তিন
পরদিন সকাল আন্দাজ ন’টার সময় একখানা মোটর আসিয়া আমাদের বাসার সম্মুখে থামিল। ব্যোমকেশ খবরের কাগজ হইতে মুখ তুলিয়া ভ্রূ কুঞ্চিত করিল, ‘পাণ্ডেজি—এত সকালে!’
পরক্ষণেই পাণ্ডেজি আমাদের বসিবার ঘরে প্রবেশ করিলেন। পরিধানে পুলিস ইউনিফর্ম, মুখ গম্ভীর। ব্যোমকেশের সপ্রশ্ন দৃষ্টির উত্তরে বলিলেন, ‘দীপনারায়ণ সিং মারা গেছেন।’
আমরা ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিলাম, কথাটা ঠিক যেন হৃদয়ঙ্গম হইল না।
‘মারা গেছেন!’
‘এইমাত্র রতিকান্ত টেলিফোন করেছিল। সকালবেলা ডাক্তার পালিত এসেছিলেন দীপনারায়ণ সিংকে ইন্জেকশন দিতে। ইন্জেকশন দেবার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে। আমি সেখানেই যাচ্ছি। আপনারা যাবেন?’
ব্যোমকেশ দ্বিরুক্তি না করিয়া আলোয়ানাখানা কাঁধে ফেলিল। আমিও উঠিলাম।
‘চলুন।’
মোটরে যাইতে যাইতে কাল রাত্রির দৃশ্যগুলি মনে পড়িতে লাগিল। দীপনারায়ণ সিংকে একবারই দেখিয়াছি, কিন্তু তাঁহাকে ভাল লাগিয়াছিল; শিষ্ট সহাস্য ভদ্রলোক, রোগ হইতে সারিয়া উঠিতেছিলেন। হঠাৎ কী হইল? আর শকুন্তলা—
শকুন্তলা বিধবা হইয়াছেন…অন্তর হইতে যেন এই নিষ্ঠুর সত্য স্বীকার করিতে পারিতেছি না।
গন্তব্য স্থানে পৌঁছিলাম। ফটকের কাছে গোটা তিনেক মোটর দাঁড়াইয়া আছে। পাণ্ডেজি গাড়ি থামাইয়া অবতরণ করিলেন। দেউড়ি পার হইয়া আমরা বাড়ির সদর দরজায় উপস্থিত হইলাম। বাগানে কেহ নাই, চারিদিক যেন থমথম করিতেছে।
সদর দরজার সম্মুখে ইন্সপেক্টর রতিকান্ত গম্ভীর মুখে পাণ্ডেজিকে স্যালুট করিল। আমাদের দেখিয়া তাহার ভ্রূ ঈষৎ উত্থিত হইল, কিন্তু সে কিছু না বলিয়া সকলকে সঙ্গে লইয়া ভিতরে প্রবেশ করিল।
হল-ঘরের দ্বারের সম্মুখে পালঙ্কের মত আসনটি পূর্ববৎ রহিয়াছে, তাহার উপর দীপনারায়ণ সিং-এর মৃতদেহ। মৃতদেহের পাশে বসিয়া ডাক্তার পালিত এক দৃষ্টে মৃতের মুখের পানে চাহিয়া আছেন। ঘরে আর কেহ নাই, কেবল আসবাবগুলি গত রাত্রির মতই সাজানো রহিয়াছে।
আমরা পা টিপিয়া টিপিয়া পালঙ্কের পাশে গিয়া দাঁড়াইলাম। দীপনারায়ণ সিংকে কাল রাত্রে যেমন দেখিয়াছিলাম, আজ মৃত্যুর স্পর্শে তাঁহার আকৃতির কোনও পরিবর্তন হয় নাই। চক্ষু মুদিত, মুখের স্নায়ু পেশী শিথিল; যেন ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন।
ডাক্তার পালিত এমন তন্ময় হইয়া মৃতের মুখের পানে চাহিয়া ছিলেন যে আমাদের আগমন বোধহয় জানিতে পারেন নাই। পাণ্ডেজির লঘু করস্পর্শে তাঁহার চমক ভাঙিল। তিনি উঠিয়া দাঁড়াইয়া একে একে আমাদের মুখের পানে চাহিলেন, তারপর বলিলেন, ‘পোস্ট-মর্টেম হওয়া দরকার। আর—এই শিশিটা রাখুন।’ তাঁহার হাতের কাছে একটি রবারের স্টপার দেওয়া ক্ষুদ্র বাদামী রঙের শিশি ছিল, সেটি পাণ্ডেজিকে দিলেন। পাণ্ডেজি শিশি চোখের সামনে তুলিয়া ধরিয়া দেখিলেন তখনও তাহাতে প্রায় আধ শিশি তরল পদার্থ রহিয়াছে। তিনি শিশিটি রতিকান্তের হাতে দিয়া শান্তকণ্ঠে ডাক্তারকে বলিলেন, ‘আসুন, ওদিকে গিয়ে বসা যাক।’
