বিশের কাঁটা – ১৪

চৌদ্দ

বাসু-সাহেব প্রথমেই এলেন ধর্মতলার একটি বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। বহুদিনের পুরনো দোকান। বিরাট আয়োজন। মালিক মুসলমান। আজ রবিবারেও দোকান খোলা। ওরা বন্ধ রাখেন জুম্মাবারে। মাধবীকে বলাই ছিল—সে সোজা লেডিজ-সেক্‌শানে গিয়ে পছন্দমতো একটি রেডিমেড বোরখা কিনে নিল। ট্রায়াল-রুমে গিয়ে ট্রায়াল দিয়ে দেখে নিল, ঠিকমতো গায়ে ফিট করেছে কিনা। তারপর বেরিয়ে এসে বাসু- সাহেবকে বললে, অব্ চলিয়ে বড়ি আব্বা

বাসু ওকে পিছনের সীটে বসিয়ে এসে উপস্থিত হলেন লিন্ডসে স্ট্রীটে। গাড়িটা পার্ক করতে গিয়ে হঠাৎ নজরে পড়ল একটা অ্যাটাচি হাতে মহাদেব জালান হোটেল থেকে বার হয়ে আসছে। উনি গাড়িটা রাস্তার বাঁ-দিকের কার্বের ধারে পার্ক করলেন। এটা ‘নো-পার্কিং জোন’। তা হোক। ডিউক হোটেলে বেশ খানদানি ব্যবস্থা। মহাদেবকে ছোটাছুটি করতে হলো না, দ্বারপালই তার হয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে দিল। মহাদেব দরোয়ানকে টিপস্ দিয়ে উঠে বসল ট্যাক্সিতে। গাড়িটা দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল।

বাসু-সাহেব স্টার্ট বন্ধ করেননি। ধীরে গতিলাভ করলেন। ঐ একই দরোয়ানের নির্দেশে গাড়ি পার্ক করে নেমে এলেন। মাধবীকে বললেন, তুমি আগে যাও হোটেলে। রিসেপশান লাউঞ্জে ফাঁকা কোনো জায়গা দেখে বসে থাক। আমি মিনিট দশ-পনেরর মধ্যে ফিরে আসব। ইতিমধ্যে কেউ যদি তোমাকে কোনো প্রশ্ন জিগ্যেস করে—আশা করি করবে না—তাহলে উর্দু ঘেঁষা হিন্দিতে জবাব দিও। কেউ বেশি কৌতূহল দেখালে এমন অভিনয় করো যেন তুমি তার কথা বুঝতে পারছ না। ও কে?

বোরখার ভিতর থেকে মাধবী অস্ফুটে বলে, দিমাক কেউ খরাপ কর রহে হেঁ বরি আব্বা? যাইয়ে না! দশ-মিনিটকে সওয়াল হয় না?

বাসুও নিম্নস্বরে বললেন, যা বাব্বা! তুমি যে আমার উপরেই এক্সপেরিমেন্ট ঝাড়তে শুরু করলে!

মাধবী গিয়ে বসল রিসেপশান-কাউন্টারের একটা সোফায়। বাসু-সাহেব এগিয়ে গেলেন কাউন্টারের দিকে। ভাগ্য ভাল, সেই পরিচিত মহিলাটিই ছিলেন। ইংরেজিতে ‘সুপ্রভাত জানিয়ে বললেন, বলুন স্যার, কী সাহায্য করতে পারি?

বাসু বললেন, প্রথম কাজ হচ্ছে বেবির অটোগ্রাফ খাতায় সই দেওয়া। কথা ছিল তুমি সেটা এনে তোমার ড্রয়ারে রেখে দেবে। এনেছ?

—স্যিওর!

ড্রয়ার থেকে একটি সুদর্শন অটোগ্রাফ খাতা বার করে দিলেন ভদ্রমহিলা। বাসু খাতাটা উল্টে-পালটে দেখে নিলেন মেয়েটির নাম। একটি আশীর্বাণী লিখে খাতাটা ফেরত দিয়ে বললেন, যাক আসল কাজটা সম্পন্ন হলো। এবার ফালতু কাজগুলো শেষ করি। দেখ তো মা, দুশো সাত নম্বরে জালান আছে কিনা—মহাদেব জালান।

ভদ্রমহিলা বললেন, দু-তিন মিনিটের জন্য আপনার ক্লায়েন্টকে মিস করেছেন। এইমাত্র চাবিটা জমা দিয়ে উনি বেরিয়ে গেলেন। এন্ট্রেসের মুখে দেখা হয়নি?

—তাহলে কি আর তোমাকে এ ফালতু প্রশ্ন জিগ্যেস করি? আচ্ছা ওর হাতে কি একটা অ্যাটাচি ছিল? লক্ষ্য করেছিলে?

—হাঁ ছিল, লক্ষ্য করেছিলাম আমি।

—তাহলে মামলার কাগজপত্রগুলো নিয়েই বেরিয়েছে। আমার কাছেই গেছে তাহলে। যা- হোক দুশো পাঁচে দেখ তো জুলি আছে কি না, জুলি মেতা?

মহিলা বললেন, তিনিও কি আপনার মক্কেল?…না, কিছু ভুল হচ্ছে আপনার। 205-এ আছেন একজন পাঞ্জাবি ভদ্রলোক।

—তাহলে জুলি বোধহয় চেক-আউট করে বেরিয়ে গেছে। যাহোক, আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মক্কেলের তরফে পেমেন্টটা ক্লিয়ার করে রাখা। মহাদেব আর জুলি মেতার। জুলির পেমেন্ট কি হয়ে গেছে।

মহিলা খাতাপত্র দেখে বললেন, না। মিস্ জুলি মেহ্তার নামে 205-ঘরটা বুকড হয়নি। দুটোই বুক করেছিলেন মিস্টার মহাদেব জালান

বাসু বললেন, ন্যাচারালি। জুলি হচ্ছে ওর প্রাইভেট সেক্রেটারি। মিস্টার জালান কি এখন চেক-আউট করছেন? সে-ক্ষেত্রে ওঁর ঘরের মালপত্র…

—না, না, আজকের দিন ইনক্লুড করে ওর যা বিল হয়েছে সেটা আমি পেমেন্ট করে যাব, ব্যস। ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে, আমাদের হয়তো ঈভনিং ফ্লাইটে দিল্লি যেতে হবে। কেসটা সুপ্রীম কোর্টে গেলে। আমাদের দুজনকেই। আজ হাইকোর্টে যা ডেভেলপমেন্ট হয় তার উপর সেটা নির্ভর করছে। আমাদের দুজনরেই টিকিট কাটা আছে। আমি চাইছি, ফুল পেমেন্টটা করে যেতে। যাতে বিকালে ফিরে এসে পাঁচ-দশ মিনিটে মহাদেব প্লেন ধরতে যেতে পারে।

মহিলা খাতাপত্র দেখে বললেন, 205-এর পেমেন্ট করা নেই। সেটাও তো ইনক্লুড করে দেব?

—নিশ্চয়ই।

—একটু বসুন স্যার, বিলটা বানিয়ে দিচ্ছি। ক্যাশ দেবেন?

—না। চেকে অথবা ক্রেডিট কার্ডে, অ্যাজয়ু প্লীজ।

বাসু অপেক্ষা করলেন। কম্পুটারে বিলটা তৈরি হতে মিনিট পাঁচেক লাগল। সেটা দেখে বাসু বললেন, এস. টি. ডি. টেলিফোন কলগুলোর বিস্তারিত বিবরণ আছে; কিন্তু ‘লোকাল- কল’-এর ডিটেলস্ তো নেই।

মহিলা বললেন, লোকাল কলের টোটাল তো মাত্র বাইশ টাকা, স্যার?

—সব এভিডেন্স। কোনও পার্টি যেন বলতে না পারে যে আমার মক্কেল সময়মতো তাকে টেলিফোনে খবর দেয়নি। তুমি এক কাজ কর মা : তোমাদের টেলিফোনরেজিস্টার দেখে এই ভাউচারের পিছনেই লিখে দাও। চারটে কলম কর : ডেট, টাইম, ডিউরেশন আর ‘নম্বর কলড্। কত ইউনিট বা টাকা উঠেছে তার বিস্তারিত বিবরণ নিষ্প্রয়োজন।

.

মহিলা বললেন, তাহলে আপনাকে আরও মিনিট দশেক অপেক্ষা করতে হবে, স্যার।

—ন্যাচারালি। আমি অপেক্ষা করছি।

বাসু একটা স্টাফ্‌ড টেয়ারে এসে বসলেন। রিসেপশানিস্ট একটি জুনিয়ার মেয়েকে নির্দেশ দিলেন টেলিফোন রেজিস্টার দেখে ঐ ভাউচারের পিছনে ‘লোকাল কল’-এর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে। মিনিট পাঁচ-সাত পরে মেয়েটি ভাউচারটা বাড়িয়ে ধরল, অস্ফুটে বলল, আমকেও একটা অটোগ্রাফ দেবেন, স্যার? আমার অটোগ্রাফ খাতাটা অবশ্য সঙ্গে নেই। আমার ডায়েরিতে?

বাসু বললেন, দেব। একটি শর্তে।

মেয়েটি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। বাসু বললেন, তুমিও আমাকে একটা অটোগ্রাফ দেবে, ঐ যে হিসেবটা লিখলে তার তলায়!

অটোগ্রাফ বিনিময় করে উনি ভাউচারখানা কোটের পকেটে রাখলেন। দৃকপাতমাত্র না করে। চেক লিখে দিলেন, রসিদ নিলেন। তারপর ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে দ্বারের দিকে এগিয়ে গেলেন। ঘটনাচক্রে ঠিক একই সময়ে লাউঞ্জের দূরতম প্রান্তে-বসা একজন পর্দানসীন মুসলমান মহিলাও ঐ সময় এগিয়ে গেলেন নির্গমন দ্বারের দিকে।

গাড়িটা চলেছে লিন্ডসে স্ট্রিট থেকে নিউ আলিপুরের দিকে। একটু ফাঁকা মতো জায়গায় এসে বাসু-সাহেব গাড়িটাকে রাস্তার কার্ব ঘেঁষে দাঁড় করালেন। মাধবী বলল, কী হলো? এনি প্রবলেম?

বাসু বললেন, না। প্রশ্নটা ‘এনি প্রবলেম’ নয়, প্রশ্নটা ‘এনি সল্যুশান’?

কোটের ভিতর পকেট থেকে বার করলেন ভাউচারটা। একনজর দেখেই আপনমনে বললেন : থ্যাঙ্ক গড!

মাধবী অবাক হয়ে বলে, হঠাৎ ও-কথা?

—এইমাত্র একটা পরশপাথর কুড়িয়ে পেলাম যে!

গাড়িটা অবশেষে ওঁর বাড়ির দোরগোড়ায় এসে পৌঁছালো। বাসু পর্দানসীন মেয়েটিকে নিয়ে ‘সুকৌশলী’র উইঙের দিকে এগিয়ে গেলেন। কৌশিক-সুজাতা দুজনেই উপস্থিত। গাড়ির শব্দে এদিকে তাকিয়েছে। দুজনেই বার হয়ে এসেছে।

বাসু সুজাতাকে বললেন, এঁকে ভিতর বাড়িতে— না, আমার প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে গিয়ে বসাও। ভিতর দিকের দরজা দিয়ে। কৌশিক! গাড়ির ডিকিতে একটা স্যুটকেস আছে ওটা নামিয়ে গাড়িটা গ্যারেজ কর। এই নাও চাবি।

তারপর মাধবীর দিকে ফিরে বললেন, ইধর পাধারিয়ে মাইজী—

মাধবী ওঁর নির্দেশমতো সুকৌশলীর অফিসে ঢুকল। সুজাতা ওকে ভিতরে নিয়ে গেল।

ইতিমধ্যে গাড়ির ডিকি থেকে মাধবীর ভি. আই. পি স্যুটকেসটা নামিয়ে এনেছে কৌশিক। বাসু-সাহেবের পাশ দিয়ে যাবার সময় অস্ফুটে ওঁর কানে-কানে বলল, ঐ পর্দানসীন বেহেস্তী হুরীই কি আপনার ‘উইনসাম ম্যারো’? ঈয়া আল্লাহ্!

বাসু বললেন, জ্যাঠামো কর না।

.

এবার নিজের অফিসের ভিজিটার্স-রুমে প্রবেশ করলেন বাসু-সাহেব। সেখানে একাই বসে আছেন রানী দেবী। বললেন, এস। ঐ বোরখা পরা মহিলাটি কে? ওকে সুজাতাদের অফিসেই বা নিয়ে গেলে কেন?

—কী করব? জানি না তো—এখানে জ্বালান বসে আছে কি না। অথবা হোমিসাইডের কেউ!

—তার মানে ঐ মহিলাটি …?

—মহিলা নয়, ও মাধবী!

—মাধবী! সর্বনাশ! ওকে এ বাড়িতে এনে তুলেছ? কোনো হোটেল-মোটেলে…

–হোমিসাইড কলকাতা শহরের সব কটা হোটেল-মোটেল খুঁজবে, শুধুমাত্র আমদের এই নিউ আলিপুরের বাড়িটা বাদে। এটাই তাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। ভাল কথা, মহাদেব জালান আজ সকালে আসেনি?

—এসেছে। তাকে আমি আর বাইরের ঘরে বসাইনি। কিছু ম্যাগাজিনপত্র দিয়ে তোমার ল-লাইব্রেরিতে বসিয়ে দিয়েছি। সেখানকার টেলিফান রিসিভারের প্লাগটা এখান থেকে খুলে দিয়ে।

—কী চায় লোকটা?

—তোমার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে। তুমি ফিরে এসে পুলিশের সঙ্গে কথা বলার আগে, একেবারে নাছোড়বান্দা। তাই ওকে ল-লাইব্রেরিতে ডাম্প করে দিয়েছি।

—বেশ করেছ।

—মাধবীকে তুমি পেলে কোথায়?

—’ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড’— সাঁকরাইলের কাছাকাছি ‘ধুলাগড়ি’নামে একটা গ্রামে সেখানে খুব সুন্দর একটা গ্রাম্য পরিবেশের মোটেল গড়ে উঠেছে। ওরা দুজনে আগুপাছু সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, শান্তনু আর মাধবী—একটা ‘ব্রাইডাল সুইট’-এ।

—’ব্রাইডাল সুইট! মানে?

—হনিমুন-রুম, মধুচন্দ্রিমা-নীড়, ফুলশয্যা-কক্ষ—যা খুশি বলতে পার।

—তার মানে মাধবী ইতিমধ্যে শান্তনুকে বিয়ে করেছে?

—আজ্ঞে না, তা করেনি। হিসেবে ভুল হলো তোমার। করবেও না। আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছ তো? আমিও প্রথমটা তাই হয়েছিলাম। পরে বুঝলাম ‘হনিমুন-রুমে’ একটা বিয়োগান্ত নাটকের শেষ যবনিকা পড়তে চলেছিল। আমি মাঝখান থেকে গিয়ে উপস্থিত হওয়ায় সব বানচাল হয়ে গেল।

—মানে?

—মহাদেব জালান ঐ হতভাগিনীটাকে কোণঠাসা করতে করতে এমন একটা অবস্থায় এনে ফেলেছে যখন ওর সামনে আর দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই। বাধ্য হয়ে সে জালানকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। শান্তনুকে বাঁচাতে। কিন্তু হাড়িকাঠে মাথাটা পেতে দেবার আগে ওর বিড়ম্বিত বিবাহিত জীবনের প্রারম্ভে কুমারী জীবনের একটা সপ্তাহ সে তার প্রেমাস্পদকে উপহার দিতে চেয়েছিল।

একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল রানী দেবীর। নিঃশব্দে তিনি উঠে গেলেন। টেবিলের টানা ড্রয়ার থেকে একটা সীলমোহর করা খাম বাসু-সাহেবের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলেন, এটা ইসমাইল সাহেব পাঠিয়ে দিয়েছেন।

বাসু খামটা খুলে ছবিগুলো দেখছিলেন। রানী জানতে চান, কার ফটো ওগুলো?

খামে ছবিগুলো ভরতে ভরতে বাসু বলেন, ওর অষ্টোত্তর শতনাম আছে। কোনটা শুনতে চাও বল? হিন্দু সাজলে মমতা; মুসলমান সাজলে ‘মমতাজ’; সুকৌশলীকে বোকা বানাতে চাইলে, মিসেস বড়গোঁহাই!

রানী বলেন, বুঝলাম। তুমি এখন কী করবে স্থির করেছ? মহাদেব জালানের ইচ্ছানুসারে….

বাসু তাঁর অভ্যস্ত লব্‌জে চাপা গর্জন করে ওঠেন, হ্যাঙ হিম!

আশ্চর্য! তৎক্ষণাৎ ও-পাশের ল-লাইব্রেরির দরজাটা খুলে গেল। সে শব্দে দুজনেই ওদিকে ফেরেন। উন্মুক্ত দ্বারপথে দাঁড়িয়ে আছে মহাদেব জালান। বলে, কতবার এককথা বলব, ব্যারিস্টার সাহেব? আপনি জজ নন! ফাঁসি দেবার এক্তিয়ার আপনার নেই। যতই কেন না খিস্তি-খেউড় করুন মক্কেলের উদ্দেশ্যে।

বাসু ঘুরে দাঁড়ালেন। বললেন, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিলেন?

—উপায় কী? আপনি তো মক্কেলের সঙ্গে কোনো কথাই বলতে চান না।

—লুক হিয়ার, মিস্টার জালান। আপনি আমার মক্কেল নন। আপনি আমার মক্কেলের তরফে টাকা দিয়েছেন এইমাত্র। আপনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি দয়া করে এ ঘব ছেড়ে চলে যেতে পারেন।

—দয়া করে? কিন্তু কার প্রতি দয়াটা করব? আপনার না সেই মেয়েটার, যে নির্লজ্জের মতো বিয়ের আগেই ফুলশয্যা-ঘরে শুয়ে পড়তে চায়? আপনি ভুলে যাচ্ছেন মিস্টার বাসু, রঙের টেক্কাটা আমি এখনো খেলিনি। আমার নির্দেশ অনুযায়ী না চললে আমিও সেই টেক্কাখানা টেবিলে নামিয়ে দেব।

বাসু বলেন, একটা অন্তিম শো-ডাউন ক্রমশ অনিবার্য হয়ে পড়ছে, এই কথাই কি বলতে চান?

