বাজনা – ৪

ঘরের বাইরে সুড়ঙ্গের এদিকটা বেশ আলো। দিনের আলো। আলো যে কোনদিক থেকে আসছে বোঝা যায় না। আলোর চারিদিকটা বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে বাজনা। দুদিকের রাস্তাটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পাঁচিলের ওদিকে কী আছে দেখা যায় না। সামনে যেখানে এসে দাঁড়াল বাজনা, সেখানেও একটা মস্ত পাঁচিল। একেবারে যেন আকাশ পর্যন্ত চলে গেছে। পাঁচিলের গায়ে একটা ফটক। পেল্লাই। লোহারই হবে হয়তো। পল্টনরা ফটকের সামনে। দাঁড়াতেই খুলে গেল ফটকটা। ফটকের ভেতরে বড়ো বড়ো হরফে লেখা, ‘ছাগল-পাড়া’। বাজনা অনেক পাড়ার নাম শুনেছে, ঘোষপাড়া, বোসপাড়া, বাউন-পাড়া, বাদপাড়া। কিন্তু ‘ছাগল-পাড়া’র নাম তো কখনো শোনেনি। তাই অবাক হয়ে ফটকের ভেতর ঢুকল বাজনা পল্টনদের সঙ্গে। ফটকের ভেতর ঢুকতেই হুস করে বাজনার চোখের ওপর এক ঝলক বাদামি রং ছড়িয়ে পড়ল। ওমা! একী! এতক্ষণ চারিদিকে ঝলমলে আলো ছিল, হঠাৎ বাদামি হয়ে গেল কী করে! ভাবল বুঝি চোখে কিছু পড়েছে। ভুল দেখছে। তাই বাজনা তাড়াতাড়ি নিজের চোখ দুটো মুছে নিল। আবার ভালো করে চোখ মেলে এদিক-ওদিক চাইল বাজনা। না, সত্যিই তো সব বাদামি! বাড়িগুলো ছোটো-বড়ো বাদামি। পথঘাট পাথরের বাদামি। পল্টন হেঁটে চলে, তারও রং বাদামি! তাই তো!

কিন্তু ‘ছাগল-পাড়া’য় ছাগল কই? এপাশে ছাগল নেই একটিও। ওপাশেও নেই। সামনেও নেই, পেছনেও নেই।

হঠাৎ পেছনে ফিরতে গিয়ে, নিজের দিকে নজর পড়তেই বাজনার চক্ষু চড়কগাছ! এ ম্যা! ছিঃ! ছিঃ!

কী? কী?

বাজনার পেছনেতে ওটা কী?

কী? কী?

ছাগলের ল্যাজ না?

হ্যাঁ, হ্যাঁ!

বাজনার সারা গায়ে ওটা কী?

কী? কী?

ছাগলের লোম না?

হ্যাঁ, হ্যাঁ!

বাজনার পায়ে আঁটা ওটা কী?

কী? কী?

ছাগলের খুর না?

হ্যাঁ, হ্যাঁ!

বাজনার মুখে ঝোলে কী ওটা?

কী ওটা?

ছাগলের দাড়ি না?

এ রাম! বাজনা যে ছাগল হয়ে গেছে! এতক্ষণ দড়িটা বাজনার কোমরে ছিল, এখন। একেবারে গলায় উঠে গেছে! সেই দড়ি ধরে টেনে টেনে নিয়ে চলেছে পল্টনরা। বাজনা পেছনের দুটো ঠ্যাং দিয়ে হাঁটছে। আর সামনের দু ঠ্যাং ওপরে তুলে, টাট্টুকে ধরে আছে কোনোরকমে।

বাজনার তো আক্কেল গুড়ুম! ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল, যাঃ চলে! ব্যা-এ্যা-হ্যাঁ করে ডেকে উঠল। আবার ভ্যাঁ করল, ব্যা-এ্যা-হ্যাঁ করে ডেকে ফেলল।

কাঁচুমাচু হয়ে টাট্টুর দিকে চাইল বাজনা। ডাক দিল, ‘টাট্টু, টাট্টু, ব্যা-ব্যা!’

টাট্টু টুপিসাড়ে বলল, ‘চুপ চুপ।’

‘আমি যে ছাগল হয়ে গেলুম! ব্যা-এ্যা-এ্যা!’

টাট্টু বলল, ‘ও কিছু নয়। সব ঠিক হয়ে যাবে। এগুলো সব অসুখের লক্ষণ! নামের অসুখ বড়ো সাংঘাতিক অসুখ!’

‘তা বলে কী আমার নাম ছাগল হয়ে যাবে!’

 ‘ভালো হয়ে গেলে দেখবে কিছু থাকবে না। তুমি যেমন ছিলে তেমনি হয়ে যাবে।’

ফটকের অনেকটা ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে বাজনা। এবার বাদামি রং একটু। একটু ফিকে হয়ে এসেছে। এখন বাজনা ছাগলের চাউনি দিয়ে দেখল, সামনে আর একটা ফটক। ফটকের সামনে এসে পল্টনরা দাঁড়াতেই এই ফটকটাও খুলে গেল। বাজনার গলার দড়ি ধরে হ্যাঁচকা টান দিতেই হোঁচট খেয়ে বাজনা ভেতরে ঢুকে পড়ল।

এ-ফটকের ভেতরেও রাস্তা আছে, বাড়ি আছে। অবিশ্যি ‘ছাগল-পাড়া’র মতো কোনো পাড়ার নাম লেখা নেই। তবু রক্ষে! এখানে আর রংও নেই। একদম ঝকঝকে দিনের। আলো! অনেক লোক রাস্তাঘাটে চলছে, ফিরছে। একটা ছাগলকে দু-পায়ে হাঁটতে দেখে আর পল্টনরা তার গলার দড়ি ধরে টানছে দেখে লোকগুলো হিহি করে হেসে দিল। লজ্জার মরে যায় বাজনা!

পল্টনরা টানতে টানতে বাজনাকে একটা মস্ত বাড়ির সামনে হাজির করল।

এটা বাড়ি না তো!

তবে?

রাজপ্রাসাদ।

রাজপ্রাসাদের সামনে সিংদরজা। সিংদরজার দুপাশেদুটো হাতি শুড় দোলাচ্ছে। হাতির পিঠে দুপাশে দুই দ্বারী বসে আছে। ছাগল-ছাগল বাজনাকে দেখে হাতি দুটো কেমন খিলখিল করে হেসে উঠল। বাজনার ঠিক কানে গেছে! বাজনা হাতির খিলখিল শুনে আর নড়তে চায় না। কিছুতেই সিংদরজা ডিঙোবে না। পল্টনরাও ছাড়বে না। তারাও দড়িতে এই টান দেয় তো, এই টান দেয়। পল্টনরা যতই টানছে, বাজনাও ততই পেছুচ্ছে।

টাট্টু অমনি চট করে বাজনাকে বলল, ‘বাজনা, বাজনা, লড়াই করো না। ভেতরে চল।’

টাট্টুর কথা শুনে বাজনা আর টানাহ্যাঁচড়া করল না। সিংদরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল।

একটু গিয়ে, ইয়া লম্বা চত্বর পেরুতেই একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল পল্টনরা। ঘরের ভেতর থেকে দুজন লোক এসে বাজনার গলার দড়িটা ধরে টান দিল। বাজনা হুড়মুড় করে ভেতরে ছিটকে পড়ল।

ঘরে কেউ কোত্থাও নেই। একেবারে ফাঁকা। কী বিরাট ঘর। আর কী উঁচু। চারিদিকে মোটা মোটা থাম। শ্বেতপাথরের। থামের আড়াল দিয়ে চোখ মেলতেই বাজনার নজরে পড়ল একটা সিংহাসন। সিংহাসনের ওপর কে যেন বসে আছে?হ্যাঁ ঠিক তাই

আরি বাবা! সিংহাসনে কী অদ্ভুত চেহারার একটা জ্যান্ত জীব বসে আছে! মাথাটা খ্যাঁক শেয়ালের মতো অমনি লম্বা আর গোঁফওয়ালা। শেয়ালের লম্বা মাথায় হাতির কান। লটকানো। সারা গায়ে ভাল্লুকের মতো লোম ঝুলে আছে। হাত-পাগুলো বাঘের থাবার মতো অমনি বড়ো-বড়ো নোখে ভরতি। আর কপালে কী চমৎকার ঝকমকে একটা টিপ পরেছে! দেখলেই মনে হয় খুব দামি হিরে বা চুনি-পান্নার তৈরি! টিপের আলো ঝিকমিক করতে করতে বাজনার মুখের ওপর পড়েছে।

চোখ পড়তেই বাজনা থমকে দাঁড়ায়। দেখেশুনে বাজনার যেন হাত-পা পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে! হঠাৎ এমন চেহারার একটা জ্যান্ত জন্তুর সামনে পড়লে অমন আচ্ছা আচ্ছা লোকের বুকের ধুকধুকি থেমে যায়, তোবাজনা কোন ছার। তার ওপর সে এখন মানুষই নয়। ছাগল। কীরে বাবা! বাজনাকে ছাগল বলে খেয়ে ফেলবে না তো!

‘খ্যাঁক-খ্যাঁক-খ্যাঁক,’ হঠাৎ হেসে উঠল জন্তুটা। গলাটা যাচ্ছেতাই রকমের খ্যান-খ্যানে আর সরু মতো। অমন চেহারার এমনি সরু গলা শুনে অনেকটা অবাক হয়ে চেয়ে রইল বাজনা। তার দিকে।

‘অমন করে কী দেখছিস?’ জন্তুটা সরু গলায় কথা বলল। ‘ইদিকে আয়।’

বাজনা নড়ল না।

ধমক দিল জন্তুটা, ‘কীরে, কথা কানে সেঁধুচ্ছে না? এক্ষুনি ঘাড় মটকে পিণ্ডি চটকে দেব। আয় ইদিকে।’

বাজনা সুড়সুড় করে ভয়ে ভয়ে ক-পা এগিয়ে গেল।

‘আমাকে চিনিস?’ জন্তুটা বাজনাকে জিজ্ঞেস করল।

বাজনা তবুও ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল।

কীরে, কথা বলছিস না কেন? আমাকে চিনিস?’ আবার ধমকে উঠল।

বাজনা চমকে উঠে ঘাড় নাড়ল।

“চিনিস না? আমি এদেশের রাজা। আমার নাম চক্কুর চ্যাং-চ্যাং। তোর নাম কী?’

বাজনা এবার শুকনো গলায় উত্তর দিল, ‘আজ্ঞে, আমার নাম বাজনা, এখন ছাগল।’

আবার ‘খ্যাঁক-খ্যাঁক-খ্যাঁক’ করে জন্তুটা হেসে উঠল। ‘বেড়ে নামটা তো! বাজনা! এখানে এসেছিস কেন?’

বাজনা ভয়ে জুজুর মতো কুঁচকে উত্তর দিল, ‘আজ্ঞে, এখানে তো আসতে চাইনি। আমার নামটা বিচ্ছিরি। তাই একটা ভালো নাম খুঁজতে বেরিয়েছি। খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে পড়েছি।’

‘ঘন্টার শব্দ শুনতে পাচ্ছিস?’ চক্কর চ্যাং-চ্যাং জিজ্ঞেস করল রাগ-রাগ গলায়।

বাজনা চট করে কান পাততেই শুনতে পেল ঘন্টার শব্দ। তাই তো! ঘন্টাটা এখনও বাজছে! এতক্ষণ নানান ঝামেলায় ঘন্টার শব্দটা কানেই আসেনি তার!

‘কী রে শুনতে পাচ্ছিস?’ আবার কড়কে উঠল চক্কুর চ্যাং-চ্যাং।

 বাজনা থতমত খেয়ে বলল, ‘হুঁ হুঁ পাচ্ছি।’

 ‘তুই ওই ঘন্টাটা বাজিয়েছিস?’

‘হ্যাঁ।’

‘দুষ্টু ছেলেরা ওই ঘন্টা বাজালে ও আর থামে না। যে দুষ্টু ছেলে ওই ঘন্টা বাজিয়েছে, সে লক্ষ্মী না হলে ওই ঘন্টা বাজবেই। তুই একটা হতচ্ছাড়া দুষ্টু ছেলে।’

‘আজ্ঞে আমি তো আর ছেলে নই, আমি ছাগল হয়ে গেছি।’

বাজনার কথা শুনে অত রাগেও চ্যাং-চ্যাং রাজা খ্যান-খ্যান করে আবার হেসে উঠল। হেসেই আবার গম্ভীর হয়ে বলল, ‘তার মানে তুই পাজির পা-ঝাড়া। আরও কিছু অন্যায় করেছিস। শুধুমুধু তো আর কেউ ছাগল হয় না।’

‘আমি আর তো কিছু করিনি।’

‘করেছিস, কী করিসনি পরে জানা যাবে। এখন তোকে ওই ঘন্টা থামাতে হবে। নইলে তোর ঘাড় মটকে আমি পেটপুজো করব।’

বাজনা কেঁদে ফেলার জোগাড়। কাঁদো-কাঁদো সুরে বলল, ‘আজ্ঞে, আমায় মানুষ না করে দিলে, আমি ঘন্টা থামাব কী করে?’

‘সে কথা আমি জানি না। মানুষ হবে বললেই হওয়া যায় না। এখন তোকে ‘বাঁদর-পাড়ায় যেতে হবে। ছাগল থেকে তুই যদি বাঁদর হয়ে যাস, তা হলে বুঝতে হবে আরও কিছু অন্যায় করেছিস। তোর হাতে ওটা কী?’ রাজার হঠাৎ বাজনার সামনের ঠ্যাং-এর দিকে নজর পড়ল। ঠ্যাং-এ টাট্টুকে ধরে রেখেছে বাজনা।

বাজনার তো পিলে চমকে ওঠে। বলল, ‘আজ্ঞে, এটা আমার খেলনা ঘোড়া, কাঠের টাট্টু।’

‘ওটা আমার কাছে রেখে যা।’

হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল বাজনা, ‘না-আ-আ।’

‘না বললেই ছাড়ছে কে! দে, নইলে গলা টিপে মেরে ফেলব।’

আরও চেঁচিয়ে উঠল বাজনা, না, আমি দেব না। কিছুতেই না।’

 ‘এই, কে আছিস!’ ডাক দিল চক্কুর চ্যাং-চ্যাং।

একজন পল্টন ছুটে এল।

‘ওর কাছ থেকে ওই কাঠের ঘোড়াটা কেড়ে নে।’ গম্ভীর গলায় হুকুম দিল চ্যাং-চ্যাং।

পল্টন কেড়ে নিতে গেল। বাজনা ‘না দেব না, না, না, দেব না’ বলে চেঁচিয়ে লাফাতে লাগল। পল্টন তাই না দেখে মারল বাজনার পিঠে চাবুক, সপাং সপাং। বাজনা লাফাতে লাফাতে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। হাত থেকে ছিটকে পড়ল টাট্টু।

‘দে, ঘোড়াটা আমায় দে।’

পল্টন চক্কর চ্যাং-চ্যাং-এর হাতে ঘোড়াটা দিল।

চক্কর চ্যাং-চ্যাং ঘোড়াটা হাতে নিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল, ‘যা, এবার ওকে ‘বাঁদর-পাড়ায় নিয়ে যা। তিনদিনের মধ্যে ঘন্টা না থামলে, ওকে আবার আমার কাছে নিয়ে আসবি। তারপর যা করার আমি করব!’

রাজার হুকুম শুনেই পল্টন বাজনার গলার দড়ি ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলল বাইরে। বাজনার গলায় যত টান পড়ে, ও ততই ‘উঃ-আঃ’ করে গোঙাতে থাকে। গোঙানি শুনে। এদিক-ওদিক থেকে লোক জমে যায়! বাজনাকে দেখে, কেউ ফিকফিক করে হাসে। কেউ ফ্যাকফ্যাক করে হাসে। কেউ হ্যাঁ-হ্যাঁ করে হাসে। চারিদিকে হাসি। অপমানে লজ্জায় মরে যায় বাজনা। বাজনা গোঙানি থামিয়ে, মুখ নীচু করে গুটিগুটি হাঁটা দিল।

রাজবাড়ির সিংদরজা পেরিয়ে গেল। বাজনা রাস্তায় পড়ল। এতক্ষণ টাট্টু সঙ্গে ছিল, সাহস ছিল। এখন সে কার সঙ্গে কথা বলবে? ভয়ে মুখ তার এইটুকুনি, আমসি! কাঁদতেও পারছে না, ভাবতেও পারছে না।

একটু পরেই ‘বাঁদর-পাড়া’র ফটকের সামনে এসে দাঁড়াল পল্টন। বুকটা কাঁপতে লাগল বাজনার। মনে মনে বলল, ‘হে ভগবান, ছাগল করেছ তা-ও ভালো, বাঁদর কোরো না যেন! তাহলে মুখ দেখাব কেমন করে!’

ফটক খুলে গেল। এক ঝলক বাঁদুরে রং হুস করে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। বাজনার চোখ দুটো ধাঁধিয়ে গেল। এগিয়ে চলেছে বাজনা। চারিদিকে শুধু রং আর রং, বাঁদুরে রং। আর কেউ নেই, কিচ্ছু নেই।

হঠাৎ বাজনার ছাগল-ছাগল ল্যাজটা কেমন সুড়সুড় করে উঠল। বাজনা, পেছন ফিরে ল্যাজের দিকে তাকাল। চমকে উঠল বাজনা।

কেন?

আরে! আরে! ছাগলের ল্যাজটা তো নেই আর!

ছাগলের ল্যাজ না তো ওটা কীসের ল্যাজ?

ওটা তো বাঁদরের ল্যাজ!

কই দেখি দেখি!

তাই তো!

ছাগলের ল্যাজ নেই, বাঁদরের ল্যাজ ঝুলছে বাজনার পেছনে।

যাঃ! নিজের দিকে তাকিয়ে বাজনা হকচকিয়ে গেল। ঠিক যা ভেবেছে তাই!

তার গায়ে বাঁদরের লোম!

তার পায়ে বাঁদরের নোখ!

তার মুখে বাঁদরের মুখ!

ইস! ছাগল-ছাগল বাজনা এবার সত্যি সত্যি বাঁদর হয়ে গেল! বাজনা হাউহাউ করে কান্না জুড়ে দিল। ওমা! কাঁদতে কাঁদতে দাঁড়িয়ে পড়ল।

আবার পল্টন হিড়হিড় করে টান দিল। লেগেছে, বাজনার গলায় ভীষণ লেগেছে! চলতে শুরু করে দিল।

‘বাঁদর-পাড়া’র মাঝবরাবর এসে, পল্টন একটা মস্ত বড়ো খাঁচার সামনে দাঁড়াল। কেন? খাঁচার দরজা খুলে পল্টন বাজনাকে খাঁচার মধ্যে ঠেলে ফেলে দিল। গলার দড়িটা খাঁচার সঙ্গে বেঁধে বাজনার পায়ে একটা লোহার শেকল পরিয়ে দিল। আবার দরজাটা এঁটে দিল জোরসে। যেন পালাতে না পারে। তারপর পল্টন খাঁচার ভেতর হাত গলিয়ে বাজনার গালে। একটা টুসকি মেরে বলল, ‘যতদিন না লক্ষ্মী হচ্ছ, ততদিন বাঁদর হয়ে খাঁচার মধ্যে থাক।’ বলে গটমট করে চলে গেল।

বাজনা পল্টনকে চলে যেতে দেখে হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে উঠল, ‘আমায় ছেড়ে দাও।’ কাঁদতে কাঁদতে খাঁচার মধ্যে মাথা খুঁড়তে লাগল।

কতক্ষণ কাঁদল বাজনা কে জানে! এখন তার নাম পালটানো দূরে থাক, উলটে বিচ্ছিরি নামটা আরও বিচ্ছিরি হয়ে গেল। এখন তার নাম বাঁদর! ছিঃ! ছিঃ! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। এখন যে কী করবে বাজনা?টাট্টুও নেই যে তার সঙ্গে দুটো কথা বলবে! যেমনকে তেমন, থাকো খাঁচায় বন্দি হয়ে! পালাবে তারও উপায় নেই! পায়ে শেকল বাঁধা।

বাজনা ভাবতে ভাবতে শুচ্ছে।

শুতে শুতে বসছে।

বসছে আবার কাঁদছে।

এমনি ছটফট করতে করতে বাজনার ঘুম এসে গেল। ঘুম যত পাচ্ছে, ভয়ও পাচ্ছে তত। কাছেভিতে কেউ কোথাও নেই। খাঁ খাঁ করছে চারিদিকটা। তাই, না শুয়ে বসে বসে ঢুলতে লাগল। আর খাঁচায় মাথা ঠুকতে লাগল।

একবার মাথাটা খুব জোরে ঠুকে গেছে, ‘উঃহু হু!’ চমকে চাইল বাজনা। থমকে গেল মনটা। কে যেন নূপুর পায়ে এগিয়ে আসছে, ঝুনঝুনঝুন! খুঁজতে লাগল বাজনার চোখ দুটি এদিক-ওদিক। শুনতে লাগল কান পেতে।

বাজনার ভয় লাগছে, আবার সাহসও আসছে। ‘বাঁদর-পাড়া’র বাঁদুরে রংটা নূপুরের সুরে সুরে কেমন একটু একটু ফিকে হয়ে আসছে! ধীরে ধীরে বাঁদুরে রং সরে গিয়ে হালকা নীল রঙের একটা পর্দা ছড়িয়ে গেল চারিদিকে! নূপুরের সুরে আর রঙের বাহারে এত বিপদেও যেন বাজনার ভালো লাগছিল!

‘বাজনা!’ কে ডাকল?

ঝট করে পেছন ফিরে তাকাল বাজনা। আরে! সেই মেয়েটি না! মালতি! আঃ! তাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল বাজনার। সেদিন অন্ধকারে ভালো করে দেখতে পায়নি বাজনা। বুঝতে পারেনি এত মিষ্টি দেখতে তাকে। ফিকে নীল আলোয় তার ফিকে নীল শাড়ি। চুমকি আঁটা। ঝিকমিক করছে। হাতে খাবারের থালা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

‘বাজনা!’ আবার ডাকল। ‘আমায় চিনতে পারছ? আমি মালতিদিদি।’

বাজনা উত্তর দিতে পারল না। থির-দিষ্টিতে দেখতে লাগল।

‘কী দেখছ? কিছু বলছ না?’

সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিল বাজনা। লজ্জায় মুখ নীচু করে রইল। ছিঃ! কেমন করে কথা বলবে সে অমন একটি মেয়ের সঙ্গে।

‘বাজনা, সাড়া দিচ্ছ না যে?’

বাজনা এবার মুখে তুলল। জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি আমার নাম জানলে কী করে?’

‘তোমার নাম এখানে সক্কলেই জানে।’

কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল বাজনা মেয়েটির কথা শুনে। সবাই তার বিচ্ছিরি নামটা জেনে ফেলেছে! মুখখানা অভিমানে ফুলে উঠল বাজনার। বলল, ‘আমি তো আর বাজনা নই, আমি তো বাঁদর!’ বাজনার চোখ দুটো ছলছল।

“হি-হি-হি’, হেসে উঠল মেয়েটি।

ছি-ছি করে উঠল বাজনার মনটা।

 ‘তোমার খিদে পায়নি? খাবার এনেছি। খাবে না?’ জিজ্ঞেস করল মেয়েটি।

‘খিদে নেই।’ রেগেমেগে উত্তর দিল বাজনা।

‘খিদে নেই, না রাগ হয়েছে?

রাগই তো হয়েছে! কার না রাগ হয় বল? বাজনা মানুষ ছিল, হঠাৎ ছাগল হয়ে গেল! ছাগল হল সে না হয় এক কথা, এখন আবার বাঁদর হয়ে গেছে! খাঁচায় বেঁধে রেখেছে! কী কাণ্ড! নাম পালটাতে এসে গোটা মানুষটাই পালটে গেল! পালটালো পালটালো শেষে কীনা বাঁদর! কত বড় ল্যাজ দেখদিকিনি! ছিঃ! ছিঃ! কেমন করে মুখ দেখাবে সে! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল বাজনা।

খাঁচার মধ্যে হাত পুরে দিল মেয়েটি। বাজনার মাথায় হাত দিল। আদর করে জিজ্ঞেস করল, ‘কাঁদছ?’

বাজনার হঠাৎ মনে হল, ও যেন মেয়েটির পোষা বাঁদর? তেমনি করে আদর করছে। মাথাটা চটপট সরিয়ে নিল বাজনা। চেঁচিয়ে উঠল, ‘না, না, আমি কাঁদিনি। আর কাঁদছি কি না কাঁদছি, সে তোমায় দেখতে হবে না।’ বলে ল্যাজটা গুটিয়ে নিল বাজনা।

মেয়েটির অমন হাসি-হাসি মুখখানি ফস করে কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল। বলল, ‘বেশ, দেখছি না। খাবারটা রেখে দিয়ে যাচ্ছি। খেতে হয় খেও, না হয়ে ফেলে দিও।’

খাবারের থালাটা খাঁচার ভেতর রেখে দিল। ওমা! কলা!

‘আমি যাচ্ছি।’ হাঁটা দিল মেয়েটি। পায়ের নূপুর বেজে উঠল। তবু মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল বাজনা। একবারটিও চোখ তুলে চেয়ে দেখল না। কতদূর চলে গেল মেয়েটি জানে না। বাজনা। শুধু শুনছে নূপুরের শব্দ ভেসে ভেসে দূরে দূরে হারিয়ে যাচ্ছে, ঝুনঝুন। আর সব নিজঝুম! ফাঁকা। একা বাজনা বসে আছে খাঁচার মধ্যে। কতদিন যে বন্দি হয়ে বসে থাকতে হবে, কে জানে! তিনদিনের মধ্যে ঘন্টা না থামলে হয়তো চিরদিনই বাঁদর হয়ে থাকতে হবে! সবাই ঘেন্না করবে বাজনাকে। ছ্যা! ছ্যা!

কিন্তু না, না। মেয়েটি তো তাকে ঘেন্না করল না। বাজনার হঠাৎ যেন মনে হচ্ছে, এখনও মেয়েটির হাতের ছোঁয়া তার কপালে লেগে রয়েছে। আঃ! মিষ্টি মিষ্টি আদর মাখানো। হাতখানি! ছিঃ! ছিঃ! বাজনা মিছিমিছি তার ওপর রাগ করল! মেয়েটির কী দোষ! খেয়ে নিলেই হত কলাগুলো!

মেয়েটির পায়ের নূপুর এখনও বাজছে, ঝুনঝুন। অনেক দূরে!

বাজনার বুকটা কেঁদে উঠল। মনে হল নিজের জিনিস কাছে পেয়েও সে হারিয়ে ফেলল। আহা রে! মেয়েটি হয়তো তার ভালোর জন্যেই এসেছিল। হয়তো সে বলে দিতে পারত কেমন করে ঘন্টা থামাতে হবে। কেমন করে সে আবার মানুষ হবে। এতদিন টাট্টু ছিল, সাহসও ছিল। এখন আপনজন আর কেউ নেই তার! মেয়েটি এল, তার সঙ্গেও আড়ি হয়ে গেল বাজনার। কী হবে?

এখনও মেয়েটির পায়ের নূপুর শোনা যাচ্ছে। খুব অস্পষ্ট!

বাজনা চেঁচিয়ে উঠল হঠাৎ। ডাক দিল মেয়েটিকে, ‘শোন-ও-ও।’

সাড়া পেল না।

আরও জোরে ডাকল, ‘শোন-ও-ও-ও।’

তবুও না।

নূপুরের ঝুনঝুন সুরটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। কেঁদে উঠল বাজনা ডুকরে ডুকরে। কাঁদলে এখন আর কে শুনছে? যেমনকে তেমন!

অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল বাজনা খাঁচার ভেতর। খাওয়া আর হল না তার।

অবাক হয়ে গেল বাজনা ঘুম ভাঙতেই। আরে! তার খাঁচাটা যেন দুলে দুলে হেঁটে হেঁটে চলেছে!

হ্যাঁ, সত্যিই চলেছে। তবে নিজে হাঁটছে না খাঁচটা। একটা হাতির পিঠে খাঁচাটা তোলা হয়েছে। খাঁচার ভেতর ঠিক আগে যেমন ছিল তেমনিই বাজনা বন্দি। হাতি হেঁটে চলেছে, বাজনার খাঁচাও দুলে দুলে এগিয়ে চলেছে। তালে তালে ডুগডুগি বাজছে-ডুগডুগ, ডুগডুগ।

একী ব্যাপার! তড়বড় করে উঠে পড়ল বাজনা। ঘুম-ছোঁয়া চোখ দুটো খুব ভালো করে রগড়ে নিল। উরি বাবা! রাস্তা থেকে কত ওপরে উঠেছে সে! কত লোক এদিক-ওদিক, তাকে দেখছে, হইহই করছে! কিচ্ছু বুঝতে পারছে না বাজনা। ইস! কী ভীষণ ঘুমিয়ে পড়েছিল বাজনা! এত কাণ্ড হয়ে গেল, কিছুই জানতে পারেনি! নাই জানুক। কিন্তু হাতির পিঠে চেপে সে যাচ্ছে কোথায়?

হঠাৎ সামনের দিকে একটা কাপড়ের ওপর নজর পড়ল। কী যেন বড়ো বড়ো করে লেখা কাপড়টার ওপর! হ্যাঁ। লেখা আছে,

‘এটি আসলে বাঁদর নয়। একটি দুষ্টু ছেলে। দুষ্টুমি করতে করতে প্রথমে ছাগল হয়ে যায়। তারপর বাঁদরামি করতে করতে এখন বাঁদর হয়ে গেছে। সকলকে দেখাবার জন্যে একে শহর ঘোরানো হচ্ছে।’

লেখাটা পড়ে বাজনার মনে হল, এখনই সে হাতির পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়ে। কিন্তু লাফাবে কী, খাঁচায় তো সে বন্দি! শেকল দিয়ে পা বাঁধা। তার ওপর চারিদিকে লোকজন, হইহই! হাসছে, হাততালি দিচ্ছে, ছ্যা ছ্যা করছে।

এ-বাড়িতে লোক। ও-বাড়িতে লোক। রাস্তায় লোক। ছাদে লোক। গলিতে লোক। কেউ জিভ ভ্যাংচাচ্ছে। কেউ বুড়ো আঙুলে কলা দেখাচ্ছে। কেউ বক দেখাচ্ছে। বাজনা মাথা হেঁট করে বসে আছে!

ওমা! ল্যাজটা কখন খাঁচার ফাঁক দিয়ে ঝুলে পড়েছে! খেয়াল নেই তো বাজনার। আর কী, একটা ছোট্ট ছেলে দেখতে পেয়েছে! হাত বাড়িয়ে নাগালও পেয়ে গেল। আর দেখতে হয়! দিয়েছে টান! বাজনা ‘কিক’ করে চেঁচিয়ে উঠেছে। আর তখন চারিদিকে কী হাসির হুল্লোড়!

তাড়াতাড়ি ল্যাজটা গুটিয়ে নিল বাজনা। ভাবল, খাঁচায় যদি বাঁধা না থাকত তো দেখে নিত ছেলেটাকে। পিঠে এমন গুম করে কিল বসাত যে বাছাধনকে আর ট্যাঁ-ফু করতে হত না। অগত্যা বাজনা ল্যাজটা গুটিয়ে, সামনের পা দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে রাখল।

ঢাকলেই কি নিস্তার! অমনি রাস্তার লোকগুলো চেঁচিয়ে উঠল, ‘মুখ ঢেকেছে, মুখ ঢেকেছে।’ মাহুতটা সঙ্গে সঙ্গে খাঁচার মধ্যে হাত পুরে বাজনার কানটা নেড়ে দিল। সবাই আবার হেসে উঠল। বাজনা তাড়াতাড়ি মুখ থেকে আড়াল সরিয়ে নিল!

সারা শহরটাই ঘুরল বাজনা হাতির পিঠে। সারা শহরে ঢি ঢি পড়ে গেল!

যেখানে ছিল আবার সেই ‘বাঁদর-পাড়াতে’ই ফিরে এল বাজনা। আবার সেই খাঁচাতেই বন্দি হয়ে পড়ে রইল। সামনে কলাগুলো যেমন ছিল তেমনিই পড়ে আছে। খায়নি। খিদে পাচ্ছে না। এর পরেও আর কারো খিদে পায়! লজ্জায় একশেষ! এ-ও বাজনার কপালে ছিল! বরাতে আরও কী আছে, কে জানে!

সারাক্ষণ নিশ্চুপ একা একা বসে রইল বাজনা খাঁচায়। কী বিচ্ছিরি লাগছে! কথা বলার তো কেউ নেই। বাইরে বেরুবে তারও উপায় নেই। বেরুলেই বা কী! কোথা যাবে সে একা একা? চারিদিকে পাহারাদার। ওদের চোখকে ফাঁকি দেওয়া কি সহজ কাজ! কিন্তু খাঁচায় বাঁধা থাকলেই বা সে কী করে ঘন্টা থামাবে?হ্যাঁ, ওই তো ঘন্টা এখনও বাজছে। শুনতে পাচ্ছে বাজনা। আর ভাবতে পারছে না বাজনা কিচ্ছু! শুধু একটা কথাই তার মনের মধ্যে বার বার জানান দিচ্ছে, দুষ্টুমি করলে মানুষ বাঁদর হয়ে যায়! কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আবার এ কথাও ভাবছে, আচ্ছা, বাঁদরের মধ্যেও কি সবাই দুষ্টু! বাঁদর বুঝি লক্ষ্মী হয় না!

