বিশের কাঁটা – ১৩

তের

টেলিফোনটা ক্র্যাডেলে নামিয়ে রাখতেই মাধবী বললে, আপনি এত ঘুরপথে তথ্যটা যাচাই করছেন কেন, মেসোমশাই? আমাকেই তো সরাসরি জিগ্যেস করতে পারতেন সে রাত্রে আমি কোনো টেলিফোন পেয়েছিলাম কি না।

—তা পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, কোনো অ্যান্টিসোশ্যালকে এ বিষয়েও হয়তো তোমার ‘ওয়ার্ড অব অনার’ দেওয়া আছে।—সেই মহানুভব ব্যাক্তিটি, যিনি অর্থমূল্যে তোমার প্রেমাস্পদের যাবজ্জীবনের এন্তাজাম করে নিজেই তোমার হাত থেকে বরমাল্য গ্রহণে আগ্রহী।

মাধবী বললে, না! তা নয়। আপনিযে সময়ের কথা বলছেন সেই সময়ের মধ্যে সুরঙ্গমার মেজানাইন ফ্লোরে আমার একটা টেলিফোন সত্যিই এসেছিল। কিন্তু তখন আমি বাথরুমে। স্নান করছি। সুরঙ্গমা রিসিভারটা তুলে নিয়ে ‘হ্যালো’ বলে। ও-প্রান্তবাসী জানতে চায়, গুয়াহাটির মিস্ মাধবী বড়ুয়া আছেন কি না। সুরঙ্গমা সে-কথার জবাব না দিয়ে প্রতিপ্রশ্ন করেছিল, ‘আপনি কে বলছেন?’ লোকটা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘কী মুশকিল! উনি কি এই অ্যাড্রেসে এখন আছেন?’ সুরঙ্গমা বলেছিল, ‘হ্যাঁ আছেন। স্নান করছেন। আপনার নম্বরটা বলুন—ও বেরিয়ে এসে আপনাকে রিঙব্যাক করবে।’ তখন সেই লোকটা বলে, “আমি নিজেই আধঘন্টা পরে ফোন করব।’

বাসু বললেন, এত কথা তুমি জানলে কী করে?

—আপনি টেলিগ্রাফ পিয়নের ছদ্মবেশে কলবেল বাজানোর মাত্র দু-তিন মিনিট আগের ঘটনা এটা। টেলিফোন লাইন কেটে দিয়ে সুরঙ্গমা বাথরুমের বাইরে থেকেই আমাকে তা জানিয়েছিল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, লোকটা কি ডক্টর শান্তনু বড়গোঁহাই? ও বললে, নাম জানায়নি। আধঘন্টা পরে ফোন করবে বলেছে।

—তারপর?

—তারপর আবার কী? তারপর তো আপনার ঝটিকার বেগে নাটকীয় আর্বিভাব আমাদের সবকিছু ভেস্তে গেল। আমাদের আপনি ডানে-বাঁয়ে তাকালে দিলেন? ঝড়ের বেগে উড়িয়ে নিয়ে গেলেন।

—তার মানে লোকটা দ্বিতীয়বার ফোন করেছিল কি না তা তুমি জান না? লোকটা কে তাও না?

—কী করে জানব? ততক্ষণে হয়তো আপনার সাকরেদ আমাকে রবীন্দ্রনাথের মিসকোট শোনাচ্ছেন।

—রবীন্দ্রানাথের মিসকোট মানে?

—’হে মাধবীদেবী, দ্বিধা কেন?’

—আই সী!

বাসু আবার উঠে এসে টেলিফোনের ক্র্যাডলটা তুলে কতকগুলি নম্বর ডায়াল করলেন। ও-প্রান্তে সাড়া জাগতেই জানতে চাইলেন, ক্যালকাটা কনফিডেনশিয়াল ডিটেকটিভ সার্ভিস?

একটি মহিলা কণ্ঠে ইংরেজিতে জবাব হলো, বলছি। কাকে চাইছেন?

—মিস্টার মহম্মদ ইসমাইল। আছেন?

—আছেন। কে কথা বলতে চাইছেন বলব?

—নাম নয়, আমার পার্মানেন্ট মেম্বারশিপ নম্বরটা বলুন : পি. এক্স. এল. 721.

একটু পরেই ইসমাইল সাহেবের কণ্ঠস্তুর শোনা গেল, আদাব ব্যারিস্টার-সা’ব। হুকুম ফরমাইয়ে।

বাসু বললেন, আবার নতুন কী হুকুম ফরমাইস করব? আমার পুরনো কেসের কতদূর কী হয়েছে বলুন। রিপোর্ট?

