নন্দীবাড়ির শাঁখ – ১

এক

মৃদঙ্গবাবু ঘুম থেকে উঠে চোখ চেয়েই ভারী অবাক হয়ে দেখতে পেলেন, তাঁর পায়ের কাছে খাটের পাশেই একটা ঝাঁকামুটে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঝাঁকাতে ঝিঙে, লাউ আর বেগুনও দেখতে পেলেন তিনি। শশব্যস্তে উঠতে গিয়ে তিনি আর-এক দফা অবাক হলেন, কারণ তাঁর খাটের পাশ দিয়েই সাঁ করে একটা সাইকেল টিং টিং করে বেল বাজাতে-বাজাতে চলে গেল।

চারদিকে চেয়ে তিনি হাঁ। এ কী! তিনি যে রাস্তার উপর খাট পেতে শুয়ে আছেন! চারুবাবু থলি হাতে বাজারে যেতে-যেতে তাঁর দিকে চেয়ে বললেন, “আহা, আর-একটু সরিয়ে খাটটা পাতবেন তো, যাতায়াতের যে বড় অসুবিধে হচ্ছে মশাই!”

মৃদঙ্গবাবু ভারী লজ্জিত হলেন। ঘুম ভাঙতে বেশ বেলা হয়েছে তাঁর। চারদিকে ঝলমলে রোদ। রাস্তায় বিস্তর লোক যাতায়াত করছে। তিনি তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে দেখেন, যেদিকে নামবেন সেদিকে পরপর তিনজন ভিখিরি বসে ভিক্ষে করছে। কী বিপদেই যে পড়া গেল! অন্য দিক দিয়ে নামবার উপায় নেই। সেদিকটায় খাট ঘেঁষে ঘোষেদের দেওয়াল। খাটের গা আর মাথার দিকটায় উঁচু কাঠের নকশা করা রেলিং থাকায় ওদিক দিয়েও নামার সুবিধে নেই।

বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছেন। সদর রাস্তায় খাট পেতে শুয়ে আছেন। লজ্জায়, অস্বস্তিতে তাঁর বড্ড আঁকুপাঁকু হচ্ছিল। এমন সময় উলটো দিকে রাস্তার ওপার থেকে মহাদেব মোদক তার কচুরি-জিলিপির দোকান থেকে হাঁক দিয়ে বলল, “ও মৃদঙ্গবাবু, গরম-গরম কচুরি আর জিলিপি চলবে? বলুন তো নিয়ে আসি।”

প্রস্তাবটা মন্দ নয়। মৃদঙ্গবাবু বললেন, “তাই আন বাবা, বড্ড বাঁধনের মধ্যে পড়ে গিয়েছি বাপু।”

ঠিক এই সময় বলাই ঠিকাদারের পেয়াদা পাঁচু হাত নেড়ে নেড়ে একটা ইটবোঝাই লরিকে পিছিয়ে আনতে-আনতে হাঁক দিয়ে বলছিল, “সরে যান, সরে যান, এখনই ট্রাক খালাস হবে।”

ট্রাকটা তার খাটের সামনেই এসে থামল দেখে মৃদঙ্গবাবু আঁতকে উঠে বললেন, “করো কী, করো কী হে পাঁচুগোপাল? আমার খাট-বিছানায় ইট ফেলবে নাকি?”

পাঁচু অত্যন্ত অভদ্র গলায় বলে, “তা কী করব বলুন, আমাদের উপর যা হুকুম আছে তাই তো তামিল করতে হবে! আর আপনিই বা কোন আক্কেলে রাস্তাজুড়ে শুয়ে আছেন শুনি!”

“দাঁড়াও বাপু, দাঁড়াও! আগে জিনিসপত্তর সরাই।”

পাচু বলে, “আমাদের অত টাইম নেই মৃদঙ্গবাবু। এক্ষুনি মাল খালাস করে আর-এক ট্রিপ মাল আনতে যেতে হবে। ওরে, তোরা ইট ফেলতে থাক।”

দমাদম ইটের পর-ইট এসে তাঁর বালিশে-বিছানায় পড়তে লাগল। মাথা বাঁচাতে মাথায় হাত চাপা দিয়ে মৃদঙ্গবাবু ডুকরে উঠলেন, “ওরে গেছি রে!”

