বিশের কাঁটা – ৮

আট

পরদিন। শনিবার সকাল। প্রাতরাশের টেবিলে আজ কৌশিক অনুপস্থিত। কিন্তু রানী দেবী যোগদান করতে পেরেছেন। ডাক্তার ডাকতে হয়নি। টোকা-ওযুধেই সামলে নিয়েছেন। বাসু সুজাতাকে প্রশ্ন করলেন, সাত-সকালে তোমার কর্তাটি কোথায় গেল?

সুজাতা টোস্টে জ্যাম মাখাতে মাখাতে বললে, সাত-সকাল নয় মামু, ছয়-সকাল! বেড-টি পর্যন্ত না খেয়েই বেরিয়েছে।

–আমার গাড়িটা নিয়ে তো?—জানতে চাইলেন বাসু।

—না, ওর মোটর-সাইকেলে।

ইতিমধ্যে কৌশিক একটা মোটর-বাইক কিনেছে। আশা রাখে, বছর-দুয়েকের মধ্যেই সেটা বেচে দিয়ে একটা গাড়ি কিনবে। ওদের বিজনেস বেশ জমে উঠেছে। কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গে ক্রাইমের বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে।

বাসুর ‘এগ-পোচ’ খাওয়ার সুদিন গেছে। কোলেস্টেরল। কিছুটা ডাক্তারবাবুর পরামর্শে, কিছুটা রানী দেবীর দাপটে। তিনি ফলের পাত্রটা টেনে নিলেন, —পেঁপে, কলা, ঘরে-করা ছানা, জ্যামমাখানো টোস্ট আর বিস্কিট—অখ্যাদ্য! উপায় নেই। বললেন, এবার বল, সুজাতা, কাল রাত্রে কৌশিক আমার মক্কেলকে কোথায় নামিয়ে দিয়ে এল।

—হোটেল ‘সোনার বাঙলা’, মনোহরপুকুর রোডে। নতুন হোটেল। রুম 3/3। এই তার কার্ড। টেলিফোন ঘরে-ঘরে নেই। তবে রিসেপশানে ফোন করলে বোর্ডারদের ডেকে দেয়।

বাসু কার্ডখানা নিয়ে ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বরটা দেখে রানীর দিকে সেটা বাড়িয়ে ধরলেন। কথাবার্তা কিছু হলো না। রানী জানেন, তাঁর শ্রুতিধর স্বামীর আর প্রয়োজন হবে না ঐ ঠিকানা বা টেলিফোন নম্বরের। তিনি সেটা হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করলেন। বাসু বললেন, বিকালে মাধবীর সঙ্গে একবার দেখা করতে হবে।

বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ একটা টেলিফোন এল। রানী দেবী আজ রিসেপশানে বসেছেন। তিনিই ধরলেন। ফোন করছে নিউ আলিপুর পোস্ট-অফিস থেকে : মিস্টার পি. কে. বাসুর নামে একটা আর্জেন্ট টেলিগ্রাফ আছে। পড়ে শোনাব, না লোক মারফৎ পাঠাব? আমাদের টেলিগ্রাফ পিয়ন দুজনেই বেরিয়ে গেছে। আজ আবার শনিবার তো। তাই জানতে চাইছি।

রানী বললেন, পড়েই শোনান?

—’লীভিং অ্যাজ পার য়োর ইন্সট্রাকসান্স এএএ চেক দ্যাট অ্যালেবাঈ’ এছাড়া প্রেরকের নামের শুধু আদ্য-অক্ষর ‘M’–এম ফর মার্ডার।

রানী চমকে ওঠেন, কী বললেন? ‘এম ফর…?’