সে তো কম্‌প্লিট। দুদুটি হাফ-পোস্টকার্ড ফটো তিন-তিন কপি প্রিন্ট করেছি। একটা ফ্রন্ট-ভিয়ু, একটা সাইড-ভিয়ু। টেলি-ফটো লেন্সে। পার্টি বিলকুল আজাদ করেনি। ওর ডিটেইলড ব্যাক-গ্রাউন্ড ভি টাইপ করে রেখেছি। ওর প্রেজেন্ট অ্যাড্রেসও জানা গেছে। ওখানে মেয়েটা নজরবন্দি হয়ে আছে। বিলকুল নয়া চিড়িয়া। ইনএক্সপিরিয়েন্সড! টের পায়নি ও নজরবন্দি হয়ে গেছে।

—ভেরি গুড! মেয়েটি বিবাহিতা?

—কী মজাক উড়াচ্ছেন ব্যারিস্টার সা’ব। কল-গার্ল কী বারে মে বহ্ সওয়াল তো ইংরেলিভান্ট ঔর অ্যাবসার্ড হ্যয়, মি লর্ড!

—কল গার্ল?

—জী সা’ব!

ইসমাইল জানালো মেয়েটির পিতৃদত্ত নামটা জানা যায়নি। তবে রেডলাইট এরিয়ায় ওর নাম ‘মমতাজ’। যখন সে মুসলমানী সাজে। হিন্দু চরিত্র অভিনয় করতে হলে শেষের বর্গীয় ‘জ’-টাকে জবাই করে। আপাতত সে ডক্টর বড়গোঁহাই-এর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছে। তাই সুকৌশলীকে জানিয়েছে তার নাম মমতা বড়গোঁহাই। চৌরঙ্গীর বিখ্যাত শাহজাহাঁ হোটেলের সঙ্গে অ্যাটাচড। কখনো ক্যাবারে গার্ল, কখনো কল-গার্ল। মাঝে মাঝে কাজের অ্যাসাইমেন্ট পেলে—সচরাচর ডিভোর্স মামলায় কাউকে ফাঁসাবার প্রয়োজনে অভিনয়ও করে। দিন চার- পাঁচ ও সেঁটে আছে গুয়াহাটির এক কাপ্তেনের সঙ্গে, তার নামটা এখনো জানা যায়নি। শনিবার রাত্রেও সে ছিল লিন্ডসে স্ট্রিটের ডিউক হোটেলে—রুম নম্বর 205 রবিবার সকালে সে চেক-আউট করে বেরিয়ে গেছে। এখন আছে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছাকাছি একটা হোটেলে—মমতা বড়গোঁহাই পরিচয়ে।

বাসু বললেন, ভেরি গুড। আয়াম পার্ফেক্টলি স্যাটিসফায়েড। শুনুন মিঃ ইসমাইল। নম্বর ওয়ান : ফটো ছয়খানা একটা খামে ভরে সীল করে আমার বাড়িতে, আমার মিসেস-এর হাতে ডেলিভারি দেবার ব্যবস্থা করুন। আজ রাত দশটার মধ্যে। ঐ খামটার ভিতরেই থাকবে টাইপ- করা কাগজটা—আই মীন, এ পর্যন্ত সংগৃহীত ঐ কলগার্লের বায়োডাটা। খামটা যেন মিসেস বাসু ভিন্ন আর কারও হাতে ডেলিভারি না দেয় আপনার মেসেঞ্জার পিয়ন। দ্বিতীয় কথা : বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ঐ হোটেলে মেয়েটিকে নজরবন্দি করে রাখুন। প্রয়োজনে তিন-শিফটে। সে যেন পালিয়ে যেতে না পারে। তুতীয়ত, আপনি যদি কোনো অ্যাডভান্স পার্ট-পেমেন্ট চান তাহলে আমার বাড়িতে বিল পাঠিয়ে দেবেন।

ইসমাইল বললেন, আপনার এক নম্বর আর দু নম্বর নির্দেশ মোতাবেক কাজ হাসিল হবে। তিন নম্বরটা মুলতুবি থাকবে, স্যার, কাজ যতক্ষণ না তামাম শুধু হচ্ছে।।

শুভরাত্রি জানিয়ে লাইন কেটে দিলেন বাসু

এবং তখনই আবার টেলিফোন তুলে লিন্ডসে স্ট্রিটের ডিউক হোটেলের রিসেপশানকে চাইলেন। ও-প্রান্তে সাড়া জাগতেই উনি 207 নম্বর ঘরের বোর্ডার মহাদেব জালানকে চাইলেন—জেনে বুঝে যে, ঘরে কেউ নেই। রিসেপশানও সে কথাই জানাল। বাসু তারপর বললেন, মিস্টার জালানের সেক্রেটারি—কী যেন নাম মেয়েটির—ঐ 205 নম্বর ঘরটা বুক করেছেন। তিনি কি আছেন?

