করে না” এবং “কিন্তু যারা তওবা করে” পর্যন্ত, সম্পর্কে। আমিও তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি জবাবে বললেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল তখন মক্কাবাসী বলল, আমরা আল্লাহর সঙ্গে শরীক করেছি, আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন, “যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। ”… আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু … পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৫ | 4405 | ٤٤۰۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তারা নহে, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ্ তাদের পাপ পরিবর্তন করে দিবেন পুণ্যের দ্বারা। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
৪৪০৫। আবদান (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে এ দুটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا‏ আমি তাকে (এ আয়াত সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, এ আয়াতকে অন্য কিছু রহিত (মানসূখ) করেনি এবং ‏وَالَّذِينَ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলাম, তিনি [আব্বাস (রাঃ)] বললেন, এ আয়াত মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৬ | 4406 | ٤٤۰٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “অচিরেই নেমে আসবে অপরিহার্য ধ্বংস।” لزاما অর্থ ধ্বংস
৪৪০৬। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি ঘটনা ঘটে গেছে ধূম্রাচ্ছন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া, রোমকদের পরাজয়, প্রবলভাবে পাকড়াও এবং ধ্বংসের। لِزَامًا অর্থ ধ্বংস। ‏

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৭ | 4407 | ٤٤۰۷

পরিচ্ছদঃ অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ‘আমাকে লাঞ্ছিত করো না পুনরুত্থান দিবসে।’ ইব্রাহীম ইব্ন তহমান (র)………. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম (আ) তাঁর পিতাকে ধূলি-ময়লা অবস্থায় দেখতে পাবেন। এর অর্থ ধূলি-ময়লা।
সুরা শু’আরা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন تَعْبَثُوْنَ তোমরা নির্মাণ করে থাক। هَضِيْمٌ স্পর্শ করা মাত্রই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। مُسَحَّرِيْنَ জাদুগ্রস্ত। اللَّيْكَةُ ও الأَيْكَةُ أَيْكَةٍ এর বহুবচন যার অর্থ বৃক্ষে পরিপূর্ণ। يَوْمِالظُّلَّةِ যেদিনে শাস্তি তাদের ছেয়ে ফেলবে। مَوْزُوْنٍ জ্ঞাত। كَالطَّوْدِ পর্বতের ন্যায়। অন্যরা বলেন, الَشِرْذِمَةٌ ছোট দল। فِيالسَّاجِدِيْنَ সালাত আদায়কারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন لَعَلَّكُمْتَخْلُدُوْنَ যেন তোমরা স্থায়ী থাকবে। الرِّيعُ যমীনের উঁচু অংশ। এর বহুবচন رِيَعَةٌ এবং أَرْيَاعٌ তার একবচন رِيْعَةٌ।مَصَانِعَ প্রত্যেক ইমারতকে مَصْنَعَةٌ বলা হয়। فَرِهِيْنَ অহংকারীরা। مَرِحِيْنَفَارِهِيْنَ একই অর্থের। فَارِهِيْنَ বলা হয় দক্ষদের। تَعْثَوْا ভয়ঙ্কর ফ্যাসাদ। এটি يَا দ্বারাও ব্যবহৃত হয়। যথা عَاثَ يَعِيْثُ عَيْثًا। الْجِبِلَّةَ সৃষ্টি جُبِلَ এর অর্থ-সৃষ্টি করা হয়েছে। جُبُلًا وَجِبِلًا وَجُبْلًا সবগুলোর অর্থ সৃষ্টি।

৪৪০৭। ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (হাশরের ময়দানে ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) তাঁর পিতার সাক্ষাত পেয়ে (তাকে এ অবস্থায় দেখে) বলবেন, ইয়া রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, আমি কাফেরদের উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৮ | 4408 | ٤٤۰۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তোমার নিকটের আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও এবং (মু’মিনদের প্রতি) বিনয়ী হও। (اخفض جناحك ) “তোমার পার্শ্ব নম্র রাখ।”
৪৪০৮। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ অবতীর্ণ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা (পর্বতে) আরোহণ করলেন এবং ডাকতে লাগলেন, হে বনী ফিহর! হে বনী আদী! কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রকে। অবশেষে তারা একত্রিত হল। যে নিজে আসতে পারল না, সে তার প্রতিনিধি পাঠাল, যাতে দেখতে পায়, ব্যাপার কী? সেখানে আবূ লাহাব ও কুরাইশগণও আসল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বল তো, আমি যদি তোমাদের বলি যে, শক্রসৈন্য উপত্যকায় এসে পড়েছে, তারা তোমাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করতে উদ্যত, তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হাঁ আমরা আপনাকে সর্বদা সত্য পেয়েছি। তখন তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সম্মুখে কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শন করছি।” আবূ লাহাব (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বলল, সারাদিন তোমার উপর ধ্বংস আসুক! এজন্যই কি তুমি আমাদের একত্র করেছ? তখন নাযিল হয়, “ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু-হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সস্পদ ও তার উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪০৯ | 4409 | ٤٤۰۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ “তোমার নিকটের আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও এবং (মু’মিনদের প্রতি) বিনয়ী হও। (اخفض جناحك ) “তোমার পার্শ্ব নম্র রাখ।”
৪৪০৯। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ‏وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ (তোমার নিকটের আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও) এ আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! অথবা অনুরূপ বাক্য, নিজেদের কিনে নাও। আমি আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে তোমাদের কোন উপকারে আসব না। হে বনী আবদ মানাফ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে আমি তোমাদের কোন উপকারে আসব না। হে আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব! আমি আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে তোমার কোনই উপকারে আসব না। হে আল্লাহর রাসূল এর ফুফু সুফিয়া! আমি তোমার নাজাতের ব্যাপারে কোনই উপকার করতে পারব না। হে মুহাম্মদ এর কন্যা ফাতিমা! আমার ধন-সম্পদ থেকে যা চাও নিয়ে যাও, কিন্তু আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষার ব্যাপারে আমি তোমার কোনই উপকারে আসব না। আসবাগ (রহঃ) … ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১০ | 4410 | ٤٤۱۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “তুমি যাকে ভালবাস ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না, তবে আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন”
সুরা নম্‌ল

الْخَبْءُ যা তুমি গোপন কর। لَا قِبَلَ لَهُمْ তাদের কোন শক্তি নেই। الصَّرْحُ কাঁচ মিশ্রিত গারা এবং الصَّرْحُ প্রাসাদকেও বলা হয়। এর বহুবচন صُرُوْحٌ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, وَلَهَا عَرْشٌ তার সিংহাসন অতি সম্মানিত, শিল্প কর্মে উত্তম এবং বহু মূল্যবান। يَأْتُوْنِيْ مُسْلِمِيْنَ অনুগত হয়ে আমার নিকট আসবে। رَدِفَ নিকটবর্তী হয়েছে। جَامِدَةً স্থির। أَوْزِعْنِيْ আমাকে বানিয়ে দাও। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, نَكِّرُوْا পরিবর্তন করে দাও। وَأُوْتِيْنَا (আমাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে) এ কথা সুলাইমান (আঃ) বলেন, الصَّرْحُ পানির একটি হাউয। সুলাইমান (আঃ) সেটি কাঁচ দ্বারা আবৃত করে দিয়েছিলেন।

সুরা কাসাস

বলা হয় إِلَّا وَجْهَه তার রাজত্ব ব্যতীত এবং এ-ও বলা হয়, যে কার্যাবলী দ্বারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য, তা ব্যতীত (সবই ধ্বংস হবে) মুজাহিদ (রহঃ) বলেন الْأَنْبَاءُ অর্থ প্রমানাদি।

৪৪১০। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … মূসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আবূ তালিবের মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে আসলেন। তিনি সেখানে আবূ জাহল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া ইবনু মুগীরাকে উপস্থিত পেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আপনি বলুন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। ” এ ‘কালেমা’ দ্বারা আমি আপনার জন্য (কিয়ামতে) আল্লাহর কাছে (আপনার মুক্তির) দাবি করতে পারব। আবূ জাহল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া বলল, তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম ছেড়ে দেবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার তার কাছে এ ‘কালেমা’ পেশ করতে লাগলেন। আর তারা সে উক্তি বারবার করতে থাকল। অবশেষে আবূ তালিব তাঁদের সঙ্গে সর্বশেষ এ কথা বললেন, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর আছি, এবং কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পাঠ করতে অস্বীকার করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম। আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেই থাকব। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা নাযিল করলেন, নাবী ও মু’মিনদের জন্য এটা শোভনীয় নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর আল্লাহ্ তা’আলা আবূ তালিব সম্পর্কে নাযিল করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্বোধন করে আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, “তুমি যাকে ভালবাস (ইচ্ছা করলেই) তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন।”

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন أُوْلِي الْقُوَّة লোকের একটি দল সে চাবিগুলো বহন করতে সক্ষম ছিল না। لَتَنُوْءُ বহন করা কষ্টসাধ্য ছিল। فَارِغًا মূসা (আঃ)-এর স্মরণ ব্যতীত সব কিছু থেকে খালি ছিল। الْفَرِحِيْنَ দম্ভকারীরা! قُصِّيْهِ তার চিহ্ন অনুসরণ কর। কথার বর্ণনা অর্থেও প্রয়োগ হয়। نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَعَنْ جُنُبٍ এখানে جُنُبٍ অর্থ দূর থেকে। عَنْ جَنَابَةٍ، عَنْ اجْتِنَابٍ এর একই অর্থবোধক।يَبْطِشُـــيَبْطُشُ উভয়ই পড়া হয়। يَأْتَمِرُوْنَ পরস্পর পরামর্শ করছে। وَالْعَدَاءُ وَالتَّعَدِّيْ واعدوان (শব্দ তিনটির) অর্থ একই; সীমা অতিক্রম করা। آنَسَ দেখা الْجِذْوَةُ কাঠের মোটা টুকরা যাতে শিখা নেই। الشِّهَابُ যাতে শিখা আছে। الْحَيَّاتُ বহু প্রকার সাপ; যেমন, চিকন জাতি, অজগর, কালনাগ (ইত্যাদি) رِدْءًا সাহায্যকারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَدِّقُنِيْ (তিনি قاف কে পেশ দিয়ে পড়েন। অন্য হতে বর্ণিত سَنَشُدُّ আমরা শীঘ্র তোমাকে সাহায্য করব। যখন তুমি কোন জিনিসকে শক্তিশালী করলে, তখন তুমি যেন তার জন্য বাহুবল প্রদান করলে। যখন আরবগণ কাউকে সাহায্য করেন তখন বলে থাকেন جَعَلْتَ لَهُ عَضُدًا (বাহুবল প্রদান করলে) مَقْبُوْحِيْنَ ধ্বংসপ্রাপ্ত। وَصَّلْنَا আমি বর্ণনা করেছি; আমি তা পূর্ণ করেছি। يُجْبَى আমদানি করা হয়। بَطِرَتْ দম্ভ করল। فِيْ أُمِّهَا رَسُوْلًا মক্কা এবং তার চতুষ্পার্শকে বলা হয়। تُكِنُّ গোপন করছ। আরবগণ বলে থাকেন أَكْنَنْتُ الشَّيْءَ আমি তা গোপন করেছি। كَنَنْتُهُ আমি তা লুকিয়েছি; আমি প্রকাশ করেছি। وَيْكَأَنَّ اللهَ আর أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللهَ সমার্থক (তারা কি দেখেনি?) يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِر আল্লাহ্ যার জন্য চান খাদ্য প্রসারিত করে দেন, আর যার থেকে চান সংকুচিত করে দেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১১ | 4411 | ٤٤۱۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “যিনি তোমার জন্য কুরআনকে করেছেন বিধান।”
৪৪১১। মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, لَرَادُّكَ إِلَى مَعَادٍ‏ এর অর্থ মক্কার দিকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১২ | 4412 | ٤٤۱۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আন্‌কাবুত

মুজাহিদ বলেছেন, وَكَانُوْا مُسْتَبْصِرِيْنَ অর্থাৎ পথহারা। অন্যরা বলেছেন, الْحَيَوَانُ এবং الْحَيُّ শব্দ দু’টি একই। فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ আল্লাহ্ আগে থেকেই তা জানতেন। এখানে ব্যবহৃত হয়েছে فَلِيَمِيْزَاللهُ (যেন আল্লাহ্ তা‘আলা চিহ্নিত করেন)-এর অর্থে। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ لِيَمِيْزَ اللهُ الْخَبِيْثَ مِنَالطَّيِّبِ أَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ (যেন আল্লাহ্ তা‘আলা খবীছকে ভাল থেকে পৃথক করেন) অর্থাৎ তাদের অপরাধের সাথে।

সুরা রূম

فَلَا يَرْبُوْ অর্থাৎ যে এ আশায় দান করে যে, এর চেয়ে উত্তম বিনিময় পাবে, এতে কোন সওয়াব নেই। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, يُحْبَرُوْنَ তারা নিয়ামত প্রাপ্ত হবে। يَمْهَدُوْنَ তাদের আরাম আয়েশের জায়গা প্রস্ত্তত করবে। الْوَدْقُ বৃষ্টি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, هَلْ لَّكُمْ مِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ এ আয়াত ইলাহ সম্পর্কে। تَخَافُوْنَهُمْ তোমরা কি পছন্দ কর যে, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদের অংশীদার হোক, যেমন তোমরা পরস্পরের উত্তরাধিকার হও। يَصَّدَّعُوْنَ পৃথক পৃথক হয়ে যাবে। فَاصْدَعْ স্পষ্ট বর্ণনা কর। ইবনু ‘আব্বাস ব্যতীত অন্যে বলেন, ضُعْفٌ এবং ضَعْفٌ উভয়ের অর্থ একই। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, السُّوأَى অপরাধীকে যথাযোগ্য শাস্তি দেয়া।

৪৪১২। মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি কিন্দাবাসীদের সামনে বলছিল, কিয়ামতের দিন ধোঁয়া আসবে এবং মুনাফিকদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেবে। এ কথা শুনে আমরা ভীত হয়ে পড়লাম। এরপর এবং আমি ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট এলাম। তখন তিনি তাকিয়ায় ঠেস লাগিয়ে বসেছিলেন। (এ সব ঘটনা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে উঠে বসলেন এবং বললেন, যার জানা আছে সে যেন তা বলে, আর যে না জানে সে যেন বলে, আল্লাহ্ তা’আলাই ভাল জানেন। জ্ঞানের মধ্যে এটাও একটা জ্ঞান যে, যার যে বিষয় জানানেই সে বলবে “আমি এ বিষয়ে জানিনা।”

আল্লাহ্ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছেন, হে নাবী! আপনি বলুন, “আমি আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবানের জন্য তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। কুরাইশগণ ইসলাম গ্রহণে দেরী করতে লাগল, সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদদোয়া করেন। “হে আল্লাহ্! আপনি তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর ন্যায় সাত বছর (দুর্ভিক্ষ) দিয়ে আমাকে সাহায্য করুন।” তারপর তারা এমন ভীষণ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পতিত হল যে, তারা তাতে ধ্বংস হয়ে গেল এবং মৃত জন্তু ও তার হাড় খেতে বাধ্য হল। তারা (দুর্ভিক্ষের দরুন) আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে ধোঁয়ার মত দেখতে পেল। তারপর আবূ সুফিয়ান তাঁর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! তুমি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ও তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছ; অথচ তোমার গোত্রের লোকেরা এখন ধ্বংস হয়ে গেল। সুতরাং আমাদের (এ দুর্ভিক্ষ থেকে) বাঁচার জন্য দোয়া কর।

তখন তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ‏}‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏{‏عَائِدُونَ‏ “অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূমরাচ্ছন্ন হবে আকাশ।” তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। অবশেষে দুর্ভিক্ষের অবসান হল কিন্তু তারা কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করলো। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এদের উদ্দেশ্যেই নাযিল করলেন, যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব। الْبَطْشَةَ এবং لِزَامًا দ্বারা বদরের যুদ্ধ বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ আলিফ, লাম, মীম। রোমকগণ পরাজিত হয়েছে। এবং পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হবে। রোমকগণের ঘটনা অতিবাহিত হয়ে গেছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৩ | 4413 | ٤٤۱۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনই পরিবর্তন নেই” خلق الله আল্লাহর সৃষ্টি এর অর্থ আল্লাহর দ্বীন। যেমন خلق الأولين অর্থাৎ دين الأولين পূর্ববর্তীদের দ্বীন। الفطرة ইসলাম
৪৪১৩। আবদান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল মানব শিশুই ফিতরাত (ইসলাম) এর ওপর জন্ম গ্রহণ করে। তারপর তার পিতা ও মাতা তাকে ইহুদী, নাসারা অথবা অগ্নি উপাসক বানিয়ে দেয়। যেমন জানোয়ার পূর্ণ বাচ্চার জন্ম দেয়। তোমরা কি তার মধ্যে কোন ত্রুটি পাও? পরে তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। (আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর) যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এ-ই সরল দ্বীন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৪ | 4414 | ٤٤۱٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تشرك بالله إن الشرك لظلم عظيم “আল্লাহর কোন শরীক করো না, নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম”
৪৪১৪। কুতায়বা ইবনু সা’দ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হল (আল্লাহর বাণী): যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের উপর খুবই কঠিন (ভারী) মনে হল। তখন তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, তারা তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ আয়াত দ্বারা এ অর্থ বোঝানো হয়নি। তোমরা লুকমানের বাণী, যা তিনি তাঁর পুত্রকে সম্ভোধন করে বলেছিলেন, إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ শির্ক করা বড় জুলুম, তা কি শোননি?

