উপন্যাস
গল্প

পাথরের চোখ – ৫

।। পাঁচ ।।

ভুবন-নিবাস পৌঁছাতে প্রায় বারোটা হয়ে গেল।

বৈশালীর ধারণা ছিল বিরাট এক প্রাসাদ হবে, কিন্তু সেরকম কিছু নয়, দোতলা বাড়ি। পুরোনো আমলের। চারপাশে প্রচুর জায়গা। ফল-ফুলের বাগান।

লোহার গেট আছে। গেটে পাগড়ি-আঁটা দারোয়ান। সেলাম করে গেট খুলে দিল।

বাড়ির সামনের কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে মেরাপ বাঁধা হয়েছে। ডেকরেটররা তখনও সাজাচ্ছে।

মোটর থামতেই একটি ভদ্রলোক সামনে এসে দাঁড়াল। রং ঈষৎ কৃষ্ণবর্ণ, কোটরাগত চোখ, রুক্ষ চেহারা।

আমি অতীন বাজপেয়ি।

কণ্ঠস্বর চেহারার মতনই রুক্ষ।

বৈশালী নিরীক্ষণ করে দেখল। তারপর বলল, আপনি বর্মায় থাকেন?

হ্যাঁ।

বর্মায় কোথায়?

বর্মা সম্বন্ধে আপনার কিছু জানা আছে?

না, বিশেষ কিছু জানা নেই। ভূগোলে যেটুকু পড়েছি।

আমি থাকি কেমেনডাইনে। রেঙ্গুনের কাছেই।

কাঠের ব্যাবসা করেন?

ওই সামান্য।

আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল।

বেশ তো, হবে কথা। আপনারা বিশ্রাম করে নিন।

কথা শেষ করে অতীন ডাকল, চরণ, চরণ।

একটি ভৃত্য এসে দাঁড়াল।

এঁদের অতিথি কুটিরে নিয়ে যাও।

সুজিত জিজ্ঞাসা করল, মোটরটা কোথায় রাখব?

অতিথি কুটিরের সঙ্গেই গ্যারাজ আছে। অতীন জানাল।

ভুবন-নিবাসের পিছনেই একতলা বাড়ি। সঙ্গে দুটি গ্যারাজ।

চরণের নির্দেশে সুজিত মোটরটি একটি গ্যারাজে ঢোকাল।

তারপর এদিকের ঘরের চাবি খুলে দিতে বৈশালী আর সুজিত ঘরের মধ্যে গেল।

একটা বসবার ঘর। কৌচ-সোফা সাজানো, সামনে ফালি বারান্দা। ভিতরে শোবার ঘর। পাশাপাশি দুটি খাট।

শোবার ঘরের ব্যবস্থা দেখে বৈশালী আরক্ত হয়ে উঠল।

মুখে বলল, অতীনবাবুকে বলতে হবে আমাদের আর-একটা শোবার ঘর দরকার।

সুজিত বলল, কেন, আমি না হয় বাইরের ঘরে কৌচের ওপর কাটিয়ে দেব। ক-টা রাতের ব্যাপার বলো তো?

কী জানি, নিজেই আমি জানি না।

মিনিট কুড়ির মধ্যে অতীন এল। পিছনে ভৃত্যের হাতে চায়ের সরঞ্জাম। প্রচুর ফল আর মিষ্টি।

চা খেয়ে নিয়ে আপনারা স্নান সেরে নিন। আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা তো ভিন্ন, নইলে একসঙ্গেই খাওয়া যেত।

আমরা স্নান সেরে এসেছি। আপনারা চা-পানের যে এলাহি আয়োজন করেছেন, তারপর এবেলা আর কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হবে বলে মনে করি না।

কী যে বলেন। অতীন বিনীতকণ্ঠে বলল।

আমাদের একটা কথা ছিল।

কী বলুন!

আমাদের আর-একটা শয়নঘরের প্রয়োজন হবে।

কয়েক মুহূর্ত অতীন বৈশালী আর সুজিতের দিকে ফিরে কী ভাবল, তারপর বলল, ঠিক আছে, পাশের ঘরের বেডরুমটাও খুলে দিতে বলেছি। দয়া করে আপনাদের যখন যা অসুবিধা হবে জানাবেন। বুঝতেই পারছেন, এ সময়ে আমরা একটু ব্যস্ত রয়েছি। বাবার কাজের জন্যে।

এখন মিনিট পনেরো আপনার সময় হবে?

