নবম অধ্যায় । ভারতের অযাচিত অতিথি
আলেকজান্ডার যে সময়ে ভারতবর্ষে আগমন করেন, তখন উত্তর ভারতে বাস করতেন প্রধানত হিন্দুরাই। প্রধানত বললুম এইজন্যে, ভারতে তখন বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে বটে, কিন্তু তাদের বিশেষ প্রতিষ্ঠা হয়নি। হিন্দুদের তুলনায় বৌদ্ধ ও জৈনরা ছিল মুষ্টিমেয়। বলা বাহুল্য, পৃথিবীতে তখন খ্রিস্ট ও মুসলমান ধর্ম আত্মপ্রকাশই করেনি। আর একটি কথা। তখন ভারতে প্রচলিত ছিল বৈদিক হিন্দুধর্ম—যার মধ্যে পৌত্তলিকতা নেই। পৌত্তলিক ছিলেন ইউরোপীয় গ্রিকরাই।
উত্তর ভারতের সীমান্ত প্রদেশে তখন হিন্দু ছাড়া অভারতীয় আরও নানা জাতি বাস বা আনাগোনা করত। ও-অঞ্চলে তখন একটি প্রসিদ্ধ শহর ছিল, তার নাম তক্ষশীলা। (বর্তমান রাওলপিন্ডির অদূরে)। তক্ষশীলা গান্ধার রাজ্যের অন্তর্গত—মহাভারতের গান্ধারী এখানকারই রাজকন্যা। প্রাচীন ভারতে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার জন্যে তক্ষশীলা ছিল অদ্বিতীয়। কোনও কোনও বিভাগে তখনকার বারাণসীও তার কাছে দাঁড়াতে পারত না।
উত্তর ভারতে তখন বিশেষ কোনও বড় রাজা ছিলেন না। তবে ওরই মধ্যে পুরু ও তক্ষশীলার ও অভিসারের রাজারা শ্রেষ্ঠতার দাবি করতে পারতেন বটে। খুব বড় না হোন, পুরু নিতান্ত তুচ্ছ রাজাও ছিলেন না, কারণ তাঁর রাজ্যে তিন শত নগর ছিল বলে শোনা যায়। ঝিলাম ও চিনাব নদের মাঝখানে ছিল রাজা পুরুর রাজ্য।
হিন্দুস্থানে তখন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও ক্ষমতাশালী নরপতি ছিলেন পাটলিপুত্রের নন্দ—আলেকজান্ডারের সঙ্গে যাঁর শক্তি পরীক্ষা হয়নি।
সীমান্ত প্রদেশ এখনকার মতন তখনও বহু খণ্ড খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত ছিল। সেসব জায়গাকার রাজা ও রাজ্যের নাম ভারতীয় পুথিপত্রে পাওয়া যায় না। গ্রিক ঐতিহাসিকরা অনেক জাতির ও রাজ্যের নাম করেছেন বটে, কিন্তু অধিকাংশ নাম পড়েই আজ তার কিছু বোঝবার জো নেই। এর কারণ, গ্রিকরা ভারতীয় নাম শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করতে পারতেন না। এমন বিকৃত করে ফেলতেন যে, প্রায়ই আসল নামের সঙ্গে কিছুই মিলত না। যেমন ঝিলামকে তাঁরা ডাকতেন Hydaspes বলে এবং তাঁদের কাছে চিনাব ছিল Akesines! আধুনিক প্রত্নতাত্বিকরা বহু চেষ্টার পর কোনও কোনও দেশ বা জাতির অবস্থান অনুমান করতে পেরেছেন বটে, কিন্তু নানা ক্ষেত্রে তা অনুমান মাত্র, কারণ, তা নিয়ে নেই তর্কবিতর্কের অভাব। তখনকার ওইসব খণ্ডরাজ্যের কোনওটিই আজ বর্তমান নেই।
