বুখারি হাদিস নং ৩৯২৭ – উমরাতুল কাযার বর্ণনা।

হাদীস নং ৩৯২৭

উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলকাদা মাসে উমরা আদায করার ইচ্ছায় মক্কা অভিমুখে রওয়ানা করেন। মক্কাবাসীরা তাকে নগরীতে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালো। অবশেষে তিনি তাদের সঙ্গে এ কথার উপর সন্ধি-চুক্তি সম্পাদন করেন যে, (আগামী বছর উমরা পালন করতে এসে) তিনি মাত্র তিনদিন মক্কায় অবস্থান করবেন। মুসলিমগণ সন্ধিপত্র লেখার সময় এভাবে লিখেছিলেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ আমাদের সঙ্গে এ চুক্তি সম্পাদন করেছেন। ফলে তারা (কথাটির উপর আপত্তি উঠিয়ে) বলল, আমরা তো এ কথা (মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল) স্বীকার করিনি। যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রাসূল বলে স্বীকারই করতাম তাহলে মক্কা প্রবেশে মোটেই বাধা দিতাম না। বরং আপনি তো মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লারহ রাসূল এবং মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (উভয়টিই)। তারপর তিনি আলী রা.-কে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছে ফেল। আলী রা. উত্তর করলেন, আল্লাহর কসম, আমি কখনো এ কথা মুছতে পারব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিজেই চুক্তিপত্রটি হাতে নিলেন। তিনি (আক্ষরিকভাবে) লিখতে জানতেন না, তবুও তিনি (তার এক মুজিযা হিসেবে) লিখে দিলেন যে, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ এ চুক্তিপত্র সম্পাদন করে দিয়েছে যে, তিনি কোষবদ্ধ তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কার অধিবাসীদের কেউ তাঁর সাথে যেতে চাইলেও তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন না। তাঁর সাথীদের কেউ মক্কায় (পুনরায়) অবস্থান করতে চাইলে তিনি তাকে বাধা দেবেন না। (পরবর্তী বছর সন্ধি অনুসারে) যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ অতিক্রম হল তখন মুশরিকরা আলীর কাছে এসে বলল, আপনার সাথী (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলুন যে, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তাই তিনি যেন আমাদের নিকট থেকে চলে যান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মতে প্রত্যাবর্তন করলেন। এ সময়ে হাযমা রা.-এর কন্যা চাচা চাচা বলে ডাকতে ডাকতে তার পেছনে ছুটলো। আলী রা. তার হাত ধরে তুলে নিয়ে ফাতিমা রা.-কে দিয়ে বললেন, তোমার চাচার কন্যাকে নাও। ফাতিমা রা. বাচ্চাটিকে তুলে নিলেন। (কাফেলা মদীনা পৌঁছার পর) বাচ্চাটি নিয়ে আলী, যায়েদ (ইবনে হারিসা) ও জাফর (ইবনে আবু তালিব রা.)-এর মধ্যে ঝগড়া আরম্ভ হয়ে গেল। আলী রা. বললেন, আমি তাকে (প্রথমে) কোলে নিয়েছি এবং সে আমার চাচার কন্যা (তাই সে আমার কাছে থাকবে) জাফর দাবি করলেন, সে আমার চাচার কন্যা এবং তার খালা হল আমার স্ত্রী। যায়েদ (ইবনে হারিসা রা.) বললেন, সে ভাইয়ের কন্যা (অর্থাৎ সবাই নিজ নিজ সম্পর্কের ভিত্তিতে নিজের কাছে রাখার অধিকার পেশ করল)। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েটিকে তার খালার জন্য (অর্থাৎ জাফরের পক্ষে) ফায়সালা দিয়ে বললেন, (আদর ও লালন-পালনের ব্যাপারে) খালা মায়ের সমপর্যায়ের। এরপর তিনি আলীর দিকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি আমার এবং আমি তোমার। জাফর রা.-কে বললেন, তুমি দৈহিক গঠন এবং চারিত্রিক গুণে আমার মতো। আর যায়েদ রা.-কে বললেন, তুমি আমাদের ঈমানী ভাই ও আযাদকৃত গোলাম। আলী রা. (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললেন, আপনি হামযার মেয়েটিকে বিয়ে করছেন না কেন? তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, সে আমার দুধ-ভাই (হামযা)-এর মেয়ে।