নয়
‘ড্রাগনের খবর জানিয়ে কেউ ফোন করেছিল?’ নাস্তার টেবিলে ঢুকল ওরা সবাই। প্রশ্ন করল কিশোর।
‘না,’ জানালেন মেলানি নানু। মাত্র তো ফ্লায়ার ছড়ালাম। সবাই এখনও দেখেইনি। নিঃশব্দে খেয়ে নিল ছেলেরা, তারপর কাজে গেল।
‘নানু, কেউ ফোন করলে কাউবেলটা বাজাবেন, প্লিজ, অনুরোধ করল রবিন।
‘বাজাব,’ কথা দিলেন মেলানি নানু। সারাটা সকাল ছেলেরা ঘণ্টার শব্দ শোনার জন্য অধীর আগ্রহে কান পেতে রইল, কিন্তু লাঞ্চে খেতে ডাকার আগে ওটা আর বাজল না।
লাঞ্চে, মেলানি নানু টেবিলে চিকেনের টাউস এক থালা রাখলেন।
‘খবরের কাগজে আমার এক বন্ধু কাজ করে, তার সাথে কথা বলেছি। ও একটা ফ্লায়ার চেয়েছে কালকের পেপারে দেয়ার জন্যে।’ ঠোঁটজোড়া দৃঢ় হলো তাঁর। ‘বলল আরও কয়েকজন নাকি গত ক’দিনে ওকে ফোন করে ঘোড়া হারানোর কথা জানিয়েছে। মনে হচ্ছে ঘোড়াচোর চক্র এ এলাকায় কাজ করছে।’
ছেলেরা পাতের খাবারের দিকে চেয়ে রইল। এমনকী মুসারও খিদে মরে গেছে।
অ্যাপ্রনে হাতজোড়া মুছলেন মেলানি নানু।
‘আজ ডেবোরার ছুটি, তবে তোমরা লাঞ্চের পর নিজেরা রাইডে যেতে পারো। তাতে ড্রাগনের কথা ভুলে থাকতে পারবে। আমি ফ্লায়ারটা নিয়ে যাব খবরের কাগজের অফিসে। অ্যাপ্রন খুললেন তিনি। ‘কিছু খেয়ে নাও, চলে যাওয়ার সময় বললেন। ‘পরে দেখা হবে।’
তারপরও ছেলেরা খাবার নাড়াচাড়াই করে গেল শুধু।
‘ এখানে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে ভাল্লাগছে না,’ বলল রবিন। হঠাৎই লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। ‘কী করতে হবে জানি আমি!’ পরক্ষণে, মেলানি নানুর অফিসে ছুটে গিয়ে কম্পিউটার অন করল। অন্যরা ঘিরে দাঁড়াল ও যখন টাইপ করল এই শব্দ দুটো: ‘চোরাই ঘোড়া। পর্দা চুরি যাওয়া ঘোড়ার ওয়েবসাইটে ভরে উঠল। রবিন ড্রাগনের বর্ণনা লিখে গেল একের পর এক ওয়েবসাইটে। প্রতিবার যখনই ও নতুন কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছে, ছেলেরা হারানো ঘোড়াদের ছবি দেখছে। কয়েকটা ঘোড়া খুঁজে পাওয়া গেছে। কিছু এখনও নিখোঁজ। রবিন নতুন এক ওয়েবসাইটে ক্লিক করতেই শ্বাস চাপল মুসা।
‘খাইছে!’ বলে, এক ছবি দেখাল।
‘এটা ফুটকি!’ চিৎকার করে উঠল ডন। নিঃসন্দেহে পর্দায় ওটা ডনের ছোট্ট টাট্টু ঘোড়া ফুটকিরই ছবি। ফটোর নিচে লেখা:
‘পোলকি-ডট্স্
এক মাস যাবৎ নিখোঁজ
স্টিভির পুঁতির দোকান থেকে, বিগ পাইনি, ওয়াইয়োমিং
