নাচের বাতিক

নাচের বাতিক

বয়স হল অষ্টাআশি, চিম্‌‌সে গায়ে ঠুন্‌‌কো হাড়,
নাচ্‌‌ছে বুড়ো উল্টোমাথায়- ভাঙলে বুঝি মুণ্ডু ঘাড় !
হেঁইয়ো ব’লে হাত পা ছেড়ে পড়ছে তেড়ে চিৎপটাং,
উঠ্‌‌ছে আবার ঝট্‌পটিয়ে এক্কেবারে পিঠ সটান্‌ ।
বুঝিয়ে বলি, “বৃদ্ধ তুমি এই বয়েসে করছো কি ?
খাও না খানিক মশ্‌লা গুলে হুঁকোর জল আর হর্‌তকী ।
ঠাণ্ডা হবে মাথার আগুন, শান্ত হবে ছট্‌ফটি-“
বৃদ্ধ বলে, “থাম না বাপু, সব তাতে তোর পট্‌পটি !
ঢের খেয়েছি মশ্‌লা পাঁচন, ঢের মেখেছি চর্বি তেল ;
তুই ভেবেছিস আমায় এখন চাল্‌ মেরে তুই করবি ফেল ?”
এই না ব’লে ডাইনে বাঁয়ে লম্ফ দিয়ে হুঁশ ক’রে
হঠাৎ খেয়ে উল্টোবাজি ফেল্‌‌লে আমায় ‘পুশ’ ক’রে ।

“নাচ্‌‌লে অমন উল্টো রকম,” আবার বলি বুঝিয়ে তায়,
“রক্তগুলো হুড়্‌হুড়িয়ে মগজ পানে উজিয়ে যায় ।”
বললে বুড়ো, “কিন্তু বাবা, আসল কথা সহজ এই-
ঢের দেখেছি পরখ করে কোথাও আমার মগজ নেই ।
তাইতো আমার হয় না কিছু- মাথায় যে সব ফক্কিফাঁক-
যতটা নাচি উল্টো নাচন, যতই না খাই চর্কিপাক ।”
বলতে গেলাম, “তাও কি হয়”- অম্নি হঠাৎ ঠাং নেড়ে
আবার বুড়ো হুড়মুড়িয়ে ফেললে আমায় ল্যাং মেরে ।
ভাবছি সবে মারব ঘুঁষি এবার বুড়োর রগ্‌ ঘেঁষে,
বললে বুড়ো, “করব কি বল্‌ ? এ সব করায় অভ্যেসে ।
ছিলাম যখন রেল-দারোগা চড়্‌তে হত ট্রেইনেতে
চলতে গিয়ে ট্রেনগুলো সব পড়ত প্রায়ই ড্রেইনেতে ।
তুব্‌ড়ে যেত রেলের গাড়ি লাগত গুঁতা চাক্কাতে,
ছিট্‌কে যেতাম যখন তখন হঠাৎ এক এক ধাক্কাতে ।
নিত্যি ঘুমাই এক চোখে তাই, নড়লে গাড়ি- অম্নি ‘বাপ্‌-
এম্‌নি ক’রে ডিগবাজিতে এক্কেবারে শূন্য লাফ ।
তাইতে হল নাচের নেশা, হঠাৎ হঠাৎ নাচন পায়,
বসতে শুতে আপ্‌নি ভুলে ডিগ্‌বাজি খাই আচম্‌কায় !
নাচতে গিয়ে দৈবে যদি ঠাং লাগে তো পাঁজরাতে,
তাই ব’লে কি চটতে হবে ? কিম্বা রাগে গজ্‌রাতে ?”
আমিও বলি, “ঘাট হয়েছে, তোমার খুরে দণ্ডবৎ !
লাফাও তুমি যেমন খুশি, আমরা দেখি অন্য পথ ।”