নন্দীবাড়ির শাঁখ – ৫

পাঁচ

লোকে কেন লোকেনবাবুর কুচ্ছো গেয়ে বেড়ায় তা নীলমণি আজও বুঝে উঠতে পারল না। এরকম লোকের নিন্দে করা কি তোদের উচিত হচ্ছে নিমকহারামরা? ভালো করে চেয়ে দেখ তো বাপু, লোকেনবাবুর কেমন কার্তিক ঠাকুরটির মতো চেহারা। মাথায় কোঁকড়া চুল, ফরসা রং, লম্বাই-চওড়াই হাড়েমাসে চেহারা। আর কেমন শৌখিন মানুষ! সর্বদা পরনে ফিনফিনে ধুতি, গিলে করা পাঞ্জাবি, বগলে আতর, মুখে পান আর ঢুলুঢুলু স্বপন দেখা দু’খানি চোখ। ও মানুষের মধ্যে কি কোনও পাপ বাস করতে পারে? লোকেনবাবু গোলাপের চাষ করেন। গন্ধরাজ ফোটান, সূর্যমুখী, স্থলপদ্ম, ডালিয়ায় বাগান ছয়লাপ, শুধু তাই? জালের বাক্সে প্রজাপতি পোষেন, মৌমাছির আবাদ করেন, চারটে কুকুর আর সাতটা বিড়াল তাঁর পায়ে-পায়ে ঘোরে। সকালে পাখিদের দানা খাওয়ান। গরিব-দুঃখীকে দান পর্যন্ত করেন। কুচ্ছো করলেই তো হবে না, এসবও তো দেখতে হবে।

গত দু’বছর সে লোকেনবাবুর সেবার কাজে বহাল আছে। এর মধ্যে কোনওদিন লোকেনবাবুকে সে রাগ করতে দেখেনি। যা করেন সবসময়ে ঠান্ডা মাথায়। কারও গলা কেটে ফেলতে হলেও তিনি বড় একটা বিচলিত হন না।

তা বলে লোকেনবাবু তো আর ভেড়ুয়া নন। ঠান্ডা, সুস্থির মানুষ বটে, কিন্তু অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে লড়াই করতে পিছপা হন না। ওই যে গজু পালোয়ানের আখড়ার জমিটা, ওটা তো লোকেনবাবুর একটা অনাথ আশ্রম করবেন বলেই চেয়েছিলেন। ন্যায্য দামই দেবেন। আর কে না জানে গজুর আখড়া আসলে গুন্ডা তৈরির আখড়া। তার কাছে কসরত শিখেই তো কতগুলো গুন্ডা, ষন্ডা তৈরি হলো। ওই যে মাধাই দাস আর জগাই দাস, দাশু গড়াই, মুসুদ্দ শেঠ, বরদা ঘোষ, হাবু সেনাপতি এদের কে না চেনে। মুখে বলতে লোকে ভয় পায় বটে। কিন্তু মনে-মনে সবাই চায়, ওই সর্বনেশে গুন্ডা তৈরির আখড়াটা উঠে যাক। তা লোকেনবাবু মানুষের ভালোর জন্যই আখড়াটা তুলে দিয়ে একটা সৎ কাজ করতে চেয়েছিলেন। গজুকে পইপই করে সব বোঝালেন, তা কাজ হলো তাতে? তাই সোজা আঙুলে ঘি না ওঠায় আঙুল একটু বাঁকাতে হয়েছিল। তাতেই তুমুল চেঁচামেচি, গন্ডগোল। আখড়াটাও উঠল না, লোকেনবাবুর খানিক অকারণ বদনাম করল লোকে।

এই যে মঙ্গলমাস্টার সেদিন এক হাট লোকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হেঁকে ডেকে বলল, “ওহে, লোকেনের বাগান দেখে ভুল বুঝো না। ওর আড়ালে গাঁজা আর আফিমের চাষ হয়।”

কথাটা বলা কি মাস্টারের উচিত হয়েছে? লোকেনবাবু চাষ না করলেও গাঁজার চাষ তো কেউ না-কেউ করবেই রে বাপু। আর অফিমের কথাটা ডাহা মিথ্যে। লোকেনবাবু ফুল ভালোবাসেন, আর পপি ফুল দেখতে সুন্দর বলে ভালোবেসে পপির বাগান করেছেন। পিছনে কোনও কুমতলব নেই। লোকের স্বভাবই হলো তিলকে তাল করা।

রাস্তায় ঘাটে কান পাতলেই শোনা যাবে লোকেনবাবুর নাকি গুন্ডার দল আছে। তারা নাকি গা-জোয়ারি করে, ভয় দেখিয়ে গেরস্থদের জমি বাড়ি জলের দরে দখল করে। একে সবক শেখায়, ওকে ঢিট করে। কী মিথ্যে রে বাবা! নীলমণি এই দু’বছর ধরে দেখছে, কোথায় গুন্ডা, কোথায় ষন্ডা। কয়েকজন ভবঘুরে নিষ্কর্মা বেকার ছেলেছোকরাকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন বই তো নয়। তারা নিতান্তই নিরীহ মানুষ। আপনমনে খায়-দায়, ফাইফরমাস খাটে, মাঝে-মাঝে জোট বেঁধে এখানে-সেখানে একটু ঘুরতে যায়। দরকার হলে এলাকার শান্তিরক্ষার জন্য গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সোনার টুকরো ছেলে সব। তাদের সমাজসেবী বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হয় না।

আজ বিকেলবেলায় লোকেনবাবু তাঁর বাড়ির বাইরের বারান্দায় ওই যে বসে আছেন। এখন আশ্বিন মাস। তাই বিকেলের দিকে বাগানে একটু চোরা ঠান্ডা। তাই লোকেনবাবুর ঊর্ধাঙ্গে একটা দামি শাল। যার আঁচল অনেকটা মেঝেয় লুটোচ্ছে। পরনে ধুতি, পায়ে হরিণের চামড়ার চটি। সামনের ঘাসজমিতে তাঁর তিনটে ছোট-ছোট ছেলেমেয়ে ছোটাছুটি করে খেলছে আর তিনি দৃশ্যটা নিমীলিত নয়নে দেখছেন।

বাগানে জল দিতে-দিতে নীলমণি দৃশ্যটা দেখছিল। হ্যাঁ, মনিব হয় তো এমন। এরকম মনিবের কাজের লোক হতে পারলে গর্বে বুকটা ফুলে-ফুলে উঠতে চায়। পাঁচজনকে হেঁকে বলতে ইচ্ছে করে, ‘ওহে দেখ, আমি এরকম একটা মানুষের কাজের লোক।’

গাছে জল দেওয়ার ফাঁকে-ফাঁকে মাঝে-মাঝে সে লোকেনবাবুর দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকছে। ওই যে ঘুম-ঘুম ভাব লোকেনবাবুর ওটা মোটেই ঘুম নয়, এখন লোকেনবাবুর মগজে নানা ফন্দিফিকির এঁটে যাচ্ছে। এ তো আর নীলমণির ভোঁদা মাথা নয়। লোকেনবাবুর মাথায় বুদ্ধির এক আজব কারখানা। কত রকমের সূক্ষ্ম প্যাঁচ আর দ্বেষ। বলতে কী, উনিই তো এলাকাটা চালাচ্ছেন। লোকেনবাবুকে মোহনপুরের রাজা বললেও বাড়াবাড়ি হয় না। মুকুট আর সিংহাসনটিই যা নেই, আর সবই রাজলক্ষণ। এলাকার ভালোমন্দ নিয়ে উনি ভাববেন না তো কে ভাববে?