—আয়াম সরি। আই মীন ‘এম ফর ম্যাড্রাস!’ কাল রাত্রে হিচককের ঐ বইটা ভি.সি.পি – তে দেখেছি। তাই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।

রানী টেলিফোন মেসেজটা একটা চিরকুটে লিখে বিশের হাতে লাইব্রেরি ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। বাসু সেখানে বুঁদ হয়ে কী একটা বই পড়ছিলেন। সেটা হাতে নিয়েই উঠে এলেন এঘরে। রানীকে বললেন, এর মানেটা কী হলো? এ কেস্-এ অ্যালেবাঈ বলতে তো ঐ একটাই—সুরঙ্গমা পান্ডের। মানে ওর কাজিন ব্রাদারের। সেটা তো যাচাই হয়ে গেছে। তাছাড়া লীভিং অ্যাজ পার য়োর ইন্সট্রাকসান্স’ মানেটা কি হলো? ধর তো ‘সোনার বাঙলা’ হোটেলকে। রুম থ্রি-বাই-থ্রি। ‘এম’ তো নির্ঘাৎ ‘মাধবী’– হোটেলের নাম ‘মঞ্জরী’!

পরপর সাতটা নম্বর ডায়াল করে রানী কী-যেন শুনলেন। তারপর টেলিফোনেই বললেন, ঐ থ্রি/থ্রি ঘরে একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন? …

তারপর ও-প্রান্তের প্রত্যুত্তরটা শুনে নিয়ে টেলিফোনটা ক্র্যাডেলে নামিয়ে রাখলেন। বাসু- সাহেবের দিকে ফিরে বললেন, হোটেল-রিসেপশান বলছে, আজ সকাল দশটা দশে ঔ থ্রি/থ্রি- রুমের বোর্ডার মঞ্জরী বড়ুয়া চেক-আউট করে বেরিয়ে গেছেন। কোনো ফরোয়ার্ডিং অ্যাড্রেস্ না-রেখে। সম্ভবত কোনো নার্সিহোমে।

—নাসিংহোমে? কেন? কী হয়েছে মাধুর?

—রিসেপশান জানে না। বাচ্চা-টাচ্চা হবে বোধহয়।

বাসু শুধু বললেন, যা-বাব্বা!

রানী বলেন, তুমি নিশ্চয় বলেছিলে, হোটেল থেকে এক পাও না বার হতে! আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, তোমার যতগুলি ঐ বয়সের ক্লায়েন্ট এসেছে তাদের কেউই তোমার কথা শোনে না। এটা বোধহয় এ-যুগের ঐ ‘উইমেন্স-লিব’-এর হাওয়া।

বাসু বললেন, অহেতুক মাথা গরম করে তো লাভ নেই। স্বয়ং সীতা দেবীই লক্ষণের গণ্ডী মানেননি। তিনি ছিলেন ত্রেতা যুগের। ‘উইমেন্স-লীব্’-এর হাওয়াটা তখনো চালু হয়নি। তুমি বরং এই নম্বরটা একবার ডায়াল করে দেখ তো?

ডেস্কপ্যাডে পর পর সাতটা সংখ্যা লিখে দিলেন। এটা সঞ্চিত ছিল ওঁর মস্তিষ্কের কোন গ্রে-সেল এর খাঁজে! ঐ সাতটা গাণিতিক সংখ্যার পর্যায়ক্রমে কেউ ওঁকে মুখে বলেনি, লিখে জানায়নি। তবে ওঁর উপস্থিতিতে একটি তরুণী তার ম্যানিকিওর-করা আঙুলে ধীরে ধীরে টেলিফোন-যন্ত্রের ‘দশচক্রে’ ডায়াল করেছিল গতকাল রাত্রে। একবারমাত্র তা প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছিল বৃদ্ধের। তাই ভোলেননি।

রিঙিং-টোন হতেই রানী যন্ত্রটা বাড়িয়ে ধরলেন বাসু-সাহেবের দিকে। একটু পরেই ও প্রান্ত থেকে শোনা গেল, ইয়েস। ভার্গব স্পিকিং

বাসু বললেন, মিস্টার রামলগন ভার্গব, আর্কিটেক্ট?

—ইয়েস। আপনি কে?

—ক্লায়েন্ট। সল্টলেক সেক্টার থ্রি-তে একটা চার কাঠা প্লটে বাড়ির প্লান-ডিজাইন করাতে চাই। ডিটেইলস্ সাক্ষাতে। আপনি কখন টাইম দিতে পারবেন?

—আমি বর্তমানে ফ্রি। আপনি কোথা থেকে বলছেন? কতক্ষণ লাগবে আমার অফিসে আসতে?

বাসু ওর ঠিকানাটা জেনে নিয়ে বললেন, আধঘন্টার মধ্যেই আসছি।

.

আধঘন্টার মধ্যেই রামলগন ভার্গবের ডেরায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। ডুপ্লেক্স-টাইপ দ্বিতল বাড়ি। অর্থাৎ একতলায় তাঁর অফিস, দ্বিতলে রেসিডেন্স। অবশ্য বর্তমানে ভার্গব-গৃহিণী আছেন একটি নার্সিংহোমে। সন্তান গরবিনী। কম্বাইন্ড-হ্যান্ডের মাধ্যমে দিন-গুজরান করছেন রামলগন। বাসু গাড়ি পার্ক করে এসে বেল বাজাতে রামলগন তাঁকে নিয়ে এসে বসালেন তাঁর চেম্বারে। ওঁর কার্ড দেখে বললেন, ইয়েস, মিস্টার বাসু। আপনি কি আপনার প্লটের প্লানটা সঙ্গে করে এসেছেন?

বাসু বললেন, না! সল্ট লেক-এ আমার কোনো বাড়ি তৈরি করার প্রস্তাব আপাতত নেই!

ভার্গব রীতিমতো বিস্মিত হয়ে বলে, এক্সকিউজ মি স্যার, আপনি কি একটু আগে—

—ইয়েস! আমিই ফোন করে আপনার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্টটা করেছিলাম, এই আধঘন্টা খানেক আগে। সম্পূর্ণ ভিন্ন হেতুতে। না হলে আপনি আমার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতেন না। আমার কার্ড দেখেই বুঝেছেন যে, আমি একজন ক্রিমিনাল-সাইড ব্যারিস্টার! আমি এসেছি একটা ‘মার্ডার কেস’-এর তথ্য সংগ্রহ করতে!

ভার্গব চাপা গর্জন করে ওঠে—হাউ ডেয়ার য়ু…?

বাসু তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলেন, সফ্টলি মিস্টার ভার্গব! আস্তে কথা বলুন। আপনি কি এটা উপলব্ধি করেছেন যে, আমি একটা পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে লালবাজার হোমিসাইডক্সোয়াডে টেলিফোন করার আধঘন্টার ভিতর একটা পুলিশভ্যান এখানে পৌঁছে যাবে? এবং ঐ বাংলা প্রবচনটা কি আপনার জানা আছে? ‘ব্যাঘ্রস্পর্শে অষ্টাদশ বিস্ফোটক!’

দুরন্ত বিস্ময়ে ভার্গব শুধু নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে। কথা যোগায় না তার মুখে।

বাসু বলেন, ইয়েস। আপনার বিরুদ্ধে চার্জ হবে : ‘অ্যান অ্যাসেসরি আফটার দ্য ফ্যাক্ট’। আপনি জেনে-শুনে একজন হত্যাকারীকে ফল্স্ অ্যালেবাঈ দিচ্ছেন।

—হত্যাকারী?

—একজ্যাক্টলি!

–কে সে?

—আপনার গার্ল ফ্রেন্ড সুরঙ্গমা পান্ডে, ইফ্ শী নট বি য়োর কাজিন।

—কী করেছে সুরঙ্গমা?

—মার্ডার! আপনাকে অ্যালেবাঈ রেখে। কাল রাতে সওয়া নয়টা নাগাদ একটা টেলিফোন পেয়েছিলেন, নিশ্চয় মনে আছে আপনার—পি.জি. হাসপাতালের এর্মাজেন্সি থেকে? ওটা আমিই করেছিলাম। হাসপাতাল থেকে নয়। ঐ অ্যালেবাঈটা ভেরিফাই করতে।

রামলগন প্রায় দশ সেকেন্ড নির্বাক কী যেন ভাবল। তারপর বলল, কে খুন হয়েছে?

—বেটার আস্ক য়োর কাজিন সিস্টার।

রামলগন দ্বিরক্তি না করে টেলিফোনটা তুলে নিয়ে কী যেন কথোপকথন করল। তারপর ধারক-অঙ্গে যন্ত্রটা নামিয়ে রেখে বললে, সুরঙ্গমা জামশেদপুরে ফিরে গেছে।

—ন্যাচারালি। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে।

ভার্গব পুনরায় বলে, কিন্তু খুনটা হয়েছে কে?

—বলছি! তার আগে আমার কতকগুলো প্রশ্নের জবাব দিন। প্রথম কথা, সুরঙ্গমার অনুরোধে আপনি তাকে একটা ফল্স্ অ্যালেবাঈ দিতে রাজি হয়েছিলেন। তাই নয়?

—সার্টেনলি নট!

—অলরাইট। কাল সন্ধ্যেবেলা কোথায় থিয়েটার দেখলেন?,

—অ্যাকাদেমি অব ফাইন আর্টস-এ।

—কী ড্রামা?

—’আলোকছন্দার পুত্র-কন্যা’—মনোজ মিত্রের।

—টিকিট দুটো কেটেছিল কে? কবে?

—আমিই। বুধবার।

—আপনার স্ত্রী তো নার্সিংহোমে। তার বাচ্চা হয়েছে কবে?

—দ্যাটস্ নান্ অব্ য়োর বিজনেস।

—অলরাইট। কাল আপনি সুরঙ্গমাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন, না কি সে নিজেই ‘হল’-এ চলে এসেছিল।

—সে নিজেই ‘হল’-এ চলে এসেছিল।

—তারপর? শো ভাঙার পর? যে যার বাড়ি চলে গেলেন?

—নো, স্যার! আমি ওকে ট্যাক্সি করে ওর ইন্টালি অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরি।

-–ট্যাক্সি করে কেন? আপনি গাড়ি নিয়ে যাননি?

—না। গাড়িটা কাল সকালে স্টার্টিং-ট্রাবল দিচ্ছিল। টিউনিং করতে দিয়েছিলাম।

—সে কথাটা আপনার কাজিন সিস্টারকে জানাননি?

—হোয়াট ডু য়ু মীন?

—কাল সুরঙ্গমা আমাকে জানিয়েছে, থিয়েটার ভাঙার পর আপনি তাকে নিজের গাড়িতে ইন্টালির বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। ট্যাক্সিতে নয়।

ভার্গব নতনেত্রে চুপ করে রইল।

কাল আপনারা দুজনে একত্রে থিয়েটার দেখেননি, তাই নয়?

ভার্গব মুখটা উঁচু করল। বলল, কে খুন হয়েছে, আদৌ কেউ খুন হয়েছে কি না তা আপনি এখনো বলেননি।

বাসু পাইপ-পাউচ বার করে টেবিলে রাখলেন। বললেন, আপনার টেলিফোনে এস.টি.ডি. নিশ্চয় আছে। জামশেদপুরে একটা টেলিফোন করুন না? বোনটা নিরাপদে পৌঁছাল কিনা সেটাও তো জানা দরকার!

ভার্গব ইতস্তত করল। তারপর টেলিফোন ডাইরেক্টরিটা তুলে নিল।

—কী হলো? নম্বরটা মনে নেই?

—নম্বরটা আছে, জোনাল কোড নম্বরটা চেক করব।

দেখে নিয়ে ভার্গব ধীরে ধীরে দশ-বারোটা ডিজিট ডায়াল করল। বাসু তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ঘূর্ণমান ‘দশচক্রের’ দিকে। ওপাশ থেকে সাড়া জাগল। ভার্গব আত্মপরিচয় দিল। ও-প্রান্তে কে কী বলল শুনতে পেলেন না বাসু। ভার্গব বলল, তুমি যে জামশেদপুরে ফিরে যাচ্ছ তা তো আমাকে জানিয়ে গেলে না?…অলরাইট, তুমি কি মিস্টার পি. কে. বাসু, ব্যারিস্টারকে চেন?…বুঝলাম। উনি বলছেন, তুমি নাকি ওঁকে বলেছ যে ‘আলোকছন্দার পুত্র- কন্যা’..কী? অল্রাইট, অলরাইট, ‘অলকানন্দার’—তারপর তোমাকে নাকি আমি আমার নিজের গাড়িতে ইন্টালিতে পৌঁছে দিয়েছি?…কী? আশ্চর্য! তোমার মনে পড়ছে না? আমি ট্যাক্সি ধরলাম!..বাঃ মনে নেই মানে? গতকাল রাত্রের কথা মনে নেই? তোমার মাথায় কি গোবর ঠাশা?

