নিষিদ্ধ প্রান্তর – ১১

এগারো

সুনন্দ সাইকেল সারিয়ে ফিরছিল। বারোয়ারিতলায় দেখা হয়ে গেল আকবরের সাথে। আকবরও সাইকেলে আসছিল। সুনন্দকে দেখে হাসিমুখে সে সাইকেলের সামনের চাকাটা ঘুরিয়ে পথ আটকাল। সুনন্দ মাটিতে পা ছুঁইয়ে বলল, কোথায় চললি রে মহামতি আকবর?

আকবার হেসে উঠল। …তুই বেশ আছিস মাইরি। চেহারা দিনে দিনে বেশ খোলতাই হচ্ছে! কুসুমগঞ্জের মেয়েগুলো শুনলুম, তোর নাম জপছে দু’বেলা! হিরো হয়ে গেছিস রে!

সুনন্দ গা করল না। …চলি ভাই। কাজ আছে।

আকবর নামল সাইকেল থেকে। …কাজ তো আমারও আছে রে বাবা! চল ওখানটায় গিয়ে বসি একটু। আয় না! আমার ওপর রাগ করছিস কেন? আমি তোর শত্তুর নাকি?

সুনন্দ একটু গম্ভীর হল। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে সাইকেল থেকে নামল। হাঁটতে থাকল ওর পাশাপাশি। সুনন্দের চরিত্রে এই নমনীয়তাটুকু আছে—সে কাকেও এড়াতে পারে না। বটতলায় বাঁধানো চত্বরের একপাশে একজন বসে জাল বুনছে। আর কেউ নেই। অন্যপাশে বসল ওরা। আকবর সিগ্রেট বের করল। …নে, খা।

সুনন্দ সিগ্রেটে অভ্যস্ত নয়। পেলে খায়। সিগ্রেটটা নিল সে। ধরাল। চুপচাপ টানতে থাকল। ভালো লাগছিল না। আকবরকে সে মনে মনে ঘৃণা করে।

আকবর চাপা নিঃশব্দ হেসে ভ্রুকুটি করে ওকে দেখছিল। এবার বলল, একটা কথা তোকে বলা দরকার ভেবেছিলুম সুনু। জানিনে, কীভাবে নিবি। তবু বলা উচিত।

সুনন্দ ধুঁয়ো সামলাতে ভুরু কুঁচকে বলল, উঁ?

আমি জানি, তুই আমাকে খুব—খু—উ—ব খারাপ চোখে দেখিস।

যাঃ!

যাঃ নয়, লুকোসনে। আমি জানি, রুবি তোকে কিছু বলে থাকবে।

সুনন্দ চমকে উঠল। তাকাল ওর দিকে।

তবে জেনে রাখিস, যদি কিছু করে থাকি তো, সেটা রুবির মায়ের সাহসে। তুই তো জানিস, আমার সাথে রুবির বিয়ের কথা ছিল।

সুনন্দ অস্থির হয়ে বলল, ও কথা ছেড়ে দে আকবর। অন্য কথা থাকলে বল।

আকবর মাথা দুলিয়ে বলল, না সুনু। তোর ব্যাপারটা ভাবা দরকার। আজ একটা মুসলিম ফ্যামিলিকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে…

সুনন্দ তীব্রস্বরে বলে উঠল, আকবর! তুই এভাবে দেখছিস কেন ব্যাপারটা? ছিঃ!

আকবর একটু দমে গেল। …কিন্তু তাই তো দাঁড়ায় শেষ অব্দি। আর সব মুসলিমরা কীভাবে নেবে এটা? তুই—ই বল।

মোটেও না। ওঁরা চলে যাচ্ছেন, সম্পূর্ণ আলাদা কারণে।…সুনন্দ দৃঢ়ভাবে বলল। …এখানে কী খেয়ে থাকবেন? জমিজমা প্রায় শেষ—তার ওপর মেয়ের বিয়ে দিতে হবে—অত টাকা কোথায়? ওখানে নুরুল আছে—ভালো চাকরি করে।

আকবর হঠাৎ ঝুঁকে এল। ওর একটা হাত ধরল। …সুনু, একটা কথা বলব?

বল না, কী বলবি।

তুই তো জাত মানিস নে। ধর্ম মানিস নে। গোমাংস খাস।

সে আজকাল অনেকে খায়। তাতে কী হয়েছে?

তুই রুবিকে বিয়ে করবি?

