নিকষছায়া – ২৫

২৫

পল্লবের ফ্ল্যাটে তিতাসের প্রিয় জানালাটার কাছে বসেছিল তিতাস আর পল্লব। একদম প্রপার কোলকাতায় হলেও পল্লবের ফ্ল্যাটের চারপাশটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা। অনেক গাছপালা আর কিছু দূরে দূরে কয়েকটা পুরনো বাড়ি। সরকার থেকে দয়া করে এখানে এখনও সাদা ফ্যাটফ্যাটে আলো লাগিয়ে দেয়নি, তাই সোডিয়ামের হলুদ আলোয় নরম রোম্যান্টিক হয়ে ওঠে সন্ধেগুলো। তিতাসের গায়ে গা ঘেঁষেই বসেছিল পল্লব। তিতাস বলল, তুই সারাক্ষণ এমন গায়ে উঠিস কেন বল তো? সরে বোস না।

মোটেই সরে বসল না পল্লব। আরও একটু ঘেঁষে গিয়ে বলল, তুই এই সব ধুন্ধুমার ওষুধের কথা জানলি কী করে বল তো?

ইডিয়টের মতো কথা বলিস না পল্লব। আমি ডাক্তার। তা ছাড়া, মেয়েরা ও সব জানে।

তুই আগে কখনও খেয়েছিস এ সব ওষুধ?

হ্যাঁ, এক বার খেয়েছিলাম।

কবে?

যে বার প্রথম আমি আর তুই কালিম্পং গেলাম সে বার। সে বার ওই সময়টাতেই পিরিয়ডসের ডেট পড়েছিল। ওষুধ খেয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

চমকে সোজা হয়ে বসল পল্লব। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তিতাসের দিকে।

তিতাসের চোখে খেলে গেল কৌতুকের ঝিলিক। সে বলল, ঠিক ভাবছিস। আসলে, তোমাকে দুঃখিত করা আমার জীবনধর্ম নয়…

কথা শেষ করতে পারল না তিতাস। চুমু খাওয়ার সময় কথা বলা যায় না।

সমাপ্ত

.

পরিশিষ্ট

(মিতুল উদ্ধারের দু’বছর পর)

বুবু আজ দারুণ খুশি। তার খুব শখ ছিল একটা বেড়ালছানা পোষার। কিন্তু সে মোটে ক্লাস টু-তে পড়ে বলে কেউ তার কথায় কান দিচ্ছিল না। শেষমেশ এক জন তার কথা শুনেছে এবং সত্যি সত্যি একটা ফারের বল বেড়ালছানা এনে দিয়েছে। তার বুদ্ধিতেই গ্যারাজের পেছনে যে জায়গাটা আছে সেখানেই বেড়ালছানাটাকে রেখেছে বুবু। একটু দুধও খাইয়ে এসেছে। যে এত বড় শখ মিটিয়েছে তাকে তো কিছু দিতে হয়। তাই একটা বড় চকোলেট নিয়ে বুবু বলল, নাও গো দাদু।

যাকে বুবু দাদু বলছে সে ওদের বাড়ির জমাদার। কোমরে চোট লেগেছিল বলে সোজা হয়ে চলতে পারে না। জমাদার দাদু বলল, এ সব চাই না দিদিভাই। অন্য একটা জিনিস চাইব। দেবে?

কী গো দাদু?

বলছি। আগে বলো কাউরে বলবা না। তোমার বেড়ালের দিব্যি। যদি বলো বেড়ালটা কিন্তু…

না না, কাউক্কে বলব না। বলো না তোমার কী চাই?

তোমার মাথা থেকে তিনটে চুল চাই। দেবে?

হি হি করে হেসে উঠল বুবু, এটা একটা চাওয়ার মতো জিনিস হল? নাও নাও। তবে আমার লাগবে না তো?

না দিদিভাই, এই বলে বুবুর মাথা থেকে নরম হাতে তিনটে চুল তুলে নিল বুবুদের জমাদার। তার পর এক গাল হেসে বলল, যাও দিদিভাই। এ বার তোমার ছুটি।