ব্যাপারটা এ-একম-আমার পাড়ায় একজন
সংগীতসাধক, বুড়ো, বহুদিন থেকে
করছেন বসবাস, অত্যন্ত একাকী। নিত্যসঙ্গী তাঁর শুধু
একটি সরোদ; কেউ কেউ
আসে কোনো কোনো দিন সুরে স্নাত হতে
অথবা তালিম নিতে। যখন সে প্রবীণ সাধক কোলে নিয়ে
সরোদ করেন স্পর্শ তার,
তখন আঙুল তাঁর হয়ে ওঠে নিমেষে তরুণ। সুরে সুরে
জীর্ণ ঘরে মেঘ জমে, ডুমুর পাতায়
রোদ ঝলসায়, হরিণের মখমলী চোখ ভাসে,
ঝরনা বয়, পাতা ঝরে, থরে থরে ফোটে
রাজনর্তকীর মতো গোলাপ এবং
সাধক সরোদে লীন। এভাবেই ক্রমে নটে গাছ
মুড়োয়, অথচ ফুরোয় না সুর সাধা।
একদিন ভোরবেলা প্রবীণ সাধক বাজাচ্ছেন
জগৎ সংসার ভুলে গভীর ভৈরবী। সেই সুরে
খুলে গেল পথ, জ্যোতির্ময়,
দূর আকাশের দিকে। অকস্মাৎ পাড়াটা চেঁচিয়ে
ওঠে, যেন বাজের আওয়াজ চতুর্দিকে
ফেটে পড়ে বারবার। পাড়া থেকে নামে মানুষের ঢল পথে,
ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে, মাতে হৈ হল্লায়, তামাশায়।
নিজেই সরোদ হয়ে বেখবর সরোদীয়া বেজে চলেছেন অবিরাম,
অথচ নিভৃত রাগমালা
ডুবে যায় শহর-কাঁপানো কোলাহলে। আমি সেই
প্রবীণ শিল্পীর সাধনার শ্বেতপদ্মটিকে বুকে
নিয়ে একা রাস্তায় দাঁড়াই,
অরণ্যে রোদন শুনে গহন বেহাগ হয়ে যাই অগোচরে।
যত ভাবি, সেই ঘটনার ভস্ম বারবার
মাখব না গায়ে,
তত এক নাছোড় আগুন
দীপকের মতো খুব অন্তরালে পোড়ায় আমাকে।