বুখারি হাদিস নং ৩৩৯০ – মুহাজিরগণের মর্যাদা ও ফযীলত তাদের মধ্য থেকে আবু বকর আব্দুল্লাহ ইবনে আবু কুহাফা তায়মী রা.।

হাদীস নং ৩৩৯০

আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ…………বারা (ইবনে আযিব) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. আযিব রা.-এর নিকট থেকে তের দিরহাম মূল্যের একটি হাওদা ক্রয় করলেন। আবু বকর রা. আযিবকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে হাওদাটি আমার কাছে পৌঁছে দিতে বল। আযিব রা. বললেন, আমি বারাকে বলব না যতক্ষণ আপনি আমাদেরকে (হিজরতের ঘটনা) সবিস্তার বর্ণনা করে শুনাবেন যে আপনি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করছিলেন যখন আপনারা (হিজরতের উদ্দেশ্যে) মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন? আর মক্কার মুশরীকগণ আপনাদের পিছু ধাওয়া করেছিল। আবু বকর রা. বললেন, আমরা মক্কা থেকে বেরিয়ে সারারাত এবং পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অবিরাম চললাম। যখন ঠিক দুপুর হয়ে গেল, এবং উত্তাপ তীব্রতর হল আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম কোথাও কোন ছায়া দেখা যায় কিনা, যেন আমরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারি। তখন একটি বৃহদাকার পাথর নযরে পড়ল। এই পাথরটির পাশে কিছু ছায়াও আছে। আমি সেখানে আসলাম এবং ঐ ছায়াবিশিষ্ট স্থানটি সমতল করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বিছানা করে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নবী, আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন, তিনি শুয়ে পড়লেন। আমি চতুর্দিকের‌ অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের তালাশে কেউ আসছে কিনা? ঐ সময় আমি দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার ভেড়া ছাগল হাঁকিয়ে ঐ পাথরের দিকে আসছে। সেও আমাদের মত ছায়া তালাশ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে যুবক, তুমি কার রাখাল? সে একজন কুরাঈশের নাম বলল, আমি তাকে চিনতে পারলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুগ্ধবতী বকরী আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, তুমি কি আমাদেরকে দুধ দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ, দিব। আমি তাকে তা দিতে বললাম তৎক্ষণাৎ সে বকরীর পাল থেকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। এবং পিছনের পা দুটি বেঁধে নিল। আমি তাকে বললাম, বকরীর স্তন দুটি ঝেড়ে মুছে ধূলাবালি থেকে পরিষ্কার করে নেও এবং তোমার হাত দুটি পরিষ্কার কর। তিনি এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে (পরিষ্কারের পদ্ধতিটিও) দেখালেন। এরপর সে আমাদিগকে পাত্রভরে দুধ এনে দিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য এমন একটি চামড়ার পাত্র সাথে রেখে ছিলাম যার মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা ছিল। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি মিশিয়ে দিলাম যেন দুধের নিম্নভাগও ঠান্ডা হয়ে যায়। এরপর আমি দুধ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে দেখলাম তিনি জেগেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি দুধ পান করুন। তিনি দুধ পান করলেন; আমি খুশী হলাম। তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের রওয়ানা হয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হয়েছে। আমরা রওয়ানা হয়ে পড়লাম। মক্কাবাসী মুশরিকরা আমাদের অনুসন্ধানে ছুটাছুটি করছে। কিন্তু সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জশাম ব্যতীত আমাদের সন্ধান তাদের অন্য কেউ পায়নি। সে ঘোড়ায় চড়ে আসছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনুসন্ধানকারী আমাদের নিকটবর্তী। তিনি বললেন, চিন্তা করনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন।