নয়নাগিরি অভিযান – ৫

পাঁচ

পল্টন আর গৌতম তখন খোশগল্পে মেতে উঠল সদাশিববাবুর সঙ্গে। এমন রসিক এবং আলাপী মানুষ খুব কমই দেখেছে ওরা। একথা সেকথার পর সদাশিববাবু বললেন, তোমরা ছেলেমানুষ। কী আর বলব বাবা তোমাদের। বিয়েটা ভালয় ভালয় মিটে গেলে যেন বাঁচি। দিনকাল এত খারাপ পড়ছে যে, তা বলবার নয়। মস্তান-গুন্ডার দাপটে এখানে বাস করা দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এই এলাকাটা খুবই খারাপ। না হলে এতবড় বাড়ি থাকতে এতখানি জায়গা থাকতে, কখনও অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে নাতনির বিয়ে দিই। ,

পল্টন বলল, আমিও তাই অবাক হয়ে গেলাম।

বাবলির বিয়ের যেদিন ঠিক হল সেইদিনই একটা চিঠি এল গফুরগুন্ডার কাছ থেকে। বিয়ের দিন ওকে নগদ দশ হাজার টাকা দিতে হবে আর পঞ্চাশজন লোককে খাওয়াতে হবে। এটা না হলে বরকনেকে বেরোতেই দেবে না এই গলির ভেতর থেকে।

সে কী!

তবে আর বলছি কী। তা ছাড়া এই যে মেয়েটিকে দেখলে গোপা, একে নিয়েও কী কম ঝামেলা?

কেন? ওকে নিয়ে আবার ঝামেলা কীসের?

মেয়েটাকে উঠোনে, ছাদে দেখলেই আশপাশ থেকে ঢিল ছুড়ছে। পরের মেয়ে। কী জ্বালা বলো তো?

গৌতম বলল, ওর অপরাধ?

অপরাধের ব্যাপার তো নয়। আসলে মেয়ে একটু বড় হলেই এই সব এলাকায় থাকা বিপদ। বাবলিটাকে যে কীভাবে আগলে রেখেছিলুম তা ভগবান জানেন। এবার শুভ কাজটা ভালয় ভালয় মিটে গেলে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।

পল্টন ও গৌতম ভীষণ উত্তেজিত হল।

পল্টন বলল, হোত আমাদের ওখানে…।

এমন সময় দড়াম করে বাড়ির উঠোনের ওপর একটা ইট এসে পড়ল। সদাশিববাবু বললেন, এই চলছে।

এ কী অসভ্যতা?

আসলে ওই যে টাকাটা দেওয়া হয়নি। তার ওপর বিয়ের দু’দিন আগে থেকেই সরে গেছি সব। সেই রাগে কী যে করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। তাই যত রাগ ওদের গোপার ওপর। মেয়েটাকে তুলে নিয়ে যেতে পারলে বুঝি বাঁচে।

গৌতম বলল, গোপার বাড়ি কোথায় ?

কাশীতে। দু’দিন মাত্র এসেছে। এই দু’দিনেই দু’অবস্থা করে ছেড়েছে ওর। আজ বিয়েটা মিটলে আমি ভাবছি কাল সকালে অথবা পরশুই বাড়ি পাঠিয়ে দেব ওকে। পল্টন বলল, ওর মা-বাবা আসেননি?

বাবা তো নেই। মা আসতে পারেননি শরীর খারাপের জন্য। ও একাই এসেছে।

সে কী! কাশী থেকে একা এসেছে?

ও তো প্রায়ই আসে। কাশী তো এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মেল এক্সপ্রেসে তিন-চার ঘণ্টার পথ।

পল্টন বলল, সেই ভাল। ওকে বরং বাড়িই পাঠিয়ে দিন। তবে একা ছাড়বেন না। সঙ্গে কেউ যাবেন।

কে যাবে বাবা? তবে খোকা গিয়ে ওকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবে। খোকা হচ্ছে সত্যসুন্দরবাবুর ডাকনাম।

গৌতম বলল, সে না হয় হল। কিন্তু গফুরগুন্ডার যেরকম রাগ দেখছি আপনাদের ওপর তাতে বিয়ের পরে আপনারা কী করবেন?

সেই ভয়েই তো আমি ঘুমোতে পারছি না বাবা। আমি তো ঘর থেকে বেরোতে পারি না। বেরোইও না। কিন্তু বউমা ঘরে থাকে। খোকা অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে। আমার ভয় যে খোকাকে নিয়ে। কী যে হবে তা ভগবানই জানেন। অথচ বাড়ি বেচে দিয়ে চলে যাবারও নয়। এতবড় বাড়ি কিনবে কে?

পল্টন বলল, আপনারা থানায় কোনও রিপোর্ট করেননি গফুরের নামে? ওরে বাবা। থানা-পুলিশ করলে রক্ষে আছে? গোটা বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। তা ছাড়া এদের গাঁটছড়া তো পুলিশের সঙ্গেই বাঁধা। পুলিশ সহায় না হলে ওরা কখনও এত বাড় বাড়তে পারে?

ওরা ওখানে কোনও ঝামেলা করবে না?

না। কদমকুঁয়াটা ওদের এলাকার বাইরে।

সদাশিববাবু বললেন বটে, তবুও পল্টন-গৌতমের মন আশ্বস্ত হল না। কদমকুঁয়া গফুরগুন্ডার এলাকার বাইরে হলেও, ও যদি ভয়ানক হয়, তা হলে আতঙ্কের গ্যাসও সেখানেও ছড়াবে। কারণ কদমকুঁয়া দরিয়াপুর-বস্তির বাইরে হলেও পাটনা শহরের বাইরে তো নয়।

এমন সময় বাইরের দরজায় দমাদুম লাথি পড়ল কয়েকটা।

ভীতা হরিণীর মতো ছুটে এসে ঘরে ঢুকল গোপা।

পল্টন ও গৌতম তাকাল গোপার দিকে।

এর আগে যখন চা দিতে এসেছিল তখন ওরা ভাল করে দেখেনি গোপাকে। আসলে দেখার ব্যাপারে মনোযোগ দেয়নি। ভেবেছিল কে না কে। এখন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় অবস্থাটা উপলব্ধি করেই গভীর সহানুভূতিতে ভরে উঠল ওদের মন।

গৌতম অনিমেষে তাকিয়ে রইল ওর মুখের দিকে।

ওরা সদাশিববাবুর দিকে তাকাল।

দরজায় আবার দুম দুম শব্দ।

পল্টন ও গৌতম রুখে দাঁড়াল দু’জনেই।

সদাশিববাবু বললেন, খবরদার, সামনে যেয়ো না ওদের। পল্টন বলল, তাই বলে ওদের এই বেয়াদপি সহ্য করতে হবে? উপায় নেই। আসলে খোকাকে ওরা বাইরে যেতে দেখেছে। কিন্তু ভোরবেলা তোমাদের আসতে দেখেনি। তাই ভেবেছে এখানে বাধা দেবার কেউ নেই। যা খুশি করবে।

পল্টন আর গৌতম এগিয়ে গেল দু’জনেই। গিয়ে চুপিসাড়ে দরজার ছিটকিনিটা খুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল দরজার দু’পাশে।

খানিক বাদেই হঠাৎ দরজায় একটা লাথি। আর লাথি মারার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ থুবড়ে উঠোনের ওপর এসে পড়ল একজন।

যেই না-পড়া পল্টন অমনি ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর। তারপর একেবারে বুকের ওপর চেপে বসেই দু’হাতে গলাটা টিপে ধরল তার।

যেটা পড়েছিল সেটা একটা ঘোড়ামুখো পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের যুবক। ঘোড়ার মতো মুখে গাধার মতো চেঁচাতে লাগল। ব্যাপারটা যে এমন হবে সে বোধহয় আগে বুঝতে পারেনি। ওর চেচানিতে আরও কয়েকজন যুবক এসে হাজির হল সেখানে। গলায় রুমাল বাঁধা। মস্তান চেহারা। প্রায় চার পাঁচজন।

একজন বলল, ক্যা রে বে। ইয়ে দোনো কাঁহাসে আ গিয়া?

গৌতম তখন টেনে একটা ঘুসি মেরেছে মস্তানটার মুখে। মারের নিয়মই হচ্ছে সাহস করে যে প্রথমে মারে সেই জেতে। তাই যারা মারতে অভ্যস্ত তারা মার খেলেই ঘাবড়ে যায়। বিশেষ করে এই খালি বাড়িতে দু’জন অল্পবয়সি কিশোরের হাতে মার খেয়ে শুধু ঘাবড়ে যাওয়া নয়, রীতিমতো অবাকও হয়ে গেল। কোনওরকমে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করল, তু–তু—তু কৌন?

গৌতম বলল, মেরা জবাব তেরা মু’পর দে দিয়া। আভি পুছতা হ্যায় ম্যায় কৌন? তো ইয়ে দেখ, বলেই পেটে একটা লাথি।

গৌতমের ফুটবল খেলা বলিষ্ঠ পায়ের লাথি সে সহ্য করতে পারবে কেন? তাই ‘আঁক’ করে পেটধরে বসে পড়ল সে।

অন্যান্য যারা ছিল তারা ন্যাকার মতো ‘হুয়া ক্যা। ক্যা তামাশা হো রহে হিয়া পর’ বলে দু’জনকেই ধরাধরি করে তুলে দাঁড় করাল।

একজন বলল, বাঙালি ভাই, এ কাম তু নে আচ্ছা নেহি কিয়া।

গৌতম বলল, ফির মারেগা, বহুত মারেগা। যা ভাগ। বুলা তেরি গফফুর বাবাকো। হট হিয়াসে।

আর কিছু বলতে হল না। খেঁকি কুকুরের মতো গলা করে বীরপুঙ্গবরা বাড়ির বাইরে গিয়ে ভ্যাংচাতে লাগল, হট হিয়াসে, হট হিয়াসে। হ্যাঃ হ্যাঃ হ্যাঃ।

তারপরই দরজার ওপর আবার একটা ইট।

গরম তেলে জল।

পল্টন আর গৌতম দু’জনেই তখন উঠোনের ওপর পড়ে থাকা একটা মরচে ধরা সাইকেলের চেন ও একটা চ্যালাকাঠ নিয়ে ছুটে গেল বাইরে। গিয়েই যাকে সামনে পেল তাকেই পেটাতে লাগল। রীতিমতো রক্তারক্তি কাণ্ড। সে কী বেদম মার।

হইহই করে ছুটে এল লোকজন। ব্যাপার কী? এত মারামারি কেন?

গৌতম আর পল্টন সবাইকে খুলে বলল সব কথা।

কথায় বলে মারে ভূত ভাগে। তাই হল। চ্যাংড়ার দল কেটে পড়ল। তবে গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে চাপা আক্রোশে ফুলতে লাগল সব। দুই বাঙালি কিশোরের এই বিক্রমে স্তব্ধ এবং হতচকিত হয়ে গেল সকলে। পল্টন থানায় যাচ্ছিল।

কয়েকজন মুরুব্বি গোছের লোক মানা করল। বলল, পোলিশবালেকো পাশ মাত যাইয়ে। এ লোক আউর কুছ নেহি কিয়েগা। মাস্টারজি আচ্ছা আদমি। উনকা সাথ অ্যায়শা দুশমণি হামলোগ বরদাস্ত নেহি কীয়েগা।

ওরা যখন ফিরে আসছে, তখন দেখা গেল, বেশ কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে এলাকার সন্ত্রাস গফুরগুন্ডা একটা লোহার রড হাতে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।

গফুরকে দেখেই ভিড় পাতলা হয়ে গেল।

মাতব্বররা বলল, তু চলা যা গফুর। তেরা আদমি নে কাম খারাপি কিয়া। ছোড় দো ইয়ে বাচ্চো কো।

গৌতম বলল, ছাড়াছাড়ির কী আছে? মস্তানি করতে হয় বাইরে করুক। বাড়ির ভেতরে ঢুকতে আসে কোন সাহসে?

