৩
পরদিন সকাল দশটা পঁয়ত্রিশে ইন্টারকমে সাড়া জাগতেই বাসু সুইচ টিপে বললেন, বল রানু? অপরাজিতা এসেছে?
—না, আসেনি। তুমি কি সেই এফিডেবিটের ডিকটেশনটা এখন দেবে?
বাসু সেকথার জবাব না দিয়ে বলেন, এরা সময় রাখতে পারে না, কেন? ট্র্যাফিক জ্যামের আশঙ্কা করে কিছু সময় আগে বেরুলেই পাঙ্কচুয়াল হওয়া যায়।
রানী বললেন, এটা আমার প্রশ্নের জবাব নয়। ডিকটেশনটা…
—না!—মাঝপথেই রানীকে থামিয়ে দিয়ে বাসু সুইচটা অফ করে দিলেন।
একটু পরেই কৌশিক আর সুজাতা এল। বাসু জানতে চাইলেন, কোনও সূত্র আবিষ্কৃত হল? -না, মামু। কমপ্লিট ব্ল্যাঙ্ক। সুশোভন রায় বা পরেশ পাল চাকরি করে না। ব্যবসা যদি কিছু করে তবে তার কোনও হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। ওরা দুজন একই লোক কি না তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। তবে দুজনেই বড়লোক। যে গাড়িটা চালায় তার নম্বর অভিন্ন। মারুতি সুজুকি— কোবাল্ট ব্লু রং, নম্বর WBF 2457।
—গাড়িটা কার নামে রেজিস্টার্ড?
—পরেশ পাল, বারাসাতের। মোটর ভেইকলস এবং এ. এ. ই. আই-তে একই তথ্য।
—লোকটার পিছনে গুপ্তচর লাগাও, তিন শিফটে। প্রতিটি মুহূর্তে সে কোথায় আছে, কী করছে তা আমি জানতে চাই।
—তাতে একটাই অসুবিধা মামু, কোথা থেকে আমরা শুরু করব তা বুঝে উঠতে পারছি না। সুশোভন রায় বা পরেশ পাল কাল সন্ধ্যা থেকে নিরুদ্দেশ। তার গাড়িখানাও হাওয়া।
বাসু রানীকে এ ঘরে আসতে বললেন, অপরাজিতার বাড়িতে ফোন করতে বললেন। বেলা তখন এগারোটা। ও প্রান্তে রিঙ্গিং টোন বন্ধ হতেই রানী বলেন, অপরাজিতা আছে?
—না নেই। আপনি কে বলছেন?
—আমি ওর অফিস থেকে বলছি… ও কোথায় গেছে?… কখন?… আই সি!… লাঞ্চে ও কি বাড়িতে আসবে?… না, কোনও মেসেজ রাখার দরকার নেই। আমি আবার ফোন করব বরং
ও প্রান্তচারিণী কোনও কথা বলার আগেই রানী টেলিফোনটা নামিয়ে রাখলেন। বললেন, নির্মলা ধরেছিল। অপরাজিতা খুব সকালে কাউকে কিছু না বলে নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে। কোথায় গেছে তা নির্মলা জানে না। দুপুরে বাড়িতে খেতে আসবে কি না তাও জানা নেই।
বাসু বলেন, কোথায় গেল মেয়েটা!
ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে উঠল। কৌশিক বলল, আমি দেখছি। বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। পরমুহূর্তেই ফিরে এল। সঙ্গে অপরাজিতা কর। একরাত্রেই যেন তার ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। বাসু বললেন, তুমি ঐ সোফাটাতে বস অপরাজিতা। সুকৌশলী দম্পতিকে বললেন, তোমার দুজন যাও। তবে নিজেদের অফিসে থেকো। অপরাজিতার কথা শোনার পর তোমাদের ডাকব।
রানী দেবী অবশ্য থেকে গেলেন। বাসু জানতে চান, কী হয়েছে, অপরাজিতা? কাল রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত তো তুমি ভালই ছিলে। রাত্রে কি সুশোভন আচমকা ট্যুর থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে?
মেয়েটি দুদিকে মাথা নেড়ে জানালো, তা হয়নি। কথা বলতে গিয়ে ওর ঠোঁট দুটো কেঁপে গেল। তবু মুখ নিচু করেই কোনক্রমে বললে, সুশোভন আর কোনদিনই ট্যুর থেকে বাড়ি ফিরে আসবে না। সে বেঁচে নেই।
—বেঁচে নেই! কে বেঁচে নেই? সুশোভন রায়?
