প্রাইসলেস বুদ্ধ – ৯

একেনবাবু আজ সকাল থেকে একটু অন্যমনস্ক। প্রমথ বলল, “কী ব্যাপার বলুন তো মশাই, এত চিন্তা কীসের?”

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা স্যার, মিস্টার চৌধুরীর বাড়িতে কে আগুন লাগিয়েছে সেটা ধরা পড়ল?”

প্রমথ বলল, “অবাক করলেন মশাই, থানা-পুলিশ তো আপনার ডিপার্টমেন্ট। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

“কী যে বলেন স্যার, এটা তো ফায়ার ব্রিগেডের ইনভেস্টিগেশন। এই ব্যাপারটা নিয়ে সমরবাবু অনেক খোঁজখবর রাখেন, আর সমরবাবু আপনার খুব বন্ধু বলে কথাটা মনে হল।”

“তা রাখে। কিন্তু আপনার হঠাৎ আগুন নিয়ে মাথাব্যথা কেন?”

“নিজেকে বড্ড অপরাধী লাগছে স্যার। চুরির ব্যাপারটা নিয়ে এত মাতামাতি করছি। এদিকে মিস্টার চৌধুরী আগুনে পুড়ে মারা গেলেন… আমি না চিনলেও আপনাদের তো পরিচিত। কী হল, না হল…।”

আমি ওঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “অত না ভেবে একটা ফোন করুন না পুলিশ স্টেশনে। আপনার তো কানেকশনের অভাব নেই— ওরা নিশ্চয় জানবে।”

“তা করা যায় অবশ্য।” কথাটা বললেন বটে, কিন্তু চেয়ার থেকে উঠলেন না। “আসলে স্যার পুলিশের ধারণা, মিস্টার চৌধুরীর মৃত্যুটা অ্যাক্সিডেন্ট।”

কথাটা আগেও ওঁর কাছে শুনেছি, তাই অবাক হলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, “কেন, আপনার ধারণা অন্য কিছু নাকি?”

“কে জানে স্যার।”

প্রমথ বলল, “দাঁড়ান মশাই, দাঁড়ান। পুলিশের বিশ্বাস স্যাল বেত্রোর কোনো শত্রু এই অপকর্মটা করেছে। এতে তো আমি অন্যায্য কিছু দেখছি না। ওরকম একটা টাকাওয়ালা লোকের একাধিক শত্রু থাকা সম্ভব। তাদের কেউ না কেউ নিশ্চয় আগুন লাগাতে পারে।”

“তা পারে স্যার।”

“তাহলে?”

একেনবাবু একটু মাথা চুলকোলেন। 

আমি প্রমথকে বললাম, “আরেকটা পসিবিলিটি তুই চিন্তা করছিস না।”

“সেটা আবার কী?”

“ধর, এটা কোনো বিকারগ্রস্ত লোকের কীর্তি। কিছুদিন আগে ডেট্রয়েটে এরকম একটা লোক ধরা পড়ল না? অকারণে অনেকগুলো বাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল বলে!”

“আরেকটা সম্ভাবনাও কিন্তু আছে স্যার। মানে জাস্ট সম্ভাবনা হিসেবে।”

“ঝেড়ে কাশুন।”

“যদি ভাবা যায় কেউ মিস্টার চৌধুরীকে মারার জন্যই আগুন লাগিয়েছিল।”

“কী যা-তা বকছেন মশাই। বিভাস চৌধুরী কি মাফিয়ার লোক না সিক্রেট এজেন্ট যে এরকমভাবে খুন হবেন?”

“কী যে বলেন স্যার, আপনারা সম্ভাবনার কথা তুলছেন বলে আমিও একটা যোগ করলাম আর কি।”

প্রমথ এতে সন্তুষ্ট হল না। “দেখুন মশাই, প্রোবাবিলিটি আর পসিবিলিটি বলে দুটো কথা আছে। আপনি যা বলছেন তা নিশ্চয়ই পসিবল। কিন্তু প্রোবাবল নয়।”

“তা মানছি স্যার।” বলে একেনবাবু চুপ করে গেলেন। 

এমন সময় একেনবাবুর একটা ফোন এল। উচ্চারণটা এশিয়ান। এই জন্য বলছি যে চাইনিজ, জাপানি বা কোরিয়ান – সবার উচ্চারণই আমার প্রায় একরকম লাগে। ফোনে কয়েক মিনিট কথা বলে একেনবাবু ফিরে এসে বললেন, “না স্যার, মিস্টার মেহেতা ঠিকই বলেছিলেন।”

জিজ্ঞেস করলাম, “কী ঠিক বলেছিলেন?”

“মানে মিস্টার তোশির কোবাই রেস্টুরেন্টে যাবার কথা। যে ফোনটা এল, সেটা কোবাইয়ের মালিকের। মিস্টার তোশি ওখানে সাড়ে আটটা নাগাদ পৌঁছেছিলেন। সেখানে মিস্টার মেহেতার মেসেজ পেয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যান।”

আমি একটু অবাক হলাম। “আপনার তাতে কোনো সন্দেহ ছিল নাকি?”

“না না স্যার, সন্দেহ কেন?” তারপর বললেন, “আচ্ছা স্যার মিস্টার তোশির বাড়ি এখান থেকে কত দূর হবে?”

“পত্রিকায় তো পড়েছিলাম লং আইল্যান্ডে, সেক্ষেত্রে অন্তত এক ঘণ্টার পথ। কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

“বলছি স্যার। আগে একটা ফোন করে আসি।” বলে আবার অদৃশ্য হলেন।

প্রমথ বলল, “নাঃ, লোকটা দেখছি একেবারেই খেপে গেছে!”

মিনিট কয়েকের মধ্যেই একেনবাবু ফিরে এলেন। “এই যে স্যার, আমার সঙ্গে একটু আসবেন?”

আমরা দু-জনেই অবাক। “কোথায়?”

“আসুন না স্যার, আপনারা বড্ড প্রশ্ন করেন।”

সাধারণত প্রমথ এরকম আবদারে ধমক লাগায়। আজ কিচ্ছু না বলে সোজা জুতো-মোজা পরতে শুরু করল। আমারও কেমন মনে হল ব্যাপারটা সিরিয়াস তাই রেডি হয়ে নিলাম।