রিসেপশান একটু সময় নিয়ে বলল, না, সরি। 205 নম্বর ঘরটা এখন ভেকেন্ট। ঐ মহিলা আজ সকালে চেক-আউট করে চলে গেছেন।

বাসু বললেন, লুক হিয়ার স্যার, আমি ব্যারিস্টার পি. কে. বাসু কথা বলছি; মিস্টার মহাদেব জালান আমার ক্লায়েন্ট। ঐ সেক্রেটারি-মহিলা, যিনি আজ সকালে 205 নম্বর ঘর থেকে চেক-আউট করে বেরিয়ে গেছেন ওঁর নামটা মনে পড়েছ না। কাইন্ডলি জানাবেন, রেজিস্টার দেখে?

—স্যিওর, মিস্টার বাসু। একটু লাইনটা ধরে থাকুন।

একটু পরে রিসেপশান ক্লার্ক জানাল, যিনি 205 নম্বর ঘর ছেড়ে আজ চেক-আউট করে বেরিয়ে গেছেন তাঁর নাম, জুলি মেহতা।

বাসু বললেন, ক্যারেক্ট! জুলি, জুলি, এতক্ষণে মনে পড়েছে। থ্যাঙ্কস্।

—য়ু আর ওয়েলকাম

বাসু ঘড়ি দেখে মাধবীকে বললেন, রাত সাড়ে আটটা বেজে গেছে। চল, ডিনার খেয়ে আসা যাক। আগে থেকে অর্ডার দেওয়া নেই। যা পাওয়া যাবে, তাই খেতে হবে। উপায় কী? মাধবী বললে, ঠিক আছে, মেসোমশাই, আপনি খেয়ে আসুন। আমার একদম খিদে নেই। বাসু এগিয়ে এসে ওর খোঁপায় হাত রাখলেন। বললেন, আই নো, আই নো! আরে, আমিও তো মানুষ! আমি কি বুঝি না? কী ভেবেছিলে, আর কী হয়ে গেল। কিন্তু উপায় কী, বল? তবু জীবনধারণ তো করতে হবে। টাকার জোরে যারা আমাদের মাথায় পয়জার মারতে চায় তাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে দেখতে হবে তো? খালি পেটে লড়াই চলে না। চল আমার সঙ্গে কিছু খেতে যদি সত্যিই না ইচ্ছে করে একটু সূপ-টুপ খেয়ে নিবি। আমার কিন্তু বেশ খিদে পেয়েছে, মাধু। তুই খেতে না চাইলে….

মাধবী তৎক্ষণাৎ উঠে পড়ে। শাড়িটা পালটাতে উৎসাহ বোধ করে না। মুখ-চোখে জল দিয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে বিনা প্রসাধনেই এগিয়ে এসে বলে, চলুন।

অল্পই আহার করলেন দুজনে। বাসু আজ ড্রিংঙ্ক আদৌ নিলেন না। তাঁরও উৎসাহের অভাব। তবে আহারের পূর্বে সরবিট্রেট সেবনে ভুল হলো না।

আহারান্ত দুজনে ফিরে এলেন সেই ঘরে—মাধবীর ঘরে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বললেন, কাল ভোর সাড়ে ছয়টায় বেড-টি দিতে বলেছি। তারপর ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা রওনা হব। ও. কে.? গুডনাইট।

মাধবী বললে, সে কী? আপনি কোথায় শোবেন?

—পাশের ঘরটায়।

–কেন? আমার কিছু অসুবিধা হবে না। আপনি আমার বাবার বয়সী।

বাসু বললেন, না মাধবী। সম্ভবত আমি তোমার ‘গ্র্যান্ড-পা’-র বয়সী। বয়সের ফারাক ব্যাপারটা কিছু নয়। আমাকে এ ব্যবস্থা করতে হচ্ছে অন্য কারণে। আমার গুরু বলতেন, নিজের কাছে সৎ হলেই শুধু চলবে না, অসৎ লোকেরা যাতে তোমার আচরণে তোমাকে অসৎরূপে চিহ্নিত করার সুযোগ না পায়, তাও তোমার দেখা উচিত।

মাধবী বলে, আপনি মন্ত্রদীক্ষা নিয়েছেন? এ-টা জানতাম না তো? কে আপনার গুরু? —মন্ত্র নিয়েছি। তবে তুই যে অর্থে ‘গুরু’ বুঝেছিস্, আমি সে অর্থে বলিনি। আমার গুরু : ব্যারিস্টার এ. কে. রে. যাঁর কাছে এককালে এই ওকালতি বিদ্যায় শিক্ষানবিসি করেছি।

মাধবী বললে, একটু দাঁড়ান মেসোমশাই…

—আবার কী?

—আপনার ও-কথার জবাবে ‘গুডনাইট বললে আমার মন মানবে না। আপনাকে একটা প্রণাম করব।

বাসু হেসে ওঠেন, বেশ তো! নাতনি দাদুকে পেন্নাম করবে তাতে আপত্তি করব কেন? কর না পেন্নাম।

মাধবী প্রণাম করে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, আজ থেকে কিন্তু আমি আপনাকে ‘দাদু’ ডাকব। আর ‘মেসোমশাই’ নয়।

—তাই ডাকিস্।

.

পরদিন প্রাতরাশ-টেবিলে বাসু বললেন, আমরা একটু পরেই কলকাতায় ফিরব। নিশ্চয় বুঝতে পারছ, পুলিশ তোমাকে খুঁজছে। আমি ভান করছি যেন তথ্যটা আমার জানা নেই। মানে, জেনে-শুনে তোমাকে লুকিয়ে রাখা আমার পক্ষেও আইনত অপরাধ : ‘অ্যাসেসারি আফটার দ্য ফ্যাক্ট।

মাধবী বাধা দিয়ে বললে, তাহলে এ বিপদের ঝুঁকি আপনি নিচ্ছেন কেন?

—ওটা আমার স্বভাব, মাধু! আমি ঐভাবেই খেলাটা খেলি। যাক, যে কথা বলছিলাম। যদি কোনক্রমে পুলিশ তোমাকে চিনতে পারে তাহলে তৎক্ষণাৎ অ্যারেস্ট করবে। সে-ক্ষেত্রে—আগেই বলেছি—আবারও বলছি, পুলিশের কোনো প্রশ্নের জবাব দেবে না। প্রতিটি প্রশ্নের একই জবাব হবে : ‘আমার সলিসিটার পি. কে. বাসুকে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি জবাব দেবেন।’ ওরা লোভ দেখাবে, ভয় দেখাবে, কিন্তু তুমি ঐ একটা পয়েন্টে স্টিক্ করে থাকবে। পারবে না?

–পারব। এ আর শক্ত কী?

—এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ, মাধু! কতবার আমার কত মক্কেল যে কথা দিয়েও সে-কথা রাখতে পারেনি তার ইয়ত্তা নেই।

—আমার ক্ষেত্রে তা হবে না। দেখে নেবেন।

—ভেরি গুড। তাহলে, এবার কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও। এসব তথ্য হয়তো পরে জেনে নেবার সুযোগ আমি পাব না। তাছাড়া প্রাথমিক তথ্যগুলো জানা না থাকলে সমাধানে পৌঁছানোটা কঠিনতর হয়ে পড়ে।

—আপনি প্রশ্ন করুন।

এক নম্বর প্রশ্ন : ঘটনার রাত্রে রোহিণী-ভিলার সামনে আমি তোমার পায়ে শাদা সোয়েডের জুতো দেখেছিলাম। আমার ভুল হতেই পারে না। অথচ তোমাকে নিয়ে যখন সুরঙ্গমার বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম তখন তুমি বলেছিলে যে, তোমার কোনো শাদা সোয়েডের জুতো নেই। কেন মিথ্যে কথা বলেছিলে, মাধবী?

মাধবী হাসল। বলল, আপনিও ভুল দেখেননি, আমিও মিথ্য কথা বলিনি। আমার একজোড়া কালোরঙের জুতো আর একজোড়া স্লিপার আমি গুয়াহাটি থেকে নিয়ে এসেছিলাম। জুতোর স্ট্র্যাপটা বেমক্কা ছিঁড়ে গেল। মেরামতি করা হয়ে ওঠেনি। সুরো আমাকে তার একজোড়া সোয়েডের জুতো পরতে দেয়। আমাদের দুজনের পায়ের একই মাপ। ঐ শাদা সোয়েডের জুতোজোড়া সুরঙ্গমার

—কিন্তু আমাকে মহাদেব জালান যে বলেছিল তুমি তার উপস্থিতিতে একদিন গুয়াহাটি বাজারে ঐ শাদা সোয়েডের জুতোজোড়া কিনেছিলে।

—হ্যাঁ, সেও ও বিষয়ে মিছে কথা বলেনি। সে-জুতোজোড়া গুয়াহাটিতেই আছে। সৌখিন জুতো। সবসময় ব্যবহার করি না। তাই সে-জোড়া আনিনি।

—অলরাইট! অলরাইট। অথঃ উপানহানুপপত্তির সমাধান হলো।

—তার মানে?

–শাদা বাঙলায় ‘শ্যু প্রবলেম সল্ভড।’ দ্বিতীয় প্রশ্ন : তুমি টেলিগ্রাম করে আমাকে জানিয়েছিলে, সুরঙ্গমার অ্যালেবাঈটা যাচাই করে দেখতে। কেন? তুমি কি মনে কর যে, অপরাধটা সেই করেছে?