জালান একটা সিগ্রেট ধরিয়ে আরাম করে বসল। বলল, আপনার মধ্যে একটা লড়াকু তেজ আছে। সেটাকে আমি শ্রদ্ধা করি বাসু-সাহেব। কিন্তু ভুল করবেন না! আমিও বাঘের বাচ্চার মতো লড়তে জানি। জীবনে অনেক লড়াই খতম করেছি। কখনো হারিনি।

বাসু তাঁর টেবিলের এক কোণায় বসে বললেন, এসব আজে-বাজে খোশগল্প করার সময় আমার নেই। আপনি জীবনে কোনো দিন লড়েননি। ফাটকা বাজারে যারা শেয়ার ধরে আর ছাড়ে তাদের সমগোত্রীয় আপনি হতে পারেন মাত্র। তাকে ‘লড়াই’ বলে না। পরের দুর্বলতা বুঝে নিয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যে বাঘ, সে লড়াই করে না—শিকার ধরে মাত্র। আপনি ঠিক কি চান, এককথায় বলুন দেখি?

—ডক্টর বড়গোঁহাইকে পুলিশ ধূলাগড়ি গ্রাম থেকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে এসেছে—এটা বোধহয় আপনার জানা। সে পুলিশের কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি। বলেছে আপনি তার সলিসিটার। আপনার অনুপস্থিতিতে সে নাকি কোনো কথা বলবে না। তাই পুলিশ আপনাকে খুঁজছে। আপনি যদি চান যে, ‘রঙের টেক্কা’টা আমি টেবিলে নামাবো না, তাহলে আপনার মক্কেলকে ইন্সট্রাকশান দিন। যেন ‘গিটি প্লীড করে! যা শাস্তি হয়, তা সে যেন মাথা পেতে নেয়।

বাসু বললেন, এ-কথা তো আপনি আগে বলেননি?

—না, বলিনি। এখন বলছি। কারণ পরিস্থিতিটা এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে।

বাসু বললেন, আয়াম সরি! মক্কেলের স্বার্থ কীভাবে দেখব, তা আমিই স্থির করব।

—আমি আপনাকে শেষবারের মতো সাবধান করে দিচ্ছি, মিস্টার বাসু। আপনি যদি ঐ জিদ্দিবাজি না ছাড়েন তাহলে আমি রঙের টেক্কাখানা—

—হ্যাঙ য়োর রঙের টেক্কা!

ঠিক তখনই বাইরের দিকের দরজায় কে যেন জোরে করাঘাত করল এবং একই সঙ্গে বেজে উঠল কল বেল।

বাসু এগিয়ে গিয়ে খুলে দিলেন সদর দরজা।

খোলা দরজার ওপাশে দুজন পুলিশ অফিসার। একজন যুবক, বোধহয় হোমিসাইড-এর সাব-ইন্সপেক্টর; দ্বিতীয়জন তার ‘বস’-স্থানীয়, প্রৌঢ়, পোড়-খাওয়া সংসারাভিজ্ঞ আরক্ষাপুঙ্গব। প্রৌঢ়ই বললেন, যাক শেষ পর্যন্ত আপনার দর্শনলাভের সৌভাগ্য হলো, স্যার? আমার নাম ইন্সপেক্টর মজুমদার, বলাবাহুল্য হোমিসাইডের; আর এ ছোকরা জয়ন্ত ভৌমিক, আমার সহকারী।

বাসু বললেন, মিনিট পাঁচেক আগে বাড়ি ফিরেছি। এসেই শুনলাম, কাল সারাদিন আপনারা দুজন আমার তত্ত্ব-তালাশ নিতে বারে বারে এসেছেন। কী ব্যাপার?

—আজ্ঞে না, ব্যাপার তেমন কিছু নয়। ব্যারিস্টার সাহেবের কাছে মানুষজন আসে কেন? কিছু আইন-সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে, তাই নয়? আমরাও তাই কাল বারে বারে এসেছি। আপনার মন্দিরের দোরগোড়া থেকে ফিরে গেছি।

বাসু বললেন, তাই বুঝি? আসুন, বসুন। আইন-সংক্রান্ত পরামর্শ দেব বইকি!

মজুমদার ভ্রূকুটি করে বললেন, ঐ লোকটা কে? কাল থেকে দেখছি গুড়ের নাগরির কাছে মাছির মতো সেঁটে বসে আছে?

বাসু সংক্ষেপে বললেন, আমার মক্কেল একজন।

—মক্কেল? কী চায় লোকটা?