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌, তারই কাছে রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান (অর্থাৎ কখন ঘটবে)
৪৪১৫। ইসহাক (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সাথে বসেছিলেন। এক ব্যাক্তি তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঈমান কী? তিনি বললেন, “আল্লাহতে ঈমান আনবে এবং তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর নাবী ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনবে এবং (কিয়ামতে) আল্লাহর দর্শন লাভ ও পুনরুত্থানের ওপর ঈমান আনবে।” লোকটি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসলাম কী? তিনি বললেন, ইসলাম (হল) আল্লাহর ইবাদত করবে ও তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক সাব্যস্ত করবে না এবং সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, ফরয যাকাত দিবে ও রমযানের সিয়াম পালন করবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইহ্সান কী? তিনি বললেন, ইহ্সান হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত এমন একাগ্রতার সাথে করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তবে (মনে করবে) আল্লাহ্ তোমাকে দেখছেন।

লোকটি আরও জিজ্ঞেস করল, ইয়াাল্লাহ! কখন কিয়ামত সংঘটিত হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, সে বেশি জানে না। তবে আমি তোমার কাছে এর (কিয়ামতের) কতগুলো লক্ষণ বলছি। তা হল, যখন দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে, এটা তার (কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার) একটি নিদর্শন। আর যখন দেখবে, নগ্নপদ ও নগ্নদেহ লোকেরা মানুষের নেতা হবে, এও তার একটি লক্ষণ। এটি ঐ পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানেন নাঃ

(১) ‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই রয়েছে। (২) তিনই বৃষ্টি বর্ষণ করান, (৩) তাঁরই জ্ঞানে রয়েছে, মাতৃগর্ভে কি আছে। এরপর লোকটি চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে আন। সাহাবাগণ তাঁকে ফিরিয়ে আনতে গেলেন, কিন্তু কিছুই দেখতে পাননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি জিবরীল, লোকদের তাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৬ | 4416 | ٤٤۱٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌, তারই কাছে রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান (অর্থাৎ কখন ঘটবে)
৪৪১৬। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গায়েবের চাবি পাঁচটি। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্ তা’আলারই রয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৭ | 4417 | ٤٤۱۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فلا تعلم نفس ما أخفي لهم “কেউ ই জানে না, তাদের জন্য কি লুকায়িত রয়েছে।”
সুরা সাজ্‌দা

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مَهِيْنٍ দুর্বল অর্থাৎ পুরুষের বীর্য। ضَلَلْنَا আমরা ধ্বংস হয়েছি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, الْجُرُزُ ঐ মাটি যেখানে এত অল্প বৃষ্টি হয়, যাতে তা কোন উপকারে আসে না। نَهْدِ তাকে সঠিক পথ বলে দিয়েছি।

৪৪১৭। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব সামগ্রী তৈরী করে রেখেছি, যা কোন নয়ন দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন অন্তকরণের চিন্তায় আসেনি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, তোমরা চাইলে (প্রমাণ স্বরূপ) এ আয়াত তিলাওয়াত করঃ কেউ জাননা তাদের জন্য নয়ন শীতলকারী কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে।

সুফিয়ান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কি এ হাদিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, তা নয়তো কি? আবূ মু’আবীয়া (রহঃ) আবূ সালিহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) قُرَّاتِ “আলিফ” এবং লম্বা ‘তা’ সহ পাঠ করেছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৮ | 4418 | ٤٤۱۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فلا تعلم نفس ما أخفي لهم “কেউ ই জানে না, তাদের জন্য কি লুকায়িত রয়েছে।”
৪৪১৮। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরি করে রেখেছি, সঞ্চিতরুপে যা কোন নয়ন দর্শন কনেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন ব্যাক্তির মনেও তার কল্পনা সৃষ্টি হয়নি। আর যা তোমাদের অবহিত করা হয়েছে, তা ছাড়া। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন, কেউ জাননা তাদের জন্য নয়ন শীতলকারী কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৯ | 4419 | ٤٤۱۹

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা আহযাব

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, صَيَاصِيْهِمْ তাদের মহল।

৪৪১৯। ইব্রাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়া ও আখিরাতে সকল মু’মিনের জন্য আমিই ঘনিষ্ঠতম। তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াত পাঠ করতে পার। “নাবী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চাইতে বেশি ঘনিষ্ঠ।” সুতরাং কোন মু’মিন কোন মাল-সম্পদ রেখে গেলে তার নিকটআত্মীয় সে যে-ই হোক, হবে তার উত্তরাধিকারী, আর যদি ঋণ অথবা অসহায় সন্তানাদি রেখে যায় সে যেন আমার কাছে আসে, আমি তার অভিভাবক।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২০ | 4420 | ٤٤۲۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ادعوهم لآبائهم “তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক”
৪৪২০। মুয়াল্লা ইবনু আসাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম যায়িদ ইবনু হারিসাকে আমরা “যায়িদ ইবনু মুহাম্মদ-ই” ডাকতাম, যে পর্যন্ত না এ আয়াত নাযিল হয়। “তোমরা তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে এটই অধিক ন্যায়সংগত।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২১ | 4421 | ٤٤۲۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فمنهم من قضى نحبه ومنهم من ينتظر وما بدلوا تبديلا “তাদের কেউ কেউ তার অঙ্গীকার পূরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে তারা তাতে কোন পরিবর্তন করেনি”। نحبه তার অঙ্গীকার أقطارها তার পার্শ্বসমূহ الفتنة لآتوها তারা তা গ্রহন করত
৪৪২১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এ আয়াত আনাস ইবনু নাযর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। “মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২২ | 4422 | ٤٤۲۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ فمنهم من قضى نحبه ومنهم من ينتظر وما بدلوا تبديلا “তাদের কেউ কেউ তার অঙ্গীকার পূরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে তারা তাতে কোন পরিবর্তন করেনি”। نحبه তার অঙ্গীকার أقطارها তার পার্শ্বসমূহ الفتنة لآتوها তারা তা গ্রহন করত
৪৪২২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন সহীফা থেকে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত অবিদ্যমান পেলাম, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (অধিক পরিমাণ) তিলওয়াত করতে শুনেছি। (অবশেষে) সেটি খুযায়মা আনসারী ব্যতীত অন্য কারও কাছে পেলাম না; যার সাক্ষী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন পুরুষ সাক্ষীর সমান গণ্য করেছেন। (আয়াতটি হল) مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৩ | 4423 | ٤٤۲۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ قل لأزواجك إن كنتن تردن الحياة الدنيا وزينتها فتعالين أمتعكن وأسرحكن سراحا جميلا “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুনঃ তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর তবে আস আমি তোমাদের ভোগ-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় দেই।” التبرج আপন সৌন্দর্য প্রকাশ করা। سنة الله যে নীতি আল্লাহ্‌ নির্ধারণ করেছেন।
৪৪২৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সহধর্মিণীগণের ইখতিয়ার দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম আমাকে দিয়ে শুরু করলেন এবং বললেন, আমি তোমার কাছে একটি কথা উল্লেখ করছি। তাড়াহুড়ো না করে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ করে উত্তর দেবে। তিনি এ কথা ভালভাবেই জানতেন যে, আমার আব্বা-আম্মা তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ কখনও দিবেন না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, (আমাকে এ কথা বলার পর) তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ বলছেন, “হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুন। তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর……। তখন আমি তাঁকে বললাম, তাতে আমার আব্বা-আম্মা থেকে পরামর্শ নেবার কী আছে? আমি তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং আখিরাতের জীবনই চাই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৪ | 4424 | ٤٤۲٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ وتخفي في نفسك ما الله مبديه وتخشى الناس والله أحق أن تخشاه তুমি তোমার অন্তরে যা গোপন কর, আল্লাহ্‌ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন। তুমি লোকভয় করছিলে অথচ আল্লাহকেই ভয় করা তোমার পক্ষে অধিকতর সঙ্গত।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ আর যদি তোমরা আল্লাহ্‌ তার রাসুল ও আখিরাতের জীবন কামনা কর, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ্‌ তাদের মধ্যে মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।

কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلٰى فِيْ بُيُوْتِكُنَّ مِنْ اٰيٰتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِ এর মধ্যে اٰيٰتِ দ্বারা সুন্নাত ও হিকমত বোঝানো হয়েছে।

লাইস (রহঃ) … আয়শা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সহধর্মিণীদের ব্যাপারে দু’টি পন্থার একটি পন্থা বেছে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হল, তখন তিনি প্রথমে আমাকে বললেন, তোমাকে একটি বিষয় সম্পর্কে বলব। তাড়াহুড়ো না করে তুমি তোমার আববা ও আম্মার সঙ্গে পরামর্শ করে নিবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি অবশ্যই জানতেন, আমার আববা-আম্মা তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বলবেন না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ وَإِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه” وَالدَّارَ الْاٰخِرَةَ فَإِنَّ اللهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنٰتِ مِنْكُنَّ أَجْرًا عَظِيْمًا ‘‘হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর…..মহা প্রতিদান পর্যন্ত। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আমার আববা-আম্মার সঙ্গে পরামর্শের কী আছে? আমি তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং আখিরাতের জীবন কামনা করি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য সহধর্মিণী আমার অনুরূপ জবাব দিলেন।

৪৪২৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ আয়াতটি, ‏وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ‏ “(তুমি তোমার অন্তরে যা গোপন করছ, আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন।)” জয়নব বিনতে জাহ্শ এবং যায়িদ ইবনু হারিসা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৫ | 4425 | ٤٤۲۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ترجئ من تشاء منهن وتؤوي إليك من تشاء ومن ابتغيت ممن عزلت فلا جناح عليك “তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার। আর তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন ترجئ দূরে রাখতে পার। أرجئه তাকে দূরে সরিয়ে দাও, অবকাশ দাও।
৪৪২৫। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেসব মহিলা নিজকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হেবাস্বরূপ ন্যাস্ত করে দেন, তাদের আমি ঘৃণা করতাম। আমি (মনে মনে) বলতাম, মহিলারা কি নিজেকে অর্পণ করতে পারে? এরপর যখন আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “আপনি তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আপনার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন। আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।” তখন আমি বললাম, আমি দেখছি যে, আপনার রব আপনি যা ইচ্ছা করেন, তা-ই পূরণ করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৬ | 4426 | ٤٤۲٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ترجئ من تشاء منهن وتؤوي إليك من تشاء ومن ابتغيت ممن عزلت فلا جناح عليك “তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার। আর তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন ترجئ দূরে রাখতে পার। أرجئه তাকে দূরে সরিয়ে দাও, অবকাশ দাও।
৪৪২৬। হাব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) … মু’আয (রহঃ) সূত্রে … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের সঙ্গে অবস্থানের পালার ব্যাপারে আমাদের থেকে অনুমতি চাইতেন এ আয়াত নাযিল হওয়ার পরও, “আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট হতে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন এবং আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।” এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মু’আয বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞস করলাম, আপনি এর উত্তরে কি বলতেন? তিনি বলতেন, আমি তাঁকে বলতাম, এ বিষয়ের অধিকার যদি আমার থেকে থাকে তাহলে আমি ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার ব্যাপারে কাউকে অগ্রাধিকার দিতে চাই না। আব্বাদ বিন আব্বাদ ‘আসম থেকে অনুরূপ শুনেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৭ | 4427 | ٤٤۲۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪২৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ লোক আসে। আপনি যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ব্যাপারে পর্দার আদেশ দিতেন (তবে ভাল হত) তারপর আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৮ | 4428 | ٤٤۲۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪২৮। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ রকাশী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জয়নাব বিনত জাহশকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ে করেন, তখন তিনি লোকদের দাওয়াত দিলেন। লোকেরা আহারের পর বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। তিনি উঠে যেতে উদ্যত হচ্ছিলেন, কিন্তু লোকেরা উঠছিল না। এ অবস্থা দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তিনি উঠে যাওয়ার পর যারা উঠবার তারা উঠে গেল। কিন্তু তিন ব্যাক্তি বসেই রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের জন্য ফিরে এসে দেখেন, তারা তখনও বসে রয়েছে (তাই তিনি চলে গেলেন)। এরপর তারাও উঠে গেল। আমি গিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম। তারপর তিনি এসে প্রবেশ করলেন। এরপরও আমি প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তার মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেনঃ ‏يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ‏}‏ الآيَةَ “হে মু’মিনগণ! তোমরা নাবীর গৃহে প্রবেশ করো না …… শেষ পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪২৯ | 4429 | ٤٤۲۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪২৯। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি পর্দার আয়াত সম্পর্কে লোকদের চেয়ে বেশি জানি। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যয়নাবকে বাসর যাপনের জন্য পাঠানো হয় এবং তিনি তাঁর ঘরে তাঁর সঙ্গে অবস্থান করেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার তৈরি করে লোকদের দাওয়াত দিলেন। তারা (খাওয়ার পর) বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে গিয়ে আবার ঘরে ফিরে এলেন, তখনও তারা বসে আলাপ-আলোচনা করছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেন। “হে মু’মিনগণ, তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে আহারের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করবে না।” …… পর্দার আড়াল থেকে’ পর্যন্ত। এরপর পর্দার বিধান কার্যকর হল এবং লোকেরা চলে গেল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩০ | 4430 | ٤٤۳۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪৩০। আবূ মা’আমার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জয়নাব বিনত জাহশের বাসর যাপন উপলক্ষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু রুটি-গোশতের ব্যবস্থা করলেন। তারপর খানা খাওয়াবার জন্য আমাদের লোকদের ডেকে আনতে পাঠালেন। একদল লোক এসে খেয়ে বের হয়ে গেল। তারপর আর একদল এসে খেয়ে বের হয়ে গেল। এরপর আবার আমি ডাকতে গেলাম; কিন্তু কাউকে আর ডেকে পেলাম না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আর কাউকে ডেকে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, খানা উঠিয়ে নাও। তখন তিন ব্যাক্তি ঘরে রয়ে গেল, তারা কথাবার্তা বলছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আয়িশা (রাঃ) এর হুজরার দিকে গেলেন এবং বললেন, আসসালামু আলায়কুম ইয়া আহলাল বায়ত ওয়া রহমাতুল্লাহ্! আয়িশা (রাঃ) বললেন, ওয়া আলায়কা ওয়া রাহমাতুল্লাহ্। আল্লাহ্ আপনাকে বরকত দিন, আপনার স্ত্রীকে কেমন পেলেন? এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে সব স্ত্রীর হুজরায় গেলেন এবং আয়িশাকে যেমন বলেছিলেন তাদেরও অনুরূপ বললেন। আর তাঁরা তাঁকে সে জবাবই দিয়েছিলেন, যেমন আয়িশা (রাঃ) দিয়েছিলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে সে তিন ব্যাক্তিকেই ঘরে আলাপরত দেখতে পেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব লাজুক ছিলেন। (তাই তাদের দেখে লজ্জা পেয়ে) আবার আয়িশা (রাঃ) এর হুজরার দিকে গেলেন। তখন, আমি স্মরণ করতে পারছি না, অন্য কেউ না আমি তাকে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার খবর দিলাম। তিনি ফিরে এসে দরজার চৌকাঠের ভিতরে এক পা ও বাইরে এক পা রেখে আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩১ | 4431 | ٤٤۳۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪৩১। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জয়নাব বিন্ত জাহশের সাথে বাসর উদ্যাপনের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালীমা করলেন। লোকদের তিনি গোশত-রুটি তৃপ্তি সহকারে খাওয়ালেন। তারপর তিনি উম্মুল মু’মিনীনদের কক্ষে যাওয়ার জন্য বের হলেন। যেমন বাসর রাত্রির ভোরে তার অভ্যাস ছিল যে, তিনি তাঁদের সালাম দিতেন ও তাঁদের জন্য দোয়া করতেন এবং তাঁরাও তাঁকে সালাম বলতেন, তাঁর জন্য দোয়া করতেন। তারপর ঘরে ফিরে এসে দু’ব্যাক্তিকে আলাপরত দেখতে পেলেন। তাদের দেখে তিনি ঘর থেকে ফিরে গেলেন। সে দু’জন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘর থেকে ফিরে যেতে দেখে দ্রুত বের হয়ে গেল। এরপরে, আমার স্মরণ নেই যে আমি তাঁকে তাদের বের হয়ে যাওয়ার সংবাদ দিলাম, না অন্য কেউ দিল। তখন তিনি ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করলেন এবং আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা লটকিয়ে দিলেন এবং পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩২ | 4432 | ٤٤۳۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
৪৪৩২। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর সাওদা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যান। সাওদা এমন মোটা শরীরের অধিকারিণী ছিলেন যে, পরিচিত লোকদের থেকে তিনি নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে দেখে বললেন, হে সাওদা! জেনে রাখ, আল্লাহর কসম, আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে পারবে না। এখন দেখ তো, কেমন করে বাইরে যাবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) সাওদা (রাঃ) ফিরে আসলেন। আর এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে রাতের খানা খাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল টুকরা হাড়। সাওদা (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন উমর (রাঃ) আমাকে এমন এমন কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিকট ওহী নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ হওয়া শেষ হল, হাড় টুকরা তখনও তাঁর হাতেই ছিল, তিনি তা রাখেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৩ | 4433 | ٤٤۳۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ্‌ সকল বিষয়ে জ্ঞাত। নবী (সাঃ) এর পত্নীদের জন্য কোন গুনাহ নেই, তাদের পিতা, পুত্র, ভাই ভাতিজা, ভাগিনা, সাধারণ মহিলা এবং দাসীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সবকিছু দেখেন।
৪৪৩৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর, আবূল কু’আয়স এর ভাই-আফলাহ আমার কাছে প্রবেশ করার অনুমতি চায়। আমি বললাম, এ ব্যাপারে যতক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি না দিবেন, ততক্ষণ আমি অনুমতি দিতে পারি না। কেননা তার ভাই আবূ কুআয়স সে নিজে আমাকে দুধ পান করান নি। কিন্তু আবূল কু’আয়াসের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আবূল কু’আয়াসের ভাই-আফলাহ্ আমার সাথে দেখা করার অনুমতি চাইছিল। আমি এ বলে অস্বীকার করেছি যে, যতক্ষণ আপনি এ ব্যাপারে অনুমতি না দেবেন, ততক্ষণ আমি অনুমতি দেব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার চাচাকে (তোমার সাথে দেখা করার) অনুমতি দিতে কিসে বাধা দিয়েছে? আমি বললাম, সে ব্যাক্তি তো আমাকে দুধ পান করাননি; কিন্তু আবূল কু’আয়াসের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছে। এরপর তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার হাত ধুলি ধূসরিত হোক, তাকে অনুমতি দাও, কেননা, সে তোমার চাচা। উরওয়া বলেন, এ কারণে আয়িশা (রাঃ) বলতেন বংশের দিক দিয়ে যা হারাম মনে কর, দুধ পানের কারণেও তা হারাম জান।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৪ | 4434 | ٤٤۳٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ (তোমরাও) তার প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ কর। আবুল ‘আলীয়া (রহ.) বলেন, আল্লাহর সালাতের অর্থ নাবীর প্রতি ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহর প্রশংসা। ফেরেশতার সালাতের অর্থ- দু‘আ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ -এর অর্থ-বারকাতের দু‘আ করছেন। لَنُغْرِيَنَّكَ আমি তোমাকে বিজয়ী করব।
৪৪৩৪। সাঈদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার উপর সালাম (প্রেরণ করা) আমরা জানতে পেরেছি; কিন্তু সালাত (নামায/নামাজ) কি ভাবে? তিনি বললেন, তোমরা বলবে, “হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিজনের উপর রহমত অবতীর্ণ কর, যেমনিভাবে ইব্রাহীম এর পরিজনের উপর তুমি রহমত অবতীর্ণ করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত, মর্যাদাবান। হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ এর উপর এবং মুহাম্মদ এর পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ কর। যেমনিভাবে তুমি বরকত অবতীর্ণ করেছ ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত, মর্যাদাবান।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৫ | 4435 | ٤٤۳۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ (তোমরাও) তার প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ কর। আবুল ‘আলীয়া (রহ.) বলেন, আল্লাহর সালাতের অর্থ নাবীর প্রতি ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহর প্রশংসা। ফেরেশতার সালাতের অর্থ- দু‘আ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ -এর অর্থ-বারকাতের দু‘আ করছেন। لَنُغْرِيَنَّكَ আমি তোমাকে বিজয়ী করব।
৪৪৩৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো হল সালাম পাঠ; কিন্তু কেমন করে আমরা আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করব? তিনি বললেন, তোমরা বলবে, “হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ এর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে রহমত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ও মুহাম্মাদের পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ করুন, যেভাবে বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি।

তবে বর্ণনাকারী আবূ সালিহ লায়েস থেকে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ও তার পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ করুন যেমন আপনি বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৬ | 4436 | ٤٤۳٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ (তোমরাও) তার প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ কর। আবুল ‘আলীয়া (রহ.) বলেন, আল্লাহর সালাতের অর্থ নাবীর প্রতি ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহর প্রশংসা। ফেরেশতার সালাতের অর্থ- দু‘আ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يُصَلُّوْنَ -এর অর্থ-বারকাতের দু‘আ করছেন। لَنُغْرِيَنَّكَ আমি তোমাকে বিজয়ী করব।
৪৪৩৬। ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) … ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত। তিনি (এমনিভাবে) বলেন, যেমনভাবে ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর বরকত নাযিল করুন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি এবং মুহাম্মদের পরিজনের প্রতি, যেভাবে বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি এবং ইব্রাহীমের পরিবারের প্রতি।

আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা মূসা (আলাইহিস সালাম) কে কষ্ট দিয়েছে। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন বড় লজ্জাশীল ব্যাক্তি। আর এ প্রেক্ষিতে আল্লাহর এ বাণী, হে মু’মিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা মূসা (আলাইহিস সালাম) কে কষ্ট দিয়েছে। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে ওদের অভিযোগ থেকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে অতি সম্মানিত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৭ | 4437 | ٤٤۳۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ‘এমনকি যখন তাদের মন থেকে আতংক দূরীভূত হয়, তখন তারা বলে তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন? তারা বলবে সত্যই। আর তিনি উচ্চ ও মহান।
সুরা সাবা

مُعَاجِزِيْنَ প্রতিযোগিতাকারী بِمُعْجِزِيْنَ ব্যর্থকারী। مُعَاجِزِيْنَ বিজয়ী হওয়ার প্রয়াসী। سَبَقُوْا ছুটে গিয়েছে, পরিত্রাণ পেয়েছে। لَايُعْجِزُوْنَ তারা ছুটে যেতে পারবে না, ছাড়া পাবে না। يَسْبِقُوْنَا আমাদের অক্ষম করবে। بِمُعْجِزِيْنَ ব্যর্থকারী। مُعَاجِزِيْنَ পরস্পর বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশী। প্রত্যেকেই তার প্রতিপক্ষের অক্ষমতা প্রকাশ করতে চায়। مِعْشَارٌ এক-দশমাংশ। الْأُكُلُ ফল, بَاعِدْ – بَعِّدْ একই অর্থ, দূরত্ব করে দাও। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لَايَعْزُبُ অদৃশ্য হয় না। الْعَرِمِ বাঁধ, আল্লাহ্ তা‘আলা সে বাঁধের মধ্য দিয়ে লাল পানি প্রবাহিত করে তা ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেন এবং একটি উপত্যকা খুদে ফেলেন। ফলে তার দু’পার্শ্ব উঁচু হয়ে তা থেকে পানি সরে পড়ে এবং উভয় পার্শ্ব শুকিয়ে যায়। এ লাল পানি বাঁধ থেকে আসেনি, বরং তা ছিল তাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত আযাব, যা তিনি যেখান থেকে ইচ্ছে পাঠিয়েছিলেন।

‘আমর ইবনু শুরাহবীল (রহ.) বলেন, الْعَرِمُ ইয়ামানবাসীদের ভাষায় কুঁজের মত উঁচু। অন্য হতে বর্ণিত। الْعَرِمُ উপত্যকা, السَّابِغَاتُ বর্মসমূহ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يُجَازَى শাস্তি দেয়া হবে। أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ আল্লাহর আনুগত্য। مَثْنَىوَفُرَادَى একা একা এবং দু’ দু’জন। التَّنَاوُشُ পরজগত থেকে দুনিয়ার দিকে ফিরে আসা। وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُوْنَ অর্থাৎ সম্পদ, সন্ততি বা জাঁক-জমক। بِأَشْيَاعِهِمْ তাদের মত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَالْجَوْبَةِ যমীনে হাউজ সদৃশ। الْخَمْطُ বিস্বাদ বৃক্ষ। الْأَثَلُ ঝাউ গাছ। الْعَرِمُ কঠিন।

৪৪৩৭। আল হুমায়দী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা যখন আকাশে কোন ফয়সালা করেন তখন ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অতি বিনীতভাবে তাদের পাখা ঝাড়তে থাকে; যেন মসৃণ পাথরের উপর শিকলের আওয়াজ। “যখন তাদের মনের আতংক বিদূরিত হয় তারা (একে অপরকে) জিজ্ঞেস করে, তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন? তারা (উত্তরে) বলেন, তিনি যা বলেছেন, সত্যই বলেছেন। তিনি মহান উচ্চ। যে সময়ে লুকোচুরিকারী (শয়তান) তা শোনে, আর লুকোচুরিকারী এরূপ একের ওপর এক। সুফিয়ান তাঁর হাত উপরে উঠিয়ে আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে দেখান। তারপর শয়তান কথাগুলো শুনে নেয় এবং প্রথমজন তার নিচের জনকে এবং সে তার নিচের জনকে পৌঁছিয়ে দেয়। এমনিভাবে এ সংবাদ দুনিয়ার জাদুকর ও জ্যোতিষের মুখে পৌছে দেয়। কোন কোন সময় কথা পৌঁছানোর পূর্বে তার উপর অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হয় আবার অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বে সে কথা পৌঁছিয়ে দেয় এবং এর সাথে শত মিথ্যা মিশিয়ে বলে। এরপর লোকেরা বলাবলি করে। সে কি অমুক দিন অমুক অমুক কথা আমাদের বলেনি? এবং সেই কথা যা আসমান থেকে শুনে এসেছে তার জন্য সব কথা সত্য বলে মনে করে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৮ | 4438 | ٤٤۳۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “সে তো আমাদের সম্মুখে এক আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ককারী মাত্র।”
৪৪৩৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাফা (পাহাড়ে) আরোহণ করে ‘ইয়া সাবাহাহ, বলে সকলকে ডাক দিলেন। কুরাইশগণ তাঁর কাছে সমবেত হয়ে বলল, তোমার ব্যাপার কী? তিনি বললেন, তোমরা বল তো, আমি যদি তোমাদের বলি যে, শত্রুবাহিনী সকাল বা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত; তবে কি তোমরা আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, অবশ্যই। তিনি বললেন, আমি তো তোমাদের জন্য এক আসন্ন কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শনকারী। একথা শুনে আবূ লাহাব বলল, তোমার ধ্বংস হোক। এই জন্যই কি আমাদেরকে সমবেত করেছিলে? তখন আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেনঃ ‏تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ “আবূ লাহাবের দুহাত ধ্বংস হোক।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৯ | 4439 | ٤٤۳۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
সুরা ফাতির

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, الْقِطْمِيْرُ অর্থ-খেজুরের অাঁটির পর্দা। مُثْقَلَةٌ ভারাক্রান্ত ব্যক্তি। অন্যরা বলেছেন, الْحَرُوْرُ (আল-হারূর- অর্থ-দিবাভাগে সূর্যের উত্তাপ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাতের উত্তাপকে الْحَرُوْرُ এবং দিনের উত্তাপকে السَّمُوْمُ বলা হয়।

غَرَابِيْبُ অর্থ أَشَدُّ سَوَادٍ অর্থাৎ নিকষ কালো الْغِرْبِيْبُ। (আল-গিরবীব) অর্থ الشَّدِيْدُ السَّوَادِ অধিক কালো।

সুরা ইয়াসীন

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, فَعَزَّزْنَا আমি অধিক শক্তি দিলাম। يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ দুনিয়াতে রাসূলদের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার ফলে আখিরাতে তাদের অবস্থা দুঃখময় হবে। أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ একটির আলো অন্যটির আলোর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না এবং চন্দ্র ও সূর্যের জন্য তা সম্ভব নয়। سَابِقُ النَّهَارِ রাত্র এবং দিন উভয়ই একে অপরের পেছনে অবিরাম গতিতে চলছে। نَسْلَخُ (রাত-দিন) উভয়ের মধ্যে একটিকে আমি অপরটি থেকে সরিয়ে দিই এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে। مِنْ مِثْلِهِ অনুরূপ চতুষ্পদ জন্তু। فَكِهُوْنَ আনন্দিত। جُنْدٌ مُحْضَرُوْنَ হিসাবের সময় তাদের উপস্থিত করা হবে তাদের বাহিনীরূপে। ইকরামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, الْمَشْحُوْنِ বোঝাইকৃত।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, طَائِرُكُمْ তোমাদের বিপদাপদ। يَنْسِلُوْنَ তারা বেরিয়ে আসবে। مَرْقَدِنَا আমাদের বের হবার স্থান। أَحْصَيْنَاهُ হিফাযাত করেছি আমি প্রতিটি বস্তুকে। مَكَانَتُهُمْ এবং مَكَانُهُمْএকই; তাদের স্থানে।

৪৪৩৯ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্যাস্তের সময় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জানো সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। নিম্নবর্ণিত আয়াত ‏وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ‏ এ এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশলী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪০ | 4440 | ٤٤٤۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
৪৪৪০। হুমায়দী (রহঃ) … আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর বাণীঃ مُسْتَقَرُّ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪১ | 4441 | ٤٤٤۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ وإن يونس لمن المرسلين ইউনুস ছিলেন রাসুলদের একজন।
সুরা সাফ্‌ফাত

মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহর বাণীঃ مِنْ مَكَانٍمبَعِيْدٍ মানে সকল স্থান থেকে। يُقْذَفُوْنَ নিক্ষিপ্ত হবে তাদের প্রতি। وَاصِبٌ অবিরাম বা অব্যাহত। لَازِبٌ আঠালো। تَأْتُوْنَنَا عَنِ الْيَمِيْنِ তোমরা তো হাক, কল্যাণ এবং সুখ-শান্তির বাণী নিয়ে আমাদের কাছে আসতে, এ কথাগুলো কাফিররা শায়ত্বনকে বলবে। غَوْلٌ পেটের ব্যথা। يُنْزَفُوْنَ তাদের বুদ্ধি নষ্ট হবে না। قَرِيْنٌ শায়তান। يُهْرَعُوْنَ দ্রুত পদক্ষেপে চলা। يَزِفُّوْنَ দ্রুতগতিতে পথ চলা। بَيْنَ الْجِنَّةِ نَسَبًا কুরাইশ কাফেররা বলত, মালাক আল্লাহর কন্যা এবং তাদের মা জিন নেতাদের কন্যারা। আল্লাহ্ বলেন, وَلَقَدْ عَلِمَتِ الْجِنَّةُ إِنَّهُمْ لَمُحْضَرُوْنَ জিনেরা জানে, তাদেরও উপস্থিত করা হবে- তাদের হাজির করা হবে শাস্তির জন্য।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, لَنَحْنُ الصَّافُّوْنَ‘ আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান’ দ্বারা ফেরেশতাদের বোঝানো হয়েছে। صِرَاطِ الْجَحِيْمِ জাহান্নামের পথে বা জাহান্নামের মধ্যে। لَشَوْبًا তাদের খাদ্য ফুটন্ত পানি মিশ্রিত। مَدْحُوْرًا বিতাড়িত। بَيْضٌ مَكْنُوْنٌ সুরক্ষিত মুক্তা। وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الاٰخِرِيْنَ তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হবে। يَسْتَسْخِرُوْنَ তারা উপহাস করত। بَعْلًا দেবমূর্তি।

৪৪৪১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ইউনুস) ইবনু মাত্তার চেয়ে উত্তম বলে দাবি করা কারো জন্য সমীচীন নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪২ | 4442 | ٤٤٤۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ وإن يونس لمن المرسلين ইউনুস ছিলেন রাসুলদের একজন।
৪৪৪২। ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বলে, আমি ইউনুস ইবনু মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর, সে মিথ্যা বলে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৩ | 4443 | ٤٤٤۳

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৪৪৩। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আওওআম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি মুজাহিদকে সূরা সা’দ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, (এ বিষয়ে) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি পাঠ করলেন, ‏أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ ‘তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। . ইবনু আব্বাস (রাঃ) এতে সিজদা করতেন।’

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৪ | 4444 | ٤٤٤٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৪৪৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আওওআম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুজাহিদকে সূরা সা’দ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, (এ সূরায়) সাজদা কোত্থেকে? তিনি বললেন, তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পড়নি وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُدَ وَسُلَيْمَانَ‏}‏ ‏{‏أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ‏ “আর তার বংশধর দাউদ ও সুলায়মান তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। দাউদ তাঁদের অন্যতম, তোমাদের নাবীদের যাদের অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই নাবী এ সূরায় সাজদা করেছেন।

عُجَابٌ অত্যাশ্চর্য। الْقِطُّ লিপি। এখানে صَحِيْفَةُ দ্বারা নেক লিপি বোঝানো হয়েছে। মুজাহিদ বলেছেন, فِيْعِزَّةٍ ঔদ্ধত্য। الْمِلَّةِالْآخِرَةِ কুরাইশদের ধর্ম। الاخْتِلَاقُ মিথ্যা। الْأَسْبَابُ আকাশের পথসমূহ جُنْدٌ مَّا هُنَالِكَ مَهْزُوْمٌ এ বাহিনীও সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে অর্থাৎ কুরাইশ সম্প্রদায়। أُولٓٓئِكَ الْأَحْزَابُ অতীতকাল। فَوَاقٍ প্রত্যাবর্তন। قِطَّنَا আমাদের শাস্তি। اتَّخَذْنَاهُمْ سُخْرِيًّا আমি তাদের বেষ্টন করে রেখেছি। أَتْرَابٌ সমবয়স্কা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘ইবাদাতে শক্তিশালী ব্যক্তি। الْأَبْصَارُ আল্লাহর কাছে সূক্ষ্মদর্শী ব্যক্তি। حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّيْ আল্লাহর স্মরণ থেকে। طَفِقَ مَسْحًا তিনি ঘোড়াগুলোর পা ও গলায় হাত বুলাতে লাগলেন। الْأَصْفَادِ শৃংখল (বাঁধন)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৫ | 4445 | ٤٤٤۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ هب لي ملكا لا ينبغي لأحد من بعدي إنك أنت الوهاب “হে আমার রব! আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যার অধিকারী আমি ছাড়া কেউ না হয়। আপনি তো পরম দাতা (৩৮ঃ ৩৫)
৪৪৪৫। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গতরাতে অবাধ্য জ্বীনের একটি দৈত্য আমার কাছে এসেছিল অথবা এ ধরনের কিছু কথা তিনি বললেন, আমার সালাত (নামায/নামাজ) নষ্ট করার জন্য। তখন আল্লাহ্ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দান করলেন। আমি ইচ্ছা করলাম, মসজিদের খুঁটিগুলোর একটির সাথে ওকে বেঁধে রাখতে, যাতে ভোরে তোমরা সকলে ওটা দেখতে পাও। তখন আমার ভাই সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর দোয়া স্মরণ হল, رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দান কর এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ না হয়।” রাবী রাওহ্ বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৬ | 4446 | ٤٤٤٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ “আমি বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই”
৪৪৪৬। কুতায়বা (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, হে লোকসকল! যে ব্যাক্তি কোন বিষয়ে জানে সে তা বর্ণনা করবে। আর যে না জানে, তার বলা উচিত, আল্লাহ্ই ভাল জানেন। কেননা অজানা বিষয় সম্বন্ধে আল্লাহ্ই ভাল জানেন। এ কথা বলাও জ্ঞানের লক্ষণ। আল্লাহ্ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছেন, ‘বল, এর (কুরআন বা তাওহীদ প্রচারের) জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়টকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (কুরআনে বর্ণিত) ধুম্র সম্পর্কে শীঘ্র আমি তোমাদের বলব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিলে তারা (এ দাওয়াতে সাড়া দিতে) বিলম্ব করল। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! . ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর জীবনকালের দুর্ভিক্ষের সাত বছরের মত দুর্ভিক্ষ দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। এরপর দুর্ভিক্ষ তাদেরকে গ্রাস করে নিল। শেষ হয়ে গেল সমস্ত কিছু। অবশেষ তারা মৃত জন্তু ও চামড়া খেতে লাগল। তখন তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় চোখে আকাশ ও তার মধ্যে ধোঁয়া দেখত।

আল্লাহ্ বললেন, “অতএব তুমি সেদিনের অপেক্ষা কর, যেদিন ধোঁয়া হবে আকাশে, এবং তা আচ্ছন্ন করে ফেলবে সকল মানুষ। এ তো মর্মন্তুদ শাস্তি।” রাবী বলেন, তারপর তারা দোয়া করল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ আযাব থেকে মুক্তি দাও, আমরা ঈমান আনব। তারা কিভাবে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের কাছে তো এসেছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদাতা এক রাসূল। তারপর তারা মুখ ফিরিয়ে নিল তাঁর থেকে এবং বলল, সে তো শিখানো বুলি আওড়ায়, সে তো এক উন্মাদ। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য রহিত করছি। তোমরা তো অবশ্য তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। (ইবনু মাসউদ বলেন), কিয়ামতের দিনও কি তাদের থেকে আযাব রহিত করা হবে? তিনি (ইবনু মাসউদ) বলেন, আযাব দূর করা হলে তারা পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ তা’আলা বদর যুদ্ধের দিন তাদের পাকড়াও করলেন। আল্লাহ্ বলেন, যেদিন আমি তোমাদের কঠোরভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের শাস্তি দেবই।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৭ | 4447 | ٤٤٤۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب جميعا إنه هو الغفور الرحيم “বল হে আমার বান্দাগন! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্‌ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৩৯ঃ ৫৩)
সুরা যুমার

মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, يَتَّقِيْ بِوَجْهِهٰ অধোমুখী করে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হেঁচড়িয়ে নেয়া হবে। এ আয়াতটি নিম্নোক্ত আয়াতের মতই, ‘‘যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ, না যে ক্বিয়ামাতের দিন নিরাপদে থাকবে সে?’’ ذِيْ عِوَجٍ সন্দেহপূর্ণ। وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ মুশরিকদের বাতিল মাবূদ এবং হক মাবূদের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। وَيُخَوِّفُوْنَكَ بِالَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِهٰ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। এখানে دُوْنِهٰ মানে প্রতিমা। خَوَّلْنَا আমি দিলাম। وَالَّذِيْ جَآءَ بِالصِّدْقِ এর الصِّدْقِ মানে কুরআন। وَصَدَّقَ بِهِ মু’মিনগণ ক্বিয়ামাতের দিন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই সে কুরআন যা আপনি আমাকে দিয়েছেন এবং আমি তার বিধানসমূহের ওপর ‘আমাল করেছি। مُتَشَاكِسُوْنَ ঐ উদ্ধত পশু প্রকৃতির ব্যক্তি, যে ইনসাফে সন্তুষ্ট নয়। وَرَجُلًا سِلْمًا যোগ্য বা নেককার; যেমন বলা হয় سَالِمًاصَالِحًا। اشْمَأَزَّتْ পলায়ন করে। بِمَفَازَتِهِمْ নির্গত হয়েছে الْفَوْزِ হতে যার অর্থ; সাফল্যসহ। بِحِفَافَيْهِ তারা ঘুরবে; তাওয়াফ করবে। حَافِّيْنَ চতুষ্পার্শ্বে। مُتَشَابِهًا শব্দটি الاشْتِبَاهِ মাসদার হতে গঠিত নয়: কুরআন সত্যায়নের ব্যাপারে পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৪৪৪৭। ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … . ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকদের কিছু লোক অত্যধিক হত্যা করে এবং অত্যধিক ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তারপর তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল এবং বলল, আপনি যা বলেন এবং আপনি যেদিকে আহবান করেন, তা অতি উত্তম। আমাদের যদি জানিয়ে দিতেন যে, আমরা যা করেছি, তার কাফফারা কি? এর প্রেক্ষিতে নাযিল হয় ‘এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্কে ডাকে না, আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, তাকে না-হক হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আরো নাযিল হলঃ “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৮ | 4448 | ٤٤٤۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ “তারা আল্লাহ্‌র যথোচিত সম্মান করে না”
৪৪৪৮। আদম (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদী আলিমদের থেকে জনৈক আলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ্ তা’আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন, তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৯ | 4449 | ٤٤٤۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুষ্ঠিতে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তার করায়ত্ত। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যার শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।
৪৪৪৯। সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা যমীনকে নিজ মুঠায় নিবেন এবং আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করে তাঁর ডান হাতে নিবেন, তারপর বলবেন, আজ আমিই মালিক, দুনিয়ার বাদশারা কোথায়?

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫০ | 4450 | ٤٤۵۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ونفخ في الصور فصعق من في السموات ومن في الأرض إلا من شاء الله ثم نفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون “এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, ফলে যাদের আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মুর্ছিত হয়ে পড়বে। এরপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।
৪৪৫০। হাসান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শেষ বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর যে সর্বপ্রথম মাথা উঠাবে, সে আমি। তখন আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে দেখব আরশের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি জানিনা, তিনি আগে থেকেই এভাবে ছিলেন, না শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫১ | 4451 | ٤٤۵۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ونفخ في الصور فصعق من في السموات ومن في الأرض إلا من شاء الله ثم نفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون “এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, ফলে যাদের আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মুর্ছিত হয়ে পড়বে। এরপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।
৪৪৫১। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুইবার ফুঁৎকারের মাঝে ব্যবধান চল্লিশ। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আবূ হুরায়রা, চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ বছর? এবারও তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি চল্লিশ মাস। এবারও তিনি অস্বীকার করলেন, এবং বললেন, মেরুদণ্ডের হাড় ব্যতীত মানুষের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ দ্বারাই সৃষ্টি জগত আবার সৃষ্টি করা হবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫২ | 4452 | ٤٤۵۲

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা মু’মিন

মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, অন্যান্য সূরাতে حم শব্দটি যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এখানেও তা একইভাবেই ব্যবহৃত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন حم এই সূরার নাম। এর প্রমাণস্বরূপ তাঁরা শুরায়হ্ ইবনু আবূ আওফা আবসীর কবিতাটি পেশ করছেন। তিনি বলেছেন يُذَكِّرُنِيْ حاميم وَالرُّمْحُ شَاجِرٌ فَهَلَّا تَلَا حاميم قَبْلَ التَّقَدُّمِ (জঙ্গে জামালের মধ্যে) বর্শা যখন উভয় দিক থেকে বর্ষিত হচ্ছিল, তখন আমার حَامِيْمَ স্মরণ এল। হায়! যুদ্ধে আসার পুর্বে কেন حم পাঠ করা হল না। الطَّوْلِ সম্মানিত হওয়া। دَاخِرِيْنَ অর্থ خَاضِعِيْنَ লাঞ্ছিত বা বিনয়ী। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِلَى النَّجَاةِ এর النَّجَاة অর্থ الإِيْمَانُ ঈমান। لَيْسَ لَهُ دَعْوَةٌ এর لَهُ মানে প্রতিমা। يُسْجَرُوْنَ তাদের জন্য আগুন জ্বালানো হবে تَمْرَحُوْنَ তোমরা দম্ভ করতে।