ডাক্তার পালিত তাঁহার হ্যান্ডব্যাগটি পালঙ্কের উপর হইতে তুলিয়া লইলেন। আমরা সকলে অদূরে একটি সোফা-সেটে গিয়া বসিলাম। রতিকান্ত দাঁড়াইয়া রহিল। পাণ্ডেজি জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘বাড়ির আর সকলে কোথায়?’
রতিকান্ত বলিল, ‘তাদের সব ওপরে পাঠিয়ে দিয়েছি। মিস্ মান্না শকুন্তলা দেবীর কাছে আছেন।’
‘মিস্ মান্না কে? লেডি ডাক্তার?’
পালিত বলিলেন, ‘হ্যাঁ। তিনিও এ বাড়ির বাঁধা ডাক্তার। শকুন্তলার অবস্থা দেখে তাঁকে টেলিফোন করে আনিয়ে নিয়েছি।’
‘বেশ করেছেন। দেবনারায়ণের খবর কি?’
‘দেবনারায়ণটা ইডিয়ট—ছেলেমানুষের মত হাউ হাউ করে কাঁদছে। দেওয়ান গঙ্গাধর বংশী তার কাছে আছে। বেচারী চাঁদনীরই বিপদ, নিজে কাঁদছে, একবার স্বামীর কাছে ছুটে আসছে, একবার শকুন্তলার কাছে ছুটে যাচ্ছে।’ তিনি নিশ্বাস ফেলিলেন।
পাণ্ডেজি কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন, তারপর বলিলেন, ‘ডাক্তার পালিত, এবার গোড়া থেকে সব কথা বলুন।’
ডাক্তার তাঁহার ব্যাগটি কোলের উপর হইতে নামাইয়া রাখিয়া বলিলেন, ‘বলবার বেশি কিছু নেই। আন্দাজ আটটার সময় আমি এসে দেখলাম দীপনারায়ণবাবু ওই পালঙ্কে বসে অপেক্ষা করছেন। আমাকে দেখে হেসে বললেন—এই শীতে আপনি এত শীগ্গির আসবেন ভাবিনি, চা খান। আমি বললাম—আচ্ছা, আগে ইন্জেকশনটা দিই। চাঁদনী উপস্থিত ছিলেন, শকুন্তলা আজ উপস্থিত ছিলেন না। আমি দীপনারায়ণবাবুর নাড়ি দেখলাম, নাড়ি বেশ ভাল। তখন সিরিঞ্জে লিভার এক্সট্র্যাক্ট ভরে তাঁর বাহুতে ইন্জেকশন দিলাম। ইন্ট্রামাস্কুলার ইন্জেকশন, হাঙ্গামা কিছু নেই, কিন্তু দীপনারায়ণবাবু আস্তে আস্তে শুয়ে পড়লেন। দেখলাম তাঁর চোখের পাতা ভারী হয়ে বুজে আসছে; তিনি কথা বলার চেষ্টা করলেন কিন্তু বলতে পারলেন না। আমি তখনই তাঁকে এড্রেনালিন্ দিলাম, তারপর আর্টিফিসিয়াল রেস্পিরিশন দিতে লাগলাম। কিন্তু কোনও ফল হল না, তিন-চার মিনিটের মধ্যে তাঁর ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল।’
ডাক্তার একবার নিজের বুকের উপর আঙুল বুলাইয়া নীরব রহিলেন। তিনি প্রবীণ ডাক্তার, আকস্মিক মৃত্যু তাঁহার কাছে নূতন নয়। কিন্তু তিনি যে ভিতরে ভিতরে কত বড় ধাক্কা খাইয়াছেন তাহা তাঁহার কঠিন সংযম ভেদ করিয়া ফুটিয়া উঠিল।
পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘মৃত্যুর কারণ কী তা আপনি বুঝতে পারেননি?’
