নীল ঘরের নটী – ৭

।। সাত ।।

দুর্গামোহন বলেছিল, ‘আমার অনেক দেনা আছে রে নয়ন’—কিন্তু দেশে ফিরে নয়ন দেখেছিল পুঁজিও তার বড়ো কম নেই। তার মানে, সে ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়েছিল পাওনাদারদের হাত থেকে। নয়ন ভেবেছিল—বাবু তার জন্যই বুঝি দেশে চলে এল। কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধায় পূর্ণ হয়েছিল তার মন। পরে আস্তে আস্তে সে ভুল ভেঙেছিল। কয়েক মাসের নীরবতার পর দুর্গামোহন আবার তার স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

ইতিমধ্যে নতুন একটা দালানবাড়ি বানিয়েছিল সে। সেই বাড়িতে নিয়মিত গানবাজনার আসর শুরু হয়েছিল। নয়ন ভেবেছিল—’গানের নেশা যার হাড়ে হাড়ে, সে গান ছেড়ে বাঁচবে কী করে? এবং ততদিনে নয়নেরও যেন মনে হচ্ছিল—ওই একটি পরিচয়চিহ্ন ছাড়া জীবনে তার নিজেরও বাঁচার ব্যাপারটা অর্থহীন হয়ে ওঠে। আসলে সব মানুষের জন্যে হয়তো একটি করে ছাড়পত্র দেওয়া হয় এমনি করে। মোহিনী বাঈজীর নাম লেখা পুরনো হারমোনিয়ামটা কয়েকটি সুরঝংকারেই নয়নের ভেতর দিকের সেই নটী মেয়েটিকে জাগিয়ে তুলল। তখন নয়ন কী করে! রোমাঞ্চিত দেহে আবেগবিহ্বল মনে সে দ্রুত পায়ে নূপুর বেঁধেছিল। বলেছিল—’ও বাবু, একজন আচ্ছা তবলচি চাই যে আমার।’

চতুর দুর্গামোহন হেসে উঠেছিল তার কাণ্ড দেখে। ‘বেটি নয়ন, এ যে বাংলাদেশ—লোকে দোষ দেবে!’

নয়ন তীব্র কটাক্ষ হেনে বলেছিল—’দিক দোষ। আমার খুশি—নাচব, গাইব…।’

‘মা নয়নমণি, তোর বিয়ে দেব ভেবেছিলাম—শ্বশুরপক্ষ শুনলে যে চটে যাবে! বলবে বাঈজী মেয়ে।’

‘বাজে কথা রাখো, আমার তবলচি চাই—ই।’

‘নয়নতারা, নাচ—গান তো ঘরের জন্যে নয়—এ পরের জন্যে, বাইরের দুনিয়ার জন্যে! কী দাম পাবি ঘরের মধ্যে লুকিয়ে নেচে—যদি না সমঝদার দেখনেওয়ালা কেউ না থাকে?’

নয়ন সত্যিসত্যি বিষণ্ণ হয়ে উঠেছিল। তাই তো! সমঝদার চাই, দেখনেওয়ালা চাই—বখশিশ না দিক, তালের সম—ফাঁকের মাথায় ‘কেয়াবাৎ’ ‘বহুত আচ্ছা’ ‘মারহাবা’ ধ্বনি উচ্চারিত না হলে দেহকে দেহের অধিক মনে হয় না তো! মনে হয় না জন্মকাল থেকে পাষাণ খণ্ডের মতো যে বোঝা বহন করছি—যার ক্ষুধা আছে তৃষ্ণা আছে—আছে আধিব্যাধির দায়—তার থেকে আমি মুক্ত। এবং নাচের গভীরতম স্তরে পৌঁছে নয়ন যে জ্যোতি যে অপার্থিব অলৌকিক বহ্নিদ্যুতিকে অনুভব করে—তার মধ্যে লীন হয়ে যায় তার সত্তা, তাকে মেলে না তো। সে বিহ্বলভাবে বলেছিল—’বাবু, তা হলে কী হবে!’

কী হবে; তা ঠিক করাই ছিল। দুর্গামোহনের জাদুর কারচুপি আজকের মতো তখন টের পায়নি নয়ন। দুর্গামোহন সব আয়োজন গোপনে সম্পূর্ণ করে শুধু নয়নতারার মনের গতিটা একটু ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল ওই দিকে। তাই সে নিপুণ সাপুড়ের মতো বাঁশি বাজাচ্ছিল যেন। তার মতো করে নয়নকে আর কে চেনে।

ছোট্ট একটা শহর মল্লারপুর। যাকে বলা যায় গ্রামনগরী। আসলে পুরানোকালের একটা গ্রামীণ বাজার বা হাটতলার পাশ দিয়ে রেলপথ গড়ে উঠলে যা হয়। দিনে দিনে সেখানে কিছু ছোটো কলকারখানাও গড়ে উঠেছিল। এবং এ সব গ্রামনগরীর যা আবহাওয়া, তাতে আলোয়—আঁধারে মেশা পাপ—পুণ্য ধর্মাধর্ম পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাস করা সহজ ও শোভন একান্তভাবে। কোনটা পাপ কোনটা পুণ্য—মাঝে মাঝে তাও স্বভাবত বাছাই করা মুশকিল এইসব আবহাওয়ায়। ভালোকে মনে হয় মন্দ, মন্দকে ভালো—তাই সবকিছুই দ্বিধাহীন নির্বিকার গতিতে চলে। দুর্গামোহন তার জীবনের নতুন জয়যাত্রা এমনি জায়গা থেকে শুরু করল অবশেষে। নয়ন জানে—সে নটী হয়েই জন্মেছে সংসারে, এ পরিচয় ছাড়া তার অস্তিত্ব মূল্যহীন। দুর্গামোহন জানে সে জুয়াড়ি হয়ে জন্মেছে—জীবন নিয়ে জুয়া খেলা তার কাজ। সে জীবন নিজের হোক বা অন্যের—তার কাছে সবই সমান।

আস্তে আস্তে নতুন রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করছিল পুরানো খেলার মঞ্চ। পাশার ছকের ওপর ছড়িয়ে পড়ছিল প্রতীকচিহ্নখচিত হাড়ের গুটি। ঘুঙুর বাজছিল ঝুম ঝুম ঝুম ঝুম। মাতাল জুয়াড়িদের হা হা হা হা হাসি। লালসার উদ্দাম আগুন ছড়াচ্ছিল বারবার। আঁচ লাগছিল শরীরে। ‘বাবু, অন্য কোথাও চলো, আর ভালো লাগে না এ সব।’

‘কেন রে নয়ন, কী হল তোর?’

‘বাবু, এরা সেই লখনৌর লোক—সেই হারামি শরাবি কুত্তারা…’ রাতের শেষ যামে সেই কুত্তারা সর্বস্ব হারিয়ে যখন বুক চাপড়াত—অভিশাপ দিত, শিউরে উঠত নয়ন। লখনৌতে এই ব্যাপারটা দেখেনি সে। কারণ, দুর্গামোহন তখন জুয়া খেলত কিছুটা অভ্যাসে—কিছুটা কিছুটা প্রয়োজনে। তখন তার জীবনধারণের জন্যে জুয়া ছিল একান্ত পথ। আজ সে যথার্থ পেশাদার জুয়াড়ি হয়ে উঠেছে। ছল চাতুরীতে সে হয়ে উঠেছে পাকা ওস্তাদ। কবে কোথায় কোন ম্যাজিক—ওলার কাছে যে ম্যাজিকের খেলাগুলি সে শিখে নিয়েছিল—এতদিনে প্রয়োগ করছে নিপুণভাবে।

নয়নের ভালো না লাগার জন্য নয়—নিজের স্বার্থেই ফের স্থান ত্যাগ করল দুর্গামোহন। বাড়ির জিম্মাদার রাখল দূরসম্পর্কের এক পিসিকে। দারোয়ানও রেখে এল একজন।

এবার কলকাতা।

আসর জমে উঠতে দেরি হয়নি। যৌবনের নটী নয়নকে দেখে বহ্নিমুগ্ধ পতঙ্গের অভাব এখানে হল না।

একদিন নয়নের মা মোহিনীকে বলেছিল দুর্গামোহন—’মানুষ ভালোবাসার ব্যাপারে একটা অজুহাত খোঁজে।’ এই ভালোবাসা কথাটার মানে শুধু পুরুষমানুষ আর মেয়েমানুষের সম্পর্কেই সীমিত নয়—এর একটা গভীর দিক রয়েছে। যা আমি ভালোবাসি, যা আমার কাছে শ্রেয় ও প্রেয়—তার জন্যে সত্যিসত্যি একটা অজুহাত—একটা উপলক্ষ্যের সিঁড়িতে পা রাখতেই হয় সংসারে। কে সহজ করে স্পষ্ট করে মুখোমুখি বলতে পারে নিজের শ্রেয় ও প্রেয়কে—’আমি চাই।’ চাইতে জানাও কি কম কঠিন চাওয়ার চেয়ে। তাই যত ছল, যত চাতুরী—যত সেতু খোঁজবার পালা অজানা অন্ধকারে।

বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছিল—এক…দুই…তিন…চার…পাঁচ। কত বিমুগ্ধ মানুষ ওই সহজ কথা বলার জন্যে জুয়োর জটিল মায়াসেতু অতিক্রম করতে চাচ্ছিল। কেউ কেউ পেরিয়েছিল সেতুটা, তবু পায়নি। কেউ মধ্যপথে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আবার কোনো ভিতু প্রেমিক সেতুপথের ভয়ংকর জটিল অন্ধকারকে দেখে নিঃশব্দে সরে গিয়েছিল। তারা সকলেই বুক চাপড়ে অশ্রুপাত করেছে। উন্মাদ হয়ে গেছে কেউ। পথে পথে ঘুরেছে সারাজীবন উলঙ্গ শরীরে—বিড়বিড় করে কী সব বলেছে, হেসেছে—কেঁদেছে।

কান পেতে শুনলে হয়তো শোনা যেত তারা উচ্চারণ করছে নটী নয়নতারার নাম। অথচ মানুষ তাদের দেখে আঙুল তুলে বলেছে—’ওই সেই জুয়াড়িটা না? খুব পয়সাওলা লোক ছিল ওটা—কিন্তু জুয়ো খেলে আজ সর্বস্বান্ত!’ ঘৃণায় থু থু ফেলেছে সকলে।

কেউ কি জানত ওরা এক নটীকে শরীরী পেতে গিয়ে একটা অবলম্বনে পা রেখেছিল আর ওস্তাদ দুর্গামোহন তার মায়াদণ্ডের সঞ্চালনে তাদের হঠাৎ আঘাত হেনে বসেছে, সরিয়ে নিয়েছে পাটাতনটা? একপ্রান্তে নয়নতারা—উর্বশীর মায়াবিভ্রম। অন্যপাশে নরকের গভীর গহ্বর। মধ্যখানে পাশার ছকের সেতু বানিয়ে উপবিষ্ট প্রহরীর ন্যায় ওস্তাদ জুয়াড়ি জাদুওলা দুর্গামোহন। সে নিরন্তর তার স্বভাবসুলভ ঘোর নিঃশব্দ অট্টহাসি হেসেছে। বলেছে—’আসুন আসুন দেখে যান নিয়ে যান…আপনার আঁখো কা তারা…আপনার জিন্দেগির রোশনি…’

এক…দুই…তিন…চার…পাঁচ…গাছের পাতা থেকে শিশিরবিন্দু ঝরে পড়ার মতো ঝরে গেল বছরগুলি।

পাঁচ বছর পরে একদিন মধু বোসের গলিতে বেপথু কণ্ঠে গান গাইতে গাইতে এল রতন মাস্টার। প্রথম আলাপেই আসর মাত। দুর্গামোহন তীক্ষ্নদৃষ্টে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর প্রশ্ন করেছিল—’সেদিন গ্রেট এশিয়ান সার্কাসে আপনার খেলা দেখেছিলাম যেন…?’

রতন মাস্টার ঘাড় নেড়েছিল। নয়ন অবাক। স্বপ্ন না সত্য! মাঝে মাঝে কোনোদিন দুর্গামোহন তাকে বাইরে নিয়ে যেত সিনেমা বা কোনো গানের জলসায়—কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে। উদ্দেশ্য আর কিছু নয়—খেলোয়াড়ি খুঁজে নিয়ে আসা। নয়ন সঙ্গে থাকলে বরং ‘নয়া কাপ্তান’রা একপকেট মেজাজ নিয়ে আড্ডায় হাজির হয় পিছু পিছু। গাড়ি রেখে আসে সদরপথের মোড়ে কোনোখানে। বিলিতি মদের বোতল পকেটে পুরে শিস দিতে দিতে নয়নকে আড়চোখে দ্যাখে। খানিক পরেই মায়ার খেলা শুরু। বসন্তবাহার রাগের ঝংকার তাল দিয়ে নয়নের পায়ের ঘুঙুর আর জুয়োর হাড়ের ঘুটি বাজতে থাকে ফরাসের ওপর। পাক্কা খলিফাকে ক্লান্ত করে তোলে দ্রুতসঞ্চালিত দুটি উদ্দাম চরণপাত। দুর্গামোহন বলে—’নয়ন, ওরে নয়ন—ব্যস, ব্যস, বহুত আচ্ছা বেটি। একবার এদিকে আয়…সব যে উপোসি ঠোঁটে হাঁ করে ধুঁকে মরছে…’

রতন মাস্টার ময়দানে সেদিনে খেলা দেখাচ্ছিল। নয়ন মুগ্ধ চোখে চেয়ে—চেয়ে দেখছিল। উঁচু লোহার শিকে ঘেরা গোলাকার মঞ্চ থেকে সে যখন একটা প্রকাণ্ড সিংহকে টেনে খোলা জায়গায় নিয়ে এল—নয়ন ভয়ে চোখ বুজেছিল। উঃ মাগো! ও কি মানুষ না দেবতা? বুনো জানোয়ারের গলার শিকল ধরে দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বল লাল আঁটো পোশাকে তেমনি ধবধবে সুশ্রী মুখখানি। সূক্ষ্ম গোঁফের রেখা তাকে বীরের অধিক মহিমা দিয়েছে। ভয়াল রাক্ষুসে জন্তুটা সোনালি কেশর ঝাঁকুনি দিয়ে গর্জন করছে, আর সে পিঠে হাত বুলিয়ে মৃদু মৃদু হাসছে। সত্যি বলতে কী, একেবারে কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে যেন নয়নের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকল। সিংহটাও স্থিরভাবে নয়নকে লক্ষ্য করে নিঃশব্দ হল কয়েক মুহূর্ত। ভয়ে ভয়ে দুর্গামোহনের দিকে পাশ ফিরতেই নয়ন দেখল—বাবুও তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে।

নয়ন থতোমতো খেয়ে বলে উঠেছিল—’খুব ভালো খেলা বাবু।’

ফিসফিস করে বলেছিল দুর্গামোহন ‘খেলোয়াড়টা আরও ভালো, না রে নয়ন?’

লজ্জা পায়নি নয়ন। এমন করে কত কথাই না তাকে বলে দুর্গামোহন। এ তো তুচ্ছ—একটা কথার কথা মাত্র। সে একটু হেসে বলেছিল—’ডেকে নাও না তোমার দলে, জমবে ভালো।’

‘আমার দলে বাঘ—সিঙ্গি তো নেই…যত কুত্তা’…নিঃশব্দে দারুণ হেসেছিল দুর্গামোহন। ‘বাঘ—সিঙ্গির চেয়ে কুত্তা সামলানো বড়ো কঠিন।’

নয়ন আর কথা বলেনি। সে এবার দেখছিল—বিকট মুখব্যাদান করেছে সিংহটা আর রতন মাস্টার তার মুখে নিজের মাথাটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। অস্ফুট আর্তনাদ করে দুর্গামোহনের হাতটা আঁকড়ে ধরেছিল সে।

এক সময় রতন মাস্টার নিরাপদে সিংহের মুখ থেকে মাথাটা বের করে নিয়েছিল। ব্যান্ডের বাজনা বাজছিল উদ্দাম আনন্দের কলরোলে। হাততালির শব্দ হচ্ছিল চারপাশে। নয়ন অস্ফুটকণ্ঠে বলেছিল—’আহা।’

আসলে একটা দারুণ মমতায় সে কাতর ততক্ষণে। রতন মাস্টার বেঁচে গেছে যেন—এটুকুই তার বড়ো সুখ। তবু কাঁটার মতো মনের কোথায় একটু ব্যথাবোধ—’অতো সুন্দর তুমি, কেন জানোয়ারের মুখে নিজেকে সঁপে দাও বলো তো?’ তার মনে হচ্ছিল—ওই ওস্তাদ খেলোয়াড়ের বাঁচাটা যেন বড়ো সংশয়ের আলো—আধারিতে আচ্ছন্ন। ঠিক তার নিজের মতো। জুয়াড়ি এক রাজাধিরাজের রাজসভায় উর্বশী নটীর যে জীবন—যেন সিংহের মুখবিবরে অর্ধপ্রবিষ্ট হয়ে থাকা। মাঝে মাঝে বেরিয়ে এসে দ্যাখে—’বেঁচে আছি তা হলে!’ এবং এই বেঁচে আছি’র জগৎ থেকে সে প্রত্যক্ষ করে বাইরের পৃথিবীতে কোথাও সেই পুরানো দিনের স্মৃতি—লখনৌর পথে দেখা শোভাযাত্রা মাঝখানে সাদির নওশা আর দুলহানের জন্যে সানাইটা নিরন্তর বেজে চলেছে—বিভাস থেকে পূরবী—পূরবী থেকে ভৈরোঁ। বলছে—’জাগো মোহন প্যারে…’

দুর্গামোহন হাঁ করে তাঁবুটা দেখছিল শুধু। কোনো খেলাই যেন তার চোখে পড়ছিল না। সে কিছু ভাবছিল তাঁবুর ছাদের দিকে তাকিয়ে। কেবল যাবার সময় নিজের মনে একবার মন্তব্য করেছিল—’জব্বর ওস্তাদ ঔর বঢ়িয়া খেল!’

তাই সেদিন সেই রতন মাস্টারকে নিজের আখড়ায় দেখে দুর্গামোহন যেমন বিস্মিত—তেমনি নয়ন। নয়ন আনন্দে আবেগে উচ্ছ্বসিত হয়ে হাত তুলে নমস্কার করে ফেলল।

রতন বলল—’যাকে একবার দেখি, জীবনে আর ভুলি না। সেদিন আমিও আপনাকে দেখেছিলাম।’

নয়ন ঘাড় নেড়ে হাসল। তার দেহ—মন ধন্য হওয়ার সুখে আপ্লুত ততক্ষণে।

দুর্গামোহন বলল—’শিকারি বেড়ালের গোঁফ দেখলে চেনা যায়। আমি জানতাম, আপনি আসবেন।’

নয়ন বলল—’ইস অন্তর্যামী কি না!’

দুর্গামোহন জবাব দিল—’আলবাৎ।’

নয়ন ব্যঙ্গে কটাক্ষ হানল—’তা তো ঠিকই। জন্তু—জানোয়ার নিয়ে যারা ঘর করে, তারা গন্ধ শুঁকে কোথায় জন্তু আছে তা টের পায়।’

ব্যঙ্গটা গায়ে মাখল না দুর্গামোহন। হয়তো সে নয়নের প্রগলভতা দেখে বিস্মিত হয়েছিল। কিন্তু প্রকাশ করছিল না সে—বিস্ময় বা বিরক্তি। বরং অশ্লীল ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে বলল—’আমি কিন্তু অন্যরকম ভাবছি। বাঘ গন্ধ শুঁকে শুঁকে বাঘিনীর ডেরায় হাজির একেবারে’—বলেই সেই বিকট অদ্ভুত মার্কামারা হাসি।

নয়ন মুখ ফিরিয়ে বসে থাকল চুপচাপ। এবার তার অস্বস্তি হচ্ছিল। কীভাবে রতন মাস্টারকে অভ্যর্থনা করবে ভেবে পাচ্ছিল না যেন। দুর্গামোহন হারমোনিয়ামটা টেনে নিয়ে হঠাৎ তান দিল ভৈরবীতে। সুরের জাদু জড়িয়ে পড়ল ধীর মৃদু সুদূরগামী…বহুত দিন হুয়ে…

তেরে ইন্তেজারসে…

এ জিন্দেগি নহি গুজরতি…

ঘুরে ঘুরে প্রথম কলিতে সঞ্চালিত হচ্ছিল কণ্ঠস্বর। জীবন কাটে না—যে না এলে জীবনও চলতে ভুলে যায়, সে এলে আমার কী হবে, কী হবে…! যখন সুমুখে এসে দাঁড়াবে—হায়, আমি কি তাকে বলতে পারব, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন?…

…বরং এও ভালো যে জিন্দেগি নহি গুজরতি…

জীবনে সেই একবার নেচেছিল নয়নতারা—সে নাচ তার নিজের জন্যে—যা হয়তো কোনোদিন কোনো ওস্তাদ শেখাতে পারত না তাকে। দুর্গামোহনের কণ্ঠ থেকে গান তুলে নিয়েছিল নিজের কণ্ঠে। ব্যাকুল সুরের পাখায় ‘জিন্দেগি নহি গুজরতি’র বেদনা সঞ্চারিত হচ্ছিল ঘরের ছোট্ট আকাশটুকুতে। রতন মদের গ্লাস ঠোঁটে তুলতে গিয়ে থেমে যাচ্ছিল বারবার। এই নটী মেয়েটি যেন কাকে কী গূঢ় কথা শোনাতে চায়—যা সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে না।

আসরের এক ফাঁকে সে বলেছিল—’অপূর্ব, অদ্ভুত! কিন্তু এ জাদুর খেলোয়াড়ি ঘরের ছোট্ট সতরঞ্চে শোভা পায় না ওস্তাদজি, একে বাইরে নিয়ে চলুন।’

দুর্গামোহন বলেছিল—’এ তো সার্কাস নয় মাস্টার, এ বুনো জানোয়ারও নয়—একদম জাহান্নামের আগুন।’ বলতে বলতে হাসছিল সে। ‘বাইরে ছড়ালে দুনিয়া নরকের সমান হু হু করে জ্বলে উঠবে।’

‘আপনি সবসে বড়া খেলোয়াড়—ওস্তাদের ওস্তাদ, আপনার হাতে ম্যাজিক ওয়ান্ড। তা ছাড়া যা আপনার হাতে সৃষ্টি, তা সামাল দিতেও আপনি পারবেন। পারবেন না?’

‘হয়তো পারব। কিন্তু কী দরকার?’

রতন সে মুহূর্তে কোনো জবাব দেয়নি। জুয়োয় মগ্ন হয়ে গিয়েছিল সে। মধ্যরাতে একেবারে ফতুর হয়ে টলতে টলতে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছে, নয়ন চুপিচুপি তাকে অনুসরণ করেছিল। বাবু তখন অন্য খেলোয়াড় সামলাচ্ছে।

‘মাস্টার!’

রতন চমকে উঠেছিল। ‘আপনি!’

‘একটা কথা বলতে এলাম…’ নয়নের পা কাঁপছিল।

‘কী কথা?’

‘আপনি আর এখানে আসবেন না। ঈশ্বরের দিব্যি…’

‘কেন বলুন তো মিস নয়নতারা?’

‘বাবু আপনাকে ভিখিরি করে দেবে—ও একটা শয়তান! ওকে চেনেন না!’

‘ভিখিরি! আমি তো কবে থেকেই ভিখিরি বনে আছি।’ রতন অস্ফুট—কণ্ঠে হেসেছিল। ‘তাছাড়া কালই কলকাতা থেকে চলে যাচ্ছি মিস নয়নতারা, আজ রাত্রেই আমাদের সাজগোছ শুরু হবে। আজ শো বন্ধ ছিল বলে এদিকে আসবার ফুরসত পেলাম। আপনি ভাববেন না কিছু—জীবনে এমন কত ঘটে যাচ্ছে…’

নয়ন দু—পা এগিয়ে গিয়েছিল। ‘এ আড্ডার খোঁজ পেয়েছিলেন কী করে?’

‘খোঁজ?’ রতন বলেছিল—’আপনার বাবুরই সাঙ্গোপাঙ্গরা দিয়েছিল খোঁজ। ওই দেখুন, ওই চায়ের দোকানে এখনও দুটিতে বসে রয়েছে মনে হচ্ছে। ওরাই না? আচ্ছা, আসি তাহলে।’

রঘু আর কেষ্টাকে বসে থাকতে দেখেছিল নয়ন। ওদের কাজই এইটে—ওরা বলে ‘ডিউটি’। যোগ্য কাপ্তান দেখলে পথ দেখিয়ে পৌঁছে দেয়। তারপর যথাস্থানে বসে ফের লক্ষ্য রাখে।

পাছে রঘু—কেষ্টা তাকে দেখে ফেলে, তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছিল নয়ন। কিন্তু এক অদ্ভুত শূন্যতার মধ্যখানে সে তলিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে তার মাথা ঘুরে উঠেছিল। কোনোরকমে ঘরে ঢুকে শয্যায় শরীর মেলে দিয়েছিল সে।

দুর্গামোহনের ডাক শোনা যাচ্ছিল ওদিকে—’কই রে নয়ন, নয়নমণি এবার আয় একটু…’

‘দি গ্রেট এশিয়ান সার্কাস পার্টি’ সত্যি সত্যি পরদিন তাঁবু তুলে চলে গেল।

সারাটি দিন অস্থিরভাবে নয়ন ছাদের ওপর পায়চারি করছিল। এমনি বসন্তকাল সেদিন। বাইরের পৃথিবীতে তার শ্রেয় ও প্রেয় চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছে—এমনি একটি গভীর বিষাদে সে বাইরের পৃথিবীকে দেখছিল।

দুর্গামোহন এসে বলছিল—’কী হয়েছে রে তোর? এত বেলা হল—ছাদে রয়েছিস যে?’

‘কিছু না বাবু।’

‘লুকোস নে নয়ন, তোর মন খারাপ করছে।’

‘বা রে! সে কেন?’

‘তুই রতন মাস্টারের কথা ভাবছিস।’

দুর্গামোহন যেন সত্যই অন্তর্যামী। ভয়ে বিস্ময়ে কাঠপুতুল বনে গেল নয়ন। বাবু কি তাকে মারবে। অবশ্য জীবনে খুব কমই সে গায়ে হাত তুলেছে—ভয়ই দেখিয়েছে বরং। কিন্তু আজ যেন নয়ন একটা বড়ো রকমের অপরাধে অপরাধী। এ অপরাধ তার স্পষ্টতার। কেন সে একটা অজুহাত খুঁজল না তার ভালোবাসার জন্য।

নয়ন হঠাৎ যেন বেপরোয়া হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। ‘বেশ—যদি ভাবি তো তোমার কী আসে যায়?’

দুর্গামোহন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। এত সাহস নয়ন পেল কোথায়? একসময় আস্তে আস্তে নীচে নেমে গেল সে।

নয়ন ক্রমশ সাহস পাচ্ছিল যেন। যতবার ভাবছি—অন্তত সে জানুক বা না জানুক, এই প্রথম একটি লোককে সে দীর্ঘলালিত তার ক্ষুধার্ত ভালোবাসার জন্য বেছে নিতে পেরেছে, এই গর্ব তার রক্তে উষ্ণতার সঞ্চার করছে। এবং প্রতিমুহূর্তে মনে হচ্ছে—যত ক্ষতিকরই হোক কিংবা যত ধ্বংসমুখর এ—হঠকারিতা—এতদিনে সে একটা বিরাট রুদ্ধ জলপ্রপাতকে মুক্তি দিয়েছে, এর তৃপ্তি তার মর্মকে করেছে স্নিগ্ধ ও পবিত্র! হোক এটা একটা জুয়াখেলা—এতে হেরেই সুখ। অন্তত নিজের জীবনের সারটুকু একবারের জন্যেও বাজি ধরতে পেরেছিলাম—এ গর্ব তো হেলাফেলার নয়।

কিন্তু কে যে হারে বা জেতে, সে বিচার করার সাধ্য কতটুকু মানুষের? ক’দিন পরেই রূপকণ্ঠীর মেলার ঠিকানা দিয়ে লেখা একটি চিঠি হাজির নয়নের হাতে।

দুর্গামোহনই নিয়ে এল হন্তদন্ত হয়ে। ‘ওরে নয়ন, নয়নমণি রে, বাস মার দিয়া কেল্লা!’ তার উল্লাস আর হই—চই দেখে, শিশুর মতো সরল মুখভঙ্গি দেখে কে বলবে, ওই দুর্গামোহন একটা ঘাগী শয়তান জুয়াড়ি!

রতন লিখেছে : ‘মিস নয়নতারা, আমি জানি কেন সেদিন আপনি আমাকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু যখন থেকে বোঝবার জানবার বয়স পেয়েছি, তখনই দেখেছি যে আমার মাথা সবসময় একটা সিংহের মুখে ঢোকানো। মুশকিল কী জানেন! বাইরের ওই সিংহটা বনের—তাই মাথা বের করার সুযোগটা পাওয়া সহজ। কিন্তু আসল সিংহ—সে হচ্ছে মনের। তাই তার মুখে সেই যে মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছি, আর বেরোল না। এই করেই তো বেঁচে আছি। …কিন্তু তবু মন কেমন করে উঠেছিল আপনার কথা শুনে। হায়, এমনি কেউ একদিন সাবধান করত আমাকে—তাহলে এই নিষ্ঠুর অপমানজনক ভবঘুরের জীবন কাটাতে আসতাম না!…বাইরে থেকে হয়তো ভেবেছেন—ওই বুনো জানোয়ারটা বশ মানিয়ে খেলা দেখাই, মানুষের হাততালি পাই, কত সম্মান কত যশ! তাঁবুর যে জগতে আমি বাস করছি, তার ভেতরটা যদি দেখতেন! প্রতিমুহূর্তে চাকরের—না, চাকরের হলে তা সম্মানজনক বলা যায়, এই জানোয়ারের জীবনধারণ—অসাবধান হলেই চাবুক, গঞ্জনা, লাঞ্ছনা! সামান্য কিছু মাইনে পাই, হয়তো জুতো সেলাই করলে তারও বেশি পেতাম। অথচ ছেড়ে আসতে পারিনে। ওই যে বলেছি—মনের সিংহ গিলে বসে আছে মগজটা। এ—নেশার তুলনা নেই মিস নয়নতারা,—হয়তো আপনিও এ নেশায় বেঁচে আছেন। মনে হয় এই নেশার জগৎ ছেড়ে গেলে কোথাও দাঁড়ানোর মাটি নেই—কোথাও পৃথিবী আমার জন্য একবিন্দু স্থান রাখেনি—কোনো সমাজ কোনো মানুষ আপন বলে টেনে নেবার নেই। একটি চিহ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা বড়ো কঠিন এই পৃথিবীতে। এই বর্তমান চিহ্ন—যা অনেক রক্ত খরচ করে জোগাড় করেছি—তাকে মুছে ফেলাও তো যায় না! এ যে রক্তে মাংসে ওতপ্রোত হয়ে গেছে এতদিনে! বলুন তো, আমার উদ্ধার কোথায়! শুধু আমারই বা কেন—আমার মতো আরও অনেক যারা—এমনি একটি বিশেষ নেশার জগতে জীবন কাটাচ্ছে, তাদের?…তবু আমি আপনার কথা ভাবছি। হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি। আমরা দু’জনে ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসী ছাড়া কিছু নই!…ভাবতে ভালো লাগে, যদি এই কয়েদখানা থেকে বেরিয়ে অন্য আর—এক কয়েদখানাকে ভালোবাসতে পারতাম। দুজনেই যদি!’

মায়ের কাছে কিছু বাংলা লেখাপড়া শিখেছিল নয়ন। যা শিখেছিল, তা প্রয়োজনে আরও শানিত হয়ে উঠেছিল দিনে দিনে। তার মা পুরানো খাতা খুলে তাকে সংগীতশাস্ত্রের নানান তাল—ছন্দ রাগরাগিণী বুঝিয়ে দিত। শেষে দুর্গামোহনও এ—ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছিল। কিন্তু লেখাপড়া কতটুকু দিতে পারে মানুষকে? জ্ঞান বুদ্ধি বা বোঝা—জানার জন্য বুঝি মানুষের আর—এক গভীর ইন্দ্রিয় থাকে অপেক্ষায়। কেউ তাকে জাগিয়ে দিতে পারে, কেউ পারে না। নয়ন জাগিয়েছিল একটু করে। সে চিঠির প্রতিটি শব্দ অনুভব করছিল গভীরতর অর্থের ভারে থর থর অবেগমন্থর। চিঠি শেষ করে সে যখন জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে, নিঃশব্দে জল ঝরছিল তার চোখে। দুর্গামোহনকে তার লজ্জা করছিল না। দুর্গামোহন সকৌতুকে তার হাবভাব লক্ষ্য করছিল ততক্ষণ। শেষে বলেছিল—’বুঝেছিস, কী লিখেছে ও?’

নয়ন জবাব দেয়নি।

‘ছোড়াটা তোর প্রেমে পড়েছে, বুঝলি? এখন সে চায় তোকে বিয়ে করে সংসার পাততে।’ হাসতে হাসতে সরে গিয়েছিল দুর্গামোহন।

ঘৃণায় দুঃখে ক্রোধে ক্ষিপ্ত নয়ন বিড়বিড় করে গাল দিয়েছিল—’শয়তান, স্বার্থপর, পাপী, জানোয়ার।’

কিন্তু দুর্গামোহন যেন ঈশ্বরেরই এক প্রতিবিম্ব। পরদিন সকালে নয়নকে বলেছিল—’তৈরি হয়ে নে দিকি, বেরোতে হবে।’

‘কোথায়?’

‘রূপকণ্ঠীয় মেলায়।’

চমকে উঠেছিল নয়ন। তামাশা নয় তো? ‘কেন, সেখানে কী?’

পরে রঘুনাথ আর কেষ্টা সবটা স্পষ্ট করেছিল তার কাছে। বাবু—মস্তো একটা তাঁবু কিনেছে। লোকজন সংগ্রহ করেছে। নাচগান ম্যাজিক পার্টি নিয়ে মেলায় মেলায় ঘুরে বেড়াবে দেশ থেকে দেশে। রঘু চুপি চুপি বলেছিল—’এক জায়গায় আসর বেঁধে বাবুর পোষাচ্ছে না আসলে। নিত্যি এত পয়সাওয়ালা খেলোয়াড় পাবে কোথায়? এদিকে পুলিশের শাসানি দিনে দিনে বাড়ছে। কবে নাকি দেয় লালবাজারের ওদিকে ঠেলে…।’

নাকি তাকে ‘ভালোবাসার পুরুষ’ দিতে যাচ্ছিল দুর্গামোহন? হয়তো ভেবেছিল—আর সামলানো যাবে না এ মেয়েকে। যৌবন কানায় কানায় টলমল করছে যার।

কে জানে কী মনে ছিল দুর্গামোহনের—তার মনের কথা তার ঈশ্বরও কি বোঝে? রঘুর কথাই ঠিক। মেলাগুলোতে নাকি জুয়াড়িরা সরকারি পাসও পায়—রঘু বলছিল। বলছিল—’জুয়োও চলবে পেছনে—সামনে নয়নদির বায়স্কোপ।’

রূপকণ্ঠীতে তাঁবুর মায়াজগৎ সৃষ্টি করল দুর্গামোহন।

‘মোহিনী ভ্যারাইট শো পার্টি।’ মোহিনী কেন? নয়ন নতুন ঝকঝকে সাইনবোর্ডটার ওপর তার মাকে খুঁজছিল।

তারপর একদিন রতন মাস্টার নয়নের ছোটো তাঁবুটার সুমুখে দাঁড়িয়ে তখন সেই অপরূপ হাসি ঠোঁটে নিয়ে হাত তুলে নমস্কার করল, ‘মিস নয়নতারা, কেমন আছেন? চিঠি পেয়েছিলেন তো?’

নিঃসংকোচে সে নয়নের তাঁবুতে তক্তপোশে গড়িয়ে পড়ল। ফের বলল : ‘গত রাতে যখন সিংহটার মুখে মাথা ঢুকিয়েছি—ভয়ে ভয়ে একবার চোখ খুলেছিলাম। কী মুশকিল ওর প্রকাণ্ড আলজিভটার ঠিক ওপরে আপনি দারুণ নাচছেন। কী অবাক…এমন কেন হয় কে জানে? বিশ্বাস করুন…।’