বিষাণগড়ের সোনা – ২৫

২৫ 

বেঞ্চিতে নয়, নদীর একেবারে ধার ঘেঁষে ঘাসের উপরে আমরা গোল হয়ে বসেছি। ভাদুড়িমশাই একটা সিগারেট ধরালেন, চুপচাপ টানলেন কিছুক্ষণ, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কাল রাত্তির থেকেই তো কথা বলবার জন্যে ছটফট করছেন, অনেক কষ্টে আপনাকে চুপ করিয়ে রেখেছি। তা এইবার বলুন কী জানতে চান?” 

বললুম, “জানতে তো কত কিছুই চাই। কিন্তু সব কি আর আপনি বলবেন?” 

“এখন আর কোনও বাধা নেই, এক-এক করে প্রশ্ন করুন। সরস্বতী আর সুমঙ্গল সবই জানে। ইন্ ফ্যাক্ট, ওরা সাহায্য না করলে আর যেমন-যেমন বলেছি, সেই মতো প্লে-অ্যাক্টিং করে না গেলে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হত না। সুতরাং কোনও সংকোচ করবেন।” 

বললুম, “জঙ্গল থেকে পুরন্দর মিশ্র যে শিবলিঙ্গ নিয়ে এসেছিলেন, মন্দিরে কি সেটিই আজ প্রতিষ্ঠিত হল?” 

“না, তা হয়নি।” 

“সেটা আমিও বুঝতে পেরেছি। চোখের সামনে দেখলুম যে, কলকাতা থেকে আমি যা নিয়ে এসেছি, স্যুটকেস খুলে সেটিকেই আজ বার করে এনে আপনি জঙ্গলের সেই বিগ্রহ বলে চালিয়ে দিলেন। আর তা ছাড়া, বিগ্রহ তো সবসুদ্ধ তিনটি। একটি. পুরন্দর মিশ্র এনেছিলেন, একটি আপনি এনেছেন, আর একটি এনেছি আমি। তার মধ্যে দুটির হিসেব পাওয়া যাচ্ছে। একটি দোতলায় আপনার স্যুটকেসের মধ্যে রয়েছে, আর একটি আজ প্রতিষ্ঠিত হল। তৃতীয় বিগ্রহটি তা হলে গেল কোথায়?” 

“সেটি সত্যিই চুরি গিয়েছে!” 

“তার মানে? কখন চুরি হল? কে চুরি করল?” 

ভাদুড়িমশাই বললেন, “চুরি হয়েছে সেই সময়ের মধ্যে, নাতিকে নিয়ে যশোমতী দেবী যখন বৈঠকখানা-ঘরে বসে ছিলেন। এই হল আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে জানাই, সেটি চুরি করেছে ভুপিন্দর সিং। তবে, আবার বলি, আমার বিশ্বাস, যশোমতী দেবী এই চুরির ব্যাপারে কিচ্ছু জানেন না। … কী রে সরস্বতী, আমি কি ভুল বলছি?” 

“না, বড়দা, আপনি ঠিকই আঁচ করেছিলেন।” সরস্বতী বলল, “আপনার কথামতো উপর থেকে আমি গেটের দিকে নজর রেখেছিলুম তো। রানি-মা’র সঙ্গে তাঁর যে নাতিটি এসেছিল, সে ভুপিন্দারই বটে।” 

“আঁচ করেছিলুম নামের মিল দেখে। রূপেন্দ্রনারায়ণের ছেলে ভূপেন্দ্রনারায়ণ। দিল্লিতে ওই নাম শুনেই আমার সন্দেহ হয়েছিল, বিষাণগড়ের জঙ্গলে আসতে যার এত আগ্রহ আর নাম যার ভুপিন্দর, সে বিষাণগড়ে. সেই ছোটকুমার রূপেন্দ্রনারাণের ছেলে নয় তো? তার উপরে যখন শুনলুম, সোনার খোঁজে তাকে সাহায্য না-করলে সে তোর ছেলের উপরে হামলা করবে বলে ভয় দেখিয়েছে, তখন সন্দেহটা আরও পাকা হল। সরস্বতী, একটা কথা তোকে বলা হয়নি। কিরণবাবু কেন বিষাণগড়ে ফিরে এসেও আবার চলে গিয়েছিলেন জানিস। রূপ তো ওঁকে দু-চক্ষে দেখতে পারত না, প্রথম থেকেই ওঁর উপরে খাপ্পা হয়ে ছিল।” 

সরস্বতী বলল, “সে তো পাগল ছিল শুনেছি। ভাইয়া, আপনি কি সেই পাগলের ভয়ে বিষাণগড় ছেড়েছিলেন?” 

