নিকট ভবিষ্যৎ (বর্তমান – ২০৩০)
প্রযুক্তির চারটি ধাপ বা পর্যায়
সামাজিক অবস্থা ও চারটি বলকে আয়ত্তে নেওয়ার সমন্বয়ে ইউরোপ বিশ্বের সম্মুখ সারির জাতিতে পরিণত হয়। কিন্তু প্রযুক্তি চলমান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। এদের সৃষ্টি হয়, ব্যবহার হয় এবং উত্থান ও পতন ঘটে। নিকট ভবিষ্যৎ কে কী কী প্রযুক্তি পরিবর্তন করে দেবে, তাই কীভাবে প্রযুক্তি বিবর্তনের কিছু সূত্র মেনে চলে তা জানা উচিত।
গণপ্রযুক্তি সাধারণত চারটি প্রাথমিক ধাপে বিকশিত হয়। এই কাগজের বিবর্তন, চলমান পানি, বিদ্যুৎ ও কম্পিউটার। প্রথম পর্যায়ে, প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যগুলোর দাম বেশি হয় যা দ্রব্যগুলোকে স্থির করে রাখে। যখন প্রাচীন মিশরীয়দের দ্বারা কাগজ আবিষ্কৃত হয়েছিল পেপিরাস থেকে, এবং তারপরে হাজার বছর পূর্বে চীনাদের দ্বারা আবিষ্কৃত পেপিরাস বেশ কয়েকজন পুরোহিত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। এই প্রযুক্তির বিকাশ প্রচীন সভ্যতাকে গতিময় করেছিল।
১৪৫০ সালে কাগজ দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করে যখন গুটেনবার্গ প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কার করে চলমান টাইপিংয়ের মাধ্যমে এই ব্যাখ্যাগত বই প্রকাশকে শুরু করে, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কয়েকশ ধরনের জ্ঞানকে বইয়ের মাধ্যমে ধারণ করতে পারত। গুটেনবার্গের আগে সমগ্র ইউরোপে মাত্র ৩০০০ বই ছিল, ১৫০০ সালের দিকে ৯ মিলিয়ন বই ছিল, যা বুদ্ধিগত আলোড়ন তোলে তীব্রভাবে এবং নবজাগরণকে উদ্দীপ্ত করে।
কিন্তু ১৯৩০ সালের দিকে, কাগজ তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছায় যখন প্রতিটি পৃষ্ঠার দাম মাত্র ১ পয়সায় গিয়ে দাঁড়ায়। এটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার সৃষ্টি করেছে যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি শত শত বই রাখতে পারেন। কাগজ একটি সাধারণ পণ্যে পরিণত হয়, টনকে টন বিক্রি হয়। এখন সর্বত্র কাগজ বিদ্যমান দৃশ্যমান বা অদৃশ্য রাখে। এখন আমরা চতুর্থ পর্যায়ে, যেখানে ফ্যাশন হিসেবেও কাগজ রয়েছে। আমরা নানা ধরনের রঙিন কাগজ, বিভিন্ন আকার আকৃতির কাগজ দ্বারা সজ্জিত। শহরের সবচেয়ে বড় বর্জ্য কাগজ। তাই কাগজ একটি সংরক্ষিত পণ্যে থেকে বর্জ্য পণ্যের মতো বিকশিত হয়েছে।
একই ঘটনা ঘটেছে চলমান পানির ক্ষেত্রে। প্রাচীন কালে, প্রথম পর্যায়ে, পানি খুবই মূল্যবান ছিলো- একটি কূপ পুরো গ্রামের সবাই ব্যবহার করত। এটি প্রায় হাজার হাজার বছর ধরে এমন চলেছে, ১৯০০ সালের শুরুর আগ পর্যন্ত। যখন আমাদের ব্যক্তিগত কূপ ছিলো এই দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, চলমান পানি, তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করে। এটি সস্তায় পরিণত হয়। মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে আসে। আজ চলমান পানি, চতুর্থ ধাপে, রয়েছে এটি ফ্যাশন প্রক্রিয়ার মতো, অসংখ্যভাবে বিভিন্ন আকার ও আকৃতিসহ এবং বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। আমরা পানি দ্বারা ঝর্ণা নির্মাণ করি, সজ্জিত করে প্রদর্শিত করি এখন।