ওপর নিচে শিরক্ষালন করে অপরাজিতা স্বীকার করে।
—তুমি কেমন করে জানলে যে, সে বেঁচে নেই?
—আমি তার মৃতদেহ স্বচক্ষে দেখেছি।
—কখন? কোথায়?
—প্রায় দু ঘণ্টা আগে। বেলা নটা নাগাদ। রায়চৌধুরী ভিলার গেটের পাশে, একটা ঝোপ- জঙ্গলের ভিতর।
রানী বলেন, কী বলছ তুমি, অপরাজিতা? এই তো পাঁচ মিনিটও হয়নি আমি টেলিফোনে নির্মলার সঙ্গে কথা বললাম-
—ও জানে না। কেউই এখনো কিছু জানে না। সুশোভন খুন হয়েছে।
—কেমন করে জানলে ও খুন হয়েছে?
—ওর বুকে বুলেটের দাগ। রক্তে জায়গাটা ভেসে গেছে…
বাসু বললেন, তুমি মুখ নিচু করে কথা বলছ কেন? আমার দিকে তাকাও দেখি?
অপরাজিতা ওঁর চোখে চোখে তাকালো।
বাসু বললেন, কাল টেলিফোনে তুমি বলেছিলে, তোমার হাতে একটা রিভলভার ছিল। তুমিই কি আত্মরক্ষা করতে ওকে গুলিটা করেছ? নাউ বিফোর য়ু আনসার- মনে রেখ, আমি তোমার সলিসিটর, রানী আমার সেক্রেটারি। এ কনফেশনে তোমার কোনও ভয় নেই!
ওঁর চোখে চোখ রেখে অপরাজিতা বলল, না! আমি গুলি করিনি।
—তুমি এখনি বললে, রায়চৌধুরী ভিলার গেটের পাশে মৃতদেহটা দেখেছ। সাতসকালে উঠে তুমি হঠাৎ সেই রায়চৌধুরী ভিলায় কেন গিয়েছিলে?
—আমি ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর কাছে সেই ডিটেকটিভটির খোঁজ নিতে গেছিলাম, যে লোকটা কাল রাত্রে আমাকে ঐ লোডেড রিভলভারটা গছিয়ে দিয়েছিল।
বাসু রানী দেবীকে ইঙ্গিত করলেন। রানী নোটবইটা তুলে নিলেন হাতে। বাসু বললেন, তুমি পরপর সব কথা বলে যাও তো মা। শর্মিষ্ঠা পালের বাড়িতে যাওয়া থেকে। ভাল কথা, সেই ফটোটা দেওয়ালে ছিল?
—ছিল। কাচটা এই কয়দিনের মধ্যে মেরামত করানো হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, সুশোভন ওটা বাইরের ঘর থেকে সরিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যেই বৃহস্পতিবারে ছবির কাচটা ভেঙে ফেলে। পরে যখন শোনে যে, তা সত্ত্বেও আমি ওর ফটোটা দেখেছি তখন ও কাচটা মেরামত করে ছবিটা আবার টাঙায়।
—অলরাইট। ছবিটা স্ব-স্থানে ছিল। মিসেস পাল তোমাকে জানালেন যে, ওঁরা এখন ঐ ওয়াটার পিউরিফায়ার কিনতে পারছেন না। তারপর তুমি রাত নটা নাগাদ বেরিয়ে এলে। তারপর কী হল বল?
অপরাজিতা তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা গুছিয়ে বলে :
প্রথম কথা— শর্মিষ্ঠা পালের বাড়ির কাছাকাছি, যাবার পথে, প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূরে একটা ফিয়েট গাড়িকে পার্ক করা অবস্থায় দেখি। গাড়িতে লোক ছিল না। এ কথা কেন বলছি, তা একটু পরে বুঝিয়ে বলব। গাড়িটার নম্বর 1757; নম্বরটা আমার মনে থাকার কথা নয়, মনে আছে এজন্য যে, বি. এ.-তে আমার ইতিহাসে অনার্স ছিল, আর ঐ সালটা হচ্ছে পলাশীর যুদ্ধের চিহ্নিত বৎসর। সে যাই হোক, মিসেস পালের বাড়ি থেকে আমি রওনা হই পৌনে নটায়। ফেরার সময় গাড়িটা ওখানে আছে কি না আমি নজর করে দেখিনি। সেটার কথা আমার মনেও ছিল না। বারাসাত থেকে আমি দমদমের দিকে ফিরতে থাকি। মিসেস পালের বাড়িটা ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে। সে রাস্তাটা বেশ নির্জন। তবে চওড়া রাস্তা। ঐ রাস্তাটা যেখানে ন্যাশনাল হাইওয়েতে পড়েছে সেই জংশনেই ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর বিরাট বাগানবাড়ি। ইন্দ্রনারায়ণ ঐ অঞ্চলের একজন বিখ্যাত লোক— কোটিপতি ব্যবসাদার। তবে ওঁর ব্যবসা, কারখানা পশ্চিমবঙ্গে নয়। মহারাষ্ট্রে, গুজরাটে, কনটিকে। তবু বছরে তিন-চার বার উনি এই বাগানবাড়িতে এসে ওঠেন।
আমি যখন হাইওয়ে থেকে দুশো মিটার দূরে তখন দেখি একজন লোক মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাকে থামতে বলছে। দুহাত তুলে চিৎকার করছে। হেডলাইটের আলোয় দেখলাম, লোকটার বয়স বছর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ, পরনে জীনস প্যান্ট, ঊর্ধ্বাঙ্গে কোট-টাই, সোয়েটার। ভদ্র চেহারা। গুণ্ডা-গোছের নয়। আমি গাড়ি সাইড করে থামালাম। আমার গাড়ির চারটে কাচই সম্পূর্ণ ওঠানো ছিল। পাশের কাচখানা একটু নামিয়ে বললাম, কী চান?