ডাক্তার বলিলেন, ‘লক্ষণ দেখে মনে হয়েছিল—এনাফিলেকটিক শক্। কিন্তু এখন দেখছি তা নয়।’
‘তবে কী হতে পারে?’
‘ঠিক বুঝতে পারছি না। হয়তো কোনও বিষ।’
পাণ্ডেজি ব্যোমকেশের দিকে দৃষ্টি ফিরাইলেন, ব্যোমকেশ বলিল, ‘কিউরারি বিষ হতে পারে কি?’
ডাক্তার চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া কিছুক্ষণ চাহিয়া রহিলেন, তারপর কতকটা নিজ মনেই বলিলেন, ‘কিউরারি! হতে পারে। তবে পোস্ট-মর্টেম না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চয় বলা যায় না।’
‘যদি কিউরারি বিষে মৃত্যু হয়ে থাকে পোস্ট-মর্টেমে কিউরারি পাওয়া যাবে?’
‘যাবে। কিডনীতে পাওয়া যাবে।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘ডাক্তারবাবু, আপনি যে শিশিটা এখনি পাণ্ডেজিকে দিলেন ওটা কি?’
ডাক্তার বলিলেন, ‘ওটা লিভার এক্সট্র্যাক্টের ভায়াল। ওতে দশ শিশি ওষুধ থাকে, ভায়ালের মুখ রবার দিয়ে সীল করা থাকে। সিরিঞ্জের ছুঁচ রবারে ঢুকিয়ে ভায়াল থেকে দরকার মতো ওষুধ বের করে নেওয়া যায়। আজ আমি ওই ভায়াল থেকেই ওষুধ বের করে ইন্জেকশন দিয়েছিলাম।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘ইন্জেকশন দেবার সঙ্গে সঙ্গে যখন মৃত্যু হয়েছে তখন অনুমান করা যেতে পারে যে ইন্জেকশনই মৃত্যুর কারণ। তাহলে ওই ভায়ালে বিষ আছে?’
ডাক্তার বলিলেন, ‘তাছাড়া আর কি হতে পারে? অথচ—কাল সন্ধ্যেবেলা ওই ভায়াল থেকেই একজন রুগীকে ইন্জেকশন দিয়েছি, সে দিব্যি বেঁচে আছে।’
‘ভায়ালটা আপনার ব্যাগের মধ্যেই থাকে?’
‘হ্যাঁ। ফুরিয়ে গেলে একটা নতুন ভায়াল রাখি।’
‘আচ্ছা, বলুন দেখি, কাল রাত্তিরে আপনার ব্যাগ কোথায় ছিল?’
‘ডিস্পেনসারিতে ছিল।’
‘রাত্তিরে যখন কল আসে তখন কি করেন, ডিস্পেনসারি থেকে ব্যাগ নিয়ে রুগী দেখতে যান?’
‘না, আমার বাড়িতে আর একটা ব্যাগ থাকে, রাত্তিরে কল এলে সেটা নিয়ে বেরুই।’
‘বুঝেছি। কাল রাত্তিরে যখন আপনার ডিস্পেনসারিতে চোর ঢুকেছিল তখন এ ব্যাগটা সেখানেই ছিল?’
