সাত
জ্যাক নানার মিনিভ্যান এসে থামল ট্রেইন স্টেশনে।
‘তোমরা চাইলে আমি তোমাদেরকে অ্যালার্টনে পৌঁছে দিতে পারি,’ বললেন জ্যাক নানা।
‘তার দরকার নেই, নানা,’ বলল নথি। ‘আমরা ট্রেইন স্টেশনের আশপাশে কু খুঁজে বেড়াচ্ছি। কাজেই ট্রেইনে যাওয়াই ভাল।’
অন্য তিনজনও একমত হলো।
‘ট্রেইনে চড়ার মজাই আলাদা!’ ডনের উৎসাহ ধরে না।
‘তা তো ঠিকই,’ বললেন জ্যাক নানা। ওদেরকে তিনি এতদিনে ভালই চিনেছেন। কোন কিছুর দরকার হলে ফোন কোরো,’ ছেলেরা ভ্যান থেকে নামার সময় বললেন তিনি।
‘করব,’ কোরাসে বলল সব ক’জন।
ছেলেদের যখন টিকিট কেনা শেষ হলো, স্টেশনে তখন ট্রেইন অপেক্ষা করছে।
‘উঠে পড়ো, বলল রবিন, তাড়া দিল সবাইকে।
ছেলেরা অ্যালার্টনে নেমে আগের দিনের ঝড়ের তাণ্ডবের চিহ্ন দেখল। চারদিকে ভেজা ডাল-পাতা ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে, আর পার্কিং লটের এখানে-ওখানে প্রচুর পরিমাণে পানি জমেছে।
‘খাইছে,’ বলে উঠল মুসা। ‘প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে!’
‘তো টমি যদি ট্রেইন থেকে ঝাঁপায়, তবে কোথায় যাবে?’ প্রশ্ন করল কিশোর। চিমটি কাটল নিচের ঠোঁটে। চারধার ভালভাবে নজর করে দেখল। এবার দৃষ্টিনিবদ্ধ হলো পার্কিং লটের ওপর। ‘ওখানে নয় তো?’
‘ছোট একটা কুকুরের পক্ষে কোন গাড়ির তলায় আশ্রয় নেয়াই স্বাভাবিক,’ বলল রবিন। আর ওয়ার্নরাও তেমনটাই বলছিলেন।’
‘চলো খুঁজে দেখি,’ বলল কিশোর।
একে-একে প্রতিটা গাড়ির নিচে সন্ধান করেও কোন সূত্র মিলল না। শেষমেশ ওরা সিদ্ধান্তে পৌঁছল টমি হয়তো রেললাইনের কাছাকাছি কোন গাড়ির তলায় লুকিয়েছে। তবে তেমন কোন গাড়ির চিহ্ন অবশ্য দেখল না।
এবার মুসা লটের পেছনদিকে পার্ক করে রাখা লালরঙা পুরানো এক ট্রাকের তলায় খুঁজল।
‘অ্যাই!’ চেঁচিয়ে উঠল, ‘মনে হচ্ছে একটা সূত্র পেয়েছি!’
অন্যরা হনহনিয়ে হেঁটে এলে, হাতে কিছু একটা নিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা-আরেকটা গ্র্যানোলা বারের মোড়ক।
‘কাল চতুর্থ বগিটায় ঠিক যেমনটা পেয়েছিলাম আমরা!’ বলল নথি।
‘পার্থক্য শুধু এটাকে ইচ্ছেমত চিবানো হয়েছে,’ বলে ওদেরকে কামড়ের ছোট-ছোট দাগগুলো দেখানোর জন্য মোড়কটা উঁচু করল মুসা। আর এটার ভেতরে এখনও খানিকটা গ্র্যানোলা বার রয়ে গেছে। ওয়্যাক!’
কিশোর বলল, ‘আমার মনে হয় টমিকে ট্রাকের তলা থেকে বের করতে এটার লোভ দেখিয়েছিলেন মিস্টার প্রাইস। ভয়ে হয়তো কাঠ হয়ে গিয়েছিল বেচারী কুকুরটা।’
অন্যরা মাথা ঝাঁকাল।
‘খাইছে, সেজন্যেই এটায় এত কামড়ের দাগ,’ বলল মুসা। এবার ওটা ছুঁড়ে ফেলল এক ডাস্টবিনে।
‘তবে তারা এখন কোথায় আছে তার ব্যাখ্যা কিন্তু মিলল না,’ বলল রবিন। ‘তোমরা কী বল?’
‘মিস্টার প্রাইস মিস্টার কিন নামে কার সাথে যেন দেখা করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মেসেজে,’ বলল মুসা।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। রাস্তার ওপাশের ফোন বুথটার দিকে তর্জনী দেখাল।
‘ওখানে ফোন বুক আছে। চলো দেখি অ্যালার্টনে লাস্ট নেম ‘কিন’ এমন কেউ আছে কিনা।
ছেলেরা ফোন বুক ঘেঁটে ‘কিন’ নামে দু’জনকে পেল। দু’জনকেই ফোন করবে ঠিক করল ওরা।
মুসা রিসিভার তুলল।
‘খাইছে, ডায়াল টোন নেই।’
‘ঝড়ের কারণে সম্ভবত বিকল হয়ে গেছে,’ বলল রবিন। ‘চলো কোন দোকানের ফোন ব্যবহার করা যায় কিনা দেখি।’
এসময় আচমকা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল মুসা।
‘কী হলো, মুসা?’ রবিন জানতে চাইল। ‘হাসছ যে?’
মুসা বলল, ‘মনে হয় ওই দোকানের লোকেরা আমাদের সাহায্য করতে পারবে।’
‘তাই? কোন্ দোকান?’ কিশোর জবাব চাইল।
রাস্তার ওদিক লক্ষ্য করে আঙুল নির্দেশ করল মুসা।
‘ওটা,’ বলল।
কোনায় বড়সড় এক সাইন নিয়ে দাঁড়ানো এক দোকান- ‘মি. কিন’স কফি শপ।
হাসতে-হাসতেই ভেতরে ঢুকল ছেলেরা। কফি আর স্ন্যাকসের সুঘ্রাণে ভরপুর ছোট্ট, ছিমছাম দোকানটা।
ওরা কাউন্টারে চারটে খালি টুল দখল করল। স্বর্ণকেশিনী এক তরুণী ওয়েট্রেস ওদেরকে দেখে এগিয়ে এল।
‘তোমরা কী খাবে বলো।’ ওর ইউনিফর্মের নেমপ্লেটে লেখা- ‘সুসান’।
প্রত্যেকে ওরা দুধ আর ছোটখাট ডেজার্টের অর্ডার দিল। কিশোর চাইল বেয়ার ক্ল, রবিন চেরি টার্নওভার। ডন ব্ল্যাক-অ্যাণ্ড- হোয়াইট কুকি।
এবং চিরক্ষুধার্ত মুসা দুটো কুকি।
সুসান প্লেটগুলো নামিয়ে রাখার পর জানতে চাইল, ‘আর কিছু চাই তোমাদের?’
‘আমরা একটা উদ্ভট প্রশ্ন করতে চাই,’ বলল রবিন।
‘তাই? তা কী সেটা?’
‘গতকাল, বিকেলের দিকে কি ছোট্ট এক কুকুর নিয়ে এক লোক এখানে এসেছিলেন?’
হেসে উঠল সুসান।
‘এসেছিলেন তো। উইলার্ড প্রাইস!’
ছেলেরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
‘আপনি চেনেন তাঁকে?’ প্রশ্ন করল রবিন।
‘অবশ্যই। আমরা সবাই চিনি। অ্যাই, স্টিভ!’
কিচেনের দরজা খুলে গেল এবং সাদা অ্যাপ্রন পরা এক লোক বেরিয়ে এল।
‘হ্যাঁ?’
‘এই ছেলেগুলো উইলের কথা জিজ্ঞেস করছে, উনি ওই কুকুরটা নিয়ে এখানে এসেছিলেন কিনা জানতে চাইছে।
স্টিভও খানিক হাসল।
‘উনি এখানে এলে সবসময়ই কোন না কোন ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে।’ বলল স্টিভ। ‘আমরা ওঁকে একটা তোয়ালে দিই যাতে ভীতু কুকুরটার গা মোছাতে পারেন। পিচ্চি কুকুরটা ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছিল। উইল ওটাকে ছোট এক বাটিতে করে দুধ খেতে দেন। ঝড় না থামা অবধি এখানেই ছিলেন কুকুরটাকে নিয়ে।’
‘উনি কি কাউকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন?’ মুসা শুধাল। ‘পারেননি,’ জানাল স্টিভ। ঝড় শুরুর পর থেকে ফোনগুলো সব বিগড়ে গেছে। মেইন লাইনে নিশ্চয়ই কোন গোলমাল হয়েছে।’
স্টিভ এবার দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেমবন্দি বড়সড় এক ফটোগ্রাফের উদ্দেশে আঙুল দেখাল।
‘ওই দেখো, উনি এখানে বহু বছর ধরেই আসছেন।’
ওটা মি. প্রাইসের আরেকটি ছবি। একদম নিচে তিনি লিখেছেন, স্টিভ আর সুসানকে, গোটা উত্তর-পুবে যারা সবসেরা কফি বানায়।
তোমাদের বন্ধু, উইলার্ড প্রাইস।
ওটার ঠিক পাশেই, ছেলেদের নজরে পড়ল, স্থানীয় আরেক বিখ্যাত লেখকের অটোগ্রাফ দেয়া ফটোগ্রাফ-ওয়েসলি হল।
তিনি লিখেছেন, উইলের প্রতিটি কথার সঙ্গে আমি একমত।