আলা ইবনু যিয়াদ (রহঃ) লোকদেরকে জাহান্নামের ভয় দেখাতেন। ফলে এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি লোকদের নিরাশ করে দিচ্ছেন কেন? তিনি বললেন, আমি কি (আল্লাহর রহমাত থেকে) লোকদের নিরাশ করে দিতে পারি! কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন, ‘‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না।’’ আরও বলেছেন, ‘‘সীমাতিক্রমকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী।’’ বস্তুত তোমরা চাও, পাপাচারে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তোমাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হোক। কিন্তু তোমরা জেনে রেখ, আল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঐ সমস্ত লোকদের সুসংবাদদাতারূপে পাঠিয়েছেন, যারা তাঁর আনুগত্য করে এবং যারা তাঁর নাফরমানী করবে তাদের জন্য তিনি ভয় প্রদর্শনকারী।

৪৪৫২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … উরওয়া ইবনু যুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) কে বললাম, মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কঠোরতম কি আচরণ করেছে, সে সম্পর্কে আপনি আমাকে বলুন। তিনি বললেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা শরীফের আঙ্গিনায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় উকবা ইবনু আবূ মু’আইত আসল এবং সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘাড় ধরল এবং তার কাপড় দিয়ে তাঁর গলায় পেচিয়ে খুব শক্ত করে চিপ দিল। এ সময়ে (হঠাৎ) আবূ বকর (রাঃ) উপস্থিত হয়ে তার ঘাড় ধরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কি এ ব্যাক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে ‘আমার রব আল্লাহ্; অথচ তিনি তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের কাছে এসেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৩ | 4453 | ٤٤۵۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وما كنتم تستترون أن يشهد عليكم سمعكم ولا أبصاركم ولا جلودكم ولكن ظننتم أن الله لا يعلم كثيرا مما تعملون “তোমাদের চক্ষু, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লূকাতে পারবে না। কিন্তু তোমরা মনে করতে তোমরা যা কিছু করেছ তার অনেক কিছুই আল্লাহ্‌ জানেন না (৪১ঃ ২২)
সুরা হা-মীম আস্‌সাজদা

তাউস (রহ.)….ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ائْتِيَا طَوْعًاأعطيا অর্থাৎ তোমরা উভয় আস; তারা উভয়ে বলল, أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ অর্থাৎ আমরা এলাম। মিনহাল (রহঃ) সা‘ঈদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল, আমি কুরআনে এমন বিষয় পাচ্ছি, যা আমার কাছে পরস্পর বিরোধী মনে হচ্ছে। আল্লাহ্ বলেছেন, যে দিন (যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে) সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ খবর নেবে না।’’ আবার বলেছেন, ‘‘তারা একে অপরের সামনা-সামনি হয়ে খোঁজ খবর নেবে।’’ ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।’’ (তারা বলবে) ‘‘আল্লাহ আমাদের রব! আমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’’ এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তারা আল্লাহ্ থেকে নিজেদের মুশরিক হবার ব্যাপারটিকে লুকিয়ে রাখবে। (তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন), না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই তা নির্মাণ করেছেন…. এরপর পৃথিবীকে করেছেন সুবিস্তৃত’’ পর্যন্ত। এখানে আকাশকে যমীনের পূর্বে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন; কিন্তু অন্য এক স্থানে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তোমরা কি তাঁকে স্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে, আমরা এলাম অনুগত হয়ে।’’ এখানে যমীনকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে।

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্ বলেছেনঃ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا} {عَزِيْزًا حَكِيْمًا} {سَمِيْعًامبَصِيْرًا} উপরোক্ত আয়াতসমূহের প্রেক্ষাপটে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত গুণাবলী প্রথমে আল্লাহর মধ্যে ছিল; কিন্তু এখন নেই। (জনৈক ব্যক্তির এসব প্রশ্ন শুনার পর) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘‘যে দিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না।’’

এ আয়াতের সম্পর্ক হল প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সঙ্গে। কেননা, ইরশাদ হয়েছে যে, এরপর শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফলে যাদেরকে আল্লাহ্ ইচ্ছে করেন, তারা বাদে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে। এ সময় পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অন্যের খোঁজ খবর নেবে না। তারপর শেষবারের মত শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর তারা একে অপরের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে এক আয়াতে আছে, ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারে না।’’ অন্য আয়াতে আছে ‘‘মুশরিকগণ বলবে যে, আমরা তো মুশরিক ছিলাম না।’’ এর সমাধান হচ্ছে এই যে, ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে আল্লাহ্ রাববুল আলামীন মুখলিস লোকদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন। এ দেখে মুশরিকরা বলবে, আস! আমরাও বলব, (হে আল্লাহ্! আমরাও তো মুশরিক ছিলাম না। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন। তখন তাদের হাত কথা বলবে। এ সময় প্রকাশ পাবে যে, ‘‘তাদের কোন কথাই আল্লাহ্ থেকে গোপন রাখা যাবে না।’’ এবং এ সময়ই কাফিরগণ আকাঙ্ক্ষা করবে (…..হায়! যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত)।

তৃতীয় প্রশ্ন সম্বন্ধে সমাধান হচ্ছে এই যে, প্রথমে আল্লাহ্ তা‘আলা দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন। এরপর আসমান সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি আকাশের প্রতি মনোযোগ দেন এবং তাকে বিন্যস্ত করেন দু’দিনে। তারপর তিনি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন। যমীনকে বিছিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, এর মাঝে পানি ও চারণভূমির বন্দোবস্ত করা, পর্বত-টিলা, উট এবং আসমান ও মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা। এ সবকিছুও তিনি আরো দু’দিনে সৃষ্টি করেন। আল্লাহর বাণীঃ دَحَاهَا -এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে : خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ‘এবং তিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন’’ এ কথাও ঠিক; তবে যমীন এবং যত কিছু যমীনের মধ্যে বিদ্যমান আছে এসব তিনি চার দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে দু’দিনে।

وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا সম্বন্ধে উত্তর এই যে, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন নিজেই এ সমস্ত বিশেষণযুক্ত নামের দ্বারা নিজের নামকরণ করেছেন। উল্লিখিত গুণবাচক নামের অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ রাববুল ‘আলামীন সর্বদাই এই গুণে গুণান্বিত থাকবেন। কারণ, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন যখন কারো প্রতি কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন তিনি তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী করেই থাকেন, সুতরাং কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের একটিকে অপরটির বিপরীত সাব্যস্ত করবে না। কেননা, এগুলো সব আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন ممنون অর্থ গণনাকৃত। أَقْوَاتَهَا তাদের জীবিকা। فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَا যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। نَحِسَاتٍ শুভ। وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَ আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম তাদের সহচর। تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَآئِكَةُ তাদের নিকটবর্তী হয় মালায়িকাহ। আর এ সময়টি হচ্ছে عِنْدَ الْمَوْتِ মৃত্যুর সময়। اهْتَزَّتْ ফলে ফুলে আন্দোলিত হয়ে উঠে। وَرَبَتْ বেড়ে যায় এবং স্ফীত হয়ে উঠে। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যেরা বলেছেন, مِنْ أَكْمَامِهَا যখন তা আবরণ হতে বিকশিত হয়। لَيَقُوْلَنَّهَذَالِيْ আমলের ভিত্তিতে এ সমস্ত অনুগ্রহের হকদার আমিই। سَوَآءً لِلسَّآئِلِيْنَ আমি সমভাবে নির্ধারণ করেছি। فَهَدَيْنَاهُمْ অর্থাৎ আমি তাদেরকে ভাল-মন্দ সম্বন্ধে পথ বলে দিয়েছি। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘এবং আমি তাকে দু’টি পথই দেখিয়েছি।’’ অন্যত্র বর্ণিত আছে যে, ‘‘আমি তাকে ভাল পথের নির্দেশ দিয়েছি।’’ الْهُدٰى পথ দেখানো এবং গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া। এ অর্থেই কুরআনে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন। يُوْزَعُوْنَ তাদের আটক রাখা হবে। مِنْ أَكْمَامِهَا অর্থ বাকলের উপরের আবরণ। এটাকে كم ও বলা হয়। وَلِيٌّحَمِيْمٌ নিকটতম বন্ধু। مِنْ مَحِيْصٍ শব্দটি حَاصَعَنْهُ থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, সে তার থেকে পলায়ন করেছে। مِرْيَةٌ এবং مُرْيَةٌ একার্থবোধক শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সন্দেহ। মুজাহিদ বলেছেন, اعْمَلُوْامَاشِئْتُمْ (তোমাদের যা ইচ্ছে কর) বাক্যটি মূলত সতর্কবাণী হিসেবে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, بِالَّتِيْ هِيَأَحْسَنُ -এর মর্মার্থ হচ্ছে, রাগের মুহূর্তে ধৈর্যধারণ করা এবং অন্যায় ব্যবহারকে ক্ষমা করে দেয়া। যখন কোন মানুষ ক্ষমা ও ধৈর্যধারণ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে হেফাজত করেন এবং তার শত্রুকে তার সামনে নত করে দেন। ফলে সে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়।

৪৪৫৩। সালত ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) … ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের কর্ণ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে- এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।” আয়াত সম্পর্কে বলেন, কুরাইশ গোত্রের দুই ব্যাক্তি ছিল, যাদের জামাতা ছিল বনী সাকীফ গোত্রের অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) দুই ব্যাক্তি ছিল বনী সাকীফ গোত্রের আর তাদের জামাতা ছিল কুরাইশ গোত্রের। তারা সকলেই একটি ঘরে ছিল। তারা পরস্পর বলল, তোমার কি ধারণা, আল্লাহ্ কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন? একজন বলল, তিনি আমাদের কিছু কথা শুনছেন। এরপর দ্বিতীয় ব্যাক্তি বলল, তিনি যদি আমাদের কিছু কথা শুনতে পান, তাহলে সব কথাও শুনতে পাবেন। তখন নাযিল হলঃ “তোমাদের কান ও তোমাদের চোখ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না। …… আয়াতের শেষ পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৪ | 4454 | ٤٤۵٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ তা তোমাদের ধারনা … আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
৪৪৫৪। হুমায়দী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা’বা শরীফের কাছে দু’জন কুরাইশী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরাইশী একত্রিত হয়। তাদের পেটের মেদ ছিল বেশি; কিন্তু অন্তরের বুদ্ধি ছিল কম। তাদের একজন বলল, তোমাদের কি ধারণা, আমরা যা বলছি তা কি আল্লাহ শুনছেন? উত্তরে অপর এক ব্যাক্তি বলল, আমরা যদি জোরে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান। আর যদি চুপে চুপে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান না। তৃতীয় ব্যাক্তি বলল, আমরা জোরে বললে যদি তিনি শুনতে পান, তাহলে চুপে চুপে বললেও তিনি শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ্ নাযিল করলেন, ‘তোমাদের চোখ, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না …… (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। হুমায়দী বলেন, সুফিয়ান এ হাদীস বর্ণনার সময় বলতেন, মানসূর বলেছেন, অথবা ইবনু আবূ নাজীহ্ অথবা হুমায়দী তাঁদের একজন বা দু’জন। এরপর তিনি মানসূরের উপরই নির্ভর করেছেন এবং একাধিকবার তিনি সন্দেহ বর্জন করে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৫ | 4455 | ٤٤۵۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “এখন তারা ধৈর্য ধারণ করলেও জাহান্নামই হবে তাদের আবাস এবং তারা ক্ষমা চাইলেও তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না” (৪১ঃ ২৪)
৪৪৫৫। আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৬ | 4456 | ٤٤۵٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إلا المودة في القربى আত্মীয়ের সৌহার্দ ব্যতীত
সুরা শুরা

ইবনু ‘আব্বাস হতে বর্ণিত। عَقِيْمًا অর্থ বন্ধ্যা। رُوْحًا مِّنْ أَمْرِنَا অর্থাৎ আল কুরআন। মুজাহিদ বলেছেন يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ, আল্লাহ্ তোমাদেরকে গর্ভাশয়ের মধ্যে ধারাবাহিক বংশ পরম্পরার সঙ্গে সৃষ্টি করতে থাকবেন। لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ অবনমিত। মুজাহিদ ছাড়া অন্যরা বলেন। فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلٰى ظَهْرِهٰ নৌযানগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে আন্দোলিত হতে থাকে; কিন্তু চলতে পারবে না। شَرَعُوْا তারা আবিষ্কার করেছে।

৪৪৫৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা তাকে إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর (কাছে উপস্থিত) সাঈদ ইবনু জুবায়ির (রাঃ) বললেন, এর অর্থ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন। (এ কথা শুনে) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি তাড়াহুড়া করে ফেললে। কুরাইশের কোন শাখা ছিল না যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্মীয়তা ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলেছেন, আমার এবং তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ভিত্তিতে তোমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়সুলভ আচরণ কর। এই আমি তোমাদের থেকে কামনা করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৭ | 4457 | ٤٤۵۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ونادوا يا مالك ليقض علينا ربك “তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন।”
সুরা যুখ্‌রুফ

মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, عَلٰى أُمَّةٍ এক নেতার অনুসারী। وَقِيْلَه يَا رَبِّ এর ব্যাখ্যা এই যে, কাফিররা কি মনে করে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর রাখি না এবং আমি তাদের কথাবার্তা শুনি না? ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, وَلَوْلَا أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً যদি সমস্ত মানুষ কাফের হয়ে যাবার আশংকা না থাকত, তাহলে আমি কাফেরদের গৃহের জন্য দিতাম রৌপ্য নির্মিত ছাদ এবং রৌপ্য নির্মিত মা‘রিজ অর্থাৎ সিঁড়ি আর রৌপ্য নির্মিত পালঙ্ক। مُقْرِنِيْنَ সামর্থ্যবান লোক। اٰسَفُوْنَا তারা আমাকে রাগান্বিত করল। يَعْشُ অন্ধ হয়ে যায়। মুজাহিদ বলেছেন, أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمْ الذِّكْرَ তোমরা কুরআন মাজীদকে মিথ্যা মনে করবে, তারপর এজন্য কি তোমাদের শাস্তি দেয়া হবে না? وَمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ পূর্ববর্তী লোকদের উদাহরণ। وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ উট, ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে বোঝানো হয়েছে। يَنْشَأُ فِي الْحِلْيَةِ কন্যা সন্তান; এদের তোমরা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করছ- এ তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ ……… لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ আয়াতাংশে বর্ণিত هم সর্বনাম-এর দ্বারা মূর্তিকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন, مَا لَهُمْ بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ এ সম্বন্ধে প্রতিমাদের কোন জ্ঞান নেই। فِيْ عَقِبِهٰ তার সন্তানদের মধ্যে مُقْتَرِنِيْنَ এক সঙ্গে তারা চলে আসছিল। سَلَفًا দ্বারা উদ্দেশ্য ফির‘আউন সম্প্রদায়। কেননা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতের কাফেরদের জন্য তারা হচ্ছে অগ্রগামী দল এবং তারা হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের এক নমুনা। يَصِدُّوْنَ তারা চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। مُبْرِمُوْنَ আমিই তো সিদ্ধান্ত দানকারী। أَوَّلُالْعَابِدِيْنَ মু’মিনদের অগ্রণী। إِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ আরবরা বলে, نَحْنُ مِنْكَ الْبَرَآءُ وَالْخَلَآءُ আমরা তোমার থেকে পৃথক, পুরুষলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, বহুবচন, দ্বিবচন ও একবচন সকল ক্ষেত্রে الْبَرَآءُ শব্দটি একইভাবে ব্যবহৃত হয়। কেননা, এ শব্দটি হচ্ছে মাসদার (মূল শব্দ)। যদি بَرِيْءٌ বল, তাহলে দ্বিবচনে بَرِيئَآنِ বলা হবে এবং বহুবচনে বলা হবে بَرِيــٓئُوْنَ। ‘আবদুল্লাহ্ إِنَّنِيْبَرِيْٓءٌ (يا দ্বারা) পাঠ করতেন। الزُّخْرُفُ স্বর্ণ। مَلَآئِكَةً তারা পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত হতো।

