বাড়ি ফেরা

বাড়ি ফেরা

রাত্তির সাড়ে বারোটায় বৃষ্টি, দুপুরে অত্যন্ত শুকনো এবং ঝকঝকে
ছিল পথ, মেঘ থেকে কাদা ঝরেছে, খুবই দুঃখিত মূর্তি একা
হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, কালো ভিজে চুপচাপ দ্বিধায়
ট্রাম বাস বন্ধ, রিকশা ট্যাক্সি পকেটে নেই, পৃথিবী তল্লাসী হয়ে গেছে
পরশুদিন
পুলিশের হাতে শান্তি এখন, অথবা নির্জনতাই প্রধান অস্ত্র এই
বুধবার রাত্তিরে।

অনেক মোটরকারে শব্দ হয় না, ঘুমন্ত হেড লাইট, শুধু পাপপুণ্য
অত্যন্ত সশব্দে জেগে আছে, কতই তো প্রতিষ্ঠান উঠে যায়, ওরা শুধু
ঘাড়হীন অমর গোঁয়ার।

মশারী ব্যবসায়ীদের মুণ্ডপাত হচ্ছে নর্দমায়, কলকণ্ঠে, ঘুমহীন ঘুম
শিখে নিয়েছে ট্রাক ড্রাইভার। দু’পাশের আলো-জ্বলা অথবা
অন্ধকার ঘরগুলোয়
জন্মনিয়ন্ত্রণ জনপ্রিয় হয়নি। অসার্থক যৌন ক্রিয়ার পর
বারান্দায় বিড়ি খাচ্ছে বুড়ো লোকটা, ঘন ঘন আগুনের চিহ্ন দেখে
বোঝা যায় কি তীব্র ওর দুঃখ! মৃত্যুর খুব কাছাকাছি–
হয়তো লোকটা
গত দশ বছর ধরে মরে গেছে, আমি বেঁচে আছি আঠশ বছর।
সাত মাইল পদশব্দ শুনে কেউ পাগলামির সীমা ছুঁয়ে যায় না
এ রাস্তা অনন্তে যায়নি, ডানদিকে বেঁকে কামিনী পুকুরে
দুইব্রীজের নিচে জল, পাৎলুন গোটানো হলো, এই ঠাণ্ডা স্পর্শ
একাকী মানুষকে বড় অনুতাপ এনে দেয়–
লাইট পোস্টে উঠে বালব চুরি করছে একজন, এই চোট্টা, তোর পকেটে
দেশলাই আছে?
বহুক্ষণ সিগারেট খাইনি। তাই একা লাগছে, দেশলাইট নিয়ে নিলাম
ফেরত পাবি না
বালব চুরি করেই বাপু খুশি থাক না, দুরকম আলো বা আগুন
এক জীবনে হয় না!…ভাগ্‌ শালা,…

ওপাশে নীরেনবাবুর বাড়ি, থাক। এ সময় যাওয়া চলে না-ডাকাতের
ছদ্মবেশ ছাড়া
চায়ের ফরমাস করলে নিশ্চয়ইচা খাওয়াতেন, তিনদিন পরে
অন্য প্রসঙ্গে ভৎসনা
একটু দূরে রিটায়ার্ড জজসাহেবের সুরম্য হর্ম্যের
দেয়াল চকচকে সাদা, কি আশ্চৰ্য, আজো সাদা! টুকরো কাঠকয়লায়
লিখে যাবো নাকি, আমি এসেছিলাম, যমদূত, ঘুমন্ত দেখে ফিরে গেলাম
কাল ফের আসবো, ইতিমধ্যে মায়াপাশ ছিন্ন করে রাখবেন নিশ্চয়ই!

কুত্তারা পথ ছাড়! আমি চোর বা জোচ্চোর নই, অথবা ভূত প্রেত
সামান্য মানুষ এক ফিরে যাচ্ছি নিজের বাড়িতে
পথ ভুল হয়নি, ঠাণ্ডা। চাবিটা পকেট, বন্ধ দরজার সামনে থেমে
তিনবার নিজের নাম ধরে ডাকবো, এবং তৎক্ষণাৎ সুইচ টিপে
এলেমেলো অন্ধকার সরিয়ে
আয়নায় নিজের মুখ চিনে নিয়ে বারান্দা পেরিয়ে ঢুকবো ঘরে।