নয়নাগিরি অভিযান – ১৩

খাওয়া দাওয়া করে ওরা বেনারসের দুটো টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে আসতেই দেখল একটা প্রায় ফাঁকা গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে।

পল্টন একজন চেকারকে জিজ্ঞেস করল, এ গাড়িটা কোথায় যাবে?

তোমরা কোথায় যাবে?

আমরা বেনারস যাব।

এটা ভাগলপুর বোম্বাই এক্সপ্রেস। বেনারস যাবে না। তবে তোমরা মুঘলসরাই পর্যন্ত চলে যেতে পার এই গাড়িতে। ওখান থেকে যে কোনও ট্রেনে অথবা বাসে চলে যেয়ো বেনারসে।

ওরা আর বিলম্ব না করে চলন্ত ট্রেনের হাতল ধরেই উঠে পড়ল ট্রেনে। দুলালি আগে উঠলে, ছুটে উঠল পল্টন। গাড়িটা জনতা গাড়ি। সব বগিই সেকেন্ড ক্লাস। লোক্যাল যাত্রীদের ভিড় নেই বললেই হয়। তাই বসবার কোনও অসুবিধে হল না। পরের স্টেশন দানাপুরে একজন যাত্রী নেমে যেতে বাঙ্কও পেয়ে গেল একটা।

একজন সহযাত্রীর মুখে শুনল একেবারে শেষ রাতে অথবা ভোরে এ গাড়ি মুঘলসরাই পৌঁছবে। তাই ওরা দু’জনেই সেই বাঙ্কটি দখল করে বসে রইল চুপচাপ। ঘুম এলে শুয়েও পড়া যাবে।

রাতের অন্ধকারে চলমান ট্রেনের কামরায় সমস্ত বিপদের মেঘ যেন কেটে গেল।

দুলালি ওর বুকের কাছে গুঁজে রাখা পলিথিনে মোড়া কী যেন একটা বার করে পল্টনের হাতে দিল। পল্টন বলল, কী এটা?

দেখোই না। তুমি তো লিখাপড়া জানো। তুমি পড়তে পারবে। পল্টন সেটা খুলে দেখল পোস্ট অফিসের একটি পাস বই। তারই পাতায় ওর দিনে দিনে সংগ্রহ করা ভিক্ষালব্ধ অর্থের এক অসামান্য সঞ্চয়। মাত্র চার বছরে পঞ্চাশ হাজার টাকার ওপর জমে গেছে। পল্টন বিস্মিত হয়ে বলল, এ কী করে সম্ভব !

দুলালি বলল, আমি সারা দিন ভিক্ষে করে পঁচিশ থেকে ত্রিশ রুপাইয়া পাই। আর জুতো রাখার ব্যবসায় কম করেও পঞ্চাশ থেকে একশো রুপিয়া, কখনও দেড়শো-দুশোও হয়ে যায়! পালেপার্বণে তো কথাই নেই। আগে এগুলো একটা কৌটোয় জমিয়ে রাখতুম। তারপর মাস্টারমশাইয়ের কথায় পোস্ট অফিসে জমা রাখছি।

পল্টন বলল, তুমি তো অনেকের চেয়ে দেখছি বড়লোক। তা যাকগে এই টাকার কথা তুমি কাউকে বলবে না কিন্তু।

দুলালি বলল, এই বইটা এখন থেকে তোমার কাছেই থাকবে। আমি আর রাখতে পারব না।

পল্টন বলল, এখন আমি রাখছি। পরে আমার কাছেও রাখব না। আমার কাকুমণির কাছে রেখে দেব। উনি পোস্ট অফিসের অনেক ব্যাপারস্যাপার জানেন। পাঁচ বছর, ছ’ বছরে এই টাকা পোস্ট অফিসে ডবল হয়ে যায়। উনি সেই ব্যবস্থাই করে দেবেন।

দুলালি হঠাৎ কোমরে বাঁধা একটা গেঁজে বার করে বলল, এতেও অনেক রুপিয়া আছে। কাল আজ সারাদিনের কামাই। গুণে দেখো তো কত? এর ভেতর থেকে সামান্য কিছু খরচ করেছি। এই চুড়িদারটা কিনেছি। ট্রেনের ভাড়া অবশ্য তুমি দিয়েছ, খাইয়েছ।

পল্টন সেই সব টাকা-পয়সা গুণে দেখল কিছু কম পঞ্চাশ টাকা। দুলালি বলল, ওগুলোও তোমার কাছে রাখো।

পল্টন বলল, না। কোনও অবস্থাতেই নিঃসম্বল হওয়া উচিত নয়। এগুলো

এর ভেতরে যেমন ছিল তেমনি থাক। বলা যায় না কখন কী হয়।

অগত্যা দুলালি ওগুলো আবার আগের মতোই নিজের কাছে রেখে দিল। পল্টন বলল, সবাই যদি তোমার মতো হিসেবি হত?

দুলালি বলল, পোস্ট অফিসের খোঁজ সবাই এখন জেনে গেছে। পোস্টমাস্টারমশাই রোজ গঙ্গায় চান করতে যান। আর আমাদের মতন ভিখিরিদের রুপিয়া নিয়ে বই করে দেন। আবদুলের মা’র এখন এক লাখসে জায়দা রুপিয়া হয়ে গেছে।

তবুও সে ভিক্ষে করে?

আমিও তো করি। আমাদের ঘরভাড়া লাগে না। ভিক্ষের চাল-ডাল ফুটিয়ে খাই। বসে বসে রুপিয়া পাই। আমার খরচা শুধু সকালেবিকেলে এক কাপ করে

চা। রাত্রে হোটেলে মাংস-রুটি। আমি মাংস খেতে খুব ভালবাসি। তা দশ টাকার মধ্যেই হয়ে যায়।

সেই সঙ্গে সিনেমা দেখতেও তো ভালবাস।

তা বাসি। নাইট শোতে একটা যে কোনও সিনেমা দেখা আমার চাই-ই। আমাদের বাড়ি গেলে সিনেমা দেখাটি কিন্তু তোমার চলবে না।

দুলালি বলল, আমি সব সময় তোমার মাকে জড়িয়ে ধরে থাকব। তোমাদের ঘরের সব কাজ করে দেব। থালাবাসন মেজে দেব। তোমার দিদিরা কোথাও বেড়াতে গেলে তাদের সঙ্গে যাব। তবে আমার এই রুপিয়াগুলো ডবল হয়ে গেলে তুমি যদি রাজি থাকো তা হলে ছোটখাটো একটা ব্যবসা করব।

তুমি এইটুকু মেয়ে তোমাকে ব্যবসার বুদ্ধি কে দিল?

আমাদের গাঙ্গুরামকে তো তুমি চেনো না? ও মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে দু’-হাজার রুপিয়া নিয়েছিল। সেই টাকায় কলকাতা গিয়ে রথের মেলা আর দুর্গাপুজোয় তালপাতার বাঁশি বেচে দশ হাজার রুপিয়া করেছে। তুমিও বড় হয়ে চাকরি না করে বিজনেস করবে।

পল্টন বলল, তোমাদের গাঙ্গুরামরা যা পারে, আমরা যে তা পারি না দুলালি। আমরা জীবনে বড় হবার স্বপ্ন দেখি। আশায় আশায় দিন গুনি। আমাদের কত সুন্দর ফুলের মতো জীবনগুলো একসময় পাপড়ির মতো ঝরে যায়। আমরা যখন জীবনে হেরে যাই তখন ভগবানকে দোষারোপ করে স্যুইসাইড করি। আর তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের জাতভাইরা আমাদের দেশে এসে আট হাতি ধুতি আর কাঁধে গামছা নিয়ে ফুটপাথে শুয়ে ছাতু খেয়ে শুধু চানা বেচে বড় বড় শেঠ হয়ে যায়।

তবে! তুমিও তাই হবে। দরকার হলে আমি তোমাকে রুপিয়া দেব। তুমি আমাকে এতখানি বিশ্বাস কেন করলে?

তা জানি না। তবে আমার জন্যে আমার মনে যখন দরদ আমি মালুম পেয়েছি, তখনই বুঝেছি তুমি আমার সত্যিকারের দোস্ত। আমি তোমার সঙ্গে আসতে চাইলাম না। ছুটে পালিয়ে গেলাম। তারপরেও তুমি আমার কাছে এলে। সেই জন্যেই আমিও আমার ব্যবসা ছেড়ে, মুলুক ছেড়ে, তোমার সঙ্গে দোস্তি করতে চলে এলাম।

পল্টন বলল, আসলে আমারও তোমাকে খুব ভাল লেগেছিল। তুমি আমায় প্রাণে বাঁচালে। কত করলে আমার জন্যে। তা বড় হয়ে তোমার কথামতো চাকরির সোনার বণের পিছনে না ছুটে ব্যবসা করলে কিন্তু মন্দ হয় না। জীবনে দাঁড়াবার জন্যে দরকার হলে তোমাদের গাঙ্গুরামের মতো তালপাতার বাঁশিই বেচব। তোমরা বিহার ইউ পি থেকে কলকাতায় আসছ। আমি হাওড়া কলকাতা থেকে তোমাদের দেশে যাব। তা হলে কেউ আমাকে চিনবে না। আমরা তো বেনারসে যাচ্ছি। শুনেছি বেনারস খুব ভাল জায়গা। এখন সব দেখেশুনে যাই। পরে বেনারস থেকেই আমার ব্যবসা শুরু করব।

ট্রেন এসে আবার একটা স্টেশনে থামল। জনতা গাড়ি তো। মেল-এক্সপ্রেসের ভাড়া নিয়েও সব স্টেশনে থামে। লোকজন অবশ্য খুব বেশি ওঠানামা করল না। কথা বলতে বলতে দু’জনেরই চোখে ঘুম আসছিল। তাই দু’জনে দু’দিকে মাথা করে একটু টান টান হয়ে শুয়ে পড়ল যে যার।

ট্রেন চলতে লাগল।

ওরাও ঘুমিয়ে পড়ল এক সময়।

সকালবেলা একজন চেকারের ধাক্কায় ঘুম ভাঙল পল্টনের।

টিকট দিখাইয়ে।

পল্টনের মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে তখন। তবুও ধড়মড়িয়ে উঠে বসে দেখল দুলালি নেই। গাড়িতে এখন ভিড়ে ভিড়। বসবার জায়গা না-পেয়ে কত লোক যে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠিক নেই।

টিকট কাহা।

পল্টন টিকিট দেখাল।

এ টিকট তো মুঘলসরাইমে খতম হো গিয়া। বনারস কা

টিকট। পল্টন বলল, হ্যাঁ বেনারসের টিকিট।

তুমকো জুরমানা দেনে পড়ে গা।

জরিমানা দেবার টাকা আমার কাছে তো নেই।

তব জেল যা না পড়ে গা। তুমহারা আউর সাথি কাহা?

জানি না। বোধহয় বাথরুমে গেছে।

ডাকো। আউর হিয়া উতারো।

পল্টন বাঙ্ক থেকে নেমে বাথরুমে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু কোথায় দুলালি? কেউ কোথাও নেই। শুধু যেখানে ওরা শুয়ে ছিল তার এক পাশে ওর কাচের চুড়িগুলো ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। আর এক পাশে পড়ে আছে এক পাটি জুতো। তবে কী! মনে হওয়ামাত্রই শিউরে উঠল পল্টন। তবে কি কেউ কোনও ঘুমের ওষুধ ওর নাকে চেপে দুলালিকে নিয়ে পালিয়েছে? না হলে কী করে সম্ভব এই রহস্যময় অন্তর্ধান? কেনই বা ঘুমনোর পর ওর মাথাটাও ঝিমঝিম করছে? মির্জাপুর আ গিয়া তুম হিয়া উতারো।

চেকার বলল,

পল্টন ছলছল চোখে নেমে পড়ল ট্রেন থেকে। তারপর সব কথা খুলে বলল চেকারকে। দুলালির চেহারার বর্ণনা দিয়ে বলল নিশ্চয়ই মেয়েটাকে গুম করেছে কেউ।

চেকার ওকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে জি আর পি-তে ডায়েরি লেখালেন। তারপর পাটনায় সত্যবাবুর বাড়ির ঠিকানাটা নোট করে ছেড়ে দিলেন ওকে। জরিমানা দিতে হল না।

মির্জাপুর থেকে বারাণসীর ঘন ঘন বাস ছাড়ে। তারই একটাতে জি আর পি-র লোকেরা বসিয়ে দিল ওকে। ও সেই বাসে চেপে বারাণসী এল। ময়দাগিন নামে একটা জায়গায় বাস থেকে নেমে ও রিকশা করল। ঠিকানা তো জানে না। তাই শুধু অগস্ত্যকুণ্ডার কথা বলল। রিকশাওয়ালা ওকে নিয়ে এল গোধূলিয়ায়। তারপর ঘোড়ার গাড়ির স্ট্যান্ডের পিছন দিকের গলিটা দেখিয়ে বলল, অগস্ত্যকুণ্ডা উধার মিলে গা।

অনেক বেলা হয়েছে তখন। তা প্রায় একটা-দেড়টা।

পল্টন এই অচেনা জায়গায় এসে ঘাবড়ে গেল খুব। নাম জানে না, ঠিকানা জানে না, এই অবস্থায় কাউকে কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব? তবু একজন বাঙালিকে দেখে বলল, আচ্ছা এখানে গোপাদের বাড়িটা কোথায় বলতে পারবেন? গোপা? কে গোপা? বাবার নাম কী? ঠিকানা কত?

পল্টন ওর বিপদের কথা বলল।

ভদ্রলোক বললেন, এভাবে তো খুঁজে বার করা মুশকিল। তবু দেখি কী করতে পারি। বলে একজনদের বাড়ির একটি মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, খুকি শোনো! তোমরা তো এই মহল্লায় থাক, এখানে গোপা নামে কেউ থাকে জানো?

মেয়েটি বলল, জানি। কিন্তু কী ব্যাপার বলুন তো?

এই ছেলেটি নতুন এসেছে এখানে। ওদের বাড়ি যেতে চায়।

গোপা আমার বন্ধু। তবে বাড়ি তো দেখাব না। কেন না একটু দুষ্টচক্রের নজর পড়েছে ওর দিকে। পাটনায় গিয়ে ওর খুব বিপদ হয়েছিল। তা ওর নাম এবং কোথা থেকে আসছে জানালে আমি ওর মাকে গিয়ে বলতে পারি। এর পরে ওঁরা যদি নিয়ে যেতে বলেন তা হলে নিয়ো যাব।

পল্টন বলল, তা হলেই হবে। একটা কাগজ দাও, আমি আমার পরিচয় লিখে দিচ্ছি।

মেয়েটি একটি কাগজ দিলে, পল্টন লিখল, আমি এসে গেছি। আমাকে নিয়ে যাও।—পল্টন সেই চিরকুটটা নিয়ে মেয়েটি চলে গেল। একটু পরেই দেখা গেল গৌতম ও গোপা হন্তদন্ত হয়ে আসছে ওর দিকে।

গৌতম তো এসেই জড়িয়ে ধরল পল্টনকে। তারপর বলল, ব্যাপারটা কী! আমরা দু’জনে স্টেশনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলা হয়ে গেলাম। অমৃতসর এক্সপ্রেসে এলি না, পঞ্জাব মেলে এলি না। তাই ভাবলাম হয়তো কোনওকারণে আসতে পারলি না তুই। ওখান থেকে ফিরে এসে সবে স্নান খাওয়া সেরেছি। এমন সময় তুই এলি।

পল্টন বলল, হ্যা এলাম। তবে মনের মধ্যে মুক্তির আনন্দ নিয়ে আসিনি ভাই। বুকভরা চাপা কান্না নিয়ে এসেছি।

দাদুভাইয়ের ওইরকম মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য তো? কী আর করবি বল, যার যা নিয়তি তার তো তাই হবে।

নারে। আমি আমার এক সত্যিকারের বন্ধুকে চিরকালের জন্য হারালাম আজ। বনের ফুল ছিঁড়ে নিয়ে চলে আসছিলাম। সে ফুল অপরে নিয়ে গেল। ওর এতবড় ক্ষতিটা হয়ে গেল শুধু আমার জন্য। কেন যে ওকে আনতে গেলাম?

কার কথা বলছিস তুই?

যে তোকে সাহায্য করেছিল, গোপার খোঁজ দিয়েছিল, আমার জীবন রক্ষা করেছিল, তার কথা।

অর্থাৎ দুলালি? সেই নিষ্পাপ সুন্দর মেয়েটি?

হ্যাঁ।

কী ব্যাপার বল তো?

গোপা বলল, রাস্তায় কথা বলার দরকার নেই। ঘরে চলো।

ওরা গোপাদের বাড়ি এল।

এখান থেকে গঙ্গা খুব কাছে। তবুও অনেক বেলা হয়ে গেছে বলে পল্টন বাড়িতেই স্নান করল। ছোট্ট দোতলা বাড়ি। কিন্তু কী সুন্দর। নীচের তলাটা অন্ধকার। ওপরটা খোলামেলা। কাশীর সব বাড়িই প্রায় এই রকম। এই বাড়িও তার ব্যতিক্রম নয়।

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর ছাদে রোদ্দুরে শুয়ে আগাগোড়া সমস্ত ঘটনার কথা ওদের দু’জনকে খুলে বলল পল্টন।