আমাদের প্রিয় ঘোড়াটা শুধুমাত্র একটা পোষা প্রাণী নয়। আমাদের পুঁতির ছোট্ট দোকানটায় যাঁরাই এসেছেন ভালবেসেছেন ছোট্ট মজারু ঘোড়া পোলকি-ডস্কে। প্রায়ই দোকানে ঢুকে ও সম্মানিত ক্রেতাদেরকে ‘হাউডি’ বলে। পোলকি-ড খেতে খুব ভালবাসে এবং আপনার পকেটে নাক গলাবে চিনির কিউব, আপেল কিংবা গাজরের খোঁজে। আমাদের সবার প্রিয় ‘ঘোড়াটাকে যদি দেখে থাকেন, দয়া করে স্টিভির পুঁতির দোকানে ফোন করে জানান।
‘সেজন্যেই ওর খুরের ভেতর পুঁতি গেঁথে ছিল,’ বলল ডন।
কিশোর ফোন করল পুঁতির দোকানটিতে। সাড়া দিল এক মহিলা।
‘আমি ডেয়ার টু ড্রিম র্যাঞ্চ থেকে বলছি, তাকে বলল কিশোর। ‘পোলকি-ডট্স্ ভাল আছে, নিরাপদে আছে।’ মহিলাকে একইসঙ্গে হাসতে আর কাঁদতে শুনল ছেলেরা ‘পোলকি-ডট্স্ আপনার ওখান থেকে নিশ্চয়ই কোনভাবে বেরিয়ে যায়!’ ব্যাখ্যা করল কিশোর। পরে কেউ ওকে উদ্ধার করে আমাদের এখানে পাঠায়। পরের ক’মিনিট স্রেফ শুনে গেল কিশোর ওপ্রান্তের কথা। হাসি মুছে গেল ওর।
‘কী ব্যাপার?’ ও রিসিভার রাখার পর বলল নথি।
কিশোরকে অস্থির দেখাল।
‘মহিলা বললেন ফুটকি নিজে থেকে পালায়নি। গত মাসে তাঁর বার্নের তালা ভেঙে নাকি ওকে চুরি করা হয়।’
আঙুল দিয়ে পর্দার ঠিকানাটা দেখাল রবিন।
‘স্টিভির পুঁতির দোকানটা ওয়াইয়োমিঙে,’ বলল।
‘ডন বলছিল হানি-বানিকে যে ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় ওটার লাইসেন্স প্লেট ওয়াইয়োমিঙের।’
‘ডাইনোসরের অনেকগুলো স্টিকার লাগানো রুপোলী রঙের ছোটখাট এক ট্রেইলার কি টানছিল ট্রাকটা?’ কিশোর জানতে চাইল।
হাঁ হয়ে গেল ডন।
‘তুমি জানলে কীভাবে, কিশোরভাই?’
ব্যাখ্যা করল কিশোর, কারণ চোরটা পুঁতির দোকানের মালিকের ট্রেইলারটাও চুরি করেছে। উনি বললেন ওঁর ছোট ছেলেটা ওটায় ডাইনোসরের স্টিকারগুলো সাঁটিয়েছে।’
ঢোক গিলল ডন। ঘোড়াচোরের মুখোমুখি হয়েছিল ও নিজের অজান্তেই! পেছনমুখো করে বেসবল ক্যাপ পরা লালচুলো লোকটার কথা ভাবল ও।
‘কিন্তু লোকটা তো হানি-বানিকে চুরি করেনি,’ বলল ডন। ‘ওদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।’
ছোট্ট অফিসটায় পায়চারী করছে কিশোর। চিমটি কাটল নিচের ঠোঁটে।
‘হয়তো,’ বলল, ‘ও আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে চেয়েছে। হয়তো ও ড্রাগনকে চুরির মতলব পাকিয়েছিল। হানি আর বানি নিজে-নিজে নিরুদ্দেশে গেছে ভাবলে আমরা ভাবব হয়তো ড্রাগনও একই কাজ করেছে।’
রবিন ফুটকির কম্পিউটার ছবিটা খুঁটিয়ে দেখল।
‘চোরাই ঘোড়া কেউ এই র্যাঞ্চে আনবে কেন?’
পায়চারীর গতি দ্রুততর হলো কিশোরের।
‘ফুটকিকে চোরটা যদি এখানে থাকার জন্যে এনে না থাকে? যদ্দিন বেচতে না পারছে এখানে যদি লুকিয়ে রাখতে চায়?’
‘খাইছে, তাই তো!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ওহ, রবিন, মনে আছে পশ্চিমের তৃণভূমিতে ছবি তোলার সময় স্ট্রাইপড্ শার্ট পরা লোকটা আমাদেরকে বাধা দিতে চাইছিল? ওর পকেট থেকে টাকা ভর্তি খাম পড়ে গিয়েছিল।’
পায়চারী থামাল কিশোর।
‘চোরটা হয়তো ফুটকি আর অন্যান্য ঘোড়াদের এখানে এনে লুকিয়ে রাখছে পরে বিক্রি করবে বলে। ঘোড়ার র্যাঞ্চের চেয়ে ঘোড়া লুকানোর ভাল জায়গা আর কোথায় পাবে?’
‘মেলানি নানু বলেছেন পশ্চিমের ওই তৃণভূমিটা বহু বছর ধরে পড়ে ছিল, বলল নথি। ‘শার্প ওটাকে রেসকিউ হর্সদের জন্যে ব্যবহার করার কথা ভাবার আগে।’
‘উদ্ধার পাওয়া ঘোড়াগুলোকে হয়তো আমাদের আবার উদ্ধার করতে হবে, বলল ডন।
‘চলো ওখানে রাইড করে গিয়ে দেখে আসি,’ বলল কিশোর, ‘পুরনো বার্নে কোন্ কোন্ ঘোড়া আছে।’
মুসাকে অনিশ্চিত দেখাল।
মেলানি নানুর জন্যে অপেক্ষা করলে ভাল হত না?’
‘ওঁর ফিরতে দেরি আছে,’ বলল রবিন। ‘পুরানো বার্নটায় যদি চোরাই ঘোড়া থাকে? ড্রাগনও থাকতে পারে ওখানে। নানু বাসায় ফেরার আগেই হয়তো চোরের দল পগার পার হয়ে যাবে। আমাদের এখুনি যাওয়া উচিত!’
ঘোড়াদের স্যাল্ পরাতে গেল ওরা, কিন্তু করালে ফুটকিকে দেখল না।
‘ও হয়তো মাঠে চরে বেড়াচ্ছে, বলল কিশোর। ওকে খোঁজার এখন সময় নেই।’ ত্বরিত আরেকটা ছোট ঘোড়াকে স্যাল্ আপ করল ও ডনের জন্য।
র্যাঞ্চ থেকে বেরোল ঘোড়সওয়ার ছেলেরা। তৃণভূমিতে অনেক ঘোড়া চরতে দেখল। কিন্তু ফুটকি নেই তাদের মাঝে।
ওই দূরে, পশ্চিম তৃণভূমিতে, পুরানো বার্নের কাছে এক লম্বা রুপোলী রঙের ট্রাক দাঁড়িয়ে।
‘ওই ট্রাকটা আমি আগেও দেখেছি,’ বলল ডন। ট্রাকটায় গর্ত করা আছে যাতে গরুরা শ্বাস নিতে পারে।’