গফুর এসে সামনে দাঁড়িয়ে হিন্দি ছবির ভিলেনের মতো ওদের দিকে তাকিয়ে রডটা দুলিয়ে দুলিয়ে বলল, তু কাহাসে আয়ারে চুনমুন? কাঁহাকা চিড়িয়া?

পল্টন আর গৌতম তখনও ফুলছে।

বৃদ্ধ সদাশিববাবু তখন দরজার কাছে চলে এসেছেন। গোপাও এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। সকলেরই চোখেমুখে ভয় ও উৎকণ্ঠা।

গৌতম বলল, তুমিই গফুর?

গফুর বাঘের বিক্রম নিয়ে বলল, পহলে বোল তু কাহাসে আয়া?

গৌতম বলল, কলকাত্তা সে।

যদি বাঁচতে চাস তো এখুনি চলে যা। তুরন্ত চলা যা হিয়াসে।

আমরা তোকে রিপিট করব বলে এসেছি গফুর। চলে যাবার জন্য নয়। যদি একান্তই যেতে হয় তা হলে তোকে নিয়েই যাব। মাস্টারমশাইকে একলা পেয়ে খুব রংবাজি করেছিস। এখন ভাল চাস তো পালা।

গফুর হতভম্ব। গত কয়েক বছরের মধ্যে ওর মতো একজন পেশাদার গুন্ডা ও খুনির সঙ্গে এই ভাবে কথা বলেনি কেউ। ওকে দেখামাত্রই দূর থেকে পালায় সব। যারা হঠাৎ করে সামনে পড়ে যায়, তারা ভয়ে থর থর করে কাঁপে। আর এই দুই স্ফুলিঙ্গ এত লোকের সামনে ওর বীরত্বের মর্যাদায় গোবর মাখিয়ে দিল। গফুর হাতের ডান্ডাটাকে শক্ত করে ধরে কাঁপতে লাগল থর থর করে। রাগে লাল হয়ে উঠল ওর মুখচোখ। কঠিন গলায় বলল, আল্লা কসম। এক ঘণ্টার মধ্যে তোরা এখান থেকে চলে যাবি। না হলে তোদের লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

গৌতম তখন মরচেধরা চেনটাকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, শোলে দেখেছিস গফুর? ওই সিনটাকে একটু মনে কর। আমরা দু’জন ধর্মেন্দ্র আর অমিতাভর রোল নিয়ে এসেছি। আর তুই হচ্ছিস সিনেমার সেই গব্বর সিং। ওরা গব্বরকে যেভাবে পিটিয়েছিল, আমরাও তোকে ঠিক সেইভাবেই পেটাব। আমরা তোকে এক ঘণ্টা নয়। মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দিলুম। হয় যাবি, না হলে দেখছিস? বলেই চেন দেখাল।

গফুর আর ঠিক রাখতে পারল না নিজেকে। হিংস্ৰ উন্মাদনায় ডান্ডা উঁচিয়ে মারতে গেল গৌতমকে। কিন্তু ও মারবার আগেই গৌতমের চেন গফুরের ঘাড় ও মাথার ওপর পড়েছে। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল গফুর, ইয়া আল্লা।

গৌতম একটা হেঁচকা টান দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে মুখ থুবড়ে পাশের কাদা ভরভর ড্রেনের ওপর পড়ল গফুর। তারপর যেই-না উঠে দাঁড়াতে যাবে অমনি পল্টনের এক লাথি। আবার যেই উঠতে যাবে আবার লাথি। ফের লাথি।

তবুও ওরই মধ্যে পাঁকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা শোল মাছের মতো পিছলে সরে এল গফুর। তারপর কাদামাখা রক্তমাখা দেহে উঠে দাঁড়িয়েই ডান্ডা ফেলে, চাকু বার করল। কত মানুষের জীবন যে ওই চাকুর মুখে গেছে তার হিসেব বুঝি গফুরেরও নেই।

