ন্যায়নিষ্ঠ ন্যাসনাশীর কাঁটা – ৩

পরদিন রাত্রে সবাই যখন ডিনার টেবিলে আহারে বসেছেন তখন টেলিফোনটা বেজে উঠল। বিশু ছুটে গিয়ে ধরল। বাসসাহেবের দিকে ফিরে বললে, আপনাকে খুঁজছেন।

বাসু মাংসের টুকরোটাকে সবে ফর্ক দিয়ে চেপে ধরেছেন। বললেন, দিকে ফোন করছেন জেনে নে। কী শেখালাম সেদিন?

বিশুর মনে পড়ে গেল। টেলিফোনের ‘কথা-মুখে’ বলল, ওঁকে কী বলব? কে ফোন করছেন বলব?

তারপর শুনে নিয়ে টেলিফোনের কথামুখে হাতচাপা দিয়ে বললে, কিংশুক হালদার। মানে ইয়ে…. মিস্টার কিংশুক হালদার!

বাসু বললেন, পাসড উইথ ডিসটিংশন। দে, যন্ত্রটা এগিয়ে দে। তারপর টেলিফোনে বলেন, বল কিংশুকবাবু?

—শেয়ার বাজারের লেটেস্ট খবরটা শুনেছেন, স্যার? জাপানের সঙ্গে ইন্ডিয়ার ট্রেড- এগ্রিমেন্ট হয়ে গেছে। জাপান কয়েক কোটি পেটি ভারতীয় চা কিনবে। টী-এক্সপোর্ট আবার শুরু হবে। তাই, ‘কুতুব টী’-এর শেয়ার থ্রি হান্ড্রেড পারসেন্ট বেড়ে গেছে! হয়তো আরও বাড়বে!

—তাতে তোমারই বা কী, আমারই বা কী?

—আপনার কাছে হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমার কাছে ছপ্পড় ফোঁড় আকাশের চাঁদ। খুকুর বাবা রঘুবীর সেন ছিলেন কুতুব টী কোম্পানির প্রথম ব্যাচের ফাউন্ডার মেম্বার ক্লাসের শেয়ার- হোল্ডার। তাঁর হেপাজতে একটা মোটা চাংক ছিল ঐ কোম্পানির শেয়ারের। তার মানে, ট্রাস্ট- মানিটা রাতারাতি লাখ-বেলাখ হয়ে গেছে!

বাসু বলেন, অনিবার্ণ হয়তো এতদিন সে শেয়ার বেচে দিয়ে বসে আছে!

—ইমপসিবল, স্যার! কুতুব টী এস্টেটের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রঘুবীর সেনের ক্লাস ফ্রেন্ড! তাই ঐ অনির্বাণ দত্তকে উনি ইন্সট্রাকশন দিয়ে গেছিলেন ঐ শেয়ার কিছুতেই না বেচতে

—তুমি কেমন করে জানলে?

—খুকুই বলেছিল।

—তা হতে পারে; কিন্তু এ চার বছরে দুনিয়ার অনেক কিছুই তো বদলে গেছে। রাশিয়ার কম্যুনিস্ট সরকারের পতনের পর রাশিয়ায় চা পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। শুনেছি, ‘কুতুব টী’-এর শেয়ারের দাম হু হু করে পড়ে যাচ্ছিল। তাই হয়তো অনিবার্ণ সে শেয়ার বেচে দিয়েছে।

—লেট ল্যামেন্টেড রঘুবীর সেনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে?

—আরে বাপু, ইতিমধ্যে পরিস্থিতিটা যে বদলে গেছে। অনির্বাণ দত্ত তো আর ‘ক্যাসাবিয়াঙ্কা নয় যে, জ্বলন্ত জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে থাকবে লেট ল্যামেন্টেড রঘুবীর সেনের আদেশ শিরোধার্য করে।

—আপনি স্যার, আপনার মক্কেলকে একবার ট্যাপ করে দেখবেন কাইন্ডলি?

বাসু বিরক্ত হয়ে বলেন, দেখ ছোকরা! এভাবে আমাকে বিরক্ত কর না। আমার মক্কেলকে আমি ফোন করব কি করব না সেটা আমার বিবেচ্য।

টেলিফোনটা নামিয়ে রাখলেন।

রানু জানতে চান, কী ব্যাপার?