সুনন্দ ফ্যালফ্যাল করে তাকাল ওর দিকে।

বল, ওকে বিয়ে করবি নাকি? আমি—আকবর বলছি, খালেক চৌধুরীর ছেলে আকবর। …নিজের বুকে আঙুল ঠুকে আকবর বলল। …এ কুসুমগঞ্জে আমি দিনকে রাত করার হিম্মত রাখি সুনন্দ। আমি বলছি। হতে পারে এটা হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র, হতে পারি আমি একজন সংখ্যালঘু—কিন্তু আকবর বাঘের বাচ্চা বাঘ। তুই বল, ওকে বিয়ে করবি নাকি?

সুনন্দ এবার হেসে ফেলল। …কী পাগলের মতো যা—তা বলছিস!

আকবরের ঠোঁটে কুঞ্চন দেখা দিল। সে বলল, সুনু যদি সে সাহস না ছিল তোর, এখনও যদি সাহস না থাকে, কেন তুই ওকে নষ্ট করতে গেলি?

সুনন্দ ক্ষুব্ধ হয়ে বলল, আকবর! আমি ওকে কিচ্ছু নষ্ট করিনি।

আলবাৎ করেছিস।

না।

আমি দেখেছি।

কী দেখেছিস?

আকবরের মুখটা লাল। সে অন্যদিকে মুখ ফেরাল। কিছু বলল না।

সুনন্দ একটু ভয়ে পেল। সে আপসের স্বরে বলল, সব তোর মনের ধাঁধা রে। আমি এসব নিয়ে একটুও ভাবিনে—অথচ তুই ভাবছিস। তাছাড়া আমার কি এখন বিয়ে করার কথা ভাববার সময় হয়েছে? একটা সংসারের দায়িত্ব আছে—ঝুনুর পুরো দায়িত্ব মাথায়—নিজের পড়াশোনা আছে—তারপর ওসব যদি ভাববার ফুরসৎ পাই, ভাবব। সে ঢের দেরি। আর দায়িত্ব যদি নাও থাকত—এই বয়সে কেউ বিয়ে করে নাকি?

আকবর ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে বলল, যাই বল, ওরা চলে গেলে—তার দায়িত্ব সবটা তোর। এরই মধ্যে মুসলিম সমাজে বলাবলি শুরু হয়েছে।

সুনন্দ বাধা দিয়ে বলল, কিচ্ছু হয়নি। সব তোর বানানো। দ্যাখ আকবর, তোকে অনুরোধ করছি—এ নিয়ে তুই বাড়াবাড়ি করিসনে। এর পরিণাম বিশ্রী হতে পারে।

তুই শাসাচ্ছিস?

যাঃ! শাসাব কেন? বলছি, রাজনীতি তো ওঁত পেতে আছে আজকাল। একেই ইসু করে একটা কিছু ঘটে যেতে পারে। তুই শিক্ষিত ছেলে হয়ে এসব কী ভাবছিস, বুঝিনে।

ঠিক আছে। …বলে আকবর উঠে দাঁড়াল। সাইকেলটা টেনে নিল।

সুনন্দর শরীরটা ভারী হয়ে গেছে যেন। তার ঊরু দুটো অবশ। সে বলল, আকবর, কেন মিথ্যে আমার ওপর রাগ করে আছিস।

আকবর প্যাডেলে পা রেখে বলল, হ্যাঁ—আর একটা কথা। তোর বোনকে একটু সাবধান হতে বলিস। শিগগির সেও একটা ট্রাবল ক্রিয়েট করবে।

সুনন্দ সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আকবর সাইকেলে চড়ে সাঁৎ করে চলে গেল। পালটা কিছু বলার সুযোগ পেল না সুনন্দ। রাস্কেলটা খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে তো! এত রাগ ওর? আর—ঝুনুর কথা কী বলে গেল? কবীরের প্রসঙ্গ? সুনন্দ জানে, কবীর আর ঝর্ণার মধ্যে একটা ভালোবাসার খেলা চলছে। সুনন্দর প্রশ্রয় হয়তো খুব বেশি তাতে। আজ কি আকবরের কথায় সে বোনকে শাসিয়ে দেবে নাকি? কেন? কোনো সাংঘাতিক পরিণামের কথা ভেবে? কী সেই পরিণাম?

কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছিল না সুনন্দ। শুধু বাবার মুখটা বারবার মনে পড়ছিল। সারা পথ খুব আস্তে আস্তে সাইকেলের প্যাডেল ঘোরাল সে। নিজেকে প্রশ্ন করল বারবার। রুবিকে কি—আজ না হোক—কোনোদিন—কোনো একদিন—বিয়ে করতে পারবে সে?

না পারার কারণ তো নেই। তখন সে যদি দায়মুক্ত স্বাধীন মানুষ হতে পারে, বিয়ের আদর্শ বয়সটাও এসে যায়, বিয়ে করতে পারে বইকি! অবশ্যি রুবির তদ্দিন অপেক্ষা করা কি সম্ভব হবে? ওর মধ্যে হয়তো এই জোরটাও নেই। ও মেয়ে—তাছাড়া মুসলমান মেয়ে। অভিভাবকের গণ্ডী ডিঙোবার ক্ষমতা কতটুকু ওর? এদিকে হেমনাথ এবং প্রভাময়ী একটা সমস্যা অবশ্য। সেটা…

সুনন্দ উত্যক্ত হয়ে বিড়বিড় করল, মরুক গে।

তবে হেমনাথের পরিবারে আঘাতটা বড় তীব্র হবে। ভয়ঙ্কর হবে। ছেলে মুসলমানিকে বিয়ে করছে, মেয়ে মুসলমানকে।

জীবনে এই প্রথম সুনন্দ অনুভব করল, ধর্ম মানুষের শত্রুতা করতে পারে—ভীষণতম শত্রুতা। প্রেম ভালোবাসা যদি পাপ না হয়, যদি একে বলি মানুষের শ্রেষ্ঠতম বৃত্তি—উৎকৃষ্টতম মানস—সম্পদ এবং এই নিয়েই তো হাজার হাজার বছর ধরে শিল্প সংস্কৃতির দীর্ঘ জয়যাত্রা—মানুষের জীবনটাই একে কেন্দ্র করে ফলেফুলে বিকশিত হয়ে ওঠে—তাহলে ধর্ম এখানে পরম শত্রু বইকি!

একজন মানুষ যখন হত্যা করতে যাচ্ছে, চুরি করতে চলেছে—তখন ধর্ম তাকে চোখ রাঙাক। কিন্তু একজন মানুষ যখন ভালোবাসতে যাচ্ছে, তখন? সুনন্দ গভীর দুঃখে অনুভব করল এতদিনে, ধর্ম মানুষের মধ্যে সীমারেখা টেনেছে—সৃষ্টি করেছে জটিল সব ব্যবধান। ধর্ম পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশের পথে বাধা এনেছে। অতএব ধর্মকে অস্বীকার করা ভালো। সুযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা দরকার।

কিন্তু—

কবীরের কথাটাই মনে পড়ল। কবীর রাজনীতি করে। অবশ্য অল্পসল্প করে—মুখে বলে তার ঢের বেশি। সে কার্ল মার্কস আওড়ায়। সে বলে, ধর্ম জনগণের আফিং। তবে ধর্মের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে লাভ নেই—কারণ, তাতে পরোক্ষে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিই লাভবান হয়। সর্বহারার লড়াইটা ভুল পথে একটা জটিলতায় আটকে যেতে পারে। তার চেয়ে বরং ধর্মের অস্তিত্বের মূলটা কেটে দেওয়া যাক। শ্রেণীসংগ্রাম যত তীব্রতর হবে, ধর্মের স্থানও তত নড়ে উঠবে সমাজে। কবীর গড়গড় করে বলে—’দ্যা হিসট্রি অফ দা হিদারটু একজিসটিং সোসাইটি ইজ দা হিসট্রি অফ দা ক্লাস স্ট্রাগলস।’ …এযাবৎকালের সমাজের যে ইতিহাস, তা শ্রেণীসংগ্রামেরই ইতিহাস। সমাজে হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান কোনো ব্যাপারই নয়—সমাজ সরাসরি দু’ভাবে বিভক্ত : শোষক এবং শোষিত।…

কথাটা ভাববার মতো। সুনন্দ ভাবল। সে আরও টের পেল, কেন আজকাল তার বয়সি সবাই এইসব মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এর মধ্যে আছে একটা গভীরতর বিদ্রোহের আহ্বান। দার্শনিকরা এতদিন শুধু এ জগৎটাকে ব্যাখ্যাই করেছেন, আজকের কথা হল—একে কেমন করে বদলাতে হবে।

রাজনীতি করবে সে? কবীরের সমর্থিত দলের রাজনীতি? বাড়ির কাছে নেমে সুনন্দ অতি দুঃখে হাসল। আসলে সে একটা আশ্রয়ের জন্যে মাথা কুটছে—যে আশ্রয় খুব শক্ত আর নির্ভরযোগ্য—যেখানে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলা যায়, মানুষ একটা আশ্চর্য সম্ভাবনাময় শব্দ—বলা যায়, পৃথিবীতে মানুষ নামক প্রকৃতির সন্তানকে তার পরিপূর্ণ অধিকার আর মর্যাদা দিতে হবে।

কিন্তু এই সব ভাবনার বদলে একটা চমৎকার সকাল মারা গেল। সুনন্দ সাইকেলটা সারিয়ে আনছিল হাইওয়ের ওদিকে দুপুর অব্দি ঘুরে বেড়াবে—তাই। সেটা হল না। আকবর রাস্কেলটা তার মাথাটা সত্যি গুলিয়ে দিয়ে গেল।

বিকেলে আফজল অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেরিয়েছিলেন।

এ এক আপদ খামোকা। হাসপাতালের ডাক্তার এসেছিলেন। শরমে তো কোমরের কাপড় সরাতেই চায় না সাহানা। রুবি জোর করে সরাল। টিপে—টুপে দেখে ডাক্তার বলেছিলেন, এক্সরে করতে হবে। আজকের মধ্যেই করা দরকার। গাড়ি করে সে ব্যবস্থাও দুপুর নাগাদ হয়েছিল। রুবি সঙ্গে গিয়েছিল। আফজল বাড়ি বসে ছিলেন। রুবি চালাক চতুর মেয়ে—সেই পারবে’খন। পারলেও।

কিন্তু সাংঘাতিক কাণ্ড, হাড় ভেঙেছে সাহানার। হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া উপায় ছিল না। সাহানা তো কান্নাকাটি করছিল। রুবি বুঝিয়ে শুঝিয়ে রেখে এসেছে। তারপর আফজল গেছেন। চোখের জল ফেলে আশ্বস্ত করে এসেছেন বেগমকে। শিগগির সেরে যাবে—ভেব না। দু’বেলা আমরা বাপবেটি আনাগোনা করব। খাবার বাড়ি থেকেই আসবে। চোখ বুজে পড়ে থাকো—কেমন?

সাহানার কান্না থামতে চায় না। এই বেগানা জায়গায় তাকে পড়ে থাকতে হবে? কতদিন? বাড়িঘর ফেলে বেপর্দা হয়ে পর পুরুষের মধ্যে! উঃ মা গো!

আফজল বলেছেন, জোড়া লাগতে দেরি হবে না। যা সব ওষুধ লাগিয়েছে না! চুপসে শুয়ে থাকো। খোদাকে ডাকো। …আড়ালে রুবিকে বলেছেন, ও বুড়ো হাড় জোড়া লাগবে আর? কক্ষনো না। এখন ঠ্যালা সামলাও।

বিকেলে রুবিকে নিয়ে আফজল হাসপাতালে গেলেন। তারপর কাজের অছিলায় কেটে পড়লেন। রুবি যে একা ফিরবে, সে কথাটা তখনকার মতো কারও মাথায় এল না।

আফজলের আসলে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। সেই ব্রিজটা!

হ্যাঁ, যা ভেবেছিলেন তাই। দখল করে ফেলেছে আজ। হাতছুট হয়ে গেছে। থমকে দাঁড়ালেন আফজল। বার কতক টুপিটা অকারণ মাথা থেকে খুললেন আর ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে পরলেন। ভিতরটা ছটফট করছিল তাঁর। পাকিস্তানে ছেলের কাছে চলে যাবার দিন গুনছিলেন, হঠাৎ সাহানা কোমর ভেঙে ফেলল। এ অবস্থায় যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। ভাবনা—উদ্বেগ ভরা মনকে এই সুদীর্ঘকালের নির্জন সিংহাসনটিতে বসে বাদশাহের মতো চারদিক অবলোকন করে একটা প্রশান্তি দেওয়া যেত—আপাতত তার উপায় নেই। একটু এদিকে ওদিকে অবশ্য বসা যায়। কিন্তু এ বেলার মতো আর ওই কাফেরটার অস্তিত্ব মন থেকে মোছা ভারি কঠিন।

হেমনাথ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছিলেন—’নেড়েটা’ আসছে। ভূত একটা! আজ নাই বা এলি এখানটায়! জায়গা তো কারও রেজেস্ট্রি করা নয়। আজ তুই বরং ওভারব্রিজে চলে যা। উঁহু, তা যাবে কেন? পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করার স্বভাব যাবে কোথায়? কই, অ্যাদ্দিন আমি তো তোকে দেখামাত্র কেটে পড়েছি—তুই পড়ছিস নে!

হেমনাথ টেরচা তাকিয়ে আরও গুম হয়ে গেলেন। আফজল গটগট করে ওপাশের রেলিং চত্বরে বসে পড়লেন। উলটোদিকে মুখ করে বসলেন। পা দুটো ঝুলিয়ে দিলেন ক্যানেলে। হেমনাথও তাই করলেন।

আফজল উত্তরে দূরের প্রসারিত শস্যশূন্য মাঠ আর আকাশের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখলেন তাঁর চোখদুটো মাথার পিছন দিকে বসে রয়েছে। হেমনাথ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।

হেমনাথ দক্ষিণে কুসুমগঞ্জের বিধ্বস্ত কুঠিবাড়ির বন জঙ্গল, নদী আর নদীপারের ধূসর হয়ে ওঠা গ্রামপুঞ্জ দেখতে গিয়ে জানতে পারলেন তাঁর চোখজোড়া সামনে নেই—মাথার পিছনে পালিয়ে গেছে।

একটু পরে ক্যানেলের তলানিতে পাঁক হাতড়ে নাছ ধরা শেষ করে ফজলু শেখ এসে গেল। অগাধ জল থেকে ভোঁস করে মাথা তুলে নিশ্বাস ফেলতে পারলেন আফজল। …ধুস! কাণ্ড দেখছ? কোত্থেকে ভূতের মতো…হ্যাঃ হ্যাঃ হ্যাঃ। মাছ পেলে নাকি ফজলু?

ফজলু এসে লাইনের ওপর বসল। …পেলুম দু’চাট্টে পুড়িয়ে খেতে। বসে আছেন মিয়াসাহেব?

হুঁ। আর কী করব বলো? দিনমান যা গরম পড়েছে, এখন একটু গা না জুড়োলে দমবন্ধ হয়ে যায়।

ফজলু দার্শনিক। সে বলল, গরম কি বাইরে বাইরে শুধু? আপনার গে দুনিয়ার ভেতরটাও তেতে আছে গো, বুঝলেন? আর জ্বালার কথা বলবেন না। মানুষের মধ্যে আর মানুষই নেই।

আফজল বললেন, যা বলেছ।

ফজলু এবার ঘুরছে।…আরে! মেজবাবু যে। চোখে ছটা লেগে চিনতেই পারিনি! আদাব মেজবাবু।

হেমনাথ আদাব দিলেন! মুখটা ফেরালেন না। বললেন, ক্যানালে এখনও মাছ আছে?

আছে দু’ চাট্টে। …ফজলু বলল। …মেজবাবু, এবারে সাতকাঠায় আখ দিলেন না কেন? আপনার চার পাশেই তো সব গুড়ের বান ডাকালে! ছেলেমেয়েদের মিষ্টিমুখ হত।

হেমনাথ বললেন, আখ দিতে ঝামেলা আছে হে ফজল। বিস্তর পয়সা চাই । তার ওপর…আফজল বললেন, ফজলু, এবার রবিখন্দ কেমন তুললে?

ফজলু বলল, তুললুম। তা মেজবাবু, এবার কিন্তু আগাম বলা রইল। ছিটেফোঁটা রাখবেন কিন্তু। শুধিয়ে দেখুন মিয়া সায়েবকে—ওনার বাঁজা তিন কাঠা ডাঙা, সেখানে কী কাণ্ড করেছিলুম গত বছর। জমিটা এখন ডাকলে রা কাড়ে। চাষবাসে আমার সুনাম আছে গো।

হেমনাথ বললেন, দেখব’খন। ইসাক মারা গেছে—ওর ছেলেরা দাবি ছাড়ছে না। আজকাল ভাগচাষের আইন বড় কড়া হে। দেখব—তুমি বলছ যখন, নিশ্চয় দেখব।

আফজল বললেন, ফজলু, সরে এসো। গাড়ি আসছে।

ফজলু হেসে বলল, মলে তো বাঁচি। জ্বালা কি একদিকে মানুষের?…বলে সে আফজলের দিকেই সরে এল।

আফজল বললেন, আর বোলো না। মানুষের বাঁচা না বাঁচা সমান। একেকটা জ্যান্ত লাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার চেয়ে ঘরে ঘরে সব গাড়ি এসে ঢুকুক, পিষে দিয়ে চলে যাক।

হেমনাথ কী বলতে যাচ্ছিলেন, মালগাড়িটা এসে পড়ায় শোনা গেল না—বললেনও না। লম্বা গাড়িটা কতক্ষণ বিরক্তিকর শব্দ করে, তারপর নীরবতা নামল ফের।

ফজল একটু হাসল হঠাৎ। …তা মিয়াসাব, মেজবাবু! একটা কথা বলব? আমি বড্ড মুখখোলা মানুষ বাঞ্চোত। বলব?

একজন শুধু ‘উঁ’ বললেন।

এটা ভালো দেখাচ্ছে না গো।

একজন শুধু ‘কী’ বললেন।

এই যে দু’জনা দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসে রয়েছেন!…ফজলু হো হো করে হেসে উঠল। …আরে বাবা। লোকে কতমুখে কত কথা বলবে—কী আসে যায় বলুন? কে কাকে ক’থালা ভাত দেবে, না পাঁচখানা কাপুড় দেবে! আপনারা দু’জনাই জ্ঞানী বেচক্ষণ মানুষ। আমার বয়স তো কম হল না গো! বোধ করি, মিয়াসাহেবের চে’ ঢের বড়ই হব। চুল দাড়িতে পাক ধরে গেল। দাঁত পড়ে গেল। পণ্ডিত পড়ে শেখেন, আমরা ঠেকে শিখি।

দু’জনে হাঁ করে তাকিয়ে আছেন ফজলুর দিকে।

না মিয়াসায়েব—মেজবাবু। অট্টুকুন বয়স থেকে আপনাদের দেখছি। তামাম কুসুমগঞ্জো একদিকে, তো আপনারা দুইজনা ছিলেন একদিকে। আজ কতক্ষণ থেকে দেখছি কাণ্ডটা। দেখেই উঠে এলুম।

এবার হেমনাথ গম্ভীর হয়ে বললেন, কী দেখছ?

যা দেখবার। ফজলু আরও হাসল। …এটা ভালো না মেজবাবু। লোকে বলে বটে, দোস্ত দুশমন হয়—কিন্তু কথাটা মিথ্যে। একশোবার মিথ্যে। খাঁটি দোস্ত কখনও দুশমন হয় না! তাহলে দুনিয়াটা অ্যাদ্দিন উলটে যেত। পষ্ট কথার জন্যে আমি অনেক লাঞ্ছনা পেয়েছি বটে, তবে কিনা এই হচ্ছে গে অব্যেস।

আফজল রেগে বললেন, ফজলু ঘর যাও। বাজে বোকো না।

হেমনাথ স্তব্ধ। গম্ভীর!

ফজলু বলল, কীসের হেঁদু মোছলমান গো? ওসব হলো গো খালেক চৌধুরী আর পোভাস মুখুয্যের। গরিবের আবার হেঁদুমোছলমান? বলবেন—আমরা আবার গরিব কীসের? বেশ তো ভদ্দলোক, মিয়া মোখাদিম আছি। দু’চার বিঘে জমি—জমাও আছে। ওটা ভুল কথা—ভু—উ—ল! নিজের মনে—মনেই বুঝে দেখুন গে। আপনাতে—আমাতে কোনো ভেদ নেই আসলে। সংসারের খাতা খুললে একই হিসেব।

আফজল ফের ধমক দিলেন। ..ফজলু! বাজে বকো না।

হেমনাথ খিকখিক করে হাসলেন। …ফজলু কম্যুনিস্ট পার্টির লোক কি না! ওর কথাবার্তাই আলাদা। হ্যাঁ হে ফজলু, কবে তোমাদের বড় সভা হবে শুনেছিলুম?

ফজলু বলল, এসব আমার মনের কথা মেজবাবু। আমি যা বুঝি, তাই। লোকের কথায় পড়ে মিয়াসায়েব শুনলুম দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। শুনে বড্ড দুঃখু হল। সব চে’ সাংঘাতিক কথা হল কি না—ওনারা পালাচ্ছেন মেজবাবুর অত্যাচারে। তিনি কিনা জানের দোস্ত!

হেমনাথ—আফজল দু’জনেই চমকে উঠলেন।

মোছলমান পাড়ায় এ নিয়ে কথা উঠেছে। হেঁদু পাড়ায় বাবুরাও কানাঘুঁসো করছে। বড় ভয় লাগে মেজবাবু। কখনো এখানে অশান্তি হয়নি। কী জানি কী হয়!

হেমনাথ গলা ছেড়ে বললেন, কই, আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি!

আফজল বললেন, বা রে বা! যার বিয়ে তার খ্যাল নেই, পরশী মল গীত গেয়ে?

ফজলু বলল, আরও শুনলুম—চৌধুরীর ব্যাটা আকবর মেজবাবুর ছেলেকে শাসিয়েছে। তাই নিয়ে ঝগড়া হয়েছে ওনার বন্ধুদের মধ্যে। মতিয়ুল কাজীর ছেলে আর আপনার ছেলে…

হেমনাথ চমকে বললেন, সুনুর সঙ্গে? সে কি? আমি তো কিছু জানিনে!