নিজের চেঁচানিতেই তিনি ঘুম ভেঙে উঠে বসলেন। বুকটা এখনও ধড়ফড় করছে। ঘুম ভাঙতে আর-একটু দেরি হলেই নির্ঘাৎ ইটের ঘায়ে মাথা ফাটত, হাত-পা ভাঙত, রক্তারক্তি হত।

এখন ভারী নিশ্চিন্তি লাগছে তাঁর। দিব্যি ঘরের মধ্যে নিজের বিছানাটিতে বসে আছেন। বেলাও হয়নি, সবে আবছা-আবছা ভোর হচ্ছে। তাঁর কাজের লোক রামু রোজকার মতোই চিরতার জলের গ্লাস নিয়ে ঘরে ঢুকছে। চিরতার জল তাঁর খুবই প্রিয় পানীয়। মনটা বেশ খুশি-খুশি হয়ে উঠছে তাঁর। কিন্তু ঠিক এই সময়ে তিনি ভারী অবাক হয়ে দেখলেন, একটা রুপোলি রঙের পুঁটিমাছ বাতাসে সাঁতার কাটতে-কাটতে তাঁর ডান ধার থেকে এসে নাকের ডগা দিয়ে বাঁ ধারে চলে গেল।

পুঁটিমাছ বাতাসেও ঘুরে বেড়ায় এ তাঁর জানা ছিল না। তিনি ভারী অবাক হয়ে বলেন, “ও রামু, ঘরে যে পুঁটিমাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে!”

রামু গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে, “পুঁটিমাছ! তা পুঁটিমাছকে গেরাজ্যি করার দরকার কী? লোকে কথায় বলে, ‘চুনোপুঁটি, ’ ওসব ছোটখাটো জিনিসকে কি পাত্তা দিতে আছে!”

কিন্তু মৃদঙ্গবাবুকে অবাক করে দিয়ে ঠিক এই সময়ে একটা মাগুরমাছ তাঁর বাঁ কনুইয়ের পাশ দিয়ে উঠে এসে বুকের সামনে দিয়ে দিব্যি কিলবিল করে ডান ধারে বইয়ের আলমারির দিকে চলে গেল। তিনি বলে উঠলেন, “তা বলে শেষ পর্যন্ত মাগুরমাছও এসে হানা দিল নাকি? এসব হচ্ছে কী বল তো!”

“কেন, মাগুর তো ভালো মাছ! শুনতে পাই মাগুরমাছে খুব পোস্টাই!”

“ওরে, তুই বুঝছিস না, মাছের তো জলে থাকার কথা, ঘরের মধ্যে তারা ঘোরাফেরা করছে কেন?”

“পুঁটি আর মাগুর দেখেই ঘেবড়ে গেলেন কর্তা! তা হলে রান্নাঘরে আর বৈঠকখানায় গিয়ে দেখুন, বড়-বড় চিতল আর বোয়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। মা-ঠাকুরন তো এ সময়ে মাছেদের রুটি ধাওয়ান কিনা!”

মৃদঙ্গবাবুর খুব যে বিস্ময় হলো তা নয়। তবে একটু কেমন খটকা লাগতে লাগল। মিনমিন করে বললেন, “কিন্তু যত দূর জানি, মাছের তো জলে থাকার কথা।”

রামু অবাক গলায় বলে, “তা তো বটেই। আর তারা তো জলেই আছে! চারদিকে জল ছাড়া আর কিছুই কি দেখছেন কর্তা?”

“তাও তো বটে!” বলে মৃদঙ্গবাবু তাঁর চারদিকে একটু হাত নেড়ে-নেড়ে দেখলেন, জলই বটে! বললেন, “ঘরে জল ঢুকেছে বুঝি?”

“কী যে বলেন কর্তা, জল তো সেই কবেই ঢুকে বসে আছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং না কী যেন ছাইপাঁশ হলো, তারপর থেকে তো আমরা জলেই বাস করছি। সুবিধেটাও দেখুন, আলাদা করে রোজ আর চান করতে হচ্ছে না!”

মৃদঙ্গবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে যখন ফের শ্বাস নিতে যাচ্ছিলেন, সে সময়ে মুখটা অসাবধানে একটু হাঁ হয়ে যাওয়ায় একটা বিপত্তি হলো। কোথা থেকে একটা গোদা কইমাছ আচমকা তাঁর মুখের সামনে এসে একটা গোঁত্তা খেয়ে মুখের ভিতরে ঢুকে সোজা গলায় গিয়ে এমন কাঁটা দিল যে মৃদঙ্গবাবু ভিমরি খেয়ে কাশতে কাশতে জেরবার হয়ে বললেন, “ওরে, গলায় কইমাছ আটকাচ্ছে, আমি কি আর বাঁচব?”