‘ওটা হর্স ট্রেইলারও,’ জানাল কিশোর।
‘হয়তো ওটায় করে নতুন-নতুন রেসকিউ হর্স আনা হচ্ছে, ‘ বলল মুসা।
‘কিংবা চোরাই ঘোড়া, বলল কিশোর।
লম্বা-লম্বা খড়ের এক মাঠ পেরিয়ে ট্রেইলারটার দিকে চলল ছেলেরা। ট্রাকটার পেছন দরজা নামানো। কিন্তু ঘোড়া না নামিয়ে, স্ট্রাইপড্ শার্ট পরা লোকটা ট্রাকে এক সাদা ঘোড়া তুলছে।
‘আমি শাপকে ওই ঘোড়াটায় চড়তে দেখেছি,’ বলল ডন। ‘শার্প বলেছিল সে ভাল ঘোড়া চালায়। কীসের কী, দু’হাতে স্যাডল হর্ন চেপে ধরে থাকে।
স্ট্রাইপড্ শার্ট এমুহূর্তে ঘোড়াটার লাগাম আঁকড়ে ধরেছে। র্যাম্প দিয়ে টেনে জানোয়ারটাকে ট্রাকে তুলছে ও।
‘খাইছে, আমরা ছবি নেয়ায় এ লোকই চেঁচামেচি জুড়ে দিয়েছিল,’ বলল মুসা।
একটা হাত তুলল কিশোর। থেমে পড়ল সবাই। লোকটা বার্নের ভেতরে ঢুকল এবং একটু পরেই নাকে সাদা ছোপওয়ালা এক ধূসররঙা অপূর্ব সুন্দর ঘোড়া বের করে আনল। ওটার লেজটা সাদা-কালো।
‘বাটারকাপ, ঘোড়াটাকে দেখে ফিসফিস করে বলল রবিন ‘বেগুনী ফ্লায়ারে যে চুরি যাওয়া ঘোড়াটার ছবি আছে! ও পুরোটা সময় তারমানে এখানেই ছিল!’
‘আমরা আরও কাছে যেতে পারলে ভাল হত,’ বলল কিশোর, কিন্তু তাহলে লোকটা দেখে ফেলতে পারে।’ ঘোড়া থেকে নেমে বগা ছেড়ে দিল কিশোর। অন্যদেরকেও ইশারায় একই কাজ করতে বলল। ঘোড়াগুলো হেঁটে চলে গেল।
‘ওরা পালাবে না তো?’ বলল ডন।
‘না, চরে বেড়াবে। আমরা পরে খুঁজে নেব,’ বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
ছেলেরা নিচু হয়ে, লম্বা-লম্বা খড় ভেদ করে নিঃশব্দে এগোল। শীঘ্রি ওরা পৌছে গেল বার্নটার কাছে।
‘আয়, আর জেদ করিস না তো!’ এক লোক গর্জে উঠল। ছেলেরা উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল, নিজেদেরকে লুকিয়ে ফেলল খড়ের আড়ালে। বার্ন থেকে এক লোককে বড়, কালো এক ঘোড়া টানতে টানতে বের করতে দেখল উঁকি মেরে।
মুখে হাত চাপা দিল নথি।
‘ড্রাগন!’
