১ পঁচিশ বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে অমত্সিয মোট ২৯ বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মাতা য়িহোযদ্দনও ছিলেন জেরুশালেম থেকেই।
২ অমত্সিয প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ীসমস্ত কাজ করলেও তিনি সর্বান্তঃকরণে এইসব কাজ করেন নি।
৩ অবশেষে তিনি রাজা হিসেবে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠিত করলেন এবং যে সমস্ত রাজকর্মচারীরা তাঁর পিতাকে খুন করেছিল তাদের হত্যা করলেন।
৪ কিন্তু অমত্সিয এইসব ব্যক্তিদের সন্তানদের হত্যা করেন নি। কারণ তিনি মোশির পুস্তকে লেখা বিধি অনুযায়ীকাজ কর়েছিলেন। প্রভু আদেশ দিয়েছিলেন, “সন্তানদের অপরাধের জন্য যেমন অভিভাবকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না, ঠিক একই রকমভাবে পিতামাতার কোনো অপরাধের জন্য কোন সন্তানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না। কোন ব্যক্তিকে কেবলমাত্র তার কৃত কোন কুকর্মের জন্যই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে।”
৫ অমত্সিয যিহূদা এবং বিন্যামীনের সমস্ত ব্যক্তিদের একত্রিত করলেন এবং তাদের পরিবার অনুযায়ীপৃথক করেছিলেন। তিনি তাদের সৈন্যাধ্যক্ষ ও অধিনাযকদের কর্ত্তৃত্বের অধীনে রেখেছিলেন। ২০ বছর বা তার বেশী বয়স্ক লোকদের সৈনিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। এভাবে সব মিলিযে ঢাল ও বল্লমধারী মোট ৩,00,000 য়োদ্ধা ছিল।
৬ এছাড়াও অমত্সিয ইস্রায়েলের থেকে ৩ ৩,৪ টন রূপোর বিনিময়ে ১,00,000 সৈন্য ধার করেছিলেন।
৭ কিন্তু এসমযে একজন ভাব্বাদী এসে অমত্সিযকে বললেন, “মহারাজ, ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীকে আপনার সঙ্গে যেতে দেবেন না। কারণ বর্তমানে প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে নেই, ইফ্রয়িম গোষ্ঠীর সঙ্গেও নেই।
৮ যদি তোমরা যুদ্ধে যাও তোমরা অবশ্যই একটি কঠিন যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রেখো। ঈশ্বর হয়তো তোমাদের বাধা দেবেন কারণ ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে তোমাকে সাহায্য করতে অথবা তোমাকে বাধা দিতে।”
৯ তখন অমত্সিয তাকে বললেন, “কিন্তু আমি এর মধ্যে ইস্রায়েলীয়দের যে অর্থ দিয়েছি তার কি হবে?” ঈশ্বরের লোক উত্তর দিলেন, “প্রভুর ভাণ্ডার অফুরন্ত। তিনি চাইলে আপনাকে এর থেকেও বেশি দিতে পারেন!”
১০ অমত্সিয তখন ইস্রায়েলীয় সেনাদের ইফ্রয়িমে তাদের বাসভূমিতে পাঠিয়ে দিলেন। এর ফলে এরা সকলেই যিহূদার রাজা ও অধিবাসীদের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গেল।
১১ এরপর অমত্সিয বীর বিক্রিমে তাঁর সেনাদের ইদোমের লবণ উপত্যকায় যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন। সেখানে তাঁর সেনাবাহিনী ১০,000 সেয়ীর় সৈন্যকে হত্যা করলো,
১২ এবং আরও ১০,000 সৈন্যকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে তাদের নীচে ফেলে দিল। নীচে কঠিন পাথরের ওপর পড়বার জন্য এইসব সৈনিকদের মৃত্যু হল।
১৩ কিন্তু এসমযে যে সমস্ত ইস্রায়েলীয় সেনাদের অমত্সিয ফেরত্ পাঠিয়েছিলেন তারা যিহূদার বৈত্-হোরোণ থেকে শমরিয়া পর্য়ন্ত অঞ্চলের শহরগুলো আক্রমণ করতে শুরু করেছিল। এরা ৩,000 ব্যক্তিকে হত্যা করে বহু দামী দামী জিনিস লুঠ করেছিল।
