বুখারি হাদিস নং ১১১৪ – নফল সালাত জামাআতে আদায় করা।

হাদীস নং ১১১৪

ইসহাক রহ………ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহমুদ ইবনে রাবী আনসারী রা. আমকে খবর দিয়েছেন যে, (শৈশবে তাঁর দেখা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা তাঁর ভাল স্মরণ আছে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাড়ীর কূপ থেকে (পানি মুখে নিয়ে বরকতের জন্য) তার মুখমণ্ডলে যে দিচ্ছিলেন সে কথাও তার ভাল স্মরণ আছে। মাহমুদ রহ. বলেন, যে, ইতবান ইবনে মালিক আনসারী রা.-কে (যিনি ছিলেন বদর জিহাদে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে উপস্থিত বদরী সাহাবীগণের অন্যতম) বলতে শুনেছেন যে ,আমি আমার কওম বনু সালিমের সালাতে ইমামতি করতাম। আমার ও তাদের (কওমের মসজিদের) মধ্যে বিদ্যমান একটি উপত্যকা। উপত্যকা বৃষ্টি হলে আমার মসজিদ গমনে অন্তরায় সৃষ্টি করত। এবং এ উপত্যকা অতিক্রম করে তাদের মসজিদে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর হত। তাই আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাজির হয়ে আরয করলাম, (ইয়া রাসূলাল্লাহ !) আমি আমার দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি অনুভব করছি (এ ছাড়া) আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আমার একান্ত আশা যা আপনি শুভাগমণ করে (বরকত স্বরূপ) আমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করবেন; আমি সে স্থানটিকে মুসাল্লা (সালাতের স্থানরূপে নির্ধারিত) করে নিব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই তা করব। পরের দিন সূর্যের উত্তাপ যখন বেড়ে গেল, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা. (আমার বাড়ীতে) তাশরীফ আনলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে আমি তাকে স্বাগত জানালাম, তিনি উপবেশন না করেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার সালাত আদায় করা তুমি পছন্দ কর ? যে স্থানে তাঁর সালাত আদায় করা আমার মনঃপূত ছিল, তাকে আমি সে স্থানের দিকে ইশারা করে (দেখিয়ে) দিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন, আমরা সারিবদ্ধভাবে তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তাঁর সালাম ফিরানোর সময় আমরাও সালাম ফিরালাম। এরপর তাঁল উদ্দেশ্যে যে খাযীরা প্রস্তত করা হচ্ছিল তা আহারের জন্য তাঁর প্রত্যাগমনে আমি বিলম্ব ঘটালাম। ইতিমধ্যে মহল্লার লোকেরা আমার বাড়ীতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থানের সংবাদ শুনতে পেয়ে তাদের কিছু লোক এসে গেলেন। এমন কি আমার ঘরে অনেক লোকের সমাগম ঘটলো । তাদের একজন বললেন, মালিক (ইবনে দুখায়শিন) করল কি ? তাকে দেখছি না যে ? তাদের একজন জবাব দিলেন, যে মুনাফিক ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মুহাব্বত করে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : এমন কথা বলবে না। তুমি কি লক্ষ্য করছ না, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারণ করেছে। সে ব্যক্তি বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সমধিক অবগত। তবে আল্লাহর কসম ! আমরা মুনাফিকদের সাথেই তার ভালবাসা ও আলাপ-আলোচন দেখতে পাই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : আল্লাহ পাক সে ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারণ করে। মাহমুদ রা. বলেন, এক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদল লোকের কাছে বর্ণনা করলাম তাদের মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী আবু আইয়্যূব (আনসারী) রা. ছিলেন। তিনি সে যুদ্ধে ওফাত পেয়েছিলেন। আর ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়া রা. রোমানদের দেশে তাদের আমীর ছিলেন। আবু আইয়ূব রা. আমার বর্ণিত হাদীসটি অস্বীকার করে বললেন, আল্লাহ কসম! তুমি যে কথা বলেছ তা যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। ফলে তা আমার কাছে ভারী মনে হল। তখন আমি আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, যদি এ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তিনি আমাকে নিরাপদ রাখেন, তাহলে আমি ইতবান ইবনে মালিক রা.-কে তাঁর কওমের মসজিদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব, যদি তাকে জীবিত অবস্থায় পেয়ে যাই। এরপর আমি ফিরে চললাম এবং হজ্জ কিংবা উমরার নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধলাম। তারপর সফর করতে করতে আমি মদীনায় উপনীত হয়ে বনু সালিম গোত্রে উপস্থিত হলাম। দেখতে পেলাম ইতবান রা. যিনি তখন একজন বৃদ্ধ ও অন্ধ ব্যক্তি কওমের সালাতে ইমামতি করছেন। তিনি সালাত শেষ করলে আমি তাকে সালাম করলাম এবং আমার পরিচয় দিয়ে উক্ত হাদীস সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি প্রথমবারের মতই অবিকল হাদীস খানা আমাকে শুনাইলেন।