বুখারি হাদিস নং ৩১২৬

হাদীস নং ৩১২৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম আ. ও তাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হওয়ার হয়ে গেল, তখন ইবরাহীম আ. ইসমাঈল এবং তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সাথে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল আ.-এর মা মশক থেকে পানি পান করতেন। ফলে শিশুরা জন্য তাঁর স্তন্য দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইবরাহীম আ. মক্কায় পৌঁছে হাযেরাকে একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর ইবরাহীম আ. আপন পরিবার নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আ. -এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তিনি পিছন থেকে ডেকে বললেন, হে ইবরাহীম! আপনি আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন ? ইবরাহীম আ. বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা আ. বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এরপর হাযেরা আ. ফিরে আসলেন, তিনি মশক থেকে পানি পান করতেন আর শিশুর জন্য (তাঁর স্তন্যের) দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল আ.-এর মা বললেন, আমি যদি গিয়ে এদিকে সেদিকে তাকাতাম তাহলে হয়ত কোন মানুষ দেখতে পেতাম। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এরপর ইসমাঈল আ.-এ মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলেন না। তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন। এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি বললেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে শিশুটি কি করছে। এরপর তিনি গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন, যদি সেখানে (আবার) যেতাম এবং এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ভবত: কাউকে দেখতে পেতাম। এরপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিক সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি মনে মনে বললেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কি করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, যদি আপনার কোন সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরাঈল আ.-কে দেখতে পেলেন। বারী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, তখন তিনি তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা যমীনের উপর আঘাত করলেন। বারী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল আ.-এর মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খনন করতে লাগলেন। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, হাযেরা আ. যদি একে তার অবস্থার উপরে ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হযে যেত। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন তখন হাযেরা আ. পানি পান করতে লাগলেন এবং তাঁর সন্তানের জন্য তাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী (ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এরপর জুরহুম গোত্রের (ইয়ামন দেশীয়) একদল লোক উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করছিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না আর তারা বলতে লাগল এসব পানি তো পানি ছাড়া কোথাও থাকতে পারে না। তখন তার সেখানে তাদের একজন দূত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাওজুদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের কাছে ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। এরপর তারা হাযেরা আ.-এর কাছে এসে বলল, হে ইসমাঈলের মা ! আপনি কি আমাদেরকে আপনার কাছে থাকা অথবা (রাবী বলেছেন) আপনার কাছে বসবাস করার অনুমতি দিবেন? (হাযেরা আ. তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেটে গেল)। এরপর তাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়ে বিয়ে করলেন। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, পুনরায় ইবরাহীম আ.-এর মনে জাগল (ইসমাঈল এবং তাঁর মা হাযেরা কথা) তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, এরপর তিনি (তাদের কাছে) আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আ.-এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইবরাহীম আ. বললেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, তুমি তোমার চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে। ইসমাঈল আ. যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাকে খবরটি জানালেন, তখন তিনি স্ত্রীকে বললেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার কাছে চলে যাও। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, অতঃপর (তাদের কথা) ইবরাহীম আ.-এর আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী কে বললেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি সেখানে আসলেন এবং (পুত্রবধূকে) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইবরাহীম আ. বললেন, তোমাদের খাদ্য এবং পানীয় কি? স্ত্রী বলল, আমাদের খাদ্য হল গোশত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম আ. দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাদের খাদ্য এবং পানীয় দ্রব্যের মাঝে বরকত দিন’। রাবী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইবরাহীম আ.-এর দু’আর কারণেই (মক্কার খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে) বরকত রয়েছে। বারী (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, আবার কিছুদিন পর ইবরাহীম আ.-এর মনে তাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি স্ত্রী কে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি এলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। তখন ইবরাহীম আ. ডেকে বললেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করতে আমাকে আদেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আ. বললেন, আপনার রবর আদেশ পালন করুন। ইবরাহীম আ. বললেন, তিনি আমাকে এও নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি যেন আমাকে এ বিষয়ে সহায়তা কর। ইসমাঈল আ. বললেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। এরপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইবরাহীম আ. ইমারত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল আ. তাকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দু’আ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন। রাবী বলেন, এরি মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইবরাহীম আ. এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইবরাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল তাকে পাথর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দু’আ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবুল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (২:১২৭)