৪৪৫৭। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … ইয়ালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরে পড়তে শুনেছি- وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ (তারা চীৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন।) ক্বাতাদাহ বলেন, مَثَلًا لِّلْاٰخِرِيْنَ এর অর্থ পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ।

ক্বাতাদাহ (রহঃ) ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, مُقْرِنِيْنَ নিয়ন্ত্রণকারী। বলা হয় فُلَانٌ مُقْرِنٌ لِفُلَانٍ অর্থাৎ তার নিয়ন্তা। الأَكْوَابُ অর্থ হাতল বিহীন পানপাত্র। ক্বাতাদাহ (রহ.) أُمِّ الْكِتَابِ সম্পর্কে বলেন, তা হচ্ছে মূল কিতাব ও সারাংশ। أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কোন সন্তান নেই এ কথা প্রত্যাখ্যানকারী সর্বপ্রথম আমি নিজেই। رَجُلٌ عَابِدٌ وَعَبِدٌ দু’ ধরনের ব্যবহার রয়েছে। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ পাঠ করতেন। কোন কোন মুফাসসির বলেন, أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ এ বর্ণিত الْعَابِدِيْنَ শব্দটি عَبِدَ يَعْبَد এর ওজনে এসেছে; যার অর্থ অস্বীকারকারী।

কাতাদা (রহঃ) বলেন أُمِّ الْكِتَابِ‏ অর্থাৎ মূল কিতাব। ‏أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمُ الذِّكْرَ صَفْحًا أَنْ كُنْتُمْ قَوْمًا مُسْرِفِينَ এর মাঝে উল্লিখিত مُسْرِفِينَ‏ এর অর্থ مُشْرِكِينَ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের হতে এই উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেব এই কারণে যে, তোমরা মুশরিক? আল্লাহর কসম, এ উম্মতের প্রাথমিক অবস্থায় যখন (কুরাইশগণ) আল-কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন যদি তাকে প্রত্যাহার করা হত, তাহলে তাঁরা সকলেই ধ্বংস হয়ে যেত। ‏فَأَهْلَكْنَا أَشَدَّ مِنْهُمْ بَطْشًا وَمَضَى مَثَلُ الأَوَّلِينَ এর মাঝে বর্ণিত مَثَلُ الأَوَّلِينَ এর অর্থ তাদের মধ্যে যারা তাদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল, তাদের আমি ধ্বংস করেছিলাম। আর এভাবেই চলে এসেছে পূর্ববর্তী লোকদের শাস্তির দৃষ্টান্ত। ‏جُزْء অর্থ সমকক্ষ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৮ | 4458 | ٤٤۵۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فارتقب يوم تأتي السماء بدخان مبين “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন ধুম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ।” (৪৪ঃ ১) فارتقب অপেক্ষা কর
সুরা দুখান

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, رَهْوًا শুষ্ক পথ। عَلَى الْعَالَمِيْنَ সমকালীন লোকদের উপর। فَاعْتُلُوْهُ নিক্ষেপ কর তাকে। وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ আমি তাদের ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের সঙ্গে বিয়ে দেব, যাদেরকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। تَرْجُمُوْنِ হত্যা করা। رَهْوَا স্থির। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, كَالْمُهْلِ যায়তুনের গাদের মত কাল। অন্যরা বলেছেন, تُبَّعُ ইয়ামানের বাদশাদের উপাধি। তাদের একজনের পর যেহেতু অপরজনের আগমন ঘটত, এজন্য তাদের প্রত্যেক বাদশাহ্কেই تُبَّعُ বলা হত। ছায়াকেও تُبَّعُ বলা হয়। কেননা, ছায়া সূর্যের অনুসরণ করে।

৪৪৫৮ আবদান (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি নিদর্শনই বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। ধোঁয়া (দুর্ভিক্ষ), রোম (পরাজয়), চন্দ্র (দ্বিখণ্ডিত হওয়া), পাকড়াও (বদর যুদ্ধে) এবং ধ্বংস।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫৯ | 4459 | ٤٤۵۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يغشى الناس هذا عذاب أليم “তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে, এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (৪৪ঃ ১১)
৪৪৫৯। ইয়হ্ইয়া (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, অবস্থা এ জন্য যে, কুরাইশরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাফরমানী করল, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্ভিক্ষের দোয়া করলেন, যেমন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়ে। তারপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার কষ্ট এমনভাবে আপতিত হল যে, তারা হাড্ডি খেতে আরম্ভ করল। তখন মানুষ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তাড়নায় তারা আকাশ ও তাদের মধ্যে শুধু ধোঁয়ার মত দেখতে পেত। এ সম্পর্কেই আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।”

বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (কাফেরদের পক্ষ থেকে) এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মুদার গোত্রের জন্য বৃষ্টির দোয়া করুন। তারা তো ধ্বংস হয়ে গেল। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মুদার গোত্রের জন্য দোয়া করতে বলছ। তুমি তো খুব সাহসী। তারপর তিনি বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন এবং বৃষ্টি হল। তখন নাযিল হল, তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। যখন তাদের সচ্ছলতা ফিরে এলো, তখন আবার নিজেদের পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের প্রতিশোধ নেবই। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬০ | 4460 | ٤٤٦۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ربنا اكشف عنا العذاب إنا مؤمنون “তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ শাস্তি থেকে মুক্তি দান কর, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব।” (৪৪ঃ ১২)
৪৪৬০। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে সম্পর্কে আল্লাহ্ই ভাল জানেন, একথা বলাও জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” কুরাইশরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করল এবং বিরোধিতা করল, তখন তিনি দোয়া করলেন, ইয়া আল্লাহ্! ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। তারপর দুর্ভিক্ষ তাদেরকে পাকড়াও করল। ক্ষুধার জ্বালায় তারা হাড্ডি এবং মরা খেতে আরম্ভ করল। এমনকি তাদের কোন ব্যাক্তি আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় তার ও আকাশের মাঝে শুধু ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। তখন তারা বলল, “হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ শাস্তি সরিয়ে নাও, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব।” তাঁকে বলা হল, যদি আমি তাদের থেকে শাস্তি রহিত করে দেই, তাহলে তারা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। তারপর তিনি তাঁর রবের নিকট দোয়া করলেন। আল্লাহ্ তাদের থেকে শাস্তি রহিত করে দিলেন; কিন্তু তারা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এল। তাই আল্লাহ্ বদর যুদ্ধের দিন তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলেন। নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াত يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ إِلَى قَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ إِنَّا مُنْتَقِمُونَ পর্যন্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬১ | 4461 | ٤٤٦۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ أنى لهم الذكرى وقد جاءهم رسول مبين তারা কি করে উপদেশ গ্রহন করবে? তাদের নিকট তো এসেছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দানকারী এক রাসুল। (৪৪ঃ ১৩) الذكر এবং الذكرى একার্থবোধক শব্দ।
৪৪৬১। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহর কাছে গেলাম। তারপর তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল ও তার নাফরমানী করল, তখন তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ্! ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের এমনভাবে গ্রাস করল যে, নির্মূল হয়ে গেল সমস্ত কিছু; অবশেষে তারা মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করল। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় সে তার ও আকাশের মাঝে ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যে দিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য রহিত করছি, তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।” পর্যন্ত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিনও কি তাদের থেকে শাস্তি রহিত করা হবে? তিনি বলেন, الْبَطْشَةُ الْكُبْرَى দ্বারা বদরের দিনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬২ | 4462 | ٤٤٦۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ثم تولوا عنه وقالوا معلم مجنون এরপর তারা তাকে অমান্য করে বলে সে তো শিখানো বুলি বলছে, সে তো এক পাগল (৪৪ঃ ১৪)
৪৪৬২। বিশর্ ইবনু খালিদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঠিয়ে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবি করে তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দেখলেন যে, কুরাইশরা তাঁর নাফরমানী করছে, তখন তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ্! ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করল। নিঃশেষ করে দিল তাদের সমস্ত কিছু, এমনকি তারা হাড় ও চামড়া খেতে আরম্ভ করল। আর একজন রাবী বলেছেন, তারা চামড়া ও মৃতদেহ খেতে লাগল। তখন যমীন থেকে ধোঁয়ার মত বের হতে লাগল। এ সময় আবূ সুফিয়ান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মদ! তোমার কওম তো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহর কাছে দোয়া কর, যেন তিনি তাদের থেকে এ অবস্থা দূরীভূত করে দেন। তখন তিনি দোয়া করলেন, এবং বললেন, এরপর তারা আবার নিজেদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। মানসুর থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, “অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যে দিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ, তোমরা তো পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবেই …… পর্যন্ত। (তিনি বলেন) আখিরাতের শাস্তিও কি দূরীভূত হয়ে যাবে? ধোঁয়া, প্রবল পাকড়াও এবং ধ্বংস তো অতীত হয়েছে। এক রাবী চন্দ্র এবং অন্য রাবী রোমের পরাজয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৩ | 4463 | ٤٤٦۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ يوم نبطش البطشة الكبرى إنا منتقمون “যেদিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের শাস্তি দেবই।” (৪৪ঃ ১৬)
৪৪৬৩। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি বিষয় ঘটে গেছেঃ ধ্বংস, রূম, পাকড়াও, চন্দ্র ও ধোঁয়া।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৪ | 4464 | ٤٤٦٤

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা জাছিয়া

الْجَاثِيَةِ ভয়ে নতজানু। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, نَسْتَنْسِخُ অর্থ- আমি লিখছিলাম। نَنْسَاكُمْ অর্থ-আমি তোমাদেরকে ত্যাগ করব।

৪৪৬৪। হুমায়দী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ বলেন, আদম সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যমানাকে গালি দেয়; অথচ আমিই যমানা। আমার হাতেই ক্ষমতা; রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৫ | 4465 | ٤٤٦۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ والذي قال لوالديه أف لكما أتعدانني أن أخرج وقد خلت القرون من قبلي وهما يستغيثان الله ويلك آمن إن وعد الله حق فيقول ما هذا إلا أساطير الأولين “আর এমন লোক আছে যে, তার পিতামাতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এই ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব, যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে। তখন তার পিতা মাতা আল্লাহ্‌র কাছে ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমাদের জন্য! ঈমান আন- আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে, এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়” পর্যন্ত (৪৬ঃ ১৭)
সুরা আহকাফ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, تُفِيْضُوْنَ তোমরা বলছ বা বলবে। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, أَثَرَةٍ এবং أُثْرَةٍ ও وَأَثَارَةٍ এর অর্থ ‘ইলমের অবশিষ্টাংশ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, بِدْعًا مِنْ الرُّسُلِ আমি তো প্রথম রাসূল নই। অন্য তাফসীরকারগণ বলেছেন, أَرَأَيْتُمْ এর الف অক্ষরটি استفهام تهديد এর জন্য এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের দাবী যদি সঠিক হয়, তাহলেও তাদের ‘ইবাদাত করার উপযুক্ত তারা নয়। أَرَأَيْتُمْ এর অর্থ, চাক্ষুস দেখা নয়; বরং এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা কি জানতে যে, আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা যাদের ‘ইবাদাত করছ, তারা কি কোন কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম?

৪৪৬৫। মূসা ইবনু ইসমাঈল … ইউসুফ ইবনু মাহাক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মারওয়ান ছিলেন হিজাযের গভর্নর। তাকে নিয়োগ করেছিলেন মু’আবিয়া (রাঃ)। তিনি একদা খুতবা দিলেন এবং তাতে ইয়াযীদ ইবনু মু’আবিয়ার কথা বারবার উল্লেখ করতে লাগলেন, যেন তাঁর পিতার ইন্তেকালের পর তার বায়আত গ্রহন করা হয়। এ সময় তাকে আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর কিছু কথা বললেন, মারওয়ান বললেন, তাঁকে পাকড়াও কর। তৎক্ষণাৎ তিনি আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে চলে গেলেন। তারা তাঁকে ধরতে পারল না। তারপর মারওয়ান বললেন, এ তো সেই ব্যাক্তি যার সম্বন্ধে আল্লাহ নাযিল করেছেন, “আর এমন লোক আছে যে, মাতাপিতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে, তখন তার মাতাপিতা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য। বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৬ | 4466 | ٤٤٦٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فلما رأوه عارضا مستقبل أوديتهم قالوا هذا عارض ممطرنا بل هو ما استعجلتم به ريح فيها عذاب أليم “এরপর যখন তাদের উপত্যকার দিকে মেঘ আসতে দেখল তখন তারা বলতে লাগল, এ তো মেঘ, আমাদের বৃষ্টি দান করবে (হুদ বলল) এ তো যা তোমরা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছ, এতে রয়েছে এ ঝড়- মর্মন্তুদ শাস্তি বহনকারী।” (৪৬ঃ ২৪) ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, عارض অর্থ মেঘ।
৪৪৬৬। আহমদ (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমনভাবে কখনো হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর কন্ঠনালীর আলজিভ দেখা যায়। তিনি মুচকি হাসতেন। যখনই তিনি মেঘ অথবা ঝঞ্ঝা বায়ু দেখতেন, তখনই তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠত। আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষ যখন মেঘ দেখে, তখন বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। কিন্তু আপনি যখন মেঘ দেখেন, তখন আমি আপনার চেহারায় আতংকের ছাপ পাই। তিনি বললেন, হে আয়িশা! এতে যে আযাব নেই, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। বাতাসের দ্বারাই তো এক কওমকে আযাব দেয়া হয়েছে। সে কওম তো আযাব দেখে বলেছিল, এ তো আমাদের বৃষ্টি দান করবে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৭ | 4467 | ٤٤٦۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقطعوا أرحامكم “এবং আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্ন করবে।”
সুরা মুহাম্মদ

أَوْزَارَهَا তার অস্ত্র, যাতে মুসলিম ব্যতীত আর কেউ বাকী না থাকে। عَرَّفَهَا অর্থ, বর্ণনা করে দিয়েছেন তার সম্বন্ধে। মুজাহিদ বলেন, مَوْلَى الَّذِيْنَاٰمَنُوْا অর্থাৎ তাদের অভিভাবক। عَزَمَ الْأَمْرُ অর্থ, কোন বিষয়ের তথা জিহাদের সিদ্ধান্ত হলে। لَا تَهِنُوْا অর্থাৎ তোমরা দুর্বল হয়ো না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أَضْغَانَهُمْ তাদের হিংসা। اٰسِنٍ অর্থ, দূষিত হয়ে স্বাদ বদলে গেছে।

৪৪৬৭ খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি ফারেগ হলে ‘রাহিম’ (রক্তসম্পর্ক) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামো। সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যাক্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বললেন, যে তোমাকে সম্পৃক্ত রাখে, আমিও তাকে সম্পৃক্ত রাখব; আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব- এতে কি তুমি সন্তুষ্ট নও? সে বলল, নিশ্চয়ই, হে আমার প্রভু। তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ইচ্ছা হলে তোমরা পড়, “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।”

