হাদীস নং ৩৫৮২
আমর ইবনে আব্বাস রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবের সংবাদ যখন আবু যার রা.-এর নিকট পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর ভাই (উনাইস) কে বললেন, তুমি এই উপত্যকায় যেয়ে ঐ ব্যক্তির সম্পর্কে জেনে আস যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন ও তাঁর কাছে আসমান থেকে সংবাদ আসে। তাঁর কথাবার্তা মনোযোগ সহকারে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাঁর ভাই (মক্কামুখী) রওয়ানা হয়ে ঐ ব্যক্তির নিকট পৌঁছে তাঁর কথাবার্তা শোনালেন। এরপর তিনি আবু যারের নিকট প্রত্যাবর্তন করে বললেন, আমি তাকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম স্বভাব অবলম্বন করার জন্য (লোকদেরকে) নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম (পড়তে শুনলাম) যে পদ্য নয়। এতে আবু যার রা. বললেন, আমি যে উদ্দেশ্যে তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেনা। আবু যার রা. সফরের উদ্দেশ্যে যৎসামান্য পাথেয় সংগ্রহ করলেন এবং একটি ছোট্র পানির মশকসহ মক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালাশ করতে লাগলেন। তিনি তাকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) চিনতেন না। আবার কাউকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাও পছন্দ করলেন না। এমতাবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি (মসজিদে) শুয়ে পড়লেন। আলী রা. তাকে দেখে বুঝতে পারলেন যে, লোকটি বিদেশী মুসাফির। যখন আবু যার আলী রা.-কে দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। আবু যার রা. পুনরায় তাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারামের দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি (পূর্ব দিনের) শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন আলী রা. তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এখন কি মুসাফির ব্যক্তির গন্তব্য স্থানের সন্ধান লাভের সময় হয়নি? সে এখনও এ জায়গায় অবস্থান করছে। তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। (পথিমধ্যে) কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। এমতাবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। আলী রা. পূর্বের ন্যায় তাঁর পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তুমি কি আমাকে বলবেনা কি জিনিস এখানে আসতে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে? আবু যার রা. বললেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শনের পাকা পোক্তা অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলতে পারি। আলী রা. অঙ্গীকার করলেন এবং আবু যার রা. ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করলেন। আলী রা. বললেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন কিছু আমি দেখতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করতে থাকবে এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করবে। আবু যার রা. তাই করলেন আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তিনিও তাঁর (আলীর) সাথে প্রবেশ করলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাবার্তা শোনালেন এবং ঐ স্থানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমাদের স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করবে। আবু যার রা.বললেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মসজিদে হারামে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, أشهد أن لآ إله إلا الله وأشهد أن محمدا رسول الله (ইহা শোনামাত্র মুশরিক) লোকজন (উত্তেজিত হয়ে) তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করতে করতে তাকে মাটিতে ফেলে দিল। এমন সময় আব্বাস রা. এসে তাকে আগলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের বিপদ অনিবার্য। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী দলগুলোকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াতে করতে হয়। একথা বলে তিনি তাদের হাত থেকে আবু যারকে রক্ষা করলেন। পরদিন ভোরে তিনি অনুরূপ বলতে লাগলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে বেদম প্রহার করতে লাগল। আব্বাস রা. এসে আজো তাকে রক্ষা করলেন।