—না, দাদু। না! অ্যান এম্‌ফ্যাটিক নো! শুনুন বলি :

মাধবী ওঁকে বুঝিয়ে বলল, রোহিণী-ভিলা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ইন্টালিতে ফিরে এসে সে যখন কলবেল বাজালো তখন সুরঙ্গমা ছিল বাথরুমে। ফলে ও ঘরে ঢুকতে পারেনি। কিন্তু ওর জামায়, জুতোয় রক্তের দাগ। সিঁড়ির মধ্যে সে ঐ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। হঠাৎ ওর মনে পড়ে গেল সুরো ওকে দরজায় লাগানো গা-তালার একটা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে রেখেছে। তাই দিয়ে দরজা খুলে ও মেজানাইন ঘরে ঢোকে। একটু পরেই বাথরুম থেকে সুরো বেরিয়ে এসে বলে, — এ কী! তোমার জামা-জুতোয় রক্ত লাগল কী করে?’ মাধবী বলেছিল, ‘পরে বলব! আগে এগুলো ধুয়ে আসি।’ সুরঙ্গমা ওকে বাধা দেয়। বলে, ‘না, বল! কী হয়েছে?’ তখন মাধবী ওর কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হয় বাস্তবে কী ঘটেছিল-

এইখানে বাধা দিয়ে বাসু বললেন, জাস্ট এ মিনিট। সে-ক্ষেত্রে আরও আগে থেকে ঘটনার বিবৃতি দিতে হবে, মাধু! আমি এখনো জানি না, তোমার জামা-কাপড়ে রক্ত কী-ভাবে লাগল, তুমি অনীশের ঘরের ভিতরে আদৌ ঢুকেছিলে কি না তা আমি জানি না। গিয়েছিলে! তাই নয়!

মাধবী নত নয়নে, অস্ফুটে কিন্তু পরিষ্কারভাবে স্বীকার করল, হ্যাঁ।

—তুমি ওকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিলে?

—হ্যাঁ!

—তুমি নিজেই ওকে গুলিটা করনি?

মাধবী চমকে মুখ তুলে তাকায় এবার। বলে, নিশ্চয় না!

—তুমি কি ওর বাথরুমে ব্যারিকেড রচনা করেছিলে? ‘ফিল্ম কন্ট্রাক্ট’ নিয়ে কিছু চিৎকার করে বলেছিলে?

—না! সেটা আমি নই। সুরো! আমাকে রোহিণী-ভিলায় যেতে বারণ করে সুরো নিজেই সেখানে যায়। ও ভীষণ দুঃসাহসী। ভাল ক্যারাটে জানে। অনীশের সঙ্গে ওর বচসা হয়। তর্কাতর্কি চরমে উঠলে অনীশ হঠাৎ ওকে আক্রমণ করে বসে। ওর ব্লাউজ ধরে টান মারে। তখন সুরো ওকে একটা ক্যারাটে-পাঁচে ভূতলশায়ী করে বাথরুমে ঢুকে যায়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সুরো একটা ফায়ারিঙের শব্দ শোনে। পরমুহূর্তেই সব শুনশান হয়ে যায়। দশ থেকে পনের সেকেন্ড পরে ও বাথরুমের ছিটকিনিটা সরিয়ে উঁকি মারে। দেখে অনীশ রক্তের মধ্যে পড়ে আছে আর যে লোকটা গুলি করেছে সে সদর দরজা দিয়ে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে

—তাকে সুরঙ্গমা দেখেছে?

—পিছন থেকে। পুরুষমানুষ। কাচে অথবা ব্রাউন কিংবা গ্রে রঙের প্যান্ট ছিল তার পরনে। পুরো এক সেকেন্ডও সে ওকে দেখেনি। পিছন থেকেও। যাই হোক, তারপর সুরো দেখতে যায় অনীশ বেঁচে আছে কিনা। ওর মনে হয় অনীশ আগরওয়াল মৃত। পরমুহূর্তেই ও সদর দরজাটা টেনে দিয়ে বেরিয়ে আসে।

—লক করে দিয়ে? আই মীন, লক-নবটা তখন জমির সমান্তরালভাবে ছিল, না লম্বভাবে?

—তা আমি জানি না। জিজ্ঞেস করিনি। সম্ভবত সুরো নিজেও তা জানে না। তখন কি এসব কথা কারও খেয়াল হয়?

—খেয়াল না হলেও তোমার বোঝা উচিত যে, সে দরজাটা লক করে যায়নি! –কেন? কি করে আন্দাজ করছেন?

—যেহেতু তোমার স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, তুমি তারপর ঐ ঘরে ঢুকেছ। অনীশকে মৃত অবস্থায় দেখেছ। সুরো তার আগেই চলে গেছে। সুরঙ্গমা দরজাটা লক করে গেলে তুমি ও- ঘরে ঢুকতে পারতে না। তুমি নিজেও লক করে যাওনি। কারণ সে-ক্ষেত্রে আমিও ও-ঘরে ঢুকতে পারতাম না।

—তা ঠিক।

—এবার বল, তুমি কেমন করে রোহিণী-ভিলায় গেলে? ট্যাক্সিতে?