আফজল হতবাক।

তাই মনে বড় দুঃখ হল মেজবাবু। দুটো মানুষ এমন করে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকবেন খামোকা—আর মাঝখানে শ্যালশকুন এসে খেউড় গাইবে, এ কেমন হল? এটা ঠিক না।…

বলে ফজলু হঠাৎ হন হন করে চলে গেল। লোকটাই এরকম। সবখানে ঘোরে, সব খবর রাখে। আর ফোঁপর দালালি করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়।

আফজলের মাথার ওপর একঝাঁক পাখি উড়ে গেল। মুখ তুলে একবার তাদের দেখলেন। ধূসরতা ঘনিয়ে আসছিল দূরে। সূর্য ডুবে গেছে। প্রান্তরব্যাপী ফিকে একটুখানি আলো তখনও করতলের মধ্যে স্মিত উজ্জ্বলতা। বাতাস বইতে থাকল খরবেগে। আকন্দ গাছের ঝোপটা দুলতে লাগল। নিঃসঙ্গ শিমুলের ঘন—সবুজ পাতা শন শন করে উঠল। একটা ফিঙে ডেকে উঠল টেলিগ্রাফের তারে। ঝাঁ—কু—কু! ঝাঁ—কু—কু! রেললাইনের ওপর দিয়ে চলে গেল একটা ঘূর্ণি। খড়কুটো ঘুরতে থাকল। অনেক উঁচুতে একটা শুকনো পাতা ঘুড়ির মতো কাঁপছে। আফজল একটু কেশে ডাকলেন, হেম।

উঁ?

শুনলে?

শুনলুম।

গভীর স্তব্ধতা আবার।

রুবির মা কেমন আছে?

ভালো না।

প্লাস্টার করেছে শুনলাম।

হুঁ।

তাহলে ধরো মাস ছয়েকের কমে পার পাবে না।

ছ’মাস!

তা বইকি! ঝুনু বলছিল—কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার। ঝুনু গিয়েছিল।

অ।

চলো, আমিও দেখে যাই ফেরার পথে।

হেম!

উঁ?

মুখ ফিরিয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললেন আফজল। নির্জন মাঠ। সন্ধ্যা আসছে। বুড়োমানুষের কাঁদবার পক্ষে চমৎকার জায়গা। এবং হেমনাথ লাইন পেরিয়ে দৌড়ে গেলেন।..আ ছি ছি! আফজল, কাঁদছ কেন? আমি হেম—হেমনাথ—আমি ঠিকই আছি…আমি…

হেমনাথ কেঁদে ফেললেন।

আকাশের কোথাও দূরদুর্গমে কোটি আলোকবর্ষের পারে নাকি মানুষের ঈশ্বর থাকেন। সেই ঈশ্বর তাঁর পবিত্র করতলস্বরূপ একটি দিনাবসান দিয়ে আড়াল করেছিলেন দুটি মানুষকে। কারণ আরও—আরও মানুষদের পক্ষে ব্যাপারটা ভারি কৌতুকপ্রদ হত।

আর, মুসলিম মিথে একটি উক্তি আছে। মানুষ যখন নাকি মলমূত্র ত্যাগ ইত্যাদি জৈবিক ক্রিয়াকলাপে রত হয়, শয়তান অদৃশ্যে দাঁড়িয়ে হিহি করে হাসে। তাই মুসলিম মানুষ এ কাজের প্রারম্ভে বিশেষ একটি মন্ত্র পড়ে নেয়—তার ফলে শয়তানের চোখের সামনে একটা দুর্ভেদ্য আড়াল গড়ে ওঠে ঈশ্বরের ইচ্ছায়। শৌচকর্মের পর আরেকবার আরেকটি মন্ত্র পাঠ করলে তখন শয়তানের চোখের ঠুলিটা ফের খুলে পড়ে। শয়তানকে সবসময় অন্ধ করে রাখা তো ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়। তাহলে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য যে ব্যর্থ হবে।

হ্যাঁ, শয়তানের চোখে ঠুলি পড়ে গিয়েছিল সেদিন কিছুক্ষণের জন্যে। কারণ, বন্ধুত্বও তো জৈবিক ক্রিয়াকলাপের মতোই মানুষের জন্যে অপরিহার্য। পশুর চেয়ে মানুষের জৈবিক ব্যাপারগুলো অনেক বেশি।

সেদিন রুবি অনেকক্ষণ বসে থাকার পরও আফজল এলেন না দেখে বলেছিল, আমি যাচ্ছি মা। আব্বা এখন মকবুল দরজির খপ্পরে পড়েছে নির্ঘাৎ। রাত দুপুর করে ফেলবে।

সাহানা বলেছিল, যাবি? তবে একটা রিকশো করে যা। খবরদার, হেঁটে যাবি নে মা।

রুবি বলেছিল, তোমার বুকের ব্যথার কথা ডাক্তারকে বলে যাচ্ছি। লজ্জা করো না। নিজেও খুলে বলবে। ওঁরা জানবেন কেমন করে বলো তো—কিছু না খুলে বললে?

সাহানা চোখ বুজে ইশারা দিয়েছিল, বলবে। লজ্জা করবে না।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রুবি পথে নামল। হাইওয়ের বড় বড় গাছ এখানে—ওদিকে সমান্তরাল রেললাইন। বাঁদিকে কলেজ ছাড়িয়ে তারপর বাজার। সে বারোয়ারি তলার কাছে এসে রিকশো করবে ভাবল। ইলেকট্রিক আলো আছে পথের দু’ধারে—তবে অনুজ্জল। তার বুকটা কেঁপে উঠল অকারণে। সে রিকশো করতে যাচ্ছে, হঠাৎ কবীরকে দেখতে পেল।

কবীরকে দেখে তার সাহস হল সঙ্গে সঙ্গে। সে ডাকল, কবীর ভাই!

কবীর সাইকেল থেকে নেমে অবাক। …আরে রুবি! এখানে একা কী করছ?

হাসপাতালে গিয়েছিলুম। …রুবি একটু নার্ভাস হাসল। …যা ভয় করছিল না!

কীসের ভয়? কবীর হেসে উঠল। …তুমি বলতে না জুলিদির সঙ্গে পাঞ্জা লড়বে?

জুলিদি? ও। জুলেখা? ….রুবি হাঁটতে থাকল। …কবীর ভাই, জুলেখার নাকি বাচ্চাটাচ্চা হয়ে গেছে? কী কাণ্ড!

হ্যাঁ। কবীর আস্তে আস্তে সাইকেল ঠেলছিল। ….তোমার মা কেমন আছেন?

ভালো না। আবার নতুন উপসর্গ—বুকে ব্যথা।

ইয়ে—সুনুর সঙ্গে দেখা—টেখা হয়নি আর?

কথাটা বলেই অপ্রস্তুত হল কবীর। সঙ্গে সঙ্গে কথাটা ঘোরাল—ঝুনুর খবর কী?

রুবীর মুখে কী একটা চাপা ভাব—সে কিন্তু হাসল। …ঝুনুর খবর তো তুমিই ভালো জানো।

নাঃ! শোননি, পরশু বিকেলে আমার সঙ্গে শমিতদের ঝগড়া হয়ে গেছে!

না তো! কেন?

ঝুনুর ব্যাপার নিয়ে। জাতটাত তুলে গালাগালি করছিল—আমি ভাবিনি, শিক্ষিত ছেলে সব…ছিঃ! আকবর হলে তো মারামারি হয়ে যেত!

কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটবার পর রুবি বলল, কাল সকালে আমাদের বাড়ি আসবে কবীর ভাই? আব্বা থাকবেন না—ফিরতে দুপুর হবে। আসবে?

কবীর একটু ভেবে হাসিমুখে বলল, যাব বলছ?

ঝুনুও আসবে বলেছে।

অ্যাঁ! ওরে বাবা! দরকার নেই। …কবীর হেসে উঠল।

যাও! এত ভীতু কেন তুমি? কেউ টের পাবে না।

তুমিও কম ভীতু নও।

মোটেও না। …রুবি তার ছাত্রীজীবনের চপলতা ফিরিয়ে এনে বলল,—মা—বাবার মনে কি দুঃখ দিতে আছে?…এবং খিলখিল করে হাসল সে।

কবীর বলল, মায়ের কোমর ভেঙে ভারি স্ফূর্তি হয়েছে, তাই না?

রুবি বলল, আমি ভীতু নই। ভীতু কে, তাকেই জিগ্যেস করো।

না—সুনুটা ঠিক ভীতু নয়। বড্ড হিসেবি। ওর প্রেম করা সাজে না! …কবীর হাসতে লাগল।

রুবি রাগের ভান করে বলল, আমার কারও সঙ্গে প্রেমট্রেম নেই। আচ্ছা চলি কবীর ভাই। ইচ্ছে হলে এসো। আজকাল আমিই বাড়ির মালিক কি না!

রুবি হঠাৎ ডানদিকের পথে এগিয়ে গেল। কী মেয়ে! কবীর অবাক। ওদিকে তো আলোটালো নেই—সরু গলিপথ। জেলে পাড়া। শর্টকাট করল—নাকি কবীরের সঙ্গে আর হাঁটতে চাইল না?

কবীর সাইকেল চেপে সোজা বাড়ির দিকে গেল। রুবি হঠাৎ কেন যেন তার অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা স্বাভাবিকতাকে অকারণ জটিল করে ফেলছে না কি সে? তাছাড়া, এত চপল চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে তো রুবি ছিল না!