‘ঝুনঝুনঝুন!’ হঠাৎ যেন আবার নুপুর বেজে উঠেছে।

চমকে চাইল বাজনা।

 ‘ঝুনঝুনঝুন!’ হ্যাঁ, সত্যিই নুপুর বেজেছে।

তাকিয়ে রইল বাজনা সামনে।

বাঁদুরে রংটা এদিকে, ওদিকে আবার ফিকে ফিকে নীল হয়ে গেল।

ফিকে ফিকে নীল রংটা কেমন মিষ্টি! বাজনার মনটা কেন জানি খুশি-খুশি হয়ে উঠছে।

কে আসছে?

সেই মেয়েটি না?

হ্যাঁ, ঠিক তাই। মালতি।

না, আর বাজনা ভুল করবে না। এবার ঠিক ওর সঙ্গে ভাব করবে।

মেয়েটি আবার বাজনার সামনেই এসে দাঁড়াল।

বাজনা মাথা হেঁট করল।

‘বাঁজনা!’ ডাক দিল মেয়েটি। আবার ঠিক তেমনি আদর-মাখা সুর।

বাজনা মেয়েটির চোখের দিকে চাইল। চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ছে বাজনার।

‘বাজনা, খাওনি?’ মেয়েটি জিজ্ঞেস করলে।

‘তুমি কেন চলে গেলে?’ আচমকাই জিজ্ঞেস করল বাজনা।

‘যাব না! তুমি আমার ওপর রাগ করলে যে।’

‘তোমরা আমায় বাঁদর করে রেখেছ, আমার রাগ হবে না!’

‘কে বলল তুমি বাঁদর, তুমি তো বাজনা।’

‘বারে! আমি যখন বাজনা ছিলুম, আমার চেহারা কি এমনি ছিল? এই দেখোনা আমার হাত-পাগুলো বাঁদরের মতো। সারা গায়ে আমার বিচ্ছিরি বাঁদুরে লোম। আমি তো আগে এরকম ছিলুম না!’

‘তুমি এখন যাই হও না কেন, তোমার নামটা তো ঠিকই আছে।’

‘বাঁদরের নাম আবার বাজনা হয়?

‘তা হলে তোমার নামটা ভালো। বাঁদরের চেহারাটা বিচ্ছিরি!’

‘না, দুটোই বিচ্ছিরি! আমার দুটোই চাই না।’

‘বাজনা!’ আবার আদর করে ডাকল মেয়েটি।

বাজনা কথা বলতে বলতে থামল।

‘খেয়ে নাও।’

‘ইচ্ছে করছে না।’

খাওয়ার ওপর রাগ করতে নেই, ঠকতে হয়।’

‘ইচ্ছে করে কেউ রাগ করে? সারাদিন ধরে সকলের সামনে আমায় অপমান করল। শহরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমার চেহারাটা সবাইকে দেখিয়ে বেড়াল। আমার রাগ হবে না?’ কেঁদে ফেলল বাজনা।

খাঁচার মধ্যে হাত পুরে দিল মেয়েটি। বাজনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। মুছে দিল। বাজনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘কেঁদো না, খেয়ে নাও। দুষ্টুমি না করলে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।’

‘বল, আমার পায়ের শেকল খুলে দেবে?’ জিজ্ঞেস করল বাজনা।

‘দুষ্টুমি যদি না কর, আমার কথা শোন, তবে খুলে দেব।’

 ‘বলছি তো আমি লক্ষ্মী হব। লক্ষ্মী তো আমায় হতেই হবে, নইলে তো বাঁদরই থেকে যাবে।

 ‘বেশ আমি তোমায় খুলে দিচ্ছি।’ বলে মেয়েটি খাঁচার দরজা খুলে দিল। বাজনার পায়ের শেকল সরিয়ে রাখল। বাজনা বাইরে বেরিয়ে এল।

‘এবার খেয়ে নাও?’ মেয়েটি একটি কলা তুলে দিল বাজনার হাতে। বাজনা খেয়ে ফেলল, একটি, দুটি, তিনটি, চারটি কলা। তারপর মেয়েটির হাত দুটি জড়িয়ে ধরল। জিজ্ঞেস। করল, ‘তুমি কে?’

‘যারা তোমার মতো দুষ্টু, তাদের আমি বন্ধু। আমি তোমার মালতিদিদি। দুষ্টুদের লক্ষ্মী করার কাজ আমার।’

‘তুমি চলে গেলে আমায় আবার কেউ বেঁধে রাখবে না তো?’ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল বাজনা।

‘তুমি দুষ্টুমি না করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

‘না, না, সত্যি বলছি আমি লক্ষ্মী হব।’

‘বেশ, কাল আমি আবার আসব। রাত হয়েছে, এখন আমি ফিরব।’

‘কাল তো শেষ দিন!’

‘কীসের শেষ?

‘কাল তিন দিন না! কাল যদি ঘন্টা না থামে, তা হলে তো তোমাদের রাজা আমাকে মেরে ফেলবে!’

‘আজকের দিনটি লক্ষ্মী হয়ে থাক, কাল এসে সব বলে দেব।’

‘সত্যি!’ আনন্দে নেচে উঠল বাজনা। লাফ দিল, তিড়িং! আরি ব্যস! কোথায় উঠে গেল! হুই-ই-ই ওপরে। আবার ধুপ করে মাটিতে পড়ল।

একটুও লাগল না। বাঁদর যে! বাঁদর লাফালে লাগে কি!

অবাক লাগল বাজনার নিজেরই। এতখানি লাফাতে পারে সে! বাজনা নিজের মনেই খিলখিল করে হেসে উঠল। মেয়েটিকে বলল, ‘আমি বাঁদর, ভুলেই গেছলুম।’

মেয়েটি বলল, ‘আমি তা হলে যাই।’

বাজনা জিজ্ঞেস করল, ‘কাল ঠিক আসবে তো?’

‘আসব।’

‘আমি এখানে ঘোরাঘুরি করলে, কেউ বকাঝকা করবে না তো?’

‘না, না। এখানে এখন আর কেউ আসবে না।’ বলে মেয়েটি হাঁটা দিল। নূপুর বাজল, ঝুন ঝুন। ফিকে নীল আলোর মধ্যে হারিয়ে গেল মেয়েটি।

রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এল।

অন্ধকারেই ছোটাছুটি লাগিয়ে দিল বাজনা। খুশিতে চেঁচিয়ে মাতিয়ে তুললে সেই নিজঝুম জায়গাটা। সে খাঁচার থেকে ছাড়া পেয়েছে। এখন যা খুশি করতে পারবে। কেউ কিচ্ছু বলার নেই। তাই হাত-পা ছুঁড়ে নাচতে লাগল বাজনা। তিড়িং বিড়িং লাফাতে লাফাতে ওদিকে চলে গেল। আবার ফিরে এল। সমস্ত খুশি যেন একসঙ্গে বাজনার বুকে নেচে উঠেছে।

বাজনা এখন নাচছে, লাফাচ্ছে, ছুটছে।

নাচতে নাচতে হঠাৎ ‘বাঁদর-পাড়া’র পাঁচিলের ওপর লাফ দিল বাজনা। পাঁচিলের ওপর দিয়ে ছুটল। একটুও ভয় লাগছে না, মজা লাগছে। ছুটতে ছুটতে তোলপাড় শুরু করে দিল, এ-পাঁচিল থেকে ও-পাঁচিল, ও-পাঁচিল থেকে সামনের ফটক। বাবা! সারা জায়গাটাই পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কোথাও একটু ফুটোফাটা নেই!