বলতে-বলতেই চোখ চেয়ে দেখলেন, কোথায় জল, কোথায় মাছ! ভোরের আলো ফুটেছে, হওয়া বইছে, বাইরে পাখি ডাকাডাকি করছে, গয়ারামের কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

তা হলে কি তিনি স্বপ্নের ভিতরে স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নের ভিতরেও স্বপ্ন দেখছিলেন? এমনটা কি হওয়া স্বাভাবিক? লোকে কি মোজার উপর মোজা এবং তার উপর আবার মোজা পরে? নাকি গেঞ্জির উপর গেঞ্জি, আর তার উপর ফের গেঞ্জি চাপায়?

যাই হোক, এখন তার ফের ধন্দ হয়েছে যে তিনি এখনও স্বপ্নের ভিতরেই আছেন, নাকি জেগে রয়েছেন? তবে চটকা ভাঙল মেঘু পাগলার ইংরেজি শ্যামাসঙ্গীত শুনে। মেঘুর দৃঢ় বিশ্বাস, সে আসলে একজন ইংরেজ সাহেব, তার মা-বাবা তাকে এদেশে ফেলে চলে গিয়েছে। সেই ক্ষোভ সে মেটায় ইংরেজিতে গান গেয়ে। মুশকিল এই যে, নিজেকে সাহেব বলে ভাবলেও সে বেজায় কালী আর কৃষ্ণের ভক্ত। প্রাতঃকালে তার ইংরেজি ভক্তিগীত শুনে গঞ্জের ঘুম ভাঙে। সে এখন হেঁড়ে গলায় ওই গাইছে, “ও মাদার, হাউ সং ইউ উইল মেক মি গো রাউন্ড অ্যান্ড রাউন্ড লাইক দি অয়েলমেকারস ব্লাইন্ডফোন্ডেড বুলস?” তার পরের গান, “ও মাই মাইন্ড, ইউ ডু নট নো কাল্টিভেশন, দিস হিউম্যান সয়েল ইজ লায়িং ব্যারেন, ইফ কাল্টিভেটেড গোন্ডেন ক্রপ উড হ্যাভ গ্রোন।” আর তার পরেই হরিকীর্তন, “চ্যান্ট হরি, চ্যান্ট হরি, চ্যান্ট হরি, চ্যান্ট…”

নাহ, এবার জেগেছেন বলেই একটু ভরসা হচ্ছে তাঁর। কারণ, রোজ সকালে মেঘুর গান শুনেই তাঁর ঘুম ভাঙে।

তবে তাড়াহুড়ো করা তাঁর স্বভাব নয়। ভেবেচিন্তে এবং ধীরেসুস্থে তিনি সর্বদাই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও তাঁর মনে হচ্ছে তিনি এবার সত্যিই জেগেছেন, তবু নিশ্চিন্ত হওয়া দরকার।

এই ভেবে মৃদঙ্গবাবু উঠতে যাচ্ছিলেন, অমনি কে যেন, “করেন কী, করেন কী, ” বলে তাঁর বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে ঠেসে ফের শুইয়ে দিল। মৃদঙ্গবাবু অবাক হয়ে দেখেন তাঁর বিছানার পাশে ডাঃ সুধীর ঘোষ দাঁড়িয়ে, গলায় স্টেথো, এক হাতে স্ক্রু ড্রাইভার, অন্য হাতে একটা সাঁড়াশির মতো প্লায়ার।

মৃদঙ্গবাবু ককিয়ে উঠে বললেন, “আহা, আমাকে উঠতে দিচ্ছেন না কেন? দেখছেন না, সকাল হয়ে গিয়েছে! প্রাতঃকৃত্য করতে হবে তো নাকি! উঠতে দিন তো মশাই!”

সুধীরডাক্তার খেঁকিয়ে উঠে বললেন, “উঠবেন! উঠবেন বললেই হলো! যদি উঠবেনই, তা হলে আপনাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে কেন?”

সুধীর ঘোষ বদরাগী ডাক্তার। রোগীরা তাকে বেজায় ভয় পায়। এমনকি ডাকসাইটে জলধরবাবুও সুধীর ঘোষকে দেখলে গা-ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। জলধর সরকার দাপুটে মানুষ। তাঁর কথার উপর কেউ কথা কওয়ার সাহস রাখে না। ঘরে বাইরে তাঁর অখণ্ড প্রতাপ। রক্ত আমাশা হলে তিনি গাওয়া ঘিয়ে ভাজা লুচি আর বেগুনি খান। জ্বর হলে তেঁতুলের টক। এ হেন জলধর সরকার একবার উদরাময়ে কাহিল হয়ে গিন্নিকে পরোটা আর মাংসের ফরমাশ করেছিলেন। গিন্নি সটান খবরটা সুধীর ঘোষের কাছে পাঠিয়ে দেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সুধীর ঘোষ পুলিশ নিয়ে হাজির। থানায় এফ আই আর করে এসেছেন। আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে জলধর সরকারকে গ্রেফতার করে লক-আপে পুরে দেওয়া হলো। আর সেখানে সাতদিন জলধরকে কাঁচকলা, থানকুনির ঝোল আর গলা ভাত খাওয়ানো হয়েছিল। জলধরের চেঁচামেচি বা ভীতি প্রদর্শনে কোনও কাজ হয়নি। জনগণও সুধীর ঘোষকেই সাধুবাদ দিতে থাকে। সবাই বলতে থাকে, “হ্যাঁ, এই হলো ডাক্তার!”