বিদ্যুৎ ও ঠিক একইভাবে ধাপসমূহ অতিক্রম করেছে। থমাস আলভা এডিসন ও অন্যদের অগ্রণী কাজের মাধ্যমে এটি পর্যায়। এটা ছিলো যখন একটি কারখানায় একটি মাত্র লাইট ও ইলেকট্রিক মটর ছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করি যখন ব্যক্তিগতভাবে লাইট বাল্ব ও মটর ছিলো। আজ বিদ্যুৎ শব্দটি ইংরেজি ভাষা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে—এটি সর্বত্র আছে বা কোথা নেই। এমনকি বিদ্যুৎ শব্দটি ইংরেজি ভাষা থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে। ক্রিসমাসে আমরা আমাদের গাড়িগুলোকে শত শত জ্বলজ্বলকারী আলোক দ্বারা সজ্জিত করি। আমরা ধরে নিই বিদ্যুৎ আমাদের প্রাচীরসমূহের মধ্যে লুকিয়ে আছে, সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এটি এখন ট্রেন্ডের মতো রাস্তাঘাটসহ পুরো পৃথিবীকে সজ্জিত করে রেখেছে।
চতুর্থ পর্যায়ে, পানি ও বিদ্যুৎ দুটোই ব্যবহার্য পণ্য বা উপযোগে পরিণত হয়েছে এগুলো এতই সস্তা হয়েছে আমরা এগুলোর প্রচুর ব্যবহার করি। আমরা আমাদের বাড়িতে পানি ও বিদ্যুৎ পরিমাপের জন্য মিটার ব্যবহার করি।
কম্পিউটার একইভাবে পর্যায়সমূহ অনুসরণ করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এটি বুঝতে পেরেছে তারা সমৃদ্ধ এবং উন্নত হয়েছে। যারা বুঝতে পারেনি তারা ছিটকে পড়েছে। IBM প্রথম পর্যায়টি নিয়ন্ত্রণ করে ১৯৫০ সালের দিকে একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার দ্বারা। একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার এতটা দামি ছিলো যে কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রকৌশলী একসাথে ব্যবহার করেছেন। যাহোক আইবিএম এর ব্যবস্থাপকেরা মুরের সূত্রকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় এবং মোটামুটি দেউলিয়া হয়ে যায় যখন আমরা ১৯৮০ দিকে ব্যক্তিগত কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করি।
কিন্তু যখন ব্যক্তিগত কম্পিউটার উৎপাদনকারীরা সন্তুষ্টিতে ভোগেন। তারা কল্পনা করেছিলেন প্রতিটি ডেসকে একটি করে কম্পিউটার থাকবে। তারা একজন পাহারাদারের মতো ছিলেন তৃতীয় পর্যায়ের পূর্বে। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ে একটি কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হয়ে গড়েছে। আজ একটি একক কম্পিউটার পাবেন শুধু জাদুঘরে।
সুতরাং, কম্পিউটারও অবশেষে চতুর্থ পর্যায়ে প্রবেশ করবে যেখানে এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং ফ্যাশনের মতো হয়ে পুনরায় সৃষ্টি হবে। আমরা আমাদের পৃথিবীকে কম্পিউটার দ্বারা সাজাব। খুব পরিচিত ‘কম্পিউটার’ শব্দটি ইংরেজি ভাষা থেকে হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে শহরে এলাকায় মূল বর্জ্য হবে চিপস্, কাগজ নয়। কম্পিউটারের ভবিষ্যৎ হবে এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একটি উপযোগে পরিণত হবে, বিদ্যুৎ ও পানির মতো বিক্রি হবে। কম্পিউটার চিপসও অদৃশ্য হয়ে যাবে “ক্লাউড” কম্পিউটিংয়ের কারণে।
সুতরাং কম্পিউটারের বিবর্তন কোনো রহস্য নয়। বিদ্যুৎ, কাগজ ও পানির মতো পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এখন বিবর্তনের ধারায় রয়েছে। অর্থনীতিবিদ জন স্টিলি গর্ডন বলেছিলেন এই বিপ্লব যখন শেষ হয়ে যাবে তখন “স্বর্গ এসে যাবে, না। এটি শত শত বছর পিছনে নিয়ে যাবে যে সময়ে- তা ছিল স্টিম ইঞ্জিনের মতো। আমরা তখন এমন এক জায়গায় অবস্থান করছি সেটি ছিলো ১৮৫০ এর মতো রেলওয়ের রাস্তার। এটি কেবল শুরু মাত্র।”
সমস্ত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নয়, আমাদের একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয় তা হলো এখনো তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপে, পরিবহন সেক্টরের কথা ধরা যাক।
১৮০০ সালের শুরুর দিকে স্টিম ইঞ্জিনের আবিষ্কারের ফলে যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবস্থার প্রযুক্তিগুলো প্রথম পর্যায়ে প্রবেশ করেছিলো। শত শত মানুষ একটি পরিবহন ব্যবহার করত। ব্যক্তিগত গাড়ির মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছি যা প্রাইভেট গাড়ি হিসেবে পরিচিত ১৯০০ সালের শুরুতে। কিন্তু অন্যান্য পরিবহন এবং গাড়ি একই রকম রেলের বগি বা চাকা—গত কয়েক দশকে খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি। যে পরিবর্তনটি হয়েছে তা শুধু নতুন সংস্করণ যেমন এর শক্তি বৃদ্ধি এবং ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং সাথে সাথে এর বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি। সুতরাং ঐ সমস্ত প্রযুক্তি যা তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে প্রবেশ করবে না তা হারিয়ে যাবে। উদাহরণ স্বরূপে আমরা এগুলোর মাঝে চিপস স্থাপন করতে পারি। এগুলো বুদ্ধিমান করলে কিছু প্রযুক্তি চতুর্থ পর্যায়ে বিবর্তিত হবে, বিদ্যুৎ কম্পিউটার, কাগজ এবং পানির মতো। অন্যগুলো তার পূর্বের পর্যায়ে থেকে যাবে কিন্তু তাদের বিবর্তন প্রক্রিয়া চলবে তাদের উন্নয়নের মাধ্যমে যেমন চিপস্ স্থাপন ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
কেন উত্থান ও পতন?
কিন্তু বর্তমানে, ২০০৮ সালের বিশাল মন্দার পরে অনেকে বলতে শুরু করেছেন-এসব অগ্রগতি একটি মরিচীকার মতো আমাদের সাধারণতর জীবনে ফিরিয়ে নেয় যেখানে পদ্ধতিগত মৌলিক কোনো ত্রুটি বিদ্যমান।
দীর্ঘকালীন ইতিহাসের দৃষ্টিতে, এটি সহজে বোঝায় যায় এই অপ্রত্যাশিত মন্দাটি যা বিদ্যমান অগ্রগতির পরে হঠাৎ বিপর্যয় যার উৎস নির্ধারণ করা যায় না। এটি এলামেলো বিষয় যা মানুষের ভাগ্যের বিপর্যয় এবং বোকামির উপজাত। ইতিহাসবিদ এবং অর্থনীতিবিদরা ২০০৮ সালের বিপর্যয়কে বিভিন্ন কারণ, বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করেছেন— যেমন মানুষের চরিত্র, লোভ, দুর্নীতি, আইনের অভাব, দূরদৃষ্টি, সম্পর্ক, দুর্বলতা ইত্যাদি।
যাহোক, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই মহামন্দাকে আমি ভিন্নভাবে দেখি দীর্ঘমেয়াদি, দ্য অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপেডিয়া অব ইকোনমিক হিস্টোরিতে উল্লেখ করা হয়েছে—