সদাশিববার চিৎকার করে উঠলেন, কী হচ্ছে এসব। গফুর তোমায় জোড়হাত! তোমার দশ হাজার টাকা তুমি পাবেই। ওদের ছেড়ে দাও। আমার কথা রাখো।

গফুর বলল, অনেক দেরি হয়ে গেছে বুড়া বাবা। খোদার কসম খেয়েছি আমি! ওদের সিনা আমি ফুটো করবই।

গৌতমের চেন এবার গফুরের কবজির ওপর পড়ল। হেঁচকা একটা টান। চাকু ছিটকে পড়ল রাস্তায়! গৌতম সেটা কুড়িয়ে নিয়েই ওর একটা কান কচ করে কেটে দিয়ে বলল, যা ভাগ। জিন্দগিভর ইয়াদ রাখনা।

মুহুর্তের মধ্যে কী যে হয়ে গেল কেউ কিছু ভেবে পেল না। সেই বিখ্যাত গফুরগুণ্ডা দুটি কিশোরের হাতে এমনভাবে পরাজিত হবে কেউ কি ভেবেছিল? হইহই করে উঠল সকলে। তা হলে গুন্ডা বদমাশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তাদের প্রতিরোধ করা যায়? বস্তিবাসী সকলেই ছুটে এল এবার। এবং সবাই সমর্থন করল গৌতম ও পল্টনকে।

কানকাটা গফুরকে ওর দলের লোকেরা ধরাধরি করে নিয়ে গেল।

সদাশিববাবু পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁরও দু’চোখে তখন প্রতিহিংসার আগুন জ্বলছে। রণক্লান্ত গৌতম ও পল্টনকে বললেন, তোমাদের অভিনন্দন জানাবার মতো ভাষা আমার জানা নেই বাবা। আজ তোমরা যা করলে তার তুলনা হয় না। তোমরা চলে গেলে বিপদ হয়তো আমাদের আরও বাড়বে। তবু তোমরা এই ভাবে সর্বত্র জয়যুক্ত হও এই কামনা করি।

পল্টন বলল, আমরা এতটা উত্তেজিত হতাম না দাদুভাই। যদি না গোপাকে বিরক্ত করবার জন্য এগিয়ে আসত ওরা। তাতেই খুন চেপে গেল।

গৌতম বলল, আমরা না থাকলে ওরা জোর করে বাড়িতে ঢুকত।

পল্টন বলল, গোপাকে দেখেই আমার দিদিদের কথা মনে হল। তাদের কেউ অমর্যাদা করবে আর আমরা বসে বসে দেখব তা কী হয়? মা-বোনেদের মর্যাদা রক্ষা করতে যদি নিজের জীবনও বিপন্ন করতে হয়, তা করতেও আমরা প্রস্তুত। যাকে নিয়ে এত কাণ্ড সেই গোপার তখন ভাবান্তর। সে অবাক চোখে চেয়ে রইল পল্টন ও গৌতমের দিকে। গৌতমের সেই বিক্রম, ওর ওই সুন্দর সুগঠিত শরীরে রুখে দাঁড়ানোর ভঙ্গি, ওর ওইভাবে সিনেমার নায়কদের মতো চেন ঘোরানো, সবই নাটকের দৃশ্যের মতো মনে হল। ওর খুব ইচ্ছে হল দুটো জয়মাল্য পরিয়ে দেয় এই দুই বীর কিশোরের গলায়। কিন্তু মালা তো এখানে নেই। তাই ও চোখের পাতা ফেলতেও ভুলে গেল।

গৌতম ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসল একটু।

খুশিতে উপচে পড়ল গোপা। আনন্দে নন্দিত হয়ে ফুলেভরা মাধবী লতাটির মতো দুলে উঠল।

ওরা ঘরে এলে গোপা বলল, বসো। তোমাদের জন্যে চা করে আনছি। গৌতম ও পল্টন সোফায় এলিয়ে দিল দেহটা।