তা সেই সুধীর ঘোষ কটমট করে মৃদঙ্গবাবুর মুখের দিকে চেয়ে বরফ-শীতল গলায় বললেন, “কেন, শুয়ে থাকতে কি আপনার কোনও অসুবিধে হচ্ছে?”

মৃদঙ্গবাবু ঘাবড়ে গিয়ে মিউমিউ করে বললেন, “আজ্ঞে ঠিক তা নয়। তবে কিনা প্রাতঃকালে শয্যাত্যাগ করারই অভ্যাস কিনা। ওটা নিয়মের মধ্যেই পড়ে।”

“ওসব বস্তাপচা নিয়মের কথা বলে লাভ হবে না। শয্যাত্যাগই যদি করবেন, তবে শয্যা নিয়েছিলেন কেন মশাই? আর শয্যাই যদি নিয়েছেন তবে শয্যাত্যাগের কথা ওঠে কিসে?”

মৃদঙ্গবাবু বুঝতে পারলেন যে, তিনি বিছানা ছেড়ে ওঠেন এটা সুধীর ঘোষ ভালো চোখে দেখছেন না। লোকটাকে তো আর চটানো যায় না। তাই অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গেই মৃদঙ্গবাবু বললেন, “আজ্ঞে রাত্রিবেলায় শয্যাগ্রহণেরও একটা নিয়ম আছে বলে যেন শুনেছিলাম।”

সুধীর ঘোষের মুখ হাস্যহীন, চোখে কঠিন দৃষ্টি, অতিশয় শীতল গলায় বললেন, “শয্যাশায়ী কথাটা কখনও শুনেছেন?”

মৃদঙ্গবাবু ঘাড় নেড়ে বলেন, “যে আজ্ঞে।”

“কথাটার মানে জানেন?”

“যে আজ্ঞে। যে শুয়ে থাকে সেই শয্যাশায়ী।”

“ভুল জানেন। শয্যাশায়ী কথাটায় যোগরুঢ় অর্ধ আছে। ওর মানে হলো, যে গুরুতর অসুস্থ।”

মৃদঙ্গলবাবু প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন, “অসুস্থ? আমার কী হয়েছে ডাক্তারবাবু?”

রোগী ভয় পেলে সুধীরডাক্তার খুশি হন। কারণ, বেশিরভাগ রোগীই ব্যাদড়া। কথা শুনতে চায় না, নানা অবাধ্যতা করে। ভয় পেলে একটু তৃপ্তির হাসি দেখা গেল। বললেন, “আরে মশাই, আপনার কী হয়েছে সেটা পরীক্ষা করতেই তো আমার আসা!”

মৃদঙ্গবাবু সভয়ে বললেন, “কিন্তু আপনার হাতে স্ক্রু ড্রাইভার আর প্লায়ার কেন?”

“আরে মশাই, মানুষের শরীরটাও তো আসলে একটা কারখানা। কোথায় কোন নাটবল্টু ঢিলে হয়ে গিয়েছে, কোন স্ক্রু টাইট মারতে হবে তা দেখতে হবে না! বলতে নেই, আপনার কারখানার মেনটেনেন্স অত্যন্ত খারাপ। মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রত্যেকটা রিজিয়নেই গন্ডগোল! ঠিকঠাক চালাতে হলে অনেক পুরনো পার্টস ফেলে দিয়ে নতুন পার্টস লাগাতে হবে।”

এই বলতে-বলতেই তাঁর ডান হাঁটুতে স্ক্রু ড্রাইভারটা ঠেসে ধরে সুধীর ঘোষ প্যাঁচ ঘোরাতে লাগলেন। মৃদঙ্গবাবু আর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে “বাবা রে!” বলে একটা চিৎকার দিয়ে ভিরমি খেলেন।

আর ভিরমি খেতেই তাঁর চটকাটা ভাঙল। চোখ চেয়ে দেখেন চারদিকে অন্ধকার ঘুরঘুট্টি। কে যেন ভারী মিঠে আর মৃদু গলায় বলল, “বাবু লাগল নাকি?”

