এক
‘খাইছে!’ ভ্যানের পিছন দিক থেকে চেঁচিয়ে উঠল মুসা। হঠাৎই বিশাল এক ল্যাসো সামনে উড়ে এসে বেঁধে ফেলল জিনাকে। যে বইটা পড়ছিল সেটা পড়ে গেল ওর হাত থেকে।
‘অ্যাই, সাবধান!’ কিশোর চেঁচিয়ে বলল। ‘জিনাকে ল্যাসোতে আটকে ফেলেছে!’
মুসা আর রাফি ভ্যানের সামনের দিকে চলে এল। মুসার মাথায় কাউবয় হ্যাট।
‘সরি, জিনা,’ বলল মুসা।
ঘেউ-ঘেউ করে দুঃখ প্রকাশ করল রাফি।
জিনা রশিটা মাথার উপরে তুলল।
‘তোমরা এটা নিয়ে কী করছ?’
রানশের জন্যে রেডি হচ্ছি,’ জবাব দিল মুসা।
কিশোর কাঠের এক গেট ভেদ করে ভ্যানটা চালিয়ে ঢুকে পড়ল। ‘অ্যাই, দেখো সবাই,’ বলে উঠল রবিন। গেটের ঠিক ভিতরেই প্রকাণ্ড এক নেকড়ের মূর্তি। সেদিকে তর্জনী নির্দেশ করল। চোখে হিংস্র দৃষ্টি মূর্তিটার, বড়-বড় ধারাল দাঁত।
‘লোন উলফ রানশের নাম এখান থেকেই এসেছে,’ গাইডবুক পড়ে জানাল জিনা। ‘একশো বছর আগে যখন রানশটা তৈরি হয় তখন এই এলাকায় নেকড়ে গিজগিজ করত।’
‘ছোটবেলায় যখন এখানে এসেছিলাম তখন একটা গল্প শুনেছিলাম,’বলল কিশোর। ‘ক্যাম্পফায়ার ঘিরে বসে ওটা বলা হত। একশো বছর আগে এক জোসনা রাতে নাকি বিশাল এক নেকড়ে এখানে উদয় হয় এবং অন্যান্য সব নেকড়েকে তাড়িয়ে দেয়। তাই মালিকরা মস্ত বড় নেকড়েটার একটা মূর্তি বসায়, যাতে ওটা তাদেরকে সব সময়ের জন্যে নিরাপত্তা দেয়।’
‘কারও-কারও ধারণা বিরাট সেই নেকড়েটা আসলে একটা নেকড়েমানব ছিল,’ যোগ করল জিনা। ‘এবং ওটার আত্মা মূর্তিটার ভিতরে এখনও বন্দি হয়ে আছে, যাতে রানশটাকে রক্ষা করতে পারে।
‘খাইছে, কেমন ভুতুড়ে-ভুতুড়ে শোনাচ্ছে,’ বলল মুসা।
‘এখানে ভয়ের কিছু নেই,’ বলল কিশোর। ‘বিশ্বাস করো।’
‘তা হলে ওটা কী?’ বলে জানালা দিয়ে আঙুল তাক করল রবিন। ভ্যানটা ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে থামাল কিশোর। ভয়ঙ্কর দর্শন এক লোক বেরিয়ে এল গাড়ির ঠিক সামনে। কুঞ্চিত মুখের চেহারা তার, এলোমেলো চুল কাঁটার মত খাড়া হয়ে আছে সব দিকে। হাতে পেল্লায় এক হাতুড়ি।
‘খাইছে!’ সভয়ে বলে উঠল মুসা। সিটের নীচে এক লাফে সেঁধিয়ে পড়ল রাফি। মুসা মাথা নোয়াল।
লোকটা জ্বলন্ত ধূসর চোখে চেয়ে রইল উইণ্ডশীল্ড ভেদ করে।
‘আজকে পূর্ণিমা,’ সাবধান করল লোকটা। ‘এখুনি চলে যাও, যদি নেকড়েমানবের পেটে যেতে না চাও।’ রাস্তা ধরে ধীর পায়ে ফিরে চলল। মুহূর্তের জন্যও চোখ ফেরাল না ছেলে-মেয়েদের উপর থেকে। এবার ঝট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে এক দৌড়ে ঢুকে পড়ল বনভূমির ভিতরে।
‘লোকটা কে?’ বলল জিনা।
‘চিনলাম না,’ জানাল গোয়েন্দাপ্রধান।
‘চ-চলে গেছে?’ মাথা নামিয়ে রেখেই প্রশ্ন করল মুসা।
‘হ্যাঁ, এবার তাকাতে পারো,’ বলল নথি।
‘ভ্যান ঘুরিয়ে চলে গেলে হয় না?’ জিজ্ঞেস করল মুসা। ‘হঠাৎই মনে পড়ল আমার আর রাফির এক জায়গায় যাওয়া খুব জরুরি দরকার।’
‘কোথায়?’ রবিনের প্রশ্ন।
‘এমন যে কোন জায়গায় যেখানে নেকড়েমানব নেই,’ জবাব দিল মুসা।
কিশোর আবার ভ্যান চালু করল।
‘পাগল লোকটাকে নিয়ে তোমার মাথা না ঘামালেও চলবে,’ বলল।
‘ঠিক আছে, তুমি যখন বলছ,’ বলল মুসা।
‘আমরা এখন চলে গেলে,’ বলল নথি, ‘তোমরা বড় বার্বিকিউটা মিস করবে।’
‘সে সঙ্গে ক্যাম্পফায়ার,’ যোগ করল জিনা, ‘ওখানে মার্শম্যালো রোস্ট করতে পারবে।’
খুশিতে লেজ নাড়ল রাফি।
পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল মুসা আর রাফি। গায়ে গা ঘেঁষে বসে ফিসফিসিয়ে কী সব কথা-বার্তা বলল।
‘রাফি আর আমি ঠিক করেছি থাকব,’ বলল মুসা।
‘মত পাল্টানোর কারণ?’ জিনার প্রশ্ন।
‘নেকড়েমানব,’ বলল মুসা।
কিশোর, রবিন আর জিনা তিনজনকেই বিভ্রান্ত দেখাল।
‘খাইছে, ও যদি সত্যি-সত্যি আজ রাতে একশো বছর পর ফিরে আসে,’ ব্যাখ্যা করল মুসা, ‘তা হলে ভয়ানক ক্ষুধার্ত থাকবে। অত-অত খাবার গিলতেই ব্যস্ত থাকবে, ফলে আমাদের খাওয়ার সময় পাবে না!’
সবাই হেসে উঠল। কিশোর ভ্যানটাকে চালিয়ে নিয়ে এল রানশের পার্কিং এরিয়ায়।