ওখানকার বাসিন্দারাও আজ ধর্মান্তর গ্রহণ করে নিজেদের সমস্ত প্রাচীন অবদান হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তারা একটি বিশেষত্ব হারায়নি। সে যুগেও সীমান্তের বাসিন্দারা ছিল যুদ্ধপাগল। তারা কারুর অধীনতা স্বীকার করতে রাজি ছিল না। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও যে-কোনও বৃহৎ ও পরাক্রান্ত শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করত। আজও তাদের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়নি।
আর একটি ছোট রাজ্যের কথা চিরস্মরণীয় হবার যোগ্য। এ রাজ্যের নাম আজ কেউ জানে না, কিন্তু রাজার নাম ছিল, হস্তী। এটুকুও জানা গিয়েছে, রাজা হস্তীর দেশ ছিল তক্ষশীলারই অদূরে।
খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দের বসন্তকাল। পর্বতমালার তুষারআবরণ গলে পড়ছে সূর্যের তপ্ত ছোঁয়ায়।
এই পর্বতমালার নাম, হিন্দুকুশ। ইউরোপীয়রা একে ভারতীয় ককেসাস বলেও ডাকে। ভারতের বিপুল সিংহদ্বারে চিরদিন সে দাঁড়িয়ে আছে দিগবিদিক পূর্ণ করে আকাশঢাকা বিরাট প্রহরীর মতো।
আলেকজান্ডার সসৈন্যে হিন্দুকুশ পার হলেন। তারপর প্রবেশ করলেন ভারতবর্ষে। বলা বাহুল্য, তখন আফগানিস্তানের নাম কেউ শোনেনি। ও জায়গাটি ভারতবর্ষেরই অন্তর্গত ছিল।
আলেকজান্ডার কত সৈন্য নিয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিলেন? আধুনিক ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা হয়তো গ্রিকদের—অর্থাৎ ইউরোপীয়দের গৌরব বাড়াবার জন্যেই বলেছেন, তাঁর সৈন্যসংখ্যা পঞ্চাশ-ষাট হাজারের বেশি ছিল না। কিন্তু আমাদের মতে এ বিষয়ে প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক বা লেখকদের কথাই অধিকতর প্রামাণিক। প্লুটার্ক পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ভারতীয় অভিযানে আলেকজেন্ডারের সঙ্গে ছিল পনেরো হাজার অশ্বারোহী ও এক লক্ষ বিশ হাজার পদাতিক সৈন্য। এ হিসাব অস্বীকার করবার প্রমাণ নেই।
এর উপরেও পথে আসতে আসতে আলেকজান্ডার যে পেশাদার সৈন্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন তার প্রমাণ আছে। অভিসারের রাজা ও তক্ষশীলার রাজা অম্ভি এবং আরও কোনও কোনও নরপতি আলেকজান্ডারের পক্ষ অবলম্বন না করে পারেননি। গ্রিক লেখকরা বলেছেন, তাঁরাও গ্রিক দিগবিজয়ীকে বহু সৈন্য, হস্তী ও অশ্ব প্রভৃতি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং কম করে ধরলেও আমরা বলতে পারি, আলেকজান্ডার যখন পাঞ্জাবে আসেন তখন তাঁর সৈন্যসংখ্যা নিশ্চয়ই দুই লক্ষের কম ছিল না।
আধুনিক জালালাবাদের কাছে এসে আলেকজান্ডার তাঁর সৈন্যগণকে দুই দলে বিভক্ত করলেন। জেনারেল হিফেসান ও পার্ডিকামের উপরে হুকুম দেওয়া হল, তাঁরা যেন কাবুল নদীর ধার ধরে সিন্ধু নদের তটে গিয়ে হাজির হন।
সীমান্ত প্রদেশের অধিকাংশ রাজাই বন্ধুতা স্বীকার করলেন। কিন্তু রুখে দাঁড়ালেন একজন, নাম তাঁর হস্তী। তিনি যে খুব বড় বা বিখ্যাত রাজা ছিলেন, তা নয়। খ্যাতি প্রতিপত্তিতে তক্ষশীলার রাজা তাঁর চেয়ে ঢের বেশি শ্রেষ্ঠ ছিলেন। কেবল শ্রেষ্ঠ নন, বেশি বুদ্ধিমানও ছিলেন নিশ্চয়! কারণ, আলেকজান্ডারকে বাধা দেওয়া অসম্ভব বুঝে তিনি তাড়াতাড়ি তাঁর বন্ধু হয়ে পড়েছিলেন! এমনকী, নিজের সৈন্যসামন্ত নিয়ে গ্রিকদের সঙ্গে মহারাজা হস্তীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও আপত্তি করেননি।
কিন্তু মহারাজা হস্তীর কাছে প্রাণের চেয়ে মানের গৌরবই ছিল বড়। তিনিও জানতেন, গ্রিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার মানেই হচ্ছে বালির বাঁধ দিয়ে সমুদ্রের গতিরোধ করবার দুশ্চেষ্টা। তবু তিনি বললেন, প্রাণ দেব কিন্তু স্বাধীনতা দেব না! তারপর যেমন অসমসাহসে ইউরোপীয় মহাযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল ক্ষুদ্র বেলজিয়াম, তিনিও তেমনি পথরোধ করে দাঁড়ালেন গ্রিক বন্যার সুমুখে।
ছোট্ট রাজ্য, অল্প শক্তি। তবু দীর্ঘ একমাসকাল ধরে মহারাজা হস্তী গ্রিকদের বাধা দিয়েছিলেন, আর্যাবর্তে প্রবেশ করতে দেননি। তারপর অসম্ভব আর সম্ভবপর হল না। ইংরেজ ও ফরাসিরা সাহায্য করেও বেলজিয়ামকে রক্ষা করতে পারেনি, কিন্তু হস্তীকে সাহায্য করবার জন্যেও আর কোনও ভারতীয় রাজা অগ্রসর হলেন না। বিশ্ববিজয়ী গ্রিক সৈন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র এক প্রাদেশিক শাসনকর্তা কতদিন আর দাঁড়াতে পারেন? মহারাজা হস্তীর পরিণাম কী হল তা জানি না, কিন্তু তাঁর রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেল। খুব সম্ভব হস্তীও করেছিলেন আত্মদান।
আশ্চর্য কথা যে, ভীমার্জুনের যোগ্য বংশধর এমন এক হিন্দু বীরের কাহিনি ভারতের কোনও পুরাণে বা গ্রন্থে স্থান লাভ করেনি, তাঁর কথা আমরা জানতে পারি গ্রিক লেখকদের কাছ থেকেই।
আলেকজান্ডারের সমগ্র ভারতীয় অভিযানের কথা বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে একখানি স্বতন্ত্র গ্রন্থ লিখতে হয়। আমাদের এখানে অত জায়গা নেই, কারণ, আমাদের বলতে হবে সংক্ষেপে আলেকজান্ডারের গোটা জীবনের কথা। অতএব এখানে ভারতীয় অভিযানের কেবল বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলিই বলব।
একদল গ্রিক ভারতবর্ষের ভিতরে প্রবেশ করলে, কিন্তু আলেকজান্ডার তখন তাদের সঙ্গী হলেন না। সীমান্তের পার্বত্য জাতিদের কিছু কিছু বীরত্বের পরিচয় পেয়েই তিনি বুঝলেন, এদের পিছনে রেখে ভারতের ভিতরে গেলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা!