বাসু বললেন, ওঁকেই প্রশ্ন করে দেখলে শোভন হয় নাকি? মক্কেল কী চায় তা কি আমি আগবাড়িয়ে পুলিশকে জানাতে পারি? আমার দিক থেকে সেটা যে ‘প্রিভিলেজড তথ্য’।

জালান চোখ তুলে আগন্তুক দুজনকে মনে মনে জরিপ করে নিল। সিগ্রেটটা নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। তার দগ্ধাবশেষ থেকে নতুন একটা ধরিয়ে নিয়ে নিশ্চুপ বসেই রইল। পুলিশ দুজনও তাকে দেখল। আর ভ্রূক্ষেপ করল না।

মজুমদার বললেন, আমরা আর বসব না। আপনিই বরং দয়া করে একটু গা তুলুন স্যার। যেতে হবে আমাদের সঙ্গে। লালবাজারের হোমিসাইড-বিভাগের বড়কর্তারা আমাদের মাধ্যমে আপনাকে সেখানে পদধূলি দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

বাসু বললেন, এ তো আমার পক্ষে গৌরবের কথা। তবে কি জানেন ইন্সপেক্টর মজুমদার, আমি মফস্বল থেকে এইমাত্র ফিরেছি। আমার সেক্রেটারি সবেমাত্র জানাচ্ছিলেন অনেকগুলি জরুরী কেস জমে আছে। এখনি তো ঠিক আমি হেড কোয়ার্টার্সে আসতে পারব না। সরি।

মজুমদার এবার গম্ভীর হয়ে বললেন, আপনি কথাটার অর্থ বুঝে উঠতে পারেননি। হেড কোয়াটার্সে আপনাকে মধ্যাহ্ন-ভোজনের জন্য নয়, জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমরা নিতে এসেছি।

বাসুও গম্ভীর হয়ে বললেন, আপনিও আমার কথাটার গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারেননি। আমার নাম পি. কে. বাসু—ভিখারী পাশওয়ান নয়। ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছেন?

মজুমদার স্থিরদৃষ্টিতে ওঁর দিকে দশ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন, না, ওয়ারেন্ট আমরা নিয়ে আসিনি; কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে ওয়ারেন্ট বানিয়ে নিয়ে আসতে আধঘন্টাও লাগবে না আমাদের।

—সেটাই ভাল। আপনারা ওটা বানিয়ে আনুন। আমিও আধঘন্টাখানেক সময় পেলে জরুরী কাজগুলো সেরে ফেলতে পারি। কেমন?

মজুমদার এবার একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন। বললেন, আপনি আমার অপরিচিত নন, মিস্টার বাসু। আপনার কীর্তিকাহিনী আমার অজানা নয়; কিন্তু এবার পরিস্থিতিটা একটু অন্যরকম। আমরা নিশ্চিতভাবে খবর পেয়েছি যে, ইতিমধ্যে আপনি সজ্ঞানে কিছু বে-আইনি কাজ করে বসে আছেন। বড়কর্তা সে-বিষয়েই আপনার একটা স্টেটমেন্ট নিতে চান—এ জন্যই আপনাকে আলোচনার জন্যে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। আপনি বাধ্য করলে আমাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা লিখিয়ে আনতে হবে। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে সেটা ‘পরামর্শ’ পর্যায়ে থাকবে না, ‘প্রসিকিউশন’ পর্যায়ে চলে যাবে। আমাদের এখানে পাঠানো হয়েছে আপনাকে হেড কোয়াটার্সে নিয়ে যাবার জন্য। কীভাবে যাবেন সেটা আপনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি।

বাসু বললেন, আপনি প্রথমেই বলেছিলেন, উকিল-ব্যারিস্টারের কাছে মানুষ আসে আইনের বিষয়ে পরামর্শ নিতে। ভেবেছিলাম, সেটা রসিকতা। এখন দেখছি, তা নয়। আইন সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ আপনাদের সত্যিই দরকার। ওয়ারেন্টটা যতক্ষণ না বানিয়ে নিয়ে আসতে পারছেন তর্তক্ষণ আপনারা দুজন আমাকে লালবাজারে নিয়ে যেতে পারবেন না।

হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান প্রৌঢ় মজুমদার। প্রায় চিৎকার করে ওঠেন, রসিকতার একটা সীমা আছে, মানুষের সহ্যক্ষমতারও। ভৌমিক! লালবাজারের হেড কোয়াটার্সে একটা ফোন কর তো!

ভৌমিক কিন্তু পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়েই রইল।

বাসু পাইপ-পাউচ বার করতে করতে বললেন, এটা আমার প্রাইভেট টেলিফোন। এখান থেকে ফোন করতে হলে দু’টাকা চার্জ লাগবে। সেটা কে দিচ্ছেন? মিস্টার মজুমদার না ভৌমিক? নাকি সদাশয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার?