ওই যে সরু আর পাকানো চেহারার লোকটা এসে লোকেনবাবুর পাশে কাঠের চেয়ারটায় বসল ওটি ভারী কুচক্করে মানুষ। বদ মতলবে মাথা একেবারে ঠাসা। লোকেনবাবু যদি রাজা তা হলে ওটিকে মন্ত্রীই বলতে হয়। অবশ্য লোকে শীতল মান্নাকে আড়ালে শকুনিমামা বলেই ডাকে। কিন্তু নীলমণির মত হলো, মন্ত্রীদের একটু জটিল-কুটিল না হলে যে মানায় না। সাদামাঠা সোজা-সরল হলে সে আবার মন্ত্রী কিসের? সত্যি বলতে কী, লোকেনবাবুকে রাজা বলে ধরে নিলে, শীতল মান্না বেশ মানানসই মন্ত্রী।

দু’জনে বিস্তর গুজগুজ ফুসফুস হয়। তার দু’-চারটে কথা কখনও কখনও ছিটকে নীলমণির কানেও আসে। না, নীলমণি আড়ি পেতে কিছু শোনে না। কিন্তু যে কথাগুলো মাঝে-মাঝে ছিটকে তার কানে আসে সেগুলো না শুনেও উপায় নেই কিনা। সোয়া পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে শীতল মান্না বিদেয় হলে পৌনে ছ’টা থেকে ছ’টার মধ্যে শ্রদ্ধেয় দারোগা বিষ্ণুপদ এসে হাজির হবেন। আবার দু’জনে একান্তে কথা হয়। তার মধ্যেও দু’চারটে কথা ছিটকে ছিটকে আসে। একটু রাতের দিকে মহাজনরা আসে। এম এল এ আসে। ষন্ড-গুন্ডারা আসে। নানা কথা হয়। সেসবে দোষের কথা কিছু নয়, ভালো কথাই। তা এসব কথারও যে বাজারে একটা দাম আছে তা কে জানত!

নীলমণির দোষ নেই। একদিন বাজারের কাছে হরিপদ ঠিকাদার তাকে ধরে বলল, “হ্যাঁ রে, তুই তো শুনি লোকেনের খুব পেয়ারের লোক।”

সে লজ্জা পেয়ে বলল, “কী যে বলেন হরিপদবাবু। আমি হব লোকেনবাবুর পেয়ারের লোক? আর পাঁচটি কাজের লোকের মতো আমিও একজন। খাটি খাই।”

“ওরে আমার খবর খুব পাকা। শুনেছি তুই সারাদিন লোকেনের কাছাকাছি ঘুরঘুর করিস। সত্যি নাকি?”

“আজ্ঞে তা কী করব বলুন। লোকেনবাবুই হুকুম দিয়ে রেখেছেন, যেন সর্বদা তাঁর দশ হাতের মধ্যে থাকি। যাতে ডাকলেই সাড়া দিতে পারি।”

“তা হলেই বুঝে দেখ। পেয়ারের লোক ছাড়া কেউ এত কাছ ঘেঁষে থাকতে পারে! তোর তো কপাল খুলে গিয়েছে।”

নীলমণি মাথা নেড়ে বলে, “না মশাই না, ফাইফরমাশ করার জন্যই তো এই ব্যবস্থা।”

“ওরে ওতেই হবে। শোন, একটা গুহ্য কথা আছে। যদি একটা খবর দিতে পারিস তা হলে কড়কড়ে হাজারটা টাকা পাবি।”

“কী খবর?”

“গোকুলপুরের ব্রিজটা ভেঙেছে এই গত বছর। ব্রিজটা মেরামতির জন্য টেন্ডারে লোকেন কত দর দিয়েছে জানিস?”

নীলমণি মাথা নেড়ে বলল, “না-না হরিপদবাবু, ওসব আমার জানা নেই। আমি কাজের লোক। আদার ব্যাপারির কি জাহাজের খবরে দরকার?”

হরিপদ চালাক লোক। ফস করে হাজার টাকার দু’খানা নোট তার বুক পকেটে গুঁজে দিয়ে বলল, “জাহাজে করেও আদার চালান যায় কিন্তু।”

নীলমণি তখন গলাটা চুলকোতে-চুলকোতে বলল, “কাকে যেন বলছিলেন, পঞ্চান্ন লাখ না কী যেন।”

“ব্যস-ব্যস, ওতেই হবে। টেন্ডারটা যদি এবার বাগাতে পারি তবে আরও হাজার টাকা পাবি। কিন্তু খবর যদি ঠিক না হয় তা হলে কিন্তু…”

নীলমণি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। লোকেনবাবুর কথার যে এত দাম তা তার জানা ছিল না।

একদিন সন্ধেবেলা হারাধন দাসের পদকীর্তন শুনতে পাঠবাড়ি গিয়েছে। মহীতোষ হাওলাদার ধরে পড়ল, “ওরে তুই নাকি লোকেনের ডান হাত?”

জিব কেটে নীলমণি বলে, “ছি-ছি, কী যে বলেন! আমি তার বাঁ পায়ের কড়ে আঙুলও নই।”

“সবাই বলে কিনা। শোন, মহেন্দ্র সরকার নামে এক অজ্ঞাত কুলশীল খালধারে তরলাবালা দেব্যার বিশ বিঘে জমি আর দোতলা বাড়িটা কিনতে চাইছে। তাও মাত্র দশ লাখে। আমি তরলাবালার উকিল, ওই সম্পত্তির দাম ষাট-সত্তর লাখের কম নয়। কিন্তু মহেন্দ্র সরকার ছাড়া আর কোনও খদ্দেরও ঘেঁষছে না। তাই সন্দেহ হচ্ছে, হ্যাঁ রে মহেন্দ্র সরকার বেনামায় লোকেন নয় তো!”

শুনে নীলমণি আকাশ থেকে পড়ল, “বলেন কী মশাই! লোকেনবাবু কোন দুঃখে মহেন্দ্র সরকার হতে যাবেন? তাঁর কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই?”

“আহা, উত্তেজিত হচ্ছিস কেন? এই নে বাপু, হাজারটা টাকা রাখ। তারপর একটু ভেবেচিন্তে বল তো বাবা।”

নীলমণি খুব ভালো। তারপর ভেবেচিন্তে বলল, “কয়েকদিন আগে একটা কেমন যেন মিটিংয়ের মতো হয়েছিল বটে। তাতে কয়েকবার মহেন্দ্র সরকার নামটাও শুনেছি যেন।”

“বুঝেছি বাপু, বুঝেছি। এই খবরটুকুই দরকার ছিল।”

তা একদিন হঠাৎ লোকেনবাবু খবর পাঠিয়ে নিতাইকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “হ্যাঁ রে, তুই তো দিব্যি বলিয়ে-কইয়ে মানুষ। মাথাটাও ঠান্ডা। একটা কাজ করতে পারিস?”

“কী কাজ বাবুমশাই?”

“শক্ত কাজ নয়, তবে বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হবে। নন্দীবাড়ির কিঞ্জর শাঁখটা আমার চাই। গোপাল নন্দী ছিটিয়াল শোক। তাকে ভজিয়ে শাঁখটা আনতে পারবি? প্রথমে হাজার টাকা দর দিবি। ধীরে ধীরে উপরে উঠবি। পাঁচ হাজার পর্যন্ত। কাজটা উদ্ধার করাই চাই। পারবি না?”

“আপনার আশীর্বাদে হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে, ” বলে লোকেনবাবুকে পেন্নাম করে নিতাই বিদায় নিল।

ঠিক দু’দিন পরই গজুবাবুর কুস্তির আখড়ার কাছে নীলমণিকে পাকড়াও করল জগাই দাস।

“অ্যাই মর্কট, পা-চাটা গোলাম, পচা কুমড়োর পোকা, সেদিন নিতাই চোরটা লোকেনের কাছে গিয়েছিল কেন রে? কী মতলব?”

নীলমণি ভারী অবাক হয়ে বলল, “নিতাই? সে আবার কে?”

জগাই পালোয়ান লোক। যে ঘুসোটা তুলেছিল সেটা নাকে-মুখে এসে লাগলে নীলমণির বিপদ ছিল। কিন্তু জগাই ঘুসোটা মারল না শেষ পর্যন্ত। বুকের কাছে জামাটা খামচে ধরেছিল। ছেড়ে দিয়ে বলল, “ও, তুই তো আবার খবর বিক্রি করিস বলে শুনেছি। ঠিক আছে, পাঁচশো টাকা দেব, বলে ফ্যাল।”

তার যে বাজারে একটা রেট আছে, ছুঁচো মেরে যে সে হাত গন্ধ করে না, সেটা জগাইকে বলতে নীলমণির সাহসে কুলোল না। কিন্তু অভিমানের গলায় সে বলল, “জগাইদাদা, শেষে কি আমাকে মিথ্যেবাদী ঠাওরালে! সারাদিন ভূতের মতো খাটি। কোথায় কী হচ্ছে তার খবরও রাখি না।”

জগাই চোখ পাকিয়ে বলল, “কত চাস?”