বাকি সৈন্য নিয়ে তিনি পার্বত্য জাতিদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। চারিদিকে কেবল শত্রুপরিপূর্ণ পাহাড়ের পর পাহাড়; গ্রীষ্ম এল সূর্যের অগ্নিবৃষ্টি নিয়ে; শীত এল ভয়াবহ তুষার নিয়ে; তার উপরে নির্ভীক ভারতসন্তানদের অস্ত্র প্রতিপদে বর্ষণ করতে লাগল মৃত্যুর অভিশাপ। পার্বত্য জাতিদের দমন করবার জন্যে আলেকজান্ডারের দরকার হল দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধ। পারস্যেও তাঁকে এত বাধা পেতে হয়নি।
চিত্রল নদীর কাছে একটি নামহীন গিরি নগর। কোনও অনামা ভারতীয় বীরের বাণে আলেকজান্ডার এখানে সর্বপ্রথমে আহত হন। এই ব্যাপারে গ্রিক সৈন্যরা এমন খাপ্পা হয়ে উঠল যে, তারা নগরটিকে একেবারে ভূমিসাৎ করে সমস্ত বাসিন্দাকে হত্যা করলে।
বাজর প্রদেশে ‘আস্পাসিয়ান’ নামক জাতিকে মস্ত একটি যুদ্ধে পরাজিত করে আলেকজান্ডার বন্দি করলেন প্রায় চল্লিশ হাজার লোক। তারপর তিনি অগ্রসর হলেন ‘আস্যাকেনই’দের বিরুদ্ধে। এই জাতি বাস করত মালাকান্দ গিরিসঙ্কটের অদূরে। ওখানে তাদের একটি বিখ্যাত ও বৃহৎ নগর ছিল, নাম—মাসাগা। এখানে একটি বিষম লড়াই হয় এবং আলেকজান্ডার আহত হন দ্বিতীয়বার। যুদ্ধে মাসাগার রাজা মারা পড়লেন এবং তার ফলে দুর্গ ও নগর হল গ্রিকদের হস্তগত।
তারপর যা হল, আলেকজান্ডারের পক্ষে বড় কলঙ্কের কথা। গ্রিক ঐতিহাসিকরাও তাকে নিন্দা করতে বাধ্য হয়েছেন।
মাসাগার দুর্গে সাত হাজার ভারতীয় পেশাদার সৈন্য ছিল। তারাও বন্দি হয়েছিল।
আলেকজান্ডার বললেন, ‘তোমাদের আমি মুক্তি দিলুম। কিন্তু এই শর্তে যে, তোমরা আমার ফৌজে ভরতি হবে।’
ভারতীয় সৈনিকেরা খানিক দূর গিয়ে ছাউনি ফেললে। সঙ্গে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও ছিল।
কিন্তু তাদেরও মধ্যে ছিল রাজা হস্তীর মতন জ্বলন্ত বীরত্ব ও প্রবল স্বদেশানুরাগ। তারা পেশাদার হলেও ভারতের শত্রুর অধীনে চাকরি করে স্বজাতির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে রাজি হল না। তারা স্থির করলে, সেই রাত্রেই এ জায়গা ছেড়ে চলে যাবে।
আলেকজান্ডার এই কথা শুনেই রাগে আগুন হয়ে উঠলেন। তারপর গোপনে রাত্রের অন্ধকারে করলেন তাদের চারিধার থেকে অতর্কিতে আক্রমণ।
ভারতীয় বীরেরা নিশ্চিন্ত হয়েছিল—কারণ তারা জানত, যুদ্ধের কোনওই সম্ভাবনা নেই।
এখন বিস্মিত হয়ে দেখলে, চতুর্দিকেই অস্ত্রধারী শত্রু! বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়েই তারা স্ত্রী-পুত্রকন্যাদের মাঝখানে রেখে মণ্ডলাকারে দাঁড়িয়ে অস্ত্রধারণ করলে।
সাত হাজার মাত্র ভারত সন্তান, কিন্তু গ্রিকদের সংখ্যা হয় না। তবু ভারতীয়রা অস্ত্রত্যাগও করলে না, আলেকজান্ডারের চাকর হয়ে মাতৃভূমির কুসন্তান হতেও রাজি হল না। এমনকি, দলের ভারত নারীরাও দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে স্বহস্তে অস্ত্রচালনা করতে ভয় পেলে না! এসব ঐতিহাসিক সত্য।
