2 of 2

প্রত্যাদেশ ১৮

১ এইসব ঘটনার পর আমি আর একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তিনি মহাপরাক্রান্ত স্বর্গদূত, তাঁর জ্যোতি সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলল।
২ তিনি প্রবল শব্দে চেঁচিয়ে উঠলেন:‘পতন হল! মহানগরী বাবিলের পতন হল! সে ভূতের আবাসে পরিণত হয়েছে। সেই নগরী হয়েছে সব রকমের অশুচি আত্মার আবাস। সে যতো অশুচি পাখীদের বাসা এবং যতো নোংরা ও ঘৃন্য পশুদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
৩ পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তার অসত্ য়ৌন পাপের মদিরা ও ঈশ্বরের রোষ মদিরা পান করেছে। পৃথিবীর রাজারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করেছে; আর পৃথিবীর ব্যবসাযীরা তার অসংযত বিলাসিতার সুবাদে ধনবান হয়ে উঠেছে।’
৪ এরপর আমি স্বর্গ থেকে আর একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, সে বলছে:‘হে আমার প্রজারা, ওখান থেকে বেরিয়ে এস, তোমরা য়েন ওর পাপের ভাগী না হও; আর ওর প্রাপ্য আঘাত য়েন তোমাদের ওপর না আসে।
৫ কারণ ওর পাপ স্তূপীকৃত হয়ে গগণচুম্বী হয়েছে; আর ঈশ্বর ওর সব অপরাধ স্মরণ করেছেন।
৬ সে অপরের সঙ্গে য়েমন ব্যবহার করেছে, তোমরাও তার প্রতি সেরূপ ব্যবহার কর। সে য়েমন কাজ করেছে, তোমরা তার দ্বিগুণ প্রতিফল তাকে দাও। অপরের জন্য পানপাত্রে সে য়ে পরিমাণ মেশাতো তোমরা তার জন্য সেই পাত্রে দ্বিগুণ মেশাও।
৭ সে (বাবিল) যত অহঙ্কার ও বিলাসিতায় জীবন কাটাতো তোমরা তাকে তত যন্ত্রণা ও মনোকষ্ট দাও। কারণ সে নিজের বিষয়ে বলত, ‘আমি রাণী, রাণীর মতোই সিংহাসনে বসে আছি। আমি বিধবা নই, আর আমি কখনই দুঃখ পাব না।
৮ অতএব এক দিনের মধ্যেই তার ওপর এই আঘাত আসবে; মৃত্যু, শোক ও দুর্ভিক্ষ আর আগুনে পুড়িয়ে তাকে ধ্বংস করা হবে। কারণ প্রভু ঈশ্বর যিনি তার বিচার করেছেন তিনি সর্বশক্তিমান।’
৯ ‘জগতের য়ে সব রাজারা তার সঙ্গে য়ৌন পাপে লিপ্ত হয়েছে ও বিলাসে কাটিয়েছে, তারা তাকে জ্বলতে দেখে ও তার থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে বিলাপ ও হাহাকার করবে।’
১০ তার যন্ত্রণার ভয়াবহতা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বলবে:‘হায়! হায়! হে মহান নগরী! ও শক্তিশালী বাবিল নগরী! এক ঘন্টার মধ্যেই তোমার ওপরে শাস্তি নেমে এল!’