তারপর?

যাঃ! পাঁচিলের ওপর ছুটতে ছুটতে দিক হারিয়ে ফেলল বাজনা!

এ কোনদিকে এসে পড়েছে বাজনা! এদিকটা তো ‘বাঁদর-পাড়া’ নয়! সর্বনাশ! কী হবে?

আর ছুটল না বাজনা। পাঁচিলের ওপরই বসে রইল। এদিক-ওদিক জুলুক-জুলুক তাকিয়ে তাকিয়ে ঠাওর করতে লাগল। কিন্তু কিছুই তো দেখতে পাচ্ছে না স্পষ্ট করে! কোথায় চলে এসেছে, তা-ও বুঝতে পারছে না! কেমন করে বুঝবে? এখন বেশ রাত্তির। নিজঝুম। লোকও নেই, জনও নেই। সবাই এখন ঘরে। ঘুমুচ্ছে। চারিদিকে শুধু অন্ধকার।

তা হলেও বসে থাকলে তো চলবে না। একটা কিছু করতেই হয়। ‘বাঁদর-পাড়া’ তাকে খুঁজে বের করতেই হবে! কাল তার শেষদিন। মালতিদিদি এসে বলে দেবে, কেমন করে সে ঘন্টা থামাবে। কেমন করে আবার সে মানুষ হবে। ভাবতে ভারি ভালো লাগছিল বাজনার।

তাই পাঁচিলের ওপর দিয়েই আবার হাঁটা দিল। হাঁটতে হাঁটতে দূরে আলো দেখতে পেল বাজনা। আরও দূরে খুব উঁচু উঁচু বাড়ি। চওড়া চওড়া রাস্তা। আবছা-আবছা আলোয় এবার একটু একটু দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ বাজনার সারা শরীর শিউরে ওঠে! ওই রাস্তাটা দিয়েই সকালে হাতির পিঠে চেপে বাজনা শহর ঘুরছে না? হ্যাঁ, ঠিক বলেছে। আর ওই দিকটা? যেন আরও চেনা-চেনা! ওইটা তো রাজবাড়ি! ওই তো পল্টনরা দাঁড়িয়ে আছে, পাহারা দিচ্ছে। পাহারা না আর কিছু! দিব্যি ঢুলছে।

বাজনা খুব চুপিচুপি এগিয়ে গেল। ওই তো রাজবাড়ির সিংদরজা। পাঁচিলের ওপর হাঁটতে হাঁটতে সিংদরজা পেরিয়ে গেল বাজনা। একেবারে রাজদরবারের মুখোমুখি এসে পড়েছে। উঃ বাবা! চারিদিক কী চুপচাপ! একটি পাতারও শব্দ নেই। হয়তো রাজা ঘুমুচ্ছে এখন। কী চেহারা রাজার! মরে যাই মুখখানা দেখে! রাজা না ভেককি! কিন্তু রাজার চেহারার বিচার করেই বা কী করবে? বাজনার নিজের চেহারাটা কী হয়েছে? কী ছিরি!

ওই তো রাজদরবার! ওইখানেই তো পল্টনরা বাজনাকে নিয়ে গেছল। ওইখানেই তো রাজা ওর কাছ থেকে টাট্টুকে কেড়ে নিয়েছে। কী যেন নামটা রাজার! হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে। পড়েছে, চক্কুর চ্যাং-চ্যাং। হেসেই ফেলে বাজনা। যেমন রাজা, তেমনি নাম!

‘টাট্টু!’ খুব আস্তে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল বাজনার। মনে পড়ে যায় টাট্টুর কথা! বুকটা চমকে ওঠে। টাট্টু হয়তো এখনও রাজার ঘরে বন্দি হয়ে আছে! হঠাৎ বাজনার মনে হল টাট্টুকে খুঁজে বার করলে তো হয়। যখন রাজার ঘরের সামনেই এসে পড়েছে বাজনা, তখন চেষ্টা করতে দোষ কী! না, টাট্টুকে খুঁজে পেতেই হবে।

টুপ করে লাফিয়ে পড়ল বাজনা রাজদরবারের সামনে। সুট করে ভেতরে ঢুকে গেল। আবছা-আবছা আলো জ্বলছে। একটা আড়াল দেখে লুকিয়ে পড়লে ভালো হয়। কিন্তু লুকাবে কোথায়?সব ফাঁকা! ওই তো সিংহাসনটা দেখতে পাচ্ছে বাজনা। সিংহাসনের অনেকখানি পেছনে, পাশের দিকে আর একটা দরজা। গুটিগুটি এগিয়ে গেল সেদিকে। দরজার পর্দা সরিয়ে উঁকি মারল বাজনা। চট করে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।

আঃ! কী সুন্দর এদিকের এই ঘরটা! ফুর ফুর করে হাওয়া বইছে। মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে হাওয়ায়। আরে! আরে! ওই তো রাজা! পালঙ্কে শুয়ে আছে। সত্যি! যাচ্ছেতাই দেখতে। রাজা বলে মানে কী করে এখানকার মানুষগুলো। দেখো, অমন বিচ্ছিরি চেহারা, কিন্তু সেই ঝকমকে টিপটি এখনও ঠিক কপালে রয়েছে। টিপের আলো কড়িকাঠে ছড়িয়ে পড়েছে।

বাজনা পর্দার আড়াল সরিয়ে যেই এক পা ভেতরে গেছে, অমনি যেন কে খুব নরম গলায় ডাকল, ‘বাজনা!’

 বুকটা ধক করে উঠল বাজনার। আগুপিছু কিছু না দেখে, কিছু না ভেবে ছুটে পালঙ্কের নীচে লুকিয়ে পড়ল।

‘বাজনা, লুকাচ্ছ কেন? আমি।’

বাজনা তবুও বেরুল না।

‘বাজনা বেরিয়ে এস, আমি টাট্টু।’

বুকটা থমকে গেল বাজনার। ‘টাট্টু!’ উঁকি মারল পালঙ্কের নীচ থেকে।

‘ওখান থেকে দেখতে পাবে না আমায়। আমি সিন্দুকের মাথার ওপর বসে আছি। বাঁদিকে দেখো!’

বাঁদিকে চোখ ফেরাল বাজনা। একটা সিন্দুক দেখা যাচ্ছে বটে! সিন্দুকের মাথার দিকে চাইল বাজনা। হ্যাঁ, সত্যিই তো টাট্টু বসে আছে!

বেরিয়ে পড়ল বাজনা পালঙ্কের নীচ থেকে। ছুট্টে চলে গেল সিন্দুকটার সামনে। মারল লাফ, একেবারে সিন্দুকের মাথায়। জড়িয়ে ধরল টাট্টুকে দুহাত দিয়ে।

‘টাট্টু!’ আনন্দে লাফিয়ে আর একটু হলেই বাজনা চেঁচিয়ে ফেলেছিল!

টাট্টু তাড়াতাড়ি থামিয়ে দিল বাজনাকে। চাপা গলায় বলল, ‘এখানে কোনো কথা নয়, বাইরে চল।’

বাজনাও চটপট টাষ্ট্রকে নিয়ে বাইরে ছুট দিতে গেল।

 টাট্টু বলল, ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও।’

‘কেনো?’

‘একটা কাজ করতে হবে।’

‘কী কাজ?

‘চক্কর চ্যাং-চ্যাং-এর কপালে যে-টিপটা দেখতে পাচ্ছ, ওটা নিতে হবে।’

বাজনা ভয় পেয়ে গেল। বলল, ‘বাবা! কেমন করে নেব? ঘুম ভেঙে গেলে!’

‘নিতেই হবে। তোমার এখন খুব অসুবিধা নেই। লাফ দিয়ে ওই জানলা গলে পালাবে।’ বলে টাট্টু চক্কর চ্যাং-চ্যাং-এর বিছানার ঠিক ওপরে, মাথার দিকে জানলাটা দেখাল।

বাজনা জিজ্ঞেস করল, ‘টিপটা বুঝি খুব দামি?’

 টাট্টু বলল, ‘খুব কাজের।’

 ‘তা হলে তো নিতেই হবে।’

‘তাড়াতাড়ি করো। নইলে রাজার ঘুম ভেঙে যেতে পারে।’

বাজনা এক হাতে টাট্টুকে বাগিয়ে ধরল। নিঃসাড়ে রাজার পালঙ্কে উঠে পড়ল। ঝট করে চ্যাং-চ্যাং রাজার কপাল থেকে টিপটা ছিনিয়ে নিয়ে মারল লাফ। একেবারে জানলা দিয়ে বাইরে। চক্কুর চ্যাং-চ্যাং থতমত খেয়ে লাফিয়ে উঠল। আঁকপাঁকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ‘ধর, ধর, পালাল, পালাল।’

রাজার চেঁচামেচি, হাঁকাহাঁকি শুনে হইহই রইরই করে সকলে ছুটে এল। কী হল? কী হল?

 চক্কুর চ্যাং-চ্যাং চোখ দুটো কপালে তুলে বলল, ‘টিপ চুরি গেল।’

অমনি শিঙা বেজে উঠল, প্যাঁ-প্যাঁ-প্যাঁ। সমস্ত রাজবাড়িটা তটস্থ হয়ে জেগে উঠল। চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল, ‘রাজার টিপ চুরি গেছে।’

কে চুরি করল?

কে চুরি করল?

চক্কুর চ্যাং-চ্যাং বলল, ‘বাঁদর।’ বলে হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি লাগিয়ে দিল।

 বাজনা ততক্ষণে জানলা গলে মস্ত উঁচু পাঁচিলটায় লাফিয়ে উঠে বসেছে। রাত্তির বলে কারো নজরই যাচ্ছে না সেদিকে।

শিঙা বাজছে, তার সঙ্গে সঙ্গে ঢ্যাম-কুড়-কুড় করে হুঁসিয়ারির ঢ্যাঁড়া পড়ে গেল। পল্টনরা রাজবাড়িটা ঘিরে ঘিরে ছুটতে লাগল। যেন বাঁদর পালাতে না পারে। খুঁজতে লাগল বাঁদরটাকে।

খুঁজতে খুঁজতে একজন পল্টন বাজনাকে পাঁচিলের ওপর দেখতে পেয়ে গেছে! এই রে! পল্টন চেঁচিয়ে উঠল, ‘ওই বাঁদর।’

অমনি ‘ওই বাঁদর, ওই বাঁদর’ বলতে বলতে হাজার হাজার পল্টন ছুটে এল।

বাজনা ভাবল, এবার গেছি! বললে, ‘টাট্টু, টাট্টু, এবার কী করি?”

টাট্টু বলল, ‘তাড়াতাড়ি রাজবাড়ির বাইরে লাফিয়ে পড়ো।’

‘বাইরের রাস্তায় পল্টন যে!’

‘থাক পল্টন। লাফ দিয়েই রাজার টিপ আমার কপালে ঠেকিয়ে দিও।’

‘তারপর?

‘তারপর যা করার আমি করব।’

ঠিক তাই। পল্টনরা বাইরে নীচে হইহই করছে, আর বাজনা মারল লাফ। লাফ মেরেই টাট্টুর কপালে চুঁইয়ে দিল টিপটা।

ওমা, দেখো! দেখো! টিপটাটাট্টুর কপালে আটকে গেল, আর কাঠের ঘোড়া টাট্টু একটা মস্ত জ্যান্ত ঘোড়া হয়ে ‘চিঁহিঁহিঁ’ করে চেঁচিয়ে উঠল! চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘বাজনা, আমার পিঠে লাফিয়ে ওঠ।’

বাজনা তো ভ্যাবাচ্যাকা! লাফিয়ে উঠল টাট্টুর পিঠে। টাট্টু বাজনাকে পিঠে নিয়ে ছুট দিল। টগবগ, টগবগ!

পল্টনরা তাই না দেখে একেবারে থ। কী করব, কী করব ভাবতে-ভাবতেই টাট্টু চোখের বাইরে চলে গেল! অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

বাজনাকে পিঠে নিয়ে অনেকক্ষণ ছুটল টাট্টু। ছুটতে ছুটতে একটা গভীর জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বাজনা অবাক হয়ে টাট্টুর গলা জড়িয়ে ছুটছে আর ভাবছে, বাবা! এ আবার কী কাণ্ড!

জঙ্গলের বেশ খানিকটা ভেতরে এসে টাট্টু হাঁফ ছাড়ল।’

বাজনা জিজ্ঞেস করল, ‘এখানে কেন?’

টাট্টু বলল, ‘লুকিয়ে থাকতে হবে। তা না হলে ধরা পড়বে। পল্টনরা সহজে ছাড়বে না!’

আরও খানিকটা এসে টাট্টু একেবারে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, ‘বাজনা, এক কাজ করো, টিপটা আমার কপাল থেকে তুলে তোমার কপালে চুঁইয়ে দাও।’

বাজনা জিজ্ঞেস করল, ‘কেন?’

‘দেখো না কী হয়!’