অবশেষে তারা সকলেই একে একে ভারতের মাটি নিজেদের বুকের রক্তে রাঙা করে—গ্রিক ঐতিহাসিকেরই ভাষায়—’অপমানকর জীবনের পরিবর্তে গৌরবজনক মৃত্যুকে’ বরণ করে নিলে।
পেশাদার গ্রিক সৈন্যরা পারস্য সম্রাটের চাকরি নিয়ে গ্রিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, তাই আলেকজান্ডার ঘৃণাভরে তাদের দেশদ্রোহী বলে প্রত্যেককে বধ করতে হুকুম দিয়েছিলেন। অথচ এখানে দেশদ্রোহী হতে চাইলে না বলেই সাত হাজার মহাবীর ভারতসন্তানকে রীতিমতো কাপুরুষের মতন হত্যা করা হল! তারপর দুই হাজার বৎসরেরও বেশি কাল চলে গিয়েছে, কিন্তু ইতিহাস আজও আলেকজান্ডারের কলঙ্ক কাহিনি ভোলেনি।
ভারতের বীরত্বকাহিনিরও সঙ্গে জড়িত আছে ভারতের লজ্জা। সেকালে শশীগুপ্ত নামে এক হিন্দু ছিল, সে-ও যুদ্ধ ব্যবসায়ী। আগে সে দরায়ুসের হত্যাকারী ও ব্যাথট্রিয়ার রাজা বেসাসের সেনাদলে ভরতি হয়েছিল, তারপর আলেকজান্ডারের দলে গিয়ে সেনাধ্যক্ষের কাজ পায়। ভারত আক্রমণ করবার সময়ে এই শশীগুপ্ত নানা দিক দিয়ে আলেকজান্ডারকে সাহায্য করেছিল।
এই সময়ে বা এর কিছু পরে আলেকজান্ডারে সঙ্গে ভবিষ্যতের ভারত সম্রাট ও গ্রিকদের দর্পচূর্ণকারী, কিন্তু তখন নির্বাসিত চন্দ্রগুপ্তের আলাপ পরিচয় হয়েছিল।
এরপর আরও কয়েকটি দেশ দখল করে গ্রিকরা অগ্রসর হল ঝিলাম নদের দিকে।
গ্রিকরা এতদূর অগ্রসর হতে পেরেছিল তার প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে, উত্তর ভারত ছিল ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত এবং সেখানকার কোনও রাজাই ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বিবাদ ভুলে দেশ রক্ষার জন্যে পরস্পরের সঙ্গে সম্মিলিত হতে পারতেন না। কাজেই নিজের বিপুল বাহিনী নিয়ে আলেকজান্ডার একে একে সকলকেই পরাজিত করলেন।
এইবারে মহারাজা পুরুর পালা। মহারাজ হস্তীর মতন তিনিও ভারতের শত্রুকে পথ ছেড়ে দিতে রাজি হলেন না, সৈন্য সংগ্রহ করতে লাগলেন। যদিও তাঁর সৈন্যসংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের বেশি হল না। তবু তাই নিয়েই তিনি বৃহত্তর গ্রিকবাহিনীকে বাধা দিতে ছুটলেন।
খবর পেয়ে আলেকজান্ডারও যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হলেন! আগে তিনি পুরুকে পত্রে জানিয়েছিলেন, ‘রাজা, অন্যান্য সকলের মতন তুমিও আমার বশ্যতা স্বীকার করো।’
পুরু সগর্বে উত্তর দেন, হাঁ, নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে যাব। কিন্তু সসৈন্যে। আমাদের দেখা হবে রণক্ষেত্রে।’
এরপর যুদ্ধ ছাড়া আর উপায় রইল না।