ডান হাঁটুতে হাত বোলাতে-বোলাতে মৃদঙ্গবাবু বললেন, “তা লাগবে না! সুধীর ঘোষটার মাথাই খারাপ হয়েছে। কেউ স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে হাঁটুর জোড় খোলে? এক্কেবারে জালি ডাক্তার। কিন্তু তুমি কে হে এত রাত্তিরে?”

লোকটা খুক করে একটু হেসে বলে, “আর কবেন না বাবু, নিতান্ত আতান্তরে পড়েই রাতবিরেতে বেরতে হয়। ঠেকায় পড়েই আসা।”

“তা আমার হাঁটুতে কি খোঁচাটা তুমিই মারলে নাকি?”

“আজ্ঞে ইচ্ছে মোটেই ছিল না। কিন্তু আপনার এমন নিঃসাড় ঘুম দেখে একটু ভয়-ভয় করছিল। আমাদের যুধিষ্ঠির পালেরও এরকম ঘুম ছিল কিনা। ঘুমোলে আর সাড় থাকত না, কোথায় তলিয়ে যেত। তা ওই ঘুমই তো তার কাল হলো। একদিন এমন ঘুমোল যে আর উঠলই না।”

মৃদঙ্গবাবুর বুকটা কেঁপে উঠল। সর্বনাশ! তাঁরও তো ঘুমটা ওরকম সব্বোনেশে বলেই মনে হচ্ছে। তিনি স্বপ্নের ভিতরে স্বপ্ন এবং তার ভিতরেও স্বপ্নের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। এক ঘুম থেকে পুরোপুরি জেগে উঠতে তাঁকে আসলে বারচারেক জাগতে হয়েছে। এবং এখনও পুরোপুরি জেগেছেন কিনা বুঝতে না পেরে তিনি কাতর গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, আমি কি জেগেছি হে বাপু?”

অন্ধকার থেকে লোকটা ভারী খুশির গলায় বলে, “নির্যস জেগেছেন কর্তা! তবে একটু খোঁচা মারতে হলো বলে মাপ করবেন।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদঙ্গবাবু বললেন, “না হে বাপু, তাতে আমার উপকারই হয়েছে।”

“যথার্থই বলেছেন। এমনিতে খোঁচাখুঁচি জিনিসটা কেউ পছন্দ করে না বটে। কিন্তু ভেঙে দেখলে খোঁচাখুঁচির বেশ একটা উপকারও আছে। খোঁচা খেলে লোকে চাঙ্গা হয়। চনমনে হয়ে ওঠে। ঠিক কিনা বলুন! এই আমাদের দাশরথি পালের কথাই ধরুন। একেবারে ম্যাদামারা পুরুষ। সর্বদাই যেন ঝিমোচ্ছেন, তিন ডাকে সাড়া মেলে না, কচ্ছপের গতিতে হাঁটেন, ঘুম-ঘুম ভাব করে তাকান। তারপর একদিন বাজার করে ফেরার পথে শিবের ষাঁড় চক্রধর খেপে গিয়ে লোকজনকে তাড়া করে। আর কাউকে নাগালে না পেয়ে দাশরথিবাবুকেই মারল ঢুঁ। দাশরথিবাবু সেই গুঁতোয় দশ হাত ছিটকে গিয়ে পড়লেন মহিমের গোরুর গাড়িতে বোঝাই খড়ের গাদায়। একটু চোট হলো ঠিকই, মূৰ্ছাও গিয়েছিলেন, কিন্তু সেসব কেটে যেতেই দাশরধিবাবুকে এখন আর চেনাই যায় না। এনার্জিতে যেন সর্বদাই টগবগ করছেন, তাড়াং তাড়াং চোখ করে চারদিকে নজর রাখছেন, টগবগ করে হাঁটছেন, বাঘের মতো হাঁকডাকও হয়েছে এখন। আগে যারা হ্যাটা করত, এখন তারা পথ ছেড়ে সরে দাঁড়ায়।”

মৃদঙ্গবাবুর সংশয় তবু যেন দূর হচ্ছে না। তিনি সন্দিহান গলায় বললেন, “তা হলে তুমি বলছ যে, আমি সত্যিই জেগে আছি? দেখো বাপু, এই জাগার আগেও আমি বারচারেক জেগেছি বটে, কিন্তু জেগেই কিছুক্ষণ পর বুঝতে পেরেছি যে, আসলে আমি জাগিনি। আর-একটা ঘুমের মধ্যে ডুবে রয়েছি। পেঁয়াজের খোসার মতো অবস্থা বুঝলে! ঘুমের মোড়কে গভীর ঘুম, গভীর ঘুমের মোড়কে গভীরতর ঘুম, গভীরতর ঘুমের মোড়কে আরও গভীরতর ঘুম… ওহ, ঘুমের ঠেলায় একেবারে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিলুম। তাই ভয় হয়েছে, এবার কি সত্যিই জেগেছি! নাকি এর পরও জাগতে হবে!”

