বুখারি হাদিস নং ৩২১৯ – গুহার ঘটনা।

হাদীস নং ৩২১৯

ইসমাঈল ইবনে খালীল রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের লোকদের মধ্যে তিনজন লোক ছিল। তাঁরা পথ চলছিল। হঠাৎ তাদের বৃষ্টি পেয়ে গেল। তখন তারা এক গুহায় আশ্রয় নিল। অমনি তাদের গুহার মুখ (একটি পাথর চাপা পড়ে) বন্ধ হয়ে গেল। তাদের একজন অন্যদেরকে বললেন, বন্ধুগণ আল্লাহ কসম! এখন সত্য ছাড়া কিছুই তোমাদেরকে মুক্ত করতে পারবে না। কাজেই, এখন তোমাদের প্রত্যেকের সেই জিনিসের উসিলায় দু’আ করা উচিত,যে ব্যাপারে জানা রয়েছে যে, এ কাজটিতে সে সত্যতা বহাল রেখেছে। তখন তাদের একজন (এই বলে) দু’আ করলেন হে আল্লাহ ! আপনি জানেন যে, আমার একজন মযদুর ছিল। আমি এক ফারাক (পরিমাণ) চাউলের বিনিময়ে একজন মজুর রেখেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল আমাকে বলল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি যখন তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু খরিদ করি । সে মজুর এসে আমার মুজরী দাবী করল। আমি বললাম, এই গাভীটির দিকে তাকাও এবং তা হাঁকিয়ে নিয়ে যাও। সে বলল, আমার তো আপনার কাছে মাত্র এক ফারাক চাউলই প্রাপ্য। আমি তাকে বললাম, গাভীটি নিয়ে যাও। কেননা, (তোমার) সেই এক ফারাক দ্বারা যা উৎপাদিত হয়েছে, তারই বিনিময়ে এটি খরীদ করা হয়েছে। তখন সে তা নিয়ে গেল। (হে আল্লাহ !) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই ভয়েই করছি, তবে আমাদের (গুহার মুখ) থেকে (এই পাথরটি) সরিয়ে দাও। তখন তাদের কাছ থেকে পাথরটি কিছুটা সরে গেল। তাদের আরেকজন দু’আ করল, হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার মা-বাপ খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আমি প্রতি রাতে তাদের জন্য আমার বকরীর দুধ নিয়ে তাদের কাছে যেতাম। ঘটনাক্রমে একরাতে তাদের কাছে যেতে আমি দেরী করে ফেললাম। তারপর এমন সময় গেলাম, যখন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। এদিকে আমার পরিবার পরিজন ক্ষুধার কারণে চিৎকার করছিল। আমার মাতা-পিতাকে দুধ পান করান পর্যন্ত ক্ষুধায় কাতর আমার সন্তানদেরকে দুধ পান করাইনি। কেননা, তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানটা আমি পছন্দ করিনি। অপরদিকে তাদেরকে বাদ দিতেও ভাল লাগেনি। কারণ, এ দুধটুকু পান না করলে তাঁরা উভয়েই দুর্বল হয়ে যাবেন। তাই (দুধ হাতে) আমি (সারারাত) ভোর হয়ে যাওয়া পর্যন্ত (তাদের জাগ্রত হবার) অপেক্ষা করছিলাম। আপনি যে, একাজ আমি করেছি, একমাত্র আপানার ভয়ে তাই আমাদের থেকে (পাথরটি) সরিয়ে দিন। তারপর পাথরটি তাদের থেকে আরেকটু সরে গেল। এমনকি তার আসমান দেখতে পেল। অপর ব্যক্তি দু’আ করল, হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সবার চেয়ে সে আমার নিকট অধিক প্রিয় ছিল। আমি তার সাথে (মিলনের) বাসনা করছিলাম। কিন্তু সে একশ দীনার (স্বর্ণ মুদ্রার) প্রদান ব্যতিত ঐ কাজে রাযী হতে চাইল না। আমি স্বর্ণমুদ্রা অর্জনের চেষ্টা আরম্ভ করলাম এবং তা অর্জনে সমর্থও হলাম। তারপর কথিত মুদ্রাসহ তার নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে তা অর্পণ করলাম। সেও তার দেহ আমার ভোগে অর্পণ করল। আমি যখন তার দুই পায়ের মাঝে বসে পড়লাম। তখন সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, অন্যায় ও অবৈধভাবে পবিত্র ও রক্ষিত আবরুকে বিনষ্ট করো না। আমি তৎক্ষণাৎ সরে পড়লাম ও স্বর্ণমুদ্রা ছেড়ে আসলাম। হে আল্লাহ ! আপনি জানেন যে, আমি প্রকৃতই আপনার ভয়ে তা করে ছিলাম। তাই আমাদের রাস্তা প্রশস্ত করে দাও। আল্লাহ (তাদের) সংকট দূরীভূত করলেন। তারা বের হয়ে আসল।