কেউ কোনো জবাব দিল না।

বাসু এদিকে ফিরে বললেন, রানু, লালবাজারের হোমিসাইডকে ধর তো। লাইনটা পেলেই মজুমদার-সাহেবকে দিও।

রানী তৎক্ষণাৎ হুইল-চেয়ারে একপাক দিয়ে এগিয়ে আসেন। নম্বর তাঁর মুখস্ত। অভ্যস্ত আঙুলে ডায়াল করতে থাকেন। বাসু পুলিশ অফিসার দুজনের দিকে ফিরে বললেন, দুটোর যে-কোনো একটা পথে আমাদের চলতে হবে। এক নম্বর : আপনারা ফিরে যান। আমার যখন সময়-সুযোগ হবে তখন টেলিফোনে জানিয়ে আমি লালবাজারে আসব। দ্বিতীয় পথ, ঐ যেটা বলছিলেন : ওয়ারেন্ট ইস্যু করিয়ে আমাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া। যেটাই করা হোক, ঠিক আইন-মোতাবেক হওয়া চাই।

মজুমদার বললেন, শুনুন স্যার, আপনি এখনো জানেন না, পুলিশ কতদূর জানে। আমরা জানি, অনীশ আগরওয়াল হত্যা মামলার দু-দুজন সন্দেহজনক আসামীকে আপনি আপনার সেক্রেটারির মাধ্যমে শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা সাঁকরাইলে গিয়ে লুকিয়ে বসেছিল আপনারই নির্দেশে। তাদের মধ্যে একজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, কিন্তু দ্বিতীয়জনকে আবার আপনি সরিয়ে ফেলেছেন, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে। এসব হচ্ছে ‘অ্যাসেসারি আফটার দ্য ফ্যাক্ট’। তাই বড়কর্তা কোনো ‘অ্যাকশান’নেবার আগে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে চান। আর আপনি জিদ্দিবাজি করে…

কথার মাঝখানে রানী বলে ওঠেন, মিস্টার মজুমদার! লালবাজার হোমিসাইড স্কোয়াডের হেড কোয়াটার্সকে পাওয়া গেছে। নিন, কথা বলুন—টেলিফোনটা বাড়িয়ে ধরেন।

প্রচণ্ডভাবে মাথা ঝাঁকি দিয়ে মজুমদার বললেন, ও হেল! কেটে দিন লাইনটা।

রানী তাঁর স্বামীর দিকে তাকালেন। বাসু সহাস্যে বললেন, একটা ফোন কল বেহুদ্দো খরচ হলো। কী আর করা যাবে? লাইনটা কেটে দাও, রানী। ওঁরা বুঝতে পেরেছেন, ওভাবে ভড়কি দেওয়া যাবে না।

মজুমদার লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ান। বলনে, অলরাইট! চলে এসো ভৌমিক! আমরা ওয়ারেন্টটা বানিয়ে নিয়েই আসব।

দুজন নির্গমনদ্বারের দিকে চলতে শুরু করে। ঠিক তখনি মহাদেব জালান হঠাৎ বলে ওঠে, ইস্‌ দ্য ল্যাস্ট চান্স, মিস্টার বাসু! আপনি কি আমার প্রস্তাবে রাজি?

পুলিশ অফিসার দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে দোরগোড়ায়। ওরা জানে, বক্তা কে। তাই ঘুরে দাঁড়ায়।

বাসু এগিয়ে আসেন জালানের দিকে। দৃঢ়স্বরে দাঁতে দাঁত দিয়ে বলেন, একবার বলেছি, বারবার বলেছি, এই শেষবার বলছি, আপনি আমার মক্কেল নন! আমার মক্কেলের স্বার্থ দেখতে আমি যা খুশি তাই করব। এই অনীশ আগরওয়াল হত্যাকাণ্ডে আমার চোখে আপনি ‘জাস্ট স্যান্টা ক্লজ’! আপনি প্রাথমিক টাকার যোগান দিয়েছেন, ব্যস! দ্যাটস অল। আপনার কাছ থেকে ওরা দুজন এবং আমি আর কিছু প্রত্যাশা করি না। এ-কেসের সঙ্গে—আমার দৃষ্টিতে— আপনি সম্পূর্ণ নিঃসম্পর্কিত! যাদের আপনি ফাঁদে ফেলতে চান তাদের দুজনকেই আমি বাঁচাব, কারণ আগরওয়ালকে কে, কীভাবে, কেন হত্যা করেছে তা আমি জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি। এখন শুধু এভিডেন্সগুলো সাজিয়ে তোলাই আমার শেষ কাজ!

মহাদেব জালান একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বললে, অফিসার্স! আপনারা যদি কাইন্ডলি ঐ দরজাটা খুলে বাসু-সাহেবের প্রাইভেট চেম্বারে পদার্পণ করেন তাহলে ওখানে দেখতে পাবেন এমন একজনকে, যাকে আপনারা পরশু থেকে খুঁজছেন; মিস্ মাধবী বড়ুয়া।

মজুমদার অবাক হয়ে তাকালেন। জালানের দিকে। বাসু-সাহেবের দিকে। তারপর ওঁর প্রাইভেট-চেম্বারের দিকে একপদ অগ্রসর হতেই বাসু গর্জে ওঠেন, বিনা ওয়ারেন্টে আপনি যদি ঐ দরজাটা খোলেন…

