বুখারি হাদিস নং ৩৫৯৩ – হাবশায় হিজরত।

হাদীস নং ৩৫৯৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল-জুফী রহ………..উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার রহ. উরওয়া ইবনে যুবাইরকে বলেন যে, মিসওয়ার ইবনে মাখরামা এবং আবদুর রাহমান ইবনে আসওয়াদ ইবন আবদ ইয়াগুস রা. উভয়ই তাকে বলেন, (হে উবায়দুল্লাহ) তুমি তোমার মামা উসমান রা. সাথে তার (বৈপিত্রেয়) ভাই ওয়ালীদ ইবনে উকবা সম্পর্কে কোন আলাপ-আলোচনা করছ না কেন? জনগণ তার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছে। উবায়দুল্লাহ বলেন, উসমান রা. যখন সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসছিলেন তখন আমি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম, আপনার সাথে আমার কথা বলার প্রয়োজন আছে এবং তা আপনার মঙ্গলার্থেই। তিনি বললেন, ওহে, আমি তোমা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তখন ফিরে আসলাম এবং যখন সালাত সমাপ্ত করলাম, তখন মিসওয়ার ও ইবনে আবদ ইয়াগুস রা.-এর নিটক যেয়ে বললাম, এবং উসমান রা. কে আমি যা বলেছি এবং তিনি যে উত্তর দিয়েছেন তা উভয়কে শুনালাম। তারা বললেন, তোমার উপর যে দায়িত্বও কর্তব্য ছিল তা তুমি আদায় করেছ। আমি তাদের নিকট বসাই আমি এ সময় উসমান র.-এর পক্ষ থেকে একজন দূত আমাকে ডেকে নেওয়ার জন্য আসলেন। তারা দু’জন আমাকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। আমি চললাম এবং উসমান রা.-এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি উপদেশ যা তুমি কিছুক্ষণ পূর্বে বলতে চেয়েছিলে? তখন আমি কালিমা শাহাদত পাঠ করে (তাকে উদ্দেশ্যে করে) বললাম, আল্লাহর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ তাঁর উপর ঈমান এনেছেন, এবং প্রথম দুহিজরাতে (মদীনা ও হাবশা) আপনি অংশ গ্রহণ করেছেন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর স্বভাব-চরিত্র স্বচক্ষে দেখেছেন। জনসাধারণ ওয়ালিদ ইবনে উকবার ব্যাপারে অনেক সমালোচনা করছে, আপনার কর্তব্য তাঁর উপর বিধান দণ্ড জারি করা। উসমান রা. আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাহিজা, তুমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেয়েছ? আমি বললাম, না, পাইনি। তবে তাঁর বিষয় আমার নিকট এমনভাবে নিরঙ্কুশ পৌঁছেছে যেমনভাবে কুমারী মেয়েদের নিকট পর্দার অন্তরালে সংবাদ পৌঁছে থাকে। উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন, উসমান রা. কালিমা শাহাদত পাঠ করলেন, এবং বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যা সহ প্রেরণ করা হয়েছিল আমি তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি। ইসলামের প্রথম যুগের দু’হিজরতে অংশগ্রহণ করেছি যেমন তুমি বলছ। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছি, তাঁর হাতে বায়আত করেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাঁর নাফরমানী করিনি। তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। এমতাবস্থায় তাঁর ওফাত হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ তায়ালা আবু বকর রা. কে খলীফা নিযুক্ত করলেন। আল্লাহর কসম, আমি তাঁরও নাফরমানী করিনি, তাঁর সাতে প্রতারণা করিনি। তারপর উমর রা খলীফা মনোনীত হলেন। আল্লাহর কসম, আমি তাঁরও অবাধ্য হইনি, তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। তিনিও ওফাত প্রাপ্ত হলেন। এবং তারপর আমাকে খলীফা নিযুক্ত করা হল। আমার উপর তাদের বাধ্য থাকার যে রূপ হক ছিল তোমাদের উপর তাদের ন্যায় আমার প্রতি বাধ্য থাকার কি কোন হক নাই? উবায়দুল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হক আছে। উসমান রা. বললেন, তাহলে এসব কথাবার্তা কি, তোমাদের পক্ষ থেকে আমার নিকট আসছে? আর ওয়ালীদ ইবনে উকবা সম্পর্কে তুমি যা বললে, সে ব্যাপারে আমি অতি সত্বর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ। অতঃপর তিনি ওয়ালীদকে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করার রায় প্রদান করলেন এবং ইহা কার্যকরী করার জন্য আলী রা. কে আদেশ করলেন। তৎকালে অপরাধীদেরকে শাস্তি প্রদানের দায়িত্বে আলী রা. নিযুক্ত ছিলেন। ইউনুস এবং যুহরির ভাতিজা যুহরী সূত্রে যে বর্ণনা করেন তাতে রয়েছে; তোমাদের উপর আমার কি হক নেই যেমনটি হক ছিল তাদের জন্য।