আট
মুসা আর রাফি আলগোছে ঢুকে পড়ল খালি এক ঘোড়ার স্টলে। প্রকাণ্ড এক খড়ের গাদার উপর বসল ওরা।
একটু পরে রাফি লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। ডাক ছাড়ল। ক্ষণে-ক্ষণে শরীর মোচড়াচ্ছে।
‘খাইছে, খড়ে আমাকেও সুড়সুড়ি দিচ্ছে,’ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল মুসা।
‘তোমরা থামবে?’ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। ‘ওরা যে কোন মুহূর্তে চলে আসবে।’
মুসা হাত বাড়িয়ে রাফিকে আবার টেনে বসাল। মুহূর্ত পরে, ওরা শুনতে পেল বার্নের দরজা ককিয়ে উঠে খুলে আবার লেগে গেল।
‘মনে হয় র্যাম,’ ফিসফিস করে স্বগতোক্তি করল মুসা।
স্টলের পাশ দিয়ে কার যেন পায়ের শব্দ চলে গেল। এক মুহূর্ত পরে, বার্নের দরজা ক্যাঁচকোঁচ শব্দে খুলে গেল আবার। রাফি স্টলের কিনারার উপর দিয়ে ধীরে-ধীরে উঁকি মারল।
দেখতে পেল নেকড়েমানুষ শ্লথ পায়ে হেঁটে ঢুকছে বার্নের ভিতরে। মুসা হাত বাড়িয়ে রাফিকে টেনে বসাল আবারও। এবার রাফি মুখ থুবড়ে পড়ল ছোট এক খড়ের স্তূপের উপর।
নেকড়েমানুষের ভারী থাবা বার্নের মেঝের খড় ভেদ করে এগিয়ে চলেছে। মুসা রাফিকে কিছু বলার জন্য ঘুরল। লক্ষ করল রাফির নাক কাঁপছে।
‘দোহাই লাগে, রাফি,’ মিনতি করে বলল মুসা। ‘এখন হাঁচি দিস না।’
নেকড়েমানুষ থেমে দাঁড়াল বার্নের মাঝখানে। উল্টো ঘুরল। ভাবখানা এমন যেন কিছু শুনতে পেয়েছে। কিশোর আর র্যাম নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল। র্যাম ল্যাসোটা ছোঁড়ার জন্য তৈরি হলো।
‘হ্যাঁ-চ্চো!’ হাঁচি দিল রাফি।
র্যামের হাত থেকে ল্যাসো খসে পড়ল। চরকির মতন ঘুরে দাঁড়াল নেকড়েমানুষ। ঘোড়াগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। তীক্ষ্ণ হ্রেষাধ্বনি করে লাফাতে লাগল স্টলের ভিতরে।
‘ধরো ওকে,’ চেঁচাল র্যাম। ‘পালাতে দিয়ো না!’ নেকড়েমানুষ দৌড় লাগাল বার্নের দরজা লক্ষ্য করে। ছোটার ফাঁকে সব কটা ঘোড়ার স্টল খুলে দিল। কিশোর আর র্যাম ধাওয়া করল নেকড়েমানুষকে। র্যাম এতটাই জোরে ছুটেছে, মাথা থেকে হ্যাট উড়ে গেল। ওটা সোজা গিয়ে মুসার মাথায় পড়ল।
হ্যাটে ঢাকা পড়েছে মুসার চোখ। দৌড়াচ্ছে, ধাক্কা খেল এক ঘোড়ার গায়ে। স্যাডলে আটকে গেল কবজি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘোড়ার পিঠে এক ঝটকায় সওয়ার হলো মুসা। বেরিয়ে গেল বার্ন ছেড়ে।
‘খাইছে!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
রাফি তারস্বরে ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল। নেকড়েমানুষকে পাকড়াও করতে তাগিদ দিল।
নেকড়েমানুষ তাড়াতাড়ি করাল পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে ছুটল। ঘোড়াটা নেকড়েমানুষকে অনুসরণ করছে, স্যাডলে ওপরে-নীচে ঝাঁকুনি খেতে লাগল মুসা। নেকড়েমানুষ ডানদিকে তীক্ষ্ণ বাঁক নিল। ঘোড়াটাও ডানে ঘুরল। নেকড়েমানুষ বাঙ্কহাউসের দিকে ছুটছে! ঘোড়াটা তাকে অনুসরণ করে ছুটল। নেকড়েমানুষ বাঁয়ে মোড় নিল। ঘোড়াটাও বাঁয়ে মোড় নিল। নেকড়েমানুষ সোজা বনভূমির উদ্দেশে ছুটল। ঘোড়াটাও তা-ই করল। ঘোড়াটা আচমকা থেমে পড়ল, কিন্তু মুসা থামল না।
‘খাইছে! বাঁচাও!’ চিৎকার ছাড়ল ও। বাতাস কেটে উড়ে গিয়ে সোজা নেকড়েমানুষের ঘাড়ে পড়ল!