নীলমণি গদগদ হয়ে বলল, “তোমার-আমার মধ্যে কি আর দেনাপাওনার সম্পর্ক নাকি জগাইদাদা? তবে কিনা দেশ থেকে বউ চিঠি লিখেছে। তার নাকি বড্ড টানাটানি চলছে। হাজারখানেক পাঠাতে বলেছে।”

জগাই ফস করে দু’খানা পাঁচশো টাকার নোট বের করে তার হাতে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে। বৃত্তান্তটা বল।”

নীলমণি বলল, “তুমি তো জানোই জগাইদাদা যে, লোকেনবাবু সবসময়ে মানুষের ভালোর জন্যই যা কিছু করেন। দেশ আর দশের মঙ্গলের কথা ভেবেই করেন। ঠিক কিনা বলো!”

জগাই খুব একচোট হাঃ হাঃ করে হেসে বলে, “তা আর বলতে!”

“তাই ওই গোপাল ছোঁড়াকে গিয়ে একদিন বললেন, ‘বাপু হে, তুমি তো ভুলোভালা মানুষ। তোমার বাড়িটারও আগলবাগল নেই। তাই বলছি ওই যে একখানা পুরনো শাঁখ তোমাদের বিষ্ণুমূর্তির হাতে রয়েছে ওটা ওখানে রাখা ঠিক হচ্ছে না। কবে চুরিটুরি হয়ে যায়। ও শাঁখ তো এলেবেলে শাঁখ নয় রে বাপু, একটা পুরাতাত্ত্বিক জিনিস। তাই বলছি, আমি না হয় থেকে হাজার টাকা দিচ্ছি। শাঁখটা দিয়ে দাও। আমি যত্ন করে রক্ষা করব। এসব জিনিস কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। দেশ আর দশের সম্পদ।’ কিন্তু গোপাল ছোঁড়া একে পাগল তাতে আবার গোঁয়ার। বলল, ‘না মশাই, ও শাঁখ বিষ্ণুর হাতে আছে। সেখানেই থাকবে। আমাদের বংশের নিয়ম।’ শুনেই লোকেনবাবু পাঁচ হাজার পর্যন্ত উঠেছিলেন। কিন্তু গোপালকে নড়ানো যায়নি।”

“তাই শাঁখটা চুরি করার জন্য নিতাইকে লাগিয়েছে তো?”

নীলমণি জিব কেটে বলে, “না-না, ছিঃ ছিঃ। চুরি-টুরি নয়। তোমাকে নিতাই বুঝি সে কথাই বলেছে? ডাহা মিথ্যে। লোকেনবাবু নিতাইকে পাঠিয়েছেন গোপালকে রাজি করিয়ে ন্যায্য দামে শাঁখটা নিয়ে আসতে।”

“আমাকে কি আহাম্মক পেয়েছিস রে নীলমণি? নিতাই যাবে শাঁখ নিয়ে দরাদরি করতে! ঠিক আছে, যে হাজার টাকা তোকে এইমাত্ৰ দিলুম সেটা দে তো।”

নীলমণি অবাক হয়ে বলে, “দেওয়া জিনিস কি ফেরত নিতে হয় জগাইদাদা? কেন, আমার কথা কি তোমার পছন্দ হলো না?”

“তোর কথা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আর টাকাটাও ফেরত নিচ্ছি না। একটু দরকার আছে বলে ধার হিসেবে নিচ্ছি। সময়মতো ফেরত পাবি।”

টাকাটা যে ফেরত হবে না তা নীলমণি জানে। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া তার আর কী-ই বা করার আছে?