‘কোথায়?’ ডন ফিসফিস করে বলল।
‘ওখানে।’ ঘোড়াটা কালো। ওটার পিঠে বড় সাদা ড্রাগনটা নেই। ‘আমি বলছি তোমাদেরকে ওটা ড্রাগন,’ বলল রবিন।
‘শু পালিশ, বলল কিশোর। ‘জুতোর কালি ঘষে ঘোড়াটার পিঠের সাদা ড্রাগনটা ঢেকেছে ওরা। কেউ দেখলেও চট করে যাতে চিনতে না পারে।’
‘আমি চিনব,’ বলল রবিন। যে কোনখানে।’ কিছুতেই ট্রাকে উঠবে না ড্রাগন। পেছনের দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে চিহিহি ডাক ছাড়ল। লাগাম ধরে টানাটানি করছে লোকটা।
‘আয়, বাপ!’ চেঁচাল। ‘জেদ না করে ঢুকে পড়!’ বল্গা ধরে টানল আবারও।
রবিন উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল কিন্তু কিশোর ওকে টেনে নামিয়ে দিল।
‘এখনই না। ওরা আগে ট্রেইলারের ভেতরে ঢুকুক। তারপর আমরা একসাথে বার্নে দৌড়ে যাব।’ র্যাম্প দিয়ে ড্রাগনকে টেনে ওঠাতে দেখল ওরা লোকটাকে। অনন্তকাল লেগে গেল যেন একাজে। অবশেষে, ড্রাগন উধাও হলো ট্রেইলারের ভেতরে।
ছেলেরা মাঠ থেকে দৌড়ে গেল বার্নে। ভেতরে, দরজার কাছে চারটে ঘোড়া বাঁধা।
‘ফুটকি!’ বলে ওর ঘোড়াটাকে বুকে চেপে ধরল ডন।
‘এখন না।’ ডনকে টেনে পেছনের এক স্টলে নিয়ে গেল কিশোর। ছেলেরা অন্ধকারময় এক কোনায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এসময় বার্নে ঢুকল লোকটা। ওরা শ্বাস চেপে দেখল লোকটা এক লালরঙা সুন্দর ঘোড়ার বাঁধন খুলে ট্রাকের দিকে নিয়ে চলেছে। স্টলের দেয়ালে ছোট্ট এক টুকরো কাগজ গোঁজা। কে যেন ঘোড়াদের এক তালিকা করেছে: অ্যালোমিনো, কোয়ার্টার হর্স, গ্রে অ্যারাবিয়ান, ব্রাউন স্পটেড পনি। ‘এই ঘোড়াগুলোকে ও চুরি করছে, নিচু স্বরে বলল কিশোর। ওকে ঠেকাতে হবে আমাদের।’
এক লাফে উঠে দাঁড়াল রবিন।
‘আমি ওকে দেরি করিয়ে দিতে পারি!’ শেষের ঘোড়া তিনটের কাছে তীরবেগে ছুটে গিয়ে সব কটাকে বাঁধনমুক্ত করল। এবার ওগুলোর পেছনদিকে চাপড় মারল। মুক্তি পেয়ে বার্ন থেকে ছিটকে বেরোল জানোয়ারগুলো।
ট্রাকের লোকটা ঘোড়াদেরকে পালাতে দেখল।
‘অ্যাই!’ ত্রাহি চিৎকার ছাড়ল। লাফিয়ে পড়ল ট্রাক থেকে। ‘অ্যাই! থাম! থাম!’
বার্ন থেকে গলা বাড়াল ছেলেরা। লোকটা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে।
‘ভিভ!’ চেঁচাল লোকটা। ‘শিগগির আসুন!‘
ট্রাকের দরজাটা হাট হয়ে খুলে যেতেই মাথা নোয়াল ছেলেরা। নেমে এল চালক। পেছনমুখো করে বেসবল ক্যাপ পরেছে লালচুলো লোকটা।
‘এ লোকই হানি-বানিকে দিয়ে গিয়েছিল,’ বলল ডন। ‘এ-ই ডাইনোসর স্টিকার সাঁটা ট্রেইলার চালাচ্ছিল।’