‘হ্যাঁ।’ ডাক্তার চকিত হইয়া উঠিলেন— ‘কাল রাত্রি আন্দাজ সাতটার সময় আমি রুগী দেখে ডিস্পেনসারিতে ফিরে আসি। তখন আর বাড়ি ফেরবার সময় ছিল না, ব্যাগ রেখে কম্পাউণ্ডারকে বন্ধ করতে বলে সটান এখানে চলে এসেছিলাম।’
‘ও’—ব্যোমকেশ একটু চিন্তা করিল, ‘কম্পাউণ্ডার কখন ডিস্পেনসারি বন্ধ করে চলে গিয়েছিল আপনি জানেন?’
‘জানি বৈকি। কাল রাত্রে চুরির খবর পেয়ে এখান থেকে ফিরে গিয়ে আমি কম্পাউণ্ডারকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, সাতটার পরই সে ডাক্তারখানা বন্ধ করে নিজের বাড়ি চলে গিয়েছিল।’
‘ভাল কথা, ডিস্পেনসারি থেকে আর কিছু চুরি গিয়েছিল কিনা জানতে পেরেছেন?’
‘আর কিছু চুরি যায়নি। শুধু টেবিলের দেরাজ থেকে কয়েকটা টাকা আর সিকি আধুলি গিয়েছিল।’
ব্যোমকেশ পাণ্ডেজির দিক হইতে রতিকান্তের দিকে চক্ষু ফিরাইয়া শান্ত কণ্ঠে বলিল, ‘তাহলে চুরির আসল উদ্দেশ্য বোঝা গেল।’
রতিকান্ত এতক্ষণ চক্ষু কুঞ্চিত করিয়া ব্যোমকেশের সওয়াল জবাব শুনিতেছিল। যে প্রশ্ন পুলিসের করা উচিত তাহা একজন বাহিরের লোক করিতেছে ইহা বোধহয় তাহার ভাল লাগে নাই। কিন্তু ব্যোমকেশ পাণ্ডেজির বন্ধু, তাই সে নীরব ছিল। এখন সে একটু নীরস স্বরে বলিল, ‘কী বোঝা গেল?’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘বুঝতে পারলেন না? চোর টাকা চুরি করতে আসেনি। সে লিভার এক্সট্র্যাক্টের ভায়ালটা বদলে দিয়ে গেছে।’
পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘বদলে দিয়ে গেছে?’
‘কিম্বা ডাক্তারবাবুর ভায়ালে কয়েক ফোঁটা তরল কিউরারি সিরিঞ্জের সাহায্যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। ফল একই। চোর জানত আজ সকালবেলা দীপনারায়ণ সিংকে ইন্জেকশন দেওয়া হবে। —এবার ব্যাপারটা বুঝেছেন?’
কিছুক্ষণ সকলে স্তব্ধ হইয়া রহিলাম। তারপর পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘আজ সকালে ইন্জেকশন দেওয়া হবে কে কে জানত?’