—না! সুরো প্রায় সাতটা নাগাদ বেরিয়ে যায়। তারপর আমি শান্তনুকে তার হোটেলে ফোন করি। ও গাড়ি নিয়ে চলে আসে। আমরা দুজনে বার হই। আমি ওকে বলি, পার্কসার্কাস চল প্রথমে। আমি জানতাম শান্তনুর গাড়ির ড্যাশবোর্ডে তার লোডেড রিভলভারটা আছে। আমি জিজ্ঞেসও করেছিলাম, ‘ওটা কেন নিয়ে এসেছ?’ ও বলেছিল, ‘লোকটা ডেঞ্জারাস। আত্মরক্ষার অস্ত্রটা সঙ্গে থাকা ভাল।’ আরও বলেছিল, সুযোগ পেলে ও অনীশ আগরওয়ালকে কুকুরের মতো গুলি করে মারবে।

—আই সী! তারপর?

—আমি অনীশ আগরওয়ালের ঠিকানাটা ওকে জানাইনি। জানাতাম, কিন্তু ও যখন উত্তেজিত হয়ে ফস্ করে বলে বসল, ‘লোকটাকে কুকুরের মতো গুলি করে মারা উচিত।’ তখন আমি অনীশের ঠিকানাটা ওকে জানাইনি। বিশেষত যখন দেখলাম ওর গাড়ির ড্যাশবোর্ডে একটা রিভলভার আছে।

—তাহলে তুমি কী করলে?

—বাংলাদেশ মিশনের কাছে ওকে গাড়িটা পার্ক করতে বললাম। ও গাড়িটা রুখল। আমি ওকে চলে যেতে বললাম। বললাম, আমি ট্যাক্সি করে ফিরে যাব। ও কিছুতেই শুনছিল না। তখন ওকে বললাম, আমি একটু টয়লেটে যাব। সামনে একটা রেস্তোরাঁ ছিল। তাতে ঢুকে গেলাম। সেখানে লেডিজ টয়লেট ছিল। আমি ওয়েটারকে ডেকে তার হাতে পাঁচটা টাকা গুঁজে দিয়ে বললাম, “তোমাদের রোস্তারাঁর পিছন থেকে কোনো দরজা আছে?’ লোকটা বলল, ‘আছে।’ আমি বললাম, আমাকে দেখিয়ে দাও, আমি সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাব। আর শোন, ঐ যে শাদা রঙের অ্যাম্বাসাডারে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন না, উনি একটু পরে খোঁজ নিতে এলে বল যে, আমি বাড়ি ফিরে গেছি। কেমন?” লোকটা ভুল বুঝল। আমাকে বললে, “দিদি! ও কি আপনার পিছনে লেগেছে? বিরক্ত করছে? ওর ধোলাইয়ের ব্যবস্থা করে দেব?’ অনেক কষ্টে তাকে বোঝাই যে, অ্যাম্বাসাড়ারে বসে থাকা ভদ্রলোক আমার বন্ধু, শত্রু নন। সে যা হোক, শান্তনুকে ওখানে ছেড়ে আমি একটু এগিয়ে যাই। পানের দোকানে জিগ্যেস করে জেনে নিই কোনটা রোহিণী-ভিলা। লিফ্‌টম্যান ছিল না। আমি হেঁটেই উপরে উঠি। অনীশের ঘরে বার দুই কলবেল বাজাই। সাড়া দেয় না কেউ। তারপর হাতল ধরে ঘোরাতেই সেটা ঘুরে গেল। আমি ঘরে ঢুকি। ঘরে আলো জ্বলছিল। সামনে খালি গায়ে মরে পড়ে ছিল অনীশ। আমি টের পাইনি যে, আমার জামা বা জুতোয় রক্ত লেগেছে। ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে আমি প্রায় ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেই আপনার মুখোমুখি পড়ে যাই।

—অলরাইট! এবার বল, ঐ সুরঙ্গমার অ্যালেবাঈটার কথা।

—আমরা দুজনেই পরস্পরের কাছে স্বীকার করেছিলাম যে, মৃতদেহটা দেখেছি। ঘরেও ঢুকেছি। আমাদের আঙুলের ছাপ কোথাও পড়েছে কি না জানি না। আমরা দুজনেই দুজনকে সাহায্য করতে স্বীকৃত হলাম। ও বলল, ‘দ্যাখ মাধু, তোকে কেউ সন্দেহ করবে না। তুই কালকের নেক্সড অ্যাভেইলে ফ্লাইটে গুয়াহাটি ফিরে যা। তোর বয়ফ্রেন্ড-এর ফোন এলে আমি বলব যে, তুই ফিরে গেছিস। কিন্তু আমি একটা বিপদে পড়ে গেছি।’ আমি জানতে চাইলাম, ‘সেটা কী?’ ও বললে, ‘দুপুরে অনীশকে একটা ফোন করেছিলাম। ও ঘরে ছিল না। দারোয়ানের কাছে আমার টেলিফোন নম্বরটা দিয়ে বলেছিলাম অনীশ আগরওয়াল ফিরে এলে তাকে বলতে, যেন এই নম্বরে ফোন করে। তার মানে দারোয়ানের নোটবুকে আমার টেলিফোন নম্বরটা আছে। ইনভেস্টিগেটিং পুলিশ অফিসারের জেরায় সেটা প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে। তাই আমার একটা পাক্কা অ্যালেবাঈ বানিয়ে রাখা ভাল। তাহলে আমি স্বীকার করব যে, হ্যাঁ, ফোনটা আমি করেছিলাম। অনীশ রিঙব্যাক করেনি। আর অনীশের মৃত্যুমুহূর্তে আমি থিয়েটার দেখছি।