স্ট্রাইপড্ শার্ট পরা লোকটা একটা ঘোড়াকে পাকড়ে ধরে ট্রাকের কাছে নিয়ে এল।
‘আসুন, আরও দুটোকে ধরতে হবে,’ খেঁকিয়ে উঠল
‘ভাগো, লালচুলো বলল। ট্রাকে হেলান দিয়ে হেসে উঠল I ‘আমি আর আমার ভাই এগুলোকে চুরি করি, আর তোমাকে বেতন দিই দেখেশুনে রাখার জন্যে। ওদেরকে ট্রাকে ঢোকানো তোমার কাজ।’
‘আপনাদের মত এমন ছ্যাঁচড়া ঘোড়াচোর আমি আর জীবনে দেখিনি,’ স্ট্রাইপড্ শার্ট বলল। ‘কম ঘোড়াচোরের সাথে তো আর কাজ করিনি!’ ধাওয়া দিল বাকি ঘোড়া দুটোকে। বারবার বিরতি নিচ্ছে দম ফিরে পেতে। ডন ট্রাক চালকের কন্ঠমণির দিকে চাইল। ওঠা-নামা করছে ওটাও, অবিকল শার্পের মতন।
‘এ মনে হয় শার্পের ভাই,’ বলল ও। শার্পের মাথার চুল কালো, কিন্তু বাহুর লোম লাল।’
‘ও ছদ্মবেশ নিয়ে থাকে,’ বলল রবিন। ‘এই ঘোড়াগুলোকে যেভাবে ছদ্মবেশে রাখে।’
লোকটা শেষমেশ এক রুপোলী ঘোড়াকে ধরতে পারল। গাছ থেকে আপেল খেতে থেমেছিল ওটা। শুধুমাত্র ফুটকিকে এখনও বাগে পাওয়া যায়নি।
‘আমাদের কিছু একটা করা দরকার,’ বলল ডন।
‘একটা বুদ্ধি এসেছে, বলল কিশোর। ‘মুসা, তুমি যাও, ড্রাইভারের সাথে কথা বলোগে।’
থতমত খেয়ে গেছে মুসা।
‘খাইছে, কী বলব?’
‘যা খুশি, বলল কিশোর। ‘শুধু খেয়াল রাখবে ওর পিঠ যেন আমাদের দিকে ফেরানো থাকে। তাহলে আর আমাদের দেখতে পাবে না।’ ডনের দু’কাঁধে হাত রাখল কিশোর। তুমি মাঠে গিয়ে ফুটকিকে ডাকবে। ও তোমার কাছে আসবে। ওই লোকটা তোমাকে তাড়ানোর চেষ্টা করবে। তুমি যতটা সময় পারো ওকে দেরি করাবে।’
‘আর আমি?’ রবিনের প্রশ্ন।
মৃদু হাসল কিশোর।
‘তুমি আমার সাথে যাবে। এবার আমাদের ঘোড়া চুরির পালা।’
স্ট্রাইপড্ শার্ট ট্রাক থেকে লাফিয়ে পড়ে যতক্ষণ না ফুটকিকে ধাওয়া দেয়া শুরু করল, অপেক্ষা করল ওরা।
‘এবার,’ বলল কিশোর।
মুসা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ঘুরে ট্রাকের সামনে চলে গেল।
‘হ্যালো,’ বলল ও। কাকের মত কর্কশ শব্দ বেরোল ওর গলা দিয়ে।
পাঁই করে ঘুরল চালক।
‘তুমি আবার কোত্থেকে এলে?’
‘শহর থেকে,’ বলল ও। ‘গ্রীনফিল্ড। কানেক্টিকাট। অবশ্য এটাও কানেক্টিকাট। তবে গ্রীনফিল্ড এখান থেকে অনেক দূরে। আমি টুরিস্ট। আমি… আমি ঘোড়া ভালবাসি। আ-আপনার কাছ থেকে, উম, ঘোড়াদের সম্পর্কে কিছু জানতে চাই এবং…’ মুসা বকেই চলেছে, সময় নষ্ট করাচ্ছে আরকী। কোন্ কথার পর কী বলবে নিজেও জানে না।
ওদিকে, চারণভূমিতে দৌড়ে গেছে ডন। স্ট্রাইপড্ শার্ট ফুটকিকে ধরতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে শেষ। কিন্তু ওকে পাকড়ায় কার সাধ্য! লোকটার ছোটার গতি ক্রমেই কমে আসছে।