ডাক্তার বলিলেন, ‘বাড়ির সকলেই জানত রবিবার সকালে ইন্জেকশন দেওয়া হয়, আমি প্রথমে ওঁকে ইন্জেকশন দিয়ে তারপর রুগী দেখতে বেরুই।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘কাল রাত্তিরে আমিও জানতে পেরেছিলাম, ডাক্তারবাবু বলেছিলেন। সুতরাং ওদিক থেকে কাউকে ধরা যাবে না।’
ইন্সপেক্টর রতিকান্ত কথা বলিল, পিছন হইতে পাণ্ডেজির চেয়ারের উপর ঝুঁকিয়া বলিল, ‘স্যার, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো অপঘাত মৃত্যু, ডাক্তার পালিত ভুল করে অন্য ওষুধ ইন্জেকশন দিয়েছেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে—। আমি এ কেসের চার্জ নিতে চাই।’
পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘নিশ্চয়, তোমারই তো এলাকা। তুমি চার্জ নাও। এখনি লাশ পোস্ট-মর্টেমের জন্য পাঠাও। আর ওই ওষুধের ভায়ালটা পরীক্ষার জন্যে ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দাও। এ ব্যাপারের নিষ্পত্তি হওয়া চাই।’
রতিকান্তের মুখ কঠিন হইয়া উঠিল, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন স্যার, নিষ্পত্তি আমি করব। দীপনারায়ণবাবু আমার মুরুব্বি ছিলেন, কুটুম্ব ছিলেন, তাঁকে যে খুন করেছে সে আমার হাতে ছাড়া পাবে না।’
তাহার কথাগুলা একটু নাটুকে ধরনের হইলেও ভিতরে খাঁটি হৃদয়াবেগ ছিল। সে স্যালুট করিয়া চলিয়া যাইতেছিল, পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘রতিকান্ত, আমার বন্ধু শ্রীব্যোমকেশ বক্সীকে তুমি বোধহয় চেনো না। উনি বিখ্যাত ব্যক্তি, আমাদের লাইনের লোক। উনিও তোমাকে সাহায্য করবেন।’
রতিকান্ত ব্যোমকেশের পানে চাহিল। ব্যোমকেশ সম্বন্ধে তাহার মনে খানিকটা বিস্ময়ের ভাব ছিল, এখন সত্য পরিচয় পাইয়া সে সুখী হইতে পারে নাই তাহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হইল। সে ধীরে ধীরে বলিল, ‘আপনি বিখ্যাত ব্যোমকেশ বক্সী? আপনার কয়েকটি কাহিনী আমি পড়েছি, হিন্দীতে অনুবাদ হয়েছে। তা আপনি যদি অনুসন্ধানের ভার নেন—’
ব্যোমকেশ তাড়াতাড়ি বলিল, ‘না না, তদন্ত আপনি করবেন। আমার পরামর্শ যদি দরকার হয় আমি সাধ্যমত সাহায্য করব—এর বেশি কিছু নয়।’
রতিকান্ত বলিল, ‘ধন্যবাদ। আপনার সাহায্য পাওয়া তো ভাগ্যের কথা। —আচ্ছা স্যার, আমি এবার যাই, লাশের ব্যবস্থা করতে হবে।’ স্যালুট করিয়া রতিকান্ত চলিয়া গেল।
আমরাও উঠিলাম। এখানে বসিয়া থাকিয়া আর লাভ নাই। ডাক্তার পালিত ইতস্তত করিয়া বলিলেন, ‘আমি শকুন্তলাকে একবার দেখে যাই। অবশ্য, তার কাছে মিস্ মান্না আছেন—’
এই সময় বাড়ির ভিতর দিক হইতে একটি মহিলা প্রবেশ করিলেন। দীর্ঘাঙ্গী, আঁট-সাঁট শাড়ি পরা, চোখে চশমা, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, ভাবভঙ্গীতে চরিত্রের দৃঢ়তা পরিস্ফুট। তাঁহাকে দেখিয়া ডাক্তার পালিত সেই দিকে অগ্রসর হইয়া গেলেন। দুইজনে নিম্ন স্বরে কথা হইতে লাগিল।
ব্যোমকেশ পাণ্ডেজির পানে চাহিয়া ভ্রূ তুলিল, পাণ্ডেজি হ্রস্বকণ্ঠে বলিলেন, ‘মিস্ মান্না।’
মিস্ মান্না কিছুক্ষণ কথা বলিয়া আবার ভিতর দিকে চলিয়া গেলেন, ডাক্তার পালিত আমাদের কাছে ফিরিয়া আসিলেন। দেখিলাম তাঁহার কপালে গভীর ভ্রূকুটি।
পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘নতুন খবর কিছু আছে নাকি?’
ডাক্তার বলিলেন, ‘খবর আছে, কিন্তু নতুন নয়। কাল রাত্রেই সন্দেহ করেছিলাম।’
‘কি সন্দেহ করেছিলেন?’
ক্ষণেক নীরব থাকিয়া ডাক্তার বলিলেন, ‘শকুন্তলা অন্তঃসত্ত্বা।’