হাদীস নং ৩৭৪০
আবুল ইয়ামান রহ……….মালিক ইবনে আওস ইবনে হাদসান সাসিরী রা. বর্ণনা করেন যে, (একদা) উমর ইবনে খাত্তাব রা. তাকে ডাকলেন। এ সময় তার দ্বাররক্ষী ইয়ারফা এসে বলল, উসমান আবদুর রহমান, যুবাইর এবং সাদ রা. আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদেরকে আসতে বল। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, আব্বাস এবং আলী রা. আপনার নিকট অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাঁরা উভয়েই ভিতরে প্রবেশ করলেন। আব্বাস রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! আমার এবং তাঁর মাঝে (চলমান বিবাদের) মিমাংসা করে দিন। বনু নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফাই (বিন যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) হিসাবে যা দিয়েছিলেন তা নিয়ে তাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে তারা তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, (এ দেখে আগত) দলের সকলেই বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন ! তাদের মাঝে একটি ফয়সালা করে তাদের পারস্পারিক এ বিবাদ থেকে অব্যাহতি দিন। তখন উমর রা. বললেন, তাড়াহুড়া করবেন না। আমি আপনাদেরকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, যার আদেশে আসমান ও যমিন স্থির আছে। আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, আমরা (নবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবেই গণ্য হয়। এর দ্বারা তিনি নিজের কথাই বললেন। উপস্থিত সকলেই বললেন, হ্যাঁ, তিনি একথা বলেছেন। উমর রা. আলী এবং আব্বাসের দিকে লক্ষ্য কর বললেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে এ কথা বলেছেন, আপনারা তা জানেন কি? তারা উভয়েই বললেন, হ্যাঁ, এরপর তিনি (উমর) বললেন, এখন আমি আপনাদেরকে (উত্থাপিত) বিষয়টির প্রকৃত অবস্থা খুলে বলছি। ফায়ের কিছু অংশ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যা তিনি আর অন্য কাউকে দেননি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: আল্লাহ ইয়াহূদীদের নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যে ফায় দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা অশ্বে কিংবা উষ্ট্রে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি; আল্লাহ তো তাঁর রাসূলকে যার উপর ইচ্ছা তার উপর কর্তৃত্ব দান করেন; আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (৬: ৫৯) অতএব এ ফায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। আল্লাহ কসম! এরপর তিনি তোমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য এ সম্পদকে সংরক্ষিতও রাখেননি এবং নিজের জন্য নির্ধারিতও করে যাননি। বরং এ অর্থকে তিনি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে এ মাল উদ্বৃত্ত আছে। এ মাল থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার পরিজনের এক বছরের খোরপোশ দিতেন। এর থেকে যা অবশিষ্ট থাকত তা তিনি আল্লাহর পথে খরচ করতে দিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় এ রূপই করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর আবু বকর রা. বললেন, এখন থেকে আমিই হলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওলী। এরপর আবু বকর রা. তা স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তিনিও সে নীতিই অনুসরণ করে চললেন। তিনি আলী ও আব্বাসের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আজ আপনারা যা বলছেন এ বিষয়ে আপনারা আবু বকরের সাথেও এ ধরণের আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ কসম, তিনিই জানেন, এ বিষয়ে আবু বকর রা. ছিলেন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ এবং হকের অনুসারী এক মহান ব্যক্তিত্ব। এরপর আবু বকরের ইন্তিকাল হলে আমি বললাম, (আজ থেকে) আমিই হলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকরের ওলী। এরপর এ সম্পদকে আমি আমার খেলাফতের দুই বছরকাল আমার তত্ত্বাবধানে রাখি এবং এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকরের অনুসৃত নীতিই অনুসরণ করে চলছি। আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন, এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও হকের একনিষ্ঠ অনুসারী। তা সত্ত্বেও পুনরায় আপনারা দুজনই আমার নিকট এসেছেন। আপনাদের উভয়কেই বলেছিলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা (নবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী করি না, আমরা যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবেই গণ্য হয়। এরপর এ সম্পদটি আপনাদের উভয়ের তত্ত্ববধানে দেওয়ার বিষয়টি যখন আমার নিকট স্পষ্ট হল তখন আমি বলেছিলাম, যদি আপনারা চান তাহলে একটি শর্তে তা আমি আপনাদের নিকট অর্পণ করব। শর্তটি হচ্ছে, আপনারা আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমনভাবে কাজ করবেন যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. করেছেন। আমার তত্ত্বাবধানে আসার পর আমি করেছি। অন্যথায় এ বিষয়ে আপনারা আমার সাথে আর কোন আলোচনা করবেন না। তখন আপনারা বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের নিকট অর্পণ করুন। আমি তা আপনাদের হাতে অর্পণ করেছি। এখন আপনারা আমার নিকট অন্য কোন ফয়সালা কামনা করেন কি? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার আদেশে আসমান যমীনে স্থির আছে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আমি এর বাইরে অন্য কোন ফয়সালা দিতে পারব না। আপনারা যদি এর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে আমার নিকট ফিরিয়ে দিন। আপনাদের এ দায়িত্ব পালনে আমিই যথেষ্ট। রাবী (যুহরী) বলেন, আমি হাদীসটি উরওয়া ইবনে যুবাইরের নিকট বর্ণনা করার পর তিনি (আমাকে) বললেন, মালিক ইবনে আওস রা. ঠিকই বর্ণনা করেছেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা রা. কে বলতে শুনেছি, (বনী নাযীর গোত্রের সম্পদ থেকে) ফায় হিসাবে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যে সম্পদ দিয়েছেন তার অষ্টমাংশ আনার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগন উসমানকে আবু বকরের নিটক পাঠালে (পাঠাতে ইচ্ছা করলে) এই বলে আমি তাদেরকে বারণ করছিলাম যে, আপনারা কি আল্লাহকে ভয় করেন না? আপনারা কি জানেন না যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন আমরা (নবী রাসূলগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা রেখে যাই তা সাদকা হিসাবেই থেকে যায়। এ দ্বারা তিনি নিজেকে উদ্দেশ্য করেছেন। এ সম্পদ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণ বিরত হলেন। রাবী (উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ.) বলেন, অবশেষে সাদকার এ মাল আলীর তত্ত্বাবধানে ছিল। তিনি আব্বাসকে তা দিতে অস্বীকার করেন এবং পরিশেষে (এ যমীনের ব্যাপারে) তিনি আব্বাসের উপর জয়ী হন। এরপর তা যথাক্রমে হাসান ইবনে আলী এবং হুসাইন ইবনে আলীর হাতে ছিল। পুনরায় তা আলী ইবনে হুসাইন এবং হাসান ইবনে হাসানের হস্তগত হয়। তাঁরা উভয়ই পর্যায়ক্রমে তার দেখা শোনা করতেন। এরপর তা যায়েদ ইবনে হাসানের তত্ত্বাবধানে যায়। ইহা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাদকা।