হাদীস নং ২৪৮৫
আবু রাবী সুলাইমান ইবনে দাউদ রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা.থেকে বর্ণিত, মিথ্যা অপবাদকারীরা যখন তাঁর সম্পর্কে অপবাদ রটনা করল এবং আল্লাহ তা থেকে তাঁর পরিত্রতা ঘোষণা করলেন। রাবীগণ বলেন, আয়িশা রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হওয়ার ইচ্ছা করলে স্বীয় সহধর্মিণীদের মধ্যে কুরআ ঢালার মাধ্যমে সফর সঙ্গীণী নির্বাচন করতেন। তাদের মধ্যে যার নাম বেরিয়ে আসত তাকেই তিনি নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এক যুদ্ধে যাওয়ার সময় তিনি আমাদের মধ্যে কুরআ ঢাললেন, তাঁতে আমার নাম বেরিয়ে এল। তাই আমি তাঁর সঙ্গে (সফরে) বের হলাম। এটা পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। আমাকে হাওদার ভিতরে সাওয়ারীতে উঠানো হত, আবার হাওদার ভিতরে (থাকা অবস্থায়) নামানো হত। এভাবেই আমরা সফর করতে থাকলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ যুদ্ধ শেষ করে যখন প্রত্যাবর্তন করলেন এবং আমরা মদীনার কাছে পৌছে গেলাম তখন এক রাতে তিনি (কাফেলাকে) মনযিল ত্যাগ করার ঘোষণা দিলেন। উক্ত ঘোষণা দেওয়ার সময় আমি উঠে সেনাদলকে অতিক্রম করে গেলাম এবং নিজের প্রয়োজন সেরে হাওদায় ফিরে এলাম। তখন বুকে হাত দিয়ে দেখি আযফার দেশীয় সাদা কালো পাথরের তৈরী আমার একটা মালা ছিড়ে পড়ে গেছে। তখন আমি আমার মালার সন্ধানে ফিরে গেলাম, এবং সন্ধান কার্য আমাকে দেরি করিয়ে দিল। ওদিকে যারা আমার হাওদা উঠিয়ে দিত তারা তা উঠিয়ে যে উটে আমি সাওয়ার হতাম, তার পিঠে রেখে দিল। তাদের ধারণা ছিল যে, আমি হাওদাতেই আছি। তখনকার মেয়েরা হালকা পাতলা হত, মোটাসোটা হতা না। কেননা, খুব সামান্য খাবার তারা খেতে পেত। তাই হাওদায় উঠতে গিয়ে তার ভার তাদের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হল না। তদুপরি সে সময় আমি অল্প বয়স্ক কিশোরী ছিলাম এবং তখন তারা হাওদা উঠিয়ে উট হাঁকিয়ে রওনা হয়ে গেলো। এদিকে সেনাদল চলে যাওয়ার পর আমি আমার মালা পেয়ে গেলাম, কিন্তু তাদের জায়গায় ফিরে এসে দেখি, সেখানে কেউ নেই। তখন আমি আমার জায়গায় এসে বসে থাকাই মনস্থ করলাম। আমার ধারণা ছিল যে, আমাকে না পেয়ে আবার এখানে তারা ফিরে আসবে। বসে থাকা অবস্থায় আমার দু’চোখে ঘুম নেমে এলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল, যিনি প্রথমে সুলামী এবং পরে যাকওয়ানী হিসাবে পরিচিত ছিলেন, সেনাদলের পিছনে থেকে গিয়েছিলন। সকালের দিকে আমার অবস্থান স্থলের কাছাকাছি এসে পৌঁছলেন এবং একজন ঘুমন্ত মানুষের অবয়ব দেখতে পেয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। পর্দার বিধান নাযিলের আগে তিনি আমাকে দেখিছিলেন। যে সময় তিনি উট বসাচ্ছিলেন, সে সময় তার ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ শব্দে আমি জেগে গেলাম। তিনি উটের সামনের পা চেপে ধরলে আমি তাঁতে সাওয়ার হলাম। আর তিনি আমাকে নিয়ে সাওয়ারী হাকিয়ে চললেন। সেনাদল ঠিক দুপুরে যখন বিশ্রাম করছিল, তখন আমরা সেনাদলে পৌঁছলাম। সে সময় যারা ধ্বংস হওয়ার, তারা ধ্বংস হল। অপবাদ রটনায় যে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সে হল (মুনাফিকের সরদার) আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। আমরা মদীনায় উপনীত হলাম এবং আমি এসেই একমাস অসুস্থতায় ভুগলাম। এদিকে কিছু লোক অপবাদ রটনাকারীদেরই রটনা নিয়ে চর্চা করতে থাকল। আমার অসুস্থার সময় এ বিষয়টি আমাকে সন্দিহান করে তুলল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরফ থেকে সেই স্নেহ আমি অনুভব করছিলাম না, যা আমার অসুস্থতার সময় সচারাচর আমি অনুভব করতাম। তিনি শুধু ঘরে প্রবেশ করে সালাম দিয়ে বলতেন কেমন আছ? আমি সে বিষয়ের কিছুই জানতাম না। শেষ পর্যন্ত খুব দুর্বল হয়ে পড়লাম। (একরাতে) আমি ও উম্মু মিসতাহ প্রয়োজন সারার উদ্দেশ্যে ময়দান বের হলাম। আমরা রাতেই শুধু সে দিকে যেতাম। এ আমাদের ঘরগুলোর নিকটবর্তী স্থানে পায়খানা বানানোর আগের নিয়ম। জঙ্গলে কিংবা দূরবর্তী স্থানে প্রয়োজন সারার ব্যাপারে আমাদের অবস্থাটা প্রথম যুগের আরবদের মতই ছিল। যাই হোক, আমি এবং উম্মু মিসতাহ বিনতে আবু রূহম হেটে চলছিলাম। ইত্যবসরে সে তার চাদরে পা জড়িয়ে হোচট খেল এবং (পড়ে গিয়ে) বলল মিসতাহ এর জন্য দুর্ভোগ। আমি তাকে বললাম, তুমি খুব খারাপ কথা বলেছ। বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছে, এমন এক লোককে তুমি অভিসাপ দিচ্ছ ! সে বলল, হে সরলমনা ! (তোমার সম্পর্কে) যে সব কথা তারা উঠিয়েছে, তা কি তুমি শুনোনি? এরপর অপবাদ রটনাকারীদেরই সব রটনা সম্পর্কে সে আমাকে অবহিত করল। তখন আমার রোগের উপর রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেল। আমি ঘরে ফিরে আসার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন আছো? আমি বললাম, আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়অর অনুমতি দিন। তিনি (আয়িশা রা.) বলেন, আমি তখন তাদের (পিতা-মাতার) কাছ থেকে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গেলাম। তারপর আমি মাকে বললাম, লোকেরা কি বলাবলি করে? তিনি বললেন, বেটি ব্যাপারটাকে নিজের জন্য হালকাভাবেই গ্রহণ কর। আল্লাহর কসম ! এমন সুন্দরী নারী খুব কমই আছে, যাকে তার স্বামী ভালোবাসে আর তার একাধিক সতীনও আছে ; অথচ ওরা তাকে উত্ত্যক্ত করে না। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ ! লোকেরা সত্যি তবে এসব কথা রটিয়েছে? তিনি বলেন, ভোর পর্যন্ত সে রাত আমার এমনভাবে ভোর হল। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর বিলম্ব দেখে আপন স্ত্রীকে বর্জনের ব্যাপারে ইবনে আবু তালিব ও উসামা ইবনে যায়েদকে ডেকে পাঠালেন। যাই হোক ; উসামা পরিবারের জন্য তাঁর ভালোবাসার প্রতি লক্ষ্য করে পরামর্শ দিতে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কসম (তাঁর সম্পর্কে) ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমরা জানি না, আর আলী ইবনে আবু তালিব রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কিছুতেই আল্লাহ আপনার পথ সংকীর্ণ করেননি। তাকে ছাড়া আরো অনেক মহিলা আছে। আপনি না হয় বাদীকে জিজ্ঞাসা করুন সে আপনাকে সত্য কথা বলবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বারীরাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন। হে বারীরা ! তুমি কি তার মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেয়েছ? বারীরা বলল, আপনাকে যিনি সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম করে বলছি, না তেমন কিছু দেখিনি, এই একটি অবস্থায়ই দেখেছি যে, তিনি অল্পবয়স্কা কিশোরী। আর তাই আটা-খামীর করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সেই ফাঁকে বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে। সে দিনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরিবারকে কেন্দ্র করে যে লোক আমাকে জ্বালাতন করেছে, তার মুকাবিলায় কে প্রতিকার করবে? আল্লাহর কসম, আমি তো আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু জানি না। আর এমন ব্যক্তিকে জড়িয়ে তারা কথা তুলেছে, যার সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমি জানি না আর সে তো আমার সাথে ছাড়া আমার ঘরে কখনও প্রবেশ করত না। তখন সাদ (ইবনে মুআয রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কসম ! আমি তার প্রতিকার করব। যদি সে আউস গোত্রের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দিব; আর যদি সে আমাদের খাযরাজ গোত্রীয় ভাইদের কেউ হয়, তাহলে আপনি তার ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ দিবেন, আমরা আপনার নির্দেশ পালন করব। খাযরাজ গোত্রপতি সাদ ইবনে উবাদা রা. তখন দাঁড়িয়ে গেলেন। এর আগে তিনি ভালো লোকই ছিলেন। আসলে গোত্রপ্রীতির তাকে পেয়ে বসেছিল। তিনি বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কসম ! তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না, সে শক্তি তোমার নেই। তখনি উসায়িদ ইবনুল হুযাইর রা. দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, তুমিই মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কসম ! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করে ছাড়ব। আসলে তুমি একজন মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ হয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছ। এরপর আউস ও খাজরাজ উভয় গোত্রই উত্তেজিত হয়ে উঠল। এমনকি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে থাকা অবস্থায়ই তারা উদ্যত হল। তখন তিনি নেমে তাদের চুপ করালেন। এতে সবাই শান্ত হল আর তিনিও নীরবতা অবলম্বন করলেন। আয়িশা রা. বলেন, সেদিন সারাক্ষণ আমি কাঁদলাম, চোখের পানি আমর শুকালাম এবং ঘুমের সামান্য পরশও পেলাম না। আমার পিতা-মাতা আমার পাশে পাশেই থাকলেন। পুরো রাত দিন আমি কেঁদেই কাটালাম। আমার মনে হল, কান্না বুঝি আমার কলিজা বিদীর্ণ করে দিবে। তিনি বলেন, তারা (পিতা-মাতা) উভয়ে আমার কাছেই বসা ছিলেন, আর আমি কাঁদছিলাম। ইতিমধ্যে এক আনাসারী মহিলা ভিতরে আসার অনুমতি চাইল। আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সেও আমার সঙ্গে বসে কাঁদতে শুরু করল। আমরা এ অবস্থায় থাকতেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করে (আমার কাছে) বসলেন, অথচ যে দিন থেকে আমার সম্পর্কে অপবাদ রটানো হয়েছে। সেদিন থেকে তিনি আমার কাছে বসেননি। এর মধ্যে একমাস কেটে গিয়েছিল। অথচ আমার সম্পর্কে তার কাছে কোন ওয়াহী নাযিল হল না। তিনি বলেন, এরপর হামদ ও সানা পাঠ করে তিনি বললেন, হে আয়িশা ! তোমার সম্পর্কে এ ধরনের কথা আমার কাছে পৌছেছে। তুমি নির্দোষ হলে আল্লাহ অবশ্যই তোমার নির্দোষিতার ঘোষণা করবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ জড়িয়ে গিয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইসতিগফার কর। কেননা, বান্দা নিজের পাপ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তাওবা কবুল করেন। তিনি যখন তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন, তখন আমর অশ্রু বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি এক বিন্দু অশ্রুও আমি অনুভব করলাম না। আমার পিতাকে বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার তরফ থেকে জওয়াব দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আমি বুঝে উঠতে পারি না, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি বলব? আমি তখন অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও খুব বেশী পড়িনি। তবুও আমি বললাম, আল্লাহর কসম ! আমার জানতে বাকী নেই যে, লোকেরা যা রটাচ্ছে, তা আপনারা শুনতে পেয়েছেন এবং আপনাদের মনে তা বসে গেছে, ফলে আপনারা তা বিশ্বাস করে নিয়েছেন। এখন যদি আমি আপনাদের বলি যে, আমি নিষ্পাপ আর আল্লাহ জানেন, আমি অবশ্যই নিষ্পাপ, তবু আপনারা আমার সে কথা বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আপনাদের কাছে কোন বিষয় আমি স্বীকার করি, অথচ আল্লাহ জানেন আমি নিষ্পাপ তাহলে অবশ্যই আপনারা আমাকে বিশ্বাস করে নিবেন। আল্লাহর কসম, ইউসুফ আ.-এর পিতার ঘটনা ছাড়া আমি আপনাদের জন্য কোন দৃষ্টান্ত খুজে পাচ্ছি না। যখন তিনি বলেছিলেন, পূর্ণ ধৈর্য ধারণই আমার জন্য শ্রেয়। আর তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যকারী। এরপর আমি আমার বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করে নিলাম। এটা আমি অবশ্যই আশা করছিলাম যে, আল্লাহ আমাকে নির্দোষ ঘোষণা করবেন। কিন্তু আল্লাহর কসম ! এ আমি ভাবিনি যে, আমার ব্যাপারে কোন ওয়াহী নাযিল হবে। কুরআনে আমার ব্যাপারে কোন কথা বলা হবে, এ বিষয়ে আমি নিজেকে উপযুক্ত মনে করি না। তবে আমি আশা করছিলাম যে, নিদ্রায় আল্লাহর রাসূল এমন কোন স্বপ্ন দেখবেন, যা আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করবে। কিন্তু আল্লাহর কসম ! তিনি তাঁর আসন ছেড়ে তখনও উঠে যাননি এবং ঘরের কেউ বেরিয়েও যায়নি, এরই মধ্যে তাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া শুরু হয়ে গেল এবং তিনি যে রূপ কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতেন, সেরূপ অবস্থার সম্মুখীন হন। এমনকি সে মুহূর্তে শীতের দিনেও তার শরীর থেকে মুক্তার ন্যায় ফোটা ফোটা ঘাম ঝরে পড়ত। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ওয়াহীর সে অবস্থা কেটে গেল, তখন তিনি হাসছিলেন। আর প্রথমে যে বাক্যটি তিনি উচ্চারণ করলেন, তা ছিল এই যে, আমাকে বললেন, হে আয়িশা ! আল্লাহর প্রশংসা কর। কেননা, তিনি তোমাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। আমার মাতা তখন আমাকে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যাও। (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর) আমি বললাম, না আল্লাহর কসম ! আমি তাঁর কাছে যাব না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রশংসাও করব না। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন, যখন আমার সাফাই সম্পর্কে নাযিল হল তখন আবু বকর রা. সিদ্দীক রা. বললেন, আল্লাহর কসম ! নিকটাত্মীয়ার কারণে মিসতাহ ইবনে উসাসার জন্য তিনি যা খরচ করতেন, আয়িশা রা. সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলার পর মিসতার জন্য আমি আর কখনও খরচ করব না। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন : তোমাদের মধ্যে যারা নিয়ামতপ্রাপ্ত ও স্বচ্ছল, তারা যেন দান না করার কসম না করে…………আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। তখন আবু বকর রা. বললেন, আল্লাহর কসম ! আমি অবশ্যই চাই আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। এরপর তিনি মিসতাহ-কে যা দিতেন, তা পুনরায় দিতে লাগলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতে জাহাশকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি বললেন, হে যায়নাব ! (আয়িশা সম্পর্কে) তুমি কি জান? তুমি কি জান ? তুমি কি দেখছ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার কান, আমি আমার চোখের হিফাজত করতে চাই । আল্লাহর কসম তার সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমি জানি না। আয়িশা রা. বলেন, অথচ তিনিই আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। কিন্তু পরহেযগারীর কারণে আল্লাহ তাঁর হিফাযত করেছেন। আবু রাবী রহ…..আয়িশা ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণানা করেছেন। ফুলাইছ রহ……..কাসিম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রা. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।