কথাটা তাঁর শেষ হয় না, মজুমদার ঝাঁপিয়ে পড়েন দরজাটার উপর। বাসু সেদিকে অগ্রসর হবার উপক্রম করতেই এতক্ষণ যে লোকটা পাথরের মূর্তির মতো খাড়া দাঁড়িয়ে ছিল সেই ভৌমিকও ঝাঁপিয়ে পড়ল বাসু-সাহেবের উপর। বাহুবেষ্টনীতে পিছন থেকে বৃদ্ধ মানুষটিকে আলিঙ্গনবদ্ধ করে ফেলে।

মজুমদার ইতিমধ্যে খুলে ফেলেছেন বাসু-সাহেবের প্রাইভেট চেম্বারের একপাল্লার দরজাটা। ভিতরে বসেছিল বোরখা পরা একটি খানদানি ঘরানার মুসলমান মহিলা। সে একলাফে ওদিকের দরজার হাতলটা চেপে ধরে। মজুমদার গর্জন করে ওঠেন, পালাবার চেষ্টা করলে আমি কিন্তু ফায়ার করব, মিস্ বড়ুয়া!

বাস্তবে তাঁর ডান হাতে সার্ভিস রিভলভার।

বাসু বসে পড়লেন একটি চেয়ারে। ভৌমিক তার বজ্রবাঁধুনি আলিঙ্গন থেকে ইতিমধ্যে বাসু-সাহেবকে মুক্তি দিয়েছে। রানী হতাশভাবে এলিয়ে পড়েছেন তাঁর হুইল-চেয়ারে। বাইরের খোলা দরজা দিয়ে ইতিমধ্যে কক্ষে প্রবেশ করেছে কৌশিক আর সুজাতা। মজুমদার তার আগেই উদ্যত রিভলভার হাতে ঢুকে গিয়েছিলেন বাসু-সাহেবের চেম্বারে। দৃঢ়মুষ্টিতে একটি তরুণীর হাত ধরে তিনি ফিরে এলেন। মেয়েটির পরিধানে একটা মুসলমানী বোরখা—কিন্তু মুখের সামনে পর্দাটা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

মজুমদার বললেন, মাই গড়! শী ইজ দ্য ফিউজিটিভ ইনডীড!

কেউ কোনো প্রতিবাদ করল না।

মজুমদার পুনরায় প্রশ্ন করলেন—ঐ মেয়েটিকেই—আপনিই কি গুয়াহাটির মিস্ মাধবী বড়ুয়া?

মাধবী বললে, আমার বিষয়ে আপনার যদি কোনো জিজ্ঞাস্য থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে মিস্টার পি. কে. বাসুকে সে প্রশ্ন করবেন। উনি আমার সলিসিটার।

—ওয়েল মিস্টার সলিসিটার! এঁর নাম কি মিস্ মাধবী বড়ুয়া?

বাসু অপ্রয়োজনবোধে জবাব দিলেন না।

মজুমদার পকেট থেকে দুটো দুই টাকার নোট বার করে টেবিলে রাখলেন। বললেন, আপনার প্রাইভেট টেলিফোন দুবার ব্যবহার করা বাবদ এই চারটে টাকা রাখলাম। আমি আবার হোমিসাইডকে ফোন করছি, মিস্টার বাসু।

ভৌমিক আগবাড়িয়ে বললে, আমি করব?

—না! তুমি ততক্ষণ এই মহিলাটিকে একটা স্টেনলেস স্টিলের মকরমুখী বালা পরিয়ে দাও!

ক্লান্ত বাসু মাথাটা তুলে জানতে চান, এই অসভ্যতার কি সত্যিই কোনো প্রয়োজন আছে? মজুমদার নাম্বারটা ডায়াল করতে করতে মাঝপথে থেমে পড়ে বললেন, ইয়েস স্যার! অনেক লীগ্যাল অ্যাডভাইস দিয়েছেন—সেজন্য ধন্যবাদ! আমি হেড কোয়াটার্সে ফোন করছি জানতে, আপনাকেও হ্যান্ড-কাফ্ পরিয়ে নিয়ে যেতে হবে কি না! আপনি যে জেনে-বুঝে একজন পলাতক আসামীকে লুকিয়ে রেখেছিলেন এটা এখন এসট্যাবলিসড! আমার জ্ঞাত তথ্য। তাই আপনাকে অ্যারেস্ট করার জন্য ওয়ারেন্ট নিস্প্রয়োজন। আমি শুধু হেড কোয়াটার্স-এর কাছে জানতে চাই।—আপনাকেও হ্যান্ড-কাফ্ পরানো হবে, না হবে না।

জালান খুক খুক্ করে হেসে ওঠায় মজুমদার সেদিকে ফিরে বললেন, সাইলেন্স! শেয়ালের মতো খক্ খক করে হাসবেন না।