“না-না ভয় পাবেন না। জেগেছেন আপনি ঠিকই। তবে কথাটা বলেছেনও বেশ সরেস। বড় মাপের কথা। জাগার কি কোনও শেষ আছে? বড়-বড় মহাপুরুষেরা তো সেই কবে থেকে জাগা মানুষদেরই বলছেন, ‘ওরে তোরা ওঠ, জাগ্রত হ, বেলা যে যায়!’ তবে বাবু, সেসব হলো বড়-বড় জাগা। তা সেসব জাগা না হয় পরে সময়মতো জাগবেন। আপাতত এই কাজ চালানোর মতো জাগা জাগলেই হবে।”

“না হে বাপু, আমি যে পাকাপাকিভাবে জেগেছি সেটা আমার তেমন বিশ্বাস হচ্ছে না। চিমটি বা খোঁচাখুঁচি ছাড়া কোনও উপায় নেই?”

“দাঁড়ান বাবু, দাঁড়ান। শুনেছিলাম বটে স্বপ্নের মধ্যে নাকি আয়নায় নিজের মুখ দেখা যায় না। কেউ নাকি কখনও স্বপ্নে নিজের মুখ দেখেনি।”

মৃদঙ্গবাবু সোৎসাহে বললেন, “বটে! তা হলে ওই টেবিলের উপর যে হাত-আয়নাটা আছে তা নিয়ে এসো দেখি।”

লোকটা অন্ধকারেই হাত-আয়নাটা এনে মশারি তুলে তাঁর হাতে দিল। মৃদঙ্গবাবু বললেন, “ওহে বাপু, ঘরের আলোটা কে জ্বালবে! নইলে মুখটা দেখব কী করে?”

“কেন আপনার বালিশের পাশে টর্চবাতিটা তো রয়েছে। সেইটে জ্বেলে নিলেই তো হয়।”

“কেন হে বাপু, ঘরের আলো জ্বালতে দোষ কী?”

“একটু অসুবিধে আছে কর্তা।”

“কিসের অসুবিধে?”

“সেই ছেলেবেলা থেকেই বাবা বলে এসেছে, ‘ওরে জগাই, লেখাপড়া শিখলি না, সহবত শিখলি না, সাধুসঙ্গ করলি না, এর পর পাঁচজনকে মুখ দেখাবি কী করে?’ সেই থেকে বুঝলেন কর্তা, পারতপক্ষে এই পোড়া মুখ কাউকে দেখাই না।”

“বুঝেছি বাপু, চেনা দিতে চাও না তো! ঠিক আছে, ” এই বলে হাতড়ে বালিশের পাশ থেকে টর্চটা নিয়ে আলো জ্বেলে আয়নার দিকে তাকিয়েই একটা চাপা আর্তনাদ করে উঠলেন মৃদঙ্গবাবু, “সর্বনাশ! এ তো আমি নই।”

জগাই শশব্যস্তে বলে ওঠে, “বলেন কী! আপনি নন? এ! হেঃ, তা হলে তো মুশকিল হলো মশাই! আপনার বদলে অন্য কেউ ঘরে ঢুকে বসেন আছে নাকি? আর-একবার ভালো করে একটু দেখুন তো!”

মৃদঙ্গবাবু দেখলেন এবং হতাশ হয়ে টর্চ আর আয়না ফেলে দিয়ে বললেন, “দেখে আর হবেটা কী? আয়নায় তো একটা বুড়ো লোকের মুখ দেখা যাচ্ছে! কিন্তু আমার বয়স তো মোটে বত্রিশ!”

জগাই একটু কেশে গলা সাফ করে নিয়ে বলে, “আজ্ঞে, বুড়ো হতে একটু সময় লাগে। টক করে বুড়ো হওয়া খুবই শক্ত। তবে জ্ঞানবৃদ্ধ বলে কী যেন একটা কথা আছে না কর্তা?”

“তা আছে।”

“ওর মানে হলো বেশি লেখাপড়া করলে লোকে বুড়িয়ে যায়। আপনার বোধ হয় সেটাই হয়েছে। আমাদের হরগোবিন্দরও তাই হয়েছিল কিনা।”

“কীরকম?”

“মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই হরগোবিন্দ এত লেখাপড়া করে ফেলল যে, চুলে পাক ধরল, দাঁত পড়ে গেল, রাস্তা দিয়ে যখন হাঁটত তখন দেখে মনে হত পিঠে একটা ভারী বস্তা টেনে-টেনে কুঁজো হয়ে চলেছে।”

“বস্তা?”