ক্র্যাডেলে টেলিফোনটা নামিয়ে রাখল।

বাসু ইতিমধ্যে পাইপটা ধরিয়েছেন। বললেন, কী হলো? কে খুন হয়েছে তা বলল সুরঙ্গমা?

—না বলেনি। কারণ সে প্রশ্ন আমি করিইনি।

—আই সি। তাহলে আমিই সেটা বলি। খুন হয়েছে একটা অ্যান্টিসোশ্যাল। বেগবাগানে। রোহিণী-ভিলায়। ডিটেল্স্ আজকের কাগজে দেখে নেবেন। আমার ধারণা : সুরঙ্গমা পান্ডে খুনটা করেনি। কিন্তু ঠিক খুনের সময়েই সে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছিল ঐ লোকটার সঙ্গে। একটা মারাত্মক এভিডেন্স রয়ে গেছে ঐ ঘরে, যা পুলিশের হাতে পড়েছে। এজন্য সুরঙ্গমা জড়িয়ে পড়তে পারে। তাকে পুলিশ অ্যারেস্টও করতে পারে। বিশেষ, পুলিশ একটা ‘মোটিভ’ খাড়া করতে পারবে—একটা ফিল্ম কন্ট্রাক্ট। সুরঙ্গমা আমার ক্লায়েন্ট নয়; কিন্তু সে যখন খুনটা করেনি, তখন তার অ্যালেবাঈটা পাকা হলে আমার আপত্তি নেই। ‘ডুডও খাব, টামাকও খাব’–এ আবদার তো পুলিশে মানবে না। সুতরাং ট্যাক্সিটাই বহাল থাক। কারণ গাড়ি যে রিপেয়ার গ্যারেজে আছে তার মালিক বা মিস্ত্রিকে পুলিশে কাঠগড়ায় তুলতে পারে। তাই নয়?

ভার্গব গোঁজ হয়ে বসে রইল।

—আপনাকে আর একটা অ্যাডভাইজ দেব, কিছু মনে করবেন না তো, মিস্টার ভার্গব?

রামলগন ওঁর চোখে-চোখে তাকালো। বলল, বলুন?

—আমি বুড়ো মানুষ, এটা তো মানবেন। তখন আমি আপনার বেটারহাফের প্রসঙ্গ তোলামাত্র আপনি ফোঁস করে উঠলেন; ‘দ্যাটস্ নান্ অব য়োর বিজনেস’। তাই ইতস্তত করছি। ব্যাপারটা আপনার স্ত্রী-সংক্রান্ত।

রামলগন গম্ভীরভাবে বলল, বলুন?

—আমার মনে হচ্ছে শতকরা নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট চান্স, আপনি কাল সন্ধ্যায় ভিজিটিং আওয়ার্সে আপনার স্ত্রীর নার্সিংহোমে ছিলেন। পুলিশগুলো বড় অভদ্র হয়, জানলেন মিস্টার ভার্গব? ঠিক খোঁজ নিয়ে ঐ নার্সিংহোমে গিয়ে হাজির হবে। আর আপনার স্ত্রীর একটা জবানবন্দি নেবার চেষ্টা করবে। তাই আমার পরামর্শ স্ত্রীকে জানিয়ে রাখুন, কাল সন্ধ্যায় আপনি নার্সিংহোমে যাননি—থিয়েটার দেখেছেন। কেমন?

ভার্গব হেসে ফেলল। বলল, সুরঙ্গমা সত্যিই আমার কাজিন। আমার নিজের মাসতুতো বোন। স্ত্রী তাকে ভালভাবেই চেনে। সুরঙ্গমা খুব ডাকাবুকো—কিন্তু খুনটুন করবে না! ওর কোনো বিপদ নেই তো?

—’নেই’ কেমন করে বলি? মাসতুতো বোনের মাথায় গোবর ঠাশা, এদিকে মাসতুতো দাদার স্মৃতিশক্তিও দুর্বল। রাতারাতি তার স্মৃতিতে ‘অলকানন্দা’ হয়ে যায় ‘আলোকছন্দা’।

ভার্গব আবার হেসে ফেলে।