মিনিট পনেরো? খুব হবে।

দয়া করে বসুন-না!

সামনের কৌচে অতীন বসে পড়ল।

আপনার বাবার কোনও শত্রু ছিল?

অতীনের মুখে একটু চিন্তার ছায়া পড়ল।

শত্রু, তেমন শত্রু তো কাউকেই মনে পড়ছে না। তবে ব্যাবসা করতে গেলেই তো কিছু শত্রুর সৃষ্টি হয়, জানেন।

আপনাকে স্পষ্ট করে বলতে চাই অতীনবাবু, আমরা বিশ্বাস করি না যে, সামান্য দামের রুবির জন্য কেউ আপনার বাবাকে এভাবে হত্যা করবে। উদ্দেশ্য নিশ্চয় আরও গভীর। সেই উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই। আশা করি আপনার কাছ থেকে অকৃপণ সাহায্য পাব।

নিশ্চয়। আমি যতটুকু জানি, সবই আপনাদের বলব।

আপনার সঙ্গে ভুবনবাবুর সম্পর্ক কেমন ছিল?

ভালোই।

মাঝে মাঝে বচসা হত শুনলাম।

অতীনের দুটি ভ্রূ কুঞ্চিত হয়ে এল।

কে বলেছে? কার কাছে শুনেছেন?

বৈশালী কোনও উত্তর দিল না।

অতীনই আবার বলল, নতুন মা বলেছে?

বচসা হত কি না বলুন-না? এবার বৈশালী কণ্ঠস্বরে জোর দিল।

কয়েকবার হয়েছে।

সম্পত্তি নিয়ে?

না, সম্পত্তির ওপর আমার লোভ নেই। আমি একলা মানুষ। বর্মায় আমার যে কাঠের কারবার আছে, তাতে ভালোভাবেই চলে যায়।

তবে?

অতীন একটু ইতস্তত করল। কথাটা বলবে কি না সে সম্বন্ধে দ্বিধাবোধ।

বৈশালীর সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না।

শুনুন, একটা কথা বলি। আমাদের কাছে লুকোচুরি করে কোনও লাভ নেই। বরং সবকিছু পরিষ্কারভাবে জানালেই আপনার পক্ষে মঙ্গল।

অতীন নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসল।

মঙ্গল-অমঙ্গলের কথা কী বলছেন বুঝতে পারছি না। কথাটা বলতে এখন আর বিশেষ বাধা নেই।

বলুন—

বাবার ওইসব রত্নের ব্যাপারে কিছু চোরাকারবারির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি। বাবার ইচ্ছা ছিল বর্মায় এদের সঙ্গে আমি যোগসূত্র রাখি। যাতে তাঁর কারবারটা আরও প্রসার লাভ করে। কিন্তু এসব ব্যাপারে আমার একেবারে আগ্রহ ছিল না। আগেই তো বললাম আপনাদের, সামান্য ব্যাবসায় আমার চলে যায়। আমি বাবাকে অনেক বুঝিয়েছিলাম, এসব খেলার মধ্যে বিপদ আছে। শুধু মান নিয়ে নয়, প্রাণ নিয়েও টানাটানি। তা ছাড়া, পুলিশের নজরও বাবার ওপর ছিল, তাও জানি।

কিন্তু আপনার বাবার তো অন্য ব্যাবসাও ছিল?

অন্য ব্যাবসা ভালো চলছিল না। যে টিলা ইজারা নিয়ে কয়লার ব্যাবসা শুরু করেছিলেন, সেখানে কয়লা বিশেষ পাওয়া গেল না। একটা স্তরেই শেষ। অভ্রের কারবারে শরিকের সঙ্গে গোলমাল চলছিল। কোর্ট অবধি মামলা গড়িয়েছিল। একমাত্র সম্বল ছিল সোনা আর পাথরের ব্যাবসা। আমি বর্মা থেকে চুনি জোগাড় করে পাঠাতাম। তাতে বিশেষ কিছু পাওয়া যেত না। লাভ হিরা আর সোনায়। বাবার ঝোঁক ছিল সেদিকে।

চকিতের জন্য বৈশালীর মনে হল, এমন তো নয় ময়ূরটার অভ্যন্তরে সোনার পাত দেওয়া ছিল, কিংবা সোনার তাল লুকানো ছিল, সেইজন্য তার আকর্ষণ এত বেশি!

