বুখারি হাদিস নং ৩৭৪২ – কাব ইবনে আশরাফের হত্যা।

হাদীস নং ৩৭৪২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, (একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কাব ইবনে আশরাফের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত আছে কে? কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. দাঁড়ালেন, এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলাম রা. বললেন, তাহলে আমাকে কিছু (কৃত্রিম) কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ বল। এরপর মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. কাব ইবনে আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদকা চায়। এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলে। তাই (বাধ্য হয়ে) আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কাব ইবনে আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমরা তো তাকে অনুসরণ করছি। পরিণাম ফল কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছিনা। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। রাবী সুফিয়ান বলেন, আমর রা. আমার নিকট হাদীসখানা কয়েকবার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি উল্লেখ করেননি। আমি তাকে (স্মরণ করিয়ে) বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। তখন তিনি বললেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দুই ওসাক কথাটি বর্ণিত আছে। কাব ইবনে আশরাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি কি জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাক। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কি করে, আমাদের স্ত্রীরদেরকে বন্ধক রাখব আমরা? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে বন্ধক রাক। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি তাহলে) তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হল অস্ত্রশস্ত্র। অবশেষে তিনি (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা) তাকে পনুরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কাব ইবনে আশরাফের দুধ ভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কাব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে (উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এইতো মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। (তাদের কাছে যাচ্ছি) আমর ব্যতীত রাবীগণ বলেন যে, কাবের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোটা ঝড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কাব ইবনে আশরাফ বলল, মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিৎ। (রাবী বলেন) মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে (তথায়) গেলেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আমর কি তাদের দুজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফিয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জন মানুষ সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং তিনি বলেছিলেন যখন সে (কাব ইবনে আশরাফ) আসবে। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে (তারা হলেন) আবু আবস ইবনে জাবর হারিস ইবনে আওস এবং আব্বদ ইবনে বিশর। আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই ব্যক্তিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোন বাহানায়) তার মাথার চুল ধরে শুকতে থাকবে। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরাবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুকাব। সে (কাব) চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কাব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদারসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ, এরপর তিনি তার মাথা শুকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুকালেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে (আরেকবার শুকবার জন্য) অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন।