‘এসো সখি’বলে বহু যুবরাজ তোমাকে সর্বদা’
তেপান্তরে, নদীতীরে, কাশবনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
ছায়াচ্ছন্ন শাল তাল তমালের ভিড়ে টেনে এনে
মধ্যদিনে শুনিয়েছে রাখালের বেণু। বড়ো বেশি
জলজ কণিকা ফুসফুসে জমেছিলো বলে তুমি
ভুগেছো সর্দিতে খুব, এত ছিঁচকাঁদুনে হয়েছো
আদরিণী কাব্যলক্ষ্মী আমাদের, এত আলুথালু!
তোমাকে বালিকা ভেবে অনেক চটুল মান্যবর
অক্লান্ত বাজিয়েছেন ঝুমঝুমি আর লজেজ্ঞুস
সেধেছেন, কেউ কেউ রঙিন রিবনে বাঁধা কিছু
মনোহারী বাক্স-তুমি হাসিমুখে করেছো গ্রহণ।
(মাঝে-মাঝে ক’জন ঐন্দ্রজালিক নালিমার থেকে
ছিনিয়ে হাঁসের মালা দিয়েছে তোমার কোলে ছুঁড়ে)
দেখেছি তো কতিপয় বিদূষক সাতপুরুষের
কাহন কাহন সোনারূপো দিয়ে নাকছাবি আর
কেয়ূর, পায়ের মল দিয়েছে গড়িয়ে, তুমি গর্বে
গরবিনী, বেড়িয়েছো পাড়া সেই কিঙ্কিণী বাজিয়ে।
না, আমি নিন্দুক নই। তুমিতো জানোই কী আনন্দে
তোমার সান্নিধ্য চাই, একনিষ্ঠ প্রেমিকের মতো
বসে থাকি তোমারই বাগানে। বেল জুঁই কি টগর
ইত্যাদি বটেই, এমনকি মরাপাতা নিই তুলে
ব্যগ্র হাতে। যখন উধাও সব পুষ্পল স্বপ্নেরা
তখন ও তোমার তীব্র আধিপত্য চৈতন্যে আমার।
না, আমি নিন্দুক নই। আপাতত অসহ্য তোমার
চটকসর্বস্ব মুখ-এতকাল একই অঙ্গরাগ
দেখে ঘেন্না ধরে গেছে। যখন ঝুলন্ত বারান্দায়
দাঁড়াও, বাড়াও মুখ আর হৃদয় দুয়ার খুলে
উঁকি মারো জনপথে, কিংবা নিশীথ টেবিলে রেখে
অলংকার, বিবর্ণ দস্তানা তুমি শস্তা হোটেলের
কামরায় ভাসমান প্রমোদ হিল্লোলে, অনেকটা
বুক-পেট দেখিয়ে দুপুরে ত্রভিনিউ ঘুরে ঘুরে
যখন উত্তাল ঢেউ তুলে হাঁটো নিতম্ব দুলিয়ে,
লজ্জা কি পাও না তুমি? আমি মুখ নিচু করে থাকি।
একই প্রসাধিত মুখ, একই ছলাকলা দেখে দেখে
আলোড়িত অন্ত্রতন্ত্র-বিবমিষা, শুধু বিবমিষা!
বারোয়ারী যে মালা পরেছো সেতো পচে পচে আজ
এক স্তূপ দুর্দশার মতো আর অভিনবত্বমাতাল
কিছু যুবা তোমাকে নামালো পথে, বনেদী জরির
শাড়ি সাতফালা করে ছিঁড়ে গুঁড়ো এলাচের মতো
নক্ষত্রখচির সার্বভৌম অন্তর্বাস কুটি কুটি
করলো সখেদে। তুমি ধুলোয় উবুড় হয়ে রইলে
লাস্যময়ী! স্বেচ্ছাসেবকের দল প্রবল উদ্যমে
তোমার মরালকণ্ঠে দিলো পুরে কতো দুর্ভিক্ষের
বিশীর্ণ পাঁচালি। পচা মাখনের মতো দুর্বিষহ
গন্ধ-প্রসবিনী শরীরে তোমার ভনভনে মাছি
এক ঝাঁক। বলো, বিদ্যাধরী, বলো ন্যক্কার, নেইকি
কিছুতেই? ঘেন্না, বড়ো ঘেন্না, বড়ো বেশি ঘেন্না লাগে-
কালের মন্দিরা বাজে ডানে বাঁয়ে দুই হাতে, শোনো,
এসো ভিন্ন সাজে বিদ্যাধরী ওগো ঘেন্না-জাগানিয়া!