১৪ ইদোমীয়দের যুদ্ধে পরাজিত করার পর অমত্সিয স্বদেশে ফিরে এলেন। ফিরে আসার সমযে অমত্সিয সেয়ীরের লোকেদের সেই মূর্ত্তিগুলো এনেছিলেন। এরপর অমত্সিয নিজে সেইসব মূর্ত্তি পূজো করতে শুরু করলেন। এদের সামনে তিনি নত হয়েছিলেন এবং তাদের কাছে ধুপধূনো জ্বালাতেন।
১৫ এতে প্রভু যারপরনাই রুদ্ধ হলেন এবং অমত্সিযের কাছে এক ভাব্বাদীকে পাঠালেন। তিনি এসে অমত্িসযকে বললেন, “তুমি কেন হঠাত্ ভিনদেশীয মূর্ত্তির পূজো শুরু করলে? এইসব মূর্ত্তিগুলো তো এদের উপাসকদেরও তোমার বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারেনি।”
১৬ এর উত্তরে অমত্সিয উদ্ধতভাবে সেই ভাব্বাদীকে বললেন, “চুপ কর নয়তো মারা পড়বে। আমরা কি তোমাকে রাজার পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছি?” সেই ভাব্বাদী তখন বললেন, “প্রভু তাহলে সত্যি সত্যিই তোমার পাপাচরণের জন্য তোমাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন যেহেতু তুমি আমার উপদেশ নিলে না।”
১৭ অমত্সিয তাঁর মন্ত্রণাদাতাদের সঙ্গে পরামর্শ করার পর ইস্রায়েলের রাজা য়িহোযাহসের পুত্র যেহূর পৌত্র য়িহোযামকে খবর পাঠালেন, “চলো আমরা সম্মুখ যুদ্ধ করি।”
১৮ ইস্রায়েলের রাজা য়োযাশ এর প্রত্যুত্তরে যিহূদার রাজা অমত্সিযকে খবর পাঠালেন, ‘লিবানোনের এক কাঁটাঝাড়, এক মহীরূহকে বলেছিলেন, ‘তোমার কন্যার সঙ্গে আমার পুত্রের বিয়ে দাও।’ আর এদিকে এক বুনো জন্তু এসে কাঁটাঝাড় মাড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।
১৯ শোনো, তোমরা ইদোমকে হারিযে দিয়েছ তাই তোমরা গর্বিত ও অহঙ্কারী হয়েছ। বাড়ীতে বসে থাক, আমাদের প্ররোচিত করো না। যদি তোমরা আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাও তোমরা তো বটেই, এমনকি যিহূদাও পরাজিত হবে।”
২০ কিন্তু অমত্সিয একথায় কান দিতে চাইলেন না। আসলে এ ঘটনা প্রভুর অভিপ্রায় অনুসারেই ঘটেছিল। ইস্রায়েলীয়দের হাতে যিহূদাকে পরাজিত করার পরিকল্পনা বয়ং প্রভুই করেছিলেন কারণ তারা ইদোমীযদের মূর্ত্তি পূজো করবার অপরাধ করেছিল।
২১ ইস্রায়েলের রাজা য়িহোযাস যিহূদায় বৈত্-শেমশেতে রাজা অমত্সিযর মুখোমুখি হলেন।
২২ যুদ্ধে ইস্রাযেল যিহূদাকে পরাজিত করল। যিহূদার প্রত্যেকে রণে ভঙ্গ দিয়ে বাড়ি পালালো।
২৩ রাজা য়িহোযাস বৈত্-শেমশেতে যিহূদার রাজা অমত্সিযকে বন্দী করে তাঁকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন। অমত্সিয ছিলেন যোয়াশের পুত্র এবং য়িহোযাহসের পৌত্র। য়িহোযাস ইফ্রয়িমের ফটক থেকে কোণের ফটক পর্য়ন্ত জেরুশালেমের প্রাচীরের ৬০0 ফুট ভেঙ্গে ফেললেন।
২৪ তিনি সমস্ত সোনা ও রূপো এবং ওবেদ ইদোম যা কিছু জিনিষপত্র মন্দিরে পাহারা দিত, প্রাসাদের সমস্ত কিছু সম্পদ এবং বন্দীদের নিয়েছিলেন। তিনি এই সব কিছু শমরিয়াতে ফিরিযে নিয়ে গেলেন।
২৫ য়িহোযাসের মৃত্যুর পর অমত্সিয আরো ১৫ বছর বেঁচেছিলেন।
২৬ অমত্সিয তাঁর রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি আর যা কিছু করেছিলেন সেসবই ‘যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
২৭ অমত্সিয যখন প্রভুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিলেন তখন জেরুশালেমের লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে চএান্ত করলো। অমত্সিয কোনোমতে লাখীশে পালিয়ে গেলেও লোকেরা সেখানে লোক পাঠিয়ে অমত্সিযকে হত্যা করল।
২৮ তারপর তারা ঘোড়ার পিঠে করে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে এলো এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করলো।