কিন্তু না, বৈশালী ময়ূরটা হাতে করে দেখেছে। ওজন মোটেই তেমন বেশি মনে হয়নি। সোনা ওজনে রীতিমতো ভারী।

নিন, আপনারা খেয়ে নিন। চা ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি একবার ওদিকটা দেখে আসি। বলে অতীন বেরিয়ে গেল।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে বৈশালী বলল, সুজিত, ব্যাপারটা কী মনে হচ্ছে?

ভদ্রলোকের হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়ার ধরনটা আমার ভালো লাগল না। সুজিত বলল।

বাপ অসৎ পথে যাচ্ছেন, আর ছেলে নিবৃত্ত করতে চাইছে, এই নিয়ে বচসা, এটার চেয়ে চোরাকারবারের অংশ নিয়ে চেঁচামেচি, সেটা আরও স্বাভাবিক মনে হয় না?

কিন্তু বাপকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে কী লাভ হল?

সেটাই ভাবছি। ভুবন বাজপেয়ির উইলের খবর নিতে হবে।

উইলে কি চোরাই ধনরত্নের উল্লেখ থাকবে?

বৈশালী মুচকি হাসল, অবশ্যই না। চোরাই ধনরত্ন অর্থে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কালো টাকা সাদা হওয়ার মতন।

সুজিত জিজ্ঞাসা করল, ভুবনবাবুর স্ত্রী-র সঙ্গে কখন দেখা হবে?

উৎকণ্ঠিত হোয়ো না। ভদ্রমহিলা যখন আমন্ত্রণ করে এনেছেন, একবার নিশ্চয় দেখা দেবেন।

আরও ঘণ্টাখানেক পরে আহারের ডাক এল। খাওয়ার ব্যবস্থা ভুবন-নিবাসে।

টেবিল-চেয়ার নয়, মোজেইক মেঝেয় কার্পেটের আসন। রুপোর থালা গ্লাস।

বৈশালী আর সুজিত গিয়ে বসল।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ভিতরের পরদা ঠেলে দীপালি এসে দাঁড়াল।

সাদা কাপড়ের ওপর ছোটো একটা চাদর জড়ানো। চোখে-মুখে বিষাদের আভা।

আপনাদের খুব কষ্ট হল।

না, না, কষ্ট আর কী, বৈশালী বলল, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা খুবই চমৎকার।

ঠিক এখন আমাদের পক্ষে আপনাদের তেমনভাবে তদারক করা কিছুটা অসুবিধাজনক, সেটা মনে রেখে আমাদের ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

ওভাবে বলে আমাদের অপরাধী করবেন না। অতীনবাবুর সঙ্গে দেখা হবে না তাই, না হলে আপনাদের ক্রিয়াকর্ম চুকে গেলেই আমরা আসতাম।

অতীনের সঙ্গে দেখা হয়েছে?

অতীনের নামোচ্চারণের সঙ্গেই দীপালির কণ্ঠ কিঞ্চিৎ রুক্ষ হয়ে উঠল।

হ্যাঁ, হয়েছে। তিনি অতিথি-কুটিরে আমাদের তদারক করছিলেন।

ইতিমধ্যে পাচক আহার্য নিয়ে আসাতে কথোপকথনে ছেদ পড়ল।

কিছুক্ষণ পরে দীপালি প্রশ্ন করল, আপনারা কতদিন এখানে থাকবেন?

দিন দুয়েকের বেশি দরকার হবে না।

বিশেষ কিছু যদি দেখতে চান, বলতে পারেন।

ভুবনবাবুর সিন্দুক যে ঘরে থাকত, সে ঘরটা একবার দেখার ইচ্ছা। মানে তাঁর শোবার ঘর।

বেশ, বিশ্রাম করে নিন। বিকালে দেখবেন।

আহার শেষ হতে ভৃত্যের সঙ্গে অতিথি-কুটিরে ফিরে আসতে গিয়ে বৈশালী হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। একেবারে কোণের একতলা ঘরের দরজা সম্পূর্ণ খোলা। একটি সুপুরুষ যুবক জানলার কাছে দাঁড়িয়ে। পরনে সিল্কের গেঞ্জি, গোলাপি পায়জামা।

বৈশালীর সঙ্গে চোখাচোখি হতেই যুবকটি মুখ ফিরিয়ে নিল।

কিছুটা এসে বৈশালী ভৃত্যকে প্রশ্ন করল, একতলায় যাঁকে দেখলাম উনি কে?

ভৃত্য বলল, ওঁর নাম বলতে পারব না। বেখাপ্পা নাম। উনি বাঙালি নন।

বাঙালি যে নয়, সেটা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।

মঙ্গোলিয়ান ধাঁচের মুখ-চোখ, কিন্তু বেশ দীর্ঘ।

বৈশালীর মনে পড়ে গেল।

উনি বোধহয় অতীনবাবুর সঙ্গে এসেছেন?

ভৃত্য ঘাড় নাড়ল। আজ্ঞে হ্যাঁ। দাদাবাবুর কারবারের লোক।

খুব আসেন বুঝি?

হ্যাঁ, প্রায়ই আসেন। বাবুর কাছে খুব আসতেন।

এই সময় বৈশালীর মনে পড়ে গেল, লোকটার নাম মং শান।

অতিথি-কুটিরে ঢুকে সুজিত জিজ্ঞাসা করল, এখন তোমার প্রোগ্রাম কী?

এক ঘণ্টা দিবানিদ্রা। তুমি এ ঘরে শোও, আমি পাশের ঘরে যাচ্ছি।

বৈশালী শুল বটে, কিন্তু ঘুমাল না। একটা হাত দিয়ে চোখ ঢেকে পড়ে রইল।

অতীন যখন আবার এসে দাঁড়াল, তখন রোদ কমে এসেছে। ভৃত্য বাগানে বেতের চেয়ার-টেবিল পেতে দিয়েছে।

বৈশালী আর সুজিতের চা খাওয়াও শেষ।

কিছু মনে করবেন না, আমি কালকের জন্য অত্যন্ত ব্যস্ত আছি। অতীন বলল।

আপনি কতদিন আছেন এখানে?

আমি ভাবছি দিন দুয়েক পরেই রওনা হব, কারণ ওখানে আমার কারবার দেখার কেউ নেই।

তার ওপর মং শানও তো এখন এখানে।

বৈশালীর এই কথায় অতীন যেন একটু অপ্রতিভ হল, তারপর সামলে নিয়ে বলল, মং শান আমার কাঠের কারবার দেখে না। ও পাথর খুব ভালো চেনে। তাতেই আমাকে সাহায্য করে।

মং শানের সঙ্গে একটু আলাপ করতে পারলে খুশি হতাম।

বেশ তো, আমি ডেকে পাঠাচ্ছি।

এক ভৃত্যকে ডেকে অতীন মং শানকে আসতে বলল।

আচ্ছা, একটা কথা ভাবছিলাম।

বলুন।

সচরাচর বর্মিরা খুব দীর্ঘকায় হয় না, বরং বেঁটে হয়, অথচ আপনার মং শান বেশ লম্বা।

দেখা হয়েছে আপনাদের সঙ্গে?

আমরা যখন আহার সেরে বের হচ্ছিলাম, দেখলাম একতলার ঘরে দাঁড়িয়ে আছেন।

ও, মং শান ঠিক বর্মি নয়, ও জেরবাদী। ওর বাপ মুসলমান। সুরাটের মুসলমান, আর মা বর্মি। তাই মং শান অত লম্বা।

একটু থেমেই অতীন বলল, মং শান অবশ্য এসব ব্যাপারের কিছু জানে না।

কী সব ব্যাপারের?

