২
পরদিন সকালেই দেখা করতে এল করবী সেন।
রানু ইন্টারকমে না জানিয়ে তাঁর ইনভ্যালিড চেয়ারে পাক মেরে এঘরে এসে সংবাদটা পরিবেশন করলেন। বললেন, নিজেই উঠে আসতে হল জানাতে যে, করবী সেন একা আসেনি। তার সঙ্গে এসেছেন দুজন। দেখলেই বোঝা যায় মা আর ছেলে। মিসেস জয়ন্তী হালদার আর কিংশুক হালদার। ভদ্রমহিলা সম্ভবত বিপত্নীক ….
—ভদ্রমহিলা বিপত্নীক! মানে?
—‘চিকিৎসা-সঙ্কটের’ জিগীষাকে মনে আছে? স্বামীকে যিনি ‘সুষ-সুষ’ বলে শিস দিয়ে ডাকতেন? স্বামীর মৃত্যু হলে সেই জিগীষা দেবী কী হতেন? বিধবা না বিপত্নীক?
—বুঝলাম। আর তাঁর পুত্রটি কি ‘লালিমা পাল (পুং)?’
—আদৌ নয়। সে বোহিমিয়ান আর্টিস্ট : পল গোগাঁর আধুনিক সংস্করণ!
—ঠিক আছে। পাঠিয়ে দাও এ ঘরে।
একটু পরে এ ঘরে এলেন আগন্তুক তিনজন। বাসুসাহেবের নির্দেশে রানু স্থানত্যাগ করলেন না। একটা শর্টহ্যান্ড নোটবুক আর ডটপেন হাতে বসে রইলেন তাঁর হুইলচেয়ারে।
কিংশুক দীর্ঘদেহী বলিষ্ঠ যুবক। মাথার চুল দেখলে মনে হয় সে বুঝি আর্জেন্টিনা ফুটবল টিমের স্টপার। চাপ দাড়িটা অবশ্য সে হিসাবে বেমানান। হাতের নখগুলো বড় বড়, আর নোংরা। গায়ে একটা বুক-খোলা হাফশার্ট। লোমশ বুক এবং তাতে কালো সুতোয় বাঁধা কী-একটা টোটেম-জাতীয় কিছু দোদুল্যমান। পরিধানে তাপ্পিমারা সযত্বজীর্ণ জীনস-এর প্যান্ট। পায়ে অজন্তার মুগুর-মার্কা রবার চপ্পল।
পিছন পিছন ওর মা। তিনিও বাঙালি মহিলার পক্ষে রীতিমতো দীর্ঘাঙ্গী : পাঁচ ফুট ছয় তো হবেই। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। পাকানো চেহারা। কাঁচাপাকা ববকাট চুল, চোখে রোস্তগোল্ডের সৌখিন চশমা। মধুবনী-ছাপ একটি রঙিন শাড়ি তাঁর পরিধানে। হাতে চামড়ার হাত-ব্যাগ। ঠোঁটে কফি-কালার লিপস্টিক!
সবার পিছনে করবী। বয়েজকাট চুল, শার্ট-প্যান্ট সত্ত্বেও তার নারীত্ব গোপন করা যায়নি। শুধু দেহ গঠনের তরঙ্গিত ভঙ্গিমাতেই নয়, মুখের পেলবতায়। সে কিন্তু প্রসাধনের ধার-কাছ দিয়েও যায়নি।
বাসুর অনুরোধে ওঁরা তিনজনই দর্শনার্থীর চেয়ারগুলো দখল করে বসলেন। যুবকটি- বয়সে সে করবীর সমানই হবে হয়তো— আগবাড়িয়ে বললে : আমার নাম কিংশুক হালদার, ইনি আমার মম, মিসেস জয়ন্তী হালদার, আর এ আমার ‘ফিয়াসি’। মিস করবী সেন।
বাসু বললেন, বলুন?
মিসেস জয়ন্তী হালদার রানুর দিকে তর্জনী সঙ্কেত করে বললেন, উনি কে? এ ঘরে কেন?
—ও ঘরে দেখেননি? উনি আমার কনফিডেনশিয়াল সেক্রেটারি। উনি থাকবেন। নোট নেবেন, আমাকে সাহায্য করবেন।
জয়ন্তী বললেন, অ। তা বেশ। থাকুন। শুনুন! খুকুকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আপনার সঙ্গে অবিলম্বে সাক্ষাৎ করতে। ঐ ট্রাস্টের বিষয়েই আলোচনা হবে নিশ্চয়। তাই আমরা এসেছি, ব্যাপারটা কী তাই জানতে।
বাসু বললেন, অ। তা ঠিক কী জানতে চান আপনারা?
—সে তো আপনিই ভাল জানেন, বাসুসাহেব। খুকুকে কেন নির্দেশ দেওয়া হল আপনার সঙ্গে দেখা করতে?
—খুকু কে?
—ঐ তো আপনার সামনেই বসে আছে, করবী সেন, খুকু।
—কে তাকে নির্দেশটা দিয়েছে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে?
—কে আবার? ওর বাবার সেই বিচিত্র উইলের ট্রাস্টি, অনির্বাণ দত্ত।
বাসু কিংশুকের দিকে ফিরে বললেন, তাকে চেনেন?
জয়ন্তী ধমকে ওঠেন, খোকাকে আবার ‘আপনি’ কেন?
বাসু নির্বিকার ভাবে কিংশুককে পুনরায় প্রশ্ন করেন, তাকে চেন?
কিংশুক বিরক্তি দেখিয়ে বললে, চিনি। মানে দেখেছি দূর থেকে। আলাপ নেই। আলাপ করার ইচ্ছেও নেই। একটা প্রাচীনপন্থী গোঁড়া, অর্থগৃধ্ন! সামাজিক প্যারাসাইট! ইনভার্টিব্রেট জোঁক।
করবী বাসুর দিকে ফিরে বলে, বাপি ওকে খুব স্নেহ করতেন। খুব বিশ্বাসও করতেন।
জয়ন্তী যোগ দেন আলোচনায়, তাঁর সেই বোকামির ফল ভোগ করছ আজ তোমরা।
করবী নড়েচড়ে বসল। প্রতিবাদ করল না কিন্তু।
বাসু খামতে রাজি নন। করবীর কাছে জানতে চাইলেন, একথা বললে কেন?
করবী এবার রুখে ওঠে, কেন তা আপনি জানেন না? বাপি উইলে ওকে তাঁর সম্পত্তির ‘সোল ট্রাস্টি’ করে গেছিলেন। আপনার মক্কেল সেকথা বলেনি?
বাসু বললেন, হ্যাঁ, সেকথা শুনেছি। তবে উইলটা আমি স্বচক্ষে দেখিনি। তিনি কি তাঁর উইলে হেতুটা জানিয়ে যাননি? নাকি তুমিও মিসেস হালদারের মতো বিশ্বাস কর এটা তোমার বাপির নির্বুদ্ধিতা?
করবী সোজা হয়ে বসল। হাসল। বলল, আজ্ঞে না, তা মনে করি না। বাপি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। আমাকে ভালও বাসতেন খুব। আমাকে রক্ষা করার জনই এ-ব্যবস্থা করেছিলেন।
—রক্ষা করা! কার কাছ থেকে রক্ষা করা?
—য়ু সী, স্যার, বাপি যখন মারা যান তখন আমার বয়স মাত্র ষোল। ফলে আমার অপরিণত বুদ্ধির হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে তিনি ও ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন আমি নাবালিকা ছিলাম।
—সেক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন : তিনি ছর বছরের জন্য এ ব্যবস্থা করলেন কেন? আঠারো বছরে তুমি যখন সাবালিকা হলে…
প্রশ্নটা শেষ করার অবকাশ ওঁকে দিলেন না মিসেস হালদার। মাঝখানেই বলে ওঠেন, লুক হিয়ার ব্যারিস্টার সাহেব! আমাদের না-থাক, অন্তত আপনার সময়ের দাম আছে। এসব খেজুরে আলাপ বন্ধ করে আপনার কী বক্তব্য আছে সেটা সরাসরি জানিয়ে দিলেই আমরা বিদায় নিতে পারি। আপনি আমাদের কেন ডেকেছেন?
বাসু বললেন, আজ্ঞে না। আমি তো আপনাদের ডাকিনি। আপনারাই অযাচিত আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। কিছু বলার থাকলে আপনারাই তো বলবেন আমাকে।
মিসেস হালদার জবাবে বলেন, আপনার নির্দেশেই সেই অনির্বাণ ছোকরা খুকুকে আপনার কাছে আসতে বলে। অন্তত সে তাই বলেছিল টেলিফোনে। আপনি বলতে চান, অনির্বাণ মিছে কথা বলেছে?
বাসু করবীকে প্রশ্ন করেন, অনিবার্ণ তোমাকে বলেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতে?
—হ্যাঁ। কাল সন্ধ্যাবেলায়।
—ও বলেছিল, মিসেস হালদার আর মাস্টার হালদারকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে আসতে?
—না। তা বলেনি। সেটা আমার নিজের বুদ্ধি-বিবেচনায়।
বাসু আবার বাংলা স্বরবর্ণের প্রথম অক্ষরটা উচ্চারণ করলেন।
জয়ন্তী তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলেন, তার মানে, আমাদের সাক্ষাতে আপনি খুকুর সঙ্গে ঐ ট্রাস্টের ব্যাপারে কোন আলোচনা করতে চান না? সেটা সরাসরি বললেই হয়?
বাসু জবাব দিলেন না। পকেট থেকে পাউচ বার করে পাইপে নীরবে তামাক ভরতে থাকেন। মিসেস হালদার বোধকরি অপমানিত বোধ করেন। তড়াক করে উঠে দাঁড়ান। বলেন, চলে আয় খোকা!
কিংশুক কিন্তু রাজি হয় না। বলে, তুমি এগোও। আমরা দুজন অন্যদিকে যাব।
—অল রাইট! অ্যাজ য়ু প্লিজ!
গটগট করে প্রস্থান করলেন মিসেস হালদার।
কিংশুক নড়েচড়ে বসল। বললে, উড য়ু মাইন্ড, স্যার, ইফ আই স্মোক?
—পাইপ? সিগার? সিগারেট? না স্ম্যাক?
কিংশুক পকেট থেকে চারমিনারের প্যাকেটটা বার করে দেখালো।
বাসু বললেন, প্যাকেটটা চারমিনারের, কিন্তু স্টিকগুলোয় কী আছে? গাঁজার গন্ধ আমার সহ্য হয় না, বাপু! তাছাড়া আমি তো তোমাকে ডাকিনি। তুমি অনায়াসে বাইরে গিয়ে স্মোক করতে পার।
কিংশুক অগত্যা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া চারমিনারের প্যাকেটটা পুনরায় পকেটস্থ করল।
করবী হঠাৎ বলে ওঠে, পার্ডন মি স্যার, কিঙ-এর মায়ের সামনে আপনি আলোচনা করতে চাননি তার মানে বুঝি : কিন্তু কিঙ-এর সামনে আলোচনায় কোন বাধা নেই।
‘কিন্তু’ কে?
—কিংশুক হালদার। ও একজন ‘জিনিয়াস’! অর্থাভাবে ও শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না। আমাদের পরিকল্পনা ছিল বাপির ঐ ট্রাস্ট-ফান্ডটা হাতে এলে আমরা একটা আশ্রম গড়ে তুলব। সেখানে প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী-সাহিত্যিক-কবি-সঙ্গীতশিল্পী – যারা সমাজে ঠাঁই করতে পারছে না, তাদের আমরা বিকশিত হবার সুযোগ দেব। জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগান দেব – মাথার উপর ছাদ, আহার আর পানীয়। এটা ছিল আমাদের যৌথ পরিকল্পনা। আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। অনিদা আপনার মক্কেল। ফলে আলোচনাটা ট্রাস্ট সম্বন্ধে। মাসখানেক পরে অনিদা আমাকে ট্রাস্ট ফান্ডের ব্যালান্স যে দু-চার হাজার টাকা হবে…
কিংশুক বাধা দিয়ে বলে ওঠে, দু-চার হাজার নয়, খুকু! সাড়ে সতেরো হাজার টাকা। আমাদের ‘শিল্পীর-স্বর্গের’ পক্ষে অবশ্য তা অকিঞ্চিৎকর, কিন্তু ‘কল-আ-স্পেড-আ-স্পেড!
বাসু বলেন, আলোচনার আগে আমাকে একটা ফাউন্ডেশন গড়তে হবে। কিছু প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে। প্রথম প্রশ্ন : মিস্টার কিংশুক হালদার কী হিসাবে জিনিয়াস? সে চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, অভিনেতা, সাহিত্যিক না কবি?
করবী জবাব দেওয়ার সুযোগ পেল না। তার আগে কিংশুক প্রতিপ্রশ্ন করে ওঠে : কিছু মনে করবেন না স্যার, সে আলোচনার আগে আমাকেও একটা ফাউন্ডেশন গড়তে দিন। লেঅনার্দো- দ্য ভিঞ্চি একজন জিনিয়াস ছিলেন নিঃসন্দেহে। আপনার মতে কী হিসাবে? চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক, টাউন প্ল্যানার না যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কারে?
বাসু জবাব দিলেন না। করবীর দিকে ফিরে বললেন, তুমি তোমার পৈত্রিক সম্পত্তিটার অধিকার পেলে তোমার ঐ রাজ্যহীন ‘কিং লেঅনার্দোর’ কিংডম’ বানাতে তা বিনিয়োগ করতে চাও?
করবী বললে, দু-চার হাজার টাকায় তার ভিত্তিপ্রস্তরটাও স্থাপন করা যাবে না।
—কিন্তু কিং-এর হিসাবে তো অঙ্কটা সাড়ে সতেরো হাজার টাকা।
—সে হিসাব ভুল। অনিদা হিসাব দেয়নি। কিন্তু টেলিফোনে আমাকে প্রতিবার জানিয়েছে কবে কোন শেয়ার কিনেছে, কোন শেয়ার বেচেছে। এখন ওর হাতে আছে একগাদা চা-এর শেয়ার। ‘কুতুব টী’-এর শেয়ার। তার কোনও বাজার দরই নেই। অবশ্য দোষটা অনিদার নয়। বাবাই ওকে বলে গেছিলেন, ঐ শেয়ারগুলো শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে। অনিদা সেই ক্যাসাবিয়াংকার আধুনিক সংস্করণ : ‘দ্য বয় স্টুড অন দ্য বার্নিং ডেক। রাশিয়া ভারতীয় চা কেনা বন্ধ করে দিল, যাবতীয় চায়ের শেয়ারের দর হু-হু করে পড়তে শুরু করল। তবু অনিদা বেচল না। আমার হিসাবে আগামী মাসে আমার হাতে আসবে দেড় থেকে দু-হাজার টাকা।
—আই সি! তুমি অনির্বাণের কাছ থেকে মাসে মাসে হাত খরচ বাবদ কী পরিমাণ অর্থ নিয়েছ, রাফলি স্পিকিং?
—ঐ দেড় থেকে দু-হাজারই!
—তাহলে জুলাই মাস থেকে তুমি কী করবে? আই মীন, গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা?
—মাস-চারেক হল আমি টাইপিং শিখছি। টাইপিস্টের চাকরি করব।
—তুমি গ্র্যাজুয়েশনটাও করনি। আশা করছ, আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট হিসাবে চাকরি পাবে?
—তাই করছি স্যার। একজন আমাকে কথা দিয়ে রেখেছেন।
—তিনি কে, নামটা জানতে পারি?
—আপত্তি কী? তাঁর নাম শ্রীকালিপদ কুণ্ডু। বাপির ফার্মের এক্স-এমপ্লয়ি। দিন পনেরো আগে তিনি আমার সঙ্গে এসে দেখা করেছিলেন। একটা ফেবার চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি যদি সেটা ওঁকে দিই, তাহলে উনিও আমাকে একটা চাকরি দেবেন। কেরানির। আই মীন টাইপিস্ট-কাম-ক্লার্কের।
—কী ফেবার চেয়েছিলেন কালিপদ কুণ্ডু?
—মাফ করবেন। সেটা বলতে পারব না। মিস্টার কুণ্ডুই আমাকে অনুরোধ করে গিয়েছিলেন সেটা গোপন রাখতে।
—বুঝলাম। কী করেন ঐ কালিপদ কুণ্ডু? তোমাকে একটি কেরানির চাকরি দেবার ক্ষমতা তাঁর আছে?
এবারও আমাকে মাফ করতে হবে। ও বিষয়েও আমি কোন আলোচনা করব না। মানে, করতে পারি না।
এবার বাসু বললেন, আই সী!
আধ মিনিটটাক কেউ কথা বলল না। তারপর করবী আবার শুরু করে, অনিদা আমাকে কাল বলেছিল আপনার সঙ্গে দেখা করতে। এটা ফ্যাক্ট! আপনিও অস্বীকার করেননি যে, আপনি তাকে অমন নির্দেশ দেননি। তাহলে…
এবারও বাসু কোন কথা বললেন না।
কিংশুক উশখুশ করছিল। তার বোধকরি নেশার তাগাদা। করবী আবার বলে, দেড়-দু’হাজার থাক আর সাড়ে সতেরো হাজারই থাক, যা আছে তা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে রসিদ নেবে— এই তো ব্যাপার। আমি কোনদিন হিসাব চাইনি, চাইবও না। তাহলে অনিদা কেন আপনার মতো একজন প্রখ্যাত ব্যারিস্টারের দ্বারস্থ হয়েছে এটাই আমার মাথায় ঢুকছে না।
বাসু বললেন, লুক হিয়ার করবী। অনির্বাণ দত্ত আমার ক্লায়েন্ট। তার স্বার্থটাই আমাকে প্রথমে দেখতে হবে। হ্যাঁ, সে আমার নির্দেশেই তোমাকে এখানে আসতে বলেছিল। কিন্তু আমি তোমার সঙ্গেই শুধু ও বিষয়ে আলোচনা করতে পারি। কোন ‘কিং’ বা কিং-মাদারের উপস্থিতিতে নয়। যখন তোমার সুবিধা হবে, এস। আলোচনা করব।
কিংশুক দাঁড়িয়ে ওঠে। বলে, কী দরকার? আমি বরং বাইরে গিয়ে দাঁড়াই!
—না! এখন হবে না। কারণ আমি করবীর সঙ্গে জনান্তিকে আলাপ করতে চাই। এ কথা বলিনি।
—তাই তো প্রকারান্তরে বললেন আপনি।
—না। তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ।
কিংশুক রুখে ওঠে।
বাসুসাহেব করবীর দিকে ফিরে বলেন, আলোচনাটা ত্রিমুখী হতে হবে। যখন তোমার আর অনির্বাণের দুজনেরই সময় হবে সেসময় আমার সময় হলে সেই ত্রহস্পর্শযোগেই তা সম্ভব। আজ সেই ট্রাস্টি অনুপস্থিত।