ভদ্রলোক জানলার কাছে সরে এল। বলল, সে ইন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তাঁর সঙ্গে ওর কী যেন বিজনেস অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। ইন্দ্রনারায়ণের আজ দুপুরে মুম্বাই থেকে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ওঁর প্লেনটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। উনি মাঝরাতে হয়তো দমদমে পৌঁছবেন। এদিকে দুর্ভাগ্যবশত ওর গাড়ির একটা টায়ার পাঙ্কচার হয়ে গেছে। স্টেপনিতে যে টায়ার আছে সেটাও জখম। ও আমাকে অনুরোধ করল ওকে হাইওয়ের পেট্রল পাম্প পর্যন্ত লিফট দিতে। তাহলে ও টায়ার-টিউবটা মেরামত করিয়ে আনতে পারে। কিন্তু এসব রাস্তায়, আজকাল মস্তানদের দারুণ দৌরাত্ম্য। পুলিশ-মস্তান-রাজনৈতিক নেতাদের ত্রিকোণ আঁতাতের কথা সবাই জানে। আমি রাজি হতে পারি না। ও আমার বিশ্বাস উৎপাদন করতে ওর গাড়ির দিকে টর্চের আলো ফেলে দেখালো। দেখলাম, পিছনের ডিকিটা ওঠানো, পিছনের একটা টায়ার একেবারে বসে গেছে। আর ঐ সঙ্গে নজর হল ফিয়াট গাড়িটার নম্বর : পলাশীর যুদ্ধ! আমার মনে হল, এ আপনাদের এজেন্ট। আপনার অথবা সুকৌশলীর। সে জন্যই ও মিসেস পালের বাড়ির কাছাকাছি এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল। আমি ওকে সরাসরি প্রশ্ন করলাম, আপনি পি. কে. বাসু, বার-অ্যাট-ল’র নাম শুনেছেন?
ও বললে, নিশ্চয়ই। তাঁকে কে না চেনে? তবে চাক্ষুষ কখনো দেখিনি বা আলাপ-পরিচয় নেই। হঠাৎ একথা কেন?
আমি বললাম, তিনি আমার গার্জেন। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়ে রেখেছেন, শহরের বাইরে, রাত্রে বিশেষত নির্জন রাস্তায় কোনও অপরিচিত লোককে গাড়িতে লিফট না দিতে। আয়াম সরি।
লোকটি বললে, তিনি পণ্ডিতের মতোই সুপরামর্শ দিয়েছেন। কারেক্ট, ভেরি কারেক্ট। এটা শহরের বাইরে, রাত্রিকাল এবং নির্জন রাস্তা। নাউ দিস ইজ মাই অ্যানসার! এবার কী বলবেন?
কোথাও কিছু নেই, সে কাচের ফাঁক দিয়ে একটা লোডেড রিভলভার আমার কোলের উপর ফেলে দিল। বলল, এখন আপনি সশস্ত্র, আমি নিরস্ত্র! আমি, কোনও বাঁদরামো করলেই আপনি গুলি চালাবেন। হল তো? এবার দরজাটা খুলুন। আমি জখম টায়ারটা নিয়ে আসি।
বাসু বললেন, জাস্ট এ মিনিট। ওটা লোডেড রিভলভার তা কী করে বুঝলে?
