বাঁশির শব্দ
এই তো সেদিন তেজী, অস্থির, ব্যস্ত বাবা কোনওক্রমে সময়
বাঁচিয়ে
দায়সারা সময় দিত ছেলেকে
শোনাত মেঘনাদ বধ, টিনটিন ও কণিষ্কের মুণ্ডু কাহিনী
এখন সেই বাবাই ছেলের পাশে ঝুকে দাঁড়িয়ে
বারবার
কমপিউটারের ইঁদুর সরানো শিখতে ভুল করছে,
বাবার শিরা-উপশিরা থেকে যৌবন শুষে নিয়েছে ছেলে
জিনবাহিত উত্তরাধিকারের মধ্যে কোথাও শোনা যাচ্ছে
একটা বাঁশির সুর
ঝর্নার পাশে বল্কলের পোশাক পরে একজন কেউ
সুর সেধেছিল
ইন্টারনেটের মধ্যে যতই উঁকি মারছে সারা বিশ্ব
ততই বাবা ও ছেলের মধ্যে চওড়া হচ্ছে দূরত্ব
টুকরো টুকরো বাক্য ও নিস্তব্ধতা, তবু
কত কথা জমে আছে
ঝনঝনাচ্ছে টেলিফোন, রিসিভার তোলার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত
আমার না তোমার?
খেলনা টেলিফোন ভেঙে ফেলে একদিন যে কেঁদেছিল
এখন সে বলছে, ই-মেল আসছে, বাবা, তুমি ধরো না
ক্যাসেটে আধা-পর্নোগ্রাফি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ল
প্রৌঢ় মানুষটি
ছেলে টি ভি বন্ধ করে বাবার গায়ে বিছিয়ে দিল কম্বল
মা শখের রান্না ঘরে ছ্যাকছোঁক শব্দে, স্ত্রী জল-ফোয়ারার নীচে
ছেলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল
আবার নেমে এল নীচে
অনেক কথা বাকি আছে তাই বসল বাবার শিয়রের কাছে
বাবা যেন একটা শিশু, তার ইচ্ছে করল হাত বুলিয়ে দিতে
জন্মদাতার কাঁচা পাকা চুলে
দিল না, বাবার চেয়েও বড় হয়ে সে একটা সিগারেট ধরাল
জিনবাহিত উত্তরাধিকারের মধ্যে শোনা যাচ্ছে একটা
বাঁশির শব্দ…