এই বাবার মৃত্যু সম্বন্ধে।

জানেন না মানে? নিশ্চয় শুনেছেন, সংবাদপত্রেও পড়ে থাকবেন।

তা হয়তো পড়েছে, কিন্তু ওই পর্যন্ত। আর কিছু জানে না।

বৈশালী আর কথা বাড়াল না।

রাস্তার প্রান্তে মং শানকে আসতে দেখা গেল।

এবার পরনে দামি স্যুট। হাতে ফেল্ট হ্যাট।

বৈশালী অতীনের দিকে ফিরে বলল, একটা কথা অতীনবাবু, মং শানের সঙ্গে একান্তে দু-একটা কথা বলতে চাই। আপনার থাকবার দরকার নেই।

বেশ।

মনে হল অতীন যেন একটু অনিচ্ছাসত্ত্বেই স্থান পরিত্যাগ করল।

একটু পরে মং শান এসে দাঁড়াল।

বসুন মং শান, আপনার সঙ্গে একটু আলাপ করতে চাই। বৈশালী ইংরেজি বলল।

চেয়ার টেনে বসতে বসতে মং শান বলল, আমার সৌভাগ্য।

আপনি কতদিন অতীন বাজপেয়ির সহকারী হিসাবে কাজ করছেন?

আমি জুনিয়র বাজপেয়ির সহকারী নই, আমি তাঁর সহযোগী। পাথর যাচাইয়ের ব্যাপারে আমি তাঁকে সাহায্য করে থাকি।

অতীন বাজপেয়ির পাথরের চোরাকারবারেও কি আপনি তাঁকে সাহায্য করেন?

মং শানের মুখ আরক্ত হয়ে উঠল।

কিছুক্ষণ বৈশালীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে তারপর বলল, তাঁর পাথরের কোনও চোরাকারবার আছে বলে তো আমার জানা নেই।

আপনি ভুবনবাবুকে দুটো রুবি দিয়েছিলেন?

দিয়েছিলাম, মানে বিক্রি করেছিলাম। রুবি দুটো খুব দামি।

কত দাম?

আমি ছ-হাজারে এক-একটা কিনেছিলাম। বিক্রি করেছিলাম প্রত্যেকটি আট হাজারে।

রুবি দুটো চুরি গেছে জানেন?

শুনেছি।

আপনার কি মনে হয় রুবি দুটোর এত দাম যে, তার জন্য একজন মানুষের প্রাণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে?

মং শানের দু-ঠোঁটের প্রান্তে হাসির ক্ষীণ আভা।

মানুষকে কখন কীসের জন্য প্রাণ দিতে হয়, বলা যায়! আমাদের দেশে, মানে বর্মায় এর চেয়ে অনেক অল্প টাকার জন্য মানুষকে খুন করে।

ভুবনবাবুর শত্রু কেউ ছিল বলতে পারেন?

কী করে বলব! আমি তো এ দেশে থাকি না। তবে অনেক সময় ছেলেও বাপের শত্রু হয়।

এ কথা বলছেন কেন?

জুনিয়র বাজপেয়ির সঙ্গে সিনিয়র বাজপেয়ির সম্পর্ক খুব ভালো ছিল না। প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হত।

আপনি কী করে জানলেন, আপনি তো এ দেশে থাকতেন না?

জুনিয়র বাজপেয়ি বর্মায় ফিরে গিয়ে বাপের নামে খুব মেজাজ দেখাতেন। বলতেন, বুড়ো শকুনের লালসার শেষ নেই।

কিন্তু তা বলে ছেলে বাপকে—

বৈশালীর কথা শেষ হবার আগেই মং শান বলে উঠল, আমি তা একবারও বলিনি। আর আপনার কোনও কথা আছে? আমি উঠব।

কথার সঙ্গে সঙ্গে মং শান দাঁড়িয়ে উঠল।

আপনি আর কতদিন এখানে আছেন?

দিন কুড়ি। রেওয়ার দেওয়ান আসবেন কিছু পাথরের খোঁজে, তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

আমার পাথরের নেশা আছে। কিছু পাথর দেখাতে পারবেন?

কেন পারব না? আপনার বাড়ির ঠিকানা আর সময় দেবেন, গিয়ে দেখিয়ে আসব।

এখানে দেখানো সম্ভব নয়?

না, কারণ পাথরগুলো এখানে নেই। কাজের বাড়ি, এখানে কিছু রাখিনি। আচ্ছা চলি।

মং শান উঠে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল।

বৈশালী সুজিতের দিকে ফিরে বলল, কীরকম বুঝছ সুজিত?

.