সব শুনে স্তব্ধ এবং মর্মাহত হয়ে গেল ওরা।

গোপা বলল, আর কেউ নয়, নির্ঘাত ওই শয়তান ডিসুজার লোকই পিছু নিয়েছিল তোমাদের। ছদ্মবেশে ট্রেনের কামরায় উঠেছিল। পরে তোমরা ঘুমিয়ে পড়লে নাকে ক্লোরোফর্ম মাখানো রুমাল চেপে আরও ঘুম পাড়িয়ে কাজ হাসিল করে।

গৌতম বলল, ঠিক তাই। পল্টন দুলালিকে ডাকতে গিয়েই ভুল করেছিল। তখন থেকেই ওকে ফলে! করেছে ওরা। তারপর স্টেশনে এসে দু’জনকে ভাগতে দেখেই নেয়। ট্রেনের কামরায় দু’জনকে একসঙ্গে পেয়ে সুবিধেই হয়েছে ওদের। টার্গেটটা বেশি করে গিয়ে পড়ে দুলালির ওপর। পল্টনকে ছেড়ে দুলালিকে নিয়েই পালায় ওরা।

পল্টন বলল, কিন্তু কামরায় তো আরও অনেক লোক ছিল। ছিল। হয় তারা অঘোরে ঘুমোচ্ছিল, নয়তো ছোরা-রিভলভার নিয়ে ভয় দেখিয়েছিল তাদের।

পল্টন বলল, এখন তা হলে উপায়?

নয়নাগিরি অভিযান।

নয়নাগিরি কোথায় তাই তো জানি না আমরা।

সেটা জানতে হবে এবং জীবন দিয়েও দুলালিকে ওদের কবল থেকে উদ্ধার করতে হবে। যার জন্যে গোপাকে আমরা ফিরে পেয়েছি, তোর জীবন রক্ষা হয়েছে, তার জন্যে প্রয়োজন হলে যমের সঙ্গে লড়ে যাব আমরা।

কিন্তু নয়নাগিরির সন্ধান আমরা কী করে পাব?

নয়নাগিরির সন্ধান পেতে গেলে আজই বিকেলে রাণামহলের ঘাটে ঘুরঘুট্টিবাবার দর্শন পেতে হবে আমাদের!

ঘুরঘুট্টিবাবা কে?

তুই চিনবি না। উনি পায়ে হেঁটে সারা ভারত ভ্রমণ করেছেন। চিত্রকূট পর্বতে থাকেন উনি। এখন একমাস কাশীতে থাকবেন। কাল ওনার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আমাদের। চমৎকার এবং নির্লোভ সাধু। উনি নিশ্চয়ই বলতে পারবেন নয়নাগিরিটা কোথায়।

পল্টন বলল, তা হলে আর দেরি নয়। একটু বিশ্রাম নিয়েই চল গিয়ে দেখা করে আসি।

গৌতম বলল, আমার মনে হয় নয়নাগিরিটা পাটনা এবং বেনারসের মাঝামাঝি অথবা কাছাকাছি।

এইরকম মনে হওয়ার কারণ?

কারণ একটাই, এই ধরনের কাণ্ডকারখানা মূল কেন্দ্র থেকে খুব বেশি দূরে হওয়াটা সম্ভব নয়। ত্রিবেদী বলেছিলেন, বিহারে নয়নাগিরি নামে কোনও জায়গা নেই। তা যদি হয় তা হলে নয়নাগিরি উত্তরপ্রদেশে হতে বাধা কোথায়? বিশেষত অপহরণটা যখন বক্সার ও মুঘলসরাইয়ের মধ্যে হয়েছে।

পল্টন বলল, তুই ঠিক বলেছিস। আমি মির্জাপুরে জি আর পি-তে ডায়েরি লেখালেও এখানকার পুলিশকে একবার জানাই চল। ওঁরা ত্রিবেদীর সঙ্গেও কথা বলে নেবেন। আর আমরা ঘুরঘুট্টিবাবার কাছ থেকে জানবার চেষ্টা করব নয়নাগিরিটা কোথায়?

ওরা এইসব আলোচন করছে সেই সময় গোপার মা এলেন। আলোচনাটা তাই অন্য দিকে মোড় নিল। চোখ বুজে শুয়ে থাকতে থাকতে গত রাতের ট্রেন জার্নির ক্লান্তিতে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ল পল্টন।