উনি বুঝিয়ে দিলেন পরিস্থিতিটা। বললেন, রাত্রে অনির্বাণের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যাবে না। তার মেসে ফোন নেই। দেখতো রানু, সলিল মৈত্রকে ফোনে ধরতে পার কি না। নম্বরটা আমার অ্যাড্রেস বইয়ে পাবে। M-এ, মৈত্র সলিল, শেয়ার কনসালটেন্ট।

পাওয়া গেল মৈত্রকে। বাসু তাঁকে অনুরোধ করলেন কাল সকালে বাজার খুললেই যেন পাঁচশ কুতুব টী-এর শেয়ার ওঁর নামে ধরা হয়।

সলিল মৈত্র বললেন, বড় দেরি হয়ে গেছে, স্যার। গত বাহাত্তর ঘণ্টায় কুতুব টী-এর শেয়ারের দর থ্রি হান্ড্রেড পার্সেন্ট বেড়ে গেছে। পরশু সন্ধ্যায় টিভিতে ট্রেড এগ্রিমেন্ট ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই।

—জানি। ওটা আরও বাড়বে। বাই-দ্য-ওয়ে, কুতুব টী-এর প্রেসিডেন্ট এখন কে, জান?

—জানি। জনার্দন সিঙ্ঘানিয়া। কেন বলুন তো?

—না, সিঙ্ঘানিয়া নয়, কী সাম পাল বাঙালি— তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আমার ক্লায়েন্ট : রঘুবীর সেন। কুতুব টী-এর প্রথম যুগের শেয়ার হোল্ডার। রঘুর কাছে একটা বড় চাংক ছিল। আমাকেও বলেছিল….

বাধা দিয়ে মৈত্র বলেন, জানি স্যার। রঘুবীর গত হয়েছেন বছর ছয়েক। আর তাছাড়া কুতুব টী-এর ঐ বড় চাংকটা বর্তমানে তাঁর ওয়ারিশের এক্তিয়ারে নেই…

—তুমি কেমন করে জানলে?

—নিতান্ত ঘটনাচক্রে ব্যারিস্টার সাহেব। ঐ রঘুবীর সেন ছিলেন আমার পিতৃবন্ধু। তাঁর ছিল এক নাবালিকা কন্যা। তাই তিনি মৃত্যুর আগে তাঁর সম্পত্তির অছি নিযুক্ত করে যান কী-সাম দত্তকে। সে ছোকরা ঐ রঘুকাকার বাড়িতেই থাকত। রাশিয়ায় কম্যুনিস্ট সরকারের পতনের পর ইন্ডিয়ান টী-এর এক্সপোর্ট প্রচুর পরিমাণে কমে যায়। কুতুব টী-র দামও হু হু করে পড়ে যাচ্ছিল। তখন ঐ ছোকরা এক লপ্তে সব শেয়ার বেচে দেয় আমারই মাধ্যমে

—আই সী। সে ছোকরার নাম বোধহয় ‘অনির্বাণ দত্ত’। তাই নয়?

—একজ্যাক্টলি! তুখোড় ছোকরা। ঐ অনির্বাণ দত্ত গত সপ্তাহে, মানে কুতুব টী-র বাজার চড়বার আগেই, আবার শ-পাঁচেক শেয়ার আমার মাধ্যমে কিনেছে। বেশ কম দামে।

—নিজের নামে?

— আবার কী? যা হোক, কাল বাজার খোলার সময় কী দাম থাকবে তা তো জানি না। ম্যাক্সিমাম কত দর পর্যন্ত কিনব?

—এনি প্রাইস। দর আরও চড়বে। আসল কথা, আমি ঐ কোম্পানির একজন শেয়ার- হোল্ডার হতে চাই।

—ঠিক আছে, স্যার। তাই হবে।

—তুমি বললে, রঘুবীর তোমার বাবার বন্ধু ছিলেন, তাই নয়?