১১ আর পৃথিবীর ব্যবসাযীরা তার (বাবিলের) জন্য কাঁদছে ও হাহাকার করছে, কারণ তাদের বাণিজ্য দ্রব্য আর কেউ কেনে না।
১২ তাদের বাণিজ্যদ্রব্যগুলি ছিল: সোনা, রূপো, মণি, মুক্তা, মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়, রেশমের কাপড়, লাল রঙের কাপড়, সব রকমের চন্দন কাঠ, হাতির দাঁতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, মূল্যবান কাঠ, পিতলের, কাঁসার, লোহার ও মার্বেল পাথরের সব রকমের পাত্র,
১৩ আর দারুচিনি, মশলা, ধূপ, সুগন্ধি নির্যাস, মস্তকি, গুগ্গুল, মদ ও জলপাইয়ের তেল, ময়দা, আটা, গরু, মেষ, ঘোড়া গাড়ী আর মানুষের দেহ এবং প্রাণও। সেই ব্যবসাযীরা কেঁদে কেঁদে বলবে:
১৪ ‘হে বাবিল, য়ে সব ভাল ভাল জিনিসের প্রতি তোমার মন পড়ে ছিল তার সবই তোমার কাছ থেকে চলে গেছে। তোমার সব রকমের বিলাসিতা ও শোভা প্রাচুর্য়্য সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। তুমি তা আর কখনই দেখতে পাবে না।’
১৫ ‘ঐ সব জিনিসের ব্যবসাযীরা তার ধনে ধনী হয়েছিল, তারা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদবে,আর হাহাকার করে বলবে:
১৬ ‘হায়! হায়! হায় মহানগরী! সে মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড় ও লাল রঙের কাপড় পরত। সে সোনা, মণি, মুক্তা খচিত গয়না পরত।
১৭ এক ঘন্টার মধ্যে তার সেই মহাসম্পদ ধ্বংস হল!’‘আর প্রত্যেক জাহাজের প্রধান কর্মচারীরা, জলপথের যাত্রীরা, নাবিকরা ও সমুদ্রেই জীবিকা যাদের, তারা সকলে বাবিল থেকে সরে দাঁড়ালো।
১৮ জ্বলন্ত বাবিলের ধোঁয়া দেখে তারা চিত্‌কার করে বলতে লাগল, ‘আর কোন নগর এই মহানগরীর মত ছিল না!’
১৯ তারা সকলে নিজেদের মাথায় ধুলো ছিটিয়ে হাহাকার করে বলতে লাগল:‘হায়! হায়! ঐ মহানগরীর কি দুর্দশাই না হল! যার সম্পদে সমুদ্রগামী জাহাজের কর্তারা ধনবান হত, এক ঘন্টার মধ্যে সে ধ্বংস হয়ে গেল।
২০ এই জন্য হে স্বর্গ উল্লসিত হও! হে ঈশ্বরের পবিত্র লোকেরা! হে প্রেরিতেরা আর ভাববাদীরা, উদ্ভাসিত হও! কারণ সে তোমাদের প্রতি য়ে অন্যায় করেছে, ঈশ্বর তার শাস্তি তাঁকে দিয়েছেন।’
২১ পরে এক পরাক্রান্ত স্বর্গদূত খুব বড় য়াঁতার মতো পাথর তুলে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে বললেন:‘এই পাথরটির মতো মহানগরী বাবিলকে ছুঁড়ে ফেলা হবে; আর চিরকালের মতো সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
২২ তোমার মধ্যে বীণাবাদক, বাঁশীবাদক, তূরীবাদক ও গায়কদের গান-বাজনা আর কখনও শোনা যাবে না। তোমার মধ্যে আর কখনও কোন শিল্পকারকে পাওয়া যাবে না, গম ভাঙ্গার যাঁতার শব্দ আর কখনও শোনা যাবে না।
২৩ তোমার মধ্যে আর কখনও প্রদীপ জ্বলবে না, বর-কণের কথাবার্তা আর কখনও শোনা যাবে না। তোমার ব্যবসাযীরা পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত হয়েছিল। তোমার তন্ত্র-মন্ত্রের জাদুতে সমস্ত জাতি ভ্রান্ত হয়েছিল।
২৪ বাবিল সমস্ত ভাববাদী, ঈশ্বরের পবিত্র লোক, আর পৃথিবীতে যত লোককে হত্যা করা হয়েছে, তার রক্তপাতের দোষে দোষী।’