পূর্বকথা
বন্দি। আমরা সতেরোটা ছেলে-মেয়ে।
বিশাল এক অট্টালিকায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কালো পাথুরে দেয়ালে ঘেরা সুবিশাল, দুর্গের মত বাড়িটার দু’পাশে উঁচু কালচে টাওয়ার।
আমি রবিন মিলফোর্ড। আমার সঙ্গে কিশোর আর মুসাও রয়েছে।
প্যানিক পার্কে অমন সাঙ্ঘাতিক ভয়ের মুখোমুখি হতে একেবারেই তৈরি ছিলাম না আমরা।
ওরকম অশুভর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুতি ছিল না আমাদের। কস্মিনকালেও ভাবিনি আপাদমস্তক কালো পোশাক পরা তালঢ্যাঙা কেউ আমাদের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।
শুরুটা হলো কীভাবে?
চোদ্দজন ছেলে-মেয়েকে হররল্যাণ্ড থিম পার্কে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এক সপ্তাহের ভয়াল আনন্দ উপভোগের কথা ছিল তাদের। কিন্তু ওরা শীঘ্রি টের পায় আতঙ্কগুলো নিখাদ বাস্তব।
ছেলে-মেয়েগুলো বুঝে যায় তারা বিপদে পড়েছে। হররল্যাণ্ড থেকে পালাতে মরিয়া হয়ে ওঠে এবং গিয়ে পৌঁছে প্যানিক পার্ক নামে আরেক পার্কে। হররল্যাণ্ডের এক কর্মচারী-মিল্টন নামে এক হরর-ছিল ওদের একমাত্র বন্ধু। সে জানায় প্যানিক পার্কে ওরা নিরাপদ।
আমি আগেও হররল্যাণ্ডে গিয়েছি। পার্কের একজন অনলাইনে আমাকে ছেলে-মেয়েগুলো সম্পর্কে জানায়। সে নিজেকে পরিচয় দেয় দানব এক্স নামে। সে আমাদেরকে বলে প্যানিক পার্ক নাকি ভয়ানক জায়গা-ছেলে-মেয়েগুলো নাকি হররল্যাণ্ডেই নিরাপদ থাকবে।
একথা জেনে কিশোর, মুসা আর আমি ওদেরকে সতর্ক করতে তড়িঘড়ি পার্কে গিয়ে দেখি, আটজন ইতোমধ্যেই প্যানিক পার্কে পালিয়ে গেছে। আমরা বাদবাকিদের বিপদের কথাটা বলার চেষ্টা করি। ওদেরকে হররল্যাণ্ডেই থেকে যেতে বলি।
কিন্তু ওরা বন্ধুদের কাছে যেতে রীতিমত বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অন্য পার্কটিতে যাবেই যাবে। কেটি পেরি নামে এক মেয়ে জানায় ও মানুষের মন পড়তে পারে। আমার চোখের দিকে তাকায় সে। তারপর অন্যদেরকে বলে আমি নাকি মিথ্যে কথা বলছি। আরও বলে কিশোর, মুসা আর আমি নাকি হররদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওদেরকে হররল্যাণ্ডে আর্টকে রাখতে চাই।
মিল্টনের সাহায্যে ছেলে-মেয়েগুলো প্যানিক পার্কে পালায়। ওরা চায়নি আমাদের তিনজনকে সঙ্গে নিতে। কিন্তু তারপরও আমরা ওদের পিছে-পিছে যাই। ওদের কোন সাহায্যে হয়তো আসতে পারব, এই ভেবে।
দেখা গেল প্যানিক পার্ক যেন এক দুঃস্বপ্নভূমি। রঙহীন, বিবর্ণ, পুরো পার্কটাই সাদা-কালো। আজব ব্যাপার হলো, বিষণ্ণ ছায়ামানুষেরা সবখানে আমাদের অনুসরণ করে। আমরা ওদেরকে ছাড়া আর কাউকে চোখে দেখিনি।
ঘটনাচক্রে, ওখানে এক খবরের কাগজ পাই আমরা, ওটায় দেখি প্যানিক পার্ক ১৯৭৪ সালে বন্ধ হয়ে গেছে।
আমরা কি তবে সময়সুড়ঙ্গ দিয়ে অতীতে চলে গেছি, কোন ধরনের সমান্তরাল পৃথিবীতে?
আমরা পুরোপুরি বিভ্রান্ত এ বিষয়ে।
শুধু এটুকু জানি প্যানিক পার্ক অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হররল্যাণ্ডের চাইতে।
এবং এখন, আমরা সতেরোজন ছেলে-মেয়ে নিরানন্দ, শীতল অট্টালিকাটির ভেতরে বন্দি।
সামনে দাঁড়ানো লোকটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ আমাদের। উঁচু এক পোডিয়ামের পেছনে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে সে। নিজের পরিচয় দিয়েছে-অমঙ্গল নামে।
লোকটা মুখ খোলার এবং নাম বলার আগেই, আমরা বুঝে গেছি সে এমন একজন, আমাদের যাকে যমের মত ভয় পাওয়া উচিত…