ভাদুড়িমশাই বললেন, “না রে, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। রূপ পাগল ছিল ঠিকই, বাট অ্যাট দ্য সেম টাইম, দেয়ার ওয়াজ আ মেথড ইন হিজ ম্যাডনেস। এটা সে খুব ভালই জানত যে, কিরণবাবুর দুর্বলতা আসলে কোথায়। তাই একদিন তাঁর দফতরে ঢুকে তাঁকে একলা পেয়ে শাসিয়ে গেল যে, তিনদিনের মধ্যে যদি তিনি বিষাণগড় ছেড়ে চলে না যান, তো লছমিকে সে খুন করবে। বাস্, তারপরে আর কিরণবাবু কোন ঝুঁবি নেননি। কথাটা একমাত্র আমাকে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারেন, কিন্তু ওই দুধের বাচ্চার জীবনের ঝুঁকি তিনি নিতে পারবেন না। পরদিন সকালেই তিনি বিষাণগড় ছেড়ে চলে যান।” 

সরস্বতী বলল, “মা-একথা জানে?” 

বললুম, “এতদিন একমাত্র ভাদুড়িমশাই জানতেন, এবারে তোমরা জানলে। কিন্তু না, আর কাউকে জানাবার দরকার নেই।” 

ভাদুড়িমশাই বললেন, “এই রে, আবহাওয়াটা বড্ড ভারী হয়ে যাচ্ছে। তো যা বলছিলুম, ভুপিন্দর তোর ছেলের কথা বলে তোকে শাসিয়েছে শুনেই আমার মনে পড়ে গেল যে, রূপও তো একটা বাচ্চা মেয়েকে মারবে বলে ভয় দেখিয়েছিল। এটা কি নেহাতই একটা কো-ইনসিডেন্স? সেইজন্যেই তোদের দিল্লির বাড়িতে কিরণবাবুকে আমি বলেছিলুম যে, বিষাণগড় আর দিল্লির মধ্যে কোথাও কোনও লিংক আছে কি না, সেটা একটু ভেবে দেখুন।” 

আমার ধাঁধা তবু কাটছিল না। বললুম, “কিন্তু ভুপিন্দারের লোভ তো সোনার। সে বিগ্রহ চুরি করল কেন?” 

সরস্বতী বলল, “বিগ্রহের ব্যাপারটা ভাইয়াকে ভাল করে বুঝিয়ে বলুন বড়দা।” 

ভাদুড়িমশাই বললেন, “জঙ্গল থেকে পুরন্দর যে শিবলিঙ্গ নিয়ে এসেছিলেন, সেটি কাল রাত্তিরেই আমি বৈঠকখানা থেকে সরিয়ে তার জায়গায় ব্যাঙ্গালোর থেকে আনা বিগ্রহটি বসিয়ে রাখি। ভুপিন্দার সেটিই চুরি করেছে। কিন্তু লছমি তা জানে না। লছমি জানে, আদৌ কোনও বিগ্রহ কেউ চুরি করেনি। তাকে আমি বলি, রানি-মা তাঁর নাতিকে নিয়ে বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে যাবার খানিক বাদে বিগ্রহটি আমিই সরিয়ে রেখেছি; তারপর কলকাতা থেকে আপনার আনা বিগ্রহটি নিয়ে এসে বলি, এটিই সেই বিগ্রহ। আসল ব্যাপারটা দয়া করে আর লছমিকে আপনি জানাবেন না। আপনার দিদিকেও না।” 

বললুম, “তা নিশ্চয় জানাব না। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর এখনও পাইনি। আপনার আনা বিগ্ৰহ ভুপিন্দর চুরি করল, আর আমার আনা বিগ্রহ মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হল। পুরন্দর মিশ্রের আনা সেই ওরিজিন্যাল বিগ্রহটি তা হলে কোথায়?”

