বুখারি হাদিস নং ২১৫০ – হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আবু বকর সিদ্দীক রা. কর্তৃক (মুশরিকদের) নিরাপত্তা দান এবং তার চুক্তি সম্পাদন।

হাদীস নং ২১৫০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে সেদিন থেকেই আমি আমার পিতা-মাতাকে দীনের অনুসারী হিসাবেই পেয়েছি। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আবু সালিহ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে সেদিন থেকেই আমি আমার পিতা-মাতাকে দীন ইসলামের অনুসারী হিসাবেই পেয়েছি এবং আমাদের এমন কোন দিন যায়নি, যে দিনের দূরপ্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসেননি। যখন মুসলিমগণ কঠিন বিপদের সম্মুখীন হলেন তখন আবু বকর রা. হাবশা অভিমুখে হিজরতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যখন তিনি বারকুল গিমাদ নামক স্থানে এসে পৌঁছলেন তখন ইবনে দাগিনা তার সাথে সাক্ষাত করল। সে ছিল কারা গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবু বকর ! আপনি কোথায় যেতে ইচ্ছা করেছেন ? আবু বকর রা. বললেন, আমার গোত্র আমাকে বের করে দিয়েছে, তাই আমি ইচ্ছা করেছি যে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবো আর আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনে দাগিনা বলল, আপনার মত লোক বেরিয়ে যেতে পারে না এবং আপনার মত লোককে বহিষ্কার করাও চলে না। কেননা আপনি নিঃস্ব কে সাহায্য করেন, আত্মীয়তার বন্ধানকে রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদারি করেন এবং দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহায্য করেন। আমি আপনার আশ্রয়দাতা। কাজেই আপনি মক্কায় ফিরে চলুন এবং নিজ শহরে গিয়ে আপন প্রতিপালকের ইবাদত করুন। তারপর ইবনে দাগিনা আবু বকর রা. কে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল। সে কাফির কুরাইশদের যারা নেতা তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করল এবং তাদেরকে বলল, আবু বকর রা.-এর মত লোক বেরিয়ে যেতে পারে না এবং তার মত লোককে বহিষ্কার করাও চলে না। আপনারা কি এমন একজন লোককে বহিষ্কার করতে চান, যে নিঃস্ব কে সাহায্য করে, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে, অক্ষমের বোঝা বহন করে, মেহমানের মেহমানদারি করে এবং দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহায্য করে। আবু বকর রা. কে ইবনে দাগিনার আশ্রয় প্রদান কুরাইশরা মেনে নিল এবং তারা আবু বকর রা.-কে নিরাপত্তা দিয়ে ইবনে দাগিনা বলল, আপনি আবু বকরকে বলে দিন, তিনি যেন নিজ বাড়ীতে তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত করেন, সেখানে যেন সালাত আদায় করেন এবং তাঁর যা ইচ্ছা তা যেন পড়েন। এ ব্যাপারে তিনি যেন আমাদেরকে কোন কষ্ট না দেন এবং তিনি যেন প্রকাশ্যে সালাত ও তিলাওয়াত না করেন। কেননা, আমরা আশংকা করছি যে, তিনি আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের ফিতনায় লিপ্ত না করেন। ইবনে দাগিনা এসব কথা আবু বকর রা.-কে বলল। আবু বকর রা. নিজ বাড়িতেই তার প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাকেন, নিজ বাড়ী ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ্যে সালাত আদায় এবং কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। ফলে মুশরিকদের স্ত্রী-পুত্ররা তাঁর কাছে ভিড় জমাতে লাগল। তাদের কাছে তা ভাল লাগত এবং তাঁর প্রতি তারা তাকিয়ে থাকত। আবু বকর রা. ছিলেন অতি ক্রন্দন শীল ব্যক্তি। যখন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না।অ এতে কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ঘাবড়িয়ে গেল। তারা ইবনে দাগিনাকে ডেকে পাঠাল। সে তাদের কাছে আসার পর তারা তাকে বলল, আমরা তো আবু বকর রা. -কে এই শর্তে আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়েছিলাম যে, তিনি নিজ গৃহে তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত করবেন। কিন্তু তিনি তা লংঘন করে নিজ গৃহের আঙ্গিনায় মসজিদ বানিয়েছেন এবং (তাতেই) প্রকাশ্যভাবে সালাত আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। এতে আমাদের ভয় হচ্ছে যে, তিনি আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের ফিতনায় লিপ্ত করবেন। কাজেই আপনি তাকে গিয়ে বলুন, তিনি যদি নিজ গৃহে তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত সীমাবদ্ধ রাখতে চান তবে তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি অস্বীকার করেন এবং প্রকাশ্যে এসব করতে চান তবে আপনি তাকে বলুন, তিনি যেন আপনার যিম্মাদারী ফিরিয়ে দেন। কেননা আমরা যেমন আপনার সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা পছন্দ করি না, তেমনি আবু বকর রা. প্রকাশ্যে ইবাদত করাটা মেনে নিতে পারি না। আয়িশা রা. বলেন, তারপর ইবনে দাগিনা আবু বকর রা.-এর নিকট এসে বলল, যে শর্তে আমি আপনার যিম্মাদারী নিয়ে ছিলাম, তা আপনার জানা আছে। হয়ত আপনি সে শর্তের উপর সীমাবদ্ধ থাকুন, নয়ত আমার যিম্মাদারী আমাকে ফেরত দিন। কেননা, কোন ব্যক্তির সাথে আমি নিরাপত্তার চুক্তি করার পর আমার পক্ষ থেকে তা ভঙ্গ করা হয়েছে, এমন একটা কথা আরব জাতি শুনতে পাক তা আমি আদৌ পছন্দ করি না। আবু বকর রা. বললেন, আমি আপনার যিম্মাদারী ফেরত দিচ্ছি এবং আল্লাহর আশ্রয় লাভেই আমি সন্তুষ্ট। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমাকে (স্বপ্নযোগে) তোমাদের হিজরতের স্থান দেখানো হয়েছে। আমি খেজুর বৃক্ষে পরিপূর্ণ একটি কংকরময় স্থান দেখলাম, যা দুটি প্রান্তরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ কথা বললেন, তখন যারা হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ মদীনার দিকেই হিজরত করলেন। আর যারা আবিসিনিয়ায় হিজরত করছিলেন তাদের কেউ কেউ মদীনার দিকে ফিরে গেলেন। আবু বকর রা.-ও হিজরতের জন্য তৈরী হলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আপনি অপেক্ষা করুন। কেননা, আমি নিশ্চিতভাবে আশঅ করছি যে, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হবে। আবু বকর রা. বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনি কি আশা করেন যে, আপনি অনুমতি পাবেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আবু বকর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গী হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজেকে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দুটি উট ছিল, তাদেরকে চার মাস ধরে বাবলা গাছের পাতা খাওয়াতে থাকলেন।