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৮ | 4468 | ٤٤٦۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقطعوا أرحامكم “এবং আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্ন করবে।”
৪৪৬৮। ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (এরপর তিনি বলেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইচ্ছা হলে তোমরা পড় (“ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।”)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬৯ | 4469 | ٤٤٦۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقطعوا أرحامكم “এবং আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্ন করবে।”
৪৪৬৯। বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … মু’আবিয়া ইবনু আবূল মুযাররাদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (আবূ হুরায়রা বলেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইচ্ছা হলে তোমরা পড়, (ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭০ | 4470 | ٤٤۷۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا فتحنا لك فتحا مبينا “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।”
সুরা ফাতহ

মুজাহিদ বলেন, سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ তাদের মুখমন্ডলের নিদর্শন। মানসূর মুজাহিদের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। شَطْأَهُ অর্থ, কচি পাতা। فَاسْتَغْلَظَ পুষ্ট হয়। سُوْقِهِ ঐ কান্ড যা গাছকে দাঁড় করিয়ে রাখে। دَآئِرَةُالسَّوْءِ শব্দটি এখানে رَجُلُالسَّوْءِ এর মত ব্যবহৃত হয়েছে। دَآئِرَةُالسُّوْءِ শাস্তি। تُعَزِّرُوْهُ তাঁরা তাঁকে সাহায্য করে। شَطْأَهُ কচি পাতা, একটি বীজ থেকে দশ, আট এবং সাতটি করে বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। আল্লাহর বাণীঃ فَاٰزَرَهُ (এরপর এটা শক্তিশালী হয়) এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। অঙ্কুর যদি একটি হয় তাহলে তা কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আল্লাহ্ তা‘আলা এ উপমাটি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে ব্যবহার করেছেন, কেননা, প্রথমত তিনি একাই দাওয়াত নিয়ে উত্থিত হয়েছেন, তারপর সহাবীদের দ্বারা (আল্লাহ্) তাকে শক্তিশালী করেছেন যেমন বীজ থেকে উদগত অঙ্কুর দ্বারা বীজ শক্তিশালী হয়।

৪৪৭০। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা কোন এক সফরে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-ও চলছিলেন। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন জবাব দেননি। তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু তিনি কোন জবাব দিলেন না। তারপর তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এবারও তিনি কোন জবাব দিলেন না। তখন উমর (রাঃ) (নিজেকে) বললেন, উমরের মা হারাক। তুমি তিনবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলে, কিন্তু একবারও তিনি তোমার জবাব দিলেন না। উমর (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আমার উটটি দ্রুত চালিয়ে লোকদের আগে চলে গেলাম এবং আমার ব্যাপারে কুরআন নাযিলের আশংকা করলাম। বেশিক্ষণ হয়নি, তখন শুনলাম এক আহবানকারী আমাকে আহবান করছে। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি তো আশংকা করছিলাম যে, আমার ব্যাপারে কোন আয়াত নাযিল হতে পারে। তারপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যা আমার কাছে, এই পৃথিবী, যার ওপর সূর্য উদিত হয়, তা থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়”।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭১ | 4471 | ٤٤۷۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا فتحنا لك فتحا مبينا “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।”
৪৪৭১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا “এর দ্বারা হুদাবিয়ার সন্ধি বোঝানো হয়েছে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭২ | 4472 | ٤٤۷۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا فتحنا لك فتحا مبينا “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।”
৪৪৭২। মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন সূরা ফাতহ্ সুমধুর কণ্ঠে পাঠ করেন। মু’আবিয়া (রাঃ) বলেন, আমি ইচ্ছা করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিরাআত তোমাদের নকল করে শোনাতে পারি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৩ | 4473 | ٤٤۷۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ليغفر لك الله ما تقدم من ذنبك وما تأخر ويتم نعمته عليك ويهديك صراطا مستقيما “যেন আল্লাহ্‌ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন (৪৮ঃ ২)
৪৪৭৩। সাদাকা ইবনু ফায্ল (রহঃ) … মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যে, তাঁর কদমদ্বয় ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হল, আল্লাহ্ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মাজনা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৪ | 4474 | ٤٤۷٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ليغفر لك الله ما تقدم من ذنبك وما تأخر ويتم نعمته عليك ويهديك صراطا مستقيما “যেন আল্লাহ্‌ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন (৪৮ঃ ২)
৪৪৭৪। হাসান ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত বেশি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যে, তাঁর দুই পা ফেটে যেতো। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? তবু আপনি কেন তা করছেন? তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে ভালবাসবো না? তাঁর মেদ বেড়ে গেলে* তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়তেন, তারপর রুকূ করতেন।

* অর্থাৎ তিনি বার্ধক্যে উপনীত হলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৫ | 4475 | ٤٤۷۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إنا أرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে (৪৮ঃ ৮)
৪৪৭৫। আবদুল্লাহ (রহঃ) … আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরআনের এ আয়াত, “আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে” তাওরাতে আল্লাহ্ এভাবে বলেছেন, হে নাবী আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদবাদা ও উম্মী লোকদের মুক্তি দাতারূপে। তুমি আমার বান্দা ও রাসূল। আমি তোমার নাম নির্ভরকারী (মুতাওয়াক্কিল) রেখেছি যে রূঢ় ও কঠোরচিত্ত নয়, বাজারে শোরগোলকারী নয় এবং মন্দ মন্দ দ্বারা প্রতিহতকারীও নয়; বরং তিনি ক্ষমা করবেন এবং উপেক্ষা করবেন। বক্র জাতিকে সোজা না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তাঁর জান কবয করবেন না। তা এভাবে যে, তারা বলবে, আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ নেই। ফলে খুলে যাবে অন্ধ চোখ, বধির কান এবং পর্দায় ঢাকা অন্তরসমূহ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৬ | 4476 | ٤٤۷٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ هو الذي أنزل السكينة في قلوب المؤمنين তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি প্রদান করেন। (৪৮ঃ ৪)
৪৪৭৬. উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রহঃ) … বারা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী কিরাআত পাঠ করছিলেন। তাঁর একটি ঘোড়া ঘরে বাঁধা ছিল। হঠাৎ তা পালিয়ে যেতে লাগলো। সে ব্যাক্তি বেরিয়ে এসে নজর করলেন; কিন্তু কিছুই দেখতে পেলেন না। ঘোড়াটি ভেগেই যাচ্ছিল। যখন ভোর হল তখন তিনি ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, এ হল সেই প্রশান্তি, যা কুরআন তিলাওয়াত করার সময় নাযিল হয়ে থাকে।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৭ | 4477 | ٤٤۷۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৭৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার (সন্ধির) দিন আমরা এক হাজার চারশ’ লোক ছিলাম।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৮ | 4478 | ٤٤۷۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৭৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাগাফফাল মুযানী (রাঃ) (যিনি সন্ধির সময় উপস্থিত ছিলেন) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই আঙ্গুলের মাঝে কংকর নিয়ে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। উকবা ইবনু সুহবান (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল মুযানী (রাঃ) কে গোসলখানায় পেশাব করা সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭৯ | 4479 | ٤٤۷۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৭৯। মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) … সাবিত ইবনু দাহ্হাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিও বৃক্ষতলে বায়আতকারী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮০ | 4480 | ٤٤۸۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذ يبايعونك تحت الشجرة যখন বৃক্ষতলে তারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহন করল। (৪৮ঃ ১৮)
৪৪৮০। আহমাদ ইবনু ইসহাক সুলামী (রহঃ) … হাবীব ইবনু আবূ সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়ায়িল (রাঃ) এর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য এলে, তিনি বললেন, আমরা সিফফীনের ময়দানে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি বললেন, তোমরা কি সে লোকদেরকে দেখতে পাচ্ছ না, যাদের আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করা হচ্ছে? আলী (রাঃ) বললেন, হাঁ। তখন সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) বললেন, প্রথমে তোমরা নিজেদের খবর নাও। হুদায়বিয়ার দিন অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মক্কার মুশরিকদের মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল, আমরা তা দেখেছি। যদি আমরা একে যুদ্ধ মনে করতাম, তাহলে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম। সেদিন উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেছিলেন, আমরা কি হকের উপর নই, আর তারা কি বাতিলের উপর নয়? আমাদের নিহত ব্যাক্তিরা জান্নাতে, আর তাদের নিহত ব্যাক্তিরা কি জাহান্নামে যাবে না? তিনি বললেন, হাঁ। তখন উমর (রাঃ) বললেন, তাহলে কেন আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অবমাননাকর শর্ত আরোপ করা হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে অবমাননাকর শর্ত আরোপ করা হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে নির্দেশ দেননি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! আমি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ কখনো আমাকে ধ্বংস করবেন না। উমর (রাঃ) গোস্বায় ক্ষুণ্ন মনে ফিরে গেলেন। তিনি ধৈর্য ধারণ করতে পারলেন না। তারপর তিনি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, হে আবূ বকর! আমরা কি হকের উপর নই এবং তারা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ কখনো তাকে ধ্বংস করবেন না। এ সময় সূরা ফাতহ্ নাযিল হয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮১ | 4481 | ٤٤۸۱

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا ترفعوا أصواتكم فوق صوت النبي (হে মুমিনগণ) তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠ উঁচু করোনা (৪৯ঃ২) تشعرون মানে তোমরা জ্ঞাত আছ। الشاعر শব্দটি এ ধাতু থেকেই নির্গত হয়েছে।
সুরা হুজুরাত

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, لَاتُقَدِّمُوْا অর্থ, রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোন বিষয় তোমরা জিজ্ঞেস করবে না যতক্ষণ না, আল্লাহ্ তাঁর যবানে এর ফয়সালা জানিয়ে দেন। امْتَحَنَ মানে পরিশুদ্ধ করেছেন। لَا تَنَابَزُوْا ইসলাম গ্রহণের পর অপরকে যেন কুফরীর প্রতি না ডাকা হয়। يَلِتْكُمْ মানে হ্রাস করা হবে তোমাদের أَلَتْنَا মানে হ্রাস করেছি আমি।

৪৪৮১। ইয়াসারা ইবনু সাফওয়ান ইবনু জামীল লাখমী (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উত্তম দুই জন- আবূ বকর ও উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কন্ঠস্বর উঁচু করে ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিলেন। যখন বনী তামীম গোত্রের একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছিল। তাদের একজন বনী মাজাশে গোত্রের আকরা ইবনু হাবিসকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করল এবং অপরজন অন্য ব্যাক্তির নাম প্রস্তাব করল। নাফি বলেন, এ লোকটির নাম আমার মনে নেই। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) উমর (রাঃ) কে বললেন, আপনার ইচ্ছাই হল কেবল আমার বিরোধিতা করা। তিনি বললেন, না, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমার নেই। এ ব্যাপারটি নিয়ে তাঁদের কন্ঠস্বর উঁচু হয়ে গেল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা নাবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উঁচু করবে না” … শেষ পর্যন্ত।

ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর উমর (রাঃ) এতো আস্তে কথা বলতেন যে, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেতেন না। তিনি আবূ বকর (রাঃ) সম্পর্কে এ ধরনের কথা বর্ণনা করেন নি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮২ | 4482 | ٤٤۸۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لا ترفعوا أصواتكم فوق صوت النبي (হে মুমিনগণ) তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠ উঁচু করোনা (৪৯ঃ২) تشعرون মানে তোমরা জ্ঞাত আছ। الشاعر শব্দটি এ ধাতু থেকেই নির্গত হয়েছে।
৪৪৮২। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনু কায়স (রাঃ) কে খুঁজে পেলেন না। একজন সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার কাছে তাঁর সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর লোকটি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তাঁর ঘরে অবনত মস্তকে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি অবস্থা? তিনি বললেন, খারাপ। কারণ এই (অধম) তার কন্ঠস্বর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু করে কথা বলত। ফলে, তার আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তারপর লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে এসে সংবাদ দিলেন যে, তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা বলেন, এরপর লোকটি এক মহাসুসংবাদ নিয়ে তাঁর কাছে ফেরে গেলেন (এবং বললেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন। তুমি যাও এবং তাকে বল, তুমি জাহান্নামী নও; বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৩ | 4483 | ٤٤۸۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যারা ঘরের পেছন থেকে আপনাকে উচ্চ স্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ” (৪৯ঃ ৪)
৪৪৮৩। হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাদেরকে জানিয়েছেন যে, একবার বনী তামীম গোত্রের একদল লোক সাওয়ার হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, কা’কা ইবনু মাবাদ (রাঃ) কে আমীর বানানো হোক এবং উমর (রাঃ) বললেন, আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) কে আমীর নিযুক্ত করা হোক। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, আপনার ইচ্ছা হল কেবল আমার বিরোধিতা করা। উত্তরে উমর (রাঃ) বললেন, আমি আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা করিনি। এ নিয়ে তাঁরা পরস্পর তর্ক-বিতর্ক করতে লাগলেন, এক পর্যায়ে তাদের কন্ঠস্বর উঁচু হয়ে গেল। এ উপলক্ষে আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সমক্ষে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না। … আয়াত শেষ।”

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ “তুমি বের হয়ে তাদের কাছে আসা পর্যন্ত যদি তারা ধৈর্যধারণ করত, তা তোমার জন্য উত্তম হতো। আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৪৯ঃ ৫)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৪ | 4484 | ٤٤۸٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقول هل من مزيد “এবং জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি?”
সুরা কাফ

رَجْعٌ মানে প্রত্যাবর্তন। فُرُوْجٍ মানে ফাটল। এর একবচন হলো وَرِيْدٌ فِيْ حَلْقِهٰ ঘাড়ের রগ। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مَا تَنْقُصُ الْأَرْضُ দ্বারা তাদের ঐ সমস্ত হাড্ডিকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলোকে মৃত্তিকা ক্ষয় করে। تَبْصِرَةً জ্ঞানস্বরূপ। حَبَّ الْحَصِيْدِ গম। بَاسِقَاتٍ সমুন্নত ও লম্বা। أَفَعَيِيْنَا আমাদের জন্য কি ক্লান্তিকর ছিল? وَقَالَ قَرِيْنُه ঐ শায়ত্বন যা তার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে। فَنَقَّبُوْا তারা ভ্রমণ করেছে। أَوِ الْقَى السَّمْعَ অর্থ, যে কুরআন শ্রবণ করে নিবিষ্ট চিত্তে, এ ব্যতীত অন্য কোন দিকে তার মনোযোগ নেই। رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ মানে প্রহরী। سَآئِقٌ وَشَهِيْدٌ দু’জন মালাক- একজন লেখক এবং অন্যজন সাক্ষী। شَهِيْدٌ অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তিকে شَهِيْدٌ বলা হয়। لُغُوْبٍ ক্লান্তি। মুজাহিদ (রহঃ) ব্যতীত অন্য মুফাসসিরগণ বলেছেন, نَضِيْدٌ ফুলের কলি যা এখনো ফুটেনি। এখানে শব্দটি ভাজ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রস্ফুটিত ফুলের কলিকে نَضِيْدٌ বলা হয় না। কারী আসিম (রহঃ) সূরাহ ‘কাফ’-এ বর্ণিত إدْبَارِ السُّجُوْدِ এর হামযার মধ্যে যবর দেন এবং সূরাহ তূর-এ উল্লিখিত إِدْبَارِالنُّجُوْمِ এর হামযার মধ্যে যের দেন। তবে উভয় স্থানে হামযাতে যেরও দেয়া যায় অথবা যবরও দেয়া যায়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, يَوْمَ الْخُرُوْجِ কবর থেকে বের হওয়ার দিন।