১৭৮০ সালের পরে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার আয়ের বৃদ্ধির ৯০ শতাংশ হারে প্রযুক্তিগত উত্থানের জন্য, সম্পদ আহরণের মাধ্যমে নয়। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা হাজার বছর পিছনে অন্ধকার অতীতে নিক্ষিপ্ত হব। কিন্তু বিজ্ঞান সবসময় একই রকম থাকে না, এটি তরঙ্গের মতো আসে। একই সময়গত ব্রেক থ্রু (উদাহরণস্বরূপ, স্টিম ইঞ্জিন, লাইট বাল্ব, ট্রানজিস্টর) প্রায়ই দ্বিতীয় কোন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে যা পরবর্তীতে উদ্ভাবন এবং অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। যেহেতু এসব উদ্ভাবন প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি করে তার দোলা অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হয়।
প্রথম বড় তরঙ্গটি হলো বাষ্পীয় শক্তি যা মূলত পরিবহন ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে। বাষ্পীয় শক্তি শিল্পবিপ্লবকে অনুরণিত করেছে, যা সমাজকে পুরো উল্টে দিয়েছে। প্রচণ্ড পরিমাণে সম্পদ সৃষ্টি হয় বাষ্পীয় শক্তির করণে। কিন্তু পুঁজিবাদের সূত্রানুসারে সম্পদ কখনো স্থির থাকে না। সম্পদ স্থানান্তরিত হয়। পুঁজিবাদীরা সবসময় অতীত অতিক্রম করতে চায় সম্পদ বৃদ্ধি করতে নতুন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করে যা অনেক সময় বিপর্যয় ঘটায়।
১৮০০ শতকের শুরুর দিকে, বাষ্পীয় শক্তি ও শিল্প বিপ্লবের করণে প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি হয় যা লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ স্থানান্তরিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, বুদবুদটি এখানেই সৃষ্টি হয় বেশকিছু অটোমোবাইল কোম্পানি লন্ডন এক্সচেঞ্জ হাউজে বিনিয়োগ করে। ভার্জিনিয়া পোস্ট্রেল, নিউইয়র্ক টাইমসের বাণিজ্য বিষয়ক লেখক লিখেছিলেন—”এক শতাব্দী আগে রেলগাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো নিউইয়র্ক স্টক একচেঞ্জের অর্ধেক সিকিরিটিজের মালিক ছিলো।” যেহেতু অটোমাবাইল কোম্পানিগুলো এখন কল্পনাবিলাসী, বুদবুদটিও তাই টেকসই নয় এবং শেষমেষ ফেটে গিয়ে ১৮৫০ সালে একটি পতন ঘটায় যা পুঁজিবাদের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিপর্যয়। এটি আরও ছোট ছোট বিপর্যয় সৃষ্টি করে প্রায় প্রতি দশকে। যা শিল্প বিপ্লবের কারণে সৃষ্ট সম্পদের ছোট ছোট দেউলিয়াত্ব।
কিন্তু ব্যতিক্রমটি হলো : ১৮৮০ দশক থেকে ১৮৯০ এর দশক ছিলো রেলপথের কোম্পানিগুলোর জন্য শুরুর সময়। সুতরাং ১৮৫০ যে বিপর্যয় ঘটেছিলো তা বিজ্ঞানের মাধ্যমে সৃষ্ট উৎসাহ ও সম্পদের কারণে। কিন্তু এর ফলে পৃথিবীকে রেল সমৃদ্ধ করতে বেশ কয়েক দশক সময় লাগে।
থমাস ফ্রিডম্যান লিখেছেন- ঊনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকায় একটি রেল কোম্পানিদের দ্বারা বুদবুদ সৃষ্টি হয় শুরুতে এবং বিস্ফোরিত হয়- কিন্তু তখন বুদবুদটি বিস্ফোরিত হয় এটি ব্যতিক্রমিকভাবে আমেরিকার তখন রেলপথ নির্মিত হয় আন্তঃমহাদেশ ভ্রমণ এবং পরিবহন আরও সহজ এবং সস্তা হয়।
পুঁজিবাদীরা এই শিক্ষাটি না নেওয়ার কারণে দ্রুত আরেকটি ধাক্কা আসে। এডিসন এবং ফোর্ড এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক এবং অটোমোবাইল প্রযুক্তির উন্নয়নের দ্বিতীয় ধাক্কাটি আসে। ফ্যাক্টরিসমূহ, ঘরবাড়ি বিদ্যুতায়িত হয় এবং মডেলটি এর প্রসারে, আবার একটি বিশাল সম্পদ সৃষ্টি হয়। সব সময়ই, অতিরিক্ত সম্পদ অন্য কোথাও স্থানারিত হয়। এই ক্ষেত্রে, এটি ইউএস স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ হয়, একইটি ব্যবহার্য পণ্য ও অটোমোবাইলের বুদবুদরূপে। মানুষ ১৮৫০ সালের শিক্ষাটি ভুলে গিয়েছিলো। যেহেতু এটি আশি বছরের পুরোনো ঘটনা। ১৯০০ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে অটোমোবাইল কোম্পানি ৩০০০ টি হয়ে যায়, যা বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিলো না। এই কারণসহ অন্যান্য কারণে ১৯২৯ সালে বুদবুদটি বিস্ফোরিত হয় একটি বড় অটোমোবাইল মন্দা সৃষ্টি করে।
কিন্তু ব্যতিক্রম হিসেবে এটি আমেরিকা এবং ইউরোপ বিদ্যুয়নের পথে হাটে নি বরং ১৯৫০ এবং ১৯৬০ দশক পর্যন্ত এই সময় নেয়।
অতি সম্প্রতি, আমাদের বিজ্ঞানের তৃতীয় আরেকটি ধাক্কা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, হাইটেক এর উন্নয়নে কম্পিউটার, লেজার, মহাকাশ স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট এবং ইলেকট্রনিক এসবের। প্রচুর পরিমাণ সম্পদ সৃষ্টি করছে এই হাইটেক প্রযুক্তি যেখানে যায় সেখানেই। এক্ষেত্রে, এটি রিয়েল এস্টেট, যা প্রচুর বড় বুদবুদ সৃষ্টি করছে। রিয়েল এস্টেট এর ব্যাপক সম্ভাবনা দেখে মানুষ ধার দেনা করতে শুরু করছে তাদের এই সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক থেকে যা বুদ বুদকে আরও ত্বরান্বিত করে। অবিবেচক ব্যাংকাররা তাদের বাড়িঘর বন্ধক রেখে ঋণ প্রদান করে বুদবুদ তৈরিতে আরও পানি সরবরাহ করছে। পুনরায়, মানুষ ১৮৫০ এবং ১৯২৯ এর ঘটনা দুটোকে ১৬০ এবং ৮০ বছর আগে ঘটেছিলো তা ভুলে যায়। যার ফলস্বরূপ নতুন বুদবুদটিও টেকসই হতে ব্যর্থ হয় এবং ২০০৮ সালে বিশাল অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করে।
থমাস ফ্রিডম্যান লিখেছেন, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে একটি অর্থনৈতিক বুম, বুদবুদ দেখা যায় এবং এটি বিস্ফোরণ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে কিন্তু আমি ভয় পাই যে কারণ এটির পেছনে একটি ফাঁকা ফ্লোরিডা কনডস রয়েছে যা কখনো পুনরায় নির্মিত হবে না, ব্যক্তিগত জেট বিমান ব্যবহারকারীরা সম্পদশালী থাকবে না এবং মানুষকে অসহায় থাকতে হবে যা কেউই বুঝতে পারছে না।”
কিন্তু সাম্প্রতিক মন্দা নিয়ে ছোটখাটো এসব ভুল আমলে না নিয়ে বরং ব্যতিক্রমী হলো ২০০৮ সালের পরে সংযুক্তকরণ এবং নেটওয়ার্কিং এর পথ প্রশস্ত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির আরও সুসময় এখনও অনেক বাকি আছে।
এটি আরেকটি প্রশ্নের জন্ম দেয় চতুর্থ ধাক্কটি কী? কেউ নিশ্চিত নয়। এটি সম্ভবত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ব্যায়ো টেকনোলজি। এটি পূর্বের ধাক্কাগুলোর সাথে, এটি আরও আশি বছর হয়তো সময় নেবে প্রচুর সম্পদের তরঙ্গ সৃষ্টি করতে। ২০৯০ সালের দিকে, আশা করি, মানুষ তার পূর্বের আশি বছরের ঘটনাকে উপেক্ষা করবে পুনরায়।