“সেটি রয়েছে দোতলায়, আমার স্যুটকেসে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “কাল রাত্তিরে সেই ওরিজিন্যাল বিগ্রহটিকেই আপনি ব্যাঙ্গালোর থেকে আনা বিগ্রহ বলে ভেবেছিলেন।” 

“ঠিক আছে। কিন্তু ভূপিন্দার চলে যাবার পরে ওটিকেই আজ কেন প্রতিষ্ঠা করা হল না?”

“এইজন্যে হল না যে, ওটি পাথরের বিগ্রহ নয়।” ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “দিল্লিতে সরস্বতীর বাড়িতে ওটি যখন আমি হাতে নিয়ে পরীক্ষা করি, তখনই তা আমি টের পেয়েছিলুম। আরে মশাই, পাথর অত ভারী হয়না। ওটি ধাতুর বিগ্রহ, যার উপরে মিশকালো কোনও রঙের প্রলেপ লাগানো হয়েছে। সেই ধাতুও, যা আমি সন্দেহ করে।ছলুম, তা-ই, অর্থাৎ সোনা। কাল রাত্তিরে আপনি ঘুমিয়ে পড়বার পর বিগ্রহটিকে একটু ঘষতেই ওর কালোরঙের ঘোমটার আড়াল থেকে তিনি বেরিয়ে এলেন, পুরন্দর মিশ্রের ভাষায় যাঁর রং একেবারে কাঁচা হলুদের মতো।” 

বিস্ময়ে আমার বাস্ফূর্তি হচ্ছিল না। অস্ফুট গলায় বললুম, “এই ব্যপার?” 

“হ্যাঁ মশাই, এই হচ্ছে ব্যাপার। রানি-মা’র কাছে যখন বিগ্রহ-প্রতিষ্ঠার চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে এই উপলক্ষে এখানে আসতে অনুরোধ করা হয়, তখন আমারই নির্দেশমতো সেই চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, পুরন্দর মিশ্র বিষাণগড়ের জঙ্গলে এটি পেয়েছিলেন। ভুপিন্দরের তখনই সন্দেহ হয় যে, এটি নিশ্চয় সোনার। পুরন্দর যে জঙ্গলে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন, সেটাও সে কারও কাছে শুনে থাকবে তার এমনও মনে হয়ে থাকবে যে, আসলে তিনি যেতেন সোনার খোঁজে। বাস্, দুয়ে দুয়ে চার করে সে তার ঠাকুমার সঙ্গে এখানে চলে এল।” 

বললুম, “কিন্তু সে তো বুঝতে পারবে যে, যা সে চুরি করেছে, তা সোনা নয়, ত’ন সে আবার সরস্বতীর ছেলের উপরে হামলা করবে না তো?” 

“যাতে না করতে পারে, তার ব্যবস্থাও হচ্ছে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “সরস্বতীকে কালই জিজ্ঞেস করেছিলুম, হ্যাঁ রে, এই সোনা দিয়ে তুই কী করবি? তা ও বলল, যা ও রোজগার করেনি, তা ও চায় না। আর তা ছাড়া, ক্রানিতেও ওটা ওর প্রাপ্য নয়, ওটা সরকারের, তাই সরকারকেই দিয়ে দেওয়া হোক। তো আমি ঠিক করেছি, এই সোনা নিয়ে সরস্বতীকে সঙ্গে করে আমি দিল্লিতে গিয়ে খনিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। তাঁকে বুঝিয়ে বলব, সরস্বতী মিথ্যে দাবি করেনি, মধ্যপ্রদেশের জমিতে সত্যিই প্রচুর সোনা রয়েছে, এবারে নতুন করে আবার তার খোঁজ শুরু হোক। সরকার যদি চায় তো সরস্বতী এ-ব্যাপারে তাদের যথাসাধ্য সাহায্য করবে।” 

মনটা খুব হালকা হয়ে গিয়েছিল। বললুম, “ওইসঙ্গে ভুপিন্দরের ব্যাপারটাও সরকারকে জানিয়ে রাখবেন, যাতে কিনা সরস্বতীকে ও আবার ভয় দেখাবার সাহস না পায়।” 

সুমঙ্গল বলল, “ওটা নিয়ে ভাববেন না। দিল্লি-পুলিশে আমার বন্ধু-বান্ধব কিছু কম নেই। অলরেডি এই থ্রেটের ব্যাপারটা আমি তাঁদের জানিয়েছি। ভূপিন্দারের উপরে তারা নজরও রেখেছে।” 

ভাদুড়িমশাই বললেন, “আর কোনও প্রশ্ন করবেন?”

বললুম, “একটা কথা তখনও আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি, পরেও জিজ্ঞেস করতে সংকোচ হয়েছে। কিন্তু আজ আর জিজ্ঞেস না করে পারছি না। কী ছিল সেই ফোটোগ্রাফে, যা দেখে কপুরসাহেবের মুখ সে-রাতে ছাইয়ের মতো সাদা হয়ে গিয়েছিল?” 

“আর বলবেন না! নোংরা সব ফোটোগ্রাফ, তার প্রত্যেকটার উপরে লেখা ‘প্রেজেন্টেড টু মাই বিলাভেড পামেলা’। তার নীচে আবার সই করেছে! মশাই, লোকটা শুধু পাজি নয়, পারভার্ট! অথচ যশোমতী কিনা ওকে দেখেই একদিন ভুলেছিলেন! কী হয়েছিল,তা আর আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, যাবার আগে শিউশরণ ত্রিপাঠীই আপনাকে তার আভাস দিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, যশোমতী ওর ফাঁদে পড়ে সারাক্ষণ ছটফট করেছেন, কিন্তু পুরনো স্ক্যান্ডালটা পাছে ফাঁস হয়ে যায়, তাই ভয়ে কখনও কিছু বলতে পারেননি। চাকরি যাবার ভয়ে পামেলা-ই কি কিছু বলতে পারত? কিন্তু লোকটাকে সে ঘেন্না করত ঠিকই। তা নইলে আর ওই ফোটোগ্রাফগুলি সে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে কেন?” 

সরস্বতী বলল, “একটা কথা জিজ্ঞেস করি, বড়দা। কলকাতায় তো গত নভেম্বর মাসে আপনার সঙ্গে দেখা করেছিলুম। তখন আপনি একজনের নাম করে বলেছিলেন যে, তাঁর কথা জানলে হয়তো আমার দাদামশাইয়ের ব্যাপারটা আমি আর-একটু ভাল বুঝতে পারতুম। নামটা আমার মনেও আছে। রাধাগোবিন্দ চন্দ্র। কে তিনি? আমার দাদামশাইয়ের কোনও বন্ধু?” 

“না রে,” ভাদুড়িমশাই বললেন, “বন্ধু নন, তবে একই গোত্রের মানুষ। তোর দাদামশাই এই শতকেই জন্মেছেন, আর রাধাগোবিন্দ জন্মেছিলেন গত শতকে। তোর দাদামশাই ইউ. পি.-র মানুষ, আর রাধাগোবিন্দ বাঙালি। কিন্তু ও-সব ভুলে গিয়ে এবারে মিলটা দ্যাখ। রাধাগোবিন্দ যেমন কলেজে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাস্ট্রনমি-বিদ্যেটাকে রপ্ত করবার সুযোগ না-পেয়েও হাতেকলমে সব শিখে নিয়েছিলেন, আর জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও নেহাত কম পাননি, পুরন্দর মিশ্রও তেমনি জিওলজির ছাত্র ছিলেন না, কিন্তু ভূ-বিজ্ঞানের খবর হয়তো অনেক তকমা-ধারী জিওলজিস্টের চেয়ে তিনি কিছু বেশিই রাখতেন। আসলে তাঁরও শিক্ষা ছিল হাতে-কলমের শিক্ষা। বেশিদিন বাঁচলেন না তো, বাঁচলে হয়তো তাঁকে নিয়েও আজ হইচই পড়ে যেত। না না সরস্বতী, তোর কৃতিত্বকে আমি একটুও খাটো করে দেখছি না, কিন্তু এটাও ভেবে দ্যাখ যে, সোনার সন্ধানটা তিনিই প্রথম পেয়েছিলেন।”