৪৪৮৪। আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হলে জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি? পরিশেষে আল্লাহ্ তাঁর পা সেখানে রাখবেন, তখন সে বলবে, আর না, আর না।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৫ | 4485 | ٤٤۸۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقول هل من مزيد “এবং জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি?”
৪৪৮৫। মুহাম্মদ ইবনু কাযযান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফূ হাদীস হিসাবে বর্ণিত। তবে আবূ সুফয়ান এ হাদীসটিকে অধিকাংশ সময় মওকুফ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। জাহান্নামকে বলা হবে, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গিয়েছ? জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি? তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আপন চরণ তাতে রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, আর নয়, আর নয়।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৬ | 4486 | ٤٤۸٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وتقول هل من مزيد “এবং জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি?”
৪৪৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হয়। জাহান্নাম বলে দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে, আমার কি হল? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল এবং নিরীহ লোকেরাই প্রবেশ করছে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতকে বলবেন, তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আমি অনুগ্রহ করব। আর তিনি জাহান্নামকে বলবেন, তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পরিপূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না তিনি তাঁর কদম মুবারক তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে, বস, বস, বস। তখন জাহান্নাম ভরে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সাথে মুড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির কারো প্রতি জুলুম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতের জন্য অন্য মাখলুক পয়দা করবেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৭ | 4487 | ٤٤۸۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل الغروب “এবং তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা-পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে” (৫০ঃ ৩৯)
৪৪৮৭। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন তিনি চৌদ্দ তারিখের রজনীর চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা যেমন এ চাঁদটি দেখতে পাচ্ছ, অনুরূপভাবে তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে এবং তাঁকে দেখার ব্যাপারে (তোমরা একে অন্যের কারণে) বাধাপ্রাপ্ত হবে না। তাই তোমাদের সামর্থ্য থাকলে সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ব্যাপারে প্রভাবিত হবে না। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “আপনার রবের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে।” (৫০ঃ ৩৯)

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৮ | 4488 | ٤٤۸۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل الغروب “এবং তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা-পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে” (৫০ঃ ৩৯)
৪৪৮৮। আদম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর তাঁর পবিত্রতা বর্ণনার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ্‌র বাণীঃ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ এর দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৯ | 4489 | ٤٤۸۹

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা যারিয়াত

‘আলী (রাঃ) বলেছেন, الرِّيَاحُ বায়ুরাশি। অন্যদের হতে বর্ণিত। تَذْرُوْهُ মানে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। وَفِيْٓ أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُوْنَ তোমাদের মধ্যেও নিদর্শন রয়েছে, (‘‘তোমরা কি অনুধাবন করবে না?) অর্থাৎ তোমরা খানাপিনা কর এক পথে এবং তা বের হয় দু’পথ দিয়ে। فَرَاغَ মানে সে ফিরে এল। فَصَكَّتْ সে মুষ্টি বন্ধ করে নিজ কপালে মারল। الرَّمِيْمُ যমীনের উদ্ভিদ যখন শুকায় এবং তা মাড়াই করা হয়। لَمُوْسِعُوْنَ অবশ্য সম্প্রসারণকারী। এমনিভাবে عَلَى الْمُوْسِعِ قَدَرَهُ অর্থাৎ সামর্থ্যবান। زَوْجَيْنِ নারী-পুরুষ, আলাদা আলাদা বর্ণের এবং মিষ্টি ও টক উভয়কেই زَوْجَانِ বলা হয়। فَفِرُّوْآ إِلَى اللهِ আল্লাহর নাফরমানী ত্যাগ করে তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের পানে এসো। إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ মানুষ ও জিন উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা ভাগ্যবান, তাদেরই আমার তাওহীদের উপর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য সৃষ্টি করেছি। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে, তাদের সকলকেই আল্লাহর বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু কেউ তা করেছে আর কেউ তা ত্যাগ করেছে। এ আয়াতে মুতাযিলাদের জন্য তাদের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। الذَّنُوْبُ বড় বালতি। মুজাহিদ বলেন, صَرَّةٍ চীৎকার। ذُنُوْبًا রাস্তা। الْعَقِيْمُ যে নারী সন্তান জন্ম দেয় না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْحُبُكُ আকাশের সুবিন্যস্ততা ও তার সৌন্দর্য। فِيْغَمْرَةٍ নিজেদের ভুলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অন্য হতে বর্ণিত যে, تَوَاصَوْا একে অপরের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে আরও বলেছেন, مُسَوَّمَةً চিহ্নিত। مُسَوَّمَةً শব্দটি السِيِّمًا থেকে উদ্ভূত। قُتِلَ الْإِنْسَانُ অভিশপ্ত।

সুরা তূর

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, مَسْطُوْرٍ লিখিত। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, সুরয়ানী ভাষায় পর্বতকে طُّوْرُ বলা হয়। رَقٍّمَّنْشُوْرٍ (উন্মুক্ত) সহীফা। السَّقْفِ الْمَرْفُوْعِ (সমুন্নত) আকাশ। الْمَسْجُوْرِ জ্বলন্ত। হাসান (রহ.) বলেন, (সমুদ্র) জ্বলে উঠবে। ফলে সমস্ত পানি ফুরিয়ে যাবে এবং এক ফোঁটা পানি থাকবে না। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, أَلَتْنَاهُمْ আমি হ্রাস করেছি। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, تَمُوْرُ আন্দোলিত হবে। أَحْلَامُهُمْ বুদ্ধি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, الْبَرُّ দয়ালু। كِسْفًا খন্ড, الْمَنُوْنُ মৃত্যু। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, يَتَنَازَعُوْنَ তারা আদান-প্রদান করবে।

৪৪৮৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ওযর পেশ করলাম যে, আমি অসুস্থ। তিনি বললেন, তুমি সওয়ার হয়ে লোকদের পেছন তাওয়াফ করে নাও। তখন আমি তাওয়াফ করলাম। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন এবং وَالطُّوْرِ وَكِتَابٍ مَّسْطُوْرٍ তিলাওয়াত করছিলেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯০ | 4490 | ٤٤۹۰

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৪৪৯০। হুমায়দী (রহঃ) … জুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। যখন তিনি এ আয়াত পর্যন্ত পৌছেনঃ তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? আসমান-যমীন কি তারাই সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা অবিশ্বাসী। আমার প্রতিপালকের ধনভাণ্ডার কি তাদের কাছে রয়েছে, না তারাই্ এ সমুদয়ের নিয়ন্তা? তখন আমার অন্তর প্রায় উড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। সুফয়ান (রহঃ) বলেন, আমি যুহরীকে মুহাম্মদ ইবনু জুবায়ির ইবনু মুত’ইমকে তার পিতার বর্ণনা করতে শুনেছি, যা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। কিন্তু এর অতিরিক্ত আমি শুনেছি যা তাঁরা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯১ | 4491 | ٤٤۹۱

পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
সুরা নাজ্‌ম

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ذُوْ مِرَّةٍ শক্তিশালী। قَابَ قَوْسَيْنِ দুই ধনুকের ছিলার পরিমাণ। ضِيْزَىْ বক্রতা وَأَكْدٰى সে তাঁর দান বন্ধ করে দেয়। رَبُّ الشِّعْرٰى জওযারামীর মিরজাম নক্ষত্র। الَّذِيْوَفّٰى সে তাঁর প্রতি ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে। أَزِفَتْ الْاٰزِفَةُ ক্বিয়ামাত সন্নিকট। سَامِدُوْنَ দ্বারা بَرْطَمَةُ নামক খেলাধুলা বোঝানো হয়েছে। ইকরামা বলেন, হামারিয়্যাহ ভাষায় গান গাওয়াকে سَامِدُوْنَ বলা হয়। ইব্রাহীম (রহঃ) বলেন, أَفَتَجْحَدُوْنَه তোমরা কি তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করবে? যারা এ শব্দটিকে أَفَتَجْحَدُوْنَه পড়ে, তাদের কিরাআত অনুসারে এর অর্থ হবে أَفَتَجْحَدُوْنَه তোমরা কি তার কথাকে অস্বীকার করবে? مَا زَاغَ الْبَصَرُ (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি وَمَاطَغٰى এবং তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যভ্রষ্টও হয়নি। فَتَمَارَوْا তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। হাসান (রহঃ) বলেন, إِذَاهَوٰى যখন সে অদৃশ্য হয়ে গেল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, أَغْنٰىوَأَقْنٰى তিনি দান করলেন এবং খুশী করে দিলেন।

৪৪৯১। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর রবকে দেখেছিলেন? তিনি বললেন, তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি অবগত নও? যে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে বলে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি পাঠ করলেন, তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নহেন কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত; এবং তিনই সূক্ষদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত” “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ্ তাঁর সাথে কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে”। আর যে ব্যাক্তি তোমাকে বলবে যে, আগামীকাল কি হবে সে তা জানে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি তিলওয়াত করলেন, “কেউ জাননা আগামীকাল সে কি অর্জন করবে।” এবং তোমাকে যে বলবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কথা গোপন রেখেছেন, তাহলেও সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার কর।” হ্যাঁ, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯২ | 4492 | ٤٤۹۲

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فكان قاب قوسين أو أدنى “ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ছিলার ব্যবধান রইল অথবা তারও কম।” (৫৩ঃ ৯) অর্থাৎ ধনুকের দুই ছিলার সমান ব্যবধান রইল মাত্র।
৪৪৯২। আবূন্ নু’মান (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى * فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى আয়াত দু’টোর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছেন। তাঁর ছয়’শ ডানা ছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৩ | 4493 | ٤٤۹۳

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فأوحى إلى عبده ما أوحى “তখন আল্লাহ্‌ তার বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন (৫৩ঃ ১০)
৪৪৯৩ তালক বি্ন গান্নাম (রহঃ) … শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যিরর (রহঃ) কে আল্লাহর বাণীঃ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى * فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমাকে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছেন। এ সময় তাঁর ডানা ছিল ছ’শ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৪ | 4494 | ٤٤۹٤

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ لقد رأى من آيات ربه الكبرى “সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল।” (৫৩ঃ ১৮)
৪৪৯৪। কাবীসা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ‏لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবুজ রঙের একটি ‘রফরফ’ দেখেছিলেন যা সম্পূর্ণ আকাশ জুড়ে রেখেছিল।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৫ | 4495 | ٤٤۹۵

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ أفرأيتم اللات والعزى “তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্বন্ধে (৫৩ঃ ১৯)
৪৪৯৫। মুসলিম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণীঃ ‏اللاَّتَ وَالْعُزَّى এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ‘লাত’ বলে এ ব্যাক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৬ | 4496 | ٤٤۹٦

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ أفرأيتم اللات والعزى “তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্বন্ধে (৫৩ঃ ১৯)
৪৪৯৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি কসম করে বলে যে, লাত ও উযযার কসম, তাহলে সাথে সাথে তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা উচিত। আর যে ব্যাক্তি তার সাথীকে বলে, এসো আমি তোমার সাথে জুয়া খেলব, তার সাদকা দেয়া উচিত।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৭ | 4497 | ٤٤۹۷

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ ومناة الثالثة الأخرى “এবং তৃতীয় আরেকটি মানত সম্বন্ধে?” (৫৩ঃ ২০)
৪৪৯৭। হুমায়দী (রহঃ) … উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, মুশাল্লাল নামক স্থানে অবস্থিত মানাত দেবীর নামে যারা ইহরাম বাঁধতো, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করতো না। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন, “সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।” এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানগণ তাওয়াফ করলেন। সুফয়ান (রহঃ) বলেন, ‘মানাত’ কুদায়দ নামক স্থানের মুশাল্লাল নামক জায়গায় অবস্থিত ছিল।

অপর এক বর্ণনায় আবদুর রহমান ইবনু খালিদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ আয়াতটি আনসারদের সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বের আনসার ও গাসসান গোত্রের লোকেরা মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো। হাদীসের অবশিষ্টাংশ সুফয়ানের বর্ণনার মতই।

অপর এক সূত্রে মা’মার (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের কতিপয় লোক মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো, মানাত মক্কা ও মদিনার মধ্যস্থলে রক্ষিত একটি দেবমূর্তি। তারা বললেন, হে আল্লাহর নাবী! মানাতের সম্মানার্থে আমরা সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে তাওয়াফ করতাম না। এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসেরই অনুরূপ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৮ | 4498 | ٤٤۹۸

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فاسجدوا لله واعبدوا “অতএব, আল্লাহকে সিজদা কর এবং তার ইবাদত কর” (৫৩ঃ ৬২)
৪৪৯৮। আবূ মা’মার (রহঃ) … ইবনু আব্বস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাজমের মধ্যে সিজদা করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলমান, মুশরিক, জ্বীন ও মানব সকলেই সিজদা করল। আইয়ূব (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু তাহমান (রহঃ) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইবনু উলাইয়া (রহঃ) আইয়ূব (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি।

হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৯ | 4499 | ٤٤۹۹

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ فاسجدوا لله واعبدوا “অতএব, আল্লাহকে সিজদা কর এবং তার ইবাদত কর” (৫৩ঃ ৬২)
৪৪৯৯। নাসর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সিজদার আয়াত সম্বলিত নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম সূরা হল আন-নাজম। এ সূরার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা করলেন এবং সিজদা করল তাঁর পেছনের সকল লোক। তবে এক ব্যাক্তিকে আমি দেখলাম, এক মুষ্টি মাটি হাতে তুলে তার ওপরে সিজদা করছে। এরপর আমি তাকে কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। সে হল উমাইয়া ইবনু খালফ।

হাদিস নম্বরঃ ৪৫০০ | 4500 | ٤۵۰۰

পরিচ্ছদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ “চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে, তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় (৫৪ঃ ১-২)
সুরা কামার

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, مُسْتَمِرٌّ বিলুূপ্ত। مُزْدَجَرٌ বাধা দানকারী। وَازْدُجِرَ তাকে পাগল করে দেয়ার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। دُسُرٍ নৌকার কীলক। لِمَنْ كَانَ كُفِرَ এর কারণে যে নূহ্ (আঃ) কে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।جَزَآءً প্রতিদান আল্লাহর তরফ থেকে। مُحْتَضَرٌ তারা পানির জন্য উপস্থিত হবে। ইবনু জুবায়র (রহঃ) বলেন, مُهْطِعِيْنَ তারা দ্রুত চলবে। ইবনু জুবায়র (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন, فَتَعَاطٰى তারপর সে উষ্ট্রীটিকে ধরল এবং তাকে হত্যা করল। الْمُحْتَظِرِ শুকনো গাছের বেড়া যা জ্বলে গেছে। ازْدُجِرَ – زَجَرْتُ ধাতু হতে بابافْتُعِلَ এর زَجَرْتُ، صيحه থেকে এর নিষ্পন্ন। كُفِرَ আমি নূহ্ এবং তাঁর কওমের সঙ্গে যা করেছি তা প্রতিদান ছিল ঐ ‘আমালের, যা তাঁর কওমের লোকেরা তাঁর ও তাঁর সাথীদের সঙ্গে করেছিল। مُسْتَقِرٌّ আল্লাহর তরফ থেকে শাস্তি। الْأَشَرُ দাম্ভিকতা ও অহংকার।

৪৫০০। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। এর এক খণ্ড পাহাড়ের উপর এবং অপর খণ্ড পাহাড়ের নিচে পড়েছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাক্ষী থাক।