—আজ্ঞে হ্যাঁ, দুজনে কাক ডাকা ভোরে টালিগঞ্জ গলফ ক্লাবে যেতেন, বছরে নয় মাস। বর্ষার তিন মাস বাদে। ক্লাবেই ব্রেকফাস্ট সারতেন, দুজনে। না, দুজনে নয়, ওঁরা ছিলেন তিন বন্ধু। তৃতীয় জন হচ্ছেন মহেন্দ্রনাথ পাল : কুতুব টী-র বোর্ড অব ডাইরেক্টরসে ছিলেন, প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়েছিলেন।

—বেঁচে আছেন?

—আছেন। বর্ধমানের দিকে বাড়ি করেছেন। কিছুদিন আগে তাঁর সঙ্গে ট্রেনে দেখা হয়েছিল। উনি তো আশাবাদী। ওঁর বিশ্বাস, সিংঘানিয়াকে হটিয়ে উনি আবার গদি দখল করবেন।

বাসু ধন্যবাদ জানিয়ে লাইনটা কেটে দিয়ে এদিকে ফিরলেন। বললেন, কৌশিক, অনিবার্ণ দত্তের মেসের ঠিকানা লেখা আছে তোমার মামিমার খাতায়। কাল সকাল সাতটার মধ্যে ওর মেসে হানা দাও। আমি জানতে চাই, কুতুব টী-র সেই অরিজিনাল শেয়ার অনিবার্ণ বেচেছে কি না। আর গত সপ্তাহে নিজের নামে সলিলের কাছ থেকে পাঁচশ শেয়ার কিনেছে কি না। তাকে বল, অফিসে যাবার আগে যেন কোনও দোকান থেকে আমাকে একটা ফোন করে। মহেন্দ্র পালের বর্ধমানের অ্যাড্রেসটাও সংগ্রহ কর। ব্যাপারটা ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে।

কৌশিক বলল, বর্ধমানের অ্যাড্রেস তো মিস্টার সলিল মৈত্রের কাছ থেকেই জোগাড় করতে পারতেন?

—তা পারতাম। কিন্তু তাতে সলিল অহেতুক সন্দিগ্ধ হয়ে উঠত। তোমাকে যা বলছি, তাই কর না বাপু!

.

কলেজ স্ট্রিট আর মহাত্মা গান্ধী রোডের মোড়ের কাছাকাছি একটা ত্যাড়চা গলি বেরিয়েছে : টেমার লেন। অনির্বাণ দত্তের মেসটা সেই গলির ভিতর। সকাল তখন পৌনে আটটা। কলেজ স্ট্রিটের বই-বাজার তখনও সরগরম হয়নি, দোকানপাট খোলেনি। একটা বন্ধ দোকানের সামনে গাড়িটা পার্ক করে কৌশিক সুজাতাকে বললে, আমি গাড়িতেই বসে থাকছি, তুমি যাও ঐটা মেস বাড়ি। ওখানে গিয়ে অনির্বাণ দত্তর খোঁজ কর দিকিন।

সুজাতা বললে, সবসময় আমাকে বাঘের মুখে এগিয়ে দিয়ে তুমি ব্যাকগ্রাউন্ডে বসে থাকতে চাও কেন, বল দিকিন?

কৌশিক বলে, সহজবোধ্য হেতুতে। এখানে থেকেই ম্যানেজারকে দেখা যাচ্ছে। ফতুয়া গায়ে বসে আছেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রৌঢ়। মাথায় ‘দর্পণসদৃশ ইন্দ্ৰলুপ্ত’। আমাকে হয় তো তিনি পাত্তাই দেবেন না। অথচ তোমাকে আদর করে বসাবেন, চা অফার করবেন। যাও, লক্ষ্মীটি।

সুজাতা হেসে ফেলে। এগিয়ে যায় মেসবাড়ির দিকে।

গাড়িতে বসে বসেই কৌশিক দেখতে পায়, ম্যানেজার ভদ্রলোক সুজাতাকে আপ্যায়ন করে বসালেন। প্রশ্নটা শুনে একটু অবাক হয়ে ম্যানেজার বলেন, কী ব্যাপার বলুন তো দিদি? হঠাৎ অনির্বাণের বাজার দর এভাবে বেড়ে গেল কেন?

—মানে?

—দত্তজা থাকে তিনতলার চিলেকোটার সিঙ্গল বেড ঘরে। যদ্দুর জানি, তার তিন কুলে কেউ নেই। তার কোনও চিঠিপত্রও আসে না। কেউ কোনদিন খোঁজ করতেও আসেনি। অথচ কাল এক ভদ্রলোক তিন-তিনবার এসেছিলেন অনির্বাণের সন্ধানে। আবার আজ ভোরেই আপনি এসেছেন… কী দরকার?

সুজাতা তৎক্ষণাৎ এক আষাঢ়ে গল্প শোনাল-

অনিবার্ণ ওর গ্রাম সম্পর্কে দাদা। সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার ফার্মে একটা টাইপিস্টের চাকরি সে করিয়ে দিতে পারে। সেই খোঁজ নিতেই ও এসেছে। শিয়ালদহ থেকে ট্রামে, নম্বর দেখতে দেখতে।

ম্যানেজার বললেন, তার মানে সকাল থেকে চা-টাও খাওয়া হয়নি।

সুজাতা বললে, না না। ট্রেনে ভেন্ডারের কাছে কিনে চা খেয়েছি। মুড়ি-মশলাও। আপনি ব্যস্ত হবেন না। অনিদা কি আছে?

ম্যানেজার কর্ণপাত করলেন না। ভৃত্য নকুলকে ডেকে আদেশ করলেন দিদিমণির জন্য একটা ডবল-অমলেট আর স্পেশাল চা। তাঁর নিজের জন্যও একটা সেকেন্ড-কাপ চিনি ছাড়া অর্ডার করলেন। তারপর সুজাতার দিকে ফিরে বললেন, কাল অনিবার্ণ অফিস-ফেরত মেসে আদৌ ফেরেনি। তার চিলেকোটার সিঙ্গলবেড ঘরটা তালা মারা। সে যে কোথায় গেছে, কেন গেছে, ওঁরা কেউ জানেন না।

সুজাতা জানতে চায়, কাল যিনি তিন-তিনবার এসেছিলেন ওঁর খোঁজে, তাঁর নাম কি সনাতন হাজরা? কালো-মোটা-বেঁটে, দাড়ি আছে? আন্দাজ বছর ত্রিশ বয়স? বলাবাহুল্য, এটা আন্দাজি-বর্ণনা। কারণ, সুজাতা জানে, মনুষ্যচরিত্রের নিয়মই হচ্ছে প্রতিবাদ করে আনন্দ পাওয়া।

ঠিক তাই।

ম্যানেজার বললেন, না মা লক্ষ্মী! এ তোমার সনাতন হাজরা নয়। এ ভদ্রলোক ছয় ফুটের কাছাকাছি লম্বা, দাড়ি-গোঁফ কামানো, বয়স পঞ্চাশের ওপরে। ফর্সা নয়, গায়ের রঙ তামাটে, গালে একটা বড় আঁচিল। চেন তাকে, মানে, চেনেন তাকে?

সুজাতা বললে, আমাকে তুমিই বলবেন। না, চিনতে পারছি না। আমাদের গাঁয়ের কেউ নয়, বোধহয়। কিন্তু অনিদা বলেছিল, ওর এক্স-এমপ্লয়ার ওকে একটা গাড়ি দিয়েছিলেন। অনিদা কি সেটা বেচে দিয়েছে?

ইতিমধ্যে দু-কাপ চা আর ডবল-ডিমের অমলেট এসে গেল।

কৌশিক গাড়ির ড্রাইভারের সীটে নিশ্চল বসে ছিল। এবার একটা সিগ্রেট ধরালো।

সুজাতা তারিয়ে তারিয়ে অমলেট আর চা সেবন করতে করতে বাইরে তাকিয়ে দেখছিল। সামনে একটা গাড়িতে ড্রাইভারের সীটে বসে একজন ভদ্রলোক যে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তাতে ওর অমলেটটা হজম হলে হয়।

ম্যানেজার বললেন, না, মা বেচে দেয়নি। এ গলিতে তো জায়গা হয় না। গ্যারেজ নেই কাছে-পিঠে। দত্তজা তার গাড়িটা গ্যারেজ করে কিযেনলালের গ্যারেজে : কলেজ স্ট্রিট বাজারের ওপারে, মেছুয়াবাজারের মুখটায়। কেন বল দিকি?

—না, মানে ভাবছিলাম ওর গাড়িটা গ্যারেজে আছে কি না। অনিদা যদি গাড়ি নিয়ে কলকাতার বাইরে গিয়ে থাকে তাহলে এ-যাত্রা আর দেখা হবে না। আমাকে গাঁয়েই ফিরে যেতে হবে।

—অ। তা দেখ কিষেনলালের গ্যারেজে খোঁজ নিয়ে।

অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে সুজাতা উঠে দাঁড়ায়।

ম্যানেজার বলেন, তোমার নামটা জানা হল না। দত্তবাবু ফিরে এলে কী বলব, মা?

—বলবে, ‘কনি’ এসেছিল, মদনপুর থেকে।

—বলব। ‘কনি’! বাঃ! বেশ নাম!

মেস থেকে বেরিয়ে সুজাতা গাড়ির দিকে গেল না। ট্রামরাস্তার দিকে হাঁটা ধরল। কারণ ও লক্ষ্য করেছিল, ম্যানেজার ভদ্রলোক একটা বিড়ি ধরিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। বোধকরি হাওয়া খেতে। পিছন থেকে ওর গমনপথের দিকে তাকিয়ে আছেন। একদৃষ্টে।

কান টানলে মাথাকে আসতে হয়। কৌশিক গলির মধ্যে গাড়ি ঘোরাবার মতো যথেষ্ট জায়গা পেল না। ব্যাকগিয়ারে পিছিয়ে এল ট্রামরাস্তার দিকে। ততক্ষণে ম্যানেজার মেসের ভিতরে ঢুকে গেছেন।

কৌশিক নেমে এসে বললে, কী ব্যাপার? হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলেছ?

—ম্যানেজার-ভদ্রলোকের দৃষ্টিপথের বাইরে। ওঁকে বলেছি, আমি শেয়ালদা থেকে ট্রামে এসেছি। সে যা হোক, অনিবার্ণ কাল অফিস ফেরত মেসে আসেনি। রাত্রে মেসে ছিল না। আরও একটা খবর। অনির্বাণকে কে একজন খুঁজছে। কাল নাকি বার-তিনেক লোকটা মেসে খোঁজ নিতে এসেছিল। দেখা পায়নি।

সেই লোকটার বর্ণনা শুনে কৌশিক বললে, জাস্ট এ মিনিট। এই গলির প্রায় শেষ প্রান্তে ‘করুণা প্রকাশনী’-র একটা কাউন্টার আছে। এখন দোকান বন্ধ; কিন্তু ঐ রোয়াকে একটা বুড়ো বসে আছে তুমি দেখে এস তো।

—কেন? আমি একা একা যাব কেন? চল না, দুজনেই যাই।

—না। আমি যখন গাড়িতে বসেছিলাম তখন সে লোকটার সঙ্গে চোখাচোখি হয়েছে। সে তোমাকে এ-গাড়ি থেকে নামতে দেখেছে। কিন্তু মুখখানা বোধহয় দেখেনি। আমি এখানেই থাকছি। তুমি বাড়ির নম্বর দেখতে দেখতে সমস্ত গলিটাই ঘুরে এস। ভাবখানা : যাকে খুঁজছ, সে ঐ মেসবাড়িতে থাকে না। যে-নম্বর খুঁজছ সেটা পাচ্ছ না বলেই….

—কিন্তু ঐ বুড়োটাকে বিশেষভাবে দেখবার কী দরকার?

—এক নজরে আমার মনে হয়েছিল, ও খুব লম্বা, লোকটার বয়স পঞ্চাশের ওপরে, দাড়ি- গোঁফ কামানো, গালে বড় আঁচিল। গায়ে টুইলের হাফশার্ট, পরনে পায়জামা, আমাকে দ্বিতীয়বার দেখলে লোকটা সন্দিগ্ধ হয়ে ভেগে যাবে। তুমি দেখ তো, ম্যানেজারের বর্ণনা মোতাবেক এই লোকটাই কি অনিবার্ণকে খুঁজছে?