বুখারি হাদিস নং ২৯০৯ – রাসূল (সা.) ও ইসলামী শাসকদের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী যোদ্ধাদের সম্পদে তাদের জীবনে ও মৃত্যুর পরে যে বরকত সৃষ্টি হয়েছে।

হাদীস নং ২৯০৯

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উষ্ট্র যুদ্ধের দিন যুবাইর রা. যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বললেন, হে পুত্র! আজকের দিন জালিম অথবা মাজলুম ব্যতীত কেউ নিহত হবে না। আমার মনে হয়, আমি আজ মাজলুম হিসেবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে বেশী চিন্তিত। তুমি কি মনে কর যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদের কিছু অবশিষ্ট থাকবে? তারপর তিনি বললেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋণ পরিশোধ করে দাও। তিনি এক তৃতীয়াংশের ওসীয়্যাত করেন। আর সেই এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়্যাত করেন তাঁর পুত্রদের জন্য তার অর্থাৎ আবদুল্লাহ, তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশকে তিন ভাগে বিভক্ত করবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্বৃত্ত থাকে, তবে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য। হিশাম রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর কোন কোন পুত্র যুবাইর রা.-এর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন, খুবায়েব ও আব্বাদ। আর মৃত্যুকালে তাঁর নয় কন্যা ছিল। আবদুল্লাহ রা. বলেন, তিনি আমাকে তাঁর ঋণ সম্পর্কে ওসীয়্যাত করছিলেন এবং বলছিলেন, হে পুত্র! যদি এ সবের কোন বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার মাওলার সাহায্য চাইবে। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারিনি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে পিতা ! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাঁর ঋণ আদায়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবাইরের মাওলা! তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর ঋণ আদায় করে দিন। আর তাঁর করয শোধ হয়ে যেত। এরপর যুবাইর রা. শহীদ হলেন এবং তিনি নগদ কোন দীনার রেখে যাননি আর না কোন দিরহাম। তিনি কিছু জমি রেখে যান যার মধ্যে একটি হল গাবা। আরো রেখে যান মদীনায় এগারোটি বাড়ী, বসরায় দুটি, কূফায় একটি ও মিসরে একটি। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বলেন, যুবাইর রা.-এর ঋণ থাকার কারণ এই ছিল যে, তাঁর একটি কেউ যখন কোন মাল আমানত রাখতে আসত তখন যুবাইর রা. বলতেন, না, এভাবে নয় ; তুমি তা আমার কাছে ঋণ হিসাবে রেখে যাও। কেননা আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুবাইর রা. কখনও কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোন কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অবশ্য তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গী হয়ে অথবা আবু বকর, উমর ও উসমান রা.-এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বলেন, তারপর আমি তাঁর ঋণের পরিমাণ হিসাব করলাম এবং দেখলাম তাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, সাহাবী হাকীম ইবনে হিযাম রা. আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেন, হে ভাতিজা! বল তো আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি তা প্রকাশ না করে বললেন, এক লাখ। তখন হাকীম বিনে হিযাম রা. বললেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হতে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. তাকে বললেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কী ধারণা করেন? হাকীম ইবনে হিযাম রা. বললেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এর সামর্থ রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে অক্ষম হও, তবে আমার সহযোগিতা গ্রহণ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বলেন, যুবাইর রা. গাবাস্থিত ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাজারে কিনেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. তা ষোল লাখের বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবাইর রা.-এর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হবে। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে বললেন, তোমরা চাইলে আমি তা তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. -কে বললেন, না। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. বললেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অন্তর্ভূক্ত করতে পার। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, না। তখন আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. বললেন, তবে আমাকে এক টুকরা ভূমি দাও। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত জমি আপনার। রাবী বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. গাবার জমি থেকে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাঁর নিকট গাবার জমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। তারপর তিনি মুআবিয়া রা.-এর কাছে এলেন। সে সময় তাঁর কাছে আমর ইবনে উসমান, মুনযির ইবনে যুবাইর ও আবদুল্লাহ ইবনে যামআ রা. উপস্থিত ছিলেন। মুআবিয়া রা. তাকে বললেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কত অবশিষ্ট আছে ? আবদুল্লাহ রা. বললেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির ইবনে যুবাইর রা. বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আমর ইবনে উসমান রা. বলেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আর আবদুল্লাহ ইবনে যামআ রা. বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মুআবিয়া রা. বললেন, আর কি পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মুআবিয়া রা. বললেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. তাঁর অংশ মুআবিয়া রা.-এর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। তারপর যখন ইবনে যুবাইর রা. তাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে সারলেন তখন যুবাইর রা.-এর পুত্ররা বললেন, আমাদের মীরাস ভাগ করে দিন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হজ্জ মৌসুমে এ ঘোষণা প্রচার না করি যে, যদি কেউ যুবাইর রা.-এর কাছে ঋণ পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের কাছে আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হজ্জের মৌসুমে ঘোষণা প্রচার করেন। তারপর যখন চার বছর অতিবাহিত হল, তখন তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবাইর রা.-এর চার স্ত্রী ছিলেন। এক তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হল। প্রত্যেক স্ত্রী বার লাখ করে পেলেন। আর যুবাইর রা.-এর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দু’লাখ ছিল।