“আজ্ঞে বস্তাটা দেখা যেত না। জ্ঞানের বস্তা তো। ওই জ্ঞানের ভারেই কুঁজো হয়ে গিয়েছিল।”

মৃদঙ্গবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “বাপু জগাই, আমি সেই কবে উনিশ-কুড়ি বছর বয়সে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে দিয়েছি। তারপর থেকে আর বইপত্রের সঙ্গে সম্পর্কই নেই। না হে বাপু, আমার মনে হচ্ছে, আমি এখনও জাগিনি। ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে স্বপ্নই দেখছি।”

“আহা, স্বপ্ন দেখা কি আর খারাপ জিনিস কর্তা! তার জন্য ঘুমোতে হবে কেন? যত বড়-বড় মানুষও তো জেগে-জেগেই স্বপ্ন দেখতেন। নেতাজি দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতেন। গাঁধীজি অহিংসার স্বপ্ন দেখতেন, স্বামীজি দেশের লোককে বীর-বৈরাগী বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। আমিও তো কতদিন জেগে-জেগেই গাওয়া ঘি দিয়ে গরম ভাত খাওয়ার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন আছে থাক, তা বলে কি কাজ কারবার বন্ধ রাখতে হবে নাকি কর্তা!”

মৃদঙ্গবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নেড়ে বললেন, “না হে জগাই, এরকম দোটানার মধ্যে থাকলে কাজকর্মের ইচ্ছেই হয় না। আর কাজকর্ম করে হবেই বা কী বলো। ধরো, এখন যদি আমি কষ্ট করে মাংস, পোলাও রাঁধি, জামাকাপড় ইস্তিরি করি, জুতো পালিশ করে রাখি বা বাগানের মাটি খানিকটা কুপিয়ে আসি, আর তারপরেই যদি পট করে ঘুমটা ভেঙে যায় তা হলে মেহনতটাই মাটি।”

“ওহ, আপনার হিসেবের মাথা বড় পরিষ্কার কর্তা। কিন্তু কথা হলো, ইদিকে যে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে কর্তা। পাখিরা কেমন চিল্লামিল্লি করতে লেগেছে শুনছেন তো! দিনমানে আমার আবার পাঁচজনকে মুখ দেখানোর উপায় নেই কিনা। তাই কাজের কথাটা যে এবার না সারলেই নয়।”

“হ্যাঁ, তাই তো! তুমি যে এই মাঝরাতে আমার ঘরে কেন সেঁধিয়েছ সেটাই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি, তা হ্যাঁ বাপু জগাই, তোমার মতলবখানা কী? তুমি চোর নও তো!”

“এই তো মুশকিলে ফেললেন। জবাবে বলিই বা কী? তা ধরেন যদি চোরই হয়ে থাকি?”

“তা হলে জগাই বাপু, আমি ঘুমিয়ে থাকতে থাকতেই তুমি বরং তোমার কাজকারবার সেরে নাও। তাতে আমার একটু সুবিধেই হবে।”

“কীরকম সুবিধে কর্তা?”

“স্বপ্নের মধ্যে যা হয় তা তো আর সত্যি নয়! ওই যে বললুম, স্বপ্নের মধ্যে পোলাও-মাংস রান্না হলো, কাপড় ইস্তিরি হলো, মাটি কোপানো হলো, কিন্তু আসলে কিছুই হলো না। তেমনই চুরিটাও এখন হয়ে গেলে ঘুম ভাঙলে দেখব, কিছুই চুরি যায়নি। ঠিক কিনা বলো।”

“আমার কী মনে হয় জানেন কর্তা?”

“কী বলো তো!”

“আপনি টনটনে জেগে আছেন। ঘুমন্ত মানুষের এত বুদ্ধি হওয়ার কথা নয়। মানুষ ঘুমোলে তার বুদ্ধিও খানিক ঘুমিয়ে পড়ে কিনা।”

মৃদঙ্গ কথাটা একটু ভাবলেন, তারপর বললেন, “তা কথাটা তুমি বড় মন্দ বলোনি। কিন্তু তবু আমার ধন্দটা যাচ্ছে না হে।”

“আজ্ঞে ধন্দই বা মন্দ কী? ধন্দ থেকেই দুনিয়ায় যত বড়-বড় জিনিস আবিষ্কার হয়েছে কিনা। এই যে ধরুন গাছ থেকে আম পড়ে, জাম পড়ে, নারকেল পড়ে, তাতে কারও কোনও হেলদোল নেই, ধও নেই। কিন্তু সেই কবে নিউটন সাহেবের সামনে একখানা আপেল খসে পড়ায় সাহেব এমন ধন্দে পড়লেন যে, তেতেফুঁড়ে একেবারে মাধ্যাকষর্ণই আবিষ্কার করে ফেললেন। কাজেই আপনার যে ধন্দ হয়েছে সেটা আনন্দেরই কথা। ওই থেকেই ফস করে কিছু একটা বেরিয়ে পড়বে’খন। কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আপনি জেগেই আছেন কর্তা।”

“আরে ধুর, বাজি ধরে লাভ কী? ঘুম ভেঙে গেলে কি আর বাজির টাকা আদায় হবে? তখন তোমাকে পাব কোথায়?”