বাসু বললেন, বাকিটা বুঝেছি। তখনি টেলিফোনে ও দাদার সঙ্গে অ্যালেবাঈটা তৈরি করে।

—আজ্ঞে হ্যাঁ। নাটকটা দুজনেই একসঙ্গে দেখেছে। বেশ কিছুদিন আগে। ওটার শো ঐ দিন হচ্ছে তাও জানা ছিল।

—সে-ক্ষেত্রে তুমি আমাকে অ্যালেবাঈটা যাচাই করতে বললে কেন? টেলিগ্রামটা যখন করেছিলে তখন কি তোমার মনে হয়েছিল সুরঙ্গমাই খুনটা করেছে?

—না দাদু! সুরঙ্গমা নয়। সুরঙ্গমা ঐ রিভলভারটা পাবে কোথায়? কিন্তু তবু আমার মনে হয়েছিল আপনার সব কথা জানা থাকা উচিত। তাই ও-কথা লিখেছিলাম।

বাসু জানালা দিয়ে দূর দিকচক্রবালের দিকে তিন-চার সেকেন্ড স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর আবার মাধবীর দিকে ফিরে বললেন, শান্তনু কি তোমার কাছে কনফেস্ করেছে? জাস্ট এ মিনিট…শান্তনুও আমার ক্লায়েন্ট।

—জানি। জালান আপনাকে এনগেজ করেছে। শান্তনুর ফাঁসি যদি না হয় তাহলেই আমি ঐ লোকটাকে আজীবন বরদাস্ত করতে স্বীকৃত। তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব।

—শান্তনু যদি তোমার কাছে স্বীকার করে থাকে তাহলে তুমি নিঃসঙ্কোচে আমাকে সে- কথা বলতে পার। সেটা ‘প্রিভিলেজড কনভার্সেশন’। সে-ক্ষেত্রে আমি আর হত্যাকারীকে অহেতুক খুঁজতে সময় নষ্ট করব না। হয়তো শান্তনুকে পরামর্শ দেব ‘গিলটী প্লীড’ করে মেয়াদী শাস্তি নিতে। ও যদি আত্মরক্ষার্থে গুলি করে থাকে তাহলে যাবজ্জীবন না হতেও পারে। কারণ যে লোকটা মারা গেছে পুলিশের মতে সে একটা অ্যান্টিসোশ্যাল। র‍্যাকেটিয়ার! বিচারক তার প্রতি অহেতুক সহানুভূতিশীল হবেন না।

মাধবী নত নেত্রে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল, না! সে আমার কাছেও স্বীকার করেনি। কিন্তু…কিন্তু…

হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল মেয়েটি।

বাসু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, থাক থাক। বুঝেছি। তোমার বিশ্বাস শান্তনুই তোমাকে অনুসরণ করে অনীশের আস্তানায় পৌঁছায়। ঐ রেস্তোরাঁর ব্যাক ডোর দিয়ে পালিয়ে তুমি ওর চোখের আড়ালে যেতে পারনি। তাই তো?

মাথা নেড়ে মাধবী জানালো সেটাই তার ধরাণা।

—অলরাইট। আপাতত এই পর্যন্ত। লেটস্ মুভ অন।

.

জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে বিল মিটিয়ে রওনা হচ্ছেন, হঠাৎ বাহাদুর ছুটতে ছুটতে এসে বললে, সা’ব আপকো টেলিফোন।

আবার নেমে এলেন গাড়ি থেকে। কাউন্টারের কাছে আসতেই প্রীতম জানালো, ‘হ্যাঁ, কলকাতা থেকে একটা ফোন এসেছে। আপনি ঐ কোণার ফোনটা নিয়ে কথা বলুন।’

বাসু রিসেপশান লাউঞ্জের একান্তে এসে টেলিফোনটা তুলে নিয়ে বললেন, বাসু স্পিকিং—

সকাল থেকে তোমার ফোন প্রত্যাশা করছিলাম। তুমি করলে না দেখে আমিই করছি। -থ্যাঙ্কু, রানু। বল, কী খবর? প্রথম কথা, কোন ঘর থেকে বলছ? এক্সটেনশান লাইনগুলো….

—ঠিক আছে। তোমার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সবকয়টা প্লাগ খুলে দিয়েছি। আমি বেডরুম থেকেই বলছি।

—বল?

