বিরহিণীর দশ দশা
১
প্রথম দশা দিনে, বেরি বেরি রোওল
শেজে পাড়ি কাঁদে ভূমি লুটি।
দ্বিতীয় দশা দিনে, আঁখি মেলি হেরল,
শেজ ছাড়ি গা ভাঙ্গিল উঠি ||
২
তৃতীয় দশা দিনে, মৃদু মৃদু হাসিল,
বলে কোথা গেলে প্রাণনাথ।
চউঠ দশা দিনে, সিনান করি আওল,
হাঁড়ি পাড়ি খাওল পান্তা ভাত ||
৩
পঞ্চম দশা দিনে, বান্ধি চারু কবরী,
ঢাকাই শাড়িতে দিল ফের।
ষষ্ঠম দশা দিনে, পিঠা পুলি বানাওল,
কাঁদিতে ২ তার গিলিল তিন সের ||
৪
সপ্তম দশা দিনে, সজিনা খাড়া রাঁধিল
বলে প্রাণ বঁধূ কোথা গেলে।
যে খাঁড়া রেঁধেছি ভাই, তুমি বঁধূ কাছে নাই,
যদি পেট ফাঁপে একা খেলে ||
৫
অষ্টম দশা দিনে, বিরহ বিষাদিনী,
মন দুঃখে কিনিল ইলিশ।
তিতিয়া নয়ন জলে, ভাজায় ঝোল অম্বলে,
খায় ধনী খান বিশ ত্রিশ ||
৬
নবম দশার দিনে, পেট ফেঁপে ঢাক হলো,
আইল কানাই কবিরাজ।
সই বল কর্মভোগ, এ ঘোর বিরহ রোগ,
কবিরাজের নাহি ইথে কাজ ||
৭
দশম দশা দিনে, বিরহিণী মরে নরে,
আই ঢাই বিছানায় পড়ি।
কাতরে কহিছে সতী, কোথা পাব প্রাণপতি,
কোথা পাব পাচকের বড়ি ||
৮
বিরহীর দশ দশা, পন্ পন্ করে মশা,
মাছি উড়ে ছেলে কাঁদে কোলে।
চাকরাণীর চীৎকার, সইসাঙ্গতির টিট্কার,
খেদে কবি ছন্দোবন্ধ ভোলে ||
—‘বঙ্গদর্শন’, ফাল্গুন, ১২৭৯