সরস্বতীর চোখ যেন আনন্দে জ্বলজ্বল করছিল। বলল, “বড়দা, আপনি বাঁচালেন! বিগ্রহের কথাটা অবশ্য বলব না, কিন্তু বাদবাকি যা-কিছু আপনি বললেন, সবই আমি দিদাকে বলব। আজই বলব। উঃ, দিদা যে কী খুশি হবে!” 

ভাদুড়িমশাই বললেন, “নিশ্চয়ই জানাবি। তবে কিনা তোর দিদাকে তো আমরা ভালই চিনি। আমার ধারণা, তিনি সবই জানেন, কিন্তু কিছু বলেন না। … কিন্তু আর নয়, সন্ধে হয়ে এল, এল এবারে ফেরা যাক।” 

ফেরার পথে ভাদুড়িমশাই হঠাৎ আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। বললেন, “আচ্ছা মশাই, এবারে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। কুলদীপ সিংকে আপনি এত অপছন্দ করেন কেন? পামেলাকে বিয়ে করেনি বলো? কিন্তু কী করে সেটা করবে? ওর বুড়ি-মা’র আপত্তি ছিল যে। আসলে লোকটা বড়ই মাতৃভক্ত, মা’কে দুঃখ দিতে চায়নি বলেই বিয়েটা করে উঠতে পারল না। কিন্তু নিজেও যে আর-কাউকে বিয়ে করেনি, সেটা ভুলে যাচ্ছেন কেন? আর হ্যাঁ, যদি বলেন যে, ওর ওই গোঁফটার জন্যে ওকে আপনার খারাপ লাগত, তা হলে জেনে রাখুন, ওটা নকল-গোঁফ। আসলে ওর গোঁফ-দাড়ি কিচ্ছু নেই। ওই যাকে মাকুন্দে বলা হয়, তাই আর কি।” 

বললুম, “কিন্তু ওই নকল-গোঁফে চাড়া দিয়ে লোকটা আমার উপরে হম্বিতম্বিও কিছু কম করত না।” 

“তা তো করবেই। কেন করত জানেন? যাতে কেউ না বুঝতে পারে যে, আসলে ও আপনার বন্ধু। ও যে রূপের হয়ে কথা বলত, তারও ওই একই কারণ। ও খুব ভালই জানত যে, কপুর সাহেবের বিশ্বাসভাজন হবার ওটাই একমাত্র পথ। তখন স্বীকার করিনি, পরেও আপনাকে জানানো হয়নি যে, কপুরসাহেবের হুকুমে যখন আপনার খাবারে বিষ মেশাবার ব্যবস্থা করা হয়, ফোন করে ও-ই তখন আপনাকে সতর্ক করে দিয়েছিল। গলাটা একটু পালটে নিয়েছিল, যাতে আপনি বুঝতে না পারেন যে, কে ফোন করেছে। ব্যাপারটা আমি জানতুম। কিন্তু ইচ্ছে করেই আপনার কাছে সেদিন না-জানার ভান করি।” 

অবাক হয়ে বললুম, “সে কী, এতে তো ওঁরও বিপদ ছিল। এ-কাজ উনি করতে গেলেন কেন?”

“বা রে, আপনাকে তো আমি বলেইছিলুম যে, প্যালেসে আমাদের লোক আছে। কী, বলিনি?”

“হ্যাঁ, তা বলেছিলেন বটে।” 

একগাল হেসে ভাদুড়িমশাই বললেন, “তা হলে এবার জেনে রাখুন, হি ওয়াজ আওয়ার ম্যান ইন দ্য প্যালেস।” 

রচনাকাল : ১৩৯৭