—প্রথম খবর, ভার্গবকে ধরতে পেরেছি। তার মাধ্যমে জামশেদপুরে সুরঙ্গমাকেও। দুজনেই আমাকে বিশ্বাস করেছে। বলেছে সব কথা। সুরঙ্গমা বলেছে ঘটনার রাত্রে মাধবীর দু- দুটি ফোন এসেছিল রাত নটার পর। দুটিই পুরুষকণ্ঠ। দুটি একই ব্যক্তির। প্রথম ফোনটা যখন আসে তখন মাধবী বাথরুমে। তাই সুরঙ্গমা জানতে চেয়েছিল লোকটির নাম, বা টেলিফোন নম্বর। লোকটা জানায়নি। বলেছিল, কিছুক্ষণ বাদে আবার ফোন করবে। তা সে করেছিল। অনেক রাত্রে। তার অনেক আগেই তোমরা ওর ফ্লাট ছেড়ে চলে গেছ। সুরোর ধারণা, লোকটার নাম শান্তনু বড়গোঁহাই। মাধবীর বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু সঙ্কোচেই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক নামটা সে প্রকাশ করেনি।

—আই সী। আর কোনো খবর?

—হ্যাঁ। একজন স্পেশাল মেসেঞ্জারের হাতে তোমার নাম লেখা একটা কনফিডেনশিয়াল লেফাফা পেয়েছি। মনে হয়, তার মধ্যে ফটো আছে। অথবা পোস্টকার্ড মাপের কোনো শক্ত কাগজ!

—ও কে.! আর কোনো খবর?

—হ্যাঁ। কৌশিক তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চায়। জরুরী ব্যপার। কী কথা তা আমায় বলেনি।

—কৌশিক কোথায়?

–পাশের ঘরে। ডেকে দেব?

—দাও।

একটু পরেই কৌশিক এল লাইনে। বাসু বললেন, বল কৌশিক।

—এক্সটীমলি সরি, মামু। যে মেয়েটা আমাদের কাছে…

—মিসেস শান্তনু বড়গোঁহাই?

—হ্যাঁ, সেই পরিচয়ে আমাদের ‘সুকৌশলী’তে এসেছিল সে মেয়েটার সঙ্গে ডক্টর বড়গোঁহাই-এর বিয়ে আদৌ হয়নি।

—বল কি! তুমি যে বললে, সে ম্যারেজ-রেজিস্ট্রারের সার্টিফিকেটের জেরক্স কপি দেখিয়েছিল।

—তা দেখিয়েছিল। সেটা জাল। আমরা আমাদের ফেডারেশনের মাধ্যমে গুয়াহাটি য়ুনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা জানিয়েছে, ডক্টর বড়গোঁহাই নিঃসন্দেহে অবিবাহিত। অন্তত যে ম্যারেজ-রেজিস্ট্রারের সার্টিফিকেটের ফ্যাক্স-কপি আমরা পাঠিয়েছিলাম, সেটা জাল।

—আই সী! কী নাম মেয়েটার? এখন কোথায় আছে?

—নামটা জানা যায়নি, তবে মেয়েটা ‘কলগার্ল’। কমিশন বেসিসে ডিভোর্স কেস-এ লোকজনকে ফাঁসাতে নানারকম অভিনয় করে। কোথায় আত্মগোপন করেছে জানা যাচ্ছে না। ও বুঝে নিয়েছে যে, আমরা ওর স্বরূপটা ধরতে পেরেছি। তাই আত্মগোপন করেছে। আমরা তাকে ট্রেস করার চেষ্টা করছি।

বাসু পুনরায় বললেন, আই সী! উডয়ু পারমিট মি টু সাজেস্ট সামথিং?

—আজ্ঞে?

—আমার একটা পরামর্শ শুনবে? ও বাবদে আর খরচপত্র কর না। মেয়েটির নাম, ধাম, বায়োডাটা, ফটো সবই আমার সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। সে এখন কোথায় আছে তাও জানি। সেখান থেকে সে পালাতেও পারবে না। কারণ সেখানে সে নজরবন্দি হয়ে আছে। অহেতুক কেন খরচপত্র করবে?

কৌশিক একটু দম ধরে তারপর বলল, আমরা কি আপনার কোনো কাজে লাগতে পারি না? আমি আর সুজাতা।

—আয়াম সরি : নো! নট ইন্‌ দিস কেস্। এ তদন্তে আমি অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়েছি। তারাই সব তথ্য সংগ্রহ করে দিয়েছে! আচ্ছা, এখনকার মতো এই পর্যন্তই। ঘন্টা-দুয়েকের মধ্যে আমরা পৌঁছে যাব নিউ আলিপুরে।

—আমরা? আপনি কি একা নন?

—না! আই এঞ্জয় দ্য কোম্পানি অব মাই ‘উইনসাম্ ম্যারো’, ইফ্ য়ু হ্যাপ্‌ন টু রিমেমবার ওয়ার্ডসওয়ার্থস্ ‘য়্যারো ট্রিলজি’!