‘ফিরে আয় বলছি,’ হুঙ্কার ছাড়ল নাজেহাল লোকটা। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
‘অ্যাই, ফুটকি,’ ডাকল ডন। চোখ তুলে চাইল ঘোড়াটা। হাতছানি দিল ডন। আর দেরি নয়, এক ছুটে ওর কাছে চলে এল ফুটকি।
‘অ্যাই, ছেলে,’ ডনের দিকে ছুটতে ছুটতে এল লোকটা, বেদম হাঁফাচ্ছে। ‘দিয়ে দাও… ঘোড়াটাকে। তুমি… এখানে… থেকো না,’ শ্বাসের ফাঁকে বলল।
মুসা আর ডন লোক দুটোকে ব্যস্ত রেখেছে, এই সুযোগে কিশোর আর রবিন দৌড়ে র্যাম্প বেয়ে ট্রাকে ঢুকল। ঘোড়ায় গাদাগাদি ভেতরটা। ট্রাকের দু’পাশে খুঁটিতে বাঁধা ওদের লাগাম।
‘খুলে দাও,’ ফিসফিসিয়ে বলল কিশোর।
একটার পর একটা ঘোড়া বাঁধনমুক্ত হলো। এবার কিশোর লাল ঘোড়াটা আর রবিন ড্রাগনের পিঠে সওয়ার হলো। জিভে আর টাকরায় টক-টক আওয়াজ করল ওরা। ধীরেসুস্থে র্যাম্প বেয়ে নেমে এল ঘোড়া দুটো এবং বাকিগুলো অনুসরণ করল ওদের। র্যাম্পে খুরের শব্দ পেয়ে চরকির মতন ঘুরে দাঁড়াল চালক।
‘আরি!’ চিৎকার ছেড়ে, দৌড়ে এল ট্রাকের পেছনদিকে।
‘থাম!’ স্ট্রাইপড্ শার্ট চেঁচাল।
কিন্তু ঘোড়াগুলো থামল না। ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে।
‘ওহ, কিশোর, এতগুলোকে আমরা ধরব কীভাবে?’ চিৎকার করে উঠল রবিন।
‘অ্যাই, ছেলেরা!’ গর্জন ছেড়ে, ডন আর মুসার উদ্দেশে তেড়ে এল লোক দুটো। ‘থামো!’
রবিন আতঙ্কিত চোখে দেখল ওদেরকে প্রায় পাকড়ে ফেলেছে দুই বদমাশ।
হঠাৎই, এক কণ্ঠস্বর হুঙ্কার ছাড়ল, ‘ইইইই-হাআআআআ!’ চোখ তুলে চাইল ছেলেরা। ‘ইইইই-হাআআআআ!’ খড়ের মাঠ থেকে ওর ঘোড়াটা তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে এলে গর্জন ছাড়ল ডেবোরা। র্যাংলার ঊর্ধ্বগতিতে ছুটছে, বাতাসে দোলাচ্ছে লাল হ্যাট, ধেয়ে যাচ্ছে লোক দুটোর উদ্দেশে। দুই চোর ঘুরেই দিল দৌড়। ডেবোরা পাঁই করে ঘোড়া ঘুরিয়ে ডনের কাছে দাবড়ে এল। হাত নামাল। ‘ধরো,’ বলল। ডন হাতটা চেপে ধরতেই এক টানে ওকে স্যাড়লে নিজের পেছনে বসাল। ওদিকে, কিশোর ওর পেছনে টেনে তুলল মুসাকে।
‘ঘোড়াগুলোকে রক্ষা করতে হবে,’ মরিয়া কণ্ঠে চেঁচাল রবিন।
‘ওদেরকে রাউণ্ড আপ করো!’ আদেশ দিয়ে, ছড়িয়ে পড়া ঘোড়াদের পিছু নিল অশ্বরোহী ডেবোরা।
‘ইইইই-হাআআআআ,’ সমস্বরে চেঁচাল ওরা, ট্রাকের কাছ থেকে ধাওয়া দিয়ে সরাচ্ছে জানোয়ারগুলোকে। ‘ইইইই- হাআআআআ,’ থামল না যতক্ষণ অবধি শেষ ঘোড়াটাকে তাড়িয়ে করালের নিরাপদ আশ্রয়ে ঢোকাতে না পারল।