বুনো হংসের পেছনে ছুটেই
কেটেছে সকাল এবং বিকেল।
চোখ মেলে দূর আকাশের নীলে
শূন্য হস্তে ফিরছি যখন,
প্রেম তুমি এলে করুণ পায়ে।
ভেলার স্বপ্নে বদ্ধ জলায়
ভরা আলস্যে সারা দিনমান
আকণ্ঠ ডুবে মজা অতীতের
সাধের জাবর কাটছি যখন,
প্রেম তুমি এলে অধীর পায়ে।
আড্ডা-পিয়াসী ক্লান্ত শরীরে
রিফু-সাপেক্ষ জামাটা চাপিয়ে,
বোদলেয়ারের জীবন-ভাষ্য
মনে মনে ফের ভাঁজছি যখন,
প্রেম তুমি এলে নগ্ন পায়ে।
চায়ের কাপের বিবর্ণ গায়ে
চোখ রেখে সেই দারুণ হলুদ
নব্বুই-এর গোধূলিপ্রবণ
যুগকে স্মরণ করছি যখন,
প্রেম তুমি এলে ভ্রষ্ট পায়ে।
মুণ্ডবিহীন লোকটাকে দেখে
‘ওরে মাঝি তোর বৈঠা কোথায়?
বজ্রপাতের ভয়ে সচকিত
কণ্ঠে হঠাৎ বলছি যখন,
প্রেম তুমি এলে ত্রস্ত পায়ে।
দু’বেলা পিতার সরাইখানায়
চর্ব চোষ্য লেহ্য পেয়ের
সরোবরে ভেসে জীব-জগতকে
থোড়াই কেয়ার করছি যখন,
প্রেম তুমি এলে ক্লান্ত পায়ে।
নিজের চরকা বিকল ভেবেই
মনকে চালাই নানা কৌশলে।
নবযুবতীর দৃষ্টি কুড়িয়ে
বিরাট শহরে ঘুরছি যখন,
প্রেম তুমি এলে ব্যগ্র পায়ে।
চোত-বোশেখের ঝড় বয়ে গেলে
আ-মরি সারাটা দেশের ওপর,
খড়পাতা নেড়ে অসীম ধৈর্য্যে
নড়বড়ে ঘর বাঁধছি যখন,
প্রেম তুমি এলে ক্ষিপ্র পায়ে।
রুষ্ট কালের প্রবল দাপটে
অন্ধ গুহায় লুকিয়ে আমিও
আহত পশুর মতো ভয়াবহ
নিজের ক্ষতটা চাটছি যখন,
প্রেম তুমি এলে শান্ত পায়ে।
ঢেকে রেখে মুখ ঘন ঝোপঝাড়ে
এই ইতিহাস-চুল্লীতে শুধু
নিজেকে শুক্নো বড় জোর এক
জ্বালানির কাছ ভাবছি যখন,
প্রেম তুমি এলে দীপ্ত পায়ে।
অনেক লাজুক খর্ব আশাকে
কবরে শুইয়ে, গত শতকের
বহু স্বপ্নের লাশের গন্ধ
কলমে খুঁচিয়ে তুলছি যখন,
প্রেম তুমি এলে নগ্ন পায়ে।
জীবনকে রাজহংস ঠাউরে
তার পশ্চাতে চৌরাস্তায়,
কারখানা আর কলোনীতে, শেডে
উদ্ধাহু, আমি ছুটছি যখন,
প্রেম তুমি এলে সান্ত পায়ে।
সবার সুখের খরদারির
কাজে মেতে বুকে তপ্ত, উদার
পুস্তিকা সব লুকিয়ে, বাঁচিয়ে
ঘরে ঘরে কড়া নাড়ছি যখন,
প্রেম তুমি এলে দৃপ্ত পায়ে।