বলো কোন আস্তানায় যাবো?

আমার আপনকার কণ্ঠস্বর কখনও সখনও
বড়ই অচেনা লাগে নিজেরই নিকট,
যখন দেয়ালে কিংবা আকাশের দিকে
তাকিয়ে কীসব এলেবেলে কথা বলি
বুঝিবা নিজেরই সঙ্গে। সে-সব অদ্ভুত কথা নিজেও বুঝি না
কখনও সখনও, যেন অন্য কেউ বলে যায় আমার মাধ্যমে।

এই ঢাকা, প্রিয়তম শহর আমার, একে মন
দিয়েছি বিলিয়ে অকৃপণ
দাতার ধরনে, এ শহর কত না মধুর স্মৃতি
এঁকেছে প্রাণের পটে, কেউ কি রেখেছে
হিসেব কখনও তার? কত না ঘুরেছে দিনরাত
উদ্ভ্রান্ত তরুণ কবি অলিতে গলিতে, রাজপথে! তার কাছে
বাগানের ফুল, গাছপালা, মনে হতো,
হয়েছে মাতাল যেন নিজেদেরই ঘ্রাণে।

বার্ধক্যের জীর্ণ ঘাটে পৌঁছে কবি দীর্ঘশ্বাস ফেলে
ভাবে, প্রশ্ন করে নিজেকেই-জীবন কি মরীচিকা শেষ তক?
থাকা না-থাকার ধাঁধা কোনও? এই যে টেবিলে ঝুঁকে
এত কালো শব্দের ভরা হলো সাদা পাতা
দিবানিদ্রা ত্যাগ করে, রাত জেগে বছরের পর
বছর কাটিয়ে, বলো আখেরে কী তার পরিণতি?
অনন্যা রূপসী এক নিঠুরাই মায়াবী সঙ্কেতে প্রায়শই
ডেকে নিয়ে যায় অনুপম
হ্রদের কিনারে, প্ররোচিত করে নেমে এসে তীরে
সাঁতার কাটার জন্যে। সেই
আমন্ত্রণ পারি না উপেক্ষা
করতে বস্তুত কিছুতেই। পুলকিত নেমে পড়ি তড়িঘড়ি।

একি! তাকে স্পর্শ আর চুম্বন করার
মুহূর্তেই, হায়, ডুবে যেতে থাকি হ্রদের পাতালে,
পারি না নিশ্বাস নিতে, কখন যে কার করুণায়
নিজেকে দেখতে পাই এক বটগাছের তলায়। চোখে পড়ে,
লাল আলখাল্লা পরা সেবারত একজন সস্নেহে তাকিয়ে
আছেন আমার দিকে। কিছু না বলেই মৃদু হেসে
কে জানে কোথায় শান্ত পায়ে
মিলিয়ে গেলেন যেন অদূর দিগন্তে। সূর্য ডোবে
প্রথামতো, বলো কোন আস্তানায় যাবো?
২৮-১১-২০০৩