“এঃ, আপনাকে যত দেখছি তত শ্রদ্ধা হচ্ছে কর্তা। কী বিষয়বুদ্ধি।”

“তুমি চোর হলেও ভারী মিষ্টি আর তোষামুদে চোর। আমার সম্পর্কে এত ভালো-ভালো কথা বহুদিন কেউ বলেনি।”

“কিন্তু বলা উচিত ছিল কর্তা, বলা উচিত ছিল।”

“ঘুমটা ভাঙার আগে তোমাকে আরও একটা কথা বলে নিই। আমি কখনও শুনিনি কোনও চোর চুরি করতে এসে গেরস্থের সঙ্গে এত গল্পগাছা করে। এটা একমাত্র স্বপ্নেই সম্ভব। ঠিক কিনা!”

“কী যে বলেন কর্তা! আপনার সঙ্গে গল্পগাছা করব এমন আস্পদ্দা কি আমার আছে? আসলে আপনার কাছে একটা জিনিস গচ্ছিত রাখতেই আসা। তাও লোকেনবাবুর লোকদের তাড়া খেয়ে। জান বাঁচাতে। আর এখনই আপনার ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় পাঁচটা সুখ-দুঃখের কথা উঠে পড়ল কিনা।”

মৃদঙ্গবাবু অবাক হয়ে বললেন, “আমার কাছে জিনিস গচ্ছিত রাখতে এসেছ!”

“যে আজ্ঞে।”

“সর্বনাশ! চোর চুরি করে, জিনিসপত্র নিয়ে যায় সে এক রকম। কিন্তু জিনিসপত্র রেখে যাওয়া তো বিপজ্জনক! কী রাখতে এসেছ শুনি! বোমা বা বন্দুক নয় তো! নাকি মাদক?”

“আজ্ঞে না, সেসব নয়।”

“তবে কি চোরাই মাল?”

“আজ্ঞে তাও ঠিক নয়। এক সময়ে সেটা চোরাই মাল ছিল বটে। কিন্তু তারপর চোরের কাছ থেকেই ফের চুরি হয়ে যায়। চুরিতে-চুরিতে বিষক্ষয়। তাই এখন তাকে আর ঠিক চোরাই মাল বলা যায় না।”

“তুমি তো আমাকে বিপদে ফেলবে দেখছি! জিনিসটা কী?”

“ঘাবড়াবেন না কর্তা। ভারী নিরীহ জিনিস। একটা দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ। আপনার কাঠের আলমারিটার মাথায় খবরের কাগজে মোড়া অবস্থায় রাখা আছে।”

“শাঁখ! একটা শাঁখ মাত্র?”

“যে আজ্ঞে। সামান্য একটা শাঁখের জন্য আর-একটু হলেই লোকেনবাবুর লোকেরা আমাকে খুনই করে ফেলছিল। কোনও রকমে আপনাদের বাড়ির পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়তে পেরেছিলাম বলে রক্ষে। নইলে এতক্ষণে আমার লাশ তো পদ্মদীঘিতে ভেসে থাকার কথা।”

“দাঁড়াও বাপু, দাঁড়াও। আমার ঘুমটা এবার ভেঙেছে বলেই মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলো তো বাপু! এই লোকেনবাবু লোকটা কে, আর তার লোকেরা তোমাকে মারতেই বা চায় কেন?”

“সে অনেক কথা কর্তা, বলতে গেলে রাত পুইয়ে যাবে। দয়ার শরীর আপনার, আপনি নিশ্চয়ই চান না যে আমি আপনার বাড়ির লোকের কাছে ধরা পড়ে হাটুরে কি খাই, তারপর বিষ্টু দারোগা এসে পাছমোড়া করে বেঁধে হাটবাজারের ভিতর দিয়ে টেনে নিয়ে গিয়ে ফাটকে পুরুক। তবে চিন্তা নেই, টুক করে একদিন ফাঁক বুঝে চলে এসে আপনাকে গোটা বৃত্তান্তটা শোনাব।”