বুখারি হাদিস নং ৩৭৭৩ – হামযা রা.-এর শাহাদত।

হাদীস নং ৩৭৭৩

আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..জাফর ইবনে আমর ইবনে উমাইয়া যামরী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার রহ-এর সাথে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা যখন হিমস নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন উবায়দুল্লাহ রহ. আমাকে বললেন, ওয়াহশীর কাছে যেতে তোমার ইচ্ছা আছে কি? আমরা তাকে হাযমা রা.-এর শাহাদত বরণ করার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। আমি বললাম, হ্যাঁ যাব। ওয়াহশী তখন হিমস শহরে বসবাস করতেন। আমরা তার সম্পর্কে (লোকদেরকে) জিজ্ঞাসা করলাম। আমাদেরকে বলা হল, ঐ তো তিনি তার প্রাসাদের ছায়ার মধ্যে পশম হীন মশকের মত স্থির হয়ে বসে আছেন। রাবী বলেন, আমরা গিয়ে তার থেকে অল্প কিছু দূরে থামলাম এবং তাকে সালাম করলাম। তিনি আমাদের সালামের উত্তর দিলেন। জাফর রহ. বর্ণনা করেন, তখন উবায়দুল্লাহ রহ. তার মাথা পাগড়ী দ্বারা এমনভাবে আবৃত করে রেখেছিলেন যে, ওয়াহশী তার দুই চোখ এবং দুই পা ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় উবায়দুল্লাহ রহ. ওয়াহশীকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ওয়াহশী, আপনি আমাকে চিনেন কি? রাবী বলেন, তিনি তখন তাঁর দিকে তাকালেন এবং এরপর বললেন, না আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে চিনি না। তবে আমি এতটুকু জানিযে, আদী ইবনে খিয়ার উম্মে কিতাল বিনতে আবুল ঈসা নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। মক্কায় তার একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি তার দাই খোঁজ করছিলাম, তখন ঐ বাচ্চাকে নিয়ে তার মায়ের সাথে গিয়ে ধাত্রীমাতার কাছে তাকে সোপর্দ করলাম। সে দিনের সে বাচ্চার পা দুটির মত যেন আপনার পা দুটি দেখতে পাচ্ছি। রাবী বলেন, তখন উবায়দুল্লাহ রহ. তার মুখের পর্দা সরিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হামযা রা.-এর শাহাদত সম্পর্কে আমাদেরকে খবর দেবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বদর যুদ্ধে হামযা রা. তুআইমা ইবনে আদী ইবনে খিযারকে হত্যা করেছিলেন। তাই আমার মনিব যুবাইর ইবনে মুতঈম আমাকে বললেন, তুমি যদি আমার চাচার প্রতিশোধস্বরূপ হামযাকে হত্যা করতে পার তাহলে তুমি আযাদ। রাবী বলেন, যে বছর উহুদ পাহাড় সংলগ্ন আইনাইন পাহাড়ের উপত্যকায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে যুদ্ধে আমি সকলের সাথে রওয়ানা হয়ে যাই। এরপর লড়াইয়ের জন্য সকলেই সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালে (কাফির সৈন্যদলের মধ্য থেকে) সিবা নামক এক ব্যক্তি ময়দানে এসে বলল, দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য কেউ প্রস্তুত আছ কি? ওয়াহশী বলেন, তখন হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. (বীর বিক্রমে) তার সামনে গিয়ে বললেন, হে মেয়েদের খতনাকারিণী উম্মে আনমারের পুত্র সিবা! তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে দুশমনী করছ? রাবী বলেন, এরপর তিনি তার উপর প্রচন্ড আঘাত করলেন, যার ফলে সে অতীত দিনের মত বিলীন হয়ে গেল। ওয়াহশী বলেন, আমি হামযা রা.-কে কতল করার উদ্দেশ্যে একটি পাথরের নিচে আত্মগোপন ককরে ওত পেতে বসেছিলাম। যখন তিনি আমার নিকটবর্তী হলেন তখন আমি আমার অস্ত্র দ্বারা এমন জোরে আঘাত করলাম যে, তার মূত্রথলি ভেদ করে নিতম্বের মাঝখান দিয়ে তা বেরিয়ে গেল। ওয়াহশী বলেন, এটাই হল তাঁর শাহাদতের মূল ঘটনা। এরপর সবাই ফিরে এলে আমিও তাদের সাথে ফিরে এসে মক্কায় অবস্থান করতে লাগলাম। এরপর মক্কায় ইসলাম প্রসার লাভ করলে আমি তায়েফ চলে গেলাম। কিছুদিনের মধ্যে তায়েফবাসীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দূত প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হল যে, তিনি দূতের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন না। তাই আমি তাদের সাথে রওয়ানা হলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে গিয়ে হাযির হলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, তুমিই কি ওয়াহশী ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমিই কি হাযমাকে হত্যা করেছিলে? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে ব্যাপারটি তাই। তিনি বললেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পারে? ওয়াহশী বলেন, তখন আমি চলে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ইন্তিকালের পর (নবুওয়াতের মিথ্যাদাবীদার) মুসায়লামাতুল কাযযাব আবির্ভূত হলে আমি বললাম, আমি অবশ্যই মুসায়লামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা করে হামযা রা.-কে হত্যা করার ক্ষতিপূরণ করব। ওয়াহশী বলেন, তাই আমি লোকদের সাথে রওয়ানা করলাম। তার অবস্থা যা হওয়ার তাই হল। তিনি বর্ণনা করেন যে, এক সময় আমি দেখলাম যে, হালকা কালো বর্ণের উটের ন্যায় উস্কখুস্ক চুল বিশিষ্ট এক ব্যক্তি একটি ভাঙ্গা পাচীরের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সাথে সাথে আমি আমার বর্শা দ্বারা তার উপর আঘাত করলাম। এবং তার বক্ষের উপর এমনভাবে বসিয়ে দিলাম যে, তা দু’কাধের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। এরপর আনসারী এক সাহাবী এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তরবারি দ্বারা তার মাথার খুলিতে প্রচন্ড আঘাত করলেন। আবদুল্লাহ ইবনে ফযল রহ. বর্ণনা করেছেন যে, সুলায়মান ইবনে ইয়াসির রহ. আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, (মুসায়লামা নিহত হলে) ঘরের ছাদে উঠে একটি বালিকা বলছিল, হায়, হায়, আমীরুল মুমিনীন (মুসায়লামা) কে একজন কালো ক্রীতদাস হত্যা করল।