—আমি চেম্বারটা খুলে দেখলাম। ছয়টা ফোকরে ছয়টা বুলেট ভরা আছে!
—কিন্তু ছটাই যে ব্ল্যাঙ্ক কার্টিজ নয়, বা এক্সপেন্ডেড কার্টিজ নয়, তা তুমি কী করে বুঝলে?
একটু চিন্তা করে অপরাজিতা বললে, আয়াম সরি, স্যার, এসব সম্ভাবনার আশঙ্কা আমার আদৌ হয়নি! বোধহয় আমি তখনো বিশ্বাস করছিলাম ও আপনাদের লোক, না হলে আমার কোলে ওভাবে রিভলভারটা ফেলে দেবে কোন সাহসে? তা কেউ কখনো দেয়? অজানা-অচেনা মানুষকে – যে ইচ্ছে করলেই গাড়ি হাঁকিয়ে চলে যেতে পারে। গুলি করতে পারে?
বাসু বলেন, বয়স বললে বছর ত্রিশ, দেখতে কেমন?
—ভালই, আই মিন সুন্দরই। কেন বলুন তো?
—যা হোক, তারপর কী হল বল?
অপরাজিতা জানায়, লোকটা কোন রকম অসভ্যতা করেনি। যেখানে লোকটাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল সেখান থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ের পেট্রল পাম্পের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। লোকটাকে ও পেট্রল পাম্পে নামিয়ে দিল। পাশেই ছিল একটা টায়ার মেরামতের দোকান। লোকটা যখন টায়ার-টিউব মেরামত করতে ব্যস্ত তখন সুযোগ বুঝে অপরাজিতা বাসুসাহেবকে ফোনটা করে। এয়ারপোর্ট হোটেলের ডাইনিং হলে। তারপর মেরামত করা টায়ার-টিউব নিয়ে ওরা ফিরে যায় রায়চৌধুরী ভিলার পাশ দিয়ে সেই ‘পলাশীর যুদ্ধ’ প্রাঙ্গণে। অপরাজিতা তার গাড়ির হেডলাইটটা ফেলে ওকে সাহায্য করে টায়ারটা বদলাতে। সব কিছু মিটে গেলে ছেলেটি বললে, কী আশ্চর্য দেখুন, যদিও আধঘণ্টা আগে পথ বন্ধনহীন গ্রন্থী বেঁধে দিয়েছে, তবু আমরা এখনো পরস্পরের নাম জানি না।
অপরাজিতা তখন তার গাড়ির ভেতর। দরজাটা লক করা। কাচ অল্প নামিয়ে কথা হচ্ছে। ওর তখনো দৃঢ় ধারণা যে, লোকটা বাসুসাহেবের এজেন্ট, অথবা কৌশিকদার। ওর কাছে নামটা অনায়াসেই জানা যেতে পারে। তাই কৌতুক করে বললে, এমনটাই তো হয় জীবনে— ‘অন্য মনে চলি পথে, ভুলিনে কি ফুল? ভুলিনে কি তারা?’
ছেলেটি বললে, তবু আপনার নামটা…
অপরাজিতা কৌতুক করে বললে, অপরাজিতা গুপ্তা।’
ছেলেটি মিষ্টি হেসে বললে, আপনি ‘গুপ্তা’? আমি আবার আপনার ‘দাস’ : অপ্রকাশ দাস। চলি? গুড নাইট!
দুজনে একের পিছে এক গাড়িতে স্টার্ট নেয়। অপ্রকাশ ন্যাশনাল হাইওয়েতে পড়ে বাঁদিকে মোড় নেয় বারাসাতের দিকে; অপরাজিতা ডানদিকে মোড় নিয়ে ফিরে আসে বিরাটিতে। গাড়িটা গ্যারেজে ঢোকাতে গিয়ে হঠাৎ নজর হল : কী সর্বনাশ! ওর পাশের সিটে পড়ে আছে সেই রিভলভারটা। সেটাকে অ্যাটাচি কেসে ভরে নিয়ে ও ফিরে আসে বাড়িতে। নির্মলাকে বলে, প্রচণ্ড মাথা ধরেছে, আমি আর কিছু খাব নারে। শুতে যাচ্ছি!
নির্মলা খপ করে ওর হাতখানা চেপে ধরে বলে, কী হয়েছে বল তো?
—হয়েছে! মানে? কার?
—তোর! শুধু তোর একার নয়, সুশোভনের! তোরা দুজন কি আমাকে লুকিয়ে প্রেম- মহব্বতের খেল খেলছিস?
বাসু বলেন, তখন তুমি সব কথা খুলে বললে তোমার বান্ধবীকে?
—আজ্ঞে না, সব কথা বলিনি, সুশোভনের সঙ্গে আমার যে কোনও অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, একথা ওকে জোর দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করি। ও হয়তো মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে পারে না। কেন এত রাত হল বোঝাবার জন্য সন্ধ্যার বিচিত্র অভিজ্ঞতাটা বিস্তারিত জানাই। মাঝরাস্তায় একটি ছেলে আমাকে কীভাবে আটকেছিল তাই থেকে শুরু করে তার রিভলভার ফেলে যাওয়া। নির্মলা বিশ্বাস করে না। বলে, কই দেখি যন্ত্রটা?
অপরাজিতা তার অ্যাটাচি কেস খুলে রিভলভারটা দেখায়। চেম্বারটাও খুলে দেখায়, তাতে পরপর ছয়টা বুলেট সাজানো। নির্মলা কেমন যেন অবাক হয়ে যায়। কী যেন সে ভাবছিল। তারপর হঠাৎ নিজের ঘরে চলে যায়। দোর বন্ধ করে দেয়।
ওর এই ভাবান্তরের কোনও অর্থ খুঁজে পায় না অপরাজিতা। সেও জামাকাপড় ছেড়ে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। স্থির করে কাল খুব ভোরে উঠে রায়চৌধুরী ভিলায় চলে যাবে। রাত্রে ইন্দ্রনারায়ণ মুম্বাই থেকে নিশ্চয় ফিরে এসেছেন, তাঁর কাছ থেকে জানা যাবে, গতকাল সন্ধ্যায় কার সঙ্গে তাঁর বিজনেস অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। সারে দশটায় বাসুসাহেবের চেম্বারে ওর দেখা করার কথা। সেটা অনেক দূরে— নিউ আলিপুরে। তাই স্থির করে, খুব ভোর-ভোর নির্মলাকে কিছু না বলেই ও রায়চৌধুরী ভিলায় চলে যাবে। মনে মনে ভাবে, গতকাল ইন্দ্রনারায়ণের নিশ্চয় খুব ধকল গেছে, প্লেন ক্যানসেল হওয়াতে। হয়তো ভোর রাত্রে ফিরেছেন। হয়তো সকালে ঘুম ভাঙতে তাঁর বেলা হবে। কিন্তু, তাঁর ভ্যালে, বা পার্সোনাল সেক্রেটারি জাতীয় কেউ-না-কেউ নিশ্চয় বলতে পারবে, কাল সন্ধ্যায় কার সঙ্গে তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাতি নিভিয়ে দিয়ে সন্ধ্যার ঘটনার কথা ওর মনে পড়ছিল। বিরাটি শহর কলকাতার একটু বাইরে। বেশ শীত শীত ভাব। ওয়াড়-পরানো কম্বলটা ভাল করে গায়ে টেনে নেয়। মনে পড়ে, ছেলেটির চেহারা। সুন্দর দেখতে। আর কী স্মার্ট! আশ্চর্য! অবলীলাক্রমে সে তার লোডেড রিভলভারটা অপরাজিতার কোলে ফেলে দিল, কি করে বিশ্বাস করল অপরিচিতা মেয়েটিকে? ও যদি যন্ত্রটা নিয়ে সিধে রওনা দিত। না, তাহলেও পালাতে পারত না। নম্বর প্লেট দেখে ও পলাতকাকে ঠিক পাকড়াও করত। কিন্তু লোকটা কী করে? ইন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল বিজনেসের ব্যাপারে। হয়তো ঐ অল্প বয়সেই সে বড় বিজনেসম্যান হয়ে উঠেছে। তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য একটি রিভলভার লাইসেন্সও পেয়েছে।… কেমন ঘুরিয়ে ‘শেষের কবিতার’ উদ্ধৃতিটা শুনিয়েছে : ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থী’। ও বোধহয় ইচ্ছে করেই রিভলভারটা ফেলে গেছে। উপন্যাসে বা সিনেমায় এমনটি প্রায়ই দেখা যায়। রিভলভারটা ফেরত দিতে ওকে খুঁজে খুঁজে যেতে হবে ‘অপ্রকাশের’ কাছে। অথবা খুঁজে খুঁজে অপ্রকাশকে প্রকাশিত হতে আসতে হবে ‘অপরিচিতার’ কাছে।… বাসুসাহেব জোর দিয়ে বলেছিলেন, তিনি কোনও এজেন্টকে বারাসাতে পাঠাননি। সে যাই হোক, ইন্দ্রনারায়ণের দপ্তর থেকে যদি খোঁজ না পাওয়া যায় মোটর ভেইকেলস ডিপার্টমেন্ট নিশ্চয় বলতে পারবে 1757 গাড়ির… কিন্তু না, এটা তো গাড়ির পুরো নম্বর নয়! তাহলে? ঠিক আছে, প্রয়োজনে খবরের কাগজে পার্সোনাল কলাম তো আছেই। গরজ কি তার একলার?
রাতে ভাল ঘুম হয়নি। কী সর আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে। যা হোক, ও যখন বিরাটি থেকে রওনা দেয় তখনো নির্মলা বিছানা ছাড়েনি। তার সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।
রায়চৌধুরী ভিলাতেও সব সুনসান। গেট খুলে ভিতরে ঢুকে আবার গেট বন্ধ করে দিল। না হলে গরু-ছাগল ঢুকে গাছপালা নষ্ট করবে। ত্রিসীমানায় কাউকে দেখতে পেল না। পোর্চের নিচে গাড়িটা রেখে ও নেমে এল। কটা ধাপ উঠে বেল বাজালো। ভিতরে একটা সুরেলা আওয়াজ শুরু হতে না হতেই শোনা গেল সারমেয় গর্জন। খুব ভারি গলায়। ডোবারম্যান না হলেও অ্যালসেশিয়ান। ভৃত্যশ্রেণীর একটি লোক দরজা খুলে দাঁড়ালো। হাঁটু পর্যন্ত খাটো ধুতি, গায় গেঞ্জির উপর হাতকাটা সোয়েটার। কাঁধে তোয়ালে বা ঝাড়ন। জানতে চাইল, কোত্থেকে আসছেন?
—বিরাটি থেকে। সাহেব কি মুম্বাই থেকে কালরাত্রে ফিরেছেন?
—সাহেব! মানে কোন সাহেবের কথা বলতিছেন?
—মিস্টার ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী!
—হায় রে মোর পোড়া কপাল। ত্যানি মুম্বাই থিকে আসতে যাবেন কেন গো? এ বাড়িতেই তো ত্যানি রইছেন, তা মাসখানেক হবে। আপনে তাঁর সাথে দেখা করতে চান? ঐ যে কী বলে— হ্যাঁ, অ্যাপনমেন্ট আছে?
অপরাজিতা বেশ ঘাবড়ে যায়, ইন্দ্রনারায়ণ যদি মাসাধিক কাল কলকাতাতেই আছেন তাহলে কাল সন্ধ্যায় সেই ছেলেটি অহেতুক মিছে কথা বলল কেন?
ভৃত্যশ্রেণীর লোকটি তাগাদা দেয়, অ্যাপনমেন্ট না কি-যেন-কয় তা আছে, মাঠান?
অপরাজিতা সামলে নিয়ে বলে, না নেই। আমি ঠিক বড়সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেও চাইছি না। তাঁর ভ্যালে, সেক্রেটারি বা বাড়ির লোকজন কেউ কি আছেন?
লোকটা স্পষ্টতই বিরক্ত হল। বলল, কাল অনেক রাত পর্যন্ত খানাপিনা হয়েসে। সবাই এখন কুন্তুকন্য। এখন তো সাড়ে আটটাও বাজেনি। আপনে দশটা নাগাদ আসবেন মাঠান।
অপরাজিতা নিজের গাড়িতে ফিরে এল। লোকটা সদর দরজা বন্ধ করে দিল। ত্রিসীমানায় জনমানব নেই। শুধু বাড়ির ভিতর থেকে সেই মেঘগর্জনের মতো সারমেয় গর্জন : ‘কে বট হে তুমি? সাতসকালে আমাদের বাড়িতে ঝামেলা পাকাতে এসেছ? তুমি জান না, এখানে আমার মনিবেরা নাচগান খানাপিনায় মাঝরাতের ওপারে শুতে যান? বেলা নটার আগে তাঁদের খোঁয়াড় ভাঙে না!’
গাড়িটা স্টার্ট দিতে গিয়ে মনে হল, তাহলে লোকটা কাল কেন ওকে রুখেছিল? অসৎ উদ্দেশ্য তো কিছু ছিল না। টায়ার সারিয়ে নিয়ে খোসমেজাজে বাড়ি চলে গিয়েছিল। কিন্তু রিভলভারটার কথা তার একেবারে খেয়ালই হল না?
ভাবতে ভাবতেই ফার্স্ট গিয়ারে গেট পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে। এবার নামতে হল, গেট খুলতে এবং ওপারে গিয়ে গেট বন্ধ করতে। হঠাৎ কী খেয়াল হল। গাড়িটা থামিয়ে ও অ্যাটাচি কেস থেকে রিভলভারটা বার করল। ওর দাদুর একটা রিভলভার ছিল। চেম্বার খোলার কায়দা ও জানে। দিনের আলোয় ভালো করে দেখবে বলে ও চেম্বারটা খুলল। আর তৎক্ষণাৎ ওর নজরে পড়ল, ব্যারেলের সামনে রয়েছে যে বুলেটটা, সেটা এক্সপেন্ডেড। তার গায়ে ‘ইন্ডেন্টেশনের’ দাগ। সেটি ‘ব্যয়িতবীর্য’! নিক্ষেপকারী যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়ে থাকে তাহলে ঐ ছোট্ট দাগটার অর্থ : একটা মানুষের প্রাণ। ও কী করবে ভাবতে ভাবতেই আর একটা অপ্রত্যাশিত জিনিস ওর নজরে পড়ে গেল। আঁৎকে উঠল অপরাজিতা! এ কী?’
ব্যুগেনভেলিয়ার ঘন ঝোপের ভিতর থেকে বার হয়ে আছে একটা মানুষের জুতো সুদ্ধ পা! পুরুষমানুষ। পরনে জিনস্ প্যান্ট, ফিতে বাঁধা শ্য। ঊর্ধ্বাঙ্গে গলাবন্ধ সোয়েটার। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। সেটা জঙ্গলের ভিতর। অপরাজিতার হাত-পা হিম হয়ে এল। গাড়িটা রাস্তার পাশে পার্ক করাই ছিল। ও গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে তাকিয়ে দেখল। ত্রিসীমানায় মানুষজন নজরে পড়ল না। রায়চৌধুরী ভিলার সদর দরজাটা ওখান থেকে সরাসরি দেখা যায়। কিন্তু সেটা বন্ধ। সেই ভৃত্যশ্রেণীর লোকটা নিজের কাজে চলে গেছে। সারমেয় গর্জনটাও থেমে গেছে। অপরাজিতা দ্রুতপদে এগিয়ে গেল। রাস্তা ছেড়ে ‘বার্ম’-এ, তারপর ব্যুগেনভেলিয়া জঙ্গলের ভিতর। কাছে গিয়ে দেখল, গোটা মানুষটাকে। শুধু মুখটুকু একটা ব্যুগেনভেলিয়ার ডালে ঢাকা পড়েছে। হাত দিয়ে শাদা শাদা ফুলে ভরা ডালটাকে সরিয়ে ও বজ্রাহত হয়ে গেল : সুশোভন। হ্যাঁ, সুশোভন রায়! তার বুকে বাঁদিকে বুলেটের ক্ষতচিহ্ন। শাদা ব্যুগেনভেলিয়ার ফুলগুলো রক্তে লালে-লাল হয়ে গেছে। রক্তে ভেসে গেছে ঘাস। নিচু হয়ে স্পর্শ করে দেখল ওর দেহটা। নাড়ি দেখার প্রশ্নই ওঠে না। জানুয়ারির শীতে বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে মৃতদেহটা।
পায়ে পায়ে ও ফিরে আসছিল। দুটো পাই টলছে, যেন কালরাতের শ্যাম্পেনের প্রভাব এখনো কাটেনি। হঠাৎ ওর মনে পড়ে গেল— ওর হাতে একটা রিভলভার, যার একটি বুলেট এক্সপেন্ডেড! বিদুৎচমকের মতো ওর মনে হল, এটাই মার্ডার ওয়েপন। কাল সেই বদমায়েসটা কায়দা করে সেটা ওর হাতে গছিয়ে দিয়ে গেছে।
দূরে একটা তেঁতুলগাছকে লক্ষ্য করে প্রাণপণ জোরে সে ঐ রিভলভারটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
তখন ঠিক কটা তা ওর খেয়াল নেই। তারপর কী করে সেই রায়চৌধুরী ভিলা থেকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে এই নিউ আলিপুর পর্যন্ত ড্রাইভ করে আসতে পেরেছে তা ও নিজেই জানে না। তবে এটুকু মনে আছে, মাঝে মাঝে ও গাড়ি থামিয়েছে, রাস্তার টিউবওয়েলে সেই জানুয়ারির সকালে মুখ-হাত ধুয়েছে। তারপর ধুকপুকানিটা থামলে আবার গিয়ে বসেছে স্টিয়ারিং-এর সামনে।
বাসু বললেন, শোন মা, এ জীবনে মানুষ সব চেয়ে বড় ভুল করে যখন ডাক্তারের কাছে লজ্জায় রোগের লক্ষণ লুকায়, অথবা ভয়ে সলিসিটরের কাছে সত্য! বল, অপরাজিতা : তুমি যা বললে তা সত্য, আদ্যন্ত সত্য, সত্য বই মিথ্যার কোনও প্রলেপ লাগাবার চেষ্টা নেই?
বাসুসাহেবের চোখে চোখ রেখে ও বললে, আমি মিছে কথা বলিনি। যা বলেছি তা সত্য, আদ্যস্ত সত্য। বর্ণে-বর্ণে সত্য!
বাসু বললেন, অলরাইট! তোমাকে জেরা করার সময় নেই। আমি মেনে নিচ্ছি, যা বললে তা সত্য। তুমি যদি এক বিন্দু মিথ্যা কথা বলে থাক তাহলে সেটাই তোমার মৃত্যুবাণ হয়ে ফিরে আসতে পারে। যা হোক, যা বলছি তা মন দিয়ে শোন। আজও তোমার নানারকম অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে নিশ্চয়। সেই মতো কাজ করে যাও। সকালে কী দেখেছ তা ভুলে যাও।
অপরাজিতা বলে, কিন্তু একটা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখলে পুলিসে খবর দেওয়া কি আমার কর্তব্য নয়?
—নিশ্চয়। খবর তো তুমি দিয়েছ। পুলিশকে জানাবার জন্য তোমার সলিসিটারকে সব কথা জানিয়েছ। বাকি দায়িত্ব আমার। তবে খুব সাবধানে ড্রাইভ কর। শরীর খারাপ মনে হলে কোনও হোটেলে গিয়ে একটা ঘর বুক করে বিশ্রাম নাও। হয়তো এই অবস্থায় তুমি নির্মলার মুখোমুখি হতে চাও না। তাই নয়?
—আমি নির্মলাকেও জানাব না?
—না! তুমি যদি চাও তো বল, কৌশিককে বলি তোমাকে কোনও হোটেলে পৌঁছে দিতে। সেখান থেকে ফোন করে অফিসে একদিনের ক্যাজুয়াল লিভ নাও!
—তার দরকার হবে না। আমি পারব। আচ্ছা চলি।
অপরাজিতা রওনা হয়ে যেতেই বাসুসাহেব টেলিফোন তুলে নিয়ে ভবানীভবনে হোমিসাইডে ফোন করে সার্জেন্ট বরাটকে চাইলেন। বরাট বহুবার আদালতে বাসুসাহেবের জেরার মুখোমুখি হয়েছে। ছদ্ম বিনয়ে বলে, বলুন স্যার, কীভাবে আপনার সেবা করতে পারি?
বাসু বলেন, আমাকে নয়, বরাট। সেবা করবে জনগণকে। তোমাকে একটা খবর দেবার জন্য এই ফোন করছি। ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে রানাঘাট যাবার পথে, বারাসতের তিন কিলোমিটার আগে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর বিরাট একটা বাগানবাড়ি পড়বে….
—চিনি। ইন্দ্রনারায়ণ একজন এ-ওয়ান ভি. আই. পি.। বলে যান।
—ঐ রায়চৌধুরী ভিলায় ঢুকতে গেটের ডানদিকে, রাস্তা থেকে একটু ভিতরে ব্যুগেনভেলিয়া ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে একটি মৃতদেহ। পুরুষ মানুষ, বছর ত্রিশ বয়স। মনে হয় কাল সন্ধ্যারাতে খুন হয়েছে।
—খুনই যে হয়েছে তা কেমন করে জানলেন?
—জানি না। আন্দাজ করছি। বুকে যেহেতু বুলেটের চিহ্ন। আত্মহত্যা করলে সচরাচর জঙ্গলে গিয়ে কেউ করে না।
—আপনি এ তথ্যটা কেমন করে জানলেন?
—আমার একজন মক্কেল মৃতদেহটা দেখতে পেয়েছে।
—কী নাম মক্কেলের? কোথায় আছেন তিনি এখন? :
—সেটা আমি বলতে পারব না।
—আপনি জানেন না?
—এ প্রশ্নটাই অবৈধ। আইনের নির্দেশ একটা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে জানলে তা পুলিশকে জানানো। তা আমি জানালাম। আইন একথা বলে না যে, কোন্ মক্কেলের মাধ্যমে আমি তথ্যটা জেনেছি তা পুলিশকে জানাতে হবে। আচ্ছা, আপাতত এই পর্যন্তই। রাখলাম।
—থ্যাঙ্কু, স্যার!
বাসু ক্